20/08/2023
# ডেঙ্গু জ্বর : যা জানতে হবে...
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••তীব্র জ্বরের সাথে নীচের যে কোন ২-৩টি লক্ষণ থাকলেই ডেঙ্গু সন্দেহ করবেন এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
১. তীব্র মাথা ব্যাথা
২. চোখের পেছনে ব্যথা
৩. হাড় বা মাংসে ব্যাথা বা শরীরে মারাত্মক ব্যথা
৪. বমি বমি ভাব বা বমি করা
৫. চামড়ায় ফুসকূড়ি (Rash), চুলকানি, শরীরে লাল লাল দাগ
৬. অরুচি বা ক্ষুধামন্দা, কখনো ডায়রিয়া
৭. গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া
এসময়ে এসব ২-৩ টি লক্ষণ থাকলে ডেঙ্গু হবার সম্ভাবনাই বেশি।
#সতর্ক সংকেত বা ওয়ার্নিং সাইনঃ (Warning signs)
১. তীব্র পেট ব্যাথা।
২. ক্রমাগত বমি (দিনে তিনবার বা তার চেয়ে বেশি)
৩. দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত, চোখে রক্ত জমাট
৪. রক্তবমি, কালো পায়খানা
৫. শ্বাসকষ্ট বা পেটে ভারী বোধ করা
৬. ল্যাবরেটরী টেষ্টে একই সঙ্গে PCV (Hematocrit) বেড়ে যাওয়া ও Platelet দ্রুত কমতে থাকা।
এই লক্ষণগুলি থাকলে রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
#মারাত্মক ডেঙ্গুর সতর্ক সংকেত (Dengue Shock):
ডেঙ্গু জ্বরের প্রথম লক্ষন দেখা দেবার ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে কেউ কেউ মারাত্মক ডেঙ্গুর সংকটাপন্ন অবস্থায় চলে যেতে পারেন।
জ্বর কমে যাওয়া মানে এই নয় যে রোগ শেষ। বরং এটা হতে পারে শেষের শুরু। জ্বর ভাল হয়ে যাবার ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা পরই বরং ব্লাড প্রেসার কমতে কমতে রোগী শকে চলে যেতে পারে বা লিভার, কিডনী, ফুসফুস, ব্রেন ডেমেজ এর লক্ষন শুরু হতে পারে। এটা রক্ত ক্ষরনেরও সময়কাল। এ সময়ে তাই নিয়মিত বিরতিতে ব্লাডপ্রেসার চেক করতেই হবে।
(ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত জ্বর চলে যাবার পর ভয়টা বেশি। তখন প্লাজমা লিকেজ হয়ে রোগি শকে চলে যেতে পারে। তখন রক্তের ঘনত্ব বাড়তে থাকে। কখনো কখনো পেটে, বুকে পানি জমে। রক্তের হিমাটোক্রিট দেখে এই বিষয়টি বোঝা যায়। সেই সাথে প্লাটিলেট কমতে শুরু করে। কেউ যদি দ্বিতীয়, তৃতীয়বারের মত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে শক ও রক্তপাতের ঝুঁকি বেশি।)
#শকের লক্ষণঃ
১. অত্যধিক দূর্বলতা, অবসাদ বা অস্থিরতা।
২. ব্লাড প্রেসার ডেঙ্গু পূর্ববর্তী অবস্থা থেকে কমে যাওয়া।
৩. প্রস্রাব কমে যাওয়া
৪. শ্বাসকষ্ট, দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস
এ মারাত্মক সংকেতগুলি নজরে রাখতে হবে এবং এর এক বা একাধিক লক্ষণ দেখা মাত্রই দ্রুত আপনার চিকিৎসকের কাছে/ হাসপাতালের বহির্বিভাগে/ জরুরী বিভাগে যেতে হবে।
#রক্ত পরীক্ষা/ল্যাব টেষ্টঃ
> জ্বর হলে নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন ও ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করুন।
> এই সময়ে তীব্র জ্বর হলেই দিনভেদে ডেঙ্গু জ্বরের পরীক্ষা করুন। জ্বর শুরু হবার পরের ৪ দিন ডেঙ্গু NS1 Antigen এবং ৫-৭ দিনের মাথায় IgM ও IgG Antibody করতে হয়।
> রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও উপসর্গগুলো খেয়াল করুন। কিন্তু এবারে এইসব রিপোর্টও মিথ্যে আসছে। অর্থাৎ কখনো কখনো এসব পরীক্ষায়ও ডেঙ্গু ধরা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে CBC রিপোর্টে টোটাল কাউন্ট কম থাকলে ডেঙ্গু সন্দেহ করে প্রয়োজনে আবার পরীক্ষা করাতে হতে পারে।
> হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নিয়মিত CBC টেস্ট করতে হবে। HCT ও Platelet মনিটর করতে হবে।
#ডেঙ্গু প্রতিকারে করণীয় ও চিকিৎসাঃ
> জ্বরে শুধু প্যারাসিটামল ব্যবহার করুন। জ্বরের তীব্রতা ও বয়সভেদে প্যারাসিটামলের 'ডোজ ও রুট' জেনে নিন।
> কখনো কখনো চিকিৎসকেরা মুখে ওরস্যালাইন খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
> জ্বর ভালো হওয়ার পরও ডেঙ্গুজনিত মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন ও হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করুন ও ফলোআপে থাকুন।
> কোনো কারণে মুখে খেতে না পারলে পর্যাপ্ত পানির জন্য শিরায় স্যালাইন দিতে হয়। সেক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। চিকিৎসকের কাছ থেকে সতর্ক সংকেতগুলো জেনে নিন।
> কোনো জটিলতা থাকলে অবশ্যই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে।
πππππππππππππππππππππππππππππππππππ
#বাসায় থাকাকালীন উপদেশঃ
> জ্বর এলে তাই প্রচুর পানি পান করতে হবে। তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। অস্থিরতা অনুভূত হলে পানি, খাবার স্যালাইন, শরবত, ডাব, ফলের জুস ইত্যাদি বেশী বেশী খেতে হবে।
> প্রস্রাব কম গেলো কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
> সম্ভব হলে প্রতিদিন রক্তচাপ মাপতে হবে।
#নিষেধঃ
> যেহেতু অ্যান্টিজেন এবং অ্যান্টিবডি পরীক্ষার উপযুক্ত সময়ের পার্থক্য আছে, তাই পরীক্ষা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শমত করতে হবে। ডেঙ্গু রিপোর্ট নেগেটিভ আসলেও লক্ষ্মণের সাথে CBC রিপোর্ট মিলিয়ে একজন চিকিৎসকই রোগ নির্ণয় করবেন।
> জ্বর বা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবে না।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না।
> কারো কথায় প্ররোচিত হয়ে উল্টাপাল্টা ওষুধ (এন্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড) খাবেন না। ভুলেও কোন ব্যথার ওষুধ (আইবোপ্রফেন, এসপিরিন) খাবেন না।
> ডেঙ্গুতে আলাদাভাবে কোনো ওষুধ নেই। বাসায় থাকলে শুধু প্যারাসিটামল ও তরল খাদ্য গ্রহণ করুন।
> একেক রোগীর একেক রকম মাত্রার স্যালাইন লাগে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বাড়িতে শিরায় স্যালাইন দেয়া যাবে না।
#কতিপয় ভুল ধারণাঃ
> রিপোর্ট নেগেটিভ মানেই ডেঙ্গু নয়– কথাটি সঠিক নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকই লক্ষণভেদে ডেঙ্গুরোগ নিশ্চিত করবেন।
> জ্বর নেই মানে আপনি আশংকামুক্ত– কথাটি ভুল।
> সাধারণত প্লেটলেট কমলে প্লেটলেট দেয়ার দরকার নেই। রক্তপাত হলেও না। অতি মাত্রায় প্লেটলেট কমে গেলে (৫ থেকে ১০,০০০) ও মাত্রাতিরিক্ত রক্তপাত থাকলে প্লেটলেট দেয়ার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। সম্ভব হলে সিঙ্গেল ডোনার প্লেটলেট।
> প্লাটিলেট যে কারণে কমে সেটা ডেঙ্গুর কারণে। অযথা প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন দেবার জন্য হয়রান হবেন না। যে প্লাটিলেট দেবেন সেগুলোও কিন্তু একইভাবে ভেঙে যাবে। অযথা প্লাটিলেট পরিসঞ্চালনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
> অসুখে প্লাটিলেট কমলেও পরে আবার সেটা নিজে থেকে বাড়তে থাকে। একবার বাড়তে শুরু করলে আর ভয়ের কিছু নেই।
> তরল কমাতে বা বাড়াতে হবে হিমাটোক্রিট দেখে। প্লেটলেট দেখে নয়। কাজেই প্লেটলেট নিয়ে অতি মাতামাতির কিছু নেই। ২৫-৩০,০০০ প্লেটলেট কাউন্টে