12/09/2024
~রিফাত মজুমদার(সিফাতের ভাই)
আমরা ৩ ভাইবোন, সিফাত আমাদের আদরের ছোটভাই। ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, আমার ভাই সিফাত জীবনে প্রথমবারের মতো তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে ভ্রমণে বের হয়। বন্ধুদের গ্রুপে সিফাতসহ মোট ১০ জন ছেলে ও ৩ জন মেয়ে ছিলো। তারা মিরসরাইয়ে এসে কুখ্যাত খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখতে যায়(সচরাচর সবাই গাইড নিয়ে গেলেও, ওরা গাইড নেয়নি) এবং ‘মায়ের দোয়া’ নামের এক হোটেলে অবস্থান করে। হোটেলে পৌঁছানোর পর সকালের নাস্তা সেরে তারা দুপুরের খাবার অর্ডার করে পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো দেখতে বের হয়।
প্রথম ঝর্ণায় সকাল ১১টায় পৌঁছানোর পর, সিফাত হোটেলে ফিরে যায় কিছু জিনিস (এখনো জানা যায়নি কী) আনতে। গ্রামবাসীর তথ্য অনুযায়ী সিফাতের পেছন পেছন তাঁর আরও দুইজন বন্ধু হোটেল পর্যন্ত যায়,কিন্তু পরবর্তীতে তারা কখন ঝর্নায় ফিরে গেছে তার কোনো স্পষ্ট উত্তর আমরা সিফাতের বন্ধুদের কাছ থেকে পাইনি । এরপর তারা আরও উপরে ট্র্যাকিং শুরু করে। দুপুর ১২:৩০-এ তারা ১২তম ঝর্ণায় পৌঁছায়, যা ছিলো একেবারেই নির্জন জায়গায়। এটি একটি ছোট্ট পুকুরের মতো জায়গা, যেখান থেকে বের হওয়ার একমাত্র পথ ছিলো ফিরে আসার রাস্তাটি। চারদিকে ছিলো উঁচু পাহাড়ের খাড়া দেয়াল, আর পানি এতোটাই কম ছিলো যে সেখানে কারো ডুবে যাওয়া অসম্ভব (এ তথ্য আমাদের সেখানকার গ্রামবাসী, পুলিশসহ অনেকেই নিশ্চিত করেছে)।
ওই জায়গায় তারা এক ঘণ্টা বিশ্রাম নেয় এবং অ্যা*ল*কো*হল পান করে ( একটা ৭৫০ এম*এল-এর কেরু তারা ১২ জন মিলে খেয়েছে),শুধু তাদের মধ্যে ‘শিক্ত’ নামের বন্ধু অ্যা*ল*কো*হল পান করেনি—সে নিজে এবং তার বন্ধুরাও তা জানিয়েছে। এদিকে, সিফাত ও তার দুই বন্ধু উপরে বসে ধূ*ম*পান করছিলো, যেখানে পানি পৌঁছায় না এবং সেখান থেকে যদি কেও পরেও যায় তারপরেও সে হাঁটুজলে গিয়ে পরবে। সিফাত পানি থেকে দূরে ছিলো এবং সব ধরনের ঝুঁকি এড়িয়ে চলছিলো। সিফাত জানে এই প্রথমবার সে বন্ধুদের সাথে এমন একটি ভ্রমণে এসেছে, যেখানে যেকোনো ধরনের অনা*কাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে ভবিষ্যতে বন্ধুদের সাথে এমন ভ্রমণ করার সুযোগ আর নাও হতে পারে। আমি আমার ভাইকে খুব ভালো চিনি—সে খুব সাবধানতা অবলম্বন করে এবং ঝুঁকি এড়িয়ে চলে।
বন্ধুরা সবাইমিলে মুহূর্তটা উদযাপন করতে থাকে, সেই সময় ৫ জন ছেলে পানিতে নামে এবং সাঁতার কাটে। গ্রুপের ৩ জন ছেলে একটি বড়ো পাথর থেকে পানিতে ঝাঁপিয়ে পরেও আনন্দে মেতে ওঠে। এই সময় গ্রুপের ৩জন মেয়ে হাঁটুসমান পানিতে সময় কাটাচ্ছিলো। পাথর থেকে পানিতে ঝাপ দেওয়ার আনন্দে অংশগ্রহণ করতে সিফাতকে ডাকা হয়, কিন্তু সিফাত জানায় সে এখন পানিতে নামবে না। নিচে নামার জন্য সিফাতের বন্ধুরা সিফাতকে ইনসিস্ট করলেও সে নিজের মতো করে উপরে বসে সময়টা উপভোগ করতে থাকে। আর সিফাত যে পানিতে নামতে আগ্রহী ছিলো না, এই কথা শাওন নামের এক ছেলে আমাদের কাছে এবং গ্রামবাসী ও পুলিশের কাছে কনফার্ম করেছে।
বেলা ২:৩০ নাগাদ, সিফাতের বন্ধুরা দাবি করে যে তারা হঠাৎ দেখতে পায়, সিফাত আর সেখানে নেই।তাঁদের সবার এক অদ্ভুত দাবি, যে সিফাত নাকি তাঁদের চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে গেছে। তাদের দাবি অনুযায়ী, তারা সিফাতকে খোঁজা শুরু করে যা একদমই ঠিক নয় কারণ গ্রামবাসীরা বলেছে তারা বিকেল ৪টার দিকে হোটেল এ ফিরে আসে এবং তড়িঘড়ি করে ঢাকা ব্যাক করার ট্রাই করে। গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয়, সাথে সাথেই তারা সিফাতের কথা জিজ্ঞেস করে,আর মায়ের দোয়া হোটেলেও সকালের হিসাবে দুপুরের খাবারের জন্য তেরো জনের রান্না করা ছিলো। জিজ্ঞেস করার এক পর্যায়ে গ্রুপের একজন মেয়ে বলে মা*রা খাক সিফাত, জানি না ও কই।(গ্রামের এক মহিলা এই কথা উইটনেস করেছে বলে আমার মা’কে জানিয়েছে) বাকি কয়েকজন বন্ধুরা বলে সিফাত নাকি হুট করে অসুস্থ হয়ে যায় এবং হোটেলে ব্যাক করে। কিন্তু পাহাড়ের উপর থেকে, হোটেলে ফিরে যাওয়ার পথ বিপজ্জনক এবং প্রাণঘাতী পথ ধরে একা একা ফিরে আসার সিদ্ধান্ত সিফাতের নেয়ার কথা না,আর হোটেলে রওনা হলেও বন্ধুদের কাওকে না কাওকে তো জানিয়ে যাওয়ার কথা। আমার ভাই এমন ধরনের জায়গায় কখনো একা থাকতে পছন্দ করবে না; সে সহজেই ভয় পাবে, বিশেষ করে যেখানে অতীতে মানুষ মা*রা গেছে বলে শোনা গেছে এমন জায়গায় সিফাত অবশ্যই এবং অবশ্যই সতর্ক থাকবে।গ্রামবাসীদের সন্দেহ হলে তারা সিফাতের বন্ধুদের ঢাকা যেতে নিষেধ করে,কিন্তু তবুও বারোজনের ভেতর পাঁচজন ঢাকা চলে আসে। পরে পরিস্থিতি একেবারেই অস্বাভাবিক মনে হলে বাকি সাতজনকে গ্রামবাসী হোটেলে আটকে দেয়।
গ্রুপের‘আসিফ’ নামের এক ছেলে বলে সে নাকি রাত ৯টায় ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশকে জানায়, এবং পুলিশ তাদের থানায় যেতে বলে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। মিরসরাই থানা পুলিশ আমাদের জানায় তাঁদের কাছে এমন কোনো অভিযোগ আসেনি।
সেদিন রাত ৯টার দিকে আমরা পরিবারের সবাই বুঝতে পারি যে সিফাতের সাথে ৬ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কোনো যোগাযোগ নেই এবং তার বন্ধুদের সাথেও যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছিলো না। আমি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়রদের মাধ্যমে কোনোভাবে সিফাতের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই, এবং তখন জানতে পারি আমার ভাই দুপুর থেকে নি*খোঁজ। আমরা এক মুহূর্তও দেরি না করে রাতেই মিরসরাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। ভোর ৪টায় পৌঁছে দেখি, তার বন্ধুরা নির্বিকারভাবে ঘুমাচ্ছে। আমি দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করি, তারপর তাদের মধ্যে ‘তন্ময়’ নামের একজন জেগে উঠে আমাদের কাছে আসে এবং বাকি সবাইকে জাগিয়ে তুলে। আমি তাদের কাছে সিফাতের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি— সিফাত কোথায়, কী অবস্থায় ছিলো, কী ঘটেছিলো। তাদের পক্ষ থেকে শুধু একটি সাধারণ বিবৃতি—“সিফাত হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে গেছে এবং সিফাত পানিতে নামেই নি”।এছাড়া আর কোন নির্দিষ্ট বা স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি এবং প্রতিবারই সিফাতের বন্ধুরা আমাদের একবারেও নির্দিষ্ট করে বলেনি ওরা কোন জায়গায় অবস্থান করছিলো।শেষে এক পর্যায়ে আর সহ্য করতে না পেরে আমি এবং আমার মা তাঁদের পা ধরি। এরপরেও তারা তাদের কথায় অনড় ছিলো।
এতে হতাশ হয়ে আমি,আমার বড় বোনসহ আমার পরিবার, সিফাতের ঢাকা থেকে আসা ছোটবেলার বন্ধুরা,সিফাতের ইউনিভার্সিটির সিনিয়র বড় ভাইরা ও স্থানীয়রা একসাথে মিলে সকাল ৬:০০টায় পাহাড়ে রওনা হই সিফাতকে খুঁজতে।আমাদের সাথে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ছিলো কিন্তু তাদের ডুবুরি টিম ছিলো না।ফায়ার সার্ভিসের কাছে যখন জানতে চাওয়া হয় ডুবুরি কই, তারা জানায় এটা খুব লম্বা প্রসেস, এই মুহূর্তে উনাদের কাছে টিম নেই। প্রায় ৪ঘণ্টা খোজার পর আমরা যখন ব্যাক করি তখন দেখি সেনাবাহিনী এসেছে। পরে সেনাবাহিনীকে সাথে নিয়ে আমরা আবার খোঁজা শুরু করি। খোঁজার পর সেনাবাহিনী সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং ক্যাপটেইন ইশতিয়াক আমাদের বলে সবার উত্তর সন্দেহজনক এবং আমাদের থানায় যোগাযোগ করতে বলে। এরপর পথিমধ্যে জানতে পারি, শিক্ত’র আদেশে গ্রুপের ৫ জন ঢাকা ফিরে গেছে, তাদের মধ্যে ৩ জন মেয়ে এবং ২ জন ছেলে পাশাপাশি শিক্ত গ্রুপের সবাইকে বলে দেয় আমাদের ফোন আসলে যেন ওরা না ধরে। আমরা ১২তম ঝর্ণা পর্যন্ত পৌঁছে আবার খোঁজ চালাই, কিন্তু কোনো খোঁজ মেলে না। এখানে উল্লেখ্য যে সিফাতের বন্ধুরা আমাদের প্রথম থেকেই মিসগাইড করছিলো, ঝর্নার বদলে এদিক সেদিক পাহাড়ে খোঁজাখুঁজি করাচ্ছিল। আমরা দুপুরের দিকে নিচে ফিরে আসি। শুরুর দিকে আমরা কিছুটা সাহস পেলেও পরে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় অনীহা এবং খাম*খেয়ালী আছে। তবুও সিফাতকে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পাবো এই বিশ্বাসে আমরা আবার সিফাতকে খুঁজতে যাই পাহাড়ে, কিন্তু তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোনো সন্ধান পাইনি। সন্ধ্যা নাগাদ, আমরা আবার ফিরে আসি। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে ঢাকায় ফিরে যাওয়া মেয়েদেরও এখানে ডেকে আনা হবে।
পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হওয়ার পর, আমরা ঢাকা ফিরে যাওয়া সিফাতের সেই ৫ জন বন্ধুর ৪জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কাছে তুলে দেই। ঢাকায় ফিরে যাওয়া বাকি দুই মেয়ে থানায় আসে কিন্তু শ্রাবন্তি নামের মেয়েটা তার মোবাইল অফ করে দেয়। আমাদের সাথেও যোগাযোগ করে না। পরবর্তীতে পুলিশ যোগাযোগ করে আসতে বলার পরেও নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে থানায় আসে এই মেয়ে।তাদের সবার আচরণ ছিলো চরম উদাসীন এবং সন্দেহজনক। একজন মেয়েকে তো দেখা গেল সুন্দর পোশাক, গয়না, টিপ পরে খুব পরিপাটি হয়ে থানায় এসেছে। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেকিন্তুতাদের ফোন ও ডিভাইস জব্দ না করে তাঁদের কাছেই দিয়ে দেয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর, পুলিশ জানায় যে তাদের বক্তব্য অবিশ্বাস্য এবং অস্বাভাবিক। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, পুলিশ যখন একজন একজন করে জিজ্ঞাসাবাদ করে তখন একেকজনের বক্তব্য একেক রকম পাওয়া যায়, কারও সাথে কারও বক্তব্য পুরোপুরি মিলে না। কিন্তু প্রাথমিক জিজ্ঞেসাবাদের পর তাদের সবাইকে এক রুমে রাখে। খুব কাকতালীয়ভাবে পরবর্তীতে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের সবার স্টেটমেন্ট এক হয়ে যায়। এরপর পুলিশ তাদের কড়াভাবে বলে যে, ১২ জন মানুষের সামনে থেকে একজন মানুষ হঠাৎ অ*দৃশ্য হয়ে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কেউ যদি কিছু লুকায় তাহলে তার পরিণাম খুব খা*রাপ হতে পারে। পুলিশ তাদের কড়াভাবে সতর্কও করে। কিন্তু যখন তদন্তের জন্য পুলিশ স্টেশনে ওদের সবাইকে একসাথে রাখা হলো এরপর থেকেই সবার বক্তব্যে একরকম হয়ে আসে যা অবশ্যই কাকতালীয় নাএবং পুরোটা যে ওদের নিজের বানানো তা সহজেই বুঝা যাচ্ছে।ওদের রাতে খাবারের জন্য আমাদের বলা হলে আমার কাজিন খাবারের ব্যবস্থা করে। খাবার খাওয়ার পর ওদের ছেড়ে দেওয়া হয় এবং আমরা মামলা করতে চাইলে কোন মামলা না নিয়ে নি*খোঁজ হওয়ার জিডি করে।
পরের দিন ভোরবেলা ডুবুরিসহ আবার সিফাতকে খুঁজতে বের হওয়ার পরিকল্পনা হয়
পরিকল্পনা মতো সকালে আমরা আবার সবাই মিলে সিফাতকে খুঁজতে বের হই।আমাদের নেতৃত্ব দেয় ফায়ার ব্রিগেডের সদস্যরা এবং সেদিনই প্রথমবারের মতো পুলিশ আসে। এর আগে একটিবারের জন্যও তারা আমার ভাইকে খুঁজতে আসার প্রয়োজন মনে করেনি। কিন্তু আসার পরেও তারা ঘটনাস্থলে না গিয়ে প্রথম ঝর্নায় অপেক্ষা করছিলো ফায়ার সার্ভিস টিমের আপডেটের জন্য। তাদের বার বার বলার পরেও তারা একটিবারের জন্যও ঘটনাস্থলে যায়নি।এমনকি সেই ঘটনাস্থলে মানুষকে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে জোনও লক করেনি।ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় আবার খোঁজ শুরু হয় পাশাপাশি সিফাতের বন্ধুরাও ছিলো কিন্তু তারা আমাদের কোনো রকম ভ্যালিড তথ্য দিয়ে সাহায্য করেনি। তবে ওখানকার স্থানীয় লোকজন আমাদের অসম্ভব কোঅপারেট করেছে, আমার ভাইকে খুঁজে বের করতে পুলিশ-প্রশাসনের চেয়ে তাদের তৎপরতা ছিলো চোখে পড়ার মতো। একদিকে প্রশাসনের লোকেদের গাছারা ভাব আমাদের হতাশ করছিলো, অন্যদিকে এলাকার স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতা আমাদের মধ্যে শক্তি সঞ্চার করেছে সিফাতকে খুঁজে বের করতে। সিফাতের বন্ধুদের একেকসময় একেকরকম বক্তব্যের কারণে, সিফাতকে সর্বশেষ যেখানে দেখা গিয়েছিলো সেই স্পটটাই গুরুত্বের সাথে খুঁজে দেখা হয়নি শুরুর দিকে। এলাকার স্থানীয়রা প্রশাসনের লোকদের সাথে আশেপাশের বনজঙ্গল পর্যন্ত তন্নতন্ন করে খুঁজে ব্যর্থ হওয়ার পর আবার সেই স্পটে গিয়ে উদ্ধার অভিযান করা হলো যেখানে সিফাতকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিলো। । স্পটে আমরা সবার আগে গিয়ে পৌঁছাই এবং আমার মামাতো ভাই ‘সোহাগ’ সেই ছোট পুকুরের মধ্যে সিফাতের নি*থ*র দেহ খুঁজে পায়। টানা ৩ দিন ধরে খোঁজার পর, ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১১:১৫ মিনিটে আমরা অবশেষে আমার ভাইয়ের মৃ*ত*দেহ খুঁজে পাই।
সিফাতের বন্ধুরা যদি প্রথমেই আমাদের আসল জায়গাটার কথা বলত তাহলে হয়ত আমরা আমাদের ভাইকে জী*বিত পেলেও পেতে পারতাম।আর জী*বিত না পেলেও আমার ভাইয়ের লা*শটা এটলিস্ট পচে জেত না।
* সিফাতকে যেখানে পাওয়া গেছে সেখানে কেউ ডুবে মা*রা যাবে এমন সম্ভাবনাই নেই।
লা*শ নিয়ে আমরা যখন থানায় আসি তখন শুরু হয় নতুন বিড়ম্বনা। লা*শের ময়ানাতদন্ত করার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে নেয়া লাগবে। কিন্তু লা*শ নিয়ে যাবার জন্য যে ন্যূনতম সাহায্য দরকার সেইসব কোনো সাহায্য আমরা পুলিশ থেকে পাইনি।পুরোটা টাইমে শুধু একটি আম্বুলেন্স ঠিক করে দেওয়া ছাড়া পুলিশের উল্লেখযোগ্য কোনো সাহায্য পাইনি আমরা।উল্লেখ্য, মেডিক্যালে পৌঁছানোর পর আমাদের কাছ থেকে তিনগুন বেশি ভাড়া নেওয়া হয়।এদিকে আমার ভাইয়ের হ*ত্যা*কারীদের ফ্যামিলির লোকজনও আসা শুরু করে থানায়। এক পর্যায়ে তারা বিভিন্ন ফোনকল দিয়ে উপর মহলে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে।
ময়না*তদ*ন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যালে যেতে যেতে আমাদের রাত ৮টা বেজে যায়। সে সময় কোন ডাক্তার পোস্টমারটেম করার জন্য রাজি হয় না অনেক অনুরোধ করা সত্ত্বেও। পরদিন শুক্রবার হাতে পায়ে ধরার পর একজন ডাক্তার বড়জোর ৮/৯ মিনিটে লাশের বডি থেকে অ*র্গান রেখে লা*শ দিয়ে দেয়, তারপর জানায় রিপোর্ট পেতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে। আমার প্রশ্ন ৮/৯ মিনিটে কি পোস্টমারটেম হয়ে যায়?
প্রথমে সিফাতের নি*খোঁজ হওয়া, সিফাতের প্রাপ্তবয়স্ক বন্ধুদের পক্ষ থেকে উপযুক্ত পদক্ষেপ না নেওয়া, গ্রুপ থেকে তাড়াহুড়া করে কয়েকজনের ঢাকা ফিরে আসা, একজনের সাথে আরেকজনের বক্তব্য না মিলা (যদিও সবাই এক স্পটেই উপস্থিত ছিলো) ইত্যাদি সবকিছু আমাকে ভাবায়... আমি ভাবি আমার ভাই কিভাবে মা*রা গেল? আমার ভাই কি মা*রা গেল? নাকি আমার ভাইকে মে*রে ফেলা হয়েছে? নাকি কোন দুর্ঘটনার ফলাফল আমার ভাইয়ের মৃ*ত্যু? আমার মনে শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন, কিন্তু কোন উত্তর নেই। আর আমার এই প্রশ্ন আরও নির্বিকার হয় যখন গ্রামবাসীরা বলে এই খইয়াছড়া ঝর্না থেকে এর আগেও মানুষ মা*রা গেসে, কিন্তু পানিতে ডুবে মরে যাওয়া অসম্ভব।তার উপর তিন দিন পর লা*শ ভেসে উঠা সন্দেহ আরও বেড়ে যায়।
আমার ভাইকে আমরা ফেরত পাবো না। কিন্তু আমি চাই পৃথিবীতে আর কারো ভাইয়ের সাথে যাতে এমন না হয়। মন থেকে চাই আমার ভাইয়ের অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক।
এই পৃথিবীতে আমার ভাই আর নেই, কেন বা কিভাবে সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল সেই প্রশ্নের উত্তরও নেই। ভাইকে তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না, সেই আশা আমি করি না। তবে উত্তর তো পাবো! এই আশা তো করতেই পারি তাই না?
©Hrifat R. Mazumder