21/09/2025
এক অচেনা বনফুলের গল্প,
ছোট্ট মেয়ে তিথির পৃথিবীটা ছিল তার বাড়ির পিছনের বাগান আর সেখানে ফুটে থাকা ফুলগুলোকে ঘিরে। তার প্রিয় ফুল ছিল কাঠগোলাপ, জুঁই, আর গাঁদা। কিন্তু তিথির মনে একটা গোপন ইচ্ছে ছিল, সে এমন একটা ফুল দেখতে চায় যা কেউ কখনো দেখেনি, কোনো বইয়ে যার ছবি নেই। তার দাদু এই ইচ্ছেটার কথা জানতেন। দাদু ছিলেন একজন অভিজ্ঞ উদ্ভিদবিদ। তিনি তিথিকে প্রায়ই বলতেন, “পৃথিবীতে এমন অনেক সুন্দর ফুল আছে, যাদের খোঁজ এখনো মানুষের কাছে অজানা।”
এক গ্রীষ্মের দুপুরে, দাদু তিথিকে নিয়ে হাঁটতে বের হলেন। তারা গ্রামের সীমা পেরিয়ে বনের দিকে চললেন। তিথি কিছুটা অবাক হয়ে দাদুকে জিজ্ঞেস করল, “দাদু, আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
দাদু হাসে বললেন, “এক অজানা ফুলের সন্ধানে, যা দেখতে অনেকটা তোমার স্বপ্নের মতো।”
বনের মধ্যে যত গভীরে যেতে লাগল, ততই গাছের ছায়া ঘন হতে থাকল। পাখির কিচিরমিচির আর ঝিঁঝির ডাকে চারিদিকে এক অদ্ভুত শান্তি। হাঁটতে হাঁটতে একসময় তারা একটি ছোট ঝরনার পাশে পৌঁছালেন। সেখানেই, ঝরনার পাশে একটি বিশাল শিলার উপরে, তিথি দেখল তার স্বপ্নের ফুল।
ফুলটি ছিল ছোট, তার পাপড়িগুলো ঠিক যেন আকাশের রঙে আঁকা – একদিকে হালকা নীল, আরেকদিকে হালকা গোলাপি। মাঝখানে ছোট্ট একটা হলুদ বিন্দু, যা থেকে স্নিগ্ধ আলো ঠিকরে আসছিল। ফুলের পাপড়িগুলো এমনভাবে সাজানো ছিল যে মনে হচ্ছিল যেন একটি ছোট তাঁরা মাটিতে নেমে এসেছে।
তিথি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল। এই ফুলটা তার পরিচিত কোনো ফুলের মতো ছিল না। তিথি তার দাদুকে বলল, “দাদু, এই ফুলটার নাম কী?”
দাদু বললেন, “এর কোনো নাম নেই। এটা হলো এক বুনো ফুল, প্রকৃতির এক গোপন উপহার। হয়তো এই ফুলটি শুধু আমাদের জন্যই ফুটেছে।”
তিথি সাবধানে হাত বাড়াল ফুলটাকে স্পর্শ করার জন্য। কিন্তু দাদু তাকে থামালেন, “কিছু সুন্দর জিনিস দূর থেকেই দেখতে হয়। তার সৌন্দর্য তখনই পূর্ণতা পায়, যখন সে তার নিজস্ব জায়গায় ফোটে। এই ফুলটি এখানে সুন্দর, কারণ এখানেই এর স্থান।”
তিথি বুঝল, সব সৌন্দর্যের মালিকানা দরকার হয় না। কিছু সৌন্দর্য শুধু অনুভব করতে হয়। সে আর ফুলটি ছিঁড়ল না, শুধু তার ছবি মনে গেঁথে নিল। এরপর থেকে যখনই সে বনের কথা ভাবত, তখনই তার মনে ভেসে উঠত সেই অজানা বনফুলের ছবি, যা তাকে শিখিয়েছিল যে সত্যিকারের সৌন্দর্য প্রকৃতির নিজস্ব সম্পদ।
প্রকৃতির রহস্যময়তা – অজানা ফুলের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে "প্রকৃতি এখনো অগণিত গোপন রত্ন ধরে রেখেছে।"