02/12/2023
আব্বা চলে যাওয়ার ৭ বছর।
আব্বা যেদিন মারা যায়, দিনটা ছিল ০২-১২-১০১৬ইং শুক্রবার।
আমি ভার্সিটির হলে ছিলাম। পরদিন আমার থার্ড ইয়ারের ইনকোর্স পরীক্ষা। রিডিং রুম থেকে পড়া শেষ করে রুমে আসলাম। ১২ টার পরে মেজো ভাই ফোন দিল, জিজ্ঞেস করলো কাল কখন পরীক্ষা। আমি বললাম, সকাল ৯টা থেকে। আরো বললাম, আমার সব পড়া মোটামুটি শেষ, বাকি গুলা রাতে পড়বো।
মেজো ভাই বললো, বাড়িতে আয়। আমি তখন বললাম, আপনি পাগল হইছেন, কালকে আমার পরীক্ষা আর আপনি আমাকে বাড়ি যেতে বলতাছেন, প্রশ্ন করে বললাম, কেনো বাড়ি কিছু হইছে নাকি.?
মেজো ভাই তখন বললো, না কিছু হয় নাই। আচ্ছা ভালো মত পরীক্ষা দিস।
মেজো ভাই তখনও বলে নাই যে, আব্বা আর নাই।
কিন্তু আমি ভিতরে ভিতরে কেন জানি শান্তি পাচ্ছিলান না, কারণ যে ভাই আমার লেখা পড়া নিয়ে এতোটা সিরিয়াস ছিল যে আমার এক্সাম এর সময় মনে হতো তারই এক্সাম। আমাকে নোট করে দেওয়া, সাজেশন তৈরি করে দেওয়া, আমার জন্য প্রশ্ন তৈরি করে বাড়িতে আমার পরীক্ষা নেওয়া সবই করতো আজ সেই ভাই কিণা পরীক্ষার আগের দিন বাড়িতে যাওয়ার কথা বলছে, বিষয়টা আমার কাছে কেমন যেন সন্দেহ জনক মনে হল।
আমার হাজব্যান্ড কে ফোন দিলাম, বললাম আমার কেন জানি খারাপ লাগছে, আব্বার তো কিছু হলোনা।
মেজো ভাই ফোন দিয়ে বাড়িতে যাওয়ার কথা বললো।
আমার হাজব্যান্ড তখন বললো, আরে না।
মেজো ভাইতো তোমাকে অনেক ভালোবাসে, অনেক দিন তোমাকে দেখে না, তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করছে তাই হয়তো ফোন করে বাড়ি যেতে বলতাছে।
আমিও নিজেকে এটা ভেবেই শান্তনা দিলাম। তারপর গোসল করে ওযূ করে রুমে আসলাম ঠিকই কিন্তু ভিতরে কেমন যেন অশান্তি হচ্ছিল আমার। মেজো ভাই আবারও ফোন দিল তখন আমার আরও খারাপ লাগছিল, মেজো ভাই যখন আবারও বললো বাড়িতে আয়।
তখন আর আমার বোঝার বাকি নাই যে, কি হইছে।
আমি তখন বললাম আব্বার কিছু হইছে? মেজো ভাইয়ের কোনো উত্তর নাই।
তখন তো আমি হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিছি।
আমার তখন কোনো হুস ছিলনা, বুকটা ফেটে যাচ্ছিল।
কোনো হুস নাই, দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে কান্না করতে করতে নামলাম। পেছন পেছন আমার দুইজন রুমমেট আসলো।
সারাটা রাস্তা যেন কোনো ভাবেই শেষ হয়না আমার।
বাড়িতে পৌঁছালাম, আব্বার নিথর দেহটা দেখলাম শেষবারের মত।
তারপর কেটে গেল ৭টা বছর। আমার এখনো মনে হয়না যে, আব্বা আর নাই।
মনে হয় বাড়িতে গেলেই দেখবো, আব্বা বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসে আছে। নয়তো দেখবো আমার বই গুলো নিয়ে পড়তাছে।
বাড়িতে যাওয়ার পর, আব্বা আমার বই নিয়ে পড়তো আমাকে আবার প্রশ্নও করতো।
মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যে হটাৎ বুকের ভিতর কামড়ে উঠে। মনে পড়ে আব্বা মারা গেছে।
তারপর আর সারারাত ঘুমাতে পারিনা।।।
যার হারায় সেই বুঝে।
আমি যখন ভালো রেজাল্ট করতাম আব্বা যে কতটা খুশি হতো। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে, আব্বাকে যখন বলতাম আব্বা দোয়া কইরো। আব্বা বলতো, যেটা সবচেয়ে ভালো পারি, সেই প্রশ্নের উত্তর আগে দেওয়ার জন্য।
পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি আসার পর বলতো, হ্যাপী তোর প্রশ্নটা দে, আব্বা মনোযোগ দিয়ে প্রশ্নগুলো পড়তো।
আসলে, আব্বা থাকতে আব্বার মূল্য বুঝতাম না।এখন বুঝি, কিন্তু এখন আর বুঝেও লাভ নাই।
আল্লাহর কাছে সব সময় বলি, আল্লাহ যেন আমার আব্বাকে কবরের মধ্যে ভালো রাখেন। দুনিয়াতে খুব কষ্ট করে গেছে।
পরকালে যেন, আল্লাহ পাক আর কোনো কষ্ট না দেন।
আমার আব্বার কবরটা যেন, আল্লাহ পাক জান্নাতের বাগিচা বানিয়ে দেন। আমিন।