
19/07/2025
"ঘোড়ার পায়ের কাদা ও এক খলিফার বিনয়"
(ইয়াভুজ সুলতান সেলিম ও ইবনে কামাল)
১৫১৭ খ্রিস্টাব্দ। উসমানী সুলতান ইয়াভুজ সেলিম মিশর জয় করে ফিরছেন। এই বিজয়ের মাধ্যমে উসমানীয় খেলাফতের হাতে আসে মক্কা ও মদীনার নিয়ন্ত্রণ—ইসলামের পবিত্র দুই হারাম শহরের রক্ষণাবেক্ষণের ভার। সাথে ফিরছেন তাঁর উস্তাদ, প্রখ্যাত আলেম ও মুফতি—ইবনে কামাল পাশা।
পথে তারা এক কর্দমাক্ত মাঠ পার হচ্ছিলেন। হঠাৎ উস্তাদ ইবনে কামালের ঘোড়ার পা থেকে কাদা ছিটকে এসে পড়ে সুলতান সেলিমের পোশাকে। এক মুহূর্তে রাজসিক জৌলুসে মোড়া শরীর কর্দমে ঢাকা পড়ে যায়।
ইবনে কামাল অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। তাঁর চোখে লজ্জা, মন ভরে গেল দুঃখে—উস্তাদ কি আর ছাত্রের জামা নোংরা করেন? তিনি সুলতানের দিকে চেয়ে দুঃখপ্রকাশ করলেন।
সুলতান তখন শান্ত কণ্ঠে বললেন—
> “উস্তাদ, আপনি কষ্ট পাবেন না। আলেমদের ঘোড়ার পায়ের কাদা আমাদের জন্য আশীর্বাদ। আমি এই জামাটা রেখে দেব, এবং যখন আমি মারা যাব, তখন যেন এই জামা দিয়ে আমার জানাজার খাট ঢেকে দেওয়া হয়।”
এই একটি বাক্য শুধু ইতিহাস নয়—এ এক চিন্তার বিপ্লব। এটা বলছিল এক খেলাফতের মহাশাসক, যিনি মিশর জয় করেছিলেন, শাহ ইসমাঈলকে পরাজিত করেছিলেন, সারা দুনিয়ার মুসলিমরা যাঁকে খলিফা জ্ঞান করত।
তবু, এক মুহূর্তে তিনি নিজেকে ভাবলেন এক ছাত্র, এক তালিবুল ইলম—আর উস্তাদকে মনে করলেন বরকতের উৎস।
---
এই হলো উসমানী খেলাফতের আত্মা—যেখানে তরবারি ছিল হাতে, কিন্তু হৃদয় ছিল কুরআন ও ইলমের সামনে নত।
আলেমদের কাদাও যেখানে গর্বের বস্তু হয়ে ওঠে, সেখানেই গড়ে ওঠে সত্যিকারের খেলাফত।