
09/08/2025
#অপ্রিয়_সেই_তুমি
#প্রিয়া_আফরোজ
#পর্ব৭
মায়ার ফোনে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে বারবার কল আসতে থাকে।
মায়া প্রথমে কয়েকবার ফোনটি না উঠালেও শেষে ভাবলো এতোবার কল করছে তাহলে প্রয়োজনিয় কল হতে পারে।
কলটি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইমন বলে উঠলো :-
-এয়ারপোর্টে তুর্যর উপর হামলা হয়েছিল,
"তুর্যর বুকে গুলি লেগেছে"।
ওর অবস্থা খুব খারাপ, আমরা এয়ারপোর্টেই আছি এয়ারপোর্টের ডক্টর তূর্যর ট্রিটমেন্ট করছে।
আর হ্যাঁ আন্টি হার্টের পেসেন্ট তাই আঙ্কেল-আন্টিকে কিছু জানাবেন না প্লিজ।
সম্ভব হলে আপনি এয়ারপোর্টে চলে আসুন। (ইমন)
মায়ার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো, মায়া ইমন এর পুরো কথা শুনলো কিনা কে জানে?
মায়া রুম থেকে ভেসে আসলো বুকফাটা আর্তনাদের শব্দ। সেই কান্নার শব্দ গিয়ে পৌঁছালো আতিয়া বেগম এবং আরফ খানের কানে, কিন্তু কি জানি ভেবে তারা আর নিজেদের রুম থেকে বের হলো না।
কান্না করতে করতে মায়া কোনো রকমে ফোনটা হাতে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল নিজের রুম থেকে। ড্রয়িংরুমে সে কাউকেই দেখতে পেল না, তাই কাউকে কিছু বলেও বেরোতে পারল না।
মায়া কান্না করতে করতে গাড়ির কাছে গিয়ে ড্রাইভারকে বললো এয়ারপোর্টে যেতে।
_______________
এক ঘন্টা পর মায়া এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছালো, পরনের তার বাড়িতে পড়ার একটি নরমাল সুতি থ্রি-পিছ।
সারা রাস্তা পাগলের মত কান্না করতে করতে এসেছে মেয়েটা।
ওড়নাটা ভালো করে মাথায় টেনে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো মায়া।
গাড়ি থেকে নেমেই তাড়াতাড়ি ইমনকে কল করলো। ওপাশ থেকে ইমন কল রিসিভ করতেই মায়া উতলা হয়ে বলতে থাকে :-
-ভাইয়া আমি এয়ারপোর্টে চলে এসেছি,
আপনারা কোথায় আছেন এখন?
উনি এখন কেমন আছেন?
আমি কোথায় আসবো ভাইয়া? (মায়া)
-রিলাক্স, আপনি একটু শান্ত হোন ভাবি।
আপনি কোথায় আছেন আমাকে বলুন আমি আসছি আপনার কাছে। (ইমন)
-আমি টার্মিনাল দুইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। (মায়া)
- ok, আপনি ওখানেই দাঁড়ান আমি আসছি। (ইমন)
- ঠিক আছে একটু তাড়াতাড়ি আসুন ভাইয়া। (মায়া)
- ok (ইমন)
তারপর মায়া ফোন রেখে দিল, মায়া বুকের মাঝে নাম না জানা এক অশান্তির ঝড় সৃষ্টি হয়েছে । মায়া কোনভাবেই নিজেকে সামলাতে পারছে না। বারবার বুক ফেটে কান্না আসছে।
দুই মিনিটের মাথায় ইমন এসে পৌঁছাল মায়ার কাছে।
ইমনকে দেখে মায়া কান্না করতে করতে বলল:-
-ভাইয়া উনি কোথায়? (মায়া)
- তূর্য ভেতরে আছে, ওর অবস্থা খুব খারাপ হওয়ার কারণে ওকে যত দ্রুত সম্ভব লন্ডনের শিফট করছি। আপনি আমার সাথে ভেতরে চলুন আমি একবার আপনাকে ওর সাথে দেখা করিয়ে দিচ্ছি। (ইমন)
- ভাইয়া বাবইকে বিষয়টি জানানো উচিৎ ছিলো। দারান আমি বাবাইকে একটা কল করি। (মায়া)
-না, না, আঙ্কেলকে কিছু বলতে হবে না। আমি তন্নি এবং ওর হাসবেন্ডের সাথে কথা বলেছি, ওরাও বিষয়টি আঙ্কেল-আন্টিকে জানাতে নিষেধ করেছে। (ইমন)
মায়া আরাফ খানকে কল করতেই যাচ্ছিলো, কিন্তু তন্নি আর নিরব, খানবাড়ির কাউকে তুর্যর ব্যাপারে কিছু বলতে নিষেধ করেছে শুনে মায়া আর কল করলো না আরাফ খানকে।
তারপর ইমন মায়াকে সাথে করে সব ফর্মালিটি পূর্ণ করে এয়ারপোর্টের ভিতরে চলে গেল।
মায়া তখন ইমনকে জিজ্ঞেস করে :-
-আমরা এখানে কেনো আসলাম? (মায়া)
-তুর্য এখানে আছে তাই। (ইমন)
নিরব মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখল, অনেকটা সময় কান্না করার ফলে মায়ার চোখ-মুখ একদম শুকনো লাগছে। মায়ার গায়ের রং ফর্সা তাই কান্না করলেই গাল এবং নাক রক্তিম বর্ণ ধারণ করে।
এয়ারপোর্টের ভিতরে গিয়ে তারা একটি গাড়িতে উঠলো।
ইমন তখন গাড়িতে থাকা একটি পানির বোতল মায়ার দিকে এগিয়ে দেয়, মায়ার অনেকটা সময় ধরে পানি পিপাসা অনুভূত হচ্ছিল, তাই মায়া বোতল টা খুলে একটু পানি খেয়ে নিলো।
তারপর গাড়ি চলতে শুরু করে।
মায়া জানে যে গন্তব্য বেশি দূরে না,
সামনে থাকা কোনো এক বিমানের কাছে গিয়ে নামতে হবে তাদের।
কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই মায়া কিভাবে যেন ঘুমিয়ে পড়লো। গাড়ি থামতেই ইমন বেশ কয়েকবার ডাকলো মায়াকে।
___________________
মায়ার যখন ঘুম ভাঙে, তখন মায়া সুন্দর এবং পরিপাটি একটি রুমে নিজেকে আবিস্কার করে।
হঠাৎ মায়ার মনে পারে তুর্যর কথা, তুর্যর কথা মনে পরতেই মায়া তারাতারি করে উঠে বসলো।
তারপর হঠাৎ কান্না করতে করতে বলতে থাকলো:-
-তুর্য কোথায়?
কি হয়েছে তুর্যর?
আর আমি এখানে আসলাম কিভাবে? (মায়া)
তারপর মায়া ভাবলো, হয়তো অতিরিক্ত স্ট্রেস নেওয়ার কারণেই সে জ্ঞান হারিয়েছিল। কারণ মায়া যদি ঘুমাতো তাহলে দুই একবার ডাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মায়া উঠে পড়তো।
তখন গাড়ির মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পরার কারনে হয়তো ইমন তাকে এয়ারপোর্টের আসে-পাসের কোনো হোটেল রুমে রেখে তুর্যকে নিয়ে চলে গেছে।
এসব কিছু ভেবে মায়া কিছুক্ষণ হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না করতে থাকে।
তারপর কি যেন মনে হতেই ফোনটা খুঁজতে থাকে চারদিকে। একটু খোঁজাখুঁজির পরে টেবিলের ওপরে তার ফোনটা পেয়েও যায়।
ফোন হাতে নিয়ে মায়া প্রথমেই কল করে ইমন-এর কাছে। কিন্তু ফোনে কোন সিগনাল পাচ্ছিনা।
তাই মায়া ভাবলো:-
-বাসায় গিয়ে বাবাইকে এবার সবটা জানাতেই হবে।
তাই মায়া আর দেরি না করে দ্রুতো ঐ রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিল। কিন্তু দরজার কাছে যেতেই মায়া বুঝতে পারল দরজাটা বাইরের থেকে লক করা আছে।
মায়া কিছুক্ষণ নিজে নিজে দরজাটি খোলার চেষ্টা করে যখন ব্যর্থ হলো তখন সাহায্যের জন্য চিৎকার করা শুরু করল।
- Help. কেউ আছেন? আমি এই রুমে আটকে গেছি,
আমাকে প্লিজ এই রুম থেকে বের হতে সাহায্য করুন। (মায়া)
কিন্তু কোথাও কারো কোনো শব্দ পাওয়া গেল না, মায়া বুঝতে পারলো না তার সাথে এসব কি হচ্ছে। তাই রুমের এক কোণে হাঁটুতে মুখ গুজে বসে আছে সে।
কিছুক্ষণ পরে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে একটা ছেলেকে সেই রুমে ঢুকতে দেখা গেল।
কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে মায়া যখন মাথা তুলে তাকালো, তখন মায়া যা দেখলো, তা দেখার পরে মায়া নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না।
খাবার প্লেট হাতে নিয়ে স্বয়ং আব্রাহাম খান তুর্য দাঁড়িয়ে আছে মায়ার সামনে।
তূর্যকে সুস্থ অবস্থায় দেখে মায়া দ্রুত বসা থেকে উঠে তুর্যকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।
কিছুক্ষণ পরে মায়া কান্না করতে করতেই তূর্যকে জিজ্ঞেস করতে থাকে:-
- কিভাবে আপনার গুলি লাগলো?কারা আপনার উপর আক্রমণ করেছিল? (মায়া)
তখনই তূর্য বলে ওঠে -
সরি মায়া তোমাকে মিথ্যা বলা হয়েছিল, আমার আসলে কোনো গুলি লাগেনি, এয়ারপোর্টে আমার উপর কোন আক্রম মনে হয়নি।(তুর্য)
কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে মায়া তূর্যর গালে একটা চড় বসিয়ে দিল :-
-আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে আপনি এতটা নিচে নামতে পারেন। (মায়া)
তূর্য ভাবতে পারেনি মায়া থাকে চর দেবে, তবুও সে মায়াকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল :-
-মায়া আমার কথাটা আগে শোনো। (তুর্য)
-কি শুনবো?
শোনার মত কিছু বাকি রেখেছেন আপনি?
আমি আর আপনাকে এক বিন্দু পরিমাণও বিশ্বাস করি না।
"যে মানুষের আবেগ নিয়ে খেলতে পারে,
সে ঠান্ডা মাথায় খুনও করতে পারে"
আমি এক্ষুনি মামনি আর বাবাই এর কাছে যাব। (মায়া)
-এই মুহূর্তে সেটা তো সম্ভব না Baby. (তুর্য)
-কেন সম্ভব না?
আমি এক্ষুনি চলে যাবে এখান থেকে। (মায়া)
মায়া এবং তূর্য এই মুহূর্তে যেই রুমটাতে আছে সেই রুমটার একপাশের দেয়াল কাচের তৈরি। তূর্য সেই দেয়ালের সাদা রংয়ের পর্দাটা এক টানে সরিয়ে ফেলে বলল:-
-কারণ তুমি এখন বাংলাদেশে না, লন্ডন আছো। (তুর্য)
[বি. দ্র. গল্পটি আপনাদের ভালো লাগলে জানাবেন গল্পটির প্রতি যদি আপনাদের আগ্রহ থাকে তবেই গল্পের পরবর্তী পর্ব লিখব,
আপনাদের সাপোর্ট পেলে কালকেই গল্পের ষষ্ঠ পর্ব দিয়ে দেব। গল্পের পরবর্তী পর্ব পেতে সবাই পেজটি ফলো করে রাখবেন ]