19/02/2025
বউকে চাকরি করতে দিবো, কি দিবো না- এই নিয়া টানা এক সপ্তাহ ধরে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি।। বউকে আমিই এদিক সেদিক সিভি ড্রপ করতে বলছিলাম।। দুই একটা ইন্টারভিউতে নিজেই নিয়ে গেছি।। বউয়ের ভালো একটা চাকরির অফার আসছে গত সপ্তাহে, সবি ঠিক ছিলো- ভালো কোম্পানি, হ্যান্ডসাম স্যালারি।। কিন্তু বিপত্তিটা হলো পোস্টিং নিয়া।।
আমি থাকি ঢাকা, দেড় বছরের সংসার।। উচ্চ শিক্ষিত বউকে সামান্য স্পেস দেয়ার কথা চিন্তা করে- আমিই ওকে চাকরি করার অফার করি।। সে যাস্ট লুফে নেয় আমার অফার।। যদিও আমি ভেবেছিলাম- সে অফার শুনে খুশি হবে, কিন্তু চাকরি করতে চাইবে না।।
এ সি এল নামে এক বিদেশি সংস্থায় জব হয়েছে নোভার।। কর্মস্থল কক্সবাজার।। ভাবা যায় আমি থাকবো ঢাকা, বউ থাকবে কক্সবাজার।। মাত্র দেড় বছরের সংসার আমাদের, এরমধ্যে এই দূরত্ব ভুল না সঠিক- সময় বলে দিবে।।
নোভাকে না করে দিলাম, এই জব করা লাগবে না।। নোভা অভিমান করে বসে আছে।। আমি জানি নোভার অভিমান, কচু পাতার উপরে পানির মত।। একটু নাড়া চাড়া দিলেই পানির নাম নিশানা গায়েব।। কিন্তু, এইবার কাজ হচ্ছে না- অগত্যা আমি নতি স্বীকার করলাম।।......
নোভা আর একটা মেয়ে কক্সবাজার কুরুশকুল এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে।। আমি ঢাকায় বিয়ের আগে ব্যাচেলর থেকেছি, আবারো ব্যাচেলর লাইফ নতুন করে উপভোগ করছি।। এলাকার হোটেলে খেয়ে দেয়ে গ্যাস্ট্রিক ডেকে এনেছি, গ্যাস্ট্রিক এখন রাতে আমার পাশে ঘুমায়।। মাঝে মাঝে হুদাই ঘুম থেকে ডেকে তুলে।। নোভার অভাবে গ্যাস্ট্রিক আমাকে নিয়মিত সংগ দেয়।।
নোভার চরিত্রের ব্যাপারে আমার একবিন্দুও সন্দেহ নেই, খুব সাধারণ ঘরের অসাধারণ একটা মেয়ে।। তাই ও এত দূরে থাকলেও বাজে চিন্তা মাথায় ঢুকে না।। আমি সকাল বিকাল অফিস করি, নোভার সাথে চ্যাট-ফ্যাট, ভিডিও কল এভাবেই যাচ্ছে।। বেচারির নাকি তিনমাসে কোন ছুটি নাই, নতুন জয়েন বলে কথা।। আমি ভাবলাম সময় করে আমিই কক্সবাজার যাবো।। .....
মাস খানেক হয়ে গেলো, নোভার জন্যে মন কেমন ছটফট করতেছে।। আমি এখন হাড়ে হাড়ে ওর অভাব অনুভব করছি।।
নোভার ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড আমার জানা, অভ্যাসবশত আমি মাঝে মাঝে এমনিই ঢুকি।৷ আজ মধ্য রাতে নোভার আইডিতে ঢুকতে গিয়ে ধাক্কা খেলাম।। এটা নাকি ওল্ড পাসওয়ার্ড, গতকাল রাতে নাকি এটা চেঞ্জ হয়েছে।। তেমন কিছু মনে না করে ঘুম দিলাম।।
পরের দিন সকাল থেকে নোভা ফোন রিসিভ করছে না।। বিকালে সে ফোন রিসিভ করে বলে- অফিসের জরুরি মিটিং ছিলো, কিছু ফরেনার গেস্ট ডিল করলো হ্যান ত্যান।। সেদিনের মত মেনে নিলাম।। বার বার ভাবছি- ভুল কিছু হচ্ছে না তো?
সন্দেহ জিনিসটা সংক্রামকের মত, একবার অল্প স্বল্প দানা বাঁধলে তা মহামারী হতে সময় লাগে না।। আমি সন্দেহ করতে ভয় পাই, নিজের মত যুক্তি বানিয়ে সান্ত্বনা নিতে ভালোবাসি।।
রাত ১০ টা বাজে, নোভা নাকি এখনো অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত।। আমার ফোনগুলোকে যাস্ট পলক পড়ার আগেই রেখে দিচ্ছে সে।। রাত ১১.৩০ এ জানালো বাসায় ফিরছে নোভা।। আমি ১২ টার দিকে কল দিয়ে ফোন ওয়েটিং পাই।। রাত সাড়ে বারোটার পর সে আমাকে কল দিয়ে বলে- মাথা ব্যাথা ঘুমিয়ে যাবো।। আমার আর জানা হলো না- ওর ফোন কেনো ওয়েটিং ছিলো।।
আমি সন্দেহ করতে ভয় পাই, তাই সেদিনো ঠান্ডা মাথায় ঘুমিয়ে গেলাম।।.....
নোভার বদলে যাওয়াগুলো আমার বুকে তীক্ষ্ণ তীরের ফলার মত বিঁধছে।। মস্তিস্কের চিন্তাগুলো নেগেটিভ হবার জন্যে কিলবিল করছে।। তবুও আমার ধৈর্য্যচূতি ঘটে নি।।
আজ ভয়ানক একটা জিনিস আবিস্কার করলাম, ওর এক কলিগের সাথে ফেসবুকে এড থাকার সুবাদে ওর কিছু ছবি সামনে আসলো।। যেখানে এক ছেলের সাথে নোভার কয়েকটা সেলফি।। সম্ভবত হিমছড়িতে গিয়ে তোলা।৷ ছেলেটা আবার নিজের ওয়ালে ক্যাপশন দিয়ে পোস্ট করেছে-
""সুন্দরীর সাথে পাহাড়ে একদিন।।
আমি বুঝার চেস্টা করলাম, কবেকার ঘটনা!! অবাক ব্যাপার, ছবিগুলো অইদিন সন্ধ্যায় আপলোড করা হয়েছে- যে দিন নোভা আমাকে সারাদিন মিটিং এর কথা বলেছিলো।।
নাহ, এইবার আর থাকা গেলো না।। সন্দেহ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে গেলাম।। ছেলেটার প্রোফাইল ঘেঁটে আরো অবাক হলাম।। ছেলেটার নাম পারভেজ, জব করে হোটেল সি প্যালেসে।। একজন ফাইভ স্টার হোটেলে চাকরি করা সুদর্শন যুবকের সাথে নোভার এইসব সেলফির রহস্য আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো।। আমি নোভাকে কোন প্রশ্ন করি না- অফিস থেকে ছুটির প্রস্তুতি নিচ্ছি।।......
নোভাকে জানালাম আগামী শুক্র শনি রবি ছুটি পেতে পারি- আমি আসতেছি কক্সবাজার।। নোভাকে খুব খুশি মনে হলো।। আমি কিছুটা ভরসা পেলাম নোভার খুশি দেখে।।
কিন্তু বিধিবাম।। অফিস ছুটি এলোট করলো না, বরং এমন একটা ভাব যে এইবার শুক্রবারেও অফিস করা লাগবে।।
নোভাকে নিউজটা জানানের সাথে সাথে বউটা আমার ভীষণ মন খারাপ করলো।।
আমিও কি করবো ভেবে না পেয়ে অফিসের কাজে মন দিলাম।।
বৃহস্পতিবার, আচমকা আমার ফোনে নোভার ম্যাসেজ এলো।।
শুনো, রায়হান মনে হয় আসতে পারবে না- পরশু আমাকে একটু সময় দিবা?
আমি ম্যাসেজের আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলাম না।। নোভাকে জিজ্ঞেস করবো এমন সময়, মনে হলো- আচ্ছা নোভা কি ভুল করে অন্যকারো ম্যাসেজ আমাকে দিলো? এমন কিছু কি হলো যে, পারভেজকে দেয়া ম্যাসেজ আমার কাছে এসে পড়লো?......
বাসে করে কক্সবাজার যাচ্ছি।। সকাল ৮ টায় কক্সবাজার ডলফিন মোড়ে নামলাম।। অফিসে যা হবার হবে।। ঘরের বউ নিয়ে সন্দেহে পড়েছি, অন্য কিছু ভাবার অবকাশ নেই।। নোভা জানে না আমি কক্সবাজার।।
আজ শুক্রবার, নোভার অফিস শুক্রবারে বন্ধ থাকে।। আমি সোজা কক্স ওশান হোটেলে উঠে গেলাম।। আমার খুব ইচ্ছা হাতে নাতে নোভাকে পাকরাও করবো।। হোটেল রুমে বসে কর্ম পরিকল্পনা সাজালাম।৷ কিন্তু, কোন বুদ্ধি মাথায় আসছে না।। যেহেতু আজ নোভার অফিস বন্ধ, সুতরাং আজ পারভেজ নামের অই ছোকরাটার সাথে দেখা করার সম্ভবনা অনেক বেশি।।
নোভাকে কল দিলাম- সকাল ১০ টার একটু বেশি বাজে।। নোভা আমাকে বললো, আজ ওর অফিস আছে।। আমি আরেক দফা অবাক হলাম।। নোভা জানালো দুপুর ২ টার পর নাকি ওর মিটিং- রাত ৮-৯ টা বেজে যাবে শেষ হতে।।
বেলা ১ টায় নোভার অফিসের সামনের চা স্টলে।। আড়ালে বসে অফিসের গেটে চোখ রাখছি, কেউ প্রবেশ করে কিনা দেখার জন্যে।। না বেলা তিনটা বেজে গেলো, অফিসে কাউকে ঢুকতে বা বেরুতে দেখলাম না।।নোভাকে কল দিলাম, ফোন কেটে দিলো।। মাথা ভোঁ ভোঁ করছে।।.....
সন্ধ্যায় নুসরাতের সাথে তাজ বে ক্যাফেতে তে বসে আছি।। মেয়েটা নোভার সাথে একি বাসায় থাকে।। নুসরাতের নাম্বার ছিলো আমার কাছে- আমি কল দিয়ে ওকে তাজ বে ক্যাফে তে আসতে বলি, সাথে বলে দেই প্লিজ নোভাকে কিছু জানাবেন না।।
আমার বিশ্বাস মেয়েটা নোভাকে কিছু জানায় নি।।
নুসরাতকে আমি সব খুলে বললাম, নুসরাত শুনে বিচলিত হলো।। কিন্তু কেন যেনো ওর বিচলিত হওয়াকে অভিনয় মনে হচ্ছিলো।। নুসরাত জব করে অন্য আরেক অফিসে, তাই সে নোভার অফিসিয়াল তেমন কোন তথ্য দিতে পারলো না।। তবে, সে যেটা জানালো সেটা হলো- এখন নোভা প্রায় সময় রাত করে বাসায় ফিরে।।
আমি নুসরাতকে বার বার অনুরোধ করে বললাম, আপু প্লিজ নোভাকে কিচ্ছু জানায়েন না।। মেয়েটার চোখের চাহিনীতে আস্থা পেলাম।।.....
হোটেল সি প্যালেসের ৩০২ নাম্বার রুমের দিকে যাচ্ছি।। ভয়ে বুক কাঁপছে আমার।। চিন্তা আর নানা দুঃচিন্তায় কুঁকড়ে যাচ্ছি আমি।। নুসরাত কিভাবে যেনো তথ্য পেয়েছে- নোভা আর পারভেজ নাকি, আজ রাতে ওই রুমে রাত কাটাবে।। আমাকে ফোনে জানানো মাত্রই আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাবার মত অবস্থা।। ৩০২ নাম্বার রুমের সামনে দাঁড়ানো আমি- দরজা ভিতর থেকে লাগানো।। হোটেলে ঢুকার সময় কেউ তেমন জিজ্ঞেস করে নি।। নুসরাত কল দিয়ে বললো- দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকুন।।
আমি যাস্ট দরজা ধাক্কা দিলাম-
ভিতরে তাকাতেই চোখে মুখে আমার রাজ্যের বিষ্ময়।।
অইটা হোটেলের কোন কামরা না, ছোট খাটো বল রুম।। পুরো রুম সাজানো, আর বেশ কয়েকজন লোক।। আমি দরজায় দাঁড়ানো, আমাকে নোভা এসে হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলো।। অবাক কান্ড ভিতরে নোভা, পারভেজ আরো ৪-৫ জন আছে।।
নোভা আমাকে সারপ্রাইজ দিলো- অফিসে ওর প্রমোশন হয়েছে।। মাত্র একমাসে ওর কাজ আর কোয়ালিটি দেখে ওকে সিনিয়র পোস্ট দিয়ে দিয়েছে।। এই খুশির সংবাদ সাথে সারপ্রাইজ দেবার জন্যে এসব আয়োজন।। আমি অত্যাধিক অবাক হয়ে হতবিহব্বল হয়ে আছি।। .....
নোভার সাথে কল কক্স ওশান হোটেলে আমি, কাল ঢাকা চলে যাবো।। আমার মাথায় দুনিয়ার প্রশ্ন, আজ রাতেই সব সমাধান করতে হবে-
ফেসবুকের আইডি চেঞ্জ করলা যে হঠাৎ করে?
নোভা বললো- তোমাকে চিন্তায় ফেলার জন্যে।।
পারভেজের সাথে পরিচয় কিভাবে?
--- আরে ওই হোটেলে আমাদের ফরেন গেস্টরা থাকে, তাই পারভেজ সহ ওই হোটেলের অনেকের সাথেই পরিচয় আছে।।
আর আমাদের সেলফিগুলো আমার অনুরোধেই ও আপলোড করে- যাতে তুমি জ্বলে পুড়ে আমার কাছে ছুটে আসো।।
আর যে ম্যাসেজটা দিয়েছিলা-
---- অইটা তো ইচ্ছা করে দিয়েছি, বুদ্ধু।। তোমার মনে চূড়ান্ত সন্দেহ ঢুকানের জন্যে।। তুমি আসতে চেয়ে আবার না করে দিলা, তাই আর উপায় ছিলো না।।
শুনো রায়হান, আমি জানতাম না তুমি কক্সবাজার।। আমি ভাবি নি তুমি আমাকে এতই সন্দেহ করবে যে, না জানিয়ে চলে আসবে।। আমি আরো সন্দেহ ঢুকানের জন্যে শুক্রবার অফিসের কথা বললাম।। তুমি আমাকে জানালেই পারতা তুমি কক্সবাজার এসে পড়েছো।।
আমার বুক থেকে বিশাল এক পাথর সরে গেলো।। নুসরাত তোমাকে সব বলে দিয়েছে তাই না।। নোভাকে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলাম।।
হ্যাঁ বলে নাই আবার- ওকে দিয়েই তো তোমাকে শেষে সি প্যালেসে এনে চমকে দিলাম।।
মনের মধ্যে শান্তি নিয়ে ঢাকা ফিরে যাচ্ছি।। মেয়েটা এত দুস্ট, আগে বুঝি নি।।......
নুসরাত পারভেজ আর নোভা বিচের পাড়ে বসে আছে।।
পারভেজ বলছে- তুমি না বলছিলা, তোমার জামাই অনেক চালাক।। হালায় তো পুরাই গাধা।। কি দিয়া কি বুঝাইলাম, বলদের মত ঢাকা চইলা গেলো।। বলদের বলদ আমাগো নুসরাতকেই ডাকলো সব ঘটনা বলার জন্যে।।
নোভা পারভেজের মাথায় টোকা দিয়ে বলে- তোমার এত বুদ্ধি কই থাকে।। কিভাবে একটা ফাউ অনুষ্ঠানের এরেঞ্জ করে বেচারা রায়হানকে ধোঁকা দিলা।। আর ভুল করে পাঠানো ম্যাসেজ থেকে শুরু করে সম্ভাব্য সব প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করাই দিছিলা ভাগ্যিস। জানো, অই ম্যাসেজ ভুলে রায়হানের কাছে যাবার পর থেকেই ভয়ে ছিলাম।। যাক, আপাতত আর কোন ঝামেলা নেই।।
নুসরাতের দিকে তাকিয়ে, তোকে ধন্যবাদ রে- বড় একটা ট্রিট পাবি তুই।।
নুসরাত ফিক করে লাজুক হাসি দিয়ে বলে- শুনেন পারভেজ ভাই, এইসব পরকিয়া টরকিয়া বাদ দিয়া নোভাকে বিয়ে করেন দ্রুত।।
আর নোভা, রায়হান ভাইকে কবে তালাক দিবি?
-- রায়হান শোভন