14/08/2025
মানুষরূপী শয়তান ও কাঁদতে থাকা জাফলং
মানুষ—শুধু শরীরের আকারে নয়, মন ও আত্মার গুণে পরিচিত। কিন্তু সমাজে কিছু মানুষ আছে, যারা মানুষের মতোই হাসে, কথা বলে, ভিড়ের মাঝে মিশে যায়, অথচ তাদের ভেতর নেই মানুষের হৃদয়। তাদের মন ডাস্টবিনের থেকেও বেশি নোংরা—লোভ, স্বার্থ আর নিষ্ঠুরতায় ভরা। তারা সমাজের কীট, প্রকৃতির শত্রু, সৌন্দর্যের ঘাতক।
বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ পাথর আসে বিদেশ থেকে। অথচ সিলেটের জাফলং—আমাদের গর্ব, আমাদের প্রকৃতির অলংকার—দেশের মাত্র ৬ শতাংশ পাথরের যোগান দেয়। সংখ্যায় ছোট হলেও, সৌন্দর্যে অদ্বিতীয় এই স্থান প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসুকে টানে। সাদা পাথরের বিছানো নদী, সবুজ পাহাড়ের নীরব সৌন্দর্য, আর প্রকৃতির বুক ভরে দেয়া শান্তি—সব মিলিয়ে জাফলং যেন এক স্বপ্নরাজ্য।
কিন্তু সেই স্বপ্নরাজ্যও রক্ষা পায়নি অমানুষদের হাত থেকে। প্রকৃতির বুক চিরে, নদীর তলদেশ খুঁড়ে, সৌন্দর্যের শিরা ছিঁড়ে তারা নিয়ে গেছে যা কিছু সম্ভব। এই অমানুষরা মানুষের ছদ্মবেশে জন্ম নিলেও, প্রকৃতপক্ষে তারা মানুষ নয়—তারা মানুষরূপী শয়তান।
আমাদের এক অদ্ভুত সংস্কৃতি—চোর এসে ঘরের জিনিস নিয়ে যাবে, আর গৃহস্থ চুপ করে হাহুতাশ করবে, "আমার তো সব নিয়ে গেল!" প্রশাসন নীরব, মানুষ উদাসীন—এই নীরবতা ও দুর্বলতাই আমাদের সর্বনাশের মূল।
আমি সিলেটের সন্তান হয়ে গর্বিত। কিন্তু ২০২২ ও ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যার সময়, আমি দেখেছি মানুষের অন্তরের অন্ধকার। যখন হাজারো মানুষ আশ্রয়হীন, ক্ষুধার্ত, তখনও কিছু অমানুষ নৌকা নিয়ে ডাকাতিতে নেমেছে। তখন মনে হয়েছিল—প্রকৃত দুর্যোগ বন্যা নয়, এই অমানুষেরা।
আর সম্প্রতি সরকারের পতনের পর জাফলংকে যেভাবে লুটপাট, ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে—তা দেখে মনে হয়, সেই নদী, সেই পাথর, সেই মাটিও আজ কান্না করছে। কিন্তু মানুষের মন এখন পাথরের থেকেও শক্ত, অনুভূতিহীন।
যারা প্রকৃতির বুক চিরে টাকা গোনে, তাদের মধ্যে নেই শিক্ষা, নেই নৈতিকতা, নেই মনুষ্যত্ব। তারা শুধু প্রকৃতির শত্রু নয়—সভ্যতার কলঙ্ক।
প্রকৃতি আমাদের মা। যে মায়ের কোলে দাঁড়িয়ে আমরা বেঁচে আছি, সেই মাকে যারা আঘাত করে, তারা মানুষ নয়—তারা সভ্যতার অন্ধকার গহ্বর থেকে উঠে আসা অভিশাপ।