
03/10/2024
সিদ্ধার্থ গৌতম (বুদ্ধ) নেপালের কপিলাবস্তুর একজন রাজপুত্র ছিলেন। রাজ পরিবারে তাঁর জন্ম হয়েছিল। প্রচুর্যপূর্ণ রাজপ্রাসাদে তিনি বেড়ে উঠেন, ষোল বছর বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাঁর ঔরসে এক সন্তানের জন্ম হয়।
পারিবারিক রাজকীয়তা বা ধন-সম্পদ তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তাই ঊনত্রিশ বছর বয়সে তিনি একটি ভিন্ন জীবনধারা বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। রাজপ্রাসাদ থেকে পালিয়ে একজন তপস্বী বা সন্যাস হিসেবে বাকি জীবন কাটিয়ে দেবেন বলে বের হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যে ধরনের সন্যাসজীবন খোঁজছিলেন, তা’র সন্ধান তিনি কোথাও পাননি; যে সুখ ও মঙ্গল তিনি কামনা করেছিলেন, তা’র ধরা তিনি পাননি। ধন-সম্পদ বা চরম সন্যাসজীবন কোনোটাই তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। একসময় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, একজন জ্ঞানী ব্যক্তি কখনোই জীবনের আনন্দকে উপেক্ষা করেন না। জ্ঞানীরা জীবনের সকল আনন্দ উপভোগ করে বাঁচেন। তবে, একটা বিষয়ে সর্বদা সচেতন থাকা উচিৎ— কেউ যেন কখনো ধন-সম্পদের দাসত্বে পরিণত না-হয়।
তিনি সিটিয়ামের জেনো সিনিকদের সাথে তাঁর পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। একসময় সিনিকরাও সমস্ত পার্থিব আনন্দকে পিছনে ফেলে তপস্বী বা সন্যাসজীবন বেছে নিয়েছিলেন। তারা রাস্তায় বাস করতো। তাদের একমাত্র সম্বল ছিল তাদের পিঠের ঝুলিতে থাকা বস্ত্র, আর কিছুই না।
এই সিনিসিজম জীবনধারা তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তাই তিনি জেনো’র মতবাদ বা বৈরাগ্যদর্শন লাভ করার সিদ্ধান্ত নেন। এই দর্শনের মৌলিকতা হলো— যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি রিপুর তাড়নার উপর কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত জীবনের আনন্দ উপভোগ করায় কোনো বাধা বা ভুল নেই। যেমন: আপনি হয়তো জীবনের আনন্দ প্রতিনিয়ত উপভোগ করে যাচ্ছেন। তবে একদিন আপনার আনন্দ লাভের সক্ষমতা ফুরিয়ে আসবে। এটা সত্য, সবকিছুই একদিন ফুরিয়ে যায়। তাই এ জন্য আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
সিনিসিজমের মতো বৈরাগ্যদর্শনের আসল উদ্দেশ্য আমাদের জীবন থেকে সমস্ত অনুভূতি ও আনন্দ দূর করা নয়। তবে এই দর্শন অবশ্যই নেতিবাচক আবেগগুলো থেকে আমাদেরকে মুক্ত করার জন্য কাজ করে।
শুরু থেকেই বৌদ্ধধর্ম ও বৈরাগ্যদর্শন উভয়েরই অন্যতম উদ্দেশ্য হলো— আমাদের আনন্দ, আবেগ ও আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করা। এই দর্শন দু’টির মাঝে যদিও যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে, তবুও একটা বিষয়ে বেশ সাধারণ মিল রয়েছে। মিলটা হলো— উভয়েরই লক্ষ্য আমাদের অহং ও নেতিবাচক আবেগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা, এবং উভয়ের মূলেই রয়েছে সুস্থ জীবনধারা অনুশীলনের পদ্ধতি।
বৈরাগ্যদর্শন মতে, আমাদের আনন্দ ও আকাঙ্ক্ষা উপভোগ করায় কোনো সমস্যা নেই। যতক্ষণ না পর্যন্ত আনন্দ ও আকাঙ্ক্ষা আমাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এসব উপভোগ করতে পারি। বৈরাগ্যবাদীদের মতে— যারা আবেগ নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হন, তারা সবসময় সদাচারী হিসেবে পরিগণিত হন।
বই: ইকিগাই
অনুবাদ: আখতার উজ্জামান সুমন