08/04/2023
⭕ সংক্ষিপ্তভাবে যাকাতের পরিমান, যাকাত আদায়ের শর্তাবলী এবং কাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে এই বিষয়ে আলোচনা করা হলোঃ-
🔸 স্বর্ণের ক্ষেত্রে যাকাতের নিসাব হচ্ছে সাড়ে সাত ভরি এবং রুপার ক্ষেত্রে নিসাব হচ্ছে সাড়ে বায়ান্ন ভরি। কারো কাছে এই পরিমাণ স্বর্ণ কিংবা রুপা অথবা রূপার নিসাব পরিমান টাকা থাকলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে। -[সহীহ বুখারী- ১৪৪৭, সহীহ মুসলিম- ৯৭৯]
🔹 যদি সোনা-রূপা, টাকা-পয়সা কিংবা ব্যবসায়িক পন্যের কোনোটিই আলাদাভাবে নিসাব পরিমাণ না থেকে থাকে এবং এইসব মিশ্রিত সম্পদ একত্র করার পর যদি তা সাড়ে ৫২ ভরি রুপার সমমূল্য কিংবা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এই সকল সম্পদ একত্রে হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে। -[মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক- ৭০৬৬,৭০৮১]
🔸 যাকাত আদায় করার ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, গচ্ছিত সম্পদ ঋণ অতিরিক্ত হতে হবে এবং তা পূর্ণ ১ বছর নিজের কাছে থাকতে হবে।
⭕ উদাহরণস্বরূপ কিছু দৃষ্টান্ত দেওয়া হলোঃ-
▪️কারো কাছে নগদ ২ লক্ষ টাকা, ১ লক্ষ টাকার স্বর্ণ এবং ৫০ হাজার টাকার রূপা আছে, তাহলে এই ৩ লক্ষ
৫০ হাজার টাকার উপর যাকাত দিতে হবে।
▪️কারো কাছে নগদ ৩ লক্ষ টাকা, ২ লক্ষ টাকার স্বর্ণ এবং ২০ হাজার টাকার রূপা আছে, পাশাপাশি ২.৫ লাখ টাকা ঋণ আছে। তাহলে মূল টাকা থেকে ঋণ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট টাকার উপর যাকাত দিতে হবে।
▪️কারো কাছে নগদ ১ লক্ষ টাকা, ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণ এবং ৫০ হাজার টাকার রূপা আছে, পাশাপাশি ২ লক্ষ টাকা ঋণ আছে। তাহলে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরজ হবে না বরং ঋণ আদায় করা ফরজ হবে।
⭕ মোট কথা হচ্ছে, কারো কাছে যদি স্বর্ণ, রূপা, নগদ অর্থ কিংবা ব্যবসায়িক পন্য পৃথক পৃথকভাবে নিসাব পরিমান না থেকে থাকে, তাহলে তার উপর যাকাত
আদায় করা ফরজ হবে না।
⭕ তবে যদি প্রতিটি সম্পদই কিছু কিছু করে থাকে যা কিনা একত্র করলে সাড়ে ৫২ ভরি রূপার সমতূল্য হয় অর্থাৎ আনুমানিক ৬৫ হাজার টাকার সমান কিংবা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এই মিশ্রিত সম্পদের উপর যাকাত আদায় করতে হবে।
🔸 যাকাত ফরজ হয়েছে এমন সম্পদের চল্লিশ ভাগের একভাগ (অর্থাৎ ২.৫%) হারে যাকাত আদায় করা ফরজ।
🔹 প্রতি ভরি স্বর্ণ অথবা রূপার বিক্রয়মূল্যের উপর যাকাত নির্ধারণ করতে হবে, ক্রয়মূল্যের উপরে নয়। অর্থাৎ বর্তমানে স্বর্ণের বিক্রয়মূল্য যদি ৭০ হাজার টাকা হয়, তাহলে প্রতি ভরি ৭০ হাজার টাকা করে ধরে মোট স্বর্ণের যাকাত নির্ধারণ করতে হবে।
🔸 যাকাত আদায় করার জন্য যাকাত প্রদানের পূর্বে নিয়ত করা জরুরী।
🔹 যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে যাকাত গ্রহীতাকে এই কথা বলার প্রয়োজন নেই যে, এটা যাকাতের টাকা। বরং মালিক যাকাতের নিয়ত করে টাকা প্রদান করলেই যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
🔸 যাদের উপর যাকাত ফরজ নয় এমন অসহায়, গরীব আত্বীয় স্বজন, এতীম, মিসকিন, ঋণ গ্রহণকারী ব্যক্তিদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে। -[সূরা তওবা- ৬০]
🔹 তবে আমি যাদের মাধ্যমে এসেছি এবং যারা আমার মাধ্যমে আসবে তাদেরকে যাকাত দেওয়া জায়েজ নেই। যেমন- মা বাবা, দাদা দাদী, নানা নানী, ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনী।
🔸 অমুসলিমদেরকে এবং মসজিদ নির্মান কাজে যাকাত দেওয়া জায়েজ নেই। [মু. আ. রা.- ৭১৬৬]
🔹 ব্যবহৃত সম্পদের উপর যাকাত ফরজ নয়। অর্থাৎ ব্যবহৃত সম্পদ (বাড়ি, গাড়ি, খাট, ফ্রিজ) যদি লাখ টাকার উপরেও বিদ্যমান থাকে, তবুও এর উপর যাকাত আদায় করা ফরজ হবে না।