20/07/2025
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لا يَسْتَقيمُ إِيمانُ عبدٍ حتَّى يَستَقيمَ قلبُه، ولا يَسْتَقيمُ قلبُه حتَّى يَستَقيمَ لسانُه، ولا يدخُلُ الجنَّةَ رجُلٌ لا يَأْمَنُ جارُه بَوائِقَه
"কারও ঈমান সঠিক হবে না, যতক্ষণ না তার অন্তর সঠিক হয়।আর তার অন্তর সঠিক হবে না, যতক্ষণ না তার জিহ্বা সঠিক হয়।আর জান্নাতে সেই ব্যক্তি প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী (বা ঘনিষ্টজনরা) তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়।"(মুসনাদে আহমাদ হা/১৩০৪৮;সিলসিলাহ সহীহাহ হা/২৮৪১ সনদ বিশুদ্ধ)।
হাদীসটির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা:বিভিন্ন হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা ও মুক্তির সব পথ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, এবং তাদেরকে উত্তম আদব ও সদাচরণে শোভিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নিম্নোক্ত হাদীসেও সেই নির্দেশনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বর্ণিত হয়েছে। এই হাদিসে তিনি বলেছেন,
❖কোনো বান্দার ঈমান পূর্ণ ও সঠিক হতে পারে না যতক্ষণ না তার অন্তর সঠিক ও পবিত্র হয়।”
এখানে ‘ঈমানের সঠিকতা’ বলতে বোঝানো হয়েছে ঈমানের পূর্ণতা ও আন্তরিকতা। কারণ, ঈমান কেবলমাত্র অন্তরের বিশ্বাস নয়, বরং ঈমান হচ্ছে,মুখের কথা,অন্তরের বিশ্বাস ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সম্মিলিত বাস্তবায়ন।যদি অন্তর সঠিক ও পবিত্র না হয়, তাহলে ঈমানও বিকৃত হয়, আর আমলেও দুর্বলতা দেখা দেয়।আর অন্তরের সঠিকতা মানে হলো—তা যেন আল্লাহর পরিচয় জানা,তাকে ভালোবাসা, তাঁর আনুগত্যের প্রতি ভালোবাসা, গুনাহর প্রতি ঘৃণা,তার মহত্ত্ব, ভয়, সম্মান, আশা এবং তাঁর ওপর ভরসা দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। এটাই তাওহীদের প্রকৃত রূপ,যা ঈমানকে জীবন্ত রাখে।
❖আর অন্তর সঠিক হবে না, যতক্ষণ না তার জবান সঠিক হয়।" অন্তর ও জবান (জিহ্বা) একে অপরের সাথে সংযুক্ত। জবান হলো অন্তরের ভাষ্যকার বা দোভাষী। এটি প্রকাশ করে অন্তরে কী আছে—তা ঈমান হোক বা কুফর। আর এ জবানই মানুষকে জান্নাতেও পৌঁছে দিতে পারে, আবার জাহান্নামেও নিয়ে যেতে পারে।সুতরাং যবান তথা জিহ্বার সঠিকতা” মানে—তা যেন মিথ্যা, গিবত, চোগলখোরি, কটূক্তি, অপবাদ, অশ্লীলতা ইত্যাদি সব খারাপ কথা থেকে মুক্ত থাকে।কেননা জিহ্বার সঠিকতা ছাড়া অন্তরের সঠিকতা বজায় রাখা সম্ভব নয়।
❖ “প্রতিবেশীর অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকা”—এটি ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক নির্দেশনা। সত্যিকার মু’মিন সেই, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে। ‘بوائق’ (বাওয়াইক) শব্দটি বোঝায় শারীরিক, মানসিক, আর্থিক বা সামাজিক যেকোনো ধরণের ক্ষতি বা অনিষ্ট।অর্থাৎ,যেকোনো রকম অনিষ্ট বা ক্ষতি, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্ট ও বিরক্তিও। তাই একজন মু’মিনের দায়িত্ব হলো নিজের প্রতিবেশীকে সব ধরনের অনিষ্ট থেকে মুক্ত রাখা, যেন তার আশেপাশের পরিবেশ নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ থাকে।
হাদীসটির শিক্ষা:(১). পূর্ণ ঈমান তখনই বাস্তবায়িত হয়, যখন অন্তর, জিহ্বা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবই ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হয়।(২). একজন মুসলিমের চরিত্র ও আচরণে তার ঈমান প্রতিফলিত হওয়া আবশ্যক।(৩). প্রতিবেশীর প্রতি সহানুভূতি, নিরাপত্তা প্রদান ও অনিষ্ট থেকে বিরত থাকাকে ঈমানের একটি শাখা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।(৪). এই হাদীস মানুষকে ইখলাস, উত্তম আখলাক এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করে। (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)