Ekla Ami-একলা আমি

Ekla Ami-একলা আমি গল্প প্রেমীদের স্বাগতম......
(2)

 #অপ্রিয়_সেই_তুমি #প্রিয়া_আফরোজ #পর্ব৭মায়ার ফোনে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে বারবার কল আসতে থাকে। মায়া প্রথমে কয়েকবার ফ...
09/08/2025

#অপ্রিয়_সেই_তুমি
#প্রিয়া_আফরোজ
#পর্ব৭

মায়ার ফোনে একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে বারবার কল আসতে থাকে।
মায়া প্রথমে কয়েকবার ফোনটি না উঠালেও শেষে ভাবলো এতোবার কল করছে তাহলে প্রয়োজনিয় কল হতে পারে।

কলটি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইমন বলে উঠলো :-
-এয়ারপোর্টে তুর্যর উপর হামলা হয়েছিল,
"তুর্যর বুকে গুলি লেগেছে"।
ওর অবস্থা খুব খারাপ, আমরা এয়ারপোর্টেই আছি এয়ারপোর্টের ডক্টর তূর্যর ট্রিটমেন্ট করছে।
আর হ্যাঁ আন্টি হার্টের পেসেন্ট তাই আঙ্কেল-আন্টিকে কিছু জানাবেন না প্লিজ।
সম্ভব হলে আপনি এয়ারপোর্টে চলে আসুন। (ইমন)

মায়ার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো, মায়া ইমন এর পুরো কথা শুনলো কিনা কে জানে?

মায়া রুম থেকে ভেসে আসলো বুকফাটা আর্তনাদের শব্দ। সেই কান্নার শব্দ গিয়ে পৌঁছালো আতিয়া বেগম এবং আরফ খানের কানে, কিন্তু কি জানি ভেবে তারা আর নিজেদের রুম থেকে বের হলো না।

কান্না করতে করতে মায়া কোনো রকমে ফোনটা হাতে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল নিজের রুম থেকে। ড্রয়িংরুমে সে কাউকেই দেখতে পেল না, তাই কাউকে কিছু বলেও বেরোতে পারল না।

মায়া কান্না করতে করতে গাড়ির কাছে গিয়ে ড্রাইভারকে বললো এয়ারপোর্টে যেতে।

_______________

এক ঘন্টা পর মায়া এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছালো, পরনের তার বাড়িতে পড়ার একটি নরমাল সুতি থ্রি-পিছ।
সারা রাস্তা পাগলের মত কান্না করতে করতে এসেছে মেয়েটা।

ওড়নাটা ভালো করে মাথায় টেনে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো মায়া।
গাড়ি থেকে নেমেই তাড়াতাড়ি ইমনকে কল করলো। ওপাশ থেকে ইমন কল রিসিভ করতেই মায়া উতলা হয়ে বলতে থাকে :-
-ভাইয়া আমি এয়ারপোর্টে চলে এসেছি,
আপনারা কোথায় আছেন এখন?
উনি এখন কেমন আছেন?
আমি কোথায় আসবো ভাইয়া? (মায়া)

-রিলাক্স, আপনি একটু শান্ত হোন ভাবি।
আপনি কোথায় আছেন আমাকে বলুন আমি আসছি আপনার কাছে। (ইমন)

-আমি টার্মিনাল দুইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। (মায়া)

- ok, আপনি ওখানেই দাঁড়ান আমি আসছি। (ইমন)

- ঠিক আছে একটু তাড়াতাড়ি আসুন ভাইয়া। (মায়া)

- ok (ইমন)

তারপর মায়া ফোন রেখে দিল, মায়া বুকের মাঝে নাম না জানা এক অশান্তির ঝড় সৃষ্টি হয়েছে । মায়া কোনভাবেই নিজেকে সামলাতে পারছে না। বারবার বুক ফেটে কান্না আসছে।

দুই মিনিটের মাথায় ইমন এসে পৌঁছাল মায়ার কাছে।
ইমনকে দেখে মায়া কান্না করতে করতে বলল:-
-ভাইয়া উনি কোথায়? (মায়া)

- তূর্য ভেতরে আছে, ওর অবস্থা খুব খারাপ হওয়ার কারণে ওকে যত দ্রুত সম্ভব লন্ডনের শিফট করছি। আপনি আমার সাথে ভেতরে চলুন আমি একবার আপনাকে ওর সাথে দেখা করিয়ে দিচ্ছি। (ইমন)

- ভাইয়া বাবইকে বিষয়টি জানানো উচিৎ ছিলো। দারান আমি বাবাইকে একটা কল করি। (মায়া)

-না, না, আঙ্কেলকে কিছু বলতে হবে না। আমি তন্নি এবং ওর হাসবেন্ডের সাথে কথা বলেছি, ওরাও বিষয়টি আঙ্কেল-আন্টিকে জানাতে নিষেধ করেছে। (ইমন)

মায়া আরাফ খানকে কল করতেই যাচ্ছিলো, কিন্তু তন্নি আর নিরব, খানবাড়ির কাউকে তুর্যর ব্যাপারে কিছু বলতে নিষেধ করেছে শুনে মায়া আর কল করলো না আরাফ খানকে।

তারপর ইমন মায়াকে সাথে করে সব ফর্মালিটি পূর্ণ করে এয়ারপোর্টের ভিতরে চলে গেল।

মায়া তখন ইমনকে জিজ্ঞেস করে :-
-আমরা এখানে কেনো আসলাম? (মায়া)

-তুর্য এখানে আছে তাই। (ইমন)

নিরব মায়ার দিকে তাকিয়ে দেখল, অনেকটা সময় কান্না করার ফলে মায়ার চোখ-মুখ একদম শুকনো লাগছে। মায়ার গায়ের রং ফর্সা তাই কান্না করলেই গাল এবং নাক রক্তিম বর্ণ ধারণ করে।

এয়ারপোর্টের ভিতরে গিয়ে তারা একটি গাড়িতে উঠলো।

ইমন তখন গাড়িতে থাকা একটি পানির বোতল মায়ার দিকে এগিয়ে দেয়, মায়ার অনেকটা সময় ধরে পানি পিপাসা অনুভূত হচ্ছিল, তাই মায়া বোতল টা খুলে একটু পানি খেয়ে নিলো।

তারপর গাড়ি চলতে শুরু করে।
মায়া জানে যে গন্তব্য বেশি দূরে না,
সামনে থাকা কোনো এক বিমানের কাছে গিয়ে নামতে হবে তাদের।
কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই মায়া কিভাবে যেন ঘুমিয়ে পড়লো। গাড়ি থামতেই ইমন বেশ কয়েকবার ডাকলো মায়াকে।

___________________

মায়ার যখন ঘুম ভাঙে, তখন মায়া সুন্দর এবং পরিপাটি একটি রুমে নিজেকে আবিস্কার করে।

হঠাৎ মায়ার মনে পারে তুর্যর কথা, তুর্যর কথা মনে পরতেই মায়া তারাতারি করে উঠে বসলো।

তারপর হঠাৎ কান্না করতে করতে বলতে থাকলো:-
-তুর্য কোথায়?
কি হয়েছে তুর্যর?
আর আমি এখানে আসলাম কিভাবে? (মায়া)

তারপর মায়া ভাবলো, হয়তো অতিরিক্ত স্ট্রেস নেওয়ার কারণেই সে জ্ঞান হারিয়েছিল। কারণ মায়া যদি ঘুমাতো তাহলে দুই একবার ডাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মায়া উঠে পড়তো।
তখন গাড়ির মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পরার কারনে হয়তো ইমন তাকে এয়ারপোর্টের আসে-পাসের কোনো হোটেল রুমে রেখে তুর্যকে নিয়ে চলে গেছে।

এসব কিছু ভেবে মায়া কিছুক্ষণ হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না করতে থাকে।
তারপর কি যেন মনে হতেই ফোনটা খুঁজতে থাকে চারদিকে। একটু খোঁজাখুঁজির পরে টেবিলের ওপরে তার ফোনটা পেয়েও যায়।

ফোন হাতে নিয়ে মায়া প্রথমেই কল করে ইমন-এর কাছে। কিন্তু ফোনে কোন সিগনাল পাচ্ছিনা।

তাই মায়া ভাবলো:-
-বাসায় গিয়ে বাবাইকে এবার সবটা জানাতেই হবে।

তাই মায়া আর দেরি না করে দ্রুতো ঐ রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিল। কিন্তু দরজার কাছে যেতেই মায়া বুঝতে পারল দরজাটা বাইরের থেকে লক করা আছে।

মায়া কিছুক্ষণ নিজে নিজে দরজাটি খোলার চেষ্টা করে যখন ব্যর্থ হলো তখন সাহায্যের জন্য চিৎকার করা শুরু করল।

- Help. কেউ আছেন? আমি এই রুমে আটকে গেছি,
আমাকে প্লিজ এই রুম থেকে বের হতে সাহায্য করুন। (মায়া)

কিন্তু কোথাও কারো কোনো শব্দ পাওয়া গেল না, মায়া বুঝতে পারলো না তার সাথে এসব কি হচ্ছে। তাই রুমের এক কোণে হাঁটুতে মুখ গুজে বসে আছে সে।

কিছুক্ষণ পরে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে একটা ছেলেকে সেই রুমে ঢুকতে দেখা গেল।

কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে মায়া যখন মাথা তুলে তাকালো, তখন মায়া যা দেখলো, তা দেখার পরে মায়া নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না।

খাবার প্লেট হাতে নিয়ে স্বয়ং আব্রাহাম খান তুর্য দাঁড়িয়ে আছে মায়ার সামনে।

তূর্যকে সুস্থ অবস্থায় দেখে মায়া দ্রুত বসা থেকে উঠে তুর্যকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।

কিছুক্ষণ পরে মায়া কান্না করতে করতেই তূর্যকে জিজ্ঞেস করতে থাকে:-
- কিভাবে আপনার গুলি লাগলো?কারা আপনার উপর আক্রমণ করেছিল? (মায়া)

তখনই তূর্য বলে ওঠে -
সরি মায়া তোমাকে মিথ্যা বলা হয়েছিল, আমার আসলে কোনো গুলি লাগেনি, এয়ারপোর্টে আমার উপর কোন আক্রম মনে হয়নি।(তুর্য)

কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে মায়া তূর্যর গালে একটা চড় বসিয়ে দিল :-
-আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে আপনি এতটা নিচে নামতে পারেন। (মায়া)

তূর্য ভাবতে পারেনি মায়া থাকে চর দেবে, তবুও সে মায়াকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল :-

-মায়া আমার কথাটা আগে শোনো। (তুর্য)

-কি শুনবো?
শোনার মত কিছু বাকি রেখেছেন আপনি?
আমি আর আপনাকে এক বিন্দু পরিমাণও বিশ্বাস করি না।
"যে মানুষের আবেগ নিয়ে খেলতে পারে,
সে ঠান্ডা মাথায় খুনও করতে পারে"
আমি এক্ষুনি মামনি আর বাবাই এর কাছে যাব। (মায়া)

-এই মুহূর্তে সেটা তো সম্ভব না Baby. (তুর্য)

-কেন সম্ভব না?
আমি এক্ষুনি চলে যাবে এখান থেকে। (মায়া)

মায়া এবং তূর্য এই মুহূর্তে যেই রুমটাতে আছে সেই রুমটার একপাশের দেয়াল কাচের তৈরি। তূর্য সেই দেয়ালের সাদা রংয়ের পর্দাটা এক টানে সরিয়ে ফেলে বলল:-
-কারণ তুমি এখন বাংলাদেশে না, লন্ডন আছো। (তুর্য)

[বি. দ্র. গল্পটি আপনাদের ভালো লাগলে জানাবেন গল্পটির প্রতি যদি আপনাদের আগ্রহ থাকে তবেই গল্পের পরবর্তী পর্ব লিখব,
আপনাদের সাপোর্ট পেলে কালকেই গল্পের ষষ্ঠ পর্ব দিয়ে দেব। গল্পের পরবর্তী পর্ব পেতে সবাই পেজটি ফলো করে রাখবেন ]

 #অ্যাঞ্জেল_অ্যাঞ্জেলিনা[পর্ব ০২] #লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম (🚫 দূর্বল হৃদয়ের পাঠকদের জন্য গল্পটা একদম নয়)(🚫কপি করা সম্পূর্...
09/08/2025

#অ্যাঞ্জেল_অ্যাঞ্জেলিনা
[পর্ব ০২]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

(🚫 দূর্বল হৃদয়ের পাঠকদের জন্য গল্পটা একদম নয়)
(🚫কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।)

"ধ্যাত বা'ল তিনটা কবুল বলতে এত সময় লাগে? বা'ন্দি জানকি বাচ্চা বল কবুল?"

দাঁতে দাঁত পিষে বলে আফরিদ এহসান। কেঁপে উঠল ন্যান্সি , ঠোঁট উল্টে তাকালো আফরিদের মুখ পানে। চোখ পাকিয়ে শাসাচ্ছে বেয়াদব পুরুষ।

কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে ন্যান্সি।
"কবুল,কবুল,কবুল।"

কবুল শোনা মাত্র ভুবন ভোলানো হাসি টা ওষ্ঠো কোণে দেখা যায় আফরিদের। ঘাড় বাঁকায় দু দ্বারে।
আফরিদ এহসান দ্য গ্রেট মাফিয়া কিং। যার নাম দাম নিতেই কাঁপে মানুষ। তবে কিছু সংখ্যক মানুষ রয়েছে যারা তাকে চেনে না জানে না। তাদের মধ্যে এক হলো ন্যান্সি । পুরো নাম ইলহাম ন্যান্সি অ্যাঞ্জেলিনা। আফরিদের প্রাণ, জান। যার জন্য সব কিছু জ্বা'লিয়ে পু'ড়িয়ে শেষ করে দিতেও দুবার ভাববে না সে। অথচ এই ভিতু মেয়েটা কিছু বুঝে না ,না না বুঝে উঠতে চায় না।

"আহা,চল বাসর ঘরে যাই।"

সহসা উঠে দাঁড়ালো ন্যান্সি। লেহেঙ্গার দুদিক ধরে হনহনিয়ে দুতলায় যেতে যেতে বলল।

"জন্মের সময় এই তোকে কেউ মধু খাওয়ায় নি? মুখের ভাষা তো ডাস্টবিনের চেয়েও খারাপ।"

তেতে উঠল আফরিদ , মেজাজ হারাচ্ছে সে। তবে পরক্ষণেই ঘাড় ম্যাসাজ করে বলল।

"তুই খাওয়াবি বলেই খাইনি ,মধু। জানিস তো কোন মধু?"

ন্যান্সি এক প্রহর অপেক্ষা করলো না। এই ঠোঁট কাটা বেয়াদবের সঙ্গে কথা বলে নিজের মান সম্মান ক্ষুন্ন করতে চায় না মোটেও।

🌿

ফুলে ফুলে সজ্জিত বিছানায় এক পাশে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে ন্যান্সি। হাত পা থরথরিয়ে কাঁপছে তার। কিছুক্ষণ আগেই ফাহমিদা তাকে বসিয়ে দিয়ে গেছে। তার সাথে যে ঠিক কি হতে চলেছে তা বুঝতে বাকি নেই।‌ এখুনি আফরিদ এহসান আসবে তাকে চেপে ধরে বলবে " বান্দি তুই তুই তুই আমাকে পাগল করে দিচ্ছিস।"

মুখ ভার করে আছে ন্যান্সি , ইশ্ যদি পালাতে পারতো তাহলে বেঁচে যেতো আজ। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো ন্যান্সি। রুমটা অত্যধিক বড়। মেপে নেওয়ার মতো নয়। রুম জুড়ে এক্সক্লুসিভ জিনিস পত্রে ভরপুর। ন্যান্সি উঠে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। ওই যে পরণের লালচে লেহেঙ্গা টা তো আফরিদ এহসান জোরপূর্বক তাকে পড়িয়েছে। না পড়লে বলে তোকে খেয়ে নেব শা'লী! বুকের ভেতর দামামা বাজছে ন্যান্সির। আফরিদ কখন আসবে আর তার ঘন্টা বাজিয়ে দেবে আল্লাহ মালুম।

🌿___________

"কিন্তু আফরিদ তোমার কি মনে হচ্ছে না তুমি এবার একটু বেশি পাগলামি করছো?"

মাইমুনা এহসানের কথায় চোয়াল শক্ত হয়ে এলো আফরিদের। ক্ষিপ্ত মেজাজে বলে উঠে সে।

"মম প্লিজ , আমার এই বিষয়ে অ্যাটলিস্ট তুমি কিছু বলো না। আই লাভ হার।"

মাইমুনা এহসান বুঝতে পারেন না কি এমন আছে ওই মেয়ের মাঝে ,যার জন্য সে এত পাগলামি করে?

"ওকে রিল্যাক্স! তুমি এত প্যানিক করো না।"

শান্ত কন্ঠে বললেন মাইমুনা এহসান। আফরিদ ঈশানের উদ্দেশ্যে বলল।
"যা বলেছি তা গিয়ে রেডি কর।"

"ওকে বস।"
"ধ্যাত বাল তাহলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তোদের দিয়ে কোনো কাজ হয় না।"

"সরি বস।"

কথাটা বলেই বেরিয়ে গেল ঈশান। ফাহমিদা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। নিরবতা ভেঙ্গে মিনমিনে গলায় বলল।
"ভাইয়া, আমি ভাবি কে রুমে দিয়ে এসেছি।"

ন্যান্সি রুমে আছে কথাটা স্মরণে আসতেই চক্ষু যোগল ছোট হয়ে এলো আফরিদের। আজ তো তার বান্দি,জানকি বাচ্চার সাথে বাসর রাত। সে মোটেও তা নষ্ট করতে চায় না। নো মিনস্ নো।

মাইমুনা এহসান ফাহমিদার উদ্দেশ্যে বলল।
"ফাহমিদা গো টু স্লিপ।"

ফাহমিদা আগের ন্যায় বলল।
"ওকে মম।"

ফাহমিদা আর অপেক্ষা করলো না চুপচাপ নিজের রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
আফরিদ ধুমধাম পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমের দিকে রওনা দিলো। মাইমুনা এহসান বড্ড বিরক্ত হচ্ছেন এসবে। একজন মহিলা সার্ভেন্ট এগিয়ে এলেন। নত মস্তকে শুধান।

"ম্যাম খাবার দেওয়া হয়েছে।"

রুষ্ট কন্ঠে বলে উঠেন মাইমুনা এহসান।
"খাবে না কেউ ,ফেলে দাও সব কিছু।"

হনহনিয়ে চলে গেলেন মাইমুনা এহসান। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মহিলা সার্ভেন্ট।
বড়লোকি ব্যাপার স্যাপার, তারা কি বুঝবে? যেখানে ছেলে খুন করে লা'শের উপর চেয়ারে বসে খাবার খেতে পারে সেখানে একটা মেয়ে কে জোর করে বিয়ে করা তো তাদের বাঁ হাতের খেলা।
নিজের মস্তিস্ক এতটা চাপ না দিয়ে নিজের কাজে চলে গেল মহিলা। সব গুলো খাবার ফ্রিজে রেখে বাকি টুকু ফেলে দিলেন অনায়াসে।


কক্ষে যেনো এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা জমে আছে । হঠাৎ করেই সেই নিস্তব্ধতাকে চিরে, গম্ভীর কড়চড় শব্দ তুলে দরজাটা খুলে গেল। প্রবেশ করল আফরিদ এহসান।
তার আগমনে কেঁপে উঠল ন্যান্সি। রক্ত জমে আসা ঠোঁটে নীরবতা । চোখে অদ্ভুত শঙ্কা। চোখে চোখ পড়তেই সময় থমকে দাঁড়ালো। একে অপরের সাথে দৃষ্টি বিনিময় ঘটে। আফরিদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো বিছানার উপর রাখা ফোনের দিকে। কুংফু একটা ভিডিও চলছে। আফরিদ নিরেট কন্ঠে বলল।

"কি করছিস তুই পরাণ?"

ন্যান্সি লম্বা দম নিয়ে বলল।
"প্র্যাকটিস করছি , একটু পরে আপনার সাথে লড়তে হবে না? আমি কিন্তু কুংফু মাস্টার।"

ঘাড় বাঁকালো আফরিদ। বাঁকা হেসে বলল।
"আমার বা'লের মাস্টার তুমি!"

এহেন কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল ন্যান্সি। একটা ফাঁকা ঢোক গিলে গলা সাফ করল সে, কিন্তু বুকের কাঁপুনি থামেনি। হাতে কাঁপুনি, চোখে জল জমে উঠতে চাইছে কিন্তু সে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ন্যান্সি।
আফরিদ দরজাটা ধীরে বন্ধ করে দিল। সেই বন্ধ হওয়া দরজার ঠাস শব্দে ন্যান্সি আরও এক চুল পেছনে সরে এল, পারলে দেয়ালের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে ফেলতে চায়।
আফরিদ আস্তে ধীরে শার্টের হাতা ফোল্ড করে নেয়। এখন কনুই পর্যন্ত গুটানো । পেশিগুলো টান টান করে ওঠে ,পেশীবহুল হাত জোড়ায় । সে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে, চোখে ঝাঁঝা'লো এক মাদকতা, কোনো কিছুতে ঘোর লাগা আ'সক্তি।
ন্যান্সি জানে এই চোখের ভাষা সে আগেও দেখেছে, অনুভব করেছে হৃদয়ের প্রতিটি তন্ত্রীতে।
এই মাদকতা কেবল চোখে নয় তার বুকের আ'গুনের ,দহনের।

"কি ব্যাপার বল তো জান? তুই আমাকে ভয় পাস না?"

কথাটা শুনে আবারো অগোচরে ফাঁকা ঢোক গিলে ন্যান্সি। মনে প্রাণে ভয় পায় সে। খুব খুব ভয় পায়।‌ কিন্তু ন্যান্সি যে এমন কিছু জানতে পেরেছে যা তাকে সাহায্য করবে। সব কিছু বদলে যাবে এক মূহুর্তে। ভাবনার মধ্যে খানে একদম খেয়াল করেনি আফরিদ কখন তার এতটা কাছে চলে এসেছে। দেয়ালের সাথে চেপে গেল ন্যান্সি। এক হাত টেনে মাথার উপর নিজের হাত দ্বারা চেপে ধরলো আফরিদ। নেশাতুর কন্ঠে ফিসফিস করে বলল।

"বল তো ব্যাপারটা কি?"

জড়তায় জমে থাকা ন্যান্সি মৃদু স্বরে বলল।
"আ.. আমি কেন ভয় পাবো? আপনি বাগ না ভাল্লুক?"

আফরিদের সেই চমৎকার ভুবন ভোলানো হাসি টা অধর কোণে টেনে নিল সে। থমকালো ন্যান্সি। সে বহু বার লক্ষ্য করেছে এই বেহায়া পুরুষ একমাত্র তার সামনে আসলেই হেসে ফেলে। কই এর আগে তো কারো সাথে দেখেনি হাসতে। সবসময় রাগী মুখ করে রাখে। মনে হয় মুখের আগে তার বন্দুক টা চলে দ্রুত।

"সত্যি? আমিও কিন্তু কারাটে মাস্টার। চল দু'জনে একটু কুংফু আর কারাটে খেলি অন্য ভাবে?"

আরো নিচু স্বরে বলল আফরিদ , ছুঁয়ে ফেলল রমণীর নগ্ন মেদহীন উদর।‌ বক্ষঃস্থলে লুকিয়ে থাকা হৃদপিন্ড টা কাঁপছে তার , চোখের পাতা ভারী লাগছে। দু'জনের ওষ্ঠো জোড়া প্রায় ছুঁই ছুঁই ,সহসা মুখ ফিরিয়ে নিল ন্যান্সি। ঘেমে গেছে সে। কপালের কোণে জমেছে ঘামের কণা। বাঁকা হেসে আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করলো আফরিদ। আগের ন্যায় বলল।

"এখনো কিছু করিনি,তার আগেই ঘেমে যাচ্ছো কেন?"

ন্যান্সি দু'হাতে বুকে ধাক্কা দিল আফরিদের, সরিয়ে দিলো তাকে। আমতা আমতা করে বলল।

"দু.. দূরে থাকুন আমার থেকে।"

ঘাড় ম্যাসাজ করলো আফরিদ , ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়।
"আজকে বাসর রাত আর তুই বলছিস দূরে থাকতে? লাইক সিরিয়াসলি? আমি যদি দূরে থাকি তাহলে আমার বংশধর আসতে দেরী হয়ে যাবে!"

ন্যান্সি বারংবার দৃষ্টি ফিরিয়ে তাকাচ্ছে টেবিলের উপর রাখা দুধের গ্লাসের দিকে। দিকবিদিক না পেয়ে ছুটে গিয়ে গ্লাস টা তুলে নিল।
ঈগলের মতো ছু মেরে গ্লাস টা নিয়ে নিল আফরিদ।

"আগে আমি খাই, তারপর তুই খাবি।"

বলেই চোখ টিপে আফরিদ। ন্যান্সি ফিসফিসিয়ে বললো।
"আমি কিন্তু বি'ষ মিশিয়েছি গ্লাসে।"

তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলল আফরিদ। নিশ্চিত হতে আবারো শুধায়।

"আর ইউ শিওর?"

"হ্যাঁ অনেক বি'ষ মিশিয়েছি।"

অধর কোণে খেলে গেল আফরিদের চিরচেনা বাঁকা হাসিটা।

"তাহলে তো খেতেই হবে। আমার বান্দি যেহেতু বি'ষ দিয়েছে।"

ঠোঁট ফোলায় ন্যান্সি। সম্পূর্ণ দুধ টা শেষ করে আফরিদ।‌ পরক্ষণেই গ্লাস টা ছুড়ে ফেলল ফ্লোরে। ঝনঝন শব্দে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হলো কাঁচের গ্লাস। দ্রুত হাত চালায় শার্টের বোতামে।‌ একটা সময় টেনে ছিঁড়ে ফেলল তা। হাঁ করে তাকিয়ে আছে ন্যান্সি , ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছে সে।

"আমার কাছে আসবেন না কিন্তু!‌ দেখুন আমি কিন্তু মে'রে দেব!"

বিদ্যুৎ বেগে এগিয়ে এসে হেঁচকা টানে বিছানায় ফেলল ন্যান্সি কে। নিজের সম্পূর্ণ ভার ছেড়ে দিল তার উপর। গাল চেপে রাগান্বিত স্বরে বলল।

"তুই কার? বল বল বল। কার তুই?"

দেহ মন কাঁপছে ন্যান্সির। মাথা খারাপ হয়েছে আফরিদের। হাতের চাপ এতটাই বেশি মনে হচ্ছে গাল ছিঁড়ে দাঁতের মাড়ির সাথে সেঁটে যাবে।

"বলতে বলছি!"

হুংকারে হো হো শব্দে কেঁদে ফেলল ন্যান্সি।
"বলছিস না কেন? ফাস্ট বল তুই কার?"

"আ.. আফ..আফরিদ এহসানের। আমি আফরিদ এহসানের।"

ছেড়ে ছেড়ে বলা কথাটা শুনে শান্ত হয়ে গেল আফরিদ। ডান হাতটি গালে স্লাইড করে তার। মোলায়েম কন্ঠে শুধায়।
"কি খাইয়েছিস মাথা ভার লাগছে!"

অশ্রুসিক্ত নয়নে আফরিদের মুখ পানে চাইলো ন্যান্সি। স্পষ্ট ভাষায় বলল।
"ঘুমের ওষুধ।"

সপাটে কপালে ওষ্ঠো ছোঁয়ায় আফরিদ , দীর্ঘ এক চুম্বন এঁকে অস্ফুট স্বরে বলে।

"পালাবি?"

"হুঁ।"

আফরিদ শান্ত মেজাজে শুনে ন্যান্সির কথা। ওষ্ঠো জোড়া বিচরণ করে গলার ভাঁজে। আঁখি জোড়া খিঁচিয়ে বুঁজে আসে ন্যান্সির। আফরিদ মুঠো করে টেনে ধরে ন্যান্সির চুল গুলো।

মুখ তুলে এক পলক চাইলো ন্যান্সির দিকে।‌ সহসা দৃষ্টি মেলে তাকালো ন্যান্সি। ওই ধূসর রঙা চোখে চোখ পড়ে তার। দৃষ্টি মেলে ফের। আফরিদ নিচু হয় ,উদরে চুম্বন লিলা চালায়। মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে আওড়াল।

"তোকে আদর করতে ইচ্ছে করছে তো জান। কিন্তু এদিকে ঘুম পাচ্ছে যে!"

ন্যান্সি চোখে হাসে , হাসিটা অস্পষ্ট আফরিদের কাছে। ধীরে ধীরে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল সে। সন্দিহান মন শিওর হতে চায়।
ন্যান্সি তার চুলে হাত বুলিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।
"আফরিদ এহসান ঘুমেশে?"

ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে আফরিদ, ন্যান্সি বুঝতে পারল লোকটা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে।

"পালাচ্ছি আফরিদ এহসান। আর আপনি মোটেও খুঁজে পাবেন না আমাকে। আমি যে এবার পগারপার!"

কথাটা ভেবেই হেসে ফেলল সে।
ছয় মাস,ছয় মাসে বদলে গেছে তার সব কিছু ,আফরিদ এহসান নামক পুরুষটি বদলে দিয়েছে ইলহাম ন্যান্সি অ্যাঞ্জেলিনা নামক মেয়েটার জীবন।

চলবে.........।✨

(📌এলার্ট)"শাউ'য়্যার নাতি,তুই কবুল বলবি তোর দাদী কবুল বলবে।""তাহলে আমার দাদী-কেই বিয়ে করে নিন না।"ন্যান্সির ত্যাড়া কথা...
09/08/2025

(📌এলার্ট)

"শাউ'য়্যার নাতি,তুই কবুল বলবি তোর দাদী কবুল বলবে।"

"তাহলে আমার দাদী-কেই বিয়ে করে নিন না।"

ন্যান্সির ত্যাড়া কথায় ক্ষিপ্ত হলো আফরিদ এহসান। সহসা বসা থেকে উঠে এসে গলা চেপে ধরে ন্যান্সির।
রুষ্ট কন্ঠে,তেজ দেখিয়ে বলে উঠে।

"বলবি না তুই কবুল? বলবি কি না?"

নিশ্ছিদ্র নীরবতা ভেদ করে উঠলো কাশির শব্দ। গলায় বলিষ্ঠ হাতের চাপ পড়তেই নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসছিল ন্যান্সির । ছটফট করছে সে, শরীরজুড়ে আত'ঙ্কের কম্পন। চোখজোড়া বিস্ফারিত, যেন কণ্ঠে আটকে থাকা প্রাণটুকু মুক্ত করার চেষ্টা করছে।
তার এই কষ্টভরা ছটফটে এক টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে আফরিদ এহসানের বুকের জেদী রাগ। কিন্তু নিজের ক্রো'ধকে সংযত করতে পারে না সে,প্রতিবার এমনই হয়। চায় না কষ্ট দিতে, তবুও দিয়েই ফেলে। তার আঙুলের শক্তির ছাপে যখন ন্যান্সির শ্বাসরুদ্ধ প্রায়, তখনই আঁতকে উঠলো আশেপাশের সবাই।
চেঁচিয়ে উঠলেন মাইমুনা এহসান।

" আফরিদ,কি করছিস তুই?"

চারদিক স্তব্ধ। ন্যান্সি কেশে উঠছে কষ্টে। ঠিক তখনই আফরিদের ছোট বোন ফাহমিদা ছুটে এলো, হাতে এক গ্লাস পানি।

"ভাবি, পানি খাও।"

কিন্তু ন্যান্সি পানি খেলো না, উল্টো ছুঁড়ে ফেলল সেই কাঁচের গ্লাস মেঝেতে। ঝনঝন শব্দে ছড়িয়ে পড়লো গ্লাসের টুকরো সেই শব্দে কেঁপে উঠলো চারদিক।

ভ্রু কুঁচকে তাকালো আফরিদ।
"কু'ত্তার বাচ্চা এত নাটক করছিস কেন? চুপচাপ কবুল বলে দে কাহিনী শেষ।"

কথাটা বলতেই ক্ষেপে গেল ন্যান্সি।
"তুই কু'ত্তা, তোর চৌদ্দ গুষ্টি কু'ত্তা। জানো'য়ারের বাচ্চা।"

এত এত গালি দিয়ে ন্যান্সি দাঁড়ায়নি। ভারি লেহেঙ্গার বাঁধা উপেক্ষা করে চুড়ির ঝংকারে, চোখে ক্রো'ধের জ্ব'লন্ত আগু'ন নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল সে সদর দরজা পেরিয়ে।
সবাই থ হয়ে তাকিয়ে রইলো। যেন এক বজ্রপাতে মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়েছে পুরো প্যালেস।
কারো বোঝার উপায় নেই, এই মুহূর্তে কী ঝড় আসবে তার জীবনে। আফরিদ ঠায় দাঁড়িয়ে রইল কিয়ৎক্ষণ।
ফাহমিদা বাইরে যেতে চাইলো ন্যান্সি কে নিয়ে আসতে। অথচ তার পূর্বেই গর্জে ওঠে আফরিদ এহসান।

"কেউ যাবে না,ওর ব্যবস্থা আমি করছি।"

কথাটা বলে হনহনিয়ে পা বাড়ালো বাইরের দিকে।
গাড়ির চাবি নিয়ে কোনো রকমে গাড়িতে উঠে বসলো ন্যান্সি। যেই গাড়ি স্টার্ট দিবে তার আগেই হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকে এলো আফরিদ।‌ আফরিদ কে দেখে আত্মা কেঁপে উঠে ন্যান্সির।

"যান, আমি বিয়ে করব না আপনাকে।"

কথাটা বলেই তাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ির ভেতরে ফেলে দিল আফরিদ। নিজের ভারি দেহটা রীতিমতো চাপিয়ে দিলো ন্যান্সির ছোটখাটো দেহের উপর। গাল চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলে উঠে।

"একটু আগে কি বললি? আমি জা'নোয়ারের বাচ্চা? আমি কু'ত্তার বাচ্চা?"

চোখের পাতা কাঁপছে ন্যান্সির,দম নিতেও কষ্ট হচ্ছে তার। বেয়াদব পুরুষ একশো টা গালি দিলেও সমস্যা নেই,অথচ ন্যান্সি একটা গালি দিয়েছে তাতেই দোষ?

"বা রে আপনি গালি দিতে পারেন তাতে দোষ নেই,আর আমি দিলেই দোষ? মানে আপনার সাত খু'ন মাফ আর আমার বেলায় ফাঁ'সি?"

প্রত্যুত্তরে কিছু বলল না আফরিদ, আবারও তাকিয়ে আছে ন্যান্সির দিকে।
পিনপতন নীরবতা ভেঙ্গে শান্ত কন্ঠে বলল।

"চুপচাপ ভেতরে যাবি আর ভালো মেয়ের মতো কবুল বলবি।"

কেঁপে উঠে ন্যান্সি,নাক বোচা করে বলল।
"ভালো করে বলেন।"

ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো আফরিদ।
"আমার জানকি বাচ্চা চল কবুল টা বলে দে।"

এবারেও নড়লো না ন্যান্সি।
"পায়ে ধরে ক্ষমা চান তারপর কবুল বলব।"

আফরিদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। ন্যান্সি তাকে আশ্চর্যের সীমান্তে পৌঁছে দিয়ে পা দিয়ে ঠেলে গাড়ির গ্লাসের সাথে চেপে ধরে আফরিদ কে।‌বুকের উপর লম্বালম্বি ভাবে পা মেলে দিয়ে বলল।

"ধরুন পা।"

আফরিদ তাকিয়ে আছে নির্নিমেষ কম্পিত ন্যান্সির দিকে। হাত পা কাঁপছে তারপরেও কতটা সাহস নিয়ে তার বুকের উপর পা রেখেছে!
বাঁকা হাসলো আফরিদ,পায়ের পাতার ছোট্ট করে চুমু দিয়ে বলে।

"মাফ চাই জান এবার অন্তত আয়।"

এত সহজে যেতে চায় না সে , মাফিয়া কিং কে বিয়ে করা যায়?
"দেখুন চলে যান এখান থেকে, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না। আর না আপনাকে ভালোবাসি। যাকে ভালোবাসি না তাকে কেন বিয়ে করব?"

এতক্ষণে ভেতরে চেপে রাখা রাগ ফেটে বেরিয়ে এলো আফরিদের। পা সরিয়ে ন্যান্সি কে চেপে ধরে আফরিদ।

চিবিয়ে চিবিয়ে বলে।
"শাউ'য়্যার ভালোবাসা লাগবে না আমার। আমার তোকে চাই।"

ভয়ে কাঁপতে থাকা ন্যান্সি আইঢাঁই করে আওড়াল।
"দেখুন এভাবে আমার দেহ পাবেন, কিন্তু মন কখনোই পাবেন না।"

গা দুলিয়ে হেসে উঠলো আফরিদ।
"আপাতত তোর দেহ চাই,মন ধুয়ে কি আমি পানি খাবো? রাখ তোর মন তোর কাছেই।"

কথাটা বলেই গলদেশে শক্ত একটা কামড় বসলো আফরিদ। অঝোরে কেঁদে ফেলল ন্যান্সি।
"ব্যথা পাই আমি।"

"বিয়ে করবি কি না? যদি কবুল না বলিস তাহলে গাড়ি কাঁপবে।"

গাড়ি কাঁপবে কথাটা শুনে থমকে গেল ন্যান্সি , মস্তিষ্ক কথাটা ধরতে পারলো না। মুখ তুলে হাসি হাসি চোখ করে তাকালো আফরিদ।

"সোজাসাপ্টা কবুল না বললে গাড়ি কাঁপবে তাও আবার অন্য ভাবে।"

কথাটার অর্থ বুঝতে পেরেই চেঁচিয়ে উঠলো ন্যান্সি।
"করব বিয়ে,সরুন আপনি।"

ভাবলেশহীন ভাবে সরে গেল আফরিদ। নেমে এলো গাড়ি থেকে, ন্যান্সি কে নামতে বলে।

"স্টপ ইউর ফা'কিং ড্রামা অ্যান্ড কাম।"

হাঁসফাঁস করতে করতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো ন্যান্সি। পিটপিট চোখ করে বার বার দেখছে আফরিদ কে। বেয়াদব পুরুষ তার জীবন টা শেষ করে দিলো।
_______________

গালে হাত দিয়ে বসে আছেন মাইমুনা এহসান। কি যে হচ্ছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। তার ছেলে কিনা সাধারণ একটা মেয়ে কে বিয়ে করার জন্য ম'রিয়া হয়ে উঠেছে। এত জোরজবরদস্তি কেন?
সদর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে ঈশান অপেক্ষা করে চলেছে তার বস আসার। মনে মনে বার বলছে "আমি শিওর বস ভাবি কে এতক্ষণে উপরে পাঠিয়ে দিয়েছে। যেখানে বসের রুব্বানে নাচে কোমড় দুলাইয়া গানটাই পছন্দ করে না মেয়েটা। সেখানে আস্ত বস কে কিভাবে সহ্য করবে? আহারে মেয়েটার জন্য বড্ড মায়া হলো উনার।

হনহনিয়ে ন্যান্সি কে ধরে বাড়িতে প্রবেশ করলো আফরিদ। ন্যান্সি কে জীবিত দেখে আকাশ থেকে পড়ল ঈশান। ভেতরে ঢুকেই কাজির উদ্দেশ্যে বলে।

"এই কাজি তাড়াতাড়ি বিয়ে পড়ান, ফাস্ট ফাস্ট।"

কাজি সাহেবের অবস্থা বেগতিক। লুঙ্গি ধরে ছটপট এগিয়ে এলেন। নিজের খাতাকলম খুলে বসলেন। ন্যান্সি কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। কাঁদো কাঁদো মুখ করে আফরিদ কে বলে উঠে।

"আমি এভাবে বিয়ে করব না।"

কথাটা রীতিমতো কানে ঝংকার তুলল আফরিদের। দাঁতে দাঁত পিষে বলে।
"আর একবার নাটক করলে বা'লের বিয়ে পরে করব,আগে বাসর সারবো।"

ন্যান্সি কাঁপা স্বরে বলে।
"আমি মেকআপ করব। ব্রাইডাল মেকআপ। একটাই বিয়ে সাজগোজ না করে আমি বিয়ে করব না।"

আফরিদ ভ্রু উঁচিয়ে বলল।
"ওকে ফাইন, ফাহমিদা ওরে ব্রাইডাল মেকআপ করা।"

কথাটা বলে দু'পা এগুলো আফরিদ , ন্যান্সির কান স্পর্শ করে ফিসফিসিয়ে বললো।
"যত ইচ্ছে ব্রাইডাল মেকআপ কর জান ,রাতে সব মেকআপ উঠিয়ে ফেলব।"

ন্যান্সি অপেক্ষা করলো না ,তাকে নিয়ে ফাহমিদা ডিরেক্ট উপরের রুমে যেতে লাগলো।‌ প্রাসাদের মতো বাড়িটা সবচেয়ে সুন্দর এবং বড় রুমটাই হচ্ছে দ্য গ্রেট মাফিয়া কিং আফরিদ এহসানের।

মেকআপ প্রায় শেষের দিকে।‌আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে ন্যান্সি। ফাহমিদা মিনমিনে গলায় বলল।

"ও ভাবি তাড়াতাড়ি করে ফেলো না বিয়ে। আমার ভাইটাকে কেন কষ্ট দিচ্ছ?"

রাগে ফুঁসছে ন্যান্সি। ওদিকে অপেক্ষা করছে আফরিদ।‌আর অপেক্ষা করা সম্ভব নয় তার। আচমকা উঠে ড্রয়িং রুমে থাকা সব কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিলো সে।

"কুত্তার বাচ্চা আমাকে খালি ঘোরায়।"

কথাটা বলে হনহনিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে রুমের দিকে গেল আফরিদ। ঈশান বিড়বিড় করে আওড়ালো।

"ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।"

রুমে যেতেই ফাহমিদা বেরিয়ে গেল।‌ ন্যান্সি ভয়ে সেটে গেছে রীতিমতো।
"চল।"

আফরিদের গর্জন শুনে বুক ধড়ফড় করে উঠে ন্যান্সির। পারে না হাত পা ছড়িয়ে কেঁদে ফেলতে।

"আমি করব না বিয়ে। আমাকে ছেড়ে দিন। আম্মু আব্বু বাঁচাও আমাকে।"

তার আকুতি কান্না শুনলো না আফরিদ।
"বান্দির বাচ্চা তুই বিয়ে করবি তোর ঘাড় বিয়ে করবে।"

ন্যান্সির নরম হাতটা টেনে ধরলো আফরিদ। এগুতে লাগলো দরজার দিকে। দরজার কপাট টেনে ধরে ন্যান্সি।
"যাব না আমি। ছেড়ে দিন।"

ঘাড় বাঁকালো আফরিদ , এগিয়ে এসে পাঁজা কোলে তুলে নিল ন্যান্সি কে।
বিদ্রুপ করে বলল।

"কোলে উঠবি আগে বলবি না? এমনিতেই তো রাতে কোলে নিতাম।"

কথাটা শুনে লজ্জায় সেঁটিয়ে যাচ্ছে ন্যান্সি।

চলবে.......।✨

# অ্যাঞ্জেল অ্যাঞ্জেলিনা
# সূচনা_পর্ব
# লেখিকা ফারহানা নিঝুম

(📌 এখানে থাকবে টক্সিক নায়ক,থাকবে বেপরোয়া ভাব। এই গল্পে প্রতিটি চরিত্র কথা বলবে। তার চরিত্র বদলাবে।)
(📌 অবশ্যই প্রাপ্তমনস্কদের জন্য গল্পটি। আর এখানে গালাগালি থাকবেই তাই আগে থেকেই সতর্ক করে দিচ্ছি)

(📌১৮+ অনেক কিছুই থাকবে। থাকবে নৃশং'সতা, নির্লজ্জ বেহায়া ভালোবাসা।)

(যাদের পছন্দ নয় এড়িয়ে যাবেন)

#হ্যাপি_রিডিং

The Villain Husbandলেখিকা  : নিশাথ তানভীর নিলাশা,পার্ট        : ৬স্নেহা লাল শাড়ি পরে বের হয়েছে, চুলগুলো খোলা কিন্তু খোলা...
09/08/2025

The Villain Husband
লেখিকা : নিশাথ তানভীর নিলাশা,
পার্ট : ৬

স্নেহা লাল শাড়ি পরে বের হয়েছে, চুলগুলো খোলা কিন্তু খোলা চুলগুলোকেই স্নেহা এলোমেলো বাধার চেষ্টা করছে, রুদ্র স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে,
- চুলগুলো খোলাই তো ভালো লাগছে বাধছো কেনো?
রুদ্রের কোথায় স্নেহা রুদ্রের দিকে তাকালো, একবার রুদ্রের দিকে তাকিয়েই আবার চুল বাধতে ব্যাস্ত করে নিলো নিজেকে,
স্নেহার এমন হেয়ালি পোনা দেখে রুদ্রের মেজাজটা বেশ গরম হলো,
- আমার কথা শুনছো না? নাকি শুনেও না শোনার ভান করছো? আমি বলছিনা যে চুল বাধবা না, ( রাগে লাল হয়ে রুদ্র বললো স্নেহাকে) তারপর স্নেহার হাত থেকে রাবার বেন্ড টা নিয়ে ফেলে দিলো,
স্নেহার কেন জানো রুদ্রের সাথে কথা বাড়াতে ইচ্ছা করছেনা তাই, চুপ করে রইলো,
- এখন থেকে আমি যেভাবে চাইবো সেভাবেই থাকতে হবে তোমাকে,তুমি চাও আর নাই চাও,( রুদ্র) বলেই স্নেহার হাত ধরে নিয়ে গেলো গাড়ির কাছে,,
স্নেহাকে গাড়িতে বসে নিজেও উঠে বসলো গাড়িতে,,,
স্নেহার সব কিছু কেমন জানো লাগছে মনে হচ্ছে এ জীবনের কোনো মানে নেই, সে কারো হাতের পুতুল হয়ে গেছে। সেই পুতুলটাকে যেভাবে নাচাচ্ছে পুতুলটা সেভাবেই নাচছে,,
অনেকক্ষন পর রুদ্র আর স্নেহা একটা বাড়িতে এসে পৌছালো,
বাড়িটা বেশ বড়, আশেপাশে ফুলগাছ আর এ সাইডে একটা দোলনা। যেমন বাড়ি স্নেহা চাইতো।
কলিংবেল বাজাতেই একটা মেয়ে দরজা খুললো,
- ভাইয়া, তুমি ভাবিকে নিয়ে এসেছো?( তিতির রুদ্রের বোন)
তিতিরকে দেখে স্নেহা অবাক তিতিররা এখানে থাকে স্নেহার জানা ছিলোনা। অনেক খুঁজেছে স্নেহা ওদের কিন্তু পায়নি এতোবছর পর এভাবে দেখা হবে ভাবেনি স্নেহা।
- হুম এসেছি!!
- কে আসলো রে তিতির,( রুদ্রের মা মনোয়ারা বেগম।ভেতরে থেকে আওয়াজ দিয়ে বললেন।
- মা ভাইয়া এসেছে ভাবিকে নিয়ে,
- ওদের বাহিরে দাড়াতে বল, আমি আসছি।
- আচ্ছা মা!! শুনলা মা দাড়াতে বলেছে,
হাতে একটা মিষ্টির আর পানির ট্রে নিয়ে হাজির হলো রুদ্রের মা,

স্নেহা কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে? তার ছেলে আমাকে এভাবে বিয়ে করেছে কিন্তু তারপর ও রুদ্রে মা বোন কে এমন স্বাভাবিক লাগছে, এটা যেন স্নেহা মানতেই পারছে না।

রুদ্রের মা দরজার সামনে এসে হাতে থাকা ট্রে থেকে স্নেহাকে মিষ্টি খাইয়ে দিলো, আর পানি। তারপর স্নেহাকে একটা চেইন পড়িয়ে দিলো গলায়।
- বাহ কি মিষ্টি মেয়ে,আগের থেকেও বেশি মিষ্টি হয়েছো মা দেখতে। আমি আগের থেকেই তোকে খুব পছন্দ করতাম। রুদ্র ওকে কোলে করে ভেতরে আন।
রুদ্রের মায়ের কথা শুনে স্নেহা যেন থো মেরে আছে, কোলে করে ভেতরে নিতে হবে কেন? সে কি ভাবছে স্নেহা হাটতে ভুলে গেছে, কথাগুলো ভাবতে,ভাবতেই স্নেহা রুদ্রের দিকে তাকালো, রুদ্র স্নেহার দিকে তাকিয়ে একটা দুষ্টু হাসি দিলো,
- মা কোলে করেই নিতে হবে কেন? না মানে যা ওজন আমি কোলে তুলবো কিভাবে( দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো রুদ্র)

- চুপ ফাজিল ছেলে, নতুন বউকে কোলে করেই ঘরে আনতে হয়। আর ওর ওজন যে কি তা বোঝাই যায়, ফাজলামো না করে যা বলছি তাই কর।
আর এদিকে স্নেহার ওজন নিয়ে কথা বলাতে স্নেহা রাগে কোটকোট করতে করতে রুদ্রের দিকে তাকাচ্ছে,
রুদ্র স্নেহার দিকে তাকিয়ে, স্নেহাকে কোলে তুলে নিলো,কিন্তু স্নেহা রুদ্রকে ধরছে না দেখে রুদ্র একবার কোলে থেকে ফেলে দেয়ার ভান করতেই স্নেহা ভয়ে রুদ্রের গলা জড়িয়ে ধরলো,
রুদ স্নেহাকে নিয়ে সোজা তার রুমে গেলো তারপর বিছানায় স্নেহাকে বসিয়ে দিলো,
-যা ওজন তুমি? যাই মাকে বলি গ্লুকোজ বানিয়ে দিতে, বলেই রুদ্র চলে গেলো,
তিতির এসে স্নেহার পাশে বসলো,
- ভাবি আমি তোমাদের বিয়ের কাহিনি শুনেছি, উফ কতো রোমান্টিক ছিলো, ভাইয়া এতো রোমান্টিক হতে পারে আমি ভাবতেও পারিনা।
তিতিরের কথা শুনে যেন স্নেহার মাথায় বাজ পড়লো, কি বলছে মেয়েটা এতো বিস্রি একটা ঘটনা মেয়েটার কাছে রোমান্টিক মনে হচ্ছে ভাবতেও পারছেনা স্নেহা.
- ভালোই হয়েছে তোমার বাবা সেই মাতাল ছেলেটার ব্যাপারে সব জানতে পেরেছিলো,আর নয়তো তোমার মতো একটা কিউট মেয়ের সাথে একটা মাতাল লোকের বিয়ে হয়ে যেত।
স্নেহা এবার বুঝতে পারলো যে আসলে রুদ্রের পড়িবার আসল ঘটনা জানে না, রুদ্র তাদের বানিয়ে,বানিয়ে অন্য গল্প বলেছে,
হাতে জুস নিয়ে রুদ্র রুমে ঢুকলো,
- কিরে ও আসতেই গল্প জুরে দিয়েছিস?
- না রে ভাইয়া, তোমাদের বিয়ের স্টোরি শুনছিলাম,
- মানে ( থতোমতো খেয়ে রুদ্র জিজ্ঞেস করলো,)
- হ্যা তো ভাবির কাছে বিয়ের গল্প শুনবার জন্য এসেছিলাম, আর ভাবি কিছু বলার আগেই তুমি চলে এলে,
রুদ্র শান্ত হলো এই ভেবে যে স্নেহা কিছু বলার আগেই সে এসে পড়েছে,
- হুম, যা তোকে মা ডাকছে,
- আচ্ছা, যাচ্ছি। ভাবি তুমি রেস্ট করো আমি মায়ের কথা শুনে আসি।
বলেই তিতির চলে গেলো।
এমন একটা কাজই আপনি করেছেন যে নিজের পড়িবারের কাছে সত্যি টা লুকাতে হচ্ছে। মিথ্যা গল্প বলেছেন তাদের।
- আমার দিক দিয়ে আমি কোনো ভুল করিনি,( গ্লাসে চুমুক দিতে, দিতে রুদ্র বললো)
- হ্যা আপনি তো কোনো ভুল করেননি, কিন্তু এখন আমি আপনার মায়ের কাছে যেয়ে আপনার ভালো কাজগুলো কথা বলবো আর জানতে চাইবো এই কাজের জন্য সে তার ছেলেকে কি উপহার দিবে!! বলেই স্নেহা বিছানার থেকে উঠলো, আর বাহিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
- দাড়াও! যাওয়ার আগে এটা জেনে রাখো আজ আমার মা যদি সবটা জানে। তবে তুমি আর কখনো তোমার মা বাবার মুখ দেখতে পারবে না।
স্নেহা রুদের কথা শুনে থমকে যায়, এমন কোনো কথা সে রুদ্রের মুখ থেকে আশা করেনি।
- আপনি এতোটা খারাপ?
- হ্যা অনেক, এতোদিনেও বোঝোনি?( রুদ্র)
- সত্যি আমার বোঝা উচিৎ ছিলো, যে ধর্ষন করতে পারে সে খুন ও করতে পারে।
- তা তুমি যা ইচ্ছা বলো, কিন্তু আমার মা বোন যদি গুনাক্ষরেও কিছু টের পায় আমি কাওকে ছাড়বো না।
আর তুমি ভেবোনা ভালোবাসি বলে আমি তোমাকে স্বাধীন করে দেবো,
নেভার, তুমি এই বাড়ির বউ। আমার মায়ের সেবা করবে সুন্দর করে গুছিয়ে সংসার করবে আমার বোনকে নিজের বোন মনে করবে। আর একটা ভালো ওয়াইফ হবে,
- কখনোই না, এসব কিছুই আমি পারবো না। আমার থেকে এসব আশা করা ছেড়ে দিন।আমি না পারবো এই বাড়ির বউ হতে না পারবো আপনার ওয়াইফ হতে। আপনি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন। আমি মানিনা এই বিয়ে,( চিৎকার করে বললো স্নেহা।
- রুদ্র রেগে স্নেহার মুখ চেপে ধরলো,
চুপ একদম চুপ এটা তোমার বাপের বাড়ি না যে যা ইচ্ছা করবা। এটা আমার বাড়ি আমি যা বলবো তাই হবে, আর বেশি বাড়াবাড়ি করলে,
রুদ্রের হাত ধাক্কা দিতে সরিয়ে স্নেহা বললো,( কি??? কি করবেন? মেড়ে ফেলবেন? মেড়েই ফেলুন বাচতে চাইনা আমি) কাঁদতে কাঁদতে বললো স্নেহা।
স্নেহার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে রুদ্র বললো,
- তুই যে আমার পড়ান পাখি, তোকে মাড়লে তো নিজেই বাচতে পারবোনা। তুমি চাও আর না চাও আমার বাড়িতে আমার বউ হয়েই থাকতে হবে তোমাকে, মা তিতির কেও যেন কিছু না জানে।
( কথাগুলো বলেই রুদ্র স্নেহাকে ছেড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো,
স্নেহা ফ্লোরে বসে কাঁদছে ,
একটা সুন্দর সংসার চেয়েছিলো সে একটা ভালোবাসার মানুষ চেয়েছিলো সে কিন্তু তার সাথেই কেন এমন হচ্ছে প্রশ্নগুলোর উত্তর হয়তো কেও জানে না,রুদ্র ছাড়া।
কাঁদতে কাঁদতে রুদ্রের বলা কথাগুলো মনে পড়লো স্নেহার, রুদ্র বলেছে তার মা অথবা বোন কেও কিছু জানতে পারলে। তার মা, বাবাকে আর কখনো দেখতে পারবেনা স্নেহা। তাই স্নেহা ঠিক করলো নিজের মা, বাবাকে বাচাতে হলেই থাকে ভালো থাকার অভিনয় করতে হবে, ফ্লোর থেকে চোখ মুছতে মুছতে উঠলো স্নেহা বাথরুমে যেয়ে নিজেকে ফ্রেস করে দিলো। যতোটুকু সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক করলো স্নেহা।
- ভাবি ও ভাবি!( তিতির)
ফ্রেস হয়ে বাথরুম থেকে বের হতেই স্নেহা দেখলো তিতির রুমে তাকে ডাকছে,
- ও ভাবি তুমি বেরিয়েছ? মা তোমাকে ডেকেছে খাওয়ার জন্য।
- হুম আমি ফ্রেস হতে গিয়েছিলাম চলো,
স্নেহা খাবার টেবিলে যেতেই দেখলো টেবিল জুরে সব তার পছন্দের খাবার।
- ভাবি জানো আজ মা সব তোমার পছন্দের খাবার বানিয়েছে,
- আয় মা খেতে বস!!
- আন্টি আপনি এতোকিছু কেনো করতে গেলেন?( স্নেহা)
কি বললি তুই আমাকে? আমি তোকে সেই কখন থেকেই মেয়ের মতো তুই তুকারি করছি আর তুই আমাকে আন্টি বললি?
- তাইলে? কি বলবো আমিতো আপনাকে সবসময় আন্টি বলি।
- দেখ মা, সবসময়ের কথা আজ থেকে বাদ, তুই আমার মেয়ে আর মেয়ে কি মাকে আন্টি বলে নাকি তুই ও আমাকে মা বলবি।
- আচ্ছা মা, তুমি এতো কিছু কেন করেছো? ( হেসে দিয়ে বললো স্নেহা)
-আমি আজ আরেকটা মেয়ে পেয়েছি তো তাই আমার মেয়েটার জন্য করেছি,
কিন্তু আমার ছেলেটা যে কই গেলো,
- এই তিতির তোর ভাইয়া কই?
- মা ভাইয়া ছাদে,
- যা ডেকে আন দুজনে আজ আমার সামনে একসাথে খাবে,
ছাদে রুদ্র দাঁড়িয়ে ছিলো,
- ভাইয়া মা ডাকছে,
-কেন?
- খেতে,বলেছে আর তোমাকে আর ভাবিকে একসাথে বসে খাওয়াবে।
- আমার ইচ্ছা করছেনা, মাকে বল খাবোনা,
- মা যখন বলেছে তোমাকে যেতেই হবে,
তিতিরের জোরাজুরিতে রুদ্র নিচে নামলো,
রুদ্রকে আর স্নেহাকে পাশাপাশি বসিয়ে দিলো তিতির,
স্নেহার হাতে ব্যাথা খেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে তাও আস্তে, আস্তে খাচ্ছে।
- কিরে মা তোর হাতে কি হয়েছে,
রুদ্র মায়ের এমন প্রশ্ন শুনে থো হয়ে আছে, স্নেহাও কি বলবে বুঝতে পারছেনা। সত্যিটা তো বলা যাবেনা।
- আরে মা, ভাবিকে তার বাবা অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো, তাই মনে হয় ভাবি ভাইয়ার জন্য হাত কেটেছে, ( কেও কিছু বলার আগেই তিতির বলে উঠলো)
স্নেহা আর রুদ্র একে ওপরের দিকে তাকাচ্ছে,
স্নেহার ইচ্ছা করছে চিৎকার করে বলতে সে এই লোকটার জন্য হাত কাটেনি লোকটার অত্যাচারের জন্য হাত কেটেছে,,,

চলবে,,,,,,,,,

 #নিষিদ্ধ_প্রণয় #পর্বঃ১২ #সোনালিকা_বিনতে_আইজা"কৌশিক ভাইয়ের বিয়ের কথা হচ্ছে না তো? আমাদের মধ্যে ভাইয়াই সবার বড়ো।"আচমকা নী...
09/08/2025

#নিষিদ্ধ_প্রণয়
#পর্বঃ১২
#সোনালিকা_বিনতে_আইজা

"কৌশিক ভাইয়ের বিয়ের কথা হচ্ছে না তো? আমাদের মধ্যে ভাইয়াই সবার বড়ো।"

আচমকা নীরবে কথা শুনে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো তুবার। বুক ফেটে চৌচির হয়ে গেলো যেনো। অবাধ কান্নার জোয়ার উপচে পড়তে চাইলো চোখ বেয়ে। কৌশিক ভাইয়ের বিয়ের কথা চলছে? তুবার কৌশিক ভাই অন্য কারোর হবে? যে বুকে তুবা পৃথিবীর সমস্ত সুখ খুঁজে পায়, সেই বুকে অন্য কারোর জায়গা হবে? কৌশিকের বাহুডোরে অন্য কোনো মেয়ে থাকবে। তারা ঘনিষ্ঠ হবে। যে নিষিদ্ধ সুখ কয়েক মুহুর্তের জন্য পাগল করেছিল তুবাকে, সেই সুখ এবার অন্য কেউ পাবে? ভাবতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো তুবার। সন্দেহের তীর সোজা তুবার হৃদপিণ্ডের মাধ্যিখানে ঢুকলো। অসহনীয় ব্যথায় হাসফাস করে উঠলো তুবা। দম আটকে আসছে যেনো। মুহুর্তের মধ্যে জোরে জোরে শ্বাস টানতে শুরু করলো। যেনো অদৃশ্য কোনো হাত তুবার গলা শক্ত চেপে ধরেছে।

আচমকা তুবার চেহারার রঙ পরিবর্তন হতে দেখে চমকে উঠলো রিয়া আর নীরব। তুবার ফর্সা মুখ লালচে রঙ ধারণ করেছে। জোরে জোরে শ্বাস টানছে। পুরো শরীর থরথরিয়ে কাঁপছে। তুবার এমন হঠাৎ পরিবর্তনে ব্যতিব্যাস্ত হয়ে উঠলো দুই ভাই বোন। রিয়া বেশ বুঝতে পারছে এটা প্যানিক এ্যটাক হওয়ার লক্ষ্মণ। তাই তুবাকে শান্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠলো রিয়া। নিচু কন্ঠে চেচিয়ে উঠলো,

"নীরব! গাধার বাচ্চা। কি বললি এটা? পানি আন তাড়াতাড়ি। তুবার প্যানিক এ্যট্যাক হয়েছে।"

নীরব হকচকিয়ে গেলো। দৌড়ে রান্নাঘর থেকে এক গ্লাস পানি এনে দিলো। রিয়া তুবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে। নীরব আসতেই পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে তুবার মুখের সামনে ধরলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে শান্তনার স্বরে বললো,

"তুবা পানি খা। রিল্যাক্স! কৌশিক ভাইয়ের বিয়ের কথা হচ্ছে না পাগলী। নীরব এমনি এমনি বলেছে।"

নীরব বোনের কথায় সম্মতি জানালো। ঘনঘন উপর নিচ মাথা নেড়ে বললো,

"হ্যা হ্যা! রিয়া ঠিক। আমি ভুল। আমি মিথ্যে বলেছি।"

তবুও তুবার মন মানলো না। বহু কষ্টে এক ঢোক পানি খেলো। লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। রিয়া তখনও তুবার মাথায় ঘনঘন হাত চালাচ্ছে। তুবার শ্বাস প্রশ্বাস কিছুটা স্বাভাবিক হতেই রিয়া অভিযোগ করে বললো,

"তোর এতো ভয় নিয়ে কি করি বলতো তুবা? মালা গেঁথে কৌশিক ভাইয়ের গলায় ঝুলিয়ে দেই? তুই এমন কেনো করিস? দুই বছর আগেও বড়মার মুখে রাইমাকে বউ করার কথা শুনে এমন প্যানিক করেছিলি। বেচারা কৌশিক ভাই ইম্পরট্যান্ট ক্লাস ফেলে ছুটে এসেছিল তোর কাছে। তোর মনের ভয় দূর করতে সেদিনই রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে বিয়ে করলো। সাক্ষী হিসেবে আমাদেরকেও কান ধরে টেনে নিয়ে গেছিলো। তোর জন্য তো লোকটা সাধ্য মতো সব করে। কত সেক্রিফাইস করছে তোকে খুশি করতে। তোর মনের ইনসিকিউরিটি দূর করতে কত পাগলামি করে। তুই তবুও এমন বাচ্চামি করিস।"

তুবার শরীর তখনও মৃদু কাঁপছে। রিয়ার দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরলো তুবা। কম্পিত গলায় বলল,

"আমার ভয় হয় আপু। খুব ভয় হয়। ওই মানুষটা আমার প্রতিটা লোমের সাথে মিশে গেছে। আমার পুরো দেহে ওনার স্পর্শ গেঁথে আছে। ঘুমের মাঝেও আমি ওনাকে অনুভব করি। উনি আমার একমাত্র শান্তি আপু। যদি পরিবার আমাদের আলাদা করে দেয়? আমি বাঁচবো কিভাবে?"

"তোর মনে হয় কৌশিক ভাই সেটা মেনে নেবে?"

"না মানুক। কিন্তু ঝড় তো উঠবে।"

রিয়া ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো। শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো,

"তোরা দু'জনে কি জানতি না, এই পরিবারে নিজেদের মধ্যে প্রণয় ঘটানো নিষেধ? জেনে বুঝে নিষিদ্ধ প্রণয়ে জড়িয়েছিস দুজন। এখন একটু আকটু ঝড়ের মোকাবেলা তো করতেই হবে।"

মাঝখান থেকে নীরব ফোড়ন কেটে বললো,

"তুই একটু বেশিই ভাবছিস তুবা। আরে, আমি তো এমনিই বলেছিলাম কথাটা। শিওর হয়ে তো বলিনি। হতে পারে রিয়ার বিয়ের কথা হচ্ছে। মৌ আপুর পরে সিরিয়ালে রিয়া আছে। ঘরে বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে রেখে কি কেউ ছেলের বিয়ের কথা ভাববে? তুই না আসলেই বুদ্ধু।"

নাকমুখ কুঁচকে কথাগুলো বললো নীরব। এই পর্যায়ে তুবা চিন্তায় পড়ে গেলো। আসলে কার বিয়ের কথা হচ্ছে? রিয়ার নাকি কৌশিকের? ভাবতে ভাবতে মাথাটা ঝিম মেরে আসলো। পেটের মধ্যে মুচড়ে উঠছে। অতিরিক্ত চিন্তায় প্রেসার নেমে গেছে হয়তো। পেট গুলিয়ে বমি পাচ্ছে। তুবা দুই হাতে মুখ চেপে ধরলো। অবস্থা বেগতিক দেখে কপাল চাপড়ালো রিয়া। তুবাকে ধরে উঠিয়ে দোতলার সিঁড়ি ধরলো। যেতে যেতে নীরবকে বলে গেলো,

"ছোটো মাকে দুটো ডিম সেদ্ধ আর গরম দুধ আনতে বল তো। তুবার মনে হয় প্রেশার ফল করেছে।"

-
-

রিয়ার প্রচেষ্টায় তখন তুবা খানিকটা সুস্থ হলেও মন থেকে সন্দেহ যাচ্ছে না। মনের সন্তুষ্টির জন্য সেই সকাল থেকেই নিজের মায়ের পেছন পেছন ঘুরছে। ঘ্যান ঘ্যান করে জানতে চাইছে কার বিয়ের আলোচনা হলো ঘরে। ময়না বেগম কয়েকবার চোখ রাঙিয়ে তাকালেন মেয়ের দিকে। বড়দের কথা আড়িপেতে শোনার জন্য মেয়েকে কয়েক দফা ধমকও দিলেন। জোর জবরদস্তি কলেজেও পাঠাতে চাইলেন। কিন্তু নাছোরবান্দা তুবা মায়ের পেছন থেকে এক পাও নড়লো না। সত্যিটা না জানা পর্যন্ত সে ঠিক মতো খেতেও পারছে না।

ঠিক এভাবেই ছটফট করতে করতে সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়ালো। বাড়ির রমনীগণ রান্নাঘরে দুপুরের খাওয়ার আয়োজন করছেন। তুবা তখনও ময়না বেগমের পেছন পেছন ঘুরছে। ওকে বিড়ালছানার মতো আঁচল ধরে ঘুরতে দেখে আরও এক দফা ধমক দিলেন ময়না বেগম। এরপর তরকারির বাটি নিয়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে চলে গেলেন। কনকচাঁপা বেগম চেয়ার ঠিক করছেন। রান্নাঘরে বর্তমানে আছেন শুধু মেজো চাচি নাইমা বেগম। তুবাকে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি হাত ধরে টেনে তুবাকে কাছে নিলেন। তুবার থুতনিতে আলতো করে হাত রেখে প্রশ্ন করলেন,

"কি হয়েছে আমাদের চড়ুই পাখির? এতো তুড়ুৎ ফুরুৎ করছিস কেনো?"

তুবা যেনো মোক্ষম সুযোগ খুঁজে পেলো। খপ করে নাইমা বেগমের হাত ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললো,

"ও মেজোমা। বলো না। কার বিয়ের কথা হচ্ছে বাড়িতে? মাকে তখন থেকে জিজ্ঞেস করছি কিন্তু বলছে না।"

"জানতে চাস?"

"হ্যা খুব চাই। বলো না প্লিজ।"

নাইমা বেগম ঘুরে দাঁড়ালেন। চাকু দিয়ে টমেটো কাটতে কাটতে জবাব দিলেন,

"বলতে পারি। কিন্তু লজ্জা পাবি না তো?"

"আমি কেনো লজ্জা পাবো?"

"ওমা! নিজের বিয়ের কথা শুনে মেয়েরা লজ্জা পায় না বুঝি? তোরই তো বিয়ের কথা চলছে। রামিম ভাইয়ের মেয়ের বিয়েতে গেছিলাম না? সেখানে একজন প্রস্তাব রেখেছে তোর জন্য। ছেলেটা খুব ভালো বুঝলি। তোর সাথে একদম মানানসই। কথাবার্তা মিলে গেলে তোদের আকদ করিয়ে রাখবে। রিয়ার বিয়ের পর তোকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। এমনটাই কথা হচ্ছিল তখন। আর তোর......"

আচমকা ধুপ করে পাশে কিছু পড়ার শব্দে তিনি কাজ বাদ দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। রান্নাঘরের মেঝেতে তুবার জ্ঞানহীন দেহটা লুটিয়ে পড়তে দেখে দুই হাতে মুখ চেপে চিৎকার করে উঠলেন। নাইমা বেগমের গলা ফাটানো চিৎকার শুনে বাড়ির ছোটো বড় সবাই ছুটে এলো রান্নাঘরে।

রান্নাঘরের মেঝেতে জ্ঞানহীন তুবাকে পড়ে থাকতে দেখে আঁকতে উঠলো সবাই। তাওহীদ সাহেব দৌড়ে এসে মেয়েকে টেনে তুললেন। মাথার পেছনে হাত রাখতেই চটচটে আঠালো র**ক্তে ভিজে উঠলো হাত। ইতিমধ্যে ময়না বেগম আহাজারি করে কাঁদতে শুরু করেছেন। কনকচাঁপা বেগম তাকে নিজের বাহুডে আগলে নিয়েছেন। মেয়ের মাথার পেছনে র**ক্ত দেখে তাওহীদ সাহেব দিশেহারা। কি করবেন না করবেন কোনো দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না। পেছন থেকে জামাল সাহেব তাড়াহুড়ো কন্ঠে বললেন,

"ওকে ওঠা তাওহীদ। হাসাপাতালে নিতে হবে।"

বড় ভাইয়ের ডাকে যেনো সংবৎ ফিরে পেলেন তাওহীদ সাহেব। পাঞ্জাবির হাতায় চোখ মুছে মেয়েকে কোলে তুলে নিলেন। এরপর ছুটলেন গাড়ির দিকে। যত দ্রুত সম্ভব মেয়েকে হসপিটালে নেয়া চাই।

-
-

প্রায় আধা ঘন্টার ব্যাবধানে হসপিটালে পৌঁছেছে সকলে। পুরো রাস্তায় একেবারের জন্যও তুবার জ্ঞান ফেরেনি। হসপিটালে পৌঁছানোর পর নীরব কৌশিকের নাম্বারে ফোন লাগালো। দুইবার রিং বাজতেই ফোনটা রিসিভ করলো কৌশিক। তবে নীরবকে কিছু বলতে না দিয়ে কৌশিক ছোট্ট করে বললো,

"মিটিংয়ে আছি। পরে কথা বলছি।"

এটুকু বলেই ফোন কেটে দিলো। অসহায় নীরব আবারও ফোন লাগালো। বারে বারে ফোন করতে দেখে ফোনটা সাইলেন্ট করে রাখলো কৌশিক।

এদিকে ভেতরে তুবার ট্রিটমেন্ট চলছে। বাইরে পরিবারের সবাই অস্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীরব আর রিয়া সমানতালে কৌশিকের নাম্বারে ডায়াল করছে।

গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হওয়ায় ফোনের দিকে নজর দিলো না কৌশিক। কিন্তু মিনিট দশেক যাওয়ার পর টাইম দেখতে ফোনটা হাতে নিলো। এই দশ মিনিটে নীরবের নব্বই প্লাস এবং রিয়ার আশি প্লাস মিসড কল দেখে ভ্রুদ্বয় কুঁচকে গেলো কৌশিকের। এমন পাগলের মতো ফোন করার মানে কি? খটকা লাগলো কৌশিকের। সে এক মিনিটের বিরতি নিয়ে বাইরে এসে কল ব্যাক করলো। নীরব যেনো ফোন হাতে নিয়েই ছিলো। রিং বাজতেই সাথে সাথে রিসিভ করলো নীরব। গরম সুরে ঝারি মেরে উঠলো,

"ফোন কেনো উঠাচ্ছো না তুমি?"

"বললাম তো মিটিংয়ে আছি। এতো ফোন দিচ্ছিস কেনো?"

"থাকো তুমি তোমার মিটিং নিয়ে। এদিকে তুবা হসপিটালে। মাথা ফাটিয়ে ম*র*তে বসেছে।"

নীরবের কথা শুনে সহসা চমকে উঠলো কৌশিক। বুকের ভেতর কোনো ভারি বস্তু দ্বারা স্ব জোরে বাড়ি লাগলো যেনো। দিন দুনিয়ার জ্ঞান হারিয়ে ফেললো কৌশিক। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কোনোমতে বললো,

"কিহ্! আম... আমি আসছি।"

ব্যাস! এতটুকুই বলার শক্তি পেয়েছে কৌশিক। ফোনটা কোনোমতে পকেটে পুরে উদ্ভ্রান্তের মতো দৌড়ে বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে। ভুলেই বসলো মিটিংয়ে কথা। চাকরি গেলে যাক। তাতে কৌশিকের কিচ্ছু যায় আসে না। তুবার আগে কোনোকিছু নয়। এমনকি কৌশিকের নিজের প্রাণও নয়।

-
-

নীরব ফোন কাটার পরপরই ভেতর থেকে ডক্টর বেরিয়ে এলেন। পরিবারের সবাই ছুটে গেলো ডাক্তারের কাছে। তাওহীদ সাহেব কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

"ডক্টর! আমার মেয়ে কেমন আছে? ওর বড় কোনো ক্ষতি হয়নি তো?"

ডক্টর মুখ থেকে টান দিয়ে মাস্কটা খুলে ফেললেন। এরপর দুই হাত নাড়িয়ে চাড়িয়ে বোঝানোর ভঙ্গিতে বললেন,

"পেসেন্ট এখন ঠিক আছেন। শক্ত কিছুর সাথে লেগে মাথার পেছনে একটু কেটে গেছে মাত্র। তবে ক্ষত খুব বেশি গভীর নয়। দুটো সেলাই দিতে হয়েছে। নাউ, শি ইজ আউট অফ ডেঞ্জার।"

ডাক্তারের সান্ত্বনা বাণী শুনে দেহে যেনো প্রাণ ফিরে পেলো সবাই। তুবা ঠিক আছে শুনে সকলে প্রাণ ভরে শ্বাস টানলো। মাথার ওপর থেকে দুশ্চিন্তার ছায়াও নেমে গেলো। সবাই একে একে যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ছিল ঠিক তখনই সবার শ্বাস আটকে দিতে ডক্টর বলে উঠলেন,

"ও হ্যা! আরও একটা কথা। পেসেন্টের দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। এমন ঘটনা যেনো দ্বিতীয়বার না ঘটে। আপনাদের মেয়ে প্রেগনেন্ট। সুতরাং এমন ঘটনা আবারও ঘটলে বাচ্চা মিসক্যারেজ হওয়ার সম্ভবনা আছে। ওয়েল, পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। আপনারা দেখা করতে পারেন।"

নিজ উদ্যোগে কথাগুলো বলেই চলে গেলেন ডক্টর। রেখে গেলেন পাথর বনে দাঁড়িয়ে থাকা পরিবারের সদস্য গুলোকে। প্রতিটা সদস্যই যেনো মোমোর মুর্তি বনে গেছে। তুবা প্রেগনেন্ট কথাটা শুনে সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। হতভম্ব পরিবারের সদস্যরা কথা বলতে ভুলে গেছে যেনো। অবিবাহিত মেয়ে প্রেগনেন্ট হলো কিভাবে? এটা কি আদৌ সম্ভব?

চলবে?

(পড়া শেষে লাইক কমেন্ট না করলে আরও প্যাচ লাগাই দিমু 😁😁😁 আর হ্যা, সবার আগে গল্প পেতে পেইজ ফলো করতে ভুলবেন না)

Address

Gazipur

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Ekla Ami-একলা আমি posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share