Believer KaoSar

Believer KaoSar I'm muslim. it’s my pure identity. brother &sister's please support and share it’s can make to push my online activities

15/08/2025
16/07/2025

তওবার আলো”

রাতের আকাশটা আজ খুব মেঘলা। যেন পৃথিবীর অন্ধকার পাপগুলো আকাশের বুকেও ছায়া ফেলেছে। এমনই এক রাতে, রাসেলের চোখে ঘুম নেই। বিছানায় শুয়ে শুধু ভাবছে—জীবনটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে!

রাসেল একসময় গ্রামের মসজিদের মুয়াজ্জিন ছিল। নামাজে তার কণ্ঠ শুনে গ্রামের মানুষ মুগ্ধ হতো। কিন্তু শহরে পড়াশোনার জন্য এসে সে পাল্টে গেল। নামাজ-কোরআন দূরে ঠেলে, বন্ধুদের সাথে মেতে উঠল নেশা আর গানের জগতে। মায়ের চোখে জল, বাবার মুখে হতাশা। তবু রাসেলের মনে তেমন আলোড়ন হয়নি।

একদিন হঠাৎ তার মা হাসপাতালে ভর্তি হলেন। রাসেল ছুটে গেল। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মা বললেন, “বাবা, আমি হয়তো বেশিদিন বাঁচব না। শুধু একটা অনুরোধ—একবার আল্লাহর দিকে ফিরে তাকাও। তুমিই তো আমার গর্ব ছিলে…”

মায়ের চোখে জল, ঠোঁটে হাসি। সেই মুহূর্তে রাসেলের হৃদয়ে যেন বজ্রাঘাত হলো। সে ভাবল, "আমি কী করছি! মা অসুস্থ, আর আমি পথভ্রষ্ট?"

সেদিনই রাসেল মসজিদের দিকে হাঁটতে শুরু করল। পথটা অনেক পুরনো, কিন্তু পা যেন কাঁপছিল। নামাজের জামাতে দাঁড়িয়ে, সে কান্নায় ভেঙে পড়ল। ইমাম সাহেব তার পিঠে হাত রেখে বললেন, “আল্লাহ কখনো ফিরিয়ে দেন না, যে ফিরে আসে তাঁর দিকে।”

রাসেল আবার কুরআন হাতে নিল, রাতের গভীরতায় সিজদায় চোখের পানি ফেলতে শিখল। ধীরে ধীরে সে নিজেকে পাল্টে ফেলল। আগের বন্ধুদের বলল, “ভাই, আমি ফিরে এসেছি। তোমরাও এসো, আমরা সবাই মিলে বদলাতে পারি।”

এক বছর পর, রাসেল গ্রামের সেই মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব নিল। তার কণ্ঠে আজও আজানের সুর বয়ে চলে, কিন্তু এখন তাতে থাকে চোখের পানি আর হৃদয়ের গভীর তওবার ছোঁয়া।

রাসেল জানে, জীবন ভুলে ভরা হতে পারে, কিন্তু যতদিন নিঃশ্বাস আছে, ততদিন আল্লাহর রহমতের দরজা খোলা।

---

শিক্ষা:
এই গল্প আমাদের শেখায় যে, কেউই কখনো খুব দেরি করে ফেলে না আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে। তওবা এমন এক আলো, যা অন্ধকারতম হৃদয়কেও আলোকিত করে তোলে।

রিজিক তো আল্লাহর হাতে – এই বিশ্বাস বাস্তবে কীভাবে বদলে দেয় জীবন?"وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي ٱلأَرْضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِ...
08/07/2025

রিজিক তো আল্লাহর হাতে – এই বিশ্বাস বাস্তবে কীভাবে বদলে দেয় জীবন?

"وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي ٱلأَرْضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزْقُهَا"
“পৃথিবীতে চলাফেরা করে এমন কোনো জীব নেই যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ গ্রহণ করেননি।”
— (সূরা হুদ, আয়াত ৬)

মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় যে উদ্বেগগুলোর একটি, তা হলো রিজিক — অর্থাৎ জীবিকা, উপার্জন, খাবার, নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎ। মানুষ দুশ্চিন্তা করে, নিজের এবং সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকে। চাকরি পাব কি না, ব্যবসা চলবে কি না, টাকা আসবে কি না — এসব ভাবনা মানুষের মনকে ভারাক্রান্ত করে রাখে।

কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের কুরআনে এবং হাদীসে বহুবার আশ্বস্ত করেছেন — রিজিকের দায়িত্ব একমাত্র তাঁর উপর। শুধু এই একটি বিশ্বাস যদি কেউ হৃদয়ে গেঁথে নেয়, তাহলে তার চিন্তা, চরিত্র, লেনদেন, সম্পর্ক, মনোভাব — সবকিছু বদলে যেতে পারে।

চলুন দেখা যাক — এই বিশ্বাস বাস্তব জীবনে কীভাবে বদলে দেয় আমাদের জীবন:

---

🟩 ১. দুশ্চিন্তা কমে, হৃদয়ে প্রশান্তি আসে

যখন কেউ বিশ্বাস করে যে রিজিক আমার হাতে নয়, আল্লাহর হাতে — তখন সে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হতে থাকে।
সে ভাবে না:
“আজ কত টাকা আয় করলাম?”
“কাল যদি কাজ না থাকে?”
“অমুক আমাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে!”

বরং সে ভাবে:
👉 “আমার চেষ্টা করা দায়িত্ব, ফলাফল আল্লাহর হাতে।”
👉 “আমি চেষ্টা করবো হালাল পথে, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।”

এই চিন্তা মানসিক শান্তি ও আত্মবিশ্বাস দেয়। রাতের ঘুম হয় গভীর, কারণ সে জানে— রিজিকের মালিক জেগে আছেন।

---

🟩 ২. হালাল-হারামের পার্থক্য স্পষ্ট হয়

যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে, “রিজিক তো আল্লাহ দেন”, সে কোনোদিন হারাম পথে রিজিক খোঁজে না।
কারণ সে জানে —
🔹 ঘুষ খেয়ে লাভ নেই, আল্লাহ দিচ্ছেন না
🔹 সুদ খেয়ে আয় বাড়ে না, বরং বরকত কমে
🔹 চুরি, প্রতারণা করে মানুষকে ঠকালে রিজিক আসে না, পাপ আসে

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“একজন ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে থাকে, তার চুল অগোছালো ও ধুলিময়; সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে: ‘হে আমার রব! হে আমার রব!’ অথচ তার খাওয়া হারাম, পান করা হারাম, পোশাক হারাম এবং হারাম উপার্জনে লালিত-পালিত হয়েছে। তবে তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?”
— (সহীহ মুসলিম)

👉 তাই একজন মু’মিন মানুষ রিজিকের মালিক হিসেবে আল্লাহকে মানলে, সে হারাম পথকে পরিহার করে।

---

🟩 ৩. হিংসা-অহংকার দূর হয়

যে জানে, “এই মানুষটা বেশি কামায় করছে, কারণ আল্লাহ তাকে দিচ্ছেন”— সে আর হিংসা করে না।
সে ভাবে না: “ওর যা আছে, আমার নেই কেন?”
বরং ভাবে:
🔹 “আমার রিজিক আমি পাবই ইনশাআল্লাহ।”
🔹 “আমি চেষ্টা করি, বাকিটা আল্লাহর তাওফিক।”

আবার, যে বেশি উপার্জন করে, সে অহংকারও করে না। সে ভাবে না, “সব আমি নিজের যোগ্যতায় করছি।”
কারণ সে জানে —
“আমার দাতভর্তি খাবারও আল্লাহ না চাইলে গলার নিচে যাবে না!”

---

🟩 ৪. সবর (ধৈর্য) ও তাওয়াক্কুল (ভরসা) তৈরি হয়

রিজিক নিয়ে পরীক্ষা হতে পারে। দেরিতে আসতে পারে, কম হতে পারে, কষ্টসাধ্য হতে পারে। কিন্তু যারা রিজিকের মালিক হিসেবে আল্লাহকে চিনে, তারা ধৈর্য ধরে, আশা হারায় না।

🌿 কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না। যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনি তার জন্য যথেষ্ট।”
— (সূরা আত-তালাক, আয়াত ২-৩)

এই আয়াত শুধু পড়ার জন্য নয়, হৃদয়ে গেঁথে নেওয়ার জন্য।

---

🟩 ৫. সুখের সংজ্ঞা বদলে যায়

যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তার কাছে রিজিক মানে শুধু টাকা নয়।
রিজিক মানে—

ভালো স্বাস্থ্য

ভালো পরিবার

সময়মতো খাবার

শান্তি

ঈমান

দোয়ার সুযোগ

প্রিয়জনের ভালোবাসা

👉 তাই সে ছোট জিনিসেও শোকর করে।
👉 বড় কিছু না পেলেও মন খারাপ করে না।

---

🟩 ৬. উন্নতি হয় আত্মিকভাবে এবং আখিরাতে

রিজিকের প্রতি আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা মানে শুধু দুনিয়ার সুবিধা নয় — বরং আখিরাতের সফলতা।

🔹 সে হালাল রিজিক খায়, তাই দোয়া কবুল হয়
🔹 সে অন্যের হক মারে না, তাই গোনাহ কমে
🔹 সে সব সময় আল্লাহর উপর নির্ভর করে, ফলে গুনাহ থেকে বাঁচে
🔹 সে দুনিয়াকে নয়, আল্লাহকে বেশি গুরুত্ব দেয়

---

🟩 ৭. পরিবার, সন্তানের জন্য দুশ্চিন্তা কমে

অনেক বাবা-মা সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা করেন — “সন্তানের ভবিষ্যৎ কী হবে?”
কিন্তু যারা আল্লাহর উপর ভরসা করেন, তারা সন্তানদের জন্য চিন্তা করেন, কিন্তু ভয় পান না।

কারণ তারা বিশ্বাস করেন—
👉 “যেমন আমাকে রিজিক দিয়েছেন, তেমন আমার সন্তানকেও দেবেন।”
👉 “আমি শুধু হালাল উপার্জনের ব্যবস্থা করবো, বাকিটা আল্লাহর রহমত।”

---

🌸 রিজিকের জন্য আমাদের করণীয় কী?

✅ ১. হালাল পথে চেষ্টা
✅ ২. সময়মতো নামায
✅ ৩. বেশি বেশি ইস্তিগফার
✅ ৪. মা-বাবার খিদমত
✅ ৫. অন্যের হক আদায়
✅ ৬. নিয়ত ঠিক রাখা — “আল্লাহর জন্য উপার্জন করছি”

---

🤲 দোয়া:

اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
"হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হালালের মাধ্যমে হারাম থেকে বাঁচান, এবং আপনার অনুগ্রহে আমাকে আপনার বাদে অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে মুক্ত করুন।"

---

✨ উপসংহার:

"রিজিক তো আল্লাহর হাতে" — এই বিশ্বাস মানুষকে শুধু ধৈর্যশীল নয়, বরং সাহসী, আত্মবিশ্বাসী, সংযমী ও সফল করে তোলে।

তাই আসুন আমরা নিজেরা এবং আমাদের পরিবারকে এই বিশ্বাসে গড়ে তুলি:
"রিজিকের মালিক মানুষ নয়, কোম্পানি নয়, সরকার নয় – একমাত্র আল্লাহ!"

গোনাহের জীবন থেকে ফিরে আসার এক অনুপ্রেরণামূলক তাওবার গল্প---ভূমিকাপ্রত্যেক মানুষের জীবনে এমন কিছু অধ্যায় থাকে, যেখানে সে...
07/07/2025

গোনাহের জীবন থেকে ফিরে আসার এক অনুপ্রেরণামূলক তাওবার গল্প

---

ভূমিকা

প্রত্যেক মানুষের জীবনে এমন কিছু অধ্যায় থাকে, যেখানে সে অন্ধকারে পথ হারিয়ে ফেলে। তখন গোনাহ তাকে ঢেকে ফেলে চারদিক থেকে। কিন্তু আল্লাহর রহমত এতটাই বিশাল যে, যদি কেউ তাওবা করে, আল্লাহ তাকে আগের চেয়েও ভালো করে দেন। আজকের এই গল্পটি এমন একজন যুবকের, যে গোনাহে ডুবে ছিল, কিন্তু একদিন হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এক ঘটনার মাধ্যমে সে ফিরে আসে রবের দিকে। এটি কল্পিত হলেও বাস্তব জীবন থেকে অনুপ্রাণিত একটি শিক্ষণীয় গল্প।

---

গল্প শুরু

নাম তার আদিল। ঢাকার এক ব্যস্ত এলাকার বাসিন্দা। বাবা-মা দুজনেই চাকরিজীবী। ছোটবেলায় নামাজ, কুরআন সব কিছুই শিখেছিল, তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে সে পরিবর্তিত হতে থাকে। স্কুলজীবনের শেষে কলেজে উঠে গিয়ে আদিল এক নতুন জগতে প্রবেশ করে—যেখানে "মজা", "ফ্রিডম", আর "মর্ডান লাইফস্টাইল"-এর নামে সে ধীরে ধীরে ইসলামের দিক থেকে দূরে সরে যেতে থাকে।

গোনাহের গভীরতায় ডুবে যাওয়া

আদিলের জীবনজুড়ে ছিল রাত জাগা পার্টি, হারাম মুভি দেখা, মিউজিকে মত্ত থাকা, মেয়েদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক, এবং নামাজ ছেড়ে দেওয়া। ধীরে ধীরে তার মধ্যে অহংকার, গাফলত, এবং হেদায়েত থেকে দূরত্ব এমনভাবে জমে ওঠে যে, সে নিজেই বলে বসতো, “আমি যদি জাহান্নামে যাই, তাও এখন মজা করতে চাই!”

আল্লাহকে ভুলে গিয়ে সে নিজের খেয়ালখুশিমতো জীবন কাটাচ্ছিল। একদিন এমনও বলেছিল, "আল্লাহ না হয় পরে দেখা যাবে, এখন তো জীবন উপভোগের সময়!"

---

মায়ের কান্না আর দোয়া

আদিলের মা একজন ধার্মিক নারী ছিলেন। তিনি ছেলেকে দেখে দিনের পর দিন কান্না করতেন। Tahajjud-এর নামাজে তিনি প্রতিদিন দোয়া করতেন—
"হে আল্লাহ, আমার ছেলেকে হেদায়েত দাও। সে যেন তোমার পথে ফিরে আসে। আমি ওকে জান্নাতে দেখতে চাই!"

আদিল বুঝত না তার মায়ের চোখের পানি কী মূল্য রাখে। অথচ তার ওই কান্নাই একদিন আল্লাহর আরশ কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

---

ঘটনা যা জীবন বদলে দিল

একদিন বন্ধুদের সাথে পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিল আদিল। তারা মজা করছিল, ছবি তুলছিল, গান গাইছিল। হঠাৎ এক পর্যায়ে পাহাড়ের পাশে সেলফি তুলতে গিয়ে আদিল পা হড়কে নিচে পড়ে যায়। সবাই ভয়ে চিৎকার করে। নিচে একটি বিশাল পাথরের মাঝে সে আটকে যায়। মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে, হাত নড়ে না, আর চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসছে।

তখনই প্রথমবারের মতো আদিলের মনে ভয় ঢোকে—
"আমি কি এখনই মারা যাচ্ছি? আমি কি জান্নাতে যাব নাকি জাহান্নামে? আমি তো বছরের পর বছর নামাজ পড়িনি, কুরআন ছুঁইনি, গোনাহের পাহাড় জমিয়েছি! আল্লাহ আমাকে কি মাফ করবেন?"

সেই মুহূর্তে তার চোখে মায়ের মুখ ভেসে ওঠে। সেই মা, যিনি প্রতিদিন তার জন্য দোয়া করতেন, কান্না করতেন। হঠাৎ করে আদিল নিজের অজান্তেই বলতে শুরু করে—
"আল্লাহ! আমি ভুল করেছি। আমাকে মাফ করে দাও। আমি তাওবা করছি। যদি আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও, আমি তোমার পথে ফিরে আসব!"

---

আল্লাহর রহমত: ফিরে আসার সুযোগ

আদিল চোখ খুলে দেখে সে হাসপাতালে। তার বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে এনেছে। ডাক্তার বলল, “তোমার জীবনটা অলৌকিকভাবে বেঁচে গেছে। মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরে পড়ে গেলে মাথায় মারাত্মক আঘাত পেত, এবং মৃত্যু নিশ্চিত ছিল।”

আদিল তখন চোখ বন্ধ করে বলল—
"আল্লাহ, তুমি আমাকে আরেকটা সুযোগ দিয়েছো। আমি কথা দিচ্ছি, এই জীবন তোমার জন্যই বদলে ফেলবো।"

---

নতুন জীবনের শুরু

হাসপাতাল থেকে ফিরে সে প্রথম যে কাজ করল, তা হল—ওজু করে দুই রাকাত সালাত আদায় করা। সেই নামাজে সে এত কেঁদেছিল, যেন সব গোনাহ ঝরে পড়ছে চোখের পানিতে। এরপর সে মা’কে জড়িয়ে ধরে বলল,
"আম্মু, তুমি আমাকে ক্ষমা করো। তোমার কান্না, তোমার দোয়া—এইটা আমাকে বাঁচিয়েছে।"

তার মা চোখের পানি মুছে বললেন,
_"না বাবা, আমাকে না, আল্লাহকে ধন্যবাদ দাও।"

---

পরিবর্তনের পথে ধাপে ধাপে

আদিল তার পুরনো বন্ধুদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে অশ্লীল ছবি ও ফলো করা পেজগুলো মুছে ফেলে। সে ইউটিউবে তাওবার কথা, সাহাবীদের জীবন, কিয়ামতের ভয়াবহতা শুনতে শুরু করে। তার কন্ঠে আবার কুরআনের সুর ফিরে আসে।

প্রতিদিন ফজরের নামাজে উঠে সে বলে,
"আল্লাহ, আমাকে প্রতিদিন সঠিক পথে রাখো।"

একসময় সে ইচ্ছে করে দাওয়াতের কাজ করতে, যেন অন্য তরুণরাও তার মত জীবন বদলে ফেলতে পারে।

---

শেষ কথা: গোনাহ থেকে তাওবার অনুপ্রেরণা

আদিলের জীবনের এই বদল আমাদের জন্য অনেক বড় শিক্ষা। গোনাহ যত বড় হোক না কেন, আল্লাহর রহমত সবকিছুর চেয়ে বড়। তিনি বলেছেন:

> "হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছো, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন।"
— (সূরা আয-যুমার, আয়াত ৫৩)

07/07/2025

দুনিয়া কারাগার মুমিনের জন্য, আর বেহেশত কাফিরের জন্য।”
– সহীহ মুসলিম

06/07/2025

জীবনের প্রতিটি মানুষ কখনো না কখনো হতাশার ছায়ায় ঘেরা পড়ে। কখনো স্বপ্নভঙ্গ, কখনো প্রিয়জনের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া, কখনো অর্থনৈতিক সংকট, আবার কখনো জীবনের উদ্দেশ্য হারিয়ে ফেললে—মন চুপসে যায়, ভেঙে পড়ে। মানুষ তখন একাকিত্বে ডুবে যায়, চোখের পানি শুকিয়ে যায়, কিন্তু ভেতরের কষ্ট শুকায় না।

এই হতাশা তখনই বিপজ্জনক হয়ে উঠে, যখন মানুষ ভাবে—"আমার আর কিছুই করার নেই" বা "আমাকে কেউ বুঝে না", বা সবচেয়ে ভয়াবহ চিন্তা—"আল্লাহ আমাকে ভুলে গেছেন।"

কিন্তু সত্যি কি তাই?
আল্লাহ কি কখনো বান্দাকে ভুলে যান?
না, কখনো না।
বরং বান্দাই হয়তো কখনো কখনো আল্লাহকে ভুলে যায়।

---

হতাশার সময় আল্লাহকে ডাকলে কী হয়?

আল্লাহ বলেন কুরআনে:

> "তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।"
— সূরা গাফির, আয়াত ৬০

এই আয়াতটা শুধু একটি কথা না। এটা হলো সেই আশ্বাস—যেটা সমগ্র সৃষ্টি জগতের মালিক তোমাকে ব্যক্তিগতভাবে দিচ্ছেন। ভাবুন তো, যিনি আকাশের তারাগুলোর নাম জানেন, যিনি সাগরের গভীরতম স্থানে কী হচ্ছে তাও জানেন—তিনি তোমার কান্নার আওয়াজ শুনেন, এবং প্রতিউত্তর দিতে প্রস্তুত থাকেন।

---

নবীদের হতাশার সময় আল্লাহকে ডাকা এবং তার প্রতিদান

১. ইউনুস (আ.) এর গল্প:

ইউনুস (আ.) যখন মাছের পেটে ছিলেন, চারদিক অন্ধকার, জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে আটকে আছেন, তখন তিনি কি করলেন?

> "লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ-জোয়ালিমীন।"
— "হে আল্লাহ, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আপনি পবিত্র, আমি ছিলাম অন্যায়কারীদের একজন।"
(সূরা আল-আম্বিয়া: ৮৭)

এ দোয়া ছিল কেবল শব্দ নয়, ছিল হৃদয়ভরা অনুতাপ ও তাওয়াক্কুল। আর কী করলেন আল্লাহ?

> "তখন আমরা তার দোয়া কবুল করলাম এবং তাকে দুঃখ থেকে উদ্ধার করলাম।"
(সূরা আল-আম্বিয়া: ৮৮)

আল্লাহ শুধু ইউনুস (আ.)-কে নয়, কুরআন বলে:

> "এভাবেই আমি মু’মিনদেরকে উদ্ধার করি।"

মানে আজও যদি আপনি সেই দোয়া বলেন, সেই ইখলাস নিয়ে, আল্লাহ আপনাকে উদ্ধারে পিছিয়ে থাকবেন না।

---

২. মরিয়ম (আ.)-এর কষ্ট:

মরিয়ম (আ.) যখন নিঃসঙ্গভাবে সন্তান প্রসব করছিলেন, তখন চরম যন্ত্রণায় বলেছিলেন:

> "হায়, যদি আমি এর আগে মারা যেতাম!"
(সূরা মারিয়াম: ২৩)

এই ছিল এক নিঃস্ব, অসহায় নারীর আর্তনাদ। তখন আল্লাহ তাআলা তার নিচে একটি ঝরনা সৃষ্টি করলেন এবং খেজুর গাছে ফল দিলেন। শুধু তাই না, শিশুর মুখ দিয়ে কণ্ঠ তুললেন:

> "আমি আল্লাহর বান্দা।"

এই হচ্ছে আল্লাহর রহমত — আপনি যখন চুপচাপ কাঁদেন, তখনও আল্লাহ আপনার চোখের পানি গোনেন।

---

কেন রাহাত আসে আল্লাহকে ডাকলে?

১. কারণ আল্লাহ শোনেন:

> "নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক, প্রার্থনার জবাবদাতা।"
(সূরা হুদ: ৬১)

মানুষ অনেক সময় আমাদের কথা শুনে না, কেউ বুঝে না। কিন্তু আল্লাহ সব শুনেন, এমনকি আপনি জোরে না বললেও, শুধু মনে মনে বললেও।

২. কারণ আল্লাহ দেরি করেন, কিন্তু ফিরিয়ে দেন না:

> "আল্লাহ তোমাদের দোয়া কবুল করেন, কিন্তু হয়তো দেরি করেন কারণ তিনি জানেন কখন তোমার জন্য তা উত্তম।"

একটা শিশু যখন কাঁদে চকোলেটের জন্য, মা তখন দেয় না কারণ মা জানে শিশুর দাঁত বা পেটের ক্ষতি হতে পারে। তেমনি আল্লাহ জানেন কখন আমাদের জন্য কী ভালো।

---

হতাশার সময় কীভাবে আল্লাহকে ডাকবো?

১. ইখলাস ও কান্নার সাথে – মাথা নিচু করে, মন খুলে বলুন: "ইয়া আল্লাহ, আমি আর পারছি না, আপনি ছাড়া কেউ নেই।"

২. নামাজে দীর্ঘ সিজদা – সিজদা হলো বান্দার সবচেয়ে কাছের মুহূর্ত তার রবের কাছে। কিছু না বললেও শুধু সিজদার অশ্রু আল্লাহ কবুল করেন।

৩. দোয়ার মাধ্যমে – কুরআন ও হাদীসের দোয়াগুলো বলুন, যেমন:

"আল্লাহুম্মা ইননি আসআলুকা রাহমাতাকা"

"হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হু"

৪. কুরআন তিলাওয়াত ও শ্রবণ – কুরআন আপনাকে এমন প্রশান্তি দেবে যা আপনি ভাষায় বোঝাতে পারবেন না।

---

আল্লাহর রহমতের আশ্বাস

> "তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করেন।"
(সূরা যুমার: ৫৩)

এই আয়াতটা হতাশাগ্রস্ত প্রতিটি মানুষের জন্য। যদি আপনার পাপ পাহাড়সম হয়, তবুও আল্লাহ বলেন, "ফিরে এসো, আমি ক্ষমা করব।"

---

সময়মতো নয়, আল্লাহ দেন সঠিক সময়েই

হয়তো আপনি এখনো দোয়ার ফল পাননি। তার মানে এটা না যে আল্লাহ দিচ্ছেন না। তিনি হয়তো অপেক্ষা করছেন — আপনার সবর, ইমান আর ভরসা পরীক্ষা করার জন্য।

দোয়ার ফল তিনভাবে আসে:

1. তাৎক্ষণিক পূরণ হয়।

2. ভবিষ্যতে ভালো কিছুর মাধ্যমে পূরণ হয়।

3. না পূরণ করে আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দিয়ে দেন।

---

শেষ কথাঃ

বন্ধু, যদি এখন জীবন অন্ধকারময় মনে হয়—তবে চোখ বন্ধ করে একবার বলো:

> "ইয়া আল্লাহ, আমি ক্লান্ত। আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই।"

দেখবে, ধীরে ধীরে আল্লাহ কিভাবে তোমার হৃদয় শান্ত করবেন, পরিস্থিতি পাল্টে যাবে, আর তুমি নিজেই একদিন বলবে:

"আল্লাহ যখন ছিলেন, আমি আসলে কখনো একা ছিলাম না।"

---

🕌 শেষে এই দোয়াটি পড়ুন:

> "ইয়া হাইয়্যু, ইয়া কাইয়্যুম, বিরাহমাতিকা অস্থাগিস।"
(হে জীবিত, চিরস্থায়ী আল্লাহ! আপনার দয়াই আমার একমাত্র আশ্রয়।)

“তাওয়াক্কুল – যখন ভরসা শুধু আল্লাহ”ঢাকার এক ছোট্ট এলাকায় বাস করত রহিম নামে এক তরুণ। খুব সাধারণ পরিবারে জন্ম। বাবা রিকশ...
06/07/2025

“তাওয়াক্কুল – যখন ভরসা শুধু আল্লাহ”

ঢাকার এক ছোট্ট এলাকায় বাস করত রহিম নামে এক তরুণ। খুব সাধারণ পরিবারে জন্ম। বাবা রিকশা চালাতেন, মা গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই রহিম খুব ভদ্র, নম্র ও ধার্মিক ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত, রোজা রাখত এবং মায়ের পা টিপে দিয়ে ঘুমাতে যেত।

তবে একসময় জীবনে বড় চ্যালেঞ্জ আসে। রহিমের বাবা একদিন রাস্তায় দুর্ঘটনার শিকার হন। পা ভেঙে যায়। ডাক্তার বলেন অন্তত ৬ মাস তিনি কোনো কাজ করতে পারবেন না। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অচল হয়ে পড়েন।

রহিম তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। খরচ চালানো তো দূরের কথা, তিন বেলা খাওয়ার চিন্তাও হয়ে পড়ে অসম্ভব। মা চোখের পানি লুকিয়ে রাতজেগে সেলাই করে, আর রহিম চাকরি খোঁজে।

একদিন রহিম খুব হতাশ হয়ে পড়ে। সব দরজাই বন্ধ মনে হচ্ছিল। তখন সে মসজিদে গিয়ে সিজদাহে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
"হে আল্লাহ! তুমি তো বলেছো, 'তোমরা আমার কাছে দুআ কর, আমি তা কবুল করবো' (সূরা গাফির ৪০:৬০)। আমি কিছু চাই না, শুধু আমাদের সংসারটা বাঁচাও।"

তাকে দেখে ইমাম সাহেব কাছে এসে বলেন,
"বেটা, মনে রেখো, আল্লাহ কখনো তাঁর বান্দার দুআ ফেরান না। শুধু তাঁর টাইমিংটা আমাদের টাইমিং থেকে আলাদা। তুমি চেষ্টা চালিয়ে যাও, আর দুআ করতে থাকো। তাওয়াক্কুল করো আল্লাহর ওপর।"

রহিম সেই রাতে একটি সিদ্ধান্ত নেয়—সে দুশ্চিন্তা না করে শুধু চেষ্টা করবে, আর বাকি আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেবে।

পরদিন সে বাজারে যায়, পুরনো কাপড় কেনাবেচার দোকানে কিছু শিখতে চায়। দোকানদার একজন বুড়ো লোক, নাম মাওলানা কাদের সাহেব। তিনি রহিমের আন্তরিকতা দেখে বলেন,
"তুমি প্রতিদিন আসো, আমি তোমাকে ব্যবসার সব কিছু শেখাবো। বেতন দিতে পারবো না, তবে জ্ঞান দান করবো।"

রহিম বিনা দ্বিধায় রাজি হয়। ৩ মাস সে নিয়মিত দোকানে যায়, শিখতে থাকে। এরপর সে বাসার ছাদে ৫০০ টাকায় কিছু পুরাতন কাপড় কিনে ছোট্ট একটা স্টল দেয় ফেসবুকে "Rahim's Corner" নামে।

প্রথম মাসে তার বিক্রি হয় মাত্র ৪টি জামা। কিন্তু সে হতাশ হয়নি। রাত্রে তাহাজ্জুদ পড়ত, দিনে ছবি তুলত, প্রোডাক্ট পোস্ট করত, নিজে ডেলিভারি দিত।

একদিন, তার একটা ভিডিও হঠাৎ ভাইরাল হয়—ভিডিওতে সে বলেছিল:
"আমি বড় ব্যবসায়ী না, আমি শুধু চেষ্টা করছি। আর আল্লাহই আমার রিযিক নির্ধারণকারী। যদি এই জামাটা আপনার দরকার হয়, তবে কিনুন, যদি না হয়, দয়া করে আমার জন্য দুআ করুন।"

এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। অর্ডার আসতে থাকে ১০০-১৫০টি করে প্রতিদিন! রহিম অবাক হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে।

৬ মাসের মাথায় রহিম ছোট্ট একটা গোডাউন নেয়, ২ জন স্টাফ নিয়োগ করে। এক বছর পর সে তার বাবাকে বলল,
"বাবা, আপনি এখন রিকশা চালাবেন না। এখন আমি আপনাকে মাসিক বেতন দিবো, আপনি শুধু দোয়া করবেন আমার জন্য।"

তার মা চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না।

রহিমের গল্প শহরের মিডিয়ায় আসে, অনেকেই তাকে “তাওয়াক্কুলের তরুণ” বলে ডাকতে শুরু করে। এক সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করলেন:
"আপনার সফলতার রহস্য কী?"
রহিম বললেন:
"আমার কোনো রহস্য নেই। আমি শুধু সিজদায় কাঁদতাম, আর দিনে চেষ্টা করতাম। আমি জানতাম, রিযিক দেয় শুধু আল্লাহ। তাই আমি তাঁর ওপর ভরসা করেছি।"

---

গল্পের বার্তা:

1. তাওয়াক্কুল (ভরসা) আল্লাহর ওপর রাখলে আল্লাহ এমন রাস্তা খুলে দেন, যা মানুষ কল্পনাও করতে পারে না।

2. দুআ হচ্ছে একমাত্র অস্ত্র যা সব দরজা খুলে দিতে পারে।

3. সত্যিকার চেষ্টা এবং ধৈর্য সবসময় ফল দেয়, শুধু সময়টা আল্লাহ নির্ধারণ করেন।

4. সফলতা শুধু টাকার মধ্যে নয়, বরং যেখান থেকে শুরু করেছিলে আর যেখানে পৌঁছেছো—সেখানে আল্লাহর পরিকল্পনার সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া।

#তাওয়াককুল #ইমান #আমল #মুনিম #ভরসা #আল্লাহ

06/07/2025

اللهم ثبت قلبي على دينك
“হে আল্লাহ! আমার হৃদয়কে আপনার দ্বীনের উপর স্থির রাখুন।”

ফিরে আসা: একটি আত্মজিজ্ঞাসার গল্প১. শুরুটা ছিল অন্ধকারেআমি রাফি। ঢাকা শহরের এক প্রান্তে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবা-মা দুজনেই...
05/07/2025

ফিরে আসা: একটি আত্মজিজ্ঞাসার গল্প
১. শুরুটা ছিল অন্ধকারে
আমি রাফি। ঢাকা শহরের এক প্রান্তে জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাবা-মা দুজনেই কর্মজীবী, তবে ধর্মীয় বিষয়ে অত সচেতন ছিলেন না। ছোটবেলায় কুরআন পড়তে শিখেছিলাম, মসজিদে গিয়েছি কয়েকদিন, তারপর পড়াশোনা আর দুনিয়াদারির চাপে সব কিছু হারিয়ে যায়।

স্কুল-কলেজ, বন্ধুবান্ধব, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া—এসব নিয়েই জীবন কেটে যাচ্ছিল। নামাজ দূরের কথা, একসময় তো মনে হতো, “আল্লাহ আছেন তো ঠিকই, কিন্তু তিনি কেন আমাকে দরকার?” মনে হতো দীন মানেই সীমাবদ্ধতা। আনন্দ মানেই তো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, সিনেমা, গান আর রাতজাগা!

২. একটি ঘটনা, যা বদলে দিল সব
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় হঠাৎ একদিন শুনি—আমার ক্লাসমেট শাওন এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আগের দিন সে আমাদের সঙ্গে ক্যান্টিনে আড্ডা দিয়েছে, হাসাহাসি করেছে। আজ সে নেই।

আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। সেই রাতে ঘুম আসেনি। বারবার মনে হচ্ছিল, যদি আমার সঙ্গে এমন হতো? আমি কি প্রস্তুত? আমি তো কখনোই জানি না কখন মৃত্যু আসবে।

সেই রাতে প্রথমবারের মতো কান্না আসে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফিসফিস করে বলি, “আল্লাহ, যদি আপনি সত্যিই থাকেন, আমায় পথ দেখান।”

৩. নতুন আলোর সন্ধানে
এরপর থেকে আমি পরিবর্তনের চেষ্টা শুরু করি। প্রথমেই ইউটিউবে খুঁজে খুঁজে ইসলামিক ভিডিও দেখতে শুরু করি—নোমান আলী খান, মুফতি মেন্ক, আব্দুল হাই মুহাম্মাদ সাদ সাহেব, এবং দেশের অনেক স্কলারদের কথা শুনতে থাকি।

তাদের কথা শুনে মনে হতে লাগল—দীন কোনো দমন নয়, বরং মুক্তি। আল্লাহ রাহমতের সাগর, তিনি ক্ষমাশীল, আর দুনিয়া এক পরীক্ষাগার। আমরা এখানে মেহনত করতে এসেছি, খেলতে নয়।

প্রথমে নামাজ শুরু করি। প্রথম এক সপ্তাহ খুব কষ্ট হতো। কখনো ফজরের ঘুম ভেঙে উঠতে পারতাম না, কখনো জামাত মিস হতো। কিন্তু আল্লাহর কাছে নিয়ত করেছিলাম—ছাড়ব না।

৪. চারপাশের প্রতিক্রিয়া
পরিবর্তনটা সবাই ভালোভাবে নেয়নি। বন্ধুরা হাসাহাসি করতে লাগল—
“তুই এখন হুজুর হইছস?”
“এইসব বেশিদিন থাকবে না, দেখি কবে আবার আগের মতো হস।”

কিন্তু আমি এবার সত্যিই বদলাতে চেয়েছিলাম। এমনকি কিছু সম্পর্ক ছাড়তেও হয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট করি। গান শোনা, অশ্লীল কনটেন্ট দেখা—এসব একে একে ছেড়ে দেই।

সবচেয়ে বড় শক্তি পেয়েছিলাম কুরআন থেকে। প্রতিদিন অনুবাদসহ ২-৩ আয়াত পড়তাম। একেকটা আয়াত যেন আমার জীবনের সঙ্গে কথা বলত। বিশেষ করে যখন পড়লাম:

“যে ব্যক্তি আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার জন্য রয়েছে সংকুচিত জীবন।”
— (সূরা তাহা, আয়াত ১২৪)

আমার নিজের জীবনটাই তো এতদিন সংকুচিত ছিল। এখন বুঝতে পারছিলাম কেন সবকিছু থাকার পরও অশান্তি ছিল।

৫. সত্যিকার আত্মপরিচয়
আমি বুঝলাম, আমাদের আসল পরিচয় হলো ‘আব্দুল্লাহ’—আল্লাহর বান্দা। আর বান্দার কাজ তাঁর রবের আদেশ মানা। আমি ধীরে ধীরে নিজেকে বদলে ফেলি—সাধারণ পোশাক পরা শুরু করি, মসজিদে নিয়মিত জামাতে নামাজ পড়ি, মা-বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করি।

একবার এক মসজিদে এক ভাই বলেছিলেন, “আল্লাহকে ভালোবাসা মানে শুধু নামাজ নয়, বরং সেই ভালোবাসা প্রতিফলন হওয়া উচিত আমাদের প্রতিটি কাজে।”

আমি সেই কথা হৃদয়ে গেঁথে নেই। খারাপ কথা বলা, গীবত করা, রাগান্বিত হওয়া—এসব ত্যাগ করার চেষ্টা করি। প্রতিদিনের রুটিনে কিছু কুরআন, কিছু হাদিস, কিছু জিকির আর কিছু আত্মজিজ্ঞাসা রাখি।

৬. বাবা-মায়ের মন জয়
শুরুর দিকে বাবা-মা একটু চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন—
“তুই কি কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছিস?”
“এত ধর্ম নিয়ে ভাবিস কেন?”

কিন্তু ধীরে ধীরে তারা আমার পরিবর্তন দেখে খুশি হন। আগে আমি রেগে যেতাম, কথা শুনতাম না, এখন শান্ত স্বভাব, সময়ে খাওয়া, নামাজ, পড়াশোনাও নিয়মিত।

একদিন আব্বা বললেন, “তোর মতো হওয়ার চেষ্টা করব আমিও ইনশাআল্লাহ।” তখন চোখে পানি চলে আসে।

৭. এখনকার আমি
এখন আমি প্রতিদিনের প্রতিটি কাজ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়তে করি। পড়াশোনা করি—কারণ ইসলাম জ্ঞানকে উৎসাহ দেয়। কাজ করি—কারণ হালাল রিজিকের গুরুত্ব আছে। পরিবারকে সময় দিই—কারণ রাসূল (সা.) বলতেন, “তোমাদের মধ্যে উত্তম সে, যে তার পরিবারের জন্য উত্তম।”

জীবনটা এখনও সহজ নয়। দুনিয়ার চ্যালেঞ্জ আছে, নফসের লোভ আছে, শয়তানের ধোঁকা আছে। কিন্তু এখন অন্তরে এক আলো আছে—আল্লাহর ভালোবাসা। আমি জানি, আমি একা নই।

৮. শেষ কথা
আমার এই ফেরার পথ সহজ ছিল না। অনেক চড়াই-উতরাই ছিল। তবে এটা বলি—যে একবার আল্লাহর পথে ফিরে আসে, সে আর কিছুতেই তৃপ্ত হতে পারে না আল্লাহ ছাড়া।

রাসূল (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু দেন।”
— (মুসনাদ আহমাদ)

আমি তা নিজের জীবনে অনুভব করেছি।

বন্ধু, যদি তুমি এখনো দ্বিধায় থাকো, তবে আজই একটু একান্তে আল্লাহর সামনে দাঁড়াও। বলো—
“হে আমার রব, আমাকে সঠিক পথ দেখাও।”

বিশ্বাস করো, তিনি শুনবেন। কারণ তিনি আমাদের চেয়ে আমাদের হৃদয়কে ভালো বোঝেন।

Address

Gazipur

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Believer KaoSar posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share