15/03/2025
জীবন যেন এক অন্তহীন দৌড়ের ময়দান—কেউ জন্মেই থাকে প্রান্তরেখার সামনে, কেউ শুরু করে বহুদূর পিছিয়ে। কারও সামনে থাকে মসৃণ পথ, কেউ আবার কাঁটা-ছাওয়া পথে পা ফেলে রক্তাক্ত হয়। কেউ অনায়াসে গতির ঝড় তোলে, কেউ প্রতিটি পদক্ষেপে হোঁচট খায়, পড়ে যায়, উঠে দাঁড়ানোর লড়াই করে।
কেউ এক রাতেই পরীক্ষার জন্য কয়েক ঘণ্টা পড়ে অসাধারণ ফল করে, আর কেউ বছরের পর বছর পরিশ্রম করেও কাঙ্ক্ষিত সফলতা পায় না। কেউ জন্মগতভাবেই উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে যায় ধনসম্পদ, বিলাসিতা, নিরাপদ ভবিষ্যৎ। আর কেউ ছোট্ট একটা বই কেনার জন্যও দিনের পর দিন টাকা জমায়। জীবন কখনোই সবার জন্য একই নিয়মে চলে না—কেউ আকাশচুম্বী স্বপ্ন দেখে, আর কেউ শুধু দু'বেলা খাবারের নিশ্চয়তা খোঁজে।
এই রেসে কেউ প্রথম মোড়েই বিজয়ের মুকুট পেয়ে যায়, কেউ শেষ অবধি লড়ে গিয়েও বিজয়ের স্বাদ পায় না। কেউ একটি ব্যবসা শুরু করেই আকাশ ছোঁয়া সাফল্যের স্বপ্ন দেখে, আর কেউ বারবার ব্যর্থতার আঘাতে বিপর্যস্ত হয়। কেউ হয়তো সহজেই পেয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত চাকরিটা, আর কেউ হাজারো দরজায় কড়া নাড়লেও প্রতিটি জায়গা তার জন্য বন্ধ হয়ে থাকে।
একদিন হয়তো দেখবেন, আপনার চেয়ে কম দক্ষ কেউ জীবনের সেরা সুযোগটা পেয়ে গেছে। কারণ সে হয়তো সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায় ছিল। হয়তো তার পরিচিত কেউ ছিল, হয়তো ভাগ্য তার পক্ষে ছিল। এসব ভেবে হয়তো মনে হবে, জীবন বড্ড অন্যায্য।
কিন্তু আপনি যা দেখছেন, তা কি পুরো সত্য? এক তুষারাবৃত পর্বতের চূড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা কাউকে দেখে মনে হতে পারে, সে কত সৌভাগ্যবান! কিন্তু তার পায়ের নিচে কতটা পিচ্ছিল পথ, কতবার সে পড়ে গেছে, তার ফুসফুসে জমে থাকা কষ্টের পাহাড়—সেসব তো কেউ দেখে না।
তাই এই দৌড়ে যদি অন্যের সাফল্যের সঙ্গে নিজের জীবন তুলনায় ব্যস্ত থাকেন, তাহলে ক্লান্তি আর হতাশা ছাড়া কিছুই পাবেন না। এখানে কেউ ছোট্ট একটা সাইকেল কেনার স্বপ্ন দেখে, আর কেউ শত গাড়ির মালিক হয়েও আরও বিলাসিতার পেছনে ছুটছে।
তাহলে উপায় কী?
উপায় একটাই—নিজের পথ খুঁজে নেওয়া। জীবন প্রতিযোগিতা নয়, এটা নিজের সাথে নিজেকেই ছাপিয়ে যাওয়ার যাত্রা। সূর্যের মতো নিজের কক্ষপথে চলতে হবে, অন্যের গতি মেপে নয়। জীবন কখনো পুরোপুরি ন্যায্য হবে না, কিন্তু আপনি নিজেকে প্রস্তুত করতে পারেন, নিজেকে গড়ে তুলতে পারেন।
কারণ, প্রকৃত জয় মানে ফিনিশিং লাইনে পৌঁছানো নয়, বরং প্রতিটি পদক্ষেপে নিজেকে এগিয়ে নেওয়া, নিজের সীমা অতিক্রম করা।