20/06/2024
যাত্রী
অঝোর ধারায় চারিদিকে এক মায়াবী পরিবেশে যেন হঠাৎ করে জেগে উঠেছে। বাসের মধ্যে এভাবে বসে থাকলে মাথা ধরে যাবে, বিশেষ করে জানালাটা যদি বন্ধ থাকে। জ্যামে বসে আছি প্রায় ঘণ্টাখানেক হতে চললো। মিরপুর থেকে ফার্মগেট হয়ে ল্যাবরেটরি তে যাবো ভেবেছিলাম। কিন্তু, বেরসিক বৃষ্টি রাস্তার যানজট যেন কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। আশ্চর্য! পুরো শহরজুড়ে সব কিছু কেমন যেনো ঝিম মেরে আছে। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা যেন চারপাশের সবকিছুকে চুপ করিয়ে রেখেছে চোখ রাঙানি দিয়ে।
হঠাৎ খেয়াল করলাম, আমার সিটের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে আছে একজন অল্পবয়সী ভদ্রমহিলা এবং তার বয়স বেশি নয়। আমার কাছাকাছি বয়স-ই অনুমান করলাম। তিনি যে কখন বাসে উঠেছেন সেটা খেয়াল করি নি। তবে তার গন্তব্য যে কাছে নয়, তা বেশ বুঝতে পারলাম। কারণ, বাসে ভিড় খুব বেশি ছিল, আর তিনি সেই ভিড় ঠেলে ঠেলে বাসের একদম পেছন দিকটাতে এসে দাঁড়িয়েছেন। দেখে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে বলেই মনে হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদেরকে দেখলে মোটামুটি অনুমান করা অসম্ভব নয়। তবে, ব্যাতিক্রম-ও নেহাৎ কম নয়। অনুমানের মাধ্যমে মানুষকে যাচাই করার নেশাটা বেশ কিছুদিন হলো আমাকে পেয়ে বসেছে। মানুষের মন নিয়ে আমার একটা বিশেষ ভালোলাগা আছে। কারণ, হিউম্যান সাইকোলজি নিয়ে বর্তমানে পিএইচডি করছি আমি। প্রফেসর মাহমুদ খানের অধীনে বেশ কিছুদিন হলো পিএইচডি করা শুরু করেছি। আমি যেদিন ওনার সাথে প্রথম দেখা করতে যাই, উনি আমার কথাবার্তার ধরণ, পোষাক, বসার ভঙ্গি, হাসি, কপালের ভাঁজ দেখে আমার সম্পর্কে এমন এমন সব কথা আমাকে শুনিয়েছিলেন যা আমি ছাড়া আর কারো পক্ষেই জানা সম্ভব ছিল না। ভাগ্য ভালো যে, আমার আনুষঙ্গিক কোনো দোষ ছিল না। যদি থাকতো, তাহলে সেটাও উনি ধরে ফেলতেন বলেই আমার বিশ্বাস। সেই থেকে মূলত শুরু আমার এই নেশার, আর তখন থেকেই একটু একটু করে প্রফেসর খানকে অনুকরণ করার চেষ্টা করে চলেছি।
হঠাৎ মনে হলো, ভদ্রমহিলা আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। "উনি কি ক্লান্ত ? অবশ্য, ক্লান্ত হওয়ারই কথা" ,মনে মনে বললাম আমি। "আমার কি সিট টা ছেড়ে দেওয়া উচিত ?" , আবার মনে মনে ভাবলাম। ভদ্রমহিলা হয়তো দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তৃষাতুর দৃষ্টিতে বাসের সিটগুলোকে আঁড়চোখে দেখছিলেন। তার জন্য আমারও খুব মায়া হচ্ছে। কিন্তু, নিজে উঠে গিয়ে তাকে বসতে বলতে কেমন যেন বাধো বাধো লাগছে আমার। মিনিট দশেক কেঁটে যাওয়ার পর ঠিক করলাম যে আমার সিটটা ওনার জন্য ছেড়ে দেবো। কারণ, বাসে ভিড় আরো বেড়েছে, এবং ওই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রমহিলার চোখ দুটো চাতকের মত কিছু একটা খুঁজছে। কি খুঁজছে সেটা বোধগম্যই।
নাহ্ ! এভাবে আর নয় বলে সিটটা ছেড়ে যেই ওনাকে বসতে বললাম ঠিক তখনই উনি আমায় চমকে দিয়ে বলে উঠলেন, " মুখে হাসি আর মনে কষ্ট নিয়ে কারো উপকার না করাই ভালো "।
হঠাৎ করেই কিভাবে যেন বাসের সব যাত্রী কৌতুহলী হয়ে উঠল এবং হেসে ফেলল। আমি কিন্তু আহাম্মকের মত দাড়িয়েই থাকলাম, এবং এই সুযোগে অন্য আরেকজন এসে আমার সিটটা দখল নিয়ে সুন্দর করে বসে পড়ল।
হঠাৎ করেই আমার ঘুমটা ভেঙে গেল। আমি আবিষ্কার করলাম আমি আমার বিছানায় শুয়ে আছি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম, "এ আবার কেমন স্বপ্ন " ?
✍️ Mandela Mallick