31/08/2024
কোন বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে বলছি না।
- মনে কষ্ট পাবেন না
বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি মাসখানেক পূর্বে এই দেশে যে গণঅভ্যুত্থান (অনেকে এটাকে জোর করে দখল করা বলে থাকে !) হয়ে গেল তার রেশ ধরে কিছু উশৃঙ্খল সুবিধাবাদী যে ন্যাক্কার জন্য ঘটনা ঘটিয়েছে, যে লুটতরাজ করেছে তার কিছু স্থির এবং ভিডিও চিত্র বেশ কিছু অতি উৎসাহি দেশপ্রেমিক (!) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন এবং ক্যাপশনে লিখেছেন "অসভ্য জাতি", "বর্বর জাতি", "অশিক্ষিত জাতি"। আপনি কিছু উশৃংখল এবং সুবিধাবাদী লোকের জন্য পুরো জাতিকে এভাবে গালাগাল দিতে পারেন না। হ্যাঁ, বলতে পারেন এ কথাগুলো গালাগাল এর মধ্যে পড়ে না, কিন্তু গালাগালের সংজ্ঞা যদি করা হয় তাহলে এগুলো নিশ্চয়ই গালাগালের পর্যায়ে পড়ে, বরং তার থেকে আরো বেশি কিছুই বোঝায়, যদি কিনা পুরো জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়।
পৃথিবীতে তথাকথিত "সভ্য জাতি" যে সভ্য দেশে যাবার জন্য এদেশের অতি উৎসাহী দেশপ্রেমীক উন্মুখ হয়ে থাকি সেই আমেরিকার শহরগুলোতে, বিশেষ করে নিউইয়র্ক সিটিতে এক ঘন্টার জন্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছিল তখন সেখানে কয়েক শত লোক খুন হয়েছিল, হাইজ্যাক, ধর্ষণও সমানতালে হয়েছিল। রোমান সৈন্য যখন ব্রিটেন থেকে চলে যায় তখন পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশ থেকে কাঠের নৌকা, ঘোরার গাড়ি, যে যেভাবে পেরেছে,বৃটেনে এসে লুটতরাজ করেছে। আমাদের দেশে বছরের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকে না, কৈ ? এমন কোন ধর্ষণ-লুটের ঘটনা তো এদেশে শোনা যায় না। পৃথিবীতে বহু উন্নত দেশে গণ অভ্যুত্থান হয়েছে, যেখানে পরাজিতদের উন্মুক্ত রাজপথে (শত শত তাজা প্রাণকে) জবাই করা হয়েছে, চোখের সামনে মা বোনদের গায়ে লালসার হাত দেওয়া হয়েছে, কোটিপতিরাও লুটের নেশায় মত্ত থেকেছেন।
বেশ কিছু দিন এ দেশ প্রশাসন ছাড়া ছিল, যদি আমেরিকা বা এই ধরনের "তথাকথিত সভ্য দেশের" প্রশাসন ব্যবস্থা এভাবে ভেঙে যেত তাহলে আরো কত কিনা জঘন্য কর্মকান্ড হতো তাতো অনুমান করা যায়।
আশার কথা, গণঅভ্যুত্থানের পরে প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ তথা তরুণ প্রজন্ম যেভাবে দেশ সংস্কারের কাজে নিজেদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থ দিয়ে সারাদিন- রাত যেভাবে পরিশ্রম করেছে, আমি এ যাবৎ তেমনভাবে তথাকথিত সভ্য দেশের তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে দেখি নাই, মাঝে মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত কিছু বৃদ্ধ - বৃদ্ধা এবং প্রগতিশীল সামাজের কিছু কর্মীকে শান্তির পক্ষে মিছিল করতে গণমাধ্যম ও নিউজ পেপারগুলোতে দেখেছি, কিন্তু সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
এই অশিক্ষিত-অসভ্য- বর্বর জাতির ছাত্রসমাজ (!) প্রায় দের মাস ধরে সংগ্রাম করে, হাসিমুখে তাদের মূল্যবান জীবন দিয়ে, রক্ত ঝরিয়ে নিজেদের মহা মূল্যবান চোখ এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে যে গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে এবং ২৪ ঘন্টা না ঘুমিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে দেশকে স্বাভাবিক রাখার, অথচ আপনারা তাদের পাশে না দাঁড়িয়ে, বা তাদের সঙ্গে রাজপথে না থেকে, প্রগতিশীল ছাত্রসমাজ দ্বারা এ উশৃংখল সুবিধাবাদী লুটেরাদের ভিডিও ধারণ করা, ভাইরাল ছবি নিয়ে ঘরে বসে "ঝালমুড়ি" খেতে খেতে অথবা "উন্নত দেশে বসে "বার্গার " খেতে খেতে পোস্ট করেন এবং ক্যাপশনে লিখেন অসভ্য জাতি- অশিক্ষিত জাতি- বর্বর জাতি- কোনদিনও সভ্য হবে না, শিক্ষিত হবে না।
আপনারা এত সভ্য বা শিক্ষিত হয়ে বিদেশে গেলেন কেন ? আপনাদের এদেশের জন্য কি কিছুই করার ছিল না ? (অনেক দেশে দেখেছি প্রবাসীরা তাদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে এ দেশের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে পাশে থেকেছেন- তাদের ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানাই) আপনারা যদি নিজ দেশে থাকতেন, তাহলে সভ্য বা শিক্ষিত তো কিছুটা হলেও বাড়তো।
আপনারা অনেক অজুহাত দিবেন- এ দেশে শিক্ষিতের বা শ্রমের কদর নেই, সঠিক আইন নেই, স্বাধীনতা নেই, ইত্যাদি ইত্যাদি। হ্যাঁ ভাই, ঠিকই বলেছেন। এগুলো তো আপনাদেরই "আশীর্বাদ পুষ্ট রাজনৈতিক " সরকারেরই তৈরি। তারাই তো আপনার স্বাধীনতা হরণ করেছে, আইন শৃঙ্খলা নষ্ট করেছে, সঠিক শ্রমের মূল্য দেয়নি, এমনকি বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে, আপনারাই ভাবুন আপনাদের "আশীর্বাদ পুষ্ট" রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন ভাবে লিখতে পারতেন ? আপনাদের চিন্তা চেতনার প্রতি বড়ই করুনা হয়।
গণঅভ্যুত্থানের পর পরই সাংস্কৃতিক কর্মী এবং সংগীত শিল্পী "জলের গান" ব্যান্ডের ভোকাল রাহুল আনন্দ এবং চিত্রশিল্পী উর্মিলা শুক্লা দম্পতির ধানমন্ডিতে তাদের ভাড়া করা বাড়িটিতে দুর্বৃত্তি লুটপাট করে, সবকিছু ভেঙেচুরে পুড়িয়ে দিয়েছে, তাদের বাড়িতে থাকা দুষ্প্রাপ্য ছোট বড় প্রায় তিন হাজার দেশি - বিদেশি বাদ্যযন্ত্র নষ্ট করেছে। তাদের পরনের পোশাক ছাড়া আর কিছুই ছিল না, তারপরও রাহুল আনন্দ সাংবাদিক এবং জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, "তবু শান্তি আসুক আমার সোনার দেশে, যে কোন মূল্যে। সে মূল্য যদি হয় আমার সোনার সংসারের পোড়া ছাই বা বাদ্যযন্ত্র পড়া কয়লার বিনিময়ে, তাতেও দুঃখ নাই। ভালবাসি বাংলা আর বাংলার মানুষকে, আমি বাংলার গান গাই।"
বর্তমানে দেশে ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় স্মরণকালের মধ্যে ভয়াবহ বন্যা হয়ে গেল। কিভাবে বন্যা এলো, এটা বড় বিষয় নয়, বড় বিষয় হচ্ছে আমরা নিজের অবস্থান থেকে তাদের জন্য কি করছি ? কিছুদিন পূর্বে খবরের কাগজে দেখলাম একজন ১৮-২০ বছরের তরুণ, স্রোতের মধ্যে বন্যার্তদের উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেই প্রাণ দিয়েছে। তরুণ ছাত্র সমাজ, স্বেচ্ছাসেবকেরা কিভাবে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের উৎসাহ দিয়ে কিছু না লিখে বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পক্ষ নিয়ে রাজনৈতিক মাঠ গরম করছে। অবশ্য জাতিসংঘের বিবৃতিতে স্পষ্ট কারণ বলা হয়েছে যে কিভাবে এই বন্যার ভয়াভয়তা বাড়লো । অনেকে ব্যঙ্গ করে এ দেশকে বলছে "তলাবিহীন পাত্র", এই তলা বিহীন রাষ্ট্র কারা তৈরি করেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং ব্যাংক খাতের দিকে একটু নজর দিলেই বোঝা যাবে। এ দেশের নাগরিক হিসেবে "তলাবিহীন পাত্র জোড়া লাগানোর দায়িত্ব" আপনার আমার উপরেও পড়ে।
তাই আসুন, এই অনেকটা অসহায় প্রশাসনের পাশে থেকে তাদেরকে সাহস দেই, কারণ তারা কেউই কোন " তথাকথিত " রাজনৈতিক দল থেকে আসে নাই এবং বিশেষ করে দেশ চলানোর পূর্ব কোন অভিজ্ঞতাও তাদের নেই । আমাদের দেশের ইতিবাচক দিকগুলো বিভিন্নভাবে সামাজিক মাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে তুলে ধরি। এ দেশ আপনার এবং আমার- আমাদের সবার।