15/08/2025
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ : ইতিহাস, বিতর্ক ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
১. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে অবস্থিত নিজ বাসভবনে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারের নয়, বরং একটি জাতির রাজনৈতিক ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা অনস্বীকার্য—তিনি ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
২. অবদান ও সম্মান নিয়ে বিতর্ক
স্বাধীনতার পর থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও, বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচারণা কৌশল নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। সমর্থকদের মতে, এসব প্রচেষ্টা তার অবদানকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছে; তবে সমালোচকদের দাবি, অতিরিক্ত রাজনৈতিকীকরণ ও ব্যক্তিপূজার প্রবণতা তার প্রকৃত সম্মান ও ঐতিহাসিক গুরুত্বকে হ্রাস করেছে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সমর্থকরা দ্বিমত পোষণ করলেও, বাস্তবতা হলো—ইতিহাসের চরিত্র যত বেশি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হয়, ততই তার নিরপেক্ষ মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৩. বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করেন—যা অনেক সমালোচকের মতে, রাজনৈতিকভাবে তার পিতার আদর্শ ও উত্তরাধিকারের জন্য নেতিবাচক বার্তা বয়ে এনেছে। কেউ কেউ এটিকে “দ্বিতীয়বার শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা” হিসেবে রূপকভাবে উল্লেখ করছেন, কারণ এতে তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ও পারিবারিক ভাবমূর্তি বড় ধাক্কা খেয়েছে।
৪. উপসংহার
১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে বেদনার দিন। শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই, কিন্তু ইতিহাসকে যদি শুধু একটি রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তবে তা ব্যক্তির মর্যাদা নয়, বরং বিতর্ককে বাড়ায়। আর বর্তমান সময়ের ঘটনাবলি দেখায়—রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতিটি পদক্ষেপ কেবল আজকের জন্য নয়, ভবিষ্যতের ইতিহাসে কিভাবে লেখা হবে সেটিও নির্ধারণ করে।
Send a message to learn more