24/06/2022
২০১৬ তে জীবিকার তাগিদে বরিশালে আসা। তারপর থেকে কন্টিনিউ বরিশাল টু সিলেট যাওয়া আসা করতে হয়। এই যাওয়া আসার পথের প্রধান সমস্যা দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া আর মাওয়া-কেওড়াকান্দি ফেরিঘাট। যেখানে সারা বছর বিভিন্ন কারনে জ্যাম লেগেই থাকে, শীতকালে নাব্যতা সংকট বা কুয়াশা তো বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানির চাপ আর গরমকালে আছে ঝড়বৃষ্টি সহ আরো কত সমস্যা।
এই কয়টি বছর এই পথে চলাচল করতে যেয়ে কত যে ভোগান্তিতে পড়েছি আর কত ভোগান্তি চোখে দেখেছি যার কোনো হিসাব নাই। আমি নিজেও ৯ ঘন্টা পর্যন্ত জ্যামে বসে থেকেছি আমার পরিচিত একজনকে ২১ ঘন্টা পর্যন্ত জ্যামে বসে থাকতে শুনেছি।
এই জ্যামে বসে কত রোগীর আর্তনাদ শুনেছি ছোট বাচ্চাদের অবিরাম কান্না, মা বোনদের শারীরিক অস্বস্তি, ফেরিওয়ালা আর হিজড়াদের অত্যাচার!
আর ঈদের ছুটিতে মানুষের বাড়ি ফেরার গল্প নাই বা বললাম।
চোখেমুখ বুজে সহ্য করতে হয়েছে কিছুই তো করার ছিল না।
মাঝেমাঝে এ অত্যাচার সহ্য হতো না পরিবারের মানা সত্তেও জ্যামে বসে না থেকে লঞ্চে উঠে নদী পার হয়ে যেতাম। লঞ্চ পারাপার গাড়ির টিকিট কেটে বাসায় বলতাম ফেরি পারাপারের টিকিট কেটেছি। আর রওনা দেয়ার সময় মনেমনে প্রস্তুতি নিয়ে বের হতাম, শখের ফোনটা পলিথিনের মধ্যে ভরে নিতাম সাথে ছোট একটা কাঁধ ব্যাগ। যাতে লঞ্চ ডুবি হলে অন্তত সাঁতরে নিজেকে ভাসিয়ে রাখতে পারি।
ঝড়ের রাতে দুরুদুরু বুকে উত্তাল পদ্মায় লঞ্চের এক কোণে শক্ত হাতে লোহার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের কান্না আর আহাজারির সাক্ষী হয়েছি, ভরা বর্ষায় ফেরি পারাপারের সময় ক্ষণেক্ষণে ফেরির কাপুনিতে অথৈ জলরাশির মধ্যে নিজের জানটুকু হাতে নিয়ে কত যে নদী পার হয়েছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
এমনি ভোগান্তি আর বাস্তব ঘটনার সাক্ষী শুধু আমি একা নই। প্রতিনিয়ত এমন ভোগান্তির শিকার হয়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের হাজারো মানুষ। তারপরও শতভোগান্তি সহ্য করে অসহায়ের মতো চলাচল করতে হয়েছে আমাদের।
আর মাত্র কয়েকটা ঘন্টা, এরপর হাজার হাজার বছরের দূরত্ব ঘুচিয়ে দুই পাড়ের মেলবন্ধন হবে।
পদ্মা সেতুটা অনেকের কাছে কেবলই কংক্রিটের একটি সেতু।
কিন্তু আমাদের কাছে এটি একটি স্বপ্ন। একটি আবেগ।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের অপেক্ষা শেষে একটি ইচ্ছেপূরণ।
আমার টাকায় আমার সেতু
বাংলাদেশের পদ্মা সেতু
ধন্যবাদ! গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার