
19/06/2025
গল্প: লতির ঘ্রাণে ফিরে আসা
গ্রামের নাম ছিল শিমুলপুর। একেবারে ছোট্ট, নিরিবিলি একটা গ্রাম। সেখানে থাকত রুনু, ওর বয়স তখন দশ। রুনুর দাদী ছিল একদম সেরা রাঁধুনি। গ্রামের যেকোনো উৎসবে দাদীর হাতের রান্না না হলে যেন কিছুই জমত না।
একদিন বর্ষার সকালে দাদী হাঁক দিল,
— "রুনু, যাও তো কচি লতি আর কাঁচা কাঠালের বিচি নিয়ে এসো। আজ একেবারে পুরনো দিনের একটা পদ রান্না করব।"
রুনু কৌতূহলে চোখ বড় বড় করে বলল,
— "কাঠালের বিচি দিয়ে আবার কী রান্না হয় দাদী?"
দাদী হেসে বলল,
— "এই লতি, কাঠালের বিচি ও ইলিশ মাছের মাথা মিলিয়ে একটা এমন ঘ্রাণ বের হবে, খেলে মনে হবে — মায়ের আঁচলের ঘ্রাণ!"
রান্না শুরু হলো। দাদী পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ আর ঘন সরিষার তেল দিয়ে ধীরে ধীরে রান্না করছিলেন। হাঁড়ি থেকে এক অপূর্ব ঘ্রাণ ভেসে আসছিল, যেন পুরনো দিনের গল্পেরা সব জেগে উঠছে।
বিকেলে খাওয়ার সময় দাদী এক চামচ তুলে দিল রুনুর প্লেটে। প্রথম লোকমা মুখে দিয়েই রুনুর চোখ বড় হয়ে গেল।
— "দাদী, এমন স্বাদ তো কখনো পাইনি!"
দাদী চোখ টিপে বলল,
— "এই রান্নায় শুধু মসলা না, থাকে স্মৃতি... ভালোবাসা... আর একটু গ্রামবাংলার জাদু।"
রুনু সেই স্বাদ আর ভুলতে পারল না। শহরে চলে গেলেও, যখনই মন খারাপ হতো — সে বানিয়ে ফেলত লতি আর কাঠালের বিচি। খেতে খেতে মনে হতো, দাদীর হাসিমাখা মুখটা যেন ঠিক সামনে বসে।