25/07/2025
ছেলেটার সাত বছরের রিলেশন ছিলো মেয়েটার সাথে। মেয়েটা আমাদের ডিপার্টমেন্টে পড়তো! নাম মোহনা।
ভাইয়ার নাম ছিল শামস। আমাদের হলেই থাকতেন উনি। কোনদিন হাসি ছাড়া দেখিনি ওনাকে। এত ভদ্র ছেলে পুরো ক্যাম্পাসে পাওয়া দুষ্কর ছিল। মেয়েটাকে ভালো ও বাসতেন পাগলের মতো। প্রায় দেখা যেত ক্যাম্পাসে হাতে হাত রেখে হাঁটছেন দুজন। আমাদের চোখে পড়তেই হাত ছেড়ে লাজুক হাসি দিতেন শামস ভাই। মাঝে মাঝে তিনটা- চারটায় ঘুম থেকে উঠে দেখতাম, তখনও হলের করিডোরের এক কোণায় দাঁড়িয়ে গুজুরগুজুর করে চলছেন শামস ভাই ।
একটা চাকরির অভাবে সেই সম্পর্কটা বদলে গেল কি ভীষণ ভাবে!
ততদিনে ভাইয়ের মাস্টার্স পড়া শেষ চাকরি পাচ্ছেন না বলে হলে থেকে গেলেন আরো দেড় বছর। মেয়েটা ছেড়ে চলে গিয়েছিলো মাস্টার্স শেষের এক বছরের মাথায়। যাবেই বা না কেনো, সুন্দরী মেয়ে, বাসায় বিয়ের প্রস্তাব এসেছে ছেলে প্রশাসন ক্যাডার।
যাওয়ার আগে মেয়ে বলে গিয়েছিলো চাকরি পাও না, যোগ্যতা নেই, ভালবাসতে এসেছিলে কেন?"
ব্রেকআপের পর ভাই প্রায়ই আমার রুমে আসতেন সিগারেট খেতে। সব সময় দেখতাম হাতে কোন না কোন বিসিএস এর বই। ঘন্টার পর ঘন্টা ধোয়া ছাড়তে আর মাঝে মাঝে উনার জীবনের গল্প বলে চলতেন। বাড়ির রান্না ঘরের কোনাটা ভেঙে পড়েছে, ছোট বোনের বিয়ের বয়স হয়ে গিয়েছে, বাপ পেনশনে চলে গেছেন এ বছর। মাঝে মাঝে কথা বলা বন্ধ করে সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকতেন আর কি যেনো ভাবতেন হয়তো সেই ভাবনা আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
দেড় বছরের মাথায় শামস ভাইকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো। বের করে দিয়েছিলো তারাই, যারা শামস ভাই এর হেল্প নিয়ে এই পর্যন্ত এসেছে। শামস ভাই ই তাদের হলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
যেদিন বেরিয়ে যাচ্ছিলেন চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়ছিল ভার্সিটিতে ক্লাস শেষ করে এসে দেখি ভাই যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আমাকে দেখে চোখে পানি নিয়ে কষ্টে একটা হাসি দিয়ে বলেছিলেন আর যাই করিস প্রেম করতে যাস না ভাই। কথাটা কাগজে লিখে দেয়ালে টানিয়ে রেখেছিলাম।
উপরের কথাগুলো প্রায় বছর দশেক আগের।
ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত একটা কাজে বহুদিন ধরে চেষ্টা করছিলাম একটা কাস্টমস অফিসার এর সাথে যোগাযোগ করতে, বিশেষত ভার্সিটির কোন বড় ভাইয়ের সাথে। হেল্প পাওয়া যায় তাহলে। খোঁজ খবর নিয়ে যা জানলাম তাতে আমার মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম হলো। শামস ভাই এখন এয়ারপোর্টের নামিদামি কাস্টমস অফিসার।
সময় করে গেলাম একদিন ভাইয়ের অফিসে। চকচকে সেক্রেটারিয়েট একটা টেবিলে বসেছিলেন তিনি। আমাকে দেখে বিশাল এক হাসি দিয়ে এসে বুকে বুক মিলালেন শামস ভাই । একথা সেকথার পর উঠলো সংসারের কথা, বললাম এখনো বিয়ে করেনি। বোহেমিয়ান জীবন ই ভালো লাগছে। ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললেন বিয়ে করেছেন একটা ফুটফুটে বাচ্চা ও হয়েছে। ভাবি আবার সলিমুল্লাহ মেডিকেলের ডাক্তার।
অনেকক্ষণ যাবৎ মনের মধ্যে একটা কথা বাধছিলো। শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে ফেললাম— ‘মোহনার কথা মনে পড়ে না ভাই?’ বেশ বড়সড় একটা হাসি দিয়ে বললেন, ‘না রে।’ জীবনে যা চেয়েছিলাম তার চেয়ে অনেক বেশি পেয়ে গিয়েছি। এখন আর ছোটখাটো চাওয়াগুলো পাত্তা পায় না।
জিজ্ঞেস করলাম— ‘মোহনার আর কোন খবর পাননি?’ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন — ‘শুনেছিলাম বছরখানেক আগে ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে, তারপর আর কোন খবর পাইনি!’
ভাইয়ার গাড়িতে একসাথে বাড়ি ফেরার পথে ভাইয়ের একটা কথা প্রায়ই কানে বাজে— ‘লাইফে কাউকে ঠকাস না রে! জীবন কাউকে ছাড় দেয় না, প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়ে।’