22/06/2024
(১৮+ সতর্কতা)
গভীর রাত। উর্মি গা থেকে সারাদিনের পরা, সাদামাটা পোষাকটা টেনে খুলে ফেলল। তারপর হাতা কাটা ব্লা"উজের সাথে, পাতলা ফিনফিনে লাল শাড়ি পরল। স্ট্রেইট করা, সুন্দর চুলগুলো ছেড়ে দিল। ঠোঁটে যত্ন করে লাল রঙা গাঢ় লিপস্টিক পরল। চোখে কাজল টেনে, ব্যস্ত হাতে একটা নাম্বারে ডায়াল করে, ফোন কানে চেপে ধরল। আয়নায় নিজের আবেদনময়ী রুপ দেখতে দেখতে বলল,
-'আমি রেডি হয়ে বসে আছি। কখন গাড়ি পাঠাবেন?
-'বড় স্যারের খুব শখ জেগেছে। আজ এই অন্ধকার রাতের আঁধারে, গাড়িতে তার প্রিয় ডিজে গান ছেড়ে, কাজটা সারবে!
-'শা"লা, বুড়োর ঢঙ দেখে বাঁচি না। উর্মির চোখ, মুখ খিঁচে এলো। দাঁত দিয়ে ঠোঁট কা"মড়ে ধরে কী যেন ভাবল। বলল,
-'আমি রাজি। তবে এক শর্তে!
-'কী শর্ত ম্যাডাম?
-'আজ রাতের জন্য ত্রিশ হাজার টাকা দিতে হবে।
-'ও খোদা, এত টাকা? আর একটু কমিয়ে বলেন, ম্যাডাম।
-'ত্রিশ হাজার টাকায় আজকাল কী হয়? যে জিনিসের দাম। চারপাশে আগুন লেগেছে। এর থেকে এক পয়সা কম হলেও আমি পারব না।
-'প্লিজ ম্যাডাম?
-'বললাম তো না। তাছাড়া গাড়িতে উঠলে আমার মাইগ্রেন বেড়ে যায়। একরাতের বিনিময়ে টানা দুইদিন মাথা ব্যথায় আমাকে বিছানায় পরে পরে কাতরাতে হবে।
-'ওকে, আমি দেখছি।
উর্মি বড় ওড়নায় চোখ, মুখ ঢেকে পা টিপে টিপে মেইন দরজা খুলে বাইরে থেকে তালা মেরে দিল। গুটিগুটি পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে, গাড়িতে চড়ে বসল।
একটা কালো, মোটা হাত উর্মিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে, শক্ত করে চেপে ধরল। লোকটির গা থেকে ভুরভুর করে কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ ভেসে আসছে! তীব্র ঘ্রাণে উর্মির মাথা ব্যথা করছে। তবুও উপায় নেই। রাতটা এই বুড়োর মনোরঞ্জন করেই কা"টাতে হবে। উর্মি বুড়োর ভুঁড়িওয়ালা পেটে হাত বুলিয়ে দিল। ন্যাকা কণ্ঠে বলল,
-'গাড়িটা একটু আস্তে চালাতে, বলেন?
বুড়ো, উর্মির শাড়ি টে"নে খু"লতে খুুলতে অধৈর্য হয়ে বলল,
-'ইনজয় বে"বি!
উর্মি বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস গোপন করে, বুড়োর ডাকে আস্তে আস্তে সারা দিল।
কাক ডাকা ভোরে, উর্মিকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে লোকটি, গাড়ি নিয়ে শাঁই করে চলে গেল।
ঘণ্টা দুই ঘুমাল উর্মি। তারপর গোসল সেরে, ফ্রীজের বাঁশি ভাত, তরকারি গরম করে খেয়ে নিল।
মা'কে ফোন দিয়ে বলল,
-'আজ একবার ডাক্তারের কাছে যাবে, মা তুমি। আমি বিকাশে টাকা পাঠাচ্ছি। অয়নের পরীক্ষা ফি দিয়ে দিও।
-'তুই বাড়ি আসবি না, উর্মি?
-'না, মা। আমার কাল থেকে পরীক্ষা শুরু। ছুটিতে বাড়ি যাব।
রেবেকা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল,
-'তোর বাবার অনেক শখ ছিল। মেয়েকে 'ল' পড়াবে। মানুষটাও দুনিয়ার মায়া ছেড়ে চলে গেল। তার শখটাও তুই পূরণ করলি না। জেদ করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে গেলি।
-'আমার 'ল' পড়তে ভাল লাগে না, মা। তাছাড়া সারাদিন কোর্ট কাচারি করেই সময় চলে যাবে।
-'সেই!
-'মা, এখন রাখি। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
উর্মি গোলাপি রঙা সুতী সালোয়ার, কামিজ পরে গলায় শালীন ভাবে ওড়না পেঁচিয়ে নিল। তারপর হাতে একটা ফাইল, ব্যাগ নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে ছুটলো।
-'এ্যাঁই উর্মি, পরীক্ষার প্রিপারেশন কেমন? রিপা পিছু ডেকে বলল। উর্মি মুচকি হেসে বলল,
-'একটা নোট কালেক্ট করা বাকি আছে, তুই একটু ধার দিবি?
-'আমার বয়েই গেছে! কী এত কাজ করিস তুই? যে নোটগুলোও টাইমলি কালেক্ট করতে পারিস না।
-'কাজের শেষ নাই রে, বইন।
-'শোন না, অমিত ছেলেটা তোকে খুব পছন্দ করে। আমাকে প্রায়ই তোর কথা বলে।
-'কোন অমিত?
-'ওই যে সেকেন্ডের ফাস্টে চার বন্ধু মিলে বসে। তাদের ভেতর সবার লম্বাচওড়া, সুন্দর দেখতে ছেলেটা।
-'কী জানি! আমি চিনি না।
-'তা চিনবি কেন? তোমার তো ক্লাসে মন থাকে না। সারাক্ষণ আপন ভাবনায় মত্ত থাকো! যাইহোক তোর নাম্বারটা চাইছে! আমি দেব?
-'ভুলেও তুই আমার নাম্বার কাউকে দিবি না, রিপা।
-'আজব তো! দিলে কী হবে?
-'কিছুই হবে না। তুই তাকে বলে দিস। আমি ম্যারিড।
-'কচু ম্যারিড। ডিভোর্স হয়ে গেছে, বল।
-'তবুও আমার আগে বিয়ে হয়েছিল তো।
-'সেই সংসারটা করলেও পারতিস উর্মি। এখন তোদের এত কষ্ট করে চলতে হতো না। মানছি, ভাইয়া বেশ রাগী ছিল। তবে তোকে অনেক ভালোবাসত। চোখে হারাতো।
উর্মি মলিন হেসে বলল,
-'লোক দেখানো ভালোবাসা আর এক ছাদের নীচে সংসার করা। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা ব্যপার।
উর্মির ফোনটা ভাইব্রেট হচ্ছে।
রিপাকে এক্সকিউজমি বলে, সরে গেল উর্মি। চারপাশে সর্তক দৃষ্টি বুলিয়ে হাতে ধরে রাখা ফোনটা রিসিভ করল,
-'হ্যালো কে বলছেন?
-'স্যোসাল মিডিয়ায় আপনার পোস্ট দেখে আপনাকে ফোন দিয়েছি। আপনি না কী টাকার বিনিময়ে এক রাতের বেড পার্টনারের কাজ করেন?
-'হ্যাঁ।
-'আমার আজ রাতের জন্য আপনাকে লাগবে। কত টাকা দিতে হবে, বলুন?
-'হাফ নাইট না ফুল নাইট?
-'হাফের রেট কত?
-'কম করে হলেও দশ হাজার।
-'আর ফুল?
-'তার ডাবল।
-'ওকে, আমাকে কোথায় আসতে হবে, বলুন?
-'স্যরি আমার ফ্ল্যাটে আমি এসব কাজ করি না। লোকেশন আপনি ঠিক করবেন। সময় মতো গাড়ি পাঠিয়ে দিবেন, আমি পৌঁছে যাব।
-'ওকে। আপনার বাসার ঠিকানাটা দিন, প্লিজ?
-'মেসেজ করে দিচ্ছি।
উর্মি আজ রাতে আর শাড়ি পরল না। একটা অফ হোয়াইট কালারের চিকুন ফিতের নাইটি পরল। তার উপরে কালো বোরখা পরে নিল। লোকটি গাড়ি পাঠিয়েছে। নিজে উর্মিকে নিতে আসেনি। উর্মি দুরুদুরু বুকে গাড়িতে চড়ে বসল। লোকটির দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী একটা ফ্ল্যাটের চারতলার, ১০৫ নাম্বার রুমে কলিংবেল চাপল উর্মি। ভেতর থেকে দরজা খুলে গেল। উর্মি লোকটিকে না দেখেই তাড়াহুড়ো করে ফ্ল্যাটে ঢুকে গেল। বলল,
-'একটু পানি হবে?
-'শিওর। ততক্ষণে আপনি বোরখাটা খুলে নিন। ড্রইং রুমের বড় লাইট জ্বেলে দিয়ে লোকটি ভেতরের ঘরে পানি আনতে চলে গেল। উর্মি একটানে বোরখাটা খুলে ফেলে, মাথার এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে নিল। লোকটি পানি দিতে এসে। উর্মিকে দেখে চমকে উঠল। হাত ফসকে পানির গ্লাসটা মেঝেতে পরে, ভেঙে গেল। মুখে হাত দিয়ে বলল,
-'উর্মি, তুমি..?
মেয়েটি_অসতী
পর্ব_১
লেখা- ববিতা রায়