
23/09/2024
গত ২৮ আগস্ট ২০২২ ইং তারিখ হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামালের একক বেঞ্চ, একটি মামলার রায়ে বলেছেন। চেক ডিজঅনার মামলায় কাউকে জেলে পাঠানো সংবিধান পরিপন্থী। আদালতের অভিমত এটা সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামাল বলেছেন, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, অস্ট্রোলিয়া সহ বিভিন্ন দেশে চেক ডিজঅনার মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান নেই। এসব দেশে চেক ডিজঅনার মামলা গুলো দেওয়ানি প্রাকৃতির মামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কিন্তু ওই সময় রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে হাইকোর্টের রায় স্তগিত করে দিয়ে ছিলেন চেম্বার জজ।
চেক ডিজঅনার মামলার নেতিবাচক দিক।
চেক দাতা সব সময় স্বেচ্ছায় চেক ইস্যু করেনা। বাদী চেক দাতার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে চেকে স্বাক্ষর নিতে পারে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে চেক দাতা চেকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হতে পারে। চেক দাতাকে জিম্মি করে বা ভয় দেখিয়ে, প্রতারণা করে, চুরি করে বাদী খালি চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিতে পারে।
দুই ব্যক্তি একটি কাজের চুক্তিবদ্ধ হলেন। একটি নির্দিষ্ট সময় কাজটি করে দেয়ার বিনিময়ে, প্রথম ব্যক্তি দ্বিতীয় ব্যক্তিকে আগাম চেক দিলেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি কাজটি করেননি বা নির্ধারিত সময়ে করেননি। স্বাভাবিক কারণেই প্রথম ব্যক্তি চেকটি ক্যাশ না করার জন্য ব্যাংকে জানিয়ে দিবেন। কিন্তু তারপরও ওই চেকটি তিনি ডিজঅনার করিয়ে (এনআই অ্যাক্ট ১৩৮) ধারায় মামলা দায়ের করতে পারবেন ।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিছু সুধী মহাজন। সাধারণ গরিব মানুষদেরকে উচ্চ সুদে ঋণ দেয় এবং জামানত হিসেবে ব্লাঙ্ক চেক ও স্টাম্প এ স্বাক্ষর নিয়ে রাখেন। পরে নির্ধারিত সময়ে টাকা পরিষদে ব্যর্থ হলে, ইচ্ছেমতো টাকার অংক বসিয়ে মামলা করে দেয়।
মামলার বিচারের সময় আসামির দাখিলকৃত জিডির কপি, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের স্টাম্প/সিল/ স্বাক্ষর, পেমেন্ট এর আবেদন, প্রতারণার সাবমিশন ইত্যাদি অনেক আদালতে আমলে নেন না।
(এনআই অ্যাক্ট ১৩৮) ধারায় মামলা করার আগে চেক দাতাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাবার নিয়ম থাকলেও, বাদী বিভিন্ন ভাবে আটকিয়ে রাখে। চেক দাতার কাছে লিগ্যাল নোটিশ পৌঁছায় না। ফলে চেক দাতা জানতে পারে না, তার নামে মামলা হতে যাচ্ছে।
চেক ডিজঅনার মামলায় আপিল করতে হলে চেকে উল্লেখিত টাকার ৫০ শতাংশ টাকা জমা করে আপিল করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে , ফলে আসামি নিজেকে নির্দোষ প্রমান করার সুযোগ পাচ্ছে না।
আইন মানুষের কল্যাণের জন্য করা হলেও, (এনআই অ্যাক্ট ১৩৮) ধারা মানুষের জন্য কতটা কল্যাণকর ?