12/07/2025
গল্প: ছবির ফ্রেমে বন্দী অর্জন
নাম তার আইলাইফিল। ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির প্রতি আকর্ষণ, কিন্তু উদ্দেশ্য কখনো ছিল না মানুষের সেবা—ছিল কেবল পরিচিতি, নাম আর ছবি। কলেজে উঠেই সে বড় এক দলের সাথে যুক্ত হয়। পোস্টার টাঙ্গানো, মিছিল করা, সোশাল মিডিয়ায় নেতার ছবি শেয়ার করা ছিল তার প্রতিদিনের কাজ।
একদিন সুযোগ এলো—জেলা শহরে আসছে দেশের এক বড় রাজনৈতিক নেতা। রাশেদ জীবনের প্রথমবারের মতো সামনে দাঁড়িয়ে একটি ছবি তুললো তার প্রিয় নেতার সাথে। সেদিন সে রাতে ঘুমাল না—ছবিটা প্রিন্ট করিয়ে ঘরের দেয়ালে টাঙালো। বাবা কিছু বলেছিল, “ছেলে, যদি এমন করে নিজের পরিশ্রম দিয়ে কিছু করতি, তবে আমি গর্ব করতাম।”
রাশেদ হেসে বলেছিল, “বাবা, তুমি বুঝবা না। নেতা সাহেবের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা মানে আমি কিছু একটা হয়ে গেছি।”
এরপর জীবন এগোলো। রাশেদ নিজে কিছু না করেও ‘চেনাজানা’ দিয়ে বিভিন্ন কাজ হাসিল করতে লাগলো। একদিন এক বন্ধুকে চাকরি পাইয়ে দিতে গিয়ে আরেকজনকে অন্যায়ভাবে বাদ দেয়। বন্ধু বলল, “তুই আমার জন্য যা করলি, এটা তো ভাই ভাইয়ের জন্য বড় অর্জন!”
রাশেদ গর্ব করে মাথা উঁচু করল, কিন্তু তার ভিতরের মানুষটা একটু কেঁপে উঠল।
বছর দশেক পর...
এক সন্ধ্যায় বৃদ্ধ বয়সে রাশেদ তার ছেলেকে নিয়ে বসে। দেয়ালে ঝোলানো সেই পুরোনো ছবির দিকে তাকিয়ে ছেলে প্রশ্ন করে, “আব্বা, তুমি জীবনে কী করছো?”
রাশেদ একটু থেমে বলে, “আমি নেতা সাহেবের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম...”
ছেলে আবার জিজ্ঞেস করে, “কিন্তু তুমি কী করছিলে, নিজের মতো করে?”
রাশেদের চোখে জল আসে। ছবির দিকে তাকিয়ে সে বুঝে যায়, একটা ফ্রেমে আটকে আছে তার পুরো জীবন। অথচ সে নিজে কোনো গল্প লেখেনি, শুধু অন্যের গল্পে দর্শক হয়ে থেকেছে।
শেষ কথা:
আমরা অনেক সময় অন্যের ছায়ায় দাঁড়িয়ে নিজেকে গর্বিত ভাবি, অথচ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারাটা সবচেয়ে বড় অর্জন। যেদিন আমরা বুঝতে শিখবো—মানুষ হওয়ার চেয়ে বড় ছবি আর কিছু নেই, সেদিন হয়তো সত্যিকার অর্থেই দেশটা "বাংলাদেশ" হবে।