05/04/2025
📌ঈমান ওজন? স্মরণ করা যাক সেই দিনটি। মদীনা অবরোধকারী কাফির এবং ইহুদি গোত্রের ইসলামের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। নবী (সাঃ)-কে হত্যা করাসহ মুসলমানদের নাম-নিশানা দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করা ছিল আয়োজনের মূল লক্ষ্য।
প্রায় দশ হাজার কাফির সেনার মধ্য হতে দুর্ধর্ষ পাঁচ যুদ্বাঃ আমর ইবনে আবদে উদ,ইকরামাহ্ ইবনে আবী জাহল,হুবাইরা ইবনে ওহাব,নওফেল ইবনে আবদুল্লাহ এবং যিরার ইবনে খাত্তাব- গংদের মোকাবিলা করা যে অতীব জরুরি হয়ে পড়ে। প্রশ্ন হল এটা কুস্তি খেলা নয় যে হেরে গেলেও বেচে গেলাম। মোকাবিলা করতে হবে তরবারি হাতে তরবারির বিরুদ্ধে, যা অতীব ভয়ংকর।
মুসলিম সেনাবাহিনীতে প্রায় তিন হাজার সদস্য।সমস্যা হল মল্লযুদ্ধে প্রতিপক্ষের মুখোমুখি দাড়াতে কেউ রাজি হচ্ছিলেন না। এরই মাঝে নবীজির পাশে দাঁড়ানো প্রথম সারির একজন হাত উঁচু করে জানান দিলেন। মুসলিম শিবির জুড়ে আলোচনায় তখন “আলী ”!!
তিনি বিনয়ের সাথে প্রস্তাব করেন‘ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি প্রস্তুত আমাকে অনুমতি দিন। কিন্তু নবীজি তাতে সাড়া দিলেন না। তিনি অপেক্ষায় আছেন অন্য সকলের মধ্য থেকে কেউ এগিয়ে আসে কিনা। আলী (রাঃ) আবারও আরজ করেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি প্রস্তুত। নবী (সাঃ) এবারও নিরব রইলেন । এদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে কাফিরদের হুঙ্কারধ্বনি ও আস্ফালন এবং অনিষ্টতা বেড়েই চলছে।
নিরুপায় নবী ( সাঃ) অবশেষে সম্মত হলেন এবং তিনি আলী (রাঃ)এর হাতে তরবারি তুলে দিলেন। তিনি (সাঃ) আল্লাহর দরবারে এই বলে মিনতি করেনঃ হে আল্লাহ আলীকে শত্রুর আঘাত থেকে রক্ষা করুন। হে আল্লাহ আমাকে একাকী করবেন না, আর আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকারী।
প্রস্তুত আলী হায়দার। আমরঃ কে তুমি? বর্ম পরিহিত আলী (রাঃ) বললেন,‘আমি আলী ইবনে আবী তালিব। আমরঃ “আমি তোমার রক্ত ঝরাব না। তোমার পিতা ছিলেন আমার পুরনো বন্ধু। আমি তোমার চাচাত ভাই মুহাম্মদের ব্যাপারে ভেবে অবাক হচ্ছি যে সে কোন্ ভরসায় তোমাকে আমার সাথে লড়াই করার জন্য পাঠিয়েছে!! আমি তোমাকে না জীবিত না মৃত এমন অবস্থায় বর্শায় গেঁথে শূন্যে ঝুলিয়ে রাখতে পারি”।
জবাবে হযরত আলী (রাঃ) বললেনঃ তুমি আমার মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করোনা। আমি উভয় অবস্থায় সৌভাগ্যবান। আমি নিহত হই বা তোমাকে হত্যা করি। সকল অবস্থায় জাহান্নাম তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমরঃ আলী এই ধরনের বণ্টন ন্যায়ভিত্তিক নয় যে জান্নাত এবং জাহান্নাম উভয় তোমার সম্পত্তি হবে-।🌼
অতঃপর হযরত আলী (রাঃ) আমরকে যে কয়টি প্রস্তাব করেন আর তা ছিলো প্রথমতঃ আমর-কে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ। জবাবে আমরঃ “আলী! এটা বাদ দাও। কারণ তা সম্ভব নয়। দ্বিতীয় প্রস্তাবঃ যুদ্ধ থেকে ক্ষান্ত হও এবং মুহাম্মদ (সাঃ)-কে তাঁর নিজ অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও এবং যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ কর। আমরঃ এমন প্রস্তাব আমার জন্য লজ্জাজনক। আরবের কবিরা আমার ব্যাপারে ব্যঙ্গ করবে এবং তারা ভাববে, আমি ভয় পেয়ে এমন কাজ করেছি। তখন আলী (রাঃ) বলেনঃ “এখন যখন তোমার প্রতিপক্ষ যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে, তাহলে তুমিও তোমার ঘোড়া থেকে নেমে এসো”।
জবাবে আমরঃ আলী! আসলে এটি একটি তুচ্ছ প্রস্তাব মাত্র। আমি কখনোই ভাবিনি যে কোনো আরব আমার কাছে এমন প্রস্তাব করতে পারে! অতপর আমর তার ঘোড়া থেকে নেমেই উত্তেজিত হয়ে নিজের ঘোড়ার পা কেটে ফেলে। তাতে করে ঘোড়াটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সে উপস্থিত সবার মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি করে এবং এক পর্যায়ে উভয়ের মাঝে প্রচন্ড লড়াই বেধে যায়।
ফলাফলঃ আমর ইবনে আবদে উদ ও নওফেল ইবনে আবদুল্লাহ্ পরিখার নীচে আলী (রাঃ)-এর তরবারির আঘাতে নিহত হয় এবং বাকিরা দ্রুত পলায়ন করে। অতঃপর যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্যপটে পরিবর্তন এবং মুসলিম শিবিরে স্বস্তি আসে। উচ্চস্বরে বিজয়ের ধ্বনি ধ্বনিত হয় আহাদুন আহাদ, আহাদুন আহাদ। অবশেষে আসে আল্লাহর সাহায্য,বালুময় তুফান এবং আল্লাহর বাহিনী।
খন্দকের যুদ্ধে রাসূল (সা:) যে দোয়া পড়ে আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা করেছিলেনঃ হে আল্লাহ! হে কিতাব নাজিলকারী! হে তড়িৎ হিসাব গ্রহণকারী! আপনি শত্রু বাহিনীকে পরাস্ত করুন। তাদের পরাস্ত করুন এবং তাদের প্রকম্পিত করে দিন। বুখারি ৬৩৯২
আয়াতঃ হে মুমিনগণ!তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ কর,যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল,অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে (প্রচণ্ড) ঝঞ্ঝাবায়ু এবং এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলাম,যাদেরকে তোমরা দেখতে পাচ্ছিলে না। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন। (৩৩:৯)🌺
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ "খন্দকের যুদ্ধে আলীর তরবারির আঘাতের মূল্য নিঃসন্দেহে কেয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের সমুদয় কর্মের চাইতে অধিক মূল্যবান"। আল হাকিম সংকলিত আল মুস্তাদরাক, ৩০তম খণ্ড, পৃ. ৩০-৩২,তারীখে বাগদাদ ১৩:১৯, আল মানাকিব-খারেযমী ১০৭/১১২,(তারীখে বাগদাদ ১৩:১৯,আল্লামা ইযযুদ্দীন ঈজী প্রণীত ‘কিতাবে মুওয়াফেক’ ইস্তামবুলে মুদ্রিত-পৃঃ ৬১৭।, ফখরুদ্দীন রাজী প্রণীত নেহায়াতুল উকুল ফি দেরায়াতিল উসুল। পা-ুলিপি-পৃঃ ১১৪।, আল্লামা তাফতাযানী প্রণীত সারহুল সাকাসেদ ২য় খ-, পৃঃ ২৩০, আল্লামা কান্দুযী প্রণীত “ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাত’ ৯৫ ও ১৩৭ পৃষ্ঠা। ইস্তামবুলে মুদ্রিত।, আল্লামা মওলভী আদ দেহলভী প্রণীত ‘তাজহীযুল যাহিশ-পা-ুলিপি পৃঃ ৪০৭।,আল্লামা বেহজাত আফিন্দী প্রণীত “তারিখে আলে মুহাম্মদ’পৃঃ ৫৭।🤲🤲🤲🤲