মাসিক মুঈনুল ইসলাম

মাসিক মুঈনুল ইসলাম ... আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম হতে প্রকাশিত মাসিক মুঈনুল ইসলাম

📘 মাসিক মুঈনুল ইসলামজুলাই-২০২৫ সংখ্যা | The Monthly Mueenul Islam – July- 2025📖 এই সংখ্যায় চমকপ্রদ বিষয়সমূহ:🔹 পঞ্চাশ বছর...
03/07/2025

📘 মাসিক মুঈনুল ইসলাম
জুলাই-২০২৫ সংখ্যা | The Monthly Mueenul Islam – July- 2025

📖 এই সংখ্যায় চমকপ্রদ বিষয়সমূহ:

🔹 পঞ্চাশ বছর পর: ইতিহাস আমাদের কী নামে ডাকবে?

🔹 তালিবুল ইলমের পাথেয়:
ফকিহুল উম্মতের ১২টি মূল্যবান নসিহত

🔹 তাহকীক ও তাকলীদ:
তাকলীদের যুক্তি, মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা ও লা-মাযহাবিয়াতের ভ্রান্তি

🔹 যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল আসলে ইরান থেকে কী চায়

🔹 নববী চরিত্রের সুবাস

🔹 শায়খুল ইসলামের কারগুযারি:
অন্ধকারের অতলে মুসলিম ইতিহাসের মর্মস্পর্শী অধ্যায়

🔹 সাইলেন্ট ডিভোর্স:
এক ছাদের নিচে, তবু দুটি ভিন্ন জগত

🔹 ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষের ছায়ায় পাকিস্তান কি পরবর্তী টার্গেট?

🔹 বিশ্বে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি চলতে দেওয়া যায় না

🔹 হিংসা ভয়ঙ্কর এক আত্মিক ব্যাধি:
হিংসা মনের শান্তি বিনষ্ট করে দেয়

🔹 আসমানের নিদর্শন থেকে জীবনের বাস্তবতা

🔹 মু’মিন জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব

🔹 দয়া ও মোহের পার্থক্য এবং শরীয়তের ভারসাম্যপূর্ণ নির্দেশনা
ভারসাম্যহীন পশুপ্রীতি: ইসলাম কী বলে?

🔹 ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদ
উপমহাদেশের মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রভাব

🔹 শহীদ ইয়াহইয়া আস সিনওয়ার ঈমান জাগানিয়া গল্প:
‘কাঁটা ও লবঙ্গ ফুল’

🔹 আধুনিকতার ঘূর্ণিপাকে সন্তানের আদর্শ লালন-পালন: চ্যালেঞ্জ ও দায়বদ্ধতা

🔹 সিচুয়েশনশিপ:
নৈতিকতা ও ঈমান ধ্বংসের এক আত্মবিধ্বংসী ফাঁদ

📌 পাঠকের শরীয়ত সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের সমাধান সম্পর্কিত ১০ পৃষ্ঠার জনপ্রিয় ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগ

🔵 সোশ্যাল মিডিয়ার চোখে:
💬 মাও. শরীফ মুহাম্মদ
💬 রশীদ জামিল
💬 ইফতেখার জামিল
💬 জহির উদ্দিন বাবর
💬 সৈয়দ শামছুল হুদা

✉️ পাঠকের রিসালাহ:
✍️ রাজনৈতিক সংস্কার; আকাঙ্ক্ষা ও বিকেন্দ্রীকরণের ঝুঁকি
✍️ নেতানিয়াহু ইসরায়েলের চেয়েও বড় শত্রু
✍️ সেই ‘সাজানো গল্পেই’ ইরানকে ইরাক বানাতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র!
✍️ স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংকট ও উত্তরণের পথ
---------------------
🎯 ঘরে বসেই রেজি: ডাকে কপি পেতে চান?
কমেন্টে লিখুন বা ইনবক্সে জানান।
📦 ডাকযোগে ১ বছরের সাবস্ক্রিপশন: মাত্র ৩০০ টাকা!

👉 পাইকারি (৫/১০ কপি) নিতে চাইলে আলাদা ব্যবস্থাও আছে।

📱 মোবাইল/হোয়াটসঅ্যাপ: 01722-229621

❤️ পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করে পাশে থাকুন।
--------------------
✨ Cover Designed by: Mohammad Ibrahim Khalil

প্রত্যেক মু'মিনের হৃদয়ের গভীরে বাসনা থাকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার, তাঁর নৈকট্য লাভ করার। কিন্তু কারা আল্লাহর সেই বিশে...
24/06/2025

প্রত্যেক মু'মিনের হৃদয়ের গভীরে বাসনা থাকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার, তাঁর নৈকট্য লাভ করার। কিন্তু কারা আল্লাহর সেই বিশেষ বান্দা, যাদেরকে তিনি নিজেই ‘ইবাদুর রহমান’ বা ‘দয়াময়ের বান্দা’র মতো মর্যাদাপূর্ণ উপাধি দিয়েছেন? কী সেই গুণাবলী, যা একজন মানুষকে আল্লাহর এত কাছাকাছি নিয়ে যায়?

এর উত্তর লুকিয়ে আছে পবিত্র কুরআনের সূরা আল-ফুরকানের শেষাংশে, যেখানে আল্লাহ তা'আলা তাঁর এই খাস বান্দাদের ১২টি অসাধারণ গুণের কথা তুলে ধরেছেন। এই গুণগুলো শুধু ইবাদত-বন্দেগির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা একজন মু'মিনের চরিত্র, আচরণ, সামাজিকতা এবং আত্মশুদ্ধির এক পরিপূর্ণ জীবনবিধান।

মাওলানা এমদাদুল্লাহ সালাম রচিত এই ফিচারটি সেই গুণাবলীর এক অনবদ্য আলোচনা, যা একজন সাধারণ মু'মিনকে আল্লাহর প্রিয় ‘ইবাদুর রহমান’ হওয়ার পথ দেখায়। আসুন, কুরআনের আয়নার মাধ্যমে আমরা নিজেদের যাচাই করি এবং এই গুণগুলো অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার পথে এগিয়ে যাই।

প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে মাসিক মুঈনুল ইসলাম-এর চলতি জুন সংখ্যায়।

ঘরে বসেই রেজি: ডাকে কপি পেতে চান?
কমেন্টে লিখুন বা ইনবক্সে জানান।
📦 ডাকযোগে ১ বছরের সাবস্ক্রিপশন: মাত্র ৩০০ টাকা!

👉 পাইকারি (৫/১০ কপি) নিতে চাইলে আলাদা ব্যবস্থাও আছে।

📱 মোবাইল/হোয়াটসঅ্যাপ: 01722-229621

❤️ পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করে পাশে থাকুন।

📘 মাসিক মুঈনুল ইসলামজুন-২০২৫ সংখ্যা | The Monthly Mueenul Islam – June- 2025📖 এই সংখ্যায় চমকপ্রদ বিষয়সমূহ:🔹 হে তালিবে ইল...
22/06/2025

📘 মাসিক মুঈনুল ইসলাম
জুন-২০২৫ সংখ্যা | The Monthly Mueenul Islam – June- 2025

📖 এই সংখ্যায় চমকপ্রদ বিষয়সমূহ:

🔹 হে তালিবে ইলম, আত্মপরিচয় লাভ করো, আত্মনির্মাণ করো: উম্মাহ তোমার পথচেয়ে আছে

🔹 তাকলীদের যুক্তি, মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা ও লা-মাযহাবিয়াতের ভ্রান্তি

🔹 ভূরাজনীতির ফাঁদে পার্বত্য চট্টগ্রাম: সীমান্ত সড়কে সংকট

🔹 কওমি মাদ্রাসা: তাওহিদী জনতার প্রাণকেন্দ্র

🔹 মানবিক করিডোর: ত্রাণের পথ নাকি সংঘাতের সেতু?

🔹 মুসলিম নারীদের অনুকরণীয় আদর্শ হযরত খাদিজা (রাযি.)

🔹 গাজার কান্না, উম্মাহর দায়িত্ব: একটি জাগরণ চাই এখনই

🔹 সময়ের স্রোতে কোথায় যাচ্ছি আমরা?

🔹 আচরণ ব্যক্তিত্বের আয়না

🔹 কুরআনের আলো: পানি থেকেই সৃষ্টির সূচনা যেভাবে হয়

🔹 নারী কমিশনের গণিকাবৃত্তি বৈধকরণের প্রস্তাব- ধর্ম, সংবিধান ও সমাজবিরোধী বিপজ্জনক প্রয়াস

🔹 গাজায় ইতিহাসের ভয়াবহ মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ

🔹 ট্রাম্পের সম্মানে দুবাইয়ের গ্রান্ড মসজিদে নামায-আযান বন্ধ; এমন হতাশার দৃশ্যও আমাদের দেখতে হলো!

🔹 পানাহারের যে নিয়ম ও আদব কায়দা রাসূলুল্লাহ (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন

🔹 কুরআনের আলোকে মু’মিন বান্দার বিশেষ ১২টি গুণ

🔹 ঈমান জাগানিয়া গল্প: কাঁটা ও লবঙ্গ ফুল

🔹 পাঠকের শরীয়ত সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের সমাধান সম্পর্কিত ১০ পৃষ্ঠার জনপ্রিয় ‘জিজ্ঞাসা-সমাধান’ বিভাগ

✉️ পাঠকের রিসালাহ-
✍️ কাশ্মীর: নির্যাতনের ছায়ায় এক ভূস্বর্গ
✍️ নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন: শরীয়তবিরোধী চিন্তার প্রতিফলন
✍️ প্রসঙ্গঃ ইসলামী শান্তির দৃষ্টান্ত; সময়োপযোগী বাস্তবতা
✍️ ক্ষমার দরিয়ায় হারাল রক্তগঙ্গা
✍️ পিতা-মাতার সন্তুষ্টি জান্নাতের চাবিকাঠি
✍️ মাদ্রাসা শিক্ষা: গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

ঘরে বসেই রেজি: ডাকে কপি পেতে চান?
কমেন্টে লিখুন বা ইনবক্সে জানান।
📦 ডাকযোগে ১ বছরের সাবস্ক্রিপশন: মাত্র ৩০০ টাকা!

👉 পাইকারি (৫/১০ কপি) নিতে চাইলে আলাদা ব্যবস্থাও আছে।

📱 মোবাইল/হোয়াটসঅ্যাপ: 01722-229621

❤️ পোস্টটি লাইক ও শেয়ার করে পাশে থাকুন।
--------------------
✨ Cover Designed by: Mohammad Ibrahim Khalil

13/06/2025

জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীর মুহতামিম হযরত আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী কুরাইশী (দা.বা.) পবিত্র হজ্জব্রত আদায় শেষে সহীহ-সালামতে আজ (জুমাবার) বিকেল ৪টায় জামিয়ায় ফিরে এসেছেন..... আলহামদুলিল্লাহ!!!

09/06/2025

চামড়ার দাম নিয়ে ‘মিডিয়া হাইপ’—কার লাভ, কার ক্ষতি?

চামড়ার ন্যায্য দাম নির্ধারণ বা বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ না নিয়েই এবার মিডিয়ায় অপ্রয়োজনীয় ‘হাইপ’ তোলা হল কেন? ফল কী হলো?

এই অযাচিত প্রচারণার কারণে কওমি মাদ্রাসাগুলো এক ধরণের ত্রিমুখী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যা পূর্বের ‘ফ্যাসিবাদী’ সময়কেও ছাড়িয়ে গেছে।

➤ প্রথমত, অনেক মাদ্রাসা এই প্রচারণায় আশাবাদী হয়ে চামড়া সংগ্রহে অর্থ ব্যয় করেছে—কখনো নগদ দিয়ে, কখনো আগের বছরের তুলনায় বেশি মূল্যে। কিন্তু বাস্তবে সেই প্রত্যাশিত দাম পাওয়া যায়নি।

➤ দ্বিতীয়ত, 'ভাল দাম'–এর গুজবে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবার চামড়া কেনার দৌড়ে নেমে পড়েন। এতে যেসব চামড়া আগে মাদ্রাসাগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে পেত, তার একটি বড় অংশ তারা হারিয়েছে।

➤ তৃতীয়ত, অতীতে চামড়ার বাজার একেবারে মন্দা থাকায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ার লোকজন চামড়া কেড়ে নিতে মাঠে নামতো না। কিন্তু এবার 'উচ্চ মূল্যের গুজব'–এর কারণে জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন সমাজকল্যাণ সংস্থা, এমনকি কোথাও কোথাও বিএনপির স্থানীয় নেতারাও চামড়ার জন্য প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। ফলে এখানেও মাদ্রাসাগুলোর চামড়ার একটি অংশ হাতছাড়া হয়েছে।

অন্তবর্তী সরকারের উচিত ছিল বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া, মিডিয়ায় গুজব না ছড়ানো। কিন্তু বাস্তবে তারা করল উল্টোটা—যার খেসারত দিতে হলো মাদ্রাসাগুলোকে।

🔻 পরিশেষে বলবো, চামড়া নিয়ে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মহলের দায়িত্বহীন আচরণ ও হাইপ তৈরির নেপথ্য কারণ খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একটি বৃহৎ ধর্মীয় শিক্ষা কাঠামো—যার ওপর সমাজের দরিদ্র শ্রেণির সন্তানদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে।

লিখেছেন- মাওলানা মুনির আহমদ
নির্বাহী সম্পাদক- মাসিক মুঈনুল ইসলাম

#চামড়া #কুরবানি #মাদ্রাসা #চামড়ার_বাজার #গুজব_রাজনীতি #মিডিয়া_হাইপ #ত্রিমুখী_ক্ষতি #কওমি_মাদ্রাসা #কুরবানির_চামড়া #জবাবদিহি_চাই

06/06/2025

কুরবানী: সুন্নাহর পথে আত্মোৎসর্গের শিক্ষা
- মাওলানা সাদেক মাহবুব
------------------------
কুরবানী-এক অনন্য ইবাদত, যা প্রতি বছর ঈদুল আযহার পবিত্র মুহূর্তে আকাশ-বাতাসে ধ্বনিত হয়, আর মুমিন হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে ত্যাগ ও আনুগত্যের সুপ্ত আকাক্সক্ষা। হাদীসের অমীয় বানী এই সুরের মূর্ছনাকে করে তোলে আরও গভীর, ব্যঞ্জনাময় ও হৃদয়গ্রাহী। প্রিয় নবী (সা.)এর প্রতিটি সুন্নাত যেন বিশ্বাস ও ভালোবাসার কাব্যময় অনুরণন, যা অন্তরকে আবদ্ধ করে এক মোহাবিষ্ট আলোয়।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত- “আদম সন্তানের জন্য কুরবানির দিনের কোনো আমল আল্লাহর কাছে এত প্রিয় নয়, যত প্রিয় কুরবানির পশুর রক্ত প্রবাহিত করা। কিয়ামতের দিন এই পশুগুলো তাদের শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে। আর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা আনন্দিত মনে কুরবানী করো”। (সুনানে তিরমিযী, হাদিস- ১৫৬৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস- ৩১২৬)।

এই হাদিস যেন ত্যাগের এক মহাকাব্য, যেখানে কুরবানির প্রতিটি ফোঁটা রক্ত বহন করে আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার সুসংবাদ, আর মুমিন হৃদয়ে সৃষ্টি করে ঈমানী উচ্ছ্বাস।

আরেক বর্ণনায় যায়েদ ইবনু আরকাম (রাযি.) হতে বর্ণিত, সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) জিজ্ঞাসা করলেন- “ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই কুরবানী কী?”

নবী কারীম (সা.) উত্তরে বললেন- “এটি তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর সুন্নাত”। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস- ৩১২৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস- ১৯২৮৩)।

এই হাদিস যেন ইতিহাসের সেই পবিত্র পাতা উন্মোচন করে, যেখানে হযরত ইব্রাহিম (আ.)এর আত্মত্যাগের গৌরবগাঁথা আজও প্রতিধ্বনিত হয় মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে। কুরবানী কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং তা এক ধারাবাহিকতা- ঈমান, ইখলাস ও আনুগত্যের যুগান্তকারী স্রোত, যা যুগে যুগে নবীদের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে আজও আমাদের অন্তরে বহমান।

কুরবানির এই ইবাদত কেবল ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নয়; এর রয়েছে এক বিশাল সামাজিক তাৎপর্যও। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- “তোমরা নিজেরা খাও, অন্যদের খাওয়াও এবং কিছু সঞ্চয় করো”। (সহীহ বুখারী, হাদিস- ৫৫৬৯)।

এই হাদিস যেন সহমর্মিতার ঝরনা, যা ধনী-গরিব সকলের মধ্যে গড়ে তোলে ভালোবাসার এক অদৃশ্য সেতুবন্ধন। কুরবানির গোশত যখন দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে, তখন তা শুধু আহারের চাহিদা পূরণ করে না- বরং সমাজে সৃষ্টি করে পারস্পরিক সহানুভূতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তবে, কুরবানির বাহ্যিক রূপের চেয়ে অন্তরের বিশুদ্ধতা ও নিয়তের সততাই প্রধান।

হাদিসে এসেছে- “নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক অবয়ব ও সম্পদের প্রতি দৃষ্টি দেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি দৃষ্টি দেন”। (সহীহ মুসলিম, হাদিস- ২৫৬৪)।

এই হাদিস আমাদের মনে করিয়ে দেয়- লোক দেখানো আমল নয়, বরং খাঁটি তাকওয়াসম্পন্ন আমলই আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য। কুরবানির পশু নয়, কুরবানিদাতার অন্তরের খাঁটি অনুভবই প্রকৃত অর্থে আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়।

আসলে কুরবানী শুধু একটি পশু উৎসর্গের নাম নয়; এটি এক আত্মিক পরিশুদ্ধির অনুপম উপায়। অন্তরের পশুত্ব, অহংকার, স্বার্থপরতা ও কুপ্রবৃত্তির কুরবানিই এর অন্তর্নিহিত শিক্ষা। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন ছিল এ ত্যাগের অনুপম আদর্শ- তিনি তাঁর সময়, শ্রম, সম্পদ- সবকিছুই উৎসর্গ করেছেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তাঁর প্রতিটি কর্ম ও পদক্ষেপ আমাদের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা কুরবানির আসল তাৎপর্য অনুধাবনে আমাদের সহায়ক।

তাই আসুন, আমরা কুরবানিকে হাদিসের সুরের মতো হৃদয়ে ধারণ করি, ত্যাগের মহাকাব্য হিসেবে পাঠ করি এবং এই ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভে আত্মনিয়োগ করি। কুরবানির এই শাশ্বত শিক্ষা আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করুক, সমাজকে আলোকিত করুক, আর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে আমাদের রাহবার হোক- এই হোক আমাদের একান্ত প্রার্থনা।

আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
---------------------
লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগ (২য় বর্ষ), দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

06/06/2025

মুসলিম জীবনে কুরবানীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- হযরত আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী (দা.বা.)
-------------------------------------------
মুসলিম উম্মাহ’র বাৎসরিক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ঈদুল আযহা বা কুরবানীর ঈদ। আদি পিতা হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু হওয়া এ কুরবানীর মূল দীক্ষাই হল সকল প্রকার ঠুনকো, খোঁড়া যুক্তি ও বুদ্ধির ঊর্ধ্বে উঠে আল্লাহর হুকুম আহকামের প্রতি পূর্ণ আত্মসমার্পণ করা। আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের নমুনাস্বরূপ হযরত ইবরাহীম (আ.) নিজ প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর হুকুমের প্রতি অতিশয় আনুগত্যের কারণে আল্লাহ তায়ালা তার এ কুরবানীকে কবুল করে নেন, এ ঘটনা আল্লাহর হুকুমের পূর্ণ আনুগত্যতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

হজ্জ্বের মৌসুমে উদযাপিত এ ঈদকে ইসলামী পরিভাষায় ঈদুল আযহা বলা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) একে ঈদুল আযহা নামে নামকরণ করেছেন। এছাড়া ইয়াওমুন নহরও বলা হয়।

আযহা শব্দটিকে আরবীতে ‘কুরবান’ও বলা হয়ে থাকে, যা ফারসী বা উর্দূতে ‘কুরবানী’ রূপে পরিচিত হয়েছে। কুরবানের শাব্দিক অর্থ হল- নৈকট্য অর্জন করা, কাছাকাছি যাওয়া। পারিভাষিক অর্থে ‘কুরবানী’ ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাছিল হয়। প্রচলিত অর্থে, ঈদুল আযহার দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শারঈ তরীকায় যে পশু যবেহ করা হয়, তাকে ‘কুরবানী’ বলা হয়।

কুরবানীর গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কুরআন ও হাদীস এ ব্যাপারে ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবীবকে লক্ষ করে বলেন, ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর’(কাওছার-২)। কাফির-মুশরিকরা তাদের দেব-দেবী ও মূর্তির উদ্দেশ্যে কুরবানী করে থাকে। তার প্রতিবাদ স্বরূপ এ আয়াতের মাধ্যমে মুসলমানদের আল্লাহর জন্য ছালাত আদায়ের ও তাঁর উদ্দেশ্যে কুরবানী করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। মুফাসসিরদের কারো কারো মতে, এ আয়াতে বিশেষভাবে ঈদুল আযহার নামাজ ও নামায শেষে কুরবানীর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর কুরবানীর পশু সমূহকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে’ (হজ্জ-৩৬)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘আর আমরা তাঁর (ইসমাঈলের) পরিবর্তে যবেহ করার জন্য দিলাম একটি মহান কুরবানী। আমরা এটিকে পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিলাম’ (ছাফফাত ১০৭-১০৮)।

আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও যে ব্যক্তি কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়’। (সুনানু ইবনু মাজাহ) রাসূলূল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘কুরবানীর দিন রক্ত প্রবাহিত করা (যবেহ করা) অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় মানুষের কোনো আমল হয় না।’ (সুনানু তিরমিজি)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রফুল্ল চিত্তে কুরবানী আদায়ের নিয়তে কুরবানী করে কিয়ামতের দিন তার এবং জাহান্নামের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।’ (আস-সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বি)।

এটি ইসলামের একটি ‘মহান নিদর্শন’ যা ‘সুন্নাতে ইবরাহীম’ হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে মদীনায় প্রতি বছর আদায় করেছেন এবং সাহাবীগণও নিয়মিতভাবে কুরবানী করেছেন। অতঃপর অবিরত ধারায় মুসলিম উম্মাহ সামর্থ্যবানদের মধ্যে এটি চালু আছে।

এ ছাড়া মানব সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাস এটাই সাক্ষ্য দেয় যে, হযরত আদম (আ.) হতে পৃথিবীর সব জাতিই কোন না কোন পদ্ধতিতে আল্লাহর দরবারে নিজেদের প্রিয়বস্তু উৎসর্গ করেছেন। এ ইতিহাসের স্বীকৃতি প্রদান করে মহান আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানীর এক বিশেষ রীতি-পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছি, যেন তারা ওসব পশুর উপর আল্লাহর নাম নিতে পারে যে সব আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন’। (সূরা আল হজ্জ-৩৪)।

কুরবানীতে মুমিনের জন্য অসংখ্য শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে। যথা- বিশ্বব্যাপী তাওহীদ প্রতিষ্ঠা: মহান আল্লাহর তাওহীদ বা একত্ববাদ বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করা কুরবানীর অন্যতম শিক্ষা। কারণ, একমাত্র বিশ্বজাহানের মালিক মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে, তার নামেই পশু কুরবানী দেয়া হয়। জগতের অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা যেখানে তাদের দেব-দেবির নামে কুরবানী করে, সেখানে মুসলিম সমাজ কোরবানী দেয় একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে।

আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমার্পণ: কুরবানীর গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমার্পণ। আল্লাহর সকল আদেশের সামনে বিনা প্রশ্নে মাথানত করে দেয়াই হল পূর্ণ আত্মসমার্পণের সমুজ্জ্বল বহিঃপ্রকাশ। ঈদুল আযহার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আমরা হযরত ইবরাহীম (আ.) ও তদ্বীয় পুত্র ঈসমাইল (আ.)এর এরূপ পুর্ণ আত্মসমার্পণের চিত্রই পবিত্র কুরআনুল কারীমে দেখতে পাই।

ইখলাস বা একনিষ্ঠতা: সকল কাজে ইখলাস বা একনিষ্ঠতাই ইসলামের মহান শিক্ষা। ইখলাস ছাড়া পরকালীন কোনো কাজই আল্লাহতায়ালা কবুল করেন না। আন্তরিকতা ও মহব্বতবর্জিত ইবাদত প্রাণহীন কাঠামো মাত্র। তাই কুরবানীও একমাত্র আল্লাহ তায়ালার রেজাবন্দী হাসিলের জন্য দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশ, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালার নিকট কুরবানীর পশুর গোশত ও রক্ত পৌঁছে না। তার নিকট তোমাদের তাকওয়া (ইখলাস) পৌঁছে’। (সূরা হাজ্জ্ব-৩৭)।

ইখলাসপূর্ণ কুরবানী হওয়ার কারণেই আল্লাহ তায়ালা হযরত ইবরাহীম (আ.) এর কুরবানী কবুল করে নিয়েছিলেন।

তাকওয়াভিত্তিক জীবন-যাপন: কুরবানীর সুমহান দীক্ষা তাকওয়াভিত্তিক জীবন-যাপন। জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জনই মুমিনের প্রকৃত সফলতা। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা তার আমলকেই কবুল করেন, যার আমলে তাকওয়া বা খোদাভীতির সন্নিবেশন ঘটেছে।

আদমপুত্র হাবিলের কুরবানী আল্লাহতায়ালা কবুল করেছিলেন তাকওয়ার প্রভাবের কারণেই।

দরিদ্র ও অনাথের সুখে-দুঃখে অংশীদার: কুরবানীর অন্যতম শিক্ষা দরিদ্র ও অনাথের সুখ-দুঃখে ভাগীদার হওয়া। ঈদুল আযহার নামাজে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের সহাবস্থানের পাশাপাশি আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী ও দরিদ্র-অনাথের মাঝে কুরবানীর গোশত বণ্টন আমাদের এই শিক্ষাই দেয় যে, আমাদের সম্পদে সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের অধিকার রয়েছে।
কুরবানী মুসলমানদের শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং পরিশুদ্ধ জীবন গঠনের নিয়মতান্ত্রিক অনুশীলনও বটে। এর মাধ্যমে মুসলমান তাওহীদী আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে ইখলাস, তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমার্পণের অপূর্ব নজির স্থাপন করতে পারে।
---------------------------
- আল্লামা মুফতি খলীল আহমদ কাসেমী (দা.বা.), মহাপরিচালক- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

06/06/2025
কোরবানি কি? আকিকা কেন?কুরআন-হাদীসের আলোকে অত্যন্ত সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায়  কুরবানী ও আকিকার ফাযায়েল- মাসায়েল এবং জ্বি...
05/06/2025

কোরবানি কি?
আকিকা কেন?

কুরআন-হাদীসের আলোকে অত্যন্ত সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় কুরবানী ও আকিকার ফাযায়েল- মাসায়েল এবং জ্বিলহজ্ব মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে রচিত একটি গুরুত্বপূর্ণ রিসালা।

৩২ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত কলেবরে সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তুসমূহ পরিপূর্ণভাবে উল্লেখ হওয়ায় গ্রন্থখানা শরীয়তসম্মত কুরবানীর জন্য 'গাইডলাইন' বা 'নির্দেশিকা' সাব্যস্ত হবে। তাই এটি আম-খাস সকলের জন্যই সংগ্রহে রাখার মত একটি অবশ্যপাঠ্য পুস্তিকা।

যোগাযোগ: 01826-723508

04/06/2025

যুগে যুগে ইহুদি জাতির কলঙ্কিত ইতিহাস
- হযরত মাওলানা শোয়াইব বিন ইয়াহইয়া (হাফি.)
-------------------------------
আল্লাহর নবী ইয়াকুব (আ.)এর অপর নাম ইসরাইল। এই নামেই তাঁর বংশধরদের বনি ইসরাইল বলা হয়। তারা ইব্রাহিম (আ.)-এর বংশধরদের একটি শাখা। এ শাখারই একটি অংশ পরবর্তীকালে নিজেদের ইহুদি নামে পরিচয় দিতে থাকে। হযরত ইয়াকুব (আ.)এর এক পুত্রের নাম ছিল ইয়াহুদা। সেই নামের অংশবিশেষ থেকে ‘ইহুদি’ নামকরণ করা হয়েছিল। (তাফসিরে মাওয়ারদি- ১/১৩১)।

ইহুদীদের মাঝে আল্লাহ তাআলা বহু নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। তাদেরকে আল্লাহ কিতাবও দিয়েছেন। তাই তাদের বলা হয় আহলে কিতাব। খ্রিস্টানদেরকেও আল্লাহ কিতাব দিয়েছিলেন, ফলে তাদেরকেও আহলে কিতাব বলা হয়। আহলে কিতাব দ্বারা সাধারণত ইহুদী-খ্রিস্টান উভয়ই উদ্দেশ্য হয়। তবে আজকের আলোচ্য প্রবন্ধ ইহুদীদের নিয়ে।

আহলে কিতাবদের মাঝে ভালো-মন্দ সব শ্রেণির মানুষই ছিল। তাদের যারা হেদায়েতপ্রাপ্ত ও নেক ছিল, তারা নিজ নবীর আনীত কিতাব ও শরীয়ত মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছে এবং নবীর বিদায়ের পরও তাঁর শরীয়তের ওপর অটল-অবিচল থেকেছে। তারা মূসা (আ.)এর ওপর এবং তাঁর প্রতি নাযিলকৃত কিতাব তাওরাতের প্রতি ঈমান এনেছে। এরপর হযরত ঈসা (আ.)এর আগমনের পর তাঁকেও খোলামনে গ্রহণ করেছে। কুরআন কারীমে যাদের বলা হয়েছে ‘উম্মাতুন মুকতাসিদাহ’ তথা সরল পথের অনুসারী। (সূরা মায়িদা- ৬৬)।

এরপর তাদের যারা সঠিক পথের ওপর অটল-অবিচল ছিল তারা আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিও ঈমান এনেছে এবং তাঁর প্রতি নাযিলকৃত কিতাব ও শরীয়তকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছে, কুরআন কারীমে তাদের বলা হয়েছে, ‘উম্মাতুন কা-ইমাহ’ তথা সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত। আরো বলা হয়েছে, ‘সালিহীন’ তথা নেককার ও সৎকর্মপরায়ণশীল। (সূরা আলে ইমরান- ১১৩-১১৪)।

কিন্তু তাদের যারা খারাপ ছিল, তারা বহু নবীকে হত্যা করেছে। আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত রাসূলের অবাধ্য হয়েছে এবং সমূহ অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। কুরআন কারীমে তাদেরকে وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ فٰسِقُوْنَ ‘তাদের অনেকেই অবাধ্য’ এবং وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ سَآءَ مَا يَعْمَلُوْنَ ‘তাদের অনেকেই এমন, যাদের কার্যকলাপ মন্দ’ বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। (সূরা মায়েদা- ৬৬; সূরা হাদীদ- ১৬)।

কুরআনে তাদের মন্দ শ্রেণির চরিত্র ও তাদের বহু অপকর্মের বর্ণনা এসেছে। আজও তারাই পৃথিবীর বড় বড় অপকর্মের হোতা এবং পৃথিবীতে ফাসাদ ও নৈরাজ্যের রাজা। তা নিয়েই আজকের নিবন্ধ।

যুগে যুগে তাদের অপকর্ম ও ঐতিহাসিক শাস্তির কথা রয়েছে পবিত্র কোরআনে। ইহুদি জাতি নিয়ে বেশি কষ্টে ভুগেছেন নবী হজরত মুসা (আ.)। কুরআনের বহু জায়গায় এর বিশদ বর্ণনা এসেছে। সুরা বাকারার শুরুর দিকে ইহুদি জাতির ওপর আল্লাহর রহমত এবং তাদের প্রায় ১২টি কুকর্ম ও এর শাস্তির বিবরণ রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা ইহুদিদের মিসরের ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা করার পর মুসা (আ.) তুর পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত আনার জন্য গেলে তারা গরুর বাছুরের পূজা আরম্ভ করে। আল্লাহ তাদেরকে এর শাস্তি দিয়ে ক্ষমা করার পর আবার তারা বায়না করে বসে আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখার জন্য। এজন্য তাদের ওপর ফেরেশতার মাধ্যমে তুর পাহাড় উঠিয়ে শাস্তির ভয় দেখানো হয়। মুসা (আ.)এর দোয়ায় তাদের জন্য কুদরতি খাবারের ব্যবস্থা করা হলে তারা অকৃতজ্ঞ হয়ে তা খেতে অস্বীকার করে। কখনো তারা মুসা (আ.)এর ওপর খারাপ অসুস্থতা ও ব্যভিচারের অপবাদ দেয়। এভাবে মুসা (আ.) আজীবন তাদের নিয়ে কষ্ট করেন।

আল্লাহ তাআলার আরেক নবী দাউদ (আ.) প্রতি শনিবার আল্লাহর কিতাব জবুর পাঠ করতেন, ওই সময় সমুদ্রের মাছও কিনারে এসে তাঁর তেলাওয়াত শুনত। কিন্তু ইহুদিরা ওই সময় মাছগুলো ধরে নিত। আল্লাহর পক্ষ থেকে ওই দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলে তারা আল্লাহর বিধানেও তাদের কূটবুদ্ধির অবতারণা করে, তারা শনিবার মাছ ঘেরাও করে রেখে রবিবার তা ধরত। আল্লাহ এর শাস্তিস্বরূপ তাদের একদলকে বানরে পরিণত করেন। তিন দিনের মাথায় ওই বানরের দল সব মারা যায়। (সুরা বাকারা- ৪৯-৭৩)।

ইহুদি জাতি হজরত সুলাইমান (আ.)এর ওফাতের পর পারস্পরিক বিভক্তি এবং ধর্মদ্রোহিতা ও কুকর্মের পথ অবলম্বন করে। কোনো কোনো নবী এসে আল্লাহর নির্দেশে ইহুদিদের এ ধরনের কার্যকলাপের শোচনীয় পরিণাম সম্পর্কে সতর্কবাণী শোনালেও তারা তাঁর কথা না মেনে উল্টো নবীর সঙ্গে বিদ্রোহ করে। তখন আল্লাহর গজব হিসেবে তাদের ওপর মিসরের জনৈক সম্রাট চড়াও হয়ে ব্যাপক হত্যা ও লুণ্ঠন চালায়।

এরপর কিছুদিন তারা মোটামুটি ভালোভাবে চলে, কিন্তু তাদের উপাদানগত কুপ্রবৃত্তি তাদের ভালো থাকতে দেয়নি। তারা খোদাদ্রোহিতার বশবর্তী হয়ে মূর্তিপূজা আরম্ভ করে। হজরত ইলিয়াস (আ.) ইহুদিদের পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। তিনি ইহুদিদের বিরাগভাজন হয়ে নির্যাতনের শিকারই শুধু হননি, তারা তাঁকে হত্যার জন্যও উদ্ধত হয়। পরিণামে আবার তাদের ওপর মিসরের জনৈক সম্রাট চড়াও হয়ে হত্যা ও লুণ্ঠন চালায়। তারপর অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়।

অতঃপর আবার অপকর্মে জড়িয়ে পড়লে তাদের ওপর বাবেল সম্রাট বুখতে নসর চড়াও হয়। সম্রাট বায়তুল মাকদিসে আক্রমণ চালিয়ে মসজিদে আকসা ধ্বংস করে দেয়। হত্যাযজ্ঞ ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে শহরটি উজাড় করে দেয়। এরপর ইহুদিরা বায়তুল মাকদিস থেকে নির্বাসিত হয়ে বাবেলে স্থানান্তরিত হয়। সেখানে চরম লাঞ্ছনা ও দুর্গতির মধ্যে ৭০ বছর পার করে। অতঃপর জনৈক ইরান সম্রাট বাবেল দখল করে ইহুদিদের ওপর দয়াপরবশ হয়ে তাদের আবার সিরিয়ায় পৌঁছে দেয়।

অতঃপর ঈসা (আ.)এর জন্মের ১৭০ বছর আগে আবার তারা পাপে লিপ্ত হলে আন্তাকিয়ার সম্রাট তাদের ওপর চড়াও হয়ে ৪০ হাজার হত্যা করে এবং ৪০ হাজার বন্দি করে। সম্রাট মসজিদে আকসারও অবমাননা করে। এর অনেক বছর পর বায়তুল মাকদিস রোম সম্রাটের দখলে চলে গেলে সে ইহুদিদের সাহায্য করে। এর আট বছর পর ঈসা (আ.)এর জন্ম হয়।

এভাবে বারবার ইহুদি রাজ্যের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছলেও এরা আল্লাহর নাফরমানি করতে থাকে। নবীগণ তাদের সতর্ক করলে তারা ওই নবীদের হত্যা করতে থাকে। (তাফসীরে বয়ানুল কুরআন- ২/৩৬৭-৩৬৮)।

হজরত ইয়াহইয়া (আ.) ইহুদিদের অশ্লীল কার্যকলাপের বিরোধিতা করলে তারা তাঁকে দ্বিখণ্ডিত করে কতল করে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত, বনি ইসরাইল ৩০০ আল্লাহর নবীকে হত্যা করেছে। (তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম- ১/১২৬)।

বর্তমান বিশ্বে ইহুদি জাতির ষড়যন্ত্র ও অপকর্মের ইতিহাস সর্বজনবিদিত। ইসরাইল পৃথিবীর একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র। ইউরোপ থেকে বহিষ্কৃত এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদি নিধনযজ্ঞের পর তারা ১৯২০ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে ইউরোপ থেকে পালিয়ে ফিলিস্তিনে ঠাঁই নেয়। সেখানে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিনিয়তই মুসলমানদের জমি দখল করেছে এবং অবৈধভাবে গড়ে তুলেছে স্থাপনা। এভাবে ভূখণ্ড দখলের মধ্যদিয়ে তারা রাষ্ট্র গঠন করে। নিজেদের আগ্রাসন টিকিয়ে রাখতে দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের নির্যাতন করে চলেছে অদ্যাবধি।

পবিত্র কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, ইহুদিরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী জাতি। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘যখনই তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালায়, আল্লাহ তা নিভিয়ে দেন এবং তারা জমিনে ফিতনা ফাসাদ ও গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না’। (সূরা মায়েদা- ৬৪)। ‘…তারা ছিল নাফরমান ও সীমা লঙ্ঘনকারী’। (সূরা বাকারা- ৬১)।

এই অভিশপ্তরা জাকারিয়া (আ.)কে হত্যা করেছে। ইয়াহইয়া (আ.)কে হত্যা করেছে। ঈসা (আ.)কে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। কতবার চেষ্টা করেছে আমাদের প্রিয়নবী (সা.)কে হত্যা করতে! খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দেওয়ার ঘটনা কি ইতিহাস ভুলে যাবে? নবীজি মৃত্যুশয্যায় বলেছিলেন, ‘খাইবারের সেই বিষাক্ত খাবার আমাকে আজও পীড়া দিয়ে যায়। এই তো আমার ধমনি বন্ধ হওয়ার সময় চলে এসেছে!’

আল্লাহ তাআলা নবী-রাসুলদের প্রহি তাদের অহংকার ও কুকর্মের কথা তুলে ধরে বলেছেন, ‘তবে কি যখনই কোনো রাসুল তোমাদের কাছে এমন কিছু নিয়ে এসেছে যা তোমাদের মনঃপূত নয়। তখনই তোমরা দাম্ভিকতা প্রকাশ করেছ এবং কতককে অস্বীকার করেছ, আর কত কে হত্যা করেছ?’ (সুরা বাকারা- ৮৭)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘বলো, যদি তোমরা মুমিন হতে, তবে অতীতে কেন আল্লাহর নবীদের হত্যা করেছিলে?’ (সুরা বাকারা- ৯১)।

বিকৃত ‘তালমুদ’ তাদের শিক্ষা দেয় নবীরা নাকি বিশ্বাসঘাতক, খুনি, নেশাগ্রস্ত ও প্রতারকদের দল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের মুখনিঃসৃত বাক্যও কী সাংঘাতিক! তারা শুধু মিথ্যা বলে’। (সূরা কাহাফ- ৫)।

মূলত এই ঘৃণ্য জাতীর অন্তরে আল্লাহ মোহর এঁটে দিয়েছেন। ফলে সেগুলো হয়ে পড়েছে কালো, রুগ্ন। পাথরের মতো শক্ত কিংবা তার চেয়েও পাষাণ্ড। ‘তারা বলে, আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত। বরং কুফুরির জন্য আল্লাহ তাদের লানত করেছেন। সুতরাং অল্পসংখ্যকই ঈমান আনে’। (সূরা বাকারা- ৮৮)।

তাদের অন্তরজুড়ে হিংসা-বিদ্বেষের বসবাস। সারাক্ষণ অন্যের ক্ষতি করার ফন্দি আঁটতে ব্যস্ত। অন্যকে কষ্ট দিতে পারলেই সে আগুন কিছুটা প্রশমিত হয়! তাই তো দেখা যায়, তারা শুধু দাঙ্গা-হাঙ্গামার শিখা জ্বালাতে ব্যস্ত। পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোই যেন তাদের একমাত্র মহাকর্ম। আল্লাহ বলেন, ‘যতবার তারা যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত করে ততবার আল্লাহ তা নির্বাপিত করেন এবং তারা পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে বেড়ায়। আর আল্লাহ পছন্দ করেন না বিশৃঙ্খলাকারীদের।’ (সুরা মায়েদা- ৬৪)।

তারা নিজেদের মনে করে আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত একমাত্র শ্রেষ্ঠ জাতি। শুধু তাই নয়; ‘তারা বলে, ইহুদি-খ্রিষ্টান ছাড়া অন্য কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না’। (সূরা বাকারা- ১১১)। কারণ, তাদের মতে, ‘তারা আল্লাহর পুত্র ও তার প্রিয়জন’। (নাউজুবিল্লাহ)।

অন্যান্য জাতি তাদের দৃষ্টিতে একেবারেই হীন ও নিকৃষ্ট। তাই অন্য কাউকে তারা নিজেদের ধর্মের প্রতি আহ্বান করে না। বরং তারা অন্যদের চতুষ্পদ জন্তু মনে করে তাদের ধন-সম্পদ নিজেদের জন্য বৈধ করে নেয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘এটা এজন্য যে, তারা বলে রেখেছে, উম্মিদের অধিকার বিনষ্ট করাতে আমাদের কোনো পাপ নেই’। (সুরা আলে ইমরান- ৭৫)।

তারা হারামকে হালাল সাব্যস্ত করে। ক্রয়-বিক্রয়ে চতুরতার আশ্রয় নেয়। নির্দ্বিধায় সুদ ভক্ষণ করে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং (তারা যে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল তা ছিল) তাদের সুদ গ্রহণের জন্য। যদিও তা তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে মানুষের ধন-সম্পদ হ্রাস করার জন্য। তাদের মধ্যে যারা কাফের, তাদের জন্য আমি মর্মন্তুদ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি’। (সুরা নিসা- ১৬১)।

দুনিয়ার লোভে তারা আসমানি বিধিবিধানেও বিকৃতি সাধন করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা আল্লাহর আয়াতগুলো তুচ্ছ মূল্যে বিক্রি করে।’ (সুরা তাওবা- ৯)। এদের রক্তে-মাংসে মিশে গেছে মিথ্যা আর প্রতারণা। আল্লাহ বলেন, ‘তারা মিথ্যা শ্রবণে অত্যন্ত আগ্রহশীল এবং অবৈধ ভক্ষণে অতি আসক্ত।’ (সুরা মায়েদা- ৪২)। প্রতিশ্রুতি, চুক্তি ও নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই তাদের অভিধানে। আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি যখনই তারা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে, তখনই তাদের কোনো একদল তা ভঙ্গ করেছে।’ (সুরা বাকারা- ১০০)।

তাদের এই বিশ্বাসঘাতকতার ধারা একদিনের নয়, বরং তা চলে আসছে যুগযুগ ধরে, বংশ পরম্পরায়। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করছেন, ‘আপনি সর্বদা তাদের অল্পসংখ্যক ব্যতীত সবাইকেই বিশ্বাসঘাতকতা করতে দেখবেন’। (সূরা মায়েদা- ১৩)।

তারা ভীতু। নারী কিংবা দুর্বলদের ওপরই তাদের ক্ষমতা ও দাপট সীমাবদ্ধ। প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার সৎসাহস নেই তাদের। আল্লাহ বলেন, ‘তারা সংঘবদ্ধভাবেও তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবে না। তারা যুদ্ধ করবে শুধু সুরক্ষিত জনপদে অথবা দুর্গপ্রাচীরের আড়াল থেকে। তাদের পারস্পরিক যুদ্ধই প্রচণ্ড হয়ে থাকে। আপনি তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ মনে করেন; কিন্তু তাদের অন্তর শতধাবিচ্ছিন্ন। এটা এ কারণে যে, তারা এক কাণ্ডজ্ঞানহীন সম্প্রদায়’। (সুরা হাশর- ১৪)।

ইহুদিদের সম্পর্কে উল্লেখিত এসব তথ্য রূপকথার গল্প নয়। তাদের কুকর্মের টুকরো অংশ মাত্র। যা বর্ণনা করেছেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা মহান রাব্বুল আলামিন। তাদের ব্যাপারে আল্লাহর চেয়ে ভালো কে জানতে পারে?

আজ অবধি তাদের চরিত্রে এতটুকু পরিবর্তন আসেনি। তারা যেমন ছিল, তেমনি আছে। যতদিন বিকৃত ‘তালমুল’ তাদের চালিকাশক্তি হয়ে কাজ করবে, ততদিন পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনাও নেই। ইহুদি জাতির প্রধান চালিকাশক্তি হলো তাদের বিকৃত ধর্মগ্রন্থ ‘তালমুদ’। এটি তাওরাতের মতো নয়, শুধু ইহুদিদের মৌখিক আইন হিসেবে পরিচিত। এতে তারা নিজেদের সুবিধামতো বিধি-বিধান প্রণয়ন করেছে। ‘তালমুদ’ তার অনুসারীদের ভ্রষ্টতার সুদূর প্রান্তরে নিক্ষেপ করেছে। তাদের অন্তরে বপন করে দিয়েছে আমিত্ব ও দাম্ভিকতার আত্মঘাতি বীজ।

তারা আল্লাহর সত্তার ব্যাপারে বিকৃতির শিকার। মহান আল্লাহর ব্যাপারে তাদের বক্তব্য এমন জঘন্য, যার কারণে আকাশমণ্ডলী বিদীর্ণ হয়। পৃথিবী খণ্ডবিখণ্ড হয়ে পড়ে। পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। তারা বিশ্বাস করে, উযাইর (আ.) আল্লাহর পুত্র। (নাউজুবিল্লাহ)। আল্লাহ বলেন ‘ইহুদিরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র। এবং খ্রিষ্টানরা বলে, মাসিহ আল্লাহর পুত্র’। (সুরা তওবা- ৩০)।

তাদের অতীত ও বর্তমানের চিত্র অভিন্ন। নবীযুগে হুআই ইবনে আখতাব বলেছিল, ‘মুহাম্মদের সঙ্গে আমার শত্রুতা চলবে আমৃত্যু।’ এই উম্মতের একটা বিষাক্ত বিষফোঁড়া ছিল আবদুল্লাহ ইবনে সাবা। অতীতে ইহুদিরাই তাকে জন্ম দিয়েছে। ফেতনার এমন আগুন সে উস্কে দিয়েছিল, যা উসমান (রাযি.) এর প্রাণ হরণ করে তবেই ক্ষান্ত হয়েছে!

অতীতে তারাই বিশ্বযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছে। উসমানি খেলাফতের পতন ডেকে এনেছে! এতসবের পরও আজকের ইহুদিরা কীভাবে সাধু হতে পারে? তারা তো নিকৃষ্ট পূর্বসূরির নিকৃষ্ট উত্তরসূরি! আজ পুরোনো সেই বিদ্বেষেরই পুনঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে তারা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘শত্রুতাপ্রসূত বিদ্বেষ তাদের মুখ ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশি জঘন্য’। (সুরা আলে ইমরান- ১১৮)।
----------------------------
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক ও আবাসিক হল পরিচালক- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

04/06/2025

কুরবানীতে যেভাবে নফসের দমন ও আত্মত্যাগের চর্চা হয়
- মাওলানা মুনির আহমদ (হাফি.)
---------------------------
মানবকালের শুরু হতেই কুরবানীর বিধান চলে আসছে। হযরত আদম (আ.)এর পুত্রদ্বয় হাবিল ও কাবিল এক বিশেষ বিষয়ে ফলাফল নির্ণয়ের জন্য যথাক্রমে হাবিল একটি হৃষ্টপুষ্ট দুম্বা এবং কাবিল কিছু শস্য কুরবানীস্বরূপ পেশ করেছিলেন। হাবিলের কুরবানী কবুল হল। আসমান থেকে একটি অগ্নি শিখা এসে হাবিলের দুম্বা ভস্ম করে দিল। অপরদিকে কাবিলের কুরবানীকৃত শস্য আসমানী আগুন জ্বালালো না। সে সময় কুরবানী কবুল হওয়া না হওয়ার এরূপ নিশানাই সাব্যস্ত ছিল।

হযরত ইবরাহীম (আ.)কে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বহু রকমের পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় এবং তিনিও প্রতিটি পরীক্ষায় চরম কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ফলে তিনি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘খলিলুল্লাহ (আল্লাহর অন্তরঙ্গ বন্ধু)’ উপাধীতে ভূষিত হন।

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত ইবরাহীম (আ.) তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)কে কুরবানী করতে আদিষ্ট হয়ে সকল স্বার্থ ও দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে উঠে, সকল মায়া-মুহাব্বত বিসর্জন দিয়ে আপন রবের হুকুমের যথার্থ তা’মিল করেছিলেন। ফলে ইরশাদে ইলাহী নাযিল হয়- قَدۡ صَدَّقۡتَ الرُّءۡیَا ۚ اِنَّا کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۱۰۵﴾ অর্থাৎ- “হে নবী! আপনি স্বপ্নের আদেশকে যথানুরূপ বাস্তবায়ন করেছেন। নিশ্চয় আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি”। (সূরা- আস-সাফফাত- ১০৫)।

হযরত ইবরাহীম (আ.)এর কর্তব্যপরায়ণতা, খোদাভক্তি ও নিষ্ঠার চরম পরাকাষ্ঠা প্রত্যক্ষ করে মহান আল্লাহ খুশি হয়ে বেহেশতি দুম্বা পাঠিয়ে দেন। ইসমাঈল (আ.)এর পরিবর্তে দুম্বা কুরবানী হয়। তাই আজ কুরবানীর নামে হযরত ইবরাহীম (আ.)এর ত্যাগ-তিতিক্ষা, সংগ্রাম-সাধনা ও প্রেম-নৈকট্যের দৃষ্টান্ত ও আত্মত্যাগ নিয়ে প্রতি বছর বিশ্ব মুসলিম আল্লাহর দুয়ারে সমাগত হয়।

সুতরাং আমাদের মাঝে হযরত ইবরাহীম (আ.)এর চরম আত্মত্যাগ অবিস্মৃত স্মৃতিরূপে ভাস্বর হয়ে আছে। সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা পরবর্তীদের জন্য সেই কুরবানীকে একটি পালনীয় রীতি হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে- فَاتَّبِعُوۡا مِلَّۃَ اِبۡرٰهِیۡمَ حَنِیۡفًا ؕ অর্থাৎ ‘একনিষ্ঠভাবে তোমরা ইবরাহীমী মিল্লাতের অনুসরণ কর’। (সূরা আলে ইমরান- ৯৫)।

মোটকথা, ‘কুরবানী’ হচ্ছে ত্যাগ-তিতিক্ষা প্রদর্শনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর অধিক নৈকট্য ও সান্নিধ্য অর্জনের অনন্য সোপান। কুরবানীর মাধ্যমে বান্দা স্বীয় খাহেশাতকে বিসর্জন দিয়ে মহান আল্লাহর সমীপে আত্মনিবেদন পূর্বক তাঁর আদেশ সম্পর্কিত হুকুম পালন করতঃ তাঁর নৈকট্য লাভে অগ্রসর হয় বিধায় এটিকে ‘কুরবান’ নামে নামকরণ করা হয়েছে।

লক্ষণীয় যে, হযরত ইসমাঈল (আ.) যবেহ না হলেও হযরত ইবরাহীম (আ.)এর আন্তরিকতা ও পূর্বাপর সকল প্রস্তুতিকেই আল্লাহ তাআলা ‘বাস্তবায়ন’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তা কবুল করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তাআলা তো দেখেন মানুষের আন্তরিক ইচ্ছাকে।

প্রতি বছর আমরা যে পশু কুরবানী করছি, তার গোশত তো আমরাই খাচ্ছি। তার চামড়া-হাড় দ্বারা তো আমরাই উপকৃত হচ্ছি। কুরবানীর পশুর কোন কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। তাহলে এই কুরবানীর উদ্দেশ্য কী? কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে- لَنۡ یَّنَالَ اللّٰهَ لُحُوۡمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰکِنۡ یَّنَالُهُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ ؕ অর্থাৎ-‘ কুরবানীর পশুর গোশত আল্লাহ তাআলার দরবারে পৌঁছে না, পৌঁছে না তার রক্ত। তবে তোমাদের তাকওয়াই তাঁর কাছে যায়। (সূরা হজ্জ- ৩৭)।

আল্লাহ তাআলা পরীক্ষা নেন কেবল আমাদের মনোবৃত্তিরই। কিন্তু আজ আমাদের সামাজের দিকে তাকালে কী দেখতে পাই? আমারা দেখতে পাই, কুরবানীকে যেন গোশত ভক্ষণের এক মহোৎসব মনে করা হয়। সমাজের যারা সম্পদশালী, তারা যেন কুরবানীর পশু ক্রয় করতে এক রকম প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন। কে কত চড়া দামে পশু ক্রয় করবেন, এটাই হয়ে উঠে মূখ্য বিষয়।

আর যারা অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল, দরিদ্র, তারা ঈদুল আযহা আসলেই এক মহাচিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তারা কুরবানী না দিতে পারায় মনোবেদনায় ব্যথিত হন। নিজেদের সামর্থ্যহীনতার কথা বিবেচনা করা হয় না; বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধু সামাজিকতা মেইনটেন করার জন্য কুরবানী করা হয়। এমনকি তারা কুরবানী করার জন্য ঋণ পর্যন্ত করতেও বাধ্য হয়। জিজ্ঞেস করলে বলে- সবাই দিচ্ছে, আমি দিব না; এটা কেমন হয়। তাছাড়া বাড়িতে স্ত্রী-পরিজন নিয়ে গোশত খাওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

সাত ভাগে কুরবানী দেওয়া যায়। সাতভাগে কুরবানী দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের নিয়তের কতটা নিষ্ঠতা থাকে, তা ভাবার বিষয়। যে সমাজে দুই জন লোক এক হতে পারে না, ভাই ভাই দ্বন্দ্ব-কলহ লেগেই থাকে। ফলে সাত ভাগের কুরবানীর ক্ষেত্রে গোশত ভাগ বণ্টনের সময় দেখা যায় তুমুল বাকবিতণ্ডা। এতে গোশত ভক্ষণের উদ্দেশ্যটাই যেন ফুটিয়ে তোলা হয়। অথচ একমাত্র মহান আল্লাহর হুকুম তা’মিল ও তাঁকে রাজি-খুশি করার জন্যই কুরবানী দেওয়ার ব্যাপারে সবার নিয়ত এক থাকা অপরিহার্য। না হলে কুরবানী হবে না। কিন্তু আমরা ক’জনই সেদিকে লক্ষ রাখি!

যদি হযরত ইসমাঈল (আ.)এর যবেহই মঞ্জুরে ইলাহী হতো এবং হযরত ইবরাহীম (আ.)এর হাতে তাঁর কুরবানী হতো, আর সেই আমলের পরম্পরায় আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় সন্তানদেরকে যবেহ করার হুকুম হতো, তা কত কঠিন ব্যাপারই না ছিল! তথাপি মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন করলে আমাদের তা পালন করতেই হতো। এ ক্ষেত্রে পরম করুণাময় আল্লাহ আমাদের উপর বড় মেহেরবানী করেছেন যে, তিনি পশু কুরবানীকে তার স্থলাভিষিক্ত করেছেন।

তাই ইবরাহীমী কুরবানীর স্মৃতিগাঁথা ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। খলীলী ইশকের দীক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে আহকামে ইলাহীর সামনে নিজের খাহেশাত বা কামনা বাসনাকে কুরবান করতে হবে। সর্বান্তকরণে নিজেকে সঁপে দিতে হবে ইসলামের তরে। প্রকৃতপক্ষে কুরবানী হচ্ছে ত্যাগের এক সমুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আর সেই ত্যাগের দৃষ্টান্ত হিসেবে কুরবানী দিতে হবে যার যার সমর্থ অনুযায়ী মোটাতাজা পশু দিয়ে। আর কুরবানী শেষে নিজের নফসের সাথে মোকাবেলা করে কুরবানীর গোশত নিজ নিজ ফ্রিজে না ভরে রেখে, নিজেদের পরিবার-পরিজন নিয়ে আহারের পাশাপাশি পাড়া-প্রতিবেশি, ফকির-মিসকীন এবং আত্মীয়-স্বজনের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে। কারণ, নফস চাইবে কুরবানীর পশুর মূল্যবান গোশতগুলো শুধু নিজেদের আহারের জন্য রেখে দিতে ফ্রিজে ভরতে। কিন্তু সেটা করা যাবে না।

বরং কুরবানীর যে আত্মত্যাগ ও মনের পশুকে বদ করার কথা বলা হয়, যে সহমর্মিতা ও স্রষ্টার জন্য নিবেদিত হওয়ার কথা বলা হয়, ইখলাসপূর্ণ নিয়তের পাশাপাশি সেটার দৃশ্যমান আমলও করতে হবে। আর সেটা এভাবে যে, মন চাইবে না হাজার হাজার টাকা মূল্যমানের কুরবানীর গোশতকে তিন ভাগ করে দুই ভাগ অকাতরে বিলিয়ে দিতে। মন চাইবে কুরবানীর গোশতকে প্রয়োজনমাফিক রান্না করে ও গরিবদেরকে অতি সামান্য কিছু দিয়ে বাকিটা ফ্রিজে ভরে রাখতে, যাতে মাসের পর মাস সেটা নিজেরাই আহার করে ভোগ করা যায়। কিন্তু এতে তো কুরবানীটা যে আল্লাহর জন্যই নিবেদিত ছিল, তার প্রমাণ হয় না। বরং এতে নফসের দাসত্ব, আত্মকেন্দ্রিকতা, লোক দেখানোর মানসিকতার প্রমাণ মিলে।

কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে আহার এবং বাকি দুই ভাগ বিলিয়ে দেওয়ার মাঝে যেমন মহান আল্লাহর প্রতি নিবেদিত হওয়ার প্রমাণ মিলে, তেমনি এতে মানবিকতা, সহমর্মিতা, আত্মীয়তার সম্পর্ক, সামাজিকতা ও মানুষে মানুষে সম্পর্ক বৃদ্ধির উত্তম অনুশীলনের মাধ্যমে বৃহত্তর উম্মাহ গড়ার পথও সুগম হয়। একই সাথে এতে সকলের একসাথে উত্তম আহারের মাধ্যমে ঈদের আনন্দ উদযাপনেরও সার্থকতা অর্জিত হয়। অথচ তথাকথিত মানবতার ধ্বজাধারি পুঁজিবাদের সৃষ্ট কর্পোরেট হাউজগুলো মুসলমানদের কুরবানিতে সর্বস্তরে অকাতরে কুরবানির গোশত বিলানোর মানবিকতা, সহমর্মিতা, সংহতি, সামাজিকতা ও ঈদের ঐক্যবদ্ধ আনন্দ উদযাপন চর্চার পথে বাধা তৈরি করতে আকর্ষণীয় ছাড়ের বিজ্ঞাপন দিয়ে ফ্রিজ বিক্রির পসরা সাজায়।

কুরবানিতে ইসলাম মুসলামনদের মাঝে চাহিদা পেশ করে মনের কুপরামর্শ মেনে রোগা-খোঁড়া ও যেনতেন কম মূল্যের পশুর পরিবর্তে মোটা-তাজা, সুস্থ ও সুন্দর পশু নির্বাচন করতে এবং সেই সুন্দর পশুর কুরবানী দেওয়া উত্তম গোশতগুলো ফ্রিজে না ভরে একটা অংশ পরিবারের সকলকে নিয়ে খেয়ে আনন্দ করতে, বাকি দুইটা অংশ পাড়াপ্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন ও গরিব-মিসকিনদের মাঝে বিলিয়ে ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে মানবিকতা ও ঐক্যের উত্তম চর্চা করতে। অন্যদিকে পুঁজিবাদি ব্যবস্থা প্রচারণা চালায় সকলকে বঞ্চিত করে গোশতগুলো ফ্রিজে ভরে আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপরতার চর্চা করতে। আর এই পুঁজিবাদিরাই আবার নানাভাবে ইসলামকে অমানবিক ও নিষ্ঠুর হিসেবে দেখাতে নানান মিথ্যা প্রচারণা চালায়। কী বিচিত্র সেলুকাস!

বলাবাহুল্য, পশু কুরবানী তো একটি প্রতীকী আমল। কুরবানীর গোশত বিলানোকে উৎসবে পরিণত করেই এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যকে অর্থবহ করে তুলতে হবে। কারণ, আল্লাহর রাজি-খুশির উদ্দেশ্যে উত্তম পশু কুরবানীর পর এর মূল্যবান গোশতগুলো নিজেরা আহার করার পাশাপাশি পাড়াপ্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন ও গরীবদের মাঝে বিলিবণ্টনের মাধ্যমে নফসের কুবাসনাকে বিসর্জন দেয়ার মধ্য দিয়েই কুরবানীর উদ্দেশ্যকে ফলপ্রসূ করতে হবে। তাই কুরবানীর প্রক্কালে সর্বাগ্রে নফ্সানী খাহেশাত, প্রবৃত্তি, লোভ-লালসা ও দুনিয়ামুখিতার গলায় ছুরি চালাতে হবে। নিজের মনের খেয়াল খুশিতে নয়, বরং আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ মোতাবেক সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত পথে চলার সংকল্প করতে হবে। যে কোন পরিস্থিতিতে আল্লাহর ভয় ও আখেরাতের জবাবদিহিতার আশঙ্কায় সর্বপ্রকার অনৈসলামিক বা মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

মানুষ যেখানে সারাক্ষণ নিজের সামান্য কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার জন্য, নিজের চাহিদা পূরণের জন্য যে কোন রকম ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকে, সেখানে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নির্দেশ পালন কল্পে, তাঁর রহমতের দ্বারে কড়া নাড়ার জন্য, তাঁর দয়া দৃষ্টি নিজের দিকে আকর্ষণ করার জন্য ত্যাগ স্বীকার করে সর্বোচ্চ কুরবানী করতে হবে। এ ত্যাগ এ কুরবানী পশু কুরবানী থেকে শুরু করে আত্মোৎসর্গ পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত। খোদাভীতির সামনে পরিবেশ পরিস্থিতি, সমাজ সংস্কার আর পার্থিব ভয়-ভীতিকে এবং আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালবাসার সামনে মানুষের সহায়-সম্পদ, পরিবার-পরিজন এবং নিজের জীবনের ভালবাসাসহ অন্যান্য যাবতীয় প্রেম-ভালবাসাকে উৎসর্গ করতে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।

আল্লাহর হুকুম পালনে হযরত ইব্রাহীম (আ.) যেরূপ প্রবল মনোবল নিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন, ইবলিস শয়তানও তত কঠোর প্রতিরোধ নিয়ে বাঁধা দিয়েছিল। কিন্তু শয়তান তাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তিনি রমিয়ে জিমার (পাথর নিক্ষেপ) করে শয়তানকে বিতাড়িত করেছিলেন। যার স্মৃতি আজ হজ্জের আমল হিসেবে গন্য।

ঐ প্রতীকী স্তম্ভ জগদ্বাসীকে বলছে যে, যে কোন প্রকার সৎকাজে অগ্রসর হওয়ার সময় যদি শয়তান কোন প্রকার বাঁধার সৃষ্টি করে, তাহলে আল্লাহর এ ক’জন সেরা নবীর নিদর্শন স্মরণ করে তওবা স্বরূপ ভীষণ প্রস্তরাঘাতে তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে অনেক দূরে নিক্ষেপ করো।

আল্লাহর আদেশ পেয়ে হযরত ইবরাহীম (আ.) পার্থিব মায়া পরিত্যাগ করে প্রাণপ্রিয় পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়ে ছিলেন। অনুরূপভাবে আমাদেরকেও প্রকৃত মুসলমান হতে হলে কীভাবে শত প্রেম ভালবাসা, মায়া-মুহাব্বাত ছিন্ন করে, শত বাধাবিঘ্ন, শয়তানি কুচক্র পদদলিত করে কঠোর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়, আর কীভাবেইবা পরম দয়ালু আল্লাহ তাআলা তাঁর সন্তুষ্টির জন্য লালায়িত বান্দাকে শত সহস্র বিপদ হতে অচিন্তনীয়ভাবে সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করেন, কুরবানী তাই শিক্ষা দেয়।

আজও কুরবানীর ব্যাপারে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়ে প্রতিরোধে তৎপর হয়। মুসলিম সমাজে কুরবানির বিরুদ্ধে নানা কুযুক্তি হাজির করে। ফ্রিজে কুরবানির গোস্ত ভরতে পুঁজিবাদি ব্যবস্থা কুরবানির উদ্দেশ্য পূরণে বাঁধা তৈরি করে। কিন্তু মিল্লাতে ইব্রাহীমির ধারক আল্লাহর খাঁটি মুসলমান বান্দাগণ শয়তানকে পরাজিত করে আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়ন করেন। তথাপি শয়তান কতক লোককে তার দলে ভিড়াতে সক্ষম হয়। তাদের কেউ শয়তানী প্ররোচণায় কুরবানী দ্বারা কেবল নাম কামানোর ধান্ধায় থাকে। আবার কেউ ওয়াজিব দায়িত্ব আদায়ে অনীহা দেখায়। উপরন্তু শয়তানিতে প্ররোচিতদের কেউ কেউ কুরবানীকে নির্মম পশু হত্যা ও অপচয় বলে ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি পর্যন্তও করে বসে। অথচ দেখা যায়, কথিত পশুপ্রেমি এই লোকগুলোর মাছ-গোশত ছাড়া কোন দিনই ভুরিভোজ হয় না।

ইসলাম তো হচ্ছে সবান্তকরণে আল্লাহর সমীপে আত্মনিবেদন করার নাম। আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর সৃষ্টি উত্তম পশু কুরবানী করবে, সবার মাঝে কুরবানীর গোশত বিলাবে, এতে সংকীর্ণমনা হওয়ার আবকাশ নেই। এ ব্যাপারে যারা বিরূপ উক্তি করে, তাদের অনেকে ইসলামী নামের অধিকারী হলেও মূলতঃ তারা ধর্মদ্রোহী নাস্তিক মুরতাদদের কাতারেই তাদের অবস্থান আবিষ্কার করা উচিত।

ঈদুল আযহার পশু কুরবানী যেহেতু আল্লাহর আদেশ পালন ও ইবাদত; তাই এক্ষেত্রে মনে কোন সংকীর্ণতার স্থান দেয়া জায়েয নেই। বরং স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লাহর এ হুকুম পালন করতে হবে। কুরবানীর জন্য সুস্থ, সবল, মোটাতাজা উত্তম পশু নির্বাচন করতে হবে। কুরবানীর পর সবার মাঝে গোশত বিলি-বণ্টনের মাধ্যমে উম্মাহর ঈদ-আনন্দকে সার্বজনীনতায় রূপ দিতে হবে। এর মধ্য দিয়ে উম্মাহ’র সংহতি, সহমর্মিতা, সদাচরণ ও ঐক্যের উত্তম চর্চা হবে। আর এতেই ঈদুল আযহার আনন্দ উদযাপন সফল ও সার্থক হবে।

মূলতঃ হযরত ইব্রাহীম (আ.) যেমন কঠিন পরীক্ষার মুহূর্তে প্রমাণ করেছিলেন- قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰهِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ অর্থাৎ- “আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবই বিশ্ব পালনকর্তা মহান আল্লাহর জন্যই নিবেদিত।” (সূরা আন্আম- ১৬২)। আমাদেরকেও ইখলাসপূর্ণ নিয়তের মাধ্যমে উত্তম পশু দিয়ে কুরবানী দিয়ে সেই কুরবানীর গোশত ফ্রিজে না ভরে বিলানোর মাধ্যমে আল্লাহর জন্য নিবেদিত হতে হবে। কুরবানীতে যে ত্যাগের কথা বার বার উচ্চারিত হয়, উত্তম পশু নির্বাচন ও মনের ইচ্ছাকে দমিয়ে অকাতরে বিলিয়ে দেওয়ার মাধ্যমেই করতে হবে কুরবানীর বহুল আলোচিত ত্যাগের উত্তম চর্চা।

‘কুরবানী’ প্রতি বছর আসে যায়, আমাদের বারবার ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করে। সারা বছরের কর্মতৎপরতায় কুরবানীর শিক্ষাকে ধারণ করে রাখাই সচেতন ধার্মিকের কাজ।

সুতরাং, আসুন! আমরা কুরবানীর শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে সকলকে আনন্দ উদযাপনে শামিল করার মাধ্যমে ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। আল্লাহর অধিক নৈকট্য ও সান্নিধ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে নিজেকে সর্বান্তকরণে সঁপে দেই ইসলামের তরে। আল্লাহ্ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন।
------------------------------------
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক- মাসিক মুঈনুল ইসলাম, সম্পাদক- উম্মাহ টুয়েন্টিফোর ডটকম।

Address

Darul Uloom Mueenul Islam
Hathazari
4330

Telephone

+8801815647211

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when মাসিক মুঈনুল ইসলাম posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to মাসিক মুঈনুল ইসলাম:

Share

Category