12/03/2025
২য় দফায় ৩য় দিনের মত কর্ম বিরতি চলছে শ্রীপুর সাব—রেজিষ্ট্রার অফিসে
গাজীপুরের শ্রীপুর সাব—রেজিষ্ট্রার অফিসের দলিল লিখকগণ ২য় বারের মত কর্ম বিরতি পালন করছে। সাব—রেজিষ্ট্রার সোহেল রানা’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে ১০ মার্চ সোমবার থেকে ২য় দফায় এ কর্মসূচী পালন করছে তারা। আজ ১২ মার্চ বুধবার ৩য় দিনের মত কর্মবিরতি চলছে। এর আগে ০৯ ফেব্রুয়ারী সাব—রেজিষ্ট্রার সোহেল রানা’র যোগদানের পর তাহার বিভিন্ন অনৈতিক চাহিদার কারণে ১৩ ফেব্রুয়ারী কর্ম বিরতি পালন করেছিলেন অফিসের দলিল লিখকগণ। পূর্বের নিয়মেই অফিস পরিচালিত হবে মর্মে সাব—রেজিষ্ট্রার আশ্বস্ত করলে, অফিসের দলিল লিখকগণ কর্মসূচী প্রত্যাহার করে কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্ত তিনি তার কথা না রেখেই পূর্বের ন্যায় নিজের চাহিদা মত ঘুষ দাবী করতে থাকেন সাব—রেজিষ্ট্রার সোহেল রানা। এতে অফিসের দলিল লিখকগণের জমি রেজিষ্ট্রী খরচ সংক্রান্ত বিষয়ে ক্রেতা/বিক্রেতা উভয়ের নিকট নীতি বিরুদ্ধ হতে হয়। ফলে অনেক দলিল লিখকগণের ঐতিহ্য, সুনাম ও নির্ভরতার স্থানটি বিনাশিত হয়। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে দলিল লিখকগণ সাব—রেজিস্ট্রার সোহেল রানা’কে অপসারনের দাবীতে কর্ম বিরতি পালন করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দলিল লিখক জানান, হেবার ঘোষণা, দানপত্র, বেল এওয়াজ হেবা সকল দলিলে প্রতি শতাংশের জন্য এক হাজার টাকা দাবী করেন স্যার। স্বামী স্ত্রীকে, ভাই ভাইকে, পিতা পুত্রকে ১ বিঘা জমি দিলে স্যারকে পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। এমন দাবী আমার কর্ম জীবনে কোন স্যার কে করতে দেখিনি। অফিসের ইতিহাসেও এমন নজির নেই বলে জানান তিনি। আরও একজন দলিল লিখক জানান, আমার দলিলের খাজনা খারিজ সবই হাল নাগাদ থাকার পরও জমির পরিমাণ বেশী থাকায় আমার নিকট সত্তর হাজার টাকা দাবী করেন সাব—রেজিষ্ট্রার। ব্যাংকে জমি বন্ধক রেখে ঋণ নিতে আসা জণগণের দূর্ভোগ আরও চরম পর্যায়ে। ব্যাংক কর্তৃক পক্ষ কাগজপত্র এবং সরেজমিনে যাচাই পূর্বক নিজস্ব আইনজীবির মাধ্যমে দলিল মোসাবিদা করে পাঠালেও জমিতে অবস্থিত স্থাপনা কিংবা অন্যান্য ছোট—খাটো বিষয় নিয়ে দলিল রেজিষ্ট্রেশনে আপত্তি জানান সাব—রেজিষ্ট্রার। প্রতি কোটিতে এক লক্ষ টাকা হারে দাবী করে বসেন তিনি।
সরেজমিনে অফিস চত্তরে গিয়ে দেখা যায় এক ভুক্ত ভোগী ছিদ্দিকুর রহমান ওরফে ছিদ্দিক মিয়া নামের এমন ভূলের জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে আসলেও সাব—রেজিষ্ট্রার জানান কোর্ট থেকে ১ম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক হলফ নামা নিয়ে আসতে হবে, অন্যথায় অতিরিক্ত দশ হাজার টাকা লাগবে। সাব—রেজিষ্ট্রার এর বিশেষ সহকারী নকল নবীশ নাছিম মোড়ল এর মাধ্যমে এসব ঘুষ বানিজ্য করেন তিনি। সরেজমিনে আরও দেখা যায়, হাল সনের খাজনা পারশোধ না থাকলে কিংবা দলিল বা খারিজের ফটোকপি দিয়ে রেজিষ্ট্রী করতে হলে দলিলের ১ম পাতার উপরংশে দাগ কাটা হয়, প্রতি দাগের জন্য এক হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। এই টাকা আদায়ের দায়িত্বে থাকেন নকল নবীশ জাহাঙ্গীর। এছাড়াও দলিলের মূল্যের উপর টাকা আদায়ের দায়িত্ব থাকেন আরেক নকল নবীশ শফিক।
এসব বিষয়ে সাব—রেজিষ্ট্রার সোহেল রানা জানান, পূর্বের নিয়মে অফিস চলবে এমন কোন আইন নেই, আমি আইনের মধ্যে থেকে কাজ করতে চাই। অতিরিক্ত চাহিদার বিষয়ে তিনি জানান, আমি যখন কোন দলিল সংগত কারণে করতে চাইছি না তখন উনারাই বিভিন্ন ভাবে আমাকে প্রভাবিত করতে চান, আমার অতিরিক্ত কোন চাহিদা নেই। দলিল লিখকগণের সাথে আলোচনা চলছে, আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যেই অফিসের কার্যক্রম শুরু হবে। আজ বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শ্রীপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দলিল লিখকগণের কলম বিরতি অব্যাহত আছে।