03/09/2024
কিভাবে বোঝাবো, বুঝতে পারছি না!!
একজন কৃষকের ঘরের বেড়া ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বন্যার পানি। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে এসে তারা দেখতে পায়, টিনের চালটুকু ভেঙেচুরে মাটিতে লুটিয়ে আছে। ঘরের আসবাবপত্র কিছু অবশিষ্ট নেই। তোষক, কাঁথা, বালিশ, এগুলো পঁচে মাটির সাথে প্রায় মিশে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এলাকার মানুষ নিয়ে, গাছ অথবা বাঁশ দিয়ে নরম ভিটাতে কোনোরকম চালটাকে দাঁড় করিয়েছেন ঠিকই কিন্তু ঘরের চারপাশে কোন বেড়া নেই। পলিথিন এবং পুরনো কাপড় দিয়ে একরকম বেড়ার কাজ চালিয়ে তারা গত চারদিন ধরে সময় পার করছেন।
ঘরে যুবতী মেয়ে আছে, বউ আছে, ছোট বাচ্চা আছে তাই বাবাকে রাত জেগে ঘর পাহারা দিতে হয় । কয়েক বান টিন কিনে, ঘরের বেড়াটুকু দিতে এই কৃষকের অপেক্ষা করতে হবে আরও অনেক লম্বা সময়। উনার সময় কিন্তু আমার আপনার সময়ের মতো পার হয়ে যাচ্ছে না। এই মানুষটার কাছে প্রতিটা মিনিট কিন্তু এক একটা বছরের চেয়েও দীর্ঘ!
কাছাকাছি গল্প আছে আরও একটা পরিবারের।
একই ভাবে হাতে হাতে ধরে চালটাকে দাঁড় করিয়েছেন ঠিকই কিন্তু যে কোন মুহূর্তে ঘর ভেঙে মাথায় পড়তে পারে তাই, ঐ পরিবারের কেউ এখনও নিজের ঘরে উঠতে পারে নাই। ঐ একই হিসাব। বেড়া নাই কোন!
ভাঙা ফুটো চাল টা শুধু কিছু গাছ অথবা বাঁশের উপর ঠেস দিয়ে দাঁড় করানো হয়েছে। মুরুব্বি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ঘরের নীচে ই মোম জালিয়ে একা একা রাত পার করেন। উনাকে প্রশ্ন করেছিলাম, “ ঘর ভেঙে পড়তে পারে তাই পরিবার কে ঘরে রাখেন নাই, তাইলে আপনি রাতে থাকেন কেন?? “ । চাচা উত্তরে শুধু বলেছে “ ঘরভিডা ছাড়ি, কণ্ডে যামু! “ ।
ভিটার প্রতি উনাদের এই মায়া বুঝার ক্ষমতা আমার হয় নি বোধহয়! বন্যা হলেও, পানি বাড়লেও, খেয়াল করেছি উনারা ভিটা ছেড়ে নড়তেও চান না।
আমি জানি, আমরা সবাই অনেক ব্যস্ত থাকি তাই একেবারে সংক্ষেপে মাত্র দুইটা পরিবারের গল্প জানালাম। গতকাল বনভাসী মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রমের জরীপ করতে এসে, পরশুরামের একটা গ্রামেই এরকম ৮ টা ঘরের খোঁজ পেয়েছি, যাদের সবার গল্প প্রতিযোগিতামূলক ভাবে একজনের চেয়ে আরেকজনের টা বেশি করুণ!
আমার লেখায় কতটুকু উপলব্ধি করতে পারলেন জানি না, তবে এই পরিবারগুলোর ঘুরে দাঁড়াবার মতো কোন অবস্থা নেই। আমি নিজে ঘরে ঢুকে, কথা বলে, যাচাই করে দেখেছি।
অসহায়ত্বের ব্যাপার হচ্ছে, আমাদের ফান্ডে যে টাকা আছে তা দিয়ে বেশি হলে ঠিকঠাক ৩ থেকে ৪ টা ঘর হয়তো করে দিতে পারবো তবে আরও ৪ টা ঘর বাদ পড়ে যায়।
বাজেট বের করার প্রসেস চলছে। ইঞ্জিনিয়ার থেকে মিস্ত্রি, গ্রামের দোকান থেকে ঢাকার ফ্যাক্টরি ; সমস্ত জায়গায় কথা বলছি আমরা। চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বড়ভাইদের মাঝেও।
প্রতিটা ঘর বাবত ১ লক্ষ টাকার বেশি খরচ লাগবে এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি। বাকিটা নির্ভর করবে কোন ঘরটা করা হচ্ছে, সেটার জায়গা কতটুকু এবং আগের মালামালগুলো কতটুকু ব্যবহারযোগ্য তার উপর।
কোন কোম্পানি, সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়, অথবা ক্লাব থেকে একটা করে ঘরের দায়িত্ব যদি নিতে পারেন তবে আমাদের টিম আপনাকে ঐ পরিবারগুলো পর্যন্ত নিয়ে যাবে। নিজে যাচাই করে তারপর একটা ঘরের দায়িত্ব নিতে পারেন।
আমরা তথ্য দিয়ে এবং আপনাদেরকে সেই পরিবার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সহায়তা করবো।
হোয়াটস্যাপে যোগাযোগ করুণ : 01677381886