Ekla Ami-একলা আমি

Ekla Ami-একলা আমি গল্প প্রেমীদের স্বাগতম......
(2)

 #প্রণয়ের_অন্তিমক্ষণ # লেখিকা_অনন্যা #পর্ব_১৬ 🍁আহনাফের গান শেষ হতেই চারদিক করতালিতে ফেটে পড়লো যেন।সবাই আহনাফকে আরেকটা গা...
05/09/2025

#প্রণয়ের_অন্তিমক্ষণ
# লেখিকা_অনন্যা
#পর্ব_১৬
🍁

আহনাফের গান শেষ হতেই চারদিক করতালিতে ফেটে পড়লো যেন।সবাই আহনাফকে আরেকটা গান গাওয়ার জন্য অনুরোধ করছে।কিন্তু আহনাফ আজ তাদের কথা রাখলো না।স্টেজ থেকে নেমে গেল সে।হাতে ব্যান্ডেজ করা হয়নি।রক্ত শুকিয়ে টানটান হয়ে গেছে।ব্যথায় টনটন করছে দুই হাত।তবে আজ বুকে ব্যথা বেশি তার।

কুহু দেখলো সবটা।তার কি হলো কে জানে! সবাইকে ঠেলেঠুলে সে বের হলো।পেছন থেকে আয়ান আর রোদেলা তাকে ডাকছে কিন্তু সে শুনলো না।সে আহনাফ যেদিকে গিয়েছে সেদিকে ছুটলো।রাহুল কপাল কুচকালো।যাচ্ছে কোথায় মেয়েটা?তার খুব কৌতুহল হলো।সেও সবার চোখের অগোচরে কুহুর পেছনে গেল।



-'আহনাফ ভাই, কি গানটা গেয়েছিস আজ মাইরি! অসাধারণ ভাই!

আদিতের কথা শেষ হতেই আরিফ বললো

-'মাইয়াগুলা যেভাবে তোরে দেখতেছিল রে মামা!

-'কোনদিন দেখে না ঐ ডায়নিগুলো? তবে যাই বল আহনাফ...আজকে অনেক জোস গেয়েছিস মামা।

নাতাশার কথা শেষ হতেই আহনাফ বললো

-'যাকে ডেডিকেট করে গাইলাম সে বুঝলেই হয়।

আদিতরা একসাথে সুর টেনে বললো--"ওওও!"

আহনাফ ফার্স্টএইড বক্স থেকে মেডিসিন বের করলো।কারো সাহায্য সে নিল না।নিজের কাজ সে নিজেই করতে পছন্দ করে।হঠাৎ তখন...

-'আসব?

সবাই দরজার দিকে তাকালো।এখন এই মুহূর্তে কুহুকে তারা কেউ প্রত্যাশা করেনি বোধহয়।তাদের চাহনিটা তেমন'ই ছিল। আদিত আহনাফের পাশেই ছিল।সে ফিসফিস করে বলে উঠলো

-'তোর ফুলটুশি এসে গেছে মামা।রাগ ভাঙ্গাবে মনে হয়।

আহনাফ কুহুকে একবার দেখেই নজর সরিয়ে নিয়ে আবার হাতে মেডিসিন লাগানোতে মনোযোগ দিয়েছে।কুহু ওদের কারো থেকে জবাব না পেয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলো---"ভেতরে আসব?"

আহনাফ কাটকাট গলায় বললো--"নাহ।" হতভম্ব হলো কুহু।বাকিরা মুখ টিপে হাসছে।নাতাশা বলে উঠলো

-'এহুম এহুম....কিরেহ মামা তোরা দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আরে বুঝতে পারছিস না বারবার আসব আসব কেন জিজ্ঞাসা করছে!! ইনডায়রেক্টলি আমাদের যেতে বলতেছে।

আদিত বলে উঠলো

-'এসব পিরিতের ভাষা বুঝি না বইন।একটা গার্লফ্রেন্ডের অভাব বোধ করছি মাইরি।ধুরু! ...একখান গার্লফ্রেন্ড চাই নিজের জন্য...প্যারা খাবো...পিরিতের ভাষা বুঝবো.. ফকির হবো সামান্য...

আদিত গান গাইতে গাইতে বেরিয়ে গেল পাছে টেনে আরিফকেও নিয়ে গেল।নাতাশা যাওয়ার আগে কুহুর কানে কানে বললো

-'বেস্ট অফ লাক...

কুহু বোকা বনে গেল। এদের কথার মাথামণ্ডু বুঝতে পারছে না সে।এমনভাবে বলছে যেন কুহু আহনাফের গার্লফ্রেন্ড! আর ওদের বেরিয়ে যেতেই বা সে কখন বললো? কুহু আহনাফের দিকে তাকালো।আহনাফ আর একবারও তার দিকে তাকায়নি।রাগ করলো? অবশ্য সেটা স্বাভাবিক।কুহু ভেতরে এলো।আহনাফের ক্ষতবিক্ষত হাত দেখে বিস্ময় স্বরে বলে উঠলো

-'একি! আপনার হাতে কি হয়েছে?

আহনাফ বললো না কিছু।সে অভিমান করেছে।কেন কথা বলবে সে?পারলে আজ তার অভিমান ভাঙ্গুক! আহনাফকে কথা বলতে না দেখে কুহু বললো

-'আ'আপনি কি রাগ করেছেন?

আহনাফ সরু চোখে তাকালো কুহুর দিকে।কুহু খানিকটা ভড়কালো।আমতা আমতা করে বললো

-'ইয়ে..আসলে...তখন...

-'বের হও...

কুহু বুঝলো না।তাকে কি বেরিয়ে যেতে বললো? সে বললো

-'জ্বী?

আহনাফ তার তাকালো।এরপর গম্ভীর স্বরে বললো

-'গেট আউট...

কুহু রাগে নাক ফোলালো এবার।রাগ ভাঙ্গাতে এসেছে বলে কি মাথায় উঠে নাচবে নাকি? কত্ত বড় সাহস তাকে বেরিয়ে যেতে বলে! কুহু কল্পনায় আহনাফের টুটি ধরে সটাং সটাং করে দুটো থাপ্পর লাগালো। তার ভাবনার মাঝেই আহনাফ চেঁচিয়ে উঠলো

-'বের হতে বলছি আমি...কানে শুনো না তুমি?

কুহু চমকে উঠলো।নাকের ডগার উপর পাতলা ফ্রেমের চশমাটা চশমাটা ঠিকঠাক করলো।বুকে থুথু দিয়ে বললো

-'এজন্য'ই আপনারে খাটাশ ডাকি।

আহনাফ রাগি চোখে তাকালো।কুহু নাকের ডগা ফুলিয়ে বললো

-'চোখ রাঙাচ্ছেন কাকে, হ্যাঁ?এই আপনাকে ভয় পাই আমি, হ্যাঁ!! ভয় পাই আপনাকে??

কুহু কথাগুলো বলতে আহনাফের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর বুকে ধাক্কা মেরে বলতে লাগলো

-'ভয় পাই আপনাকে আমি?ভয় পাই!! এমন এক...

আহনাফের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো।দাঁড়িয়ে পড়লো সে।উচ্চতায় সে অনেকটা লম্বা।কুহু তার বুক সমান।আহনাফ দাঁড়াতেই কুহু "ওমাগো" বলে দুই পা পিছিয়ে গেল।আহনাফ সরু চোখে তাকিয়ে তার দিকে।কুহু আবার বুকে থুথু দিয়ে বললো

-'আপনাদের কি হরলিক্সের ব্যবসা নাকি?

আহনাফ কিছু বলছে না সে শুধু কুহুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।কুহু বললো

-'ছোটবেলায় এক ছেলে আমার হরলিক্সের ডাব্বা নিয়ে দৌঁড় দিছিল।আপনি ছিলেন বোধহয় ঐ ছেলেটা তাই না?ঐ এক ডাব্বা হরলিক্স না খেতে পারার কারণে আজ আমি লম্বা হতে পারিনি আর আপনি বেশি লম্বা হয়ে গেছেন।দেখেছেন একটা ভুল কি করে সারাজীবনের কান্না হয়!

আহনাফ না চাইতেও ফিক করে হেসে ফেললো।সে বললো

-'কোথা থেকে পাও এসব উদ্ভট কথা?

আহনাফ নিজের জায়গায় বসলো আবার।কুহু দাঁত কেলিয়ে বললো

-'হাসলে কিন্তু রাগ থাকে না।দাদি বলতো আমাকে।

আহনাফের মুখ আবার গম্ভীর হয়ে গেল।ঠোঁটের হাসিটুকু শুষে নিল তার গম্ভীরতা।কুহু 'চ' সূচক শব্দ করলো তা দেখে। ওর পাশে একটু দূরত্ব রেখে বসলো।এরপর বললো

-'আসলে তখন আমি ওভাবে বলতে চাইনি।

-'ওভাবে বলতে চাওনি বাট ওটাই তো বলতে চেয়েছো।

-'আরে না না...

আহনাফ শব্দ করে হাসলো।ব্যঙ্গমিশ্রিত হাসি।কুহু বললো

-'আমি আপনাকে উদ্দেশ্য করেই কিছু বলতে চাইনি।আমি...বাদ দিন।...সরি...

আহনাফ তাকালো কুহুর দিকে।কুহু নিচের ঠোঁট কামড়ে রেখেছে।আহনাফ সেদিকে তাকিয়ে বললো

-'আমার সামনে কখনো ঠোঁট কামড়াবে না।

কুহু ঠিক করে ফেললো সাথে সাথে।আহনাফ দৃষ্টি সরিয়ে নিল।কিয়ৎক্ষণ নিরবতা পালন করলো দুজন।নিরবতা ভেঙে কুহুই বললো

-'উমম..আ'আপনার হাত তো অনেকটা কেটে গেছে।কি হয়েছিল?

আহনাফের ভনিতাহীন জবাব

-'দেয়ালে ঘুষি মেরেছি রাগ না কমা পর্যন্ত।

কুহু আহনাফের বাহুতে মৃদু থাপ্পর মেরে বললো

-'আরে ব্যাটা আপনি দেখি আমার মতো।

আহনাফ এক ভ্রু উঁচু করে একবার কুহুকে দেখছে আরেকবার কুহুর তার বাহুতে রাখা হাতকে দেখছে।কুহু দাঁত কেলানো বন্ধ করে সাথে সাথ হাত সরিয়ে নিল। আহনাফ আবার সামনের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইলো।কুহু বড্ড বিরক্ত বলো।সে সরি বলার পরেও এত রাগা মানা যাচ্ছে না।এই শেষবার সরি বলবে সে মানলে মানবে তানাহলে...তানাহলেও মানবে।কুহু গলা খাকারি দিয়ে বললো

-'সরি..আপনাকে ভুল করে বলে ফেলেছিলাম সেসব।আশা করি আর রাগ নেই?

আহনাফ এবারেও কথা বললো না কোনো।কুহুর রাগ সপ্তম আসমানে উঠলো এবার।সে উঠে দাঁড়ালো।চেতে বলে উঠলো

-'এই বাঙ্গির পোলা! এতক্ষণ ধরে মানাতে চাইছি মানছিস না কেন?আমার বয়ফ্রেন্ড না জামাই তুই যে এতো রাগ দেখাচ্ছিস!!

তুইতুকারিতে বড্ড বিরক্ত হলো আহনাফ।সে কিছু বলতে নিবে তখন কুহু আফনাফের দিকে ঝুঁকে তাকে কাতুকুতু দিতে দিতে বলতে লাগলো

-' রাগ ভাঙবে না মানে!! রাগের মা কা বাপ! হাস..হাস শা/লা!

আহনাফ হো হো করে হাসতে লাগলো।কুহুর হাত থামানোর চেষ্টা করছে সে।এক পর্যায় ধরাম করে বেঞ্চ থেকে পড়ে গেল।আহনাফ কুহুর এক হাত ধরেছিল তার দরূন তাকে নিয়েই নিচে পড়লো সে।ঘটলো এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।কুহু পড়লো আহনাফের উপর।তার ওষ্ঠ গিয়ে ঠেকলো আহনাফের ওষ্ঠের সাথে।দুজনের চোখ রসগোল্লা।ঠিক সেই মুহূর্তে সেখানে উপস্থিত হলো রাহুল।ওদের এভাবে দেখে তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।



-'ওরা কোথায় গেল বলোতো?

রোদেলা এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বললো

-'কি জানি!

আয়ান আর রোদেলা একটা সাইডে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে।স্টেজে এখনো নাচ-গান হচ্ছে।রোদেলার নজর হঠাৎ ক্যান্টিনের দিকে গিয়ে আটকালো।রাফি একটা বাইকে হেলান দিয়ে বিস্কুট খাচ্ছে।ছেলেটা আজ নীল রঙের একটা শার্ট পড়েছে তাও আবার ইন করে।অনেকটা পরিপাটি লাগছে আজ তাকে।

রোদেলা ভেবে পায় না এ এতো বিস্কুট পাগল কেন! সারাদিন বিস্কুট'ই খায় নাকি? বিস্কুটখোর মদনা।নামটা মনে মনে বলে নিজেই হেসে ফেললো রোদেলা।তবে তখনকার জন্য খারাপও লাগছে।এই রাহুল ভাইটা বেশি বেশি বলে।শা/লা একটা যাচ্ছে তাই।রোদেলা ভাবলো রাফিকে একটাবার সরি বলবে রাহুলের তরফ থেকে। রাফিকে সে সহ্য করতে পারে না সেটা অন্য ম্যাটার।রাহুল কেন ওসব বলবে? রোদেলা আয়ানের উদ্দেশ্যে বললো

-'ভাইয়া, আপনি থাকুন। আমি একটু আসছি।চলে আসবো এক্ষুণি...

আয়ানকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই রোদেলা হাওয়া হয়ে গেল।আয়ান দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।তাকে একা করে সবকটা চলে গেল।মিস নাতাশার সাথে একটু কথা বলা যাক বরং।কিন্তু সেই বা কোথায়?আয়ান এদিক ওদিক তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো।

এদিকে রোদেলাকে নিজের দিকে আসতে দেখে রাফির ভ্রু কুচকে এলো।রোদেলা তার সামনে এসে থামলো।রোদেলা কিছু বলতে নিলে রাফি হাত উঁচু করে থামিয়ে দিল। বিস্কুটের প্যাকেটটা দূরে সরিয়ে বললো

-'এবার বলুন..

রোদেলা বোকা বনে গেল।সে কি ওর বিস্কুট নিতে এসেছে নাকি? রোদেলা বললো

-'এটা কি হলো?

-'কি?

-'বিস্কুট সরিয়ে নিলেন যে আমাকে দেখে!

-'সেটা তো আপনি ভালো জানবেন।আল্লাহ জানে আমার বিস্কুটের সাথে আপনার কি শত্রুতা! যখন'ই আসেন তখন'ই আমার বিস্কুট আর আস্ত থাকে না।

রোদেলা ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো।ঐসব কথায় না গিয়ে সে বললো

-'তখনকার জন্য ঐ ভদ্রলোকের তরফ থেকে আমি সরি বলছি।কিছু মনে করবেন না।

রাফি কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।এরপর সে বলে উঠলো

-'কি ব্যাপার বলুন তো, মিস চোরনি! হঠাৎ এসব সরি টরি বলছেন যে! ঝেড়ে কাঁশুন তো!

রোদেলা তাকিয়ে রইলো তার দিকে।

-'আচ্ছা ঝামেলা তো! ভালোভাবে কথা বললে আপনার সহ্য হয় না নাকি?মদনা কোথাকারের!

রাফি বলে উঠলো

-'এই আপনি কিন্তু এবার আমাকে অপমান করছেন, মিস চোরনি।

রোদেলা হঠাৎ'ই ক্ষেপে গেল।সে এক আঙুল তুলে খেকিয়ে বলতে লাগলো

-'আপনি চোরনি, আপনার চৌদ্দগোষ্ঠী চোরনি! আবার যদি কোনোদিন বলেছেন তো...দেখবেন কি করি..

রোদেলা রাফির দিকে ঝুঁকে বলছিল কথাগুলো।রাফিও যথাসম্ভব মাথা পেছনে নিয়ে গেছে।তার হাত বাকা হয়ে কখন যে বিস্কুট পড়ে গেল সে বুঝতেও পারলো না তবে রোদেলা ঠিকই তা দেখলো।বোকা বনে গেল মেয়েটা।ঘনঘন আঁখিপল্লব ঝাপটালো সেদিকে তাকিয়ে।এরপর একবার রাফির দিকে তাকালো সে।কি করবে এখন সে? উল্টো দৌঁড় দিবে?যেই ভাবা সেই কাজ।আচমকা মেয়েটা উল্টোদিকে দৌঁড়ানো আরম্ভ করলো।রাফি ভড়কালো।কি হলো হঠাৎ? ওর পালিয়ে যাওয়া দেখতে দেখতেই সে বিস্কুটের প্যাকেটে হাত ঢোকালো।এদিক ওদিক হাত দিয়ে যখন কিছু পেল না তখন সে তাকালো প্যাকেটটার দিকে।

আয়হায়! বিস্কুট কই গেল?পেছনে ঘুরে তাকাতেই দেখে সব নিচে পকাত হয়ে পড়ে রয়েছে।রাফি রোদেলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো----"চোরনিইইইইই!! অ্যা..অ্যা আমার বিস্কুট..!"

রোদেলা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আয়ানের পাশে এসে থামলো।হাঁপাচ্ছে মেয়েটা।আয়ান কপাল কুচকালো।রোদেলা পেছন ঘুরে তাকালো।আয়হায়! রাফি আসছে দেখি! রোদেলা আবার ভোঁ দৌঁড় লাগালো।রাফিও ছুটলো পেছন পেছন।আয়ান বোকার মতন ওদের ছুটতে দেখছে শুধু।



-'বার্ড!

বড্ড আকুলভরা সরে বলে উঠলো রাহুল।সে জানে না তার কেন খারাপ লাগছে।তবে সে কিছুতেই আহনাফের সাথে কুহুকে সহ্য করতে পারছে না।কুহু আহনাফের উপর থেকে উঠে দাঁড়ালো তাৎক্ষণাৎ।আহনাফ এখনও হতভম্ব।কি হলো এটা?কুহু তেঁতে আহনাফকে কিছু বলতে যাবে তখন তার নজর গেল দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা রাহুলের দিকে।কিছু বলতে নিয়েও বললো না।আহনাফ তাকিয়ে কুহুর দিকে।কুহু রাহুলের দিকে তাকিয়েই আহনাফের দিকে হাত বাড়ালো।

-'হোল্ড মাই হ্যান্ড..জান।

আহনাফ ভড়কালো।জান! ঠিক শুনলো সে?সে বললো---"অ্যাঁ!"

কুহু তাকালো তার দিকে।এরপর একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো

-'হাতটা ধরো, সোনা।

আহনাফের মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে।যদি স্বপ্ন'ই হয় তাহলে তার ঘুম যেন আর না ভাঙে।সে এই স্বপ্নেই থাকতে চায়।আহনাফ হা করে থেকেই হাত বাড়ালো।কুহুর হাত ধরে উঠলো সে।কুহু আহনাফের শার্টের কলারটা ঠিক করে দিতে দিতে বললো

-'তুমিও না! কি করলে এটা তখন! এটা ভার্সিটি, সোনা।ভুলে গেলে? যদি কেউ দেখে ফেলতো! আমার বুঝি লজ্জা লাগে না!

কুহু আলতো করে আহনাফকে জড়িয়ে ধরলো।আহনাফের হার্টবিট বেড়ে গেল।শরীরের পশম দাঁড়িয়ে গেল তার।তার তিলোত্তমা তাকে জড়িয়ে ধরলো! আহনাফ বুঝি পাগল হয়ে যাবে।আহনাফ কাঁপা কাঁপা হাত রাখলো কুহুর পিঠে।

রাহুল হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে ফেললো।চলে গেল ওখান থেকে সে।সে ভেবে পাচ্ছে না যে তার এতো রাগ লাগছে কেন।কুহু যার সাথে যা খুশি করুক তাতে তার কি? সে তো কুহুর জন্য দেশে আসেনি।সে তো...তাহলে কেন এমন লাগছে?রাহুল ফুঁসতে ফুঁসতে হাঁটতে লাগলো।



-'একবার ভালোবাসি বলবে?প্লিজ...

কুহু চোখমুখ কুচকে তাকালো আহনাফের দিকে।বাঙ্গির পোলা দেখি ইমোশনাল হয়ে গেছে! কুহু 'চ' সূচক শব্দ করলো নিজের এহেন কাজে।রাহুলকে দেখলেই তার চান্দি গরম হয়ে যায়।কি করে না করে হুঁশ থাকে না।সে ধীরে ধীরে ছাড়তে চাইলো আহনাফকে।তবে আহনাফ ছাড়লো না।সে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।কুহু বলে উঠলো

-'ছাড়েন ভাই...আমি আপনার কোলবালিশ না।

আহনাফ চোখ বুজে ছিল।সেভাবেই মুচকি হেসে বললো

-'আজ বুঝলে তুমি আমাকে! আজ সময় হলো তোমার আমাকে জড়িয়ে ধরার।কতগুলোদিন আমি অপেক্ষায় ছিলাম জানো!

কুহু এবার ঝাটকা মেরে ছাড়িয়ে নিল।

-'আরে ধুরো....দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আর আপনি বাঙ্গির ডায়লগ মারতেছেন!

আহনাফ বাচ্চাদের মতো তাকালো কুহুর দিকে।কুহু দেখলো তা।হতাশার শ্বাস ফেললো সে।এরপর বললো

-'আপনাকে কষে দুটো চড় মারতে ইচ্ছা করছে।

আহনাফ ওর দিকে ঝুঁকে নিজের গাল বাড়িয়ে দিল।হতভম্ব কুহু! এ কে বে! গাল বাড়িয়ে দিল!! আহনাফ হঠাৎ বলে উঠলো

-'আমার না তোমাকে কোলে তুলে নাচতে ইচ্ছা করছে।তুমি থাপ্পর মারার পর নাচবো।ঠিক আছে?

আহা! কি নিষ্পাপ আবদার! কুহু মুখ কুচকালো।আহনাফ বলে উঠলো

-'এই! মারলে যদি তোমার হাতে ব্যথা লাগে! আমি মেরে দিব নিজেকে?

কুহু হতভম্ব হয়ে বললো---"অ্যাঁ!!"

-'ওয়েট..

আহনাফ নিজের গালে থাপ্পর মারতে নিলে কুহু আটকে দিল।কপাল চাপড়াতে ইচ্ছা করছে তার।এক কালে সে আল্লাহকে বলেছিল তার জীবনে এমন একজনকে পাঠাতে যে তাকে ছাড়া কিছুই বুঝবে না।আল্লাহ দেখি সিরিয়াসলি নিয়ে নিছে।কুহু বলে উঠলো

-'আপনি পাগল হয়ে গেছেন।

আহনাফ হঠাৎ খুশিমনে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো

-'হ্যাঁ, আমি পাগল হয়ে গেছি আজ।আজ আমার তিলোত্তমা আমাকে...

কুহু আহনাফের মুখ চেপে ধরলো।আহনাফ জোরে জোরে হাসতে লাগলো।কুহু হা করে দেখতে লাগলো তার আনন্দ উল্লাস।কুহু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।কোন কারণে ওসব করেছে সেটা শুধু সেই জানে।সে বললো

-'আপনি এখনো আমার অতীত জানেন না।সো ব্যাঙের মতো লাফানো বন্ধ করুন।

আহনাফ উৎফুল্ল মনেই বলে উঠলো

-'পাস্ট ইজ পাস্ট,বেইবি।ডোন্ট ইউ নো দ্যাট?

কুহু তেঁতে বলে উঠলো

-'একদম বেবি টেবি বলে ডাকবেন না।আর এই পাস্ট কোনো সাধারণ পাস্ট নয় লা এ বর্তমান আর ভবিষ্যত ধ্বংস করার মতো পাস্ট।বুঝছেন?

কুহু ঝাড়ি মেরে বললো।আহনাফের হাসি উবে গেল।কুহু বললো

-'আপনি যেমন পাগলামো শুরু করেছেন আপনাকে এটা জানাতেই হবে।

আহনাফ গম্ভীর হলো আগের মতো।---"বলো।"

-'এখানে নয়, অন্য কোথাও।কোথায় মিট করবো জানিয়ে দিব আমি।আর এটা সিউর থাকুন যে ঐ পাস্ট জানলে আপনি আর আমার দিকে ফিরেও তাকাবেন না।এতোটাই জঘন্য আমার অতীত।

কুহু তাচ্ছিল্যের করে হাসলো। আহনাফ কপাল কুচকালো।কি এমন অতীত রয়েছে তার? ও কি কাউকে ভালোবাসতো? তো? বাসতেই পারে।এতে জঘন্যর কি আছে?আচ্ছা এজন্যই কি তার তিলোত্তমা তার সাথে এতো দূরত্ব সৃষ্টি করে রেখেছে?নাকি অন্যকিছু?

অকুহু আবার বললো

-'আপনার মনে আমার জন্য এখন যেই ভালোবাসাটা আছে সেটা তখন ঘৃণায় পরিণত হবে।

আহনাফ আলতো হেসে বললো

-'আমার ভালোবাসা এতোটা ঠুংকো নয় যে, কোনো অতীত শুনে তা ঘৃণায় পরিণত হবে।আর চাঁদের গায়ে কলঙ্ক আছে জেনেও কিন্তু মানুষ তাকে ভালোবাসে...ঘৃণা করে না।

কুহু হাসলো..যেন বুকের মাঝে অনেকটা কষ্ট নিয়ে হাসলো সে।আহনাফ দেখে গেল তা।

মাঝে কেটে গিয়েছে তিনটা দিন।যে যেরকম ছিল সে সেরকমই আছে।তবে কুহু আর ভার্সিটি যানয়নি।আজও যায়নি।আজ সে আহনাফের সাথে দেখা করতে যাবে।ছেলেটা যা শুরু করেছে থাকে এবার সবটা বলাই লাগবে। হঠাৎ বাহির থেকে একটা বিনের সুর ভেসে এলো।চমকালো কুহু।জানালার কাছে গেল দৌঁড়ে।সাপুড়ে বিন বাজাচ্ছে আর সাপটা কোমর দোলাচ্ছে।সাপটা দেখে চট করে কুহুর কিছু একটা মনে এলো যেন।সে দৌঁড়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিল।রাহুলের সাথে বিচ্ছেদ হলেও একে অপরকে তারা ব্লক করেনি।কেন করেনি কেউ জানে না।সে ম্যাসেঞ্জারে গিয়ে রাহুলের আইডিতে গিয়ে অনেক বছর পর ম্যাসেজ করলো

"Ei apni ki nachtechen?"

কিছুক্ষণের মাঝেই ম্যাসেজটা সিন্ হলো।কুহু ভেবেছিল সিন্ করবে না।রাহুল রিপ্লাই করলো

"Mane?"

"Na mane amader ekhane ekjon sapure bin bajacche tai jiggasa korlam. Sorry, nache disturb kore fellam."

রাহুল হতভম্ব নয়নে তাকিয়ে রইলো ম্যাসেজটার দিকে।ভাষা হারিয়ে ফেলেছে যেন।

#চলবে....

 #পরিণীতা  #পর্ব: ১৮ # তানজিনা ইসলামহসপিটাল থেকে বেরিয়ে পার্কিং লটে এসে দাঁড়ালো প্রত্যুষ।প্রতিবারের মতো এবারেও ব্যর্থ হয়...
05/09/2025

#পরিণীতা
#পর্ব: ১৮
# তানজিনা ইসলাম

হসপিটাল থেকে বেরিয়ে পার্কিং লটে এসে দাঁড়ালো প্রত্যুষ।প্রতিবারের মতো এবারেও ব্যর্থ হয় নি সে,অপারেশন সাকসেসফুল। ধীর গতিতে গাড়িতে ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলো সে।সন্ধ্যা তার চির চেনা রূপে আলো আর আধারের মিশেলে।গুড়ি গুড়ি তুষারপাত শুরু হয়েছে গতরাত থেকে।পেঁজা তুলোর মতো শুভ্র,নরম তুষারের কুঁচি অবিরত ঝড়ে পরেছে।ড্রাইভিংয়ের মাঝেই প্রত্যুষ জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি তাক করলো।ব্যস্ত জনজীবন। রাস্তা দিয়ে সবাই সোয়েটার, মাফলার আর টুপি পরে নিজেদের বাড়ি ফিরতে ব্যস্ত।ছোট ছোট বাচ্চারা ছুটোছুটি করে পার্কে বা খালি জায়গায় স্নো ম্যান বানাচ্ছে। অনেকেই আবার বড়দিন উপলক্ষে ক্রিসমাস ট্রি সাজাচ্ছে।মুচকি হাসলো প্রত্যুষ।আশেপাশের সবকিছুই নতুন করে সজ্জিত করতে ব্যস্ত সবাই।ভালো লাগছে দেখতে।জানালা দিয়ে হুড়মুড় করে ঠান্ডা, স্নিগ্ধ বাতাস প্রবেশ করছে।কপালের উপর পরা ছোট ছোট চুলগুলো উড়ছে প্রত্যুষের।একহাতে জ্যাকেটের হ্যাডটা তুললো ও।এই ভর সন্ধ্যায় গান শুনে সময়টা কাটালে মন্দ হয় না।ড্রাইভিং করতে করতে মিউজিক শোনার ইচ্ছে পোষণ করলো সে। ভলিউম বাড়াতেই সুক্ষ স্বরে নারী কন্ঠে ভেসে আসলো রবীন্দ্র সংগীত

তুমি সুখ যদি নাহি পাও, যাও সুখের সন্ধানে যাও
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে আর কিছু নাহি চাই গো
আমার পরান যাহা চায়, তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমার পরান যাহা চায়, তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই, কিছু নাই গো আমার পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো আমার পরান যাহা চায়।

গানের সুরে সুরে ঠোঁট মেলায় প্রত্যুষ।দীর্ঘ রাস্তা পাড়ি দিয়ে এসে থামে একটা ডুপ্লেক্স হাউজের সামনে।ক্লান্ত ভঙ্গিতে নিচে নেমে সদরদরজার সামনে এসে দাঁড়ায় ও। মিনিটখানেক বেল বাজানোর পর অবশেষে বাড়ির একজন সার্ভেন্ট এসে দরজা খুলে। লেইট হওয়ার দরুন বিনীত ভঙ্গিতে সরি জানায় প্রত্যুষকে।প্রত্যুষ গম্ভীর স্বরে 'ইট’স ওকে' বলে বাড়ির ভেতর ঢুকলো।কাঁধ ব্যাগটা সোফার উপর রেখে পরণের জ্যাকেট খুলে, টেনেটুনে শার্টের কয়েকটা বোতাম খুললো।আলসে ভঙ্গিতে এসে নিজেও বসলো সোফার উপর।ও বসতেই কেও একজন পা দু'টো জড়িয়ে ধরে ওর।প্রত্যুষ চমকে নিচে তাকালো।

-"পাপ্পা।"

প্রোজ্জ্বল তার কুট্টি কুট্টি দাঁত বের করে বললো।প্রত্যুষ ঠোঁট বিস্তৃত করে উজ্জ্বল হাসে।দু-হাত বাড়িয়ে আলতো হাতে কোলে তুলে নিলো ওঁকে। প্রোজ্জ্বল নিজের বাবার বুকের সাথে লেপ্টে থাকে।প্রত্যুষ চুমু খেলো ওর মাথায়।আদুরে স্বরে বললো

-"আমার পাপ্পা টা কেমন আছে!"
-"আমি বালো নেই।মিচ করেচি পাপ্পাকে।"
প্রোজ্জ্বল তার আধো আধো বুলি আওড়ে বললো।প্রত্যুষ হেসে দেয়।নরম গাল দুটো টেনে দিয়ে বলে
-"আমিও আমার বাচ্চা কে অনেক মিস করেছি!আজকে কী খাওয়া হয়েছে?"
-"কিচু কাইনি!" প্রোজ্জ্বল ঠোঁট উল্টে বললো।

প্রত্যুষ ভ্রু কুঁচকালো। গম্ভীর স্বরে বললো
-"কেন খাওনি?তোমার রওশা মাম খেতে দেয়নি কিছু তোমাকে।"

প্রোজ্জ্বল উত্তর দিলো না।প্রত্যুষ দাঁড়িয়ে যায়।উচ্চস্বরে ডাকলো
-"রওশা,রওশা!

রওশা হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে আসলো।প্রত্যুষকে দেখে বললো
-"আপনি চলে এসেছেন? "
-"ওঁকে খাওয়াননি কেন?"

রওশা অপ্রস্তুত হলো!মিনমিন করে বললো
-"আমি খাওয়ানোর চেষ্টা করেছি অনেক।কিন্তু ও আপনাকে ছাড়া খাচ্ছিলোই না।"
-"তাই বলে ও সকাল থেকে না খেয়ে থাকবে।আপনি আমাকে অন্তত একবার ফোন দিয়ে জানাতে পারতেন।"
-"অনেকবার কল করেছি আপনাকে।আপনি ফোন ধরেননি।"

রওশা মাথা নিচু করে বললো।প্রত্যুষ প্রোজ্জ্বল কে কোলে নিয়ে এক হাতে নিজের ফোন অন করে দেখলো বিশটা মিসড কল।কপাল কুঁচকে ফোনটা ছুড়ে মারলো সোফার উপর। গম্ভীর স্বরে বললো

-"সাইলেন্ট ছিলো!"

বলেই প্রোজ্জ্বল কে কোলে নিয়ে প্রস্হান করলো সেখান থেকে।রওশা মাথা নিচু করে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে।
প্রত্যুষ শার্ট না বদলেই কিচেনে গেলো।প্রোজ্জ্বল কে নামিয়ে দিলো কোল থেকে।চার বছরের প্রোজ্জ্বল টুকুর টুকুর দৃষ্টিতে দেখলো বাবার কাজ। চুলায় প্যানে করে দুধ গরমে দিলো প্রত্যুষ।হালকা জাল দিয়ে কুসুম গরম দুধ ফিডারে ভরলো।প্রোজ্জ্বল কে আবার কোলে নিয়ে বেরোলো কিচেন থেকে।
কক্ষে ঢুকে ওকে কোলে বসিয়ে নিজেও বসলো বিছানার উপর। প্রোজ্জ্বল বাবার বুকের সাথে লেপ্টে চুপচাপ ফিডার খাচ্ছে। বাবা ছাড়া কিছুই বোঝে না বাচ্চা টা।এমনকি বাবা না আসা পর্যন্ত খাইও না।তাই এখনও ফিডার ছাড়াতে পারেনি প্রোজ্জ্বল থেকে, যেহেতু ও বেশিরভাগ সময় বাইরে কাটায়।ফিডার খাওয়ানো শেষে ওঁকে বিছানার উপর বসিয়ে দিলো প্রত্যুষ।খেলনার জিনিসগুলো এগিয়ে দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো প্রোজ্জ্বলের সামনে।চোখে-মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো

-"নামবে না কেমন!এখানে বসে খেলো, বাবা এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি।"

বলেই সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো প্রত্যুষ।ঘন্টাখানেক ধরে গোসল করার পর বের হলো প্রত্যুষ।টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছে সেটা মেলে দিলো বেলকনিতে।রওশা খেলছে প্রোজ্জ্বলের সাথে।প্রোজ্জ্বল নিজের আধো আধো বুলিতে কিছু একটা বোঝাচ্ছে ওঁকে। প্রত্যুষ রুমে আসতেই রওশা হাসলো ওর দিকে চেয়ে। বললো

-"আপনি বাড়িতে থাকলে ঠিকই আমার সব কথা শুনে,হেসে খেলে সময় কাটায়।কিন্তু বাইরে যাওয়ার পর সেই যে মুখে অমাবস্যা নামে,আমি আর হাজার চেষ্টা করেও মুখে হাসি ফোটাতে পারি না।"

প্রত্যুষ কিছু না বলে এগিয়ে এসে বসলো বিছানার উপর। প্রোজ্জ্বল বিছানার উপর হামাগুড়ি দিয়ে ওর কোলে উঠে বসলো।রওশা আমতা আমতা করে বললো

-"খাবেন না?"
-"আপনি খেয়ে নিন।খিদে নেই আমার!"

রওশা জোড়াজুড়ি করতে পারলো না।এতোগুলা বছরেও মানুষটার সাথে স্বাভাবিক হতে পারলো না ও।রওশা উঠে দাঁড়ালো।আবদার করে বললো

-"আজকে ও আমার সাথে থাকুক!"
-"রেখে লাভ কী রওশা!সেই তো মাঝরাতে কাঁদতে কাঁদতে চলে আসবে।আগের বারও তো এমনিই হয়েছিলো। "

রওশা উত্তর দিতে পারলো না।একই ছাঁদের নিচে থাকলেও এখনো দুজনের মাঝে বিস্তর দূরত্ব। এখনো দুজনে আলাদা রুমে থাকে।একজন আরেকজন কে অদেখা করে সময় কাটায়।সদ্য পরিচিত মানুষের সাথে আমরা যেভাবে মত বিনিময় করি সেভাবেই কথা বলে ওরা।প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া আর কোনো কথাই হয় না দুজনের মাঝে। রাতে প্রোজ্জ্বল বাবার সাথেই থাকে।দীর্ঘশ্বাস ঝাড়লো রওশা।আলতো পায়ে বেরিয়ে গেলো কক্ষ থেকে।প্রত্যুষ একপলক সেদিকে তাকিয়ে উঠে দাড়িয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।

রওশা তাকিয়ে থাকলো বন্ধ দরজার দিকে।প্রত্যুষ আগের মতো খারাপ ব্যবহার করে না ওর সাথে,তুচ্ছতাচ্ছিল্যও করে না ওঁকে। কিন্তু ওর প্রতিটা বিষয়েই প্রত্যুষ নির্লিপ্ত, কেমন একটা গা-ছাড়া ভাব ওর। যা বুকের মধ্যে অসম্ভব পীড়া দেয়।রওশার কান্না উগলে আসে।টলমল চোখে তাকালো ও বন্ধ দরজার দিকে।আজ ও কক্ষের বাইরে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে, অথচ এটা ওর কক্ষ হওয়ার কথা ছিলো।এ কক্ষ আর এ কক্ষে থাকা মানুষ দু'টোর উপর ওর সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে।কিন্তু সে অধিকার ফলানোর ক্ষমতা ওর নেই। রওশা টালমাটাল পায়ে পাশের রুমে ঢুকলো। প্রত্যুষ আর ওর রুম পাশাপাশি। দরজা বন্ধ করে দরজা ঘেঁষে বসলো ও।রাতের খাবার টুকু খাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করলো না। প্রতিটা রাতেই এমন হয়।প্রত্যেকটা দীর্ঘ রজনী ওর একাকিত্ব আর দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গী। আর পাঁচ টা মেয়ের মতো ওর স্বামী, সন্তান নিয়ে সুখের সংসার হলো না কেন!রওশা নিজেকে প্রশ্নে জর্জরিত করলো।পরক্ষণে উত্তর পেয়েও গেলো।ঐ যে অভিশাপ। যে মেয়েটা তার স্বামী কে না পাওয়ার দুঃখে মরতে বসেছিলো,তার ভালোবাসার পরিমাণ কতটুকু ছিলো!ভাবতে পারলো না রওশা।এসব ভাবলে বুক চাপড়ে কাঁদা ছাড়া আর কিছুই করার সুযোগ থাকে না।কিন্তু রওশা এটুকু জানে মেয়েটার ভালোবাসা ওর চেয়ে সহস্র গুণ বেশি ছিলো।তবুও মেয়েটাকে তার ভালোবাসা ফিরিয়ে দেয় নি ও,দিতে পারেনি।জীবন ওঁকে সেই সুযোগ দেয় নি।

রওশা হাঁটুতে থুঁতনি ঠেকিয়ে একইভাবে বসে থাকলো পুরো রাত।ভোরের আলো ফুটতে শুরু করে। জানালা দিয়ে রোদের তীর্যক আলো পরতেই হুঁশ ফেরে ওর।দেয়াল ঘড়ির দিকে চোখ পরতেই দেখলাে ঘড়ির কাটায় সাতটা বেজে দশ মিনিট। তড়িঘড়ি করে দাঁড়িয়ে পড়ে ও।ওয়াশরুম থেকে চোখেমুখে পানির ছটা দিয়ে বেরিয়ে আসে।পুরো রাত না ঘুমানোর ফলে মাথা ধরে গেছে।এক কাপ কড়া করে কফি না খেলে শান্তি মিলবে না ভেবেই কক্ষ ছেড়ে বেরোলো ও।কিচেনে যেতেই থেমে যায় ওর পা।প্রত্যুষ ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছিলো কিচেনে।ওঁকে দেখতেই টেডি হেঁসে বললো

-"উঠে গেছেন আপনি!"

রওশার মুখে হাসি ফুটে।সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে প্রিয় একজনের মুখে হাসি দেখতে কার না ভালো লাগে।বিনীত ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো ও।বললো

-"আসলে,মাথা টা খুব ধরেছে।এক কাপ কফি বানাতাম।"
-"আপনি বসুন আমি বানিয়ে আনছি!"
মুচকি হেসে সম্মতি জানালো রওশা।ফুরফুরে মন নিয়ে বসলো সোফার উপর।

প্রত্যুষ রেডি হচ্ছিলো হসপিটালে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।রওশা পা টিপে টিপে এসে দাড়ালো ওর সামনে।কিছু একটা বলার চেষ্টা করলো ও কিন্তু বলতে যেয়েও আটকে যাচ্ছে বারংবার।ওঁকে উশখুশ করতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো প্রত্যুষ।গম্ভীর স্বরে বললো

-"কিছু বলবেন?"
-"হ্যাঁ।"
-"বলেন।"
-"আমার না খুব করে একটু বাইরে যেতে মন চাচ্ছে। শপিং করতে যায়?"রওশার কন্ঠে আকুলতা।

প্রত্যুষ তার কন্ঠে বরাবরের মতোই গাম্ভীর্য ঢেলে বললো
-"এখানে আমার পারমিশনের কী আছে!আপনার ইচ্ছে হলে যান।আমি তো কোনো কিছুতে বিধিনিষেধ দিইনি আপনাকে।"

রওশার মনঃক্ষুণ্ন হলো,আসলেই কপাল ওর!সে কোথায় যায় না যায় তা নিয়ে তার স্বামীর বিন্দুমাত্র কনসার্ন নেই।প্রত্যুষ নিজের মানিব্যাগ থেকে ক্রেডিট কার্ড এগিয়ে দেয় ওঁর দিকে।ব্যস্ত কন্ঠে বলে
-"যা যা লাগবে নিয়েন!"

রওশা হাত বাড়িয়ে গ্রহণ করলো।প্রত্যুষ পায়ে মোজা পরতে পরতে বললো

-"প্রোজ্জ্বল কে তাহলে আমার সাথে নিয়ে যাচ্ছি!আপনি যেহেতু ঘুরতে যাবেন,ওঁকে তো একা রাখা যাবে না!"
-"এমা!তা কেন হবে?আমি কী একা যাবো না-কি ঘুরতে!প্রোজ্জ্বল কে নিয়েই যাবো!"
-"আচ্ছা, আমি ড্রাইভার কে বলবো। আপনার যেখানে যেখানে যেতে মন চাইবে যাইয়েন।"

বলেই উঠে দাঁড়ালো প্রত্যুষ।ঘুমন্ত প্রোজ্জ্বলের কপালে চুমু দিয়ে,কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো কক্ষ ছেড়ে।

ব্যালকনির ডিভানের উপর বসে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে প্রাণেশা।দৃষ্টি তার পিচঢালা রাস্তার দিকে।সোনালী রঙের রোদ্দুর আঁচড়ে পরছে ওর চোখেমুখে।উপর থেকে শান্ত দেখালেও মনের মধ্যে খচখচ করছে ভীষণ। নির্বাচন কে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকদিন ধরেই গ্রামে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে।তবে সেটা কী শুধুই নির্বাচন কে কেন্দ্র করে কি-না তা জানা নেই কারো!সৌরভ সরদারও নিশ্চয়ই হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।এতো দিনের পদ হারিয়ে এত বড় হারের পর কোনো না কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।কিন্তু চিন্তার বিষয় হচ্ছে এখনো পরিস্থিতি ঠান্ডা,তার দলের ছেলেদের কোনো হদিস নেই,ঝড় আসার পূর্বাভাস যাকে বলে।নিচে নেমে দাঁড়ালো প্রাণেশা।আজকে একটা সুন্দর দিন, এসব ভেবে নষ্ট করতে চায় না ও।ধীর পায়ে কক্ষের ভেতর ঢুকলো ও।রুমটা বেশ বড় আকৃতির। রুমের একপাশে লাইব্রেরির মতো করে সাজানো।পুরো রেক জুড়ে উপন্যাসের বইয়ে সাজানো।প্রাণেশার উপন্যাস পড়ার নেশাটা প্রবল।শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দেবদাস উপন্যাস হাতে আবার বেলকনিতে আসলো ও।বেলকনিতে সাদা রঙের একটা একক দোলনা আছে।দোলনার চারপাশে সাজানো বিভিন্ন ধরনের টব।প্রতিটা টবে ভিন্ন ভিন্ন ফুলের গাছে ভর্তি।প্রাণেশা দুপা তুলে বসলো দোলনার উপর।বইয়ের পাতা উল্টে বের করলো একটা চিঠি।চিঠির ভাজ খুলে শান্ত দৃষ্টি বুলিয়ে পড়তে আরম্ভ করলো।

প্রিয় প্রাণ,
জানি প্রিয় ডাকার অধিকার নেই আমার।সব অধিকার হারিয়ে ফেলেছি নিজের দোষেই।তোর নরম মনকে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলেছি।তোকে কাঁদিয়েছি,কষ্ট দিয়েছি।কিন্তু বিশ্বাস কর তোকে কষ্ট দিয়ে আমি ভালো ছিলাম না।তোঁকে কাঁদিয়ে আমি মরে গেছি।যখন নিজের প্রাণের উপর আঘাত আসে,তখন কে-ই বা ভালো থাকতে পারে বল!আমার হাতে আর বেশি সময় নেই। কিছু দিন পরেই চলে যাবো হয়তো।তোকে আর দেখা হবে না রে।তোর মুখটা না দেখলে যে আমার পুরোটা দিন খারাপ যায়।ইউ নো, তুই আমার লাকি গার্ল।আমার ছোটোবেলা,আমার পুতুল।তুই এখনো আমার কাছে সেই ছোটোটিই রয়ে গেছিস।যাকে আমি কোলে নিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরতাম।যে একটা পুতুলের মতো আমার বুকে লেপ্টে থাকতো।আমার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতো।তুই আমার জীবনে ঘটা ঘটনাগুলো যতটুকু জানিস ততটুকু তো আমার জন্মদাত্রী মা-ও জানে না রে!যেদিন থেকে তুই পৃথিবীতে আসলি সেদিন থেকে আমার ভাগ্যে শুধুই পূর্ণতা ছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমার, সেই লাক আমি ধরে রাখতে পারলাম না,তুই আমার পূর্ণতা হলিনা।কিন্তু বিশ্বাস কর ভালোবাসা আমার জীবনে শুধু একবার এসেছে।আর কোনোদিন আসবে না!কথা দিচ্ছি আর কোনোদিন আসবে না।আসতে দেব না আমি।ভালোবাসলে শরীর ছুঁতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।আমার মনে সর্বদা তোর বসবাস থাকবে,দূর থেকেই আমি ভালোবেসে যাবো প্রাণ।কিন্তু আমি চাইবো তোর জীবনে ভালোবাসা আবার আসুক।কেও তোকে খুব করে ভালোবাসুক।আমি শেষ হয়ে যায়,কিন্তু তোর একটা সুখের সংসার হোক।নিজের যত্ন নিস জান।ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করিস।অবহেলা করিস না নিজের প্রতি।কোনো বেইমানের জন্য আর নিজের মূল্যবান চোখের জল নষ্ট করিস না।ভালো থাকিস।শেষবারের মতো, ভালোবাসি!

ইতি
তোর প্রত্যুষ ভাই।

প্রাণেশার হাত কাপে।যতবার চিঠিতে চোখ বুলায় ও ততবার রক্তক্ষরণ হয় বুকের মধ্যে।দিনের শুরুতে প্রতিদিন একবার করে চিঠিটা পড়ে ও।বাইরে থেকে নিজেকে যতই শক্ত দেখাক কিন্তু ভেতরটা যে ভেঙে চুড়ে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে সেটা একমাত্র বন্ধ ঘরের মধ্যেই অনুভব করতে পারে প্রাণেশা।চিঠিটা বইয়ের ভাজে রেখে উঠে দাড়ালো প্রাণেশা।বেলকনির রেলিঙ ধরে আকাশপানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। বিরবির করে বলে

-"আল্লাহ, যখন মানুষ টাকে ভাগ্যে রাখলেই না,তবে কেন মনের মধ্যে রাখলে!কেন ছয়টা বছরেও ভুলতে পারলাম না আমি তাকে।দীর্ঘ ছয়টা বছর কী যথেষ্ট ছিলো না তাকে ভোলার জন্য। তাহলে কেন প্রতিনিয়ত আমার মনে আরো গভীর ভাবে বসবাস করছে সে!আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি নিজের সাথে লড়াই করতে করতে।আর পারছি না,আল্লাহ।আমি সত্যিই আর পারছি না!"

পলক ভূইয়া নিস্তব্ধ আধশোয়া হয়ে বসে আছেন ঝুলন্ত চেয়ারের উপর। দৃষ্টি তার সিলিংয়ের দিকে।গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন বন্ধ ফ্যানটার দিকে।হয়তো নিজের জীবনের পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষছেন।ওনার ভাবনার মাঝেই মালিহা বেগম এসে কক্ষে ঢুকলেন।ফ্যানটা ছাড়তে গিয়ে বললেন

-"ফ্যান অফ করে বসে আছেন কেন?এখনো তো অতটা শীত পরছে না।"

পলক ভূইয়া একপলক স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসলেন।হতাশ শ্বাস ফেলে বললেন
-"এমনিই ভালো লাগছে না কিছু।"

মালিহা বেগম এসে বসলেন বিছানার উপর।পলক ভূইয়া আবার বললেন
-"প্রত্যুষ বা রওশা কেও কী ফোন দিয়েছে?"

-"কালকে রাতে কথা হয়েছিলো রওশার সাথে।বলেছে ওরা ভালো আছে সবাই।কিন্তু প্রত্যুষের সাথে কথা হয়নি অনেকদিন।তার তো ব্যস্ততার শেষ নেই।এতটাই ব্যস্ততা যে মা-বাবার সাথে কথা বলার সময় টুকুও নেই!"

মালিহা বেগম মুখ কালো করে বললেন।পলক ভূইয়া বিরস মুখে চাইলেন স্ত্রীর পানে।নির্জীব স্বরে বললেন

-"ছেলেটা অভিমান করে আছে আমাদের উপর।আমরা ওর ভালোবাসা কে কেড়ে নিয়েছি না,তাই আমাদের থেকে আমাদের ছেলেকে কেড়ে নিলো।জানো,মাঝে মাঝে খুব বেশিই আফসোস হয়।যে আফসোস মৃত্যুর চেয়েও বেশি যন্ত্রণা দেয়।ছেলেটা দুরে সরিয়ে নিয়েছে নিজেকে। এই ছয় বছরে একবারো পা রাখেনি দেশে।ফোন করলেও কেমন যেন কথা বলে,কথার ভঙ্গিতে বুঝিয় দেয় আমার সাথে কথা বলতে খারাপ লাগছে!ছেলেটাকে হারিয়ে ফেললাম সাথে আমার একটা মাত্র মেয়েটাকেও।"

মালিহা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।মলিন স্বরে বললেন
-"নির্বাচনে প্রাণেশার মামা জিতেছে!"
-"হ্যাঁ।শুনেছি। "
ম্লান হাসলেন মালিহা বেগম। বললেন

-"পাশাপাশি বাড়ি,কিন্তু যেন মাইল মাইল দুরত্ব।মেয়েটাকে প্রতিদিনই রাস্তা দিয়ে যেতে দেখি।কিন্তু ডেকে দু'টো কথা বলতে পারিনা।মুখ নেই যে কথা বলার।ওরা কেউই এ বাড়ির আঙিনায় পর্যন্ত পা রাখে না।আমাদেরও একই অবস্থা। একটা ভুলের কারণে নিজেদের পরিবারের মানুষগুলোর সাথেই যে যোজন যোজন দুরত্ব সৃষ্টি হয়ে যাবে সেটা তো কোনোদিন ভাবতেও পারিনি।"

পলক ভূইয়া নিশ্চুপ বসে থাকলেন।মালিহা বেগম আবার বললেন

-"এই খালি বাড়িতে দম বন্ধ হয়ে আসে।নিজেকে খুব বেশিই একা একা লাগে।প্রহরটাও কাজে চলে যায়।রিধিতা থাকলে ওর সাথে দু'টো কথা বলা যেতো,সারাক্ষণ মা মা করতো।কিন্তু চাকরিটা হওয়ার পর থেকে ওরও বাইরে চলে যেতে হয়।আমি একা একা বসে থেকে সময় পার করি।"

পলক ভূইয়া দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।সময়,সুযোগ চলে যাওয়ার পরপরই আমরা আমাদের ভুল-ত্রুটি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারি।কিন্তু তখন কোনো সুযোগ অবশিষ্ট থাকে না আমাদের জন্য। নিজেদের জন্য দুঃখ প্রকাশ ছাড়া তখন আমাদের আর কিছুই করার থাকে না।এই আফসোস ভেতরে ভেতরে আমাদের শেষ করে দেয়।তবুও আমরা হাতড়ে বেড়ায় বাঁচার আশ্বাস।কিছু ভালোবাসার মানুষ।

রওশা ঘুরে ঘুরে শপিং করলো অনেক কিছুই। তবে যা কিনেছে বেশিরভাগই প্রোজ্জ্বলের জন্য। বায়না করে না বাচ্চাটা,চুপচাপ লেপ্টে থাকে বুকের সাথে।কিন্তু যখন খেলনার দোকানের পাশ দিয়ে গেলো তখন প্রোজ্জ্বল আবদার করলো অনেক কিছু।আর রওশা এতোক্ষণ এসবই কিনছিলো। একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে রওশা।পাশের চেয়ারে বসে ফোনে কার্টুন দেখছে প্রোজ্জ্বল। এখনো অর্ডার করা খাবারগুলো এসে পৌছায়নি। রওশা সেন্ডউইচ,কোল্ড ড্রিংক আর প্রোজ্জ্বলের জন্য বেবি মিল্ক অর্ডার করেছে।রওশা থুঁতনিতে হাত দিয়ে অপেক্ষা করছিলো।তখনই ওদের সামনে একজন পুরুষ এসে দাঁড়ালো। কারও উপস্থিতি অনুভব করতেই রওশা মাথা তুলে তাকালো।পরিচিত একটা মুখ দেখতেই থমকে গেলো ও।নীল হাসিমুখে তাকালো ওদের দিকে।রওশা দাঁড়িয়ে পড়লো। আলতো হেঁসে বললো

-"আসসালামু আলাইকুম!কেমন আছেন?"
-"ওয়ালাইকুম আসসালাম।ভালো আছি!আপনার কী খবর?"
নীল হাসিমুখে নম্র স্বরে বললো।
-"এই যে যেমন দেখছেন!"

নীল হাসি উপহার দিলো ওঁকে। চেয়ারের উপর পা তুলে বসা প্রোজ্জ্বলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। প্রোজ্জ্বল হা করে তাকালো দু'জনের দিকে।নীল আবার রওশার দিকে তাকিয়ে বললো

-"মা-ছেলে ঘুরতে এসেছেন?"
-"জ্বি।একটু শপিং করতে এসেছিলাম।"রওশা আমতা আমতা করে হেসে বললো।
-"প্রত্যুষ কোথায়?"
রওশার হাসি ধপ করে নিভে যায়।মুখে নেমে আসে বিষন্নতা। তবুও মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলে
-"হসপিটালে আর কোথায়!"

-"বাহ!স্ত্রীকে দেখে রাখার চেয়ে কাজ বড় হয়ে গেলো ওর কাছে।আমি তো ভাবছি ও আপনাকে এভাবে একা একা ছাড়লো কী করে!আমি হলে তো আমার ওয়াইফের সাথে ছায়ার মতো লেগে থাকতাম।আমার ওয়াইফের সাথে টাইম স্পেন্ড করার জন্য এমন হাজারটা কাজ জলে ভাসিয়ে দিতাম।"

নীল উপহাস করে বললো।টলমল চোখ রওশার,মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে মাথা তুলে বললো

-"এতেই বোঝা যায়,আপনি কাজের প্রতি কতটা দায়িত্বহীন।কিন্তু প্রত্যুষ এমন নয়।ও নিজের কাজের প্রতি যথেষ্ট অনুগত।তবুও আপনার যদি এতটাই ছায়ার মতো থাকতে মন চাই কারো,চটজলদি বিয়ে করে নিন।তারপর নাহয় কোলের মধ্যে নিয়ে বসে থাকিয়েন।বিয়ে না করে এমন বড় বড় লেকচার সবাই দিতে পারে।"

ফিক করে হেঁসে দিলো নীল।রওশা ছোট ছোট চোখে তাকালো ওর দিকে।নীল নিজের হাসি থামিয়ে বললো

-"আপনি তো হাইপার হয়ে যাচ্ছেন দেখি!সরি,আমি আসলে মজা করে বলেছি।আপনাকে কষ্ট দিয়ে কিছু বলতে চায়নি।"

রওশা তাচ্ছিল্য হাসলো।ওঁকে নাকি কষ্ট দিয়ে কিছু বলতে চায়নি!কিন্তু যতবারই দেখা হয় এভাবে বাঁশ মেরে কথা বলে।প্রত্যুষের সাথে গলায় গলায় বন্ধুত্ব থাকার দরুন এই নিয়ে অগণিত বার দেখা হয়েছে ছেলেটার সাথে।এমনকি অনেকবার বাড়িতেও এসেছে। কিন্তু যতবারই দেখা হবে,এভাবে কোনো না কোনো পিঞ্চ মারবেই মারবে।কোন জনমের শত্রুতা আছে ওর ছেলেটার সাথে আল্লাহ মালুম।এমনকি যেদিন প্রথমবার পরিচয় হয়েছিলো ছেলেটার সাথে সেদিনও পিঞ্চ মেরে কথা বলেছে।
রওশা ফোস করে শ্বাস ছাড়লো।নীল বিস্তৃত হেঁসে বললো

-"আচ্ছা,আপনি বসুন।আমি বরং যায়।"

রওশা মনে মনে বললো
-"চোখের সামনে থেকে দুর হ বেডা!"

কিন্তু মুখ ফুটে বললো
-"ঠিক আছে।বাড়িতে আসবেন কিন্তু!"
-"অবশ্যই,দাওয়াত না দিলেও চলে আসবো আমি!"

বলেই ঠোঁট বাঁকা করে হাসলো নীল।উল্টো ফিরে চলে গেলো ওদের সামনে থেকে।রওশা মুখ বাঁকায়।চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে

-"শালা,খাচ্চর!"

#চলবে

(যাঁদের মনে হচ্ছে গল্পটা একঘেয়ে হয়ে গেছে তাঁদের কাছে অনুরোধ গল্পটা একেবারে শেষ হলে পড়বেন।তখন আপনারা নিজেরা অদরকারী বা নীরস পর্বগুলো স্কিপ করে পড়তে পারবেন। গুছিয়ে লিখতে সময় লাগে অনেকটা।আপনাদের অপেক্ষা করাতে আমারও ভালো লাগে না।আর হ্যাঁ,আপনাদের জন্যই গল্প লিখি।আপনাদের পছন্দই প্রায়োরিটি দিবো,তবে একটু সময় দরকার।)

 #দুই_মেরু #পর্বঃ৬ # Sadia_Islam_সাদিয়া_ইসলাম রিকশা এসে থামে কলেজের গেটের সামনে।গেটের উপর বড় হরফে লেখা ' শিক্ষাই জাতির ম...
05/09/2025

#দুই_মেরু
#পর্বঃ৬
# Sadia_Islam_সাদিয়া_ইসলাম

রিকশা এসে থামে কলেজের গেটের সামনে।গেটের উপর বড় হরফে লেখা ' শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড '। সত্যিই কি তাই? এই বই, এই শিক্ষাকে কি আমরা মেরুদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারছি। হয়তোবা না। এই শিক্ষা আমাদের কাছে এখন কাগজের সার্টিফিকেট ছাড়া কিছুই না। আমরা শিক্ষা গ্রহনের প্রকৃত কারণ ভুলে গেছি। কেবল নাম জস আর ভালো একটা কাজের সন্ধানে ছুটেছি।

গন্তব্যে এসে রিকশা থামলেও ওই রিকশার মধ্যে বসে থাকা রমণীর সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে ঢুবে আছে নিজের বর্তমান আর ভবিষ্যৎ ভাবনার মধ্যে। অরির ভাবনার সুতা ছেড়ে রিকশাওয়ালার দ্বিতীয় ডাকে । এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে সে পৌঁছে গিয়েছে তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিতে গিয়ে বাঁধে বিপত্তি। রিকশাওয়ালা বলছে ভাড়া নেবে না। কারণ তাকে যে স্যার ডেকেছে সেই ভাড়া দিয়েছে। এদিকে অরি ভাড়া দেবে। সে অনিকেতের টাকায় চলবে না। যে লোক নিজের স্ত্রী হিসেবে মানতে নারাজ। তার টাকায় চলার মতো মেয়ে অন্তত অরি না। সে তার সিদ্ধান্তে অটল। এদিকে বেচারা রিকশাওয়ালা এদের স্বামী স্ত্রী র ঝামেলার মাঝে ফেসে গেছে। অরি তাকে আটকে রেখেছে। উনি চাইলেই অরিকে মিথ্যা বলে টাকা নিয়ে চলে যেতে পারতো। যেখানে অরি নিজে ওনাকে টাকা নিতে জোর করছে। কিন্তু না, উনি নেবে না। কারণ উনি সৎ পথে উপার্জন করে হোক না তা পরিমানে অল্প। অবশেষে অনেক বাকবিতণ্ডার পর অরি সফল হয়।

এতোক্ষণ অরির মন খারাপ থাকলেও এখন আর তা নেই। আর থাকবেই বা কি করে। জানের জান বান্ধবীর দেখা যে পেল। সকালে সালমা বেগমের মোবাইল দিয়ে মিতুকে কল দিয়েছিল। সে আজ কলেজে আসবে কিনা তা জানার জন্য। এদিকে দুইদিন পর বান্ধবী আসতেছে তাই গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো মিতু।দুজনের কথাবার্তায় মনে হবে কতোদিন পর তাদের দেখা। অথচ কেবল দুই দিন হলো। বেস্ট ফ্রেন্ড হয়তো এমনি হয়।

" কিরে এই দুই দিন কোথায় ছিলি তুই? আর তোর ফোন বন্ধ কেন? জানিস আমি কতো চিন্তা করছিলাম। তোর কিছু হলো নাকি। আন্টিকে কল দিলাম উনি বললেন তুই ঠিক আছিস। আর বাকিটা যেন তোর থেকেই শুনি। এখন সব বল আমায়। " ---- কপট রাগ দেখিয়ে বলে মিতু।

মিতু একের পর এক প্রশ্নে ঘাবড়ে যায় ও। কোথা থেকে শুরু করবে বুঝতে পারে না। তাই খানিকটা দম নিয়ে বলতে শুরু করে। সেদিন কলেজ থেকে যাওয়ার পর দেখি আমাদের বাসায় অনেক মেহমান আসছে। আমি তাদের সাথে ভালো মন্দ কথা বলে রুমে চলে যাই। একটু পর বাবা আসে আমার রুমে। উনি আমায় উনার পাশে বসিয়ে বলে --- " দেখো মা। তুমি তো জানো বাবা তোমায় কতো ভালোবাসে। বাবা যা সিদ্ধান্ত নেবে তোমার ভালোর জন্যই নেবে। " বাবার মুখে এমন কথা শুনে আমি খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। উনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে। আমাকে নাকি আজকেই বিয়ে করতে হবে। কিছু করার নেই। সেদিন বাবার মুখের দিকে চেয়ে আমিও কিছু বলতে পারি নি। তারপর সেদিন আমার বিয়ে হয় আর এখন আমি শ্বশুর বাড়িতে আছি। কিন্তু সবচেয়ে মজার কথা কি জানিস? "

মিতু আগ্রহ স্বরে শুধায় --- " কি? "

" অনিকেত স্যার আমার জামাই। " --- ইতস্ততভাবে জবাব দেয় অরি।

অরির কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে গগন বিদারক চিৎকার দেয় মিতু। তার চিৎকারে যেন গাছের কাকগুলোও উড়তে শুরু করছে। মিতুর অবস্থা দেখে মনে হবে যেন কঠিন আশ্চর্যজনক কিছু শুনলো ও। অবশ্য আশ্চর্য হওয়ারই কথা। কলেজের সবচেয়ে রাগী, গম্ভীর আর ডিসিপ্লিন মেনে চলা স্যার নাকি অরির হাসবেন্ড। এই দিনও দেখতে হলো।

মিতুর চিৎকারে অরি বলে --- " চিল্লিয়ে কানের পোকা মারা পরিকল্পনা করছিস নাকি। "

" ওসব ছাড়। তুই এইটা বল অনিকেত স্যার সত্যি তোর হাসবেন্ড? " --- ভাবুক হয়ে বলে মিতু।

" নাহ! আমি মজা করছি তোর সাথে। তুই যে আমার শালি লাগিস। "

" আরে সিরিয়াসলি বল না। "

" দেখ আমি নিজেও প্রথমে অবাক হয়েছিলাম তাকে দেখে। কিন্তু সত্যি এটাই ওই এলিয়েনটাই আমার জামাই।" ---- ব্যাঙ্গাত্তক করে বলে অরি।

পরবর্তীতে অরি মিতুকে সব খুলে বলে। অনিকেতের ব্যবহারের জন্য প্রথমে খারাপ লাগলেও সকালের কথা শুনে মিতু হাসি আটকাতে পারে না। সে হো হো করে হেসে দেয়। অরি বিরক্তি নিয়ে তাকায় মিতুর দিকে। আর বলে --- " এখানে হাসার কি হলো? "

" তুই বলছিস হাসার কি হলো। আর তুই কিনা জামাইকে রেখে শাশুড়ীকে চুমু খেতে চাস তাও আবার সবার সামনে। আর আমায় বলছিস হাসার কি হলো। " --- বলেই মিতু আরেক দফা হাসতে শুরু করে।

" দেখ উনি খুব ভালো। আমার অনেক খেয়াল রাখে তাই।" --- সরল স্বীকারোক্তি অরির।

" আচ্ছা আর স্যার বুঝি খেয়াল রাখে না। "

" তুই থাক একটু পর ক্লাস শুরু হবে আমি গেলাম। " --- বলেই অরি হাটা শুরু করে।

" আরে থাম। ক্লাস তো আমারও আছে। আমিও তো যাবো নাকি " ---- অরির পিছে যেতে যেতে বলে মিতু।

ক্লাসে এসেও অরির মনোযোগ নেই সেদিকে। সে কেবল মিতুর বলা শেষ কথাটা চিন্তা করছে। আচ্ছা এমন কোনো দিন কি আসবে যেদিন অনিকেত অরির খেয়াল রাখবে। মিতু অরির দিকে তাকায়। সবসময় মজা করা মেয়েটা আজ কেমন চুপচাপ ব্যাপারটা ওকেও ভাবিয়ে তোলে।

অরির আজ ক্লাস করতে মন চাচ্ছিল না। তবুও ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ক্লাস করলো। সবে তিনটা ক্লাস হয়েছে। এখনো আরও দুইটা ক্লাস আছে । ক্লাস রুমে বসে আছে অরি পাশে মিতু বসা। মাঝখানে টিফিন পিরিয়ডে বাইরে গিয়েছিল। তবে খায়নি কিছুই। অরি কলেজে আসার পর আর অনিকেতকে দেখেনি। তবে এখন দেখা হবে। কারণ এখন অনিকেতের ক্লাস।

কিছুক্ষণের মধ্যে ক্লাস রুমে প্রবেশ করে অনিকেত। কলেজের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম এবং ডেসিং স্যার। সাদা টি শার্ট টা ইন করে পড়া। তারউপর নেভি ব্লু রংয়ের ব্লেজার। হাতে একটা ঘড়ি যেটা অনিকেত সবসময় পড়ে। অরির মাঝে মাঝে মনে হয়। ওই ঘড়িতে কিছু একটা রহস্য আছে। নয়তো প্রতিদিন কেউ একি ঘড়ি পড়ে নাকি। অরি তাকিয়ে দেখে অনিকেত আজও ওই কপাল ভাজ করে আছে। নাহ, এই লোক কখনো ভালো হবে না। কিসের এতো বিরক্তি তার জিবনে। পরক্ষণেই মনে হয় হয়তো সেই ওই বিরক্তি। অরির মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়।

অনিকেত নিজের মতো করে ক্লাস শুরু করে দেয়। তবে ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কয়েকবার আড়চোখে তাকায় অরির দিকে। অরির মুখে মন মরা ভাবটা স্পষ্ট। অনিকেত আজ কেমন ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারছে না। বারবার অরির মুখের দিকে তাকাচ্ছে। কি হয়েছে মেয়েটার। জিজ্ঞেস করতে গিয়েও পারছে না। এমন আগে কখনো হয়েছে বলে অনিকেতের মনে পড়ে না।

এদিকে প্রিয় বান্ধবীর এমন রূপ মিতু কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। তাই বান্ধবীকে খুশি করতে অনিকেতের একটা ছবি আঁকে ও। অরি প্রায় বেশিরভাগ সময় অনিকেতকে এলিয়েন বলে ডাকে। তাই মিতু বেশ ফানি একটা এলিয়েন এঁকে নিচে অনিকেতের নাম দেয়। এতোক্ষণ খেয়াল না করলেও মিতুর ইশারায় খাতায় তাকাতেই অরি হেসে ফেলে। একসময় বেশ শব্দ করে হেসে দেয় ও। পুরো ক্লাস রুম তাকায় অরির দিকে। অনিকেত ও তাকায় তার দিকে। হাসতে থাকা অরির সেদিকে কোনো নজর নেই। সে আপন মনে হাসতে ব্যাস্ত। সাধারণত অনিকেতের ক্লাসে কেউ টু শব্দ করার সুযোগ পায় না। সেখানে অরির কান্ড সত্যি হতবাক করার মতো। অরির হাসি থামে অনিকেতের ধমকে। অনিকেত এগিয়ে যায় ওর দিকে। অনিকেত অরির কাছে আসলে দেখে ওর সামনে একটা এলিয়েন আঁকা। যার অবস্থা খুবই শোচনীয়। অনিকেত সবচেয়ে বেশি হতবাক হয় নিচে নিজের নাম দেখে। মূহুর্তে রাগ গুলো তরতর করে বাড়তে থাকে। একে তো তার ক্লাসে ডিসটার্ব। তারপর তার এমন ছবি আঁকা। অরির কাছে এটাকে কোনদিন দিয়ে অনিকেত মনে হলো তা সে ভেবে পায় না। অতঃপর নিজম্ব নিয়মে অরির শাস্তির ব্যবস্থা করে অনিকেত। আর সেটা হলো ক্লাসের বাইরে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা। পুরো কলেজে একমাত্র অনিকেতই আছে যে এমন ভয়ংকর শাস্তি দেয়। আরে বাবা যে বয়সে মানুষ বাচ্চার বাবা মা হচ্ছে সে বয়সে কি না কান ধরে দাঁড়ানো। এটা কেউ মানতে পারে। কিন্তু মানতে না পারলে কি হবে ভুল করলে শাস্তি তো পেতেই হবে। অরি যেহেতু ভুল করেছে তাই কথা না বাড়িয়ে শাস্তি মেনে নেয়। এদিকে বেচারি মিতু হাসফাস করতে থাকে। কোথায় ভেবেছিলো বান্ধবীকে একটু খুশি করবে। তা না কি থেকে কি হয়ে গেল। আর এই অনিকেতেরও বলি হারি নিজের মায়ের পেটের আপন বউকে কেউ এমন শাস্তি দেয়। ছিহ্!

অরি বাইরে এসে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। অরিদের বিল্ডিং টা কলেজের একপাশে হওয়ায় এদিকে তেমন একটা মানুষ নেই। আর বাকিরা যে যার ক্লাসে। আশেপাশে কাউকে না দেখে অরি বেশ নিশ্চিত মনে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। এর আগেও ধরেছে। তাই খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু বিপত্তি বাধে তখন যখন দেখে নিজের ওয়ান এন অনলি ক্রাস সায়ান ভাইয়া এদিকে আসতেছে।মূলত অরিদের বিল্ডিং এর সামনে দিয়ে কলেজের অফিসে যাওয়া লাগে। তাই এদিক দিয়ে যাওয়া। অরি চায় না সায়ান তাকে এভাবে দেখুক। এর আগে একবার দেখেছিল। অরি কি লজ্জায় না পড়েছিল।টানা কয়েকদিন কলেজে আসে নাই। এখন তো তাও করতে পারবে না ওই এলিয়েন ওকে জোর করে নিয়ে আসবে। তারচেয়ে ভালো নিজেকে লুকানো। কিন্তু লুকাবে কি দিয়ে ওর কাছে তো কিছুই নাই। কি একটা ভেবে হঠাৎ নিজের জুতা জোড়া খুলে হাতে নেয়। সেটা মুখের সামনে উঁচু করে ধরে। তারপর তা দিয়ে নিজেকে আড়াল করার প্রয়াস চালায়। তবে খুব একটা সফল হতে পারে না। তার আগেই সায়ান ওকে দেখে ফেলে।

" আরে অরি তুমি এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? " --- সায়ান হাঁটা থামিয়ে জানতে চায়।

" আসলে তেমন কিছু না। এমনি দাঁড়িয়ে আছি। "

" তা ঠিক আছে। তবে তুমি জুতা খুলে হাতে নিয়ে এমন মুখের সামনে ধরে আছো কেন? " --- সায়ান আবার প্রশ্ন করে।

অরি কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না । অতঃপর বলে --- " আমি আসলে আমি ও হ্যা আমি আমার জুতার সাইজ দেখছিলাম। একটু হাসার চেষ্টা করে ও।

" তা তুমি এখানে দাঁড়িয়ে জুতার সাইজ দেখছিলে কেন? "

অরি এবার বেশ বিরক্ত হয়। আরে ভাই যেখানে যেতে এসেছিস সেখানে যা না। আমার পিছনে কেন লাগতে এলি। আর এই এলিয়েনটা যেদিন ওকে শাস্তি দেবে সেদিনই সায়ানকে এদিকে আসতে হবে।হায় আল্লাহ।
" আমি আসলে চুরি...."

অরি তার কথা শেষ করতে পারে না। তার আগেই কারো ধমকে পেছন ফেরে। ফিরে দেখে অনিকেত ওর সামনে দাঁড়িয়ে। তখনি অরির মিতুর আঁকা ওই ছবিটার কথা মনে পড়ে। অরি হাসি আসলেও তা আটকে রাখে। অনিকেতকে সামনে দেখে সায়ান সালাম দেয়। অনিকেত সালামের উত্তর দিলেও সায়ানকে ও সহ্য করতে পারছে না। মেয়েদের সাথে এতো কথা কিসের। আর এই মেয়েটা কতো সুন্দর হেসে হেসে সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। অনিকেত অরিকে ক্লাসে যেতে বলে চলে যায়। অরি ক্লাসে গিয়ে নিজের যায়গায় বসে পড়ে।

মিতু ওকে দেখে বলে ---- " সরি রে দোস্ত । আমার জন্য তোকে শাস্তি পেতে হলো। কিন্তু তুই স্যারকে বললি না কেন যে ওটা আমি আঁকছি। "

" বাদ দে। তখন দুজনকেই শাস্তি পেতে হতো। "

মিতু অরিকে জরিয়ে ধরে। তারপর বাকি ক্লাসটা শেষ করে কলেজ থেকে বেরিয়ে যায়।রাস্তা আলাদা হওয়ায় দুজনকে আলাদা যেতে হয়। অরি কিছুটা সামনে গিয়ে একটা রিকশা নিয়ে নেয়। অনিকেতের টিচার্স মিটিং থাকায় সে একটু পড়ে আসবে। রিকশা দিয়ে যেতে যেতে অরি ভাবে কিভাবে আজকের অপমানের বদলা নেবে। কিছুতো একটা করতে হবে। তখন মুখ বুঝে থাকলেও সে কিছুই ভুলে নি। অনিকেতকে জব্দ করার একটা ফন্দি আঁটতে হবে। অতঃপর কিছু একটা ভেবে ক্রুর হাসি হাসে।

#চলবে,,,,

(❌ কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ ❌)

( ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভালো লাগলে রিয়েক্ট দিয়েন। ধন্যবাদ।)

Address

Gazipur

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Ekla Ami-একলা আমি posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share