মাসিক আল-মুসলিম The Monthly Al-Muslim

  • Home
  • মাসিক আল-মুসলিম The Monthly Al-Muslim

মাসিক আল-মুসলিম The Monthly Al-Muslim "আল মুসলিম" নতুন প্রজন্মে ইসলামী চেতনার বিকাশ

20/03/2025

ইতিকাফ:
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আজীবন এই আমল করে গেছেন এবং তাঁর উম্মতকে তা পালনের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। ইতিকাফের মাধ্যমে মুমিন বান্দা দুনিয়ার ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করেন, আত্মশুদ্ধি অর্জন করেন এবং আল্লাহর রহমত লাভের আশায় দিন-রাত কাটান। আসুন, ইতিকাফ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই — ইতিহাস, ফজিলত, মাসায়েল ও দিকনির্দেশনা।
ইতিকাফের সংজ্ঞা ও তাৎপর্য:
শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময় মসজিদে অবস্থান করে নিজেকে ইবাদতে নিয়োজিত রাখাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফের মূল লক্ষ্য হলো — দুনিয়ার সব ব্যস্ততা থেকে নিজেকে দূরে রেখে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা, আত্মশুদ্ধি করা এবং ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা।
কুরআনে এসেছে:
وَعَهِدْنَا إِلَىٰ إِبْرَٰهِيمَ وَإِسْمَٰعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلْعَٰكِفِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ
“আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।” (সূরা আল-বাকারা: ১২৫)
ইতিকাফের ইতিহাস:
ইতিকাফ একটি প্রাচীন ইবাদত। নবী ইবরাহিম (আ.)-এর যুগ থেকে কাবা শরিফে ইতিকাফের প্রথা ছিল। পরবর্তী সময়ে সকল নবীর উম্মতদের মধ্যেও এটি প্রচলিত ছিল। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর থেকে নিয়মিতভাবে ইতিকাফ পালন করতেন।
হাদিসে এসেছে:
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الْأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ
“আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: নবী করিম (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।” (বুখারি: ২০২৬)
ইতিকাফের উদ্দেশ্য ও ফজিলত:
১. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
২. ইবাদতের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি করা।
৩. লাইলাতুল কদরের সন্ধান করা।
৪. কিয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় স্থান পাওয়ার আশায় নিজের আমল শুদ্ধ করা।
রাসুল (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন ইতিকাফ করে, আল্লাহ তার ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দকের দূরত্ব তৈরি করে দেন।” (বায়হাকী)
ইতিকাফের প্রকারভেদ:
১. ওয়াজিব ইতিকাফ:
• কোনো মানত করলে তা পালন করা ওয়াজিব। যেমন: কেউ মানত করল, “আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতিকাফ করব।”
২. সুন্নতে মুআক্কাদা:
• রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুআক্কাদা আলাল কিফায়া। অর্থাৎ সমাজে কেউ না করলে সবাই গুনাহগার হবে।
৩. নফল ইতিকাফ:
• যেকোনো সময় মসজিদে ইবাদতের নিয়তে অবস্থান করা নফল ইতিকাফ।
ইতিকাফের শর্ত:
১. মুসলমান হওয়া।
২. নাপাক অবস্থা (জুনুব, হায়েজ, নিফাস) থেকে পবিত্র থাকা।
৩. নিয়ত করা।
৪. পুরুষদের জন্য মসজিদে অবস্থান করা।
৫. নারীদের জন্য ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা।
ইতিকাফে করণীয় আমল:
১. কুরআন তিলাওয়াত।
২. নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ আদায়।
৩. জিকির-আজকার ও দোয়া।
৪. রাসুল (সা.)-এর জীবনী ও ইসলামি গ্রন্থ অধ্যয়ন।
৫. নিজের গুনাহের জন্য তওবা করা।
ইতিকাফে দুনিয়াবি কাজকর্ম:
১. প্রয়োজনীয় কথা বলা: প্রয়োজন হলে সংক্ষেপে কথা বলা যায়।
২. মোবাইল ব্যবহার: কুরআন তিলাওয়াত, ইসলামি লেকচার শোনা বা দরকারি যোগাযোগের জন্য মোবাইল ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. জরুরি কাজ: প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ, ওযু, গোসল, টয়লেটে যাওয়ার জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ।
৪. বিনা কারণে মসজিদ থেকে বের হওয়া, মোবাইলে সময় নষ্ট করা, গেম খেলা বা অপ্রয়োজনীয় কাজ করা ইতিকাফের উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।
ইতিকাফ ভঙ্গের কারণ:
১. বিনা প্রয়োজনে মসজিদ ছেড়ে বাইরে যাওয়া।
২. স্ত্রী সহবাস করা বা এমন কাজ করা যাতে কামনা উদ্রেক হয়।
৩. নাপাক হওয়া (হায়েজ, নিফাস, বীর্যপাত)।
৪. ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিকাফ ভঙ্গের নিয়ত করা।
কাফফারা: ইতিকাফ ভেঙে গেলে পূর্ণ একদিন ইতিকাফ কাজা করতে হবে।
নারীদের ইতিকাফ:
• নারীরা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে ইতিকাফ করবেন, যা তাদের নামাজের স্থান বা ইবাদতের জন্য নির্ধারিত কক্ষ।
• নারীদের জন্যও নিয়ত ও পাক-পবিত্রতা আবশ্যক।
ইতিকাফ হলো এমন একটি ইবাদত, যেখানে মানুষ দুনিয়ার ব্যস্ততা থেকে নিজেকে মুক্ত করে আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করে। এটি আত্মশুদ্ধির এক উত্তম মাধ্যম এবং লাইলাতুল কদরের সন্ধান লাভের এক বিরল সুযোগ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইতিকাফের তাওফিক দান করুন এবং আমাদের আমল কবুল করুন। আমিন।

যাকাত: ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধানআলহাজ্ব মুফতি ছালেহ আহমদ ফরিদ (দাঃবাঃ)ভূমিকা:ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি হলো ...
12/03/2025

যাকাত: ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান

আলহাজ্ব মুফতি ছালেহ আহমদ ফরিদ (দাঃবাঃ)

ভূমিকা:

ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি হলো যাকাত। এটি সমাজে সম্পদের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং গরিব ও অসহায়দের আর্থিক নিরাপত্তা দেয়। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন:

> وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ
“তোমরা সালাত কায়েম করো এবং যাকাত আদায় করো।” (সূরা বাকারা: ৪৩)

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন:

> بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ... وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ...
“ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত: (১) কালেমা পাঠ করা, (২) নামাজ কায়েম করা, (৩) যাকাত আদায় করা...” (বুখারি, হাদিস: ৮)

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত:

যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে:

১. মুসলিম হওয়া:

অমুসলিমের ওপর যাকাত ফরজ নয়।

২. বালেগ ও জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া:

নাবালেগ শিশু বা মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরজ নয়।

৩. নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া:

নিসাব হলো সর্বনিম্ন সম্পদ, যার মালিক হলে যাকাত ফরজ হয়।

৪. এক বছর পূর্ণ হওয়া:

নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর মালিকানায় থাকলে যাকাত ফরজ হয়।

৫. ঋণমুক্ত হওয়া:

যদি কারও ঋণ এত বেশি থাকে যে নিসাব পরিমাণ সম্পদও না থাকে, তবে তার ওপর যাকাত ফরজ নয়।

যাকাতযোগ্য সম্পদ:

নিম্নে যেসব সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ, তা ব্যাখ্যা করা হলো:

১. নগদ টাকা ও সঞ্চয়:

নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা, বিকাশ-নগদে রাখা টাকা — সবকিছুর ওপর যাকাত ফরজ।

উদাহরণ: কারও কাছে ১ লাখ টাকা এক বছর ধরে আছে, তার ওপর ২.৫% হারে ২,৫০০ টাকা যাকাত দিতে হবে।

২. সোনা ও রূপা:

ইসলামে সোনা ও রূপার ওপর বিশেষভাবে যাকাত ফরজ হয়েছে।

সোনার নিসাব: সাড়ে সাত ভরি (৮৭.৪৮ গ্রাম)।

রূপার নিসাব: সাড়ে বায়ান্ন ভরি (৬১২.৩৬ গ্রাম)।

উদাহরণ: কারও কাছে ১০ ভরি সোনা থাকলে, তার বাজারমূল্য হিসাব করে ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।

৩. ব্যবসার মাল:

ব্যবসার জন্য রাখা সব পণ্য ও মালিকানাধীন সম্পদের ওপর যাকাত ফরজ।

বছরের শেষে সেই মালের বাজারমূল্য হিসাব করে ২.৫% হারে যাকাত দিতে হবে।

উদাহরণ: কারও দোকানে ৫ লাখ টাকার মাল আছে, তার ওপর ২.৫% হিসাবে ১২,৫০০ টাকা যাকাত ফরজ।

৪. বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখা সম্পত্তি:

যদি কারও কাছে এমন জমি বা সম্পত্তি থাকে যা বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছে, তবে তার বাজারমূল্যের ওপর যাকাত ফরজ।

উদাহরণ: কারও কাছে ২০ লাখ টাকার একটি জমি আছে, তাহলে তার ওপর ৫০,০০০ টাকা যাকাত দিতে হবে।

৫. পাওনা টাকা:

যদি কারও কাছে টাকা ধার দেওয়া হয় এবং তা ফেরত পাওয়ার আশা থাকে, তবে সেই পাওনা টাকার ওপর যাকাত ফরজ।

টাকা ফেরত পাওয়ার পর পেছনের বছরগুলোর জন্যও একবারে যাকাত দিয়ে দিতে হবে।

উদাহরণ: আপনি কারও কাছে ২ লাখ টাকা ধার দিয়েছেন, এবং এক বছর পরে সেটি ফেরত পেলেন, তাহলে সেই ২ লাখ টাকার ওপর ৫,০০০ টাকা যাকাত দিতে হবে।

৬. গবাদি পশু:

গরু, ছাগল, ভেড়া বা উটের ওপরও যাকাত ফরজ। তবে এগুলোর নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে:

গরু: ৩০টি হলে ১টি গরু যাকাত দিতে হবে।

ছাগল: ৪০টি হলে ১টি ছাগল দিতে হবে।

তবে এগুলো যদি ব্যবসার জন্য না রেখে নিজের প্রয়োজনে পালন করা হয়, তবে যাকাত নেই।

৭. খনিজ সম্পদ ও কৃষিজ ফসল:

জমি থেকে উৎপাদিত ফসলের ওপরও যাকাত ফরজ, যাকে উশর বলা হয়।

বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক পানি দিয়ে উৎপাদিত ফসলের ওপর ১০% উশর ফরজ।

সেচ দেওয়া পানি ব্যবহার করলে ৫% উশর দিতে হয়।

যাকাত নেই যেসব সম্পদের ওপর:

১. নিজের ব্যবহারের বাড়ি ও গাড়ি।
২. নিজের জীবিকা নির্বাহের জন্য রাখা জমি।
৩. ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি।
৪. নিজের ব্যবহারের সোনা ও রূপা (হানাফি মতে)।

যাকাত আদায়ের হার:

নগদ টাকা, সোনা-রূপা ও ব্যবসার পণ্যের ওপর ২.৫% হারে যাকাত দিতে হয়।

কৃষি উৎপাদনে ১০% (বৃষ্টি পানি) এবং ৫% (সেচের পানি) হারে যাকাত দিতে হয়।

যাকাতের উপকারিতা:

যাকাত আদায় করলে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য তৈরি হয় এবং গরিবরা উপকৃত হয়। এর মাধ্যমে:

১. গরিব ও অভাবীদের সাহায্য হয়।
২. সম্পদে বরকত হয়।
৩. আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে।
৪. সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য তৈরি হয়।

যাকাত শুধু দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার নয়, এটি মুসলমানদের জন্য এক আত্মিক পরিশুদ্ধি। ধনীদের জন্য এটি দায়িত্ব এবং গরিবদের জন্য অধিকার। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে যাকাত আদায়ের তাওফিক দান করুন, আমিন।

08/03/2025

দুনিয়ার মোহ

একদিন ছেলে তার বাবার কাছে এসে বলল,
— আব্বু, আমি বিয়ে করতে চাই। একজনকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।

বাবা বললেন,
— কোথায়? চলো দেখি। সব ঠিক থাকলে আমার কোনো আপত্তি নেই।

বাবা ছেলের সঙ্গে গিয়ে মেয়েটিকে দেখলেন। মেয়েটির সৌন্দর্য, আচরণ, গুণাবলি দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ছেলেকে বললেন,
— দেখ, তুমি এই মেয়ের যোগ্য নও। এই মেয়ের মতো একজন রত্নকে পাওয়ার জন্য অভিজ্ঞ, বিচক্ষণ, এবং প্রতিষ্ঠিত একজন পুরুষ দরকার। আমার মতে, সে ব্যক্তি আমিই হতে পারি।

বাবার এমন কথা শুনে ছেলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। বাবা-ছেলের মধ্যে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। তারা কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারছিল না, তাই স্থানীয় বিচারকের কাছে গেলেন।

বিচারক ধৈর্যসহকারে তাদের কথা শুনলেন, মেয়েটিকে দেখলেন, তারপর বললেন,
— আমি যা বুঝলাম, তোমাদের দুজনের কেউই এই মেয়ের যোগ্য নও। এমন সুন্দরী এবং গুণবতী মেয়ের জন্য আমার মতো একজন সম্মানিত ও অভিজ্ঞ বিচারকই উপযুক্ত বর।

এ নিয়ে আবার তর্ক-বিতর্ক শুরু হলো। এবার বিচারকসহ সবাই দেশের প্রধানের কাছে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আবেদন জানালেন।

রাজা নিজে মেয়েটিকে দেখলেন। তার চোখ বিস্ময়ে চকচক করে উঠল। গম্ভীর কণ্ঠে হুকুম দিলেন,
— খামোশ! এত কথা বলার দরকার নেই। এই মেয়েকে রাজপ্রাসাদ ছাড়া আর কোথাও মানাবে না। আমিই হবো এর যোগ্য স্বামী!

সবাই হতভম্ব হয়ে গেল। যখন পরিস্থিতি চরমে পৌঁছাল, তখন মেয়েটি প্রথমবারের মতো মুখ খুলল।

— আমার কাছে এই সমস্যার সহজ সমাধান আছে। আমি দৌড় দেবো, আর যে আমাকে আগে ধরতে পারবে, তার সঙ্গেই আমার বিয়ে হবে।

মেয়েটি বিদ্যুত্গতি দৌড় দিল। তার পেছনে বাবা, ছেলে, বিচারক, রাজা— সবাই উন্মত্তের মতো দৌড়াতে লাগল। কেউ কাউকে ছাড়তে রাজি নয়।

কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ সবাই একসঙ্গে হুড়মুড় করে অতল গহ্বরে পড়ে গেল। মেয়েটি থেমে গিয়ে গর্তের কিনারায় দাঁড়াল, তারপর শান্ত কণ্ঠে বলল,

— তোমরা কি জানো, আমি আসলে কে?

— আমি দুনিয়া।

— আমার পেছনে ছুটতে ছুটতে পৃথিবীর সবাই নিজের দ্বীনকে ভুলে যায়। আমাকে পাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় নেমে তারা সব কিছু হারায়, তবু আমাকে পায় না। শেষ পর্যন্ত একদিন কবরে চলে যায়, আমাকে না পেয়েই...

পাঠপ্রসঙ্গ:

এই গল্প আমাদের জীবনের গভীরতম বাস্তবতা তুলে ধরে। দুনিয়ার মোহ, ধন-সম্পদের লোভ, খ্যাতির প্রতিযোগিতা—এসবের পেছনে ছুটতে ছুটতে মানুষ একসময় মৃত্যুর গভীর গহ্বরে হারিয়ে যায়। কিন্তু সত্য হলো, দুনিয়া কারও হয় না, এবং দুনিয়া কাউকে চিরকাল রাখেও না।

22/09/2024

মাওলানা শুয়াইব আহমদ আশরাফী বিষয় সূরা আল কাউসার এর আলোচনা।

22/09/2024

শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী হুজুরে একটি ওয়াজ

15/06/2024

আশরায়ে যিলহজ্ব ও আইয়ামে তাশরীক : তাওহীদের উচ্চারণে পরিশুদ্ধ হোক আমাদের জীবন

মুহাম্মাদ ত্বহা হোসাইন

সময়ের প্রতিটি অংশই মূল্যবান। কোনো অংশই অবহেলা করার মতো নয়। সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর দ্বারাই সফলতা অর্জন করা সম্ভব। এটা যেমন পার্থিব ক্ষেত্রে সত্য তেমনি সত্য আখিরাতের ক্ষেত্রেও। তাই জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত অত্যন- মূল্যবান। তবে আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি বান্দার ফায়েদার জন্য কিছু সময়কে বিশেষ মর্যাদা দান করেছেন। তাই কিছু সময়, কিছু দিন এমন রয়েছে, যা অন্য সময়ের চেয়ে অধিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও মহিমাময়। আসন্ন ‘আশরায়ে যিলহজ্ব’ ও ‘আইয়ামে তাশরীক’ অর্থাৎ যিলহজ্বের প্রথম তেরটি দিন এমনি মহিমান্বিত ও অর্জনের মৌসুম।

‘আশরায়ে যিলহজ্ব’ বছরের শ্রেষ্ঠ দশক

যিলহজ্বের প্রথম দশককে পরিভাষায় ‘আশরায়ে যিলহজ্ব’ বলে। এই দশ দিন হচ্ছে বছরের সর্বোত্তম দশ দিন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে এই দশকের রজনীগুলোর শপথ করে বলেছেন, (তরজমা) ভোর বেলার কসম আর কসম দশ রাত্রির।-সূরা ফজর : ১-২ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রা. ও মুজাহিদ রাহ.সহ অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও মুফাসসিরের মতে এখানে দশ রাত্রি দ্বারা আশরায়ে যিলহজ্বই উদ্দেশ্য।

হাফেয ইবনে কাসীর রাহ. বলেন, এটিই বিশুদ্ধ মত।-তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৫৩৫-৫৩৬

তাই অনেক ওলামায়ে কেরামের মতে পুরো বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ ‘দশক’ হল আশরায়ে যিলহজ্ব। রমযানের শেষ দশকের চেয়েও যার ফযীলত ও গুরুত্ব বেশি। কেননা যিলহজ্বের এই প্রথম দশকে এমন দু’টি ইবাদত রয়েছে যা পুরো বছরের অন্য কোনো সময় আদায় করা সম্ভব নয়। এমনকি রমযানেও নয়। এই দু’টি ইবাদতের জন্য আল্লাহ তাআলা আশরায়ে যিলহজ্বকেই নির্বাচন করেছেন। এই দু’টি ইবাদতের একটি হল হজ্ব, আর দ্বিতীয়টি কুরবানী। কুরবানী যদিও ১১ ও ১২ যিলহজ্বেও দেওয়া যায়, কিন্তু বছরের অন্য কোনোদিন এই ওয়াজিব কুরবানী সম্ভব নয়। এই ক্ষেত্রে রমযানের শেষ দশকের চেয়ে আশরায়ে যিলহজ্বের হজ্ব ও কুরবানীর রয়েছে বাড়তি ফযীলত। আবার অনেক ওলামায়ে কেরামের মতে রমযানের শেষ দশকই উত্তম। কারণ তাতে রয়েছে হাজার মাসের চাইতে উত্তম লাইলাতুল কদরের মতো মহিমান্বিত রজনী। ওলামায়ে কেরামের এই দু’টি মতের সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে অনেক মুহাক্কিক আলেম বলেছেন, আশরায়ে যিলহজ্বের দিন ও রমযানের শেষ দশকের রাত্রি উত্তম। এভাবে উভয় দলীলের মাঝে সমন্বয় করা যেতে পারে।-তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/২৩৯; ইসলাহী খুতবাত ২/১২২-১২৪; লাতায়িফুল মাআরিফ ২৯৫-২৯৬

যাই হোক, রমযানের পরে আশরায়ে যিলহজ্বের চেয়ে শ্রেষ্ঠতম কোনো দিন নেই-এটা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় এবং এতে সকলেই একমত। হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত একটি সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (তরজমা)‘আশরায়ে যিলহজ্বের দিনের চেয়ে কোনো দিনই আল্লাহর নিকট উত্তম নয়।’-সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস ৩৮৫৩ আর যিলহজ্বের প্রথম দশকের মধ্যে শেষ দু’দিন নবম তারিখ ও দশম তারিখ হল পুরো বছরের সর্বোৎকৃষ্ট দিন। যাকে হাদীসের ভাষায় ইয়াওমে আরাফা ও ইয়াওমে নাহর বলা হয়। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস : ৩৮৫৩; মুসনাদে আহমদ ৪/৩৫০ হাদীস : ১৯০৭৫

আশরায়ে যিলহজ্বের সর্বোৎকৃষ্ট আমল

কুরআন-সুন্নাহে আশরায়ে যিলহজ্বের এই আলাদা গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্যের দরুণ এ দশটি দিন হল অর্জনের ভরপুর মৌসুম। এই দিনগুলোতে করা ইবাদত-বন্দেগী আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়।

হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-(তরজমা) আশরায়ে যিলহজ্বের নেক আমলের চেয়ে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় অন্য কোনো দিন (এর কোনো আমল) নেই।’ -সহীহ বুখারী হাদীস : ৯৬৯; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৯৬৮ এই হাদীস দ্বারা স্পষ্ট বোঝা যায়, আশরায়ে যিলহজ্বের যে কোনো নেক আমলের চাইতে উত্তম কোনো আমল হতে পারে না। যেহেতু সাহাবায়ে কেরাম জানতেন যে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের চেয়ে উত্তম কোনো আমল নেই তাই আশরায়ে যিলহজ্বের আমলের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা শোনার পর তারা আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘জিহাদও কি এই দশ দিনের আমলের চেয়ে উত্তম নয়?’ নবীজী জবাব দিলেন, না। জিহাদও উত্তম নয়। তবে হ্যাঁ, সেই ব্যক্তির জিহাদ এই দশদিনের আমলের চেয়ে উত্তম হতে পারে যে স্বীয় জান-মাল নিয়ে আল্লাহর রাস-ায় জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হল। অতঃপর জিহাদের ময়দানে জান-মাল সবকিছু বিসর্জন করে দিয়ে কিছু নিয়েই ঘরে ফিরে এল না।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৯৬৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪৩৮; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৭৫৮; ফাতহুল বারী ২/৫৩১-৫৩২

এর দ্বারা স্পষ্ট বোঝা গেল যে, এই দশ দিনে করা যে কোনো নেক আমল সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বোত্তম আমল। পুণ্য অর্জনের এর চেয়ে উপযোগী সময় আর কী হতে পারে? এখন প্রশ্ন হল, মুমিনরা কী কী আমল দ্বারা এই দশ দিনকে জীবন- ও প্রণবন- করে তুলতে পারে?

আশরায়ে যিলহজ্বের আমল

আমরা আগেই বলেছি এবং হাদীসের দ্বারা বুঝা যায় যে, এই দশ দিনের যে কোনো আমল চাই নফল নামায-রোযা হোক বা যিকির-তাহাজ্জুদ, তা আল্লাহর নিকট খুবই প্রিয় ও অতি পছন্দনীয়। তাই যে কোনো নফল ইবাদত যেমন নামায-রোযা, যিকির-তাহাজ্জুদ, দান-খয়রাত ইত্যাদি এই দশ দিনে করা হলে তার ফযীলত ও মর্যাাদা বছরের অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া যাবে। তাই এই ক’দিন সাধ্যমতো নফল ইবাদতের প্রতিও মনোযোগী হওয়া উচিত। এছাড়া বিভিন্ন হাদীসে এই দশ দিনের বিশেষ কিছু আমলের কথাও বলা হয়েছে। যেমন-

ক) যিলহজ্বের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানী করার আগ পর্যন্ত- স্বীয় নখ ও চুল না কাটা। এটি মুস্তাহাব।

হযরত উম্মে সালমা রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা যদি যিলহজ্বের চাঁদ দেখতে পাও আর তোমাদের কেউ যদি কুরবানী করার ইচ্ছা করে থাকে তবে সে যেন স্বীয় চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৯৭৭; মুসনাদে আহমদ ৬/২৮৯

আল্লাহ তাআলা এই দিনগুলোতে হজ্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত একটি ইবাদত মুসলমানের উপর ফরয করেছেন। সামর্থ্যবান ‘আশিকে রব’ এই দিনে ইহরামের শুভ্র লেবাস পরিধান করে যখন বাইতুল্লাহ অভিমুখী হয় তখন তার উপর বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপিত হয়। তন্মধ্যে চুল ও নখ কাটতে না পারাও একটি। কিন' বাইতুল্লাহর যিয়ারতের সৌভাগ্য যারা অর্জন করতে পারেনি, পারেনি কাবার কালো গিলাফের ছায়ার কাছে যেতে, পৃথিবীর দূর-দূরানে- ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব ‘অভাগা’ মুমিনদের প্রতিও আল্লাহর রহমত ও মেহেরবানীকে আকৃষ্ট করতে আদেশ করা হয়েছে যে, তোমরা ‘ভাগ্যবান’ হাজ্বীদের সাদৃশ্য অবলম্বন কর। তোমরাও নখ-চুল কেটো না। আল্লাহর রহমতের বারিধারা তোমাদেরও স্নাত করে তুলতে পারে।-ইসলাহী খুতবাত ২/১২৪-১২৫

খ) আশরায়ে যিলহজ্বের দ্বিতীয় বিশেষ আমলটি হল, ঈদুল আযহার দিন ব্যতীত প্রথম নয় দিন রোযা রাখা। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনগুলোতে রোযা রাখতেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪৩৭; মুসনাদে আহমদ ৬/২৮৭, হাদীস : ২৫৯২০; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২৪১৬; মাআরিফুস সুনান ৫/৪১-৪৪

অন্য দুটি যয়ীফ বর্ণনায় এসেছে যে, এই দিনগুলোর একেকটি রোযায় রয়েছে এক বছরের রোযার সমান ছওয়াব।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৭৫৮; বায়হাকী-শুআবুল ঈমান ৩/৩৫৬ হাদীস : ৩৭৫৮; তারগীব হাদীস : ১৭৩১; আত তা’রীফ ৫/৫১৫-৫১৭ হাদীস : ৮৩৫

গ) এই নয়দিনের রোযার মধ্যে নবম তারিখ বা আরাফার দিনের রোযা সর্বাধিক ফযীলতপূর্ণ। অতএব পুরো নয়টি রোযা রাখতে না পারলে এই একটি রোযা থেকে কারো বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়। সহীহ হাদীসে হযরত আবু কাতাদা রা. হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আরাফার দিন অর্থাৎ নবম তারিখের রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশাবাদী যে, তিনি এর দ্বারা বিগত এক বছর ও আগামী এক বছরের গুনাহ মিটিয়ে দেবেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৬২; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৭৪৯

তবে মনে রাখা উচিত, অনেক ওলামায়ে কেরামের মতে হাজীদের জন্য এই দিনে আরাফার ময়দানে ওকূফ ও মুজাহাদার শক্তি অর্জনের নিমিত্তে রোযা না রাখা উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশেদীন হজ্বের মধ্যে এই দিনের রোযা রাখতেন না।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১২৩, ১১২৪; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৭৫০-৭৫১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪১৯; মাআরিফুস সুনান ৫/৪৩০-৪৩১

যিকর ও তাকবীর প্রসঙ্গ

আশরায়ে যিলহজ্বের পরবর্তী তিন দিন অর্থাৎ এগার, বার ও তের তারিখকে পরিভাষায় ‘আইয়ামে তাশরীক’ বলে। আশরায়ে যিলহজ্বের দশ দিন ও আইয়ামে তাশরীকের তিনদিন সর্বমোট যিলহজ্বের এই প্রথম তের দিনের একটি আমল রয়েছে। তা হচ্ছে বেশি বেশি আল্লাহর যিকির ও তাকবীর পাঠ। আল্লাহ তাআলার যিকির এবং তাওহীদের চেতনায় সর্বদা উজ্জীবিত থাকা এবং শিরকের পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত তাওহীদের শিক্ষায় উদ্ভাসিত ঈমানী যিন্দেগী গঠনের লক্ষ্যে সম্ভব সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত করা প্রত্যেক মুমিনের সার্বক্ষণিক কর্তব্য। কারণ দ্বীন-ধর্ম ও আমল আখলাক সবকিছুর মূল হল, নির্ভেজাল তাওহীদ। আল্লাহর একত্ব ও মহত্বের উপর সকল মুমিনের বিশ্বাস হতে হবে সুদৃঢ় ও মজবুত। এই বিশ্বাসে খুঁত থাকলে পর্বতসম আমলেরও কোনো মূল্য নেই। তাইতো মুমিনের দিলে তাওহীদের শিক্ষাকে আরো মজবুত আরো শাণিত করতেই এই দিনগুলোতে অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করতে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। শ্রদ্ধা, ভক্তি ও বিশ্বাসের সবটুকু মিশিয়ে মুমিন বলবে আল্লাহু আকবার, ওয়াহদাকা লা-শারীকা লাকা।

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন- (তরজমা) তোমরা কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনে আল্লাহকে (বেশি বেশি) স্মরণ কর।-সূরা বাকারা : ২০৩

অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন- (তরজমা) ‘যাতে তারা নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে।’-সূরা হজ্ব : ২৮

এই আয়াতে নির্দিষ্ট দিনগুলির দ্বারা প্রায় সকলের মতে আশরায়ে যিলহজ্ব ও আইয়ামে তাশরীকের এই তেরটি দিনই উদ্দেশ্য। বিশেষ করে এই দিনগুলোতে আল্লাহর যিকিরের প্রতি আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কারণ সম্পর্কে আল্লামা খাত্তাবী রাহ. বলেন, জাহেলী যুগের লোকেরা যুগ যুগ ধরে তাদের কথিত প্রভুদের নামে পশু-প্রাণী উৎসর্গ করত। এর প্রতি উত্তরে মুমিনদের প্রতি আদেশ করা হয়েছে তারা যেন আল্লাহর যিকির ও তাকবীরের মাধ্যমে তাওহীদ ও আনুগত্যের ঘোষণা দান করে। আল্লাহই একমাত্র ইলাহ। তাঁর কোনো শরীক নেই। তিনি ছাড়া কারো নামে প্রাণী উৎসর্গ করা যাবে না। কারণ তা সুস্পষ্ট শিরক।-ফাতহুল বারী ২/৫৩৫

সাহাবায়ে কেরাম এই দিনগুলোতে সর্বদা আল্লাহু আকবারের ধ্বনি তুলতেন। হযরত ইবনে উমর রা. ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বাজারে গিয়ে তাকবীরের আওয়াজ তুলতেন। শুনে শুনে লোকেরাও তাদের সাথে তাকবীরের সুর তুলত। ইবনে ওমর রা. পথে-ঘাটে, হাঁটা-বসায়, বাজারে-ঘরে এবং নামাযের পরে শুধুই তাকবীর বলতে থাকতেন। মিনার দিনগুলোতো তার তাকবীরের সাথে সমস্বরে মানুষের তাকবীরে মিনার পুরো অঙ্গন মুখরিত হয়ে উঠত। মহিলারাও (নিচু স্বরে) তাকবীর বলতে থাকতেন।-বুখারী-ফাতহুল বারী ২/৫৩০-৫৩৬

সার্বক্ষণিক যিকির ও তাকবীরের আমল ছাড়াও এই তের দিনের প্রায় প্রতিটি ইবাদত ও আমলের সাথে যিকির ও তাকবীরকে এমনভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে যেন সব আমল-ইবাদতের মূল কথা হল যিকরুল্লাহ, তাকবীর ও তাওহীদ। বাস-বেও তাই। এজন্য সকল ইবাদতের পরতে পরতে রয়েছে তাওহীদে খালেসের উপসি'তি। তবে যে কোনো ধরনের যিকির এই সময়গুলোর সার্বক্ষণিক ওযীফা হলেও ক্ষেত্র বিশেষে এর ধরন ও নিয়ম রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন। যেমন-

১। হাজীরা হজ্বের ইহরাম বাঁধার সময় হতে সার্বক্ষণিক জপবেন তালবিয়া ধ্বনি-লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারীকা লাকা লাব্বাইক ...।

২। আশরায়ে যিলহজ্বের শুরু হতে বেশি বেশি যিকিরের যে আদেশ কুরআনে এসেছে এ ব্যাপারে হযরত ইবনে ওমর রা. হতে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নিকট আমলের দিক থেকে আশরায়ে যিলহজ্ব হতে শ্রেষ্ঠ ও অধিক প্রিয় কোনো দিন নেই। অতএব তোমরা এতে তাহলীল, তাকবীর, তাহমীদ ও তাসবীহ বেশি বেশি করো।-মুসনাদে আহমদ ২/৭৫ হাদীস : ৫৪৪৬; তাবারানী মুজামে কাবীর, হাদীস : ১১১১৬

তাসবীহ, তাহমীদ, তাহলীল ও তাকবীর এক সাথে আদায় করতে বলা যায়-সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ এই দিনগুলোতে এ ওযীফা বেশি বেশি জপা যায়।

৩। কুরবানীর পশু জবাইয়ের সময়ও বলতে হবে : বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার।

৪। হাজীরা জামরায় কংকর নিক্ষেপের সময় দরাজ কণ্ঠে বলবেন : আল্লাহু আকবার।

৫। এই দিনগুলোর মধ্যে আরেকটি অবশ্য করণীয় আমল হল, তাকবীরে তাশরীকের আমল। এই সম্পর্কে একটু বিস্তারিত আলোকপাত করা হল।

কবীরে তাশরীক সংক্রান্ত কয়েকটি মাসআলা

১। প্রত্যেক মুসল্লীর জন্য যিলহজ্বের নয় তারিখের ফজর হতে তের তারিখের আসর পর্যন- প্রত্যেক ফরয নামায আদায় করে সালাম ফিরানোর সাথে সাথে উচ্চস্বরে একবার তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব।-সূরা বাকারা : ২০৩; মুসতাদরাকে হাকেম ১/২৯৯হাদীস : ১১৫২-১১৫৭; ইবনে আবী শায়বা ৪/১৯৫ হাদীস : ৫৬৭৭, ৫৬৭৮, ৫৬৯২; সুনানে দারাকুতনী ২/৪৯-৫০ হাদীস : ২৫-২৯; ইলাউস সুনান ৮/১৪৮-১৬২, আদ্দুররুল মুখতার ৩/১৭৭-১৭৮

২। তাকবীরে তাশরীকের জন্য বিভিন্ন শব্দ হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বজন বিদিত শব্দ হল- -তাবারানী মুজামে কাবীর হাদীস : ৯৫৩৮; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদীস : ৫৬৭৯, ৫৬৯৬, ৫৬৯৭, ৫৬৯৯; ইলাউস সুনান ৮/১৫৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৫৮

৩। ইমাম আবু হানীফার রাহ-এর মতে একাকী নামায আদায়কারী ও মুসাফির ব্যক্তি এবং মহিলাদের উপর তাকবীরে তাশরীক যদিও ওয়াজিব নয়, কিন' সাহেবাইনের মতে তাদের উপরও তাকবীর বলা ওয়াজিব। এক্ষেত্রে সাহেবাইনের কথার উপরই ফতওয়া।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৪/২৪০-২৪১, ২৫১; ইলাউস সুনান ৮/১৫৯; রদ্দুল মুহতার ২/১৮০; ইমদাদুল আহকাম ১/৭৬৩-৭৬৫, ৭৭৯-৭৮০

৪। সুন্নত, নফল, বিতর নামাযের পর তাকবীর ওয়াজিব নয়।-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৬২; মাবসূত সারাখসী ২/৪৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২

৫। উচ্চস্বরে একবারই তাকবীর বলা ওয়াজিব।-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; রদ্দুর মুহতার ২/১৭৮

৬। কোনো সময় সকলেই বা কেউ কেউ তাকবীর বলতে ভুলে গিয়ে মসজিদ থেকে বের না হয়ে গেলে তাকবীর আদায় করে নিবে। আর যদি মসজিদ থেকে বের হয়ে যায় তাহলে এই ওয়াজিব ছুটে যাবে। এই ওয়াজিবের কোনো কাযা নেই এবং ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার কারণে ঐ ব্যক্তি গুনাহগার হবে।-মাবসূত সারাখসী ২/৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫০৯-৫১১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৬০-৪৬১; রদ্দুল মুহতার ২/১৮১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৬

৭। আইয়ামে তাশরীকের কোনো নামায কাযা হয়ে গেলে ঐ দিনগুলোর মধ্যে তার কাযা আদায় করলে তাকবীর বলা ওয়াজিব। কিন' এই কাযা পরবর্তী অন্য সময় আদায় করলে বা আইয়ামে তাশরীকের আগের কাযা নামায ঐ দিনগুলোতে আদায় করলে তাকবীর বলা ওয়াজিব নয়।-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৬৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫১১-৫১৩

৮। ঈদুল আযহায় ঈদগাহে পৌঁছার আগ পর্যন- পথে পথে উচ্চস্বরে তাকবীর বলে বলে যাবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৪/১৯২-১৯৪; দারাকুতনী ২/৪৪-৪৫; ইলাউস সুনান ৮/১১৪-১১৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬২৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫১৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৩

৯। কোনো ব্যক্তি নামাযে মাসবুক হলে ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পর দাঁড়িয়ে স্বীয় নামায আদায় করার পর তাকবীরে তাশরীক বলবে।-মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৪/২৩৯-২৪০; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৬২; রদ্দুল মুহতার ২/১৮০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২

১০। মহিলারা এই তাকবীরে তাশরীকটি নিচু স্বরে আদায় করবে। উচ্চ স্বরে নয়।-রদ্দুল মুহতার ২/১৭৯; হাশিয়া তাহতাবী ১/৩৫৭; হিন্দিয়া ১/১৫২

এত গেল তাকবীরে তাশরীফ সংক্রান্ত কিছু মাসআলা। তবে এই তাকবীর সংক্রান্ত যে কয়েকটি গাফলতি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় তন্মধ্যে একটি হল মহিলাদের এই আমলের প্রতি যত্নবান না হওয়া। হয়তোবা এর কারণ এও হতে পারে যে, তাদের এই তাকবীরের কথা স্মরণ থাকে না। তা স্বাভাবিকও বটে। কারণ পুরুষরা মসজিদে জামাতে নামায আদায় করে বিধায় খেয়াল না থাকলেও অন্যের দেখাদেখি এই আমল করতে পারে। কিন' মহিলাদের তো এই সুযোগ নেই। তাই মহিলাদের উচিত ঘরের যে স্থানে তারা নামায আদায় করে সেখানে পাঁচ দিনের জন্য একটি কাগজ লিখে ঝুলিয়ে রাখা। যাতে জায়নামাযে এলেই তা নজরে পড়ে।

দ্বিতীয় যে গাফলতিটি নজরে পড়ে তা এই যে, ঈদুল আযহার ঈদগাহে যাওয়ার পথে ও পাঁচ দিনের ফরজ নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক আদায় করলেও অনেক পুরুষ তা পড়ে থাকেন মনে মনে বা খুব নিচু স্বরে। অথচ পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাহাবায়ে কেরামের এই তাকবীর ধ্বনিতে পুরো আশপাশ কেঁপে উঠত। আর এই তাকবীর উচ্চ স্বরে বলার একটি হিকমত তো এও যে, এর দ্বারা ইসলামের তাওহীদের ঘোষণা প্রকাশ্যে উচ্চস্বরে দেওয়া হবে। গুনগুন শব্দে এর বহিঃপ্রকাশ কি সম্ভব?-ইসলাহী খুতবাত ২/১২৬-১২৯

পরিশেষে আসুন নির্ভেজাল তাওহীদ, দৃঢ় আক্বীদা ও আল্লাহর মহত্ত্বের উপর অটুট আস্থা স্থাপনের মাধ্যমে গড়ে তুলি একটি আদর্শ সমাজ, যা হবে শিরকের পঙ্কিলতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত তাওহীদের সমাজ। পুণ্যময় তেরটি দিনের এটিই মৌলিক বাণী। তাকবীরে তাশরীকের এটিই মহান শিক্ষা।

15/06/2024

কুরবানীর ফাযায়েল ও মাসায়েল

মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া
কুরবানীর গুরুত্ব ও ফযীলত

কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান নর-নারীর উপর কুরবানী ওয়াজিব।এটি মৌলিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।আদম আ. থেকে সকল যুগে কুরবানী ছিল।তবে তা আদায়ের পন্থা এক ছিল না।শরীআতে মুহাম্মাদীর কুরবানী মিল্লাতে ইবরাহীমীরসুন্নত। সেখান থেকেই এসেছে এই কুরবানী।এটি শাআইরে ইসলাম তথা ইসলামের প্রতীকি বিধানাবলির অন্তর্ভুক্ত।সুতরাং এর মাধ্যমে শাআইরে ইসলামের বহিঃপ্রকাস ঘটে। এছাড়া গরীব-দুঃখী ও পাড়া-প্রতিবেশীর আপ্যায়নের ব্যবস্থা হয়।আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শর্তহীন আনুগত্যের শিক্ষা রয়েছে কুরবানীতে পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার জন্য ত্যাগ ও বিসর্জনের ছবকও আছে এতে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

فصل لربك وانحر

(তরজমা) অতএব আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী আদায় করুন।

অন্য আয়াতে এসেছে-

قل ان صلاتى ونسكى ومحياى ومماتى لله رب العالمين.

(তরজমা) (হে রাসূল!) আপনি বলুন, আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ (অর্থাৎ আমার সবকিছু) আল্লাহ রাববুল আলামীনের জন্য উৎসর্গিত। (সূরা আনআম : ১৬২)

পশু জবাই করে কুরবানী করার মধ্যে এই হিকমত ও ছবকও আছে যে, আল্লাহর মুহববতে নিজের সকল অবৈধ চাহিদা ও পশুত্বকে কুরবানী করা এবং ত্যাগ করা।সুতরাং কুরবানী থেকে কুপ্রবৃত্তির দমনের জযবা গ্রহণ করা উচিত।তাই কুরবানীর মধ্যে ইবাদতের মূল বিষয় তো আছেই, সেই সাথে তাকওয়ার অনুশীলনও রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

لن ينال الله لحومها ولا دمائها ولكن يناله التقوى منكم

(তরজমা) (মনে রেখো, কুরবানীর জন্তুর) গোশত অথবা রক্ত আল্লাহর কাছে কখনোই পৌঁছে না; বরং তাঁর কাছে কেবলমাত্র তোমাদের পরহেযগারিই পৌঁছে। (সূরা হজ্ব : ৩৭)

কুরবানীর ফযীলত

عن عائشة رضي الله تعالى عنها أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : ما عمل آدمي من عمل يوم النحر أحب إلى الله من إهراق الدم، إنه ليأتي يوم القيامة بقرونها وأشعارها وأظلافها، وإن الدم ليقع من الله بمكان قبل أن يقع من الأرض، فطيبوا بها نفسا.

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কুরবানীর দিনের আমলসমূহের মধ্য থেকে পশু কুরবানী করার চেয়ে কোনো আমল আল্লাহ তাআলার নিকট অধিক প্রিয় নয়।কিয়ামতের দিন এই কুরবানীকে তার শিং, পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত করা হবে।আর কুরবানীর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ
তাআলার নিকট কবুল হয়ে যায়।সুতরাং তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে কুরবানী কর। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৪৯৩)

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠোর ধমকি এসেছে,

عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : من وجد سعة لأن يضحي فلم يضح فلا يقربن مصلانا.

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য আছে তবুও সে কুরবানী করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’-মুসনাদে আহমদ ২/৩২১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৭৬৩৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫

ইবাদতের মূলকথা হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং
তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন।তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি।ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন
করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল
অনুযায়ী সম্পাদন করা।এখানে কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল উপস্থাপিত হল।

কার উপর কুরবানী ওয়াজিব

মাসআলা : প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক
মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২
যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন-অতিরিক্ত
নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বর্তমানে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি,
রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি।টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল সাড়ে
বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া।আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু
প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন
তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার
উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।যেমন কারো নিকট কিছু স্বর্ণ ও কিছু টাকা আছে, যা
সর্বমোট সাড়ে বায়ান্ন তোলা চাঁদির মূল্য সমান হয় তাহলে তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

فصل لربك وانحر

(তরজমা) অতএব আপনি আপনার রবব-এর উদ্দেশ্যে
নামায পড়ুন এবং কুরবানী আদায় করুন। (সূরা কাউসার : ২)

এছাড়া ইতিপূর্বে উল্লেখিত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত হাদীসটিও কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার দলিল।-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫

মাসআলা : একান্নভুক্ত পরিবারের মধ্যে একাধিক
ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার শর্ত পাওয়া গেলে অর্থাৎ তাদের কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাদের প্রত্যেকের উপর ভিন্ন ভিন্ন কুরবানী ওয়াজিব।

পরিবারের যত সদস্যের উপর কুরবানী ওয়াজিব তাদের
প্রত্যেককেই একটি করে পশু কুরবানী করতে হবে কিংবা
বড় পশুতে পৃথক পৃথক অংশ দিতে হবে।একটি কুরবানী সকলের জন্য যথেষ্ট হবে না।

নেসাবের মেয়াদ

মাসআলা : কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি
নয়; বরং কুরবানীর তিন দিন থাকলে এমনকি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের কিছু আগে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেলেও কুরবানী ওয়াজিব হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২

নাবালেগের কুরবানী

মাসআলা : নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে নফল কুরবানী করতে পারবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

মুসাফিরের জন্য কুরবানী

মাসআলা : যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে
যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৪, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫

দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুম

মাসআলা : নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই এমন দরিদ্র
ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২

কুরবানীর সময়

যিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের
আগ পর্যন্ত মোট তিন দিন কুরবানীর সময়।তবে সবচেয়ে উত্তম হল প্রথম দিন কুরবানী করা।এরপর দ্বিতীয় দিন এরপর তৃতীয় দিন।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫

عن البراء عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : إن أول ما نبدأ به في يومنا هذا أن نصلي ثم نرجع فننحر، فمن فعل ذلك فقد أصاب سنتنا، ومن ذبح قبل فإنما هو لحم قدمه لأهله، ليس من النسك في شيء.

বারা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈদের দিন আমরা প্রথমে নামায আদায় করি। অতপর ফিরে এসে কুরবানী করি। যে ব্যক্তি এভাবে আদায় করবে সে আমাদের নিয়ম মতো করল।আর যে নামাযের আগেই পশু জবাই করল সেটা তার
পরিবারের জন্য গোশত হবে, এটা কুরবানী হবে না।-সহীহ মুসলিম ২/১৫৪

প্রথম দিন কখন থেকে কুরবানী করা যাবে

মাসআলা : যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমা ও
ঈদের নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়।অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন
ঈদের নামায না হয় তাহলে ঈদের নামায আদায় পরিমাণ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিনেও কুরবানী করা
জায়েয।-সহীহ বুখারী ২/৮৩২, কাযীখান ৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮; সহীহ মুসলিম ২/১৫৪

روى الشيخان عن الرسول صلى الله عليه وسلم قال : من ذبح قبل الصلاة فإنما يذبح لنفسه ومن ذبح بعد الصلاة فقد تم نسكه وأصاب سنة المسلمين.

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেছেন, যে ব্যক্তি ঈদের নামাযের পূর্বে কুরবানীর পশু
জবাই করবে সেটা তার নিজের জন্য সাধারণ জবাই হবে।আর যে নামায ও খুতবার পর জবাই করবে তার কুরবানী পূর্ণ হবে এবং সে-ই মুসলমানদের রীতি অনুসরণ করেছে।-সহীহ বুখারী ২/৮৩৪; সহীহ মুসলিম ২/১৫৪

রাতে কুরবানী করা

মাসআলা : ১০ ও ১১ যিলহজ্ব দিবাগত রাতেও
কুরবানী করা জায়েয।তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো।-মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, কাযীখান ৩/৩৪৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়ের পর যবাই করলে

কুরবানী করতে না পারলে

মাসআলা : কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে
ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু
ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব।আর যদি পশু ক্রয় করেছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানীদেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে।-
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪, ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫

মাসআলা : কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১

কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে

মাসআলা : উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। তদ্রূপ হাঁস-মুরগি বা কোনো পাখি দ্বারাও কুরবানী জায়েয নয়।-কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

ولكل امة جعلنا منسكا ليذكروا اسم الله على ما رزقهم من بهيمة الأنعام

(তরজমা) আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কুরবানীর নির্দেশ দিয়েছি।আল্লাহ তাদের রুযি হিসেবে যেসব গৃহপালিত পশু
দিয়েছেন তার উপর তারা যেন (জবাই করার সময়)
আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে।-সূরা হজ্ব : ৩৪

নর ও মাদা পশুর কুরবানী

মাসআলা : যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয
সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

কুরবানীর পশুর বয়সসীমা

মাসআলা : উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে।গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে।আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে।তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু
এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয়
তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয।অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। (কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬)

জাবের রা. থেকে বর্ণিত,

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : لا تذبحوا إلا مسنة، إلا أن يعسر عليكم فتذبحوا جذعة من الضأن.

তোমরা (কুরবানীর জন্য) মুসিন্নাহ ব্যতীত যবাই করো না।(মুসিন্নাহ হল, ৫ বছর বয়সী উট, ২ বছরের গরু ও
ছাগলের ক্ষেত্রে ১ বছর [শরহুন নববী]) যদি সম্ভব না হয়
তবে ছয় মাস বয়সী ভেড়া বা দুম্বা।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৯৬৩

এক পশুতে শরীকের সংখ্যা

মাসআলা : একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী দিতে পারবে। এমন একটি পশু দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মিলে কুরবানী
করলে কারোটাই সহীহ হবে না।আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯, কাযীখান ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮)

وعن جابر قال : أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نشترك في الإبل والبقر كل سبعة منا في بدنة.

জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ করেছেন যে, আমরা একটি গরু এবং একটি উটে সাতজন করে শরীক হয়েযাই।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১২১৮

শরীকের কুরবানী

মাসআলা : সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার
অংশ সমান হতে হবে।কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হবে না।যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ।এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানী সহীহ হবে না।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

মাসআলা : উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের
কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয়
ভাগেকুরবানী করা জায়েয। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে

মাসআলা : যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম
পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার
নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না।তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে
না।তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯

কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ

মাসআলা : কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে। ছেলের জন্য দুই অংশ আর মেয়ের জন্য এক অংশ দিতে হবে।

শৈশবে আকীকা করা না হলে বড় হওয়ার পরও আকীকা করা যাবে।যার আকীকা সে নিজে এবং তার মা-বাবাও আকীকার
গোশত খেতে পারবে।-ইলাউস সুনান ১৭/১২৬

কেউ কেউ কুরবানীর পশুর সাথে আকীকা দিলে আকীকা সহীহ হবে না বলে মত দেন।কিন্তু নির্ভরযোগ্য আলেমগণ এ মতটি গ্রহণ করেননি।কোনো হাদীসে কুরবানীর সাথে আকীকা করতে নিষেধ
করা হয়নি; বরং কুরবানীর সাথে হজ্বের কুরবানী,
জরিমানা দম একত্রে এক পশুতে দেওয়ারও প্রমাণ আছে।অর্থাৎ কুরবানীর পশুতে অন্য ইবাদতের নিয়তে শরিক
হওয়া জায়েয।সুতরাং আকীকার নিয়তে শরিক হওয়াও জায়েয।আতা ইবনে আবী রবাহ রাহ. বলেছেন, উট-গরু
সাতজনের পক্ষ হতে কুরবানী হতে পারে।আর এতে শরিক হতে পারে কুরবানীকারী, তামাত্তু
হজ্বকারী এবং হজ্বের ইহরাম গ্রহণের পর হজ্ব আদায়ে
অপারগ ব্যক্তি
(আসসুনান, সায়ীদ ইবনে মানসূর-আলকিরা লী কাসিদি উম্মিল কুরা ৫৭৩)

এছাড়া ফাতাওয়া শামীসহ ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবাদিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কুরবানীর সাথে আকীকা সহীহ।দেখুন : রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ৪/১১৬

মাসআলা : কুরবানী করতে হবে সম্পূর্ণ হালাল সম্পদ থেকে হারাম টাকা দ্বারা কুরবানী করা সহীহ নয় এবং
এক্ষেত্রে অন্য শরীকদের কুরবানীও সহীহ হবে না।

মাসআলা : যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবান দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে তার জন্য এ পশুতে অন্যকে শরীক করা জায়েয।তবে এতে কাউকে শরীক না করে একা কুরবানী করাই
শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম।আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানী
করা ওয়াজিব নয়, তাহলে যেহেতু কুরবানীর নিয়তে পশুটিক্রয় করার মাধ্যমে লোকটি তার পুরোটাই আল্লাহর জন্য
নির্ধারণ করে নিয়েছে তাই তার জন্য এ পশুতে অন্যকে
শরীক করা জায়েয নয়। যদি শরিক করে তবে ঐ টাকা সদকা করে দেওয়া জরুরি হবে।কুরবানীর পশুতে কাউকে শরীক করতে চাইলে পশু ক্রয়েরসময়ই নিয়ত করে নিতে হবে।-কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০

মাসআলা : যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪

বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

أربع لا يضحى بهن العوراء البين عورها والمريضة البين مرضها والعرجاء البين ضلعها والعجفاء التي لا تنتقي

অর্থাৎ চার ধরনের পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে না। যে পশুর চোখের জ্যোতি ক্ষতিগ্রস্ত, যে পশু অতি রোগাক্রান্ত, যে পশু বেশি খোঁড়া আর যে পশু অতি শীর্ণকায়। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক ২/৪৮২; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৪৯৭

খোড়া পশুর কুরবানী

মাসআলা : যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানী জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩, আলমগীরী ৫/২৯৭

নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে

মাসআলা : কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে কুরবানীদাতা ধনী হলে দুটির একটি কুরবানী করলেই চলবে। তবে দুটি কুরবানী করাই উত্তম। উল্লেখ্য যে, গরীব ব্যক্তির ক্রয়কৃত পশু হারিয়ে গেলে তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা আবশ্যকীয় নয়, তারপরও যদি সে আরেকটি পশু কুরবানীর জন্য কিনে ফেলে তবে সেটি জবাই করা জরুরি হয়ে যায় এবং হারানোটি পাওয়া গেলে তাও জবাই করতে হবে।-সুনানে বায়হাকী ৫/২৪৪, ইলাউস সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯, কাযীখান ৩/৩৪৭

গর্ভবতী পশুর কুরবানী

মাসআলা : গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে এবং কেউ চাইলে এর গোশতও খেতে পারবে।-কাযীখান ৩/৩৫০

পশু কেনার পর দোষ দেখা দিলে

মাসআলা : কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর কুরবানী সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

পশুর বয়সের ব্যাপারে বিক্রেতার কথা

মাসআলা : যদি বিক্রেতা কুরবানীর পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে।-আহকামে ঈদুল আযহা, মুফতী শফী রাহ., পৃষ্ঠা ৫

বন্ধ্যা পশুর কুরবানী

মাসআলা : বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

জবাই সংক্রান্ত মাসআলা

কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা

মাসআলা : কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা উত্তম। তবে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা পুরুষ হলে জবাইস্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২২৬৫৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২২-২২৩, আলমগীরী ৫/৩০০, ইলাউস সুনান ১৭/২৭১-২৭৪

জবাইয়ে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে

মাসআলা : অনেক সময় জবাইকারীর জবাই সম্পন্ন হয় না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ যবাইয়ের আগে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ পড়তে হবে। যদি কোনো একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানী সহীহ হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৪

কুরবানীর পশু থেকে জবাইয়ের আগে উপকৃত হওয়া

মাসআলা : কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার
পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন হালচাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি। সুতরাং কুরবানীর পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে পশমের মূল্য, হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে।-মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, নায়লুল আওতার ৩/১৭২, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০০

কুরবানীর পশুর দুধ পান করা

মাসআলা : কুরবানীর পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না। প্রয়োজনে ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিবে। -মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৯, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১

কোনো শরীকের মৃত্যু ঘটলে

মাসআলা : কয়েকজন মিলে কুরবানী করার ক্ষেত্রে জবাইয়ের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। সেক্ষেত্রে তার স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫১

কুরবানীর পশুর বাচ্চা হলে

মাসআলা : কুরবানীর পশু ক্রয়ের পর জবাইয়ের আগে বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চার গোশত খাওয়া যাবে না। পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। তবে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম।-কাযীখান ৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩

মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী

মাসআলা : মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫২

কুরবানীর গোশত জমিয়ে রাখা

মাসআলা : কুরবানীর গোশত ফ্রিজে রাখা বা প্রক্রিয়াজাত করে রাখা জায়েয।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, সহীহ মুসলিম ২/১৫৯, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৮, ইলাউস সুনান ১৭/২৭০

কুরবানীর গোশত বণ্টন

মাসআলা : শরীকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়।-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযীখান ৩/৩৫১

মাসআলা : কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত নিজে রেখে দেওয়াও নাজায়েয নয়।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০

গোশত, চর্বি বিক্রি করা

মাসআলা : কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে প্রাপ্ত মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১

জবাইকারীকে চামড়া, গোশত দেওয়া

মাসআলা : জবাইকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য নির্ধারিত পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৮

জবাইয়ের অস্ত্র

মাসআলা : ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

পশু নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা

মাসআলা : জবাইয়ের পর পশু

নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরূহ। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৯৬

অন্য পশুর সামনে জবাই করা

মাসআলা : এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই করবে না। জবাইয়ের সময় প্রাণীকে প্রয়োজনের অধিক কষ্ট দিবে না।

কুরবানীর গোশত বিধর্মীকে দেওয়া

মাসআলা : কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয।-ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০

অন্য কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চাইলে

মাসআলা : অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে দেশীয় প্রচলনের কারণে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১১

কুরবানীর পশু চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে

মাসআলা : কুরবানীর পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কুরবানীদাতার উপর পূর্ব থেকে কুরবানী ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯

পাগল পশুর কুরবানী

মাসআলা : পাগল পশু কুরবানী করা জায়েয। হযরত হাসান রা. বলেন, পাগল পশুর কুরবানী জায়েয।

তবে যদি এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না তাহলে সেটার কুরবানী জায়েয হবে না। -আননিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ১/২৩০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৫২

নিজের কুরবানীর গোশত খাওয়া

মাসআলা : কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর গোশত
খাওয়া মুস্তাহাব। -সূরা হজ্ব ২৮, সহীহ মুসলিম ২২/১৫৯, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৯০৭৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪

ঋণ করে কুরবানী করা

মাসআলা : কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তিও ঋণের টাকা দিয়ে কুরবানী করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে কুরবানী করা যাবে না।

হাজীদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী

মাসআলা : যেসকল হাজী কুরবানীর দিনগুলোতে
মুসাফির থাকবে তাদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী
ওয়াজিব নয়।কিন্তু যে হাজী কুরবানীর কোনো দিন মুকীম থাকবে সামর্থ্যবান হলে তার উপর ঈদুল আযহার কুরবানী করা জরুরি
হবে।এটি সে নিজ এলাকায়ও করতে পারবে-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৬৬

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা

মাসআলা : সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়্যত করেছিলেন। তাই তিনি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী দিতেন। -সুনানে আবু দাউদ ২/২৯, জামে তিরমিযী ১/২৭৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, মিশকাত ৩/৩০৯

কোন দিন কুরবানী করা উত্তম

মাসআলা : ১০, ১১ ও ১২ এ তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিন কুরবানী করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন, এরপর তৃতীয় দিন। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

খাসীকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী

মাসআলা : খাসিকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী করা জায়েয;
বরং ক্ষেত্রবিশেষে উত্তম।-ফাতহুল কাদীর ৮/৪৯৮, মাজমাউল আনহুর ৪/২২৪, ইলাউস সুনান ১৭/৪৫৩

জীবিত ব্যক্তির নামে কুরবানী

মাসআলা : যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয তদ্রূপ জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ইসালে সওয়াবের জন্য নফল কুরবানী করা জায়েয। এ কুরবানীর গোশত দাতা ও তার পরিবারও খেতে পারবে।-রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬

বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্রে করা

মাসআলা : বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।

কুরবানীদাতা ভিন্ন স্থানে থাকলে কখন জবাই করবে

মাসআলা : কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায়ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

কুরবানীর চামড়া বিক্রির অর্থ সাদকা করা

মাসআলা : কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৮, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

কুরবানীর চামড়া বিক্রির নিয়ত

মাসআলা : কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করতে চাইলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১, কাযীখান ৩/৩৫৪

কুরবানীর শেষ সময়ে মুকীম হলে

মাসআলা : কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে মুসাফির থাকার পরে ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুকীম হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে প্রথম দিকে মুকীম ছিল অতপর তৃতীয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে এক্ষেত্রে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব থাকবে না। অর্থাৎ সে কুরবানী না দিলে গুনাহগার হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৬, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৯

কুরবানীর পশুতে ভিন্ন ইবাদতের নিয়তে শরীক হওয়া

মাসআলা : এক কুরবানীর পশুতে আকীকা, হজ্বের কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে। এ পশু হেরেম এলাকায় জবাই করতে হবে। অন্যথায় হজ্বের কুরবানী আদায় হবে না।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, আলমাবসূত সারাখছী ৪/১৪৪, আলইনায়া ৮/৪৩৫-৩৪৬, আলমুগনী ৫/৪৫৯

কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা

মাসআলা : ঈদুল আযহার দিন সম্ভব হলে সর্বপ্রথম নিজ কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নত। এই সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য। ১১ বা ১২ তারিখের গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। -জামে তিরমিযী ১/১২০, শরহুল মুনয়া ৫৬৬, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬, আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৩

কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি

মাসআলা : কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। কিন্তু কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

রাতে কুরবানী করা

মাসআলা : ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতে কুরবানী করা জায়েয। তবে রাতে আলোস্বল্পতার দরুণ জবাইয়ে ত্রুটি হতে পারে বিধায় রাতে জবাই করা অনুত্তম। অবশ্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাতে জবাই করতে কোনো অসুবিধা নেই। -ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫১০

কাজের লোককে কুরবানীর গোশত খাওয়ানো

মাসআলা : কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে।-আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/২৩৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলবাহরুর রায়েক ৮/৩২৬, ইমদাদুল মুফতীন

জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া

মাসআলা : কুরবানী পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া
-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো অংশ পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫

মোরগ কুরবানী করা

মাসআলা : কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে ঈদের দিন মোরগ কুরবানী করার প্রচলন আছে। এটি না জায়েয। কুরবানীর দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয়, তবে কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৪, ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২০০ ।

Address


Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মাসিক আল-মুসলিম The Monthly Al-Muslim posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to মাসিক আল-মুসলিম The Monthly Al-Muslim:

Shortcuts

  • Address
  • Alerts
  • Contact The Business
  • Claim ownership or report listing
  • Want your business to be the top-listed Media Company?

Share