11/05/2025
৬ আজ তোমার দিবস মা
আজ মা দিবস। বছরের এই একটি দিনকে আমরা উৎসর্গ করি আমাদের জীবনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য, নিঃস্বার্থ ও ভালোবাসার একমাত্র ছায়া—আমাদের মা-কে। অথচ মা তো শুধুই একদিনের নয়। তিনি প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি নিঃশ্বাসে আমাদের সঙ্গে থাকেন। তবু এই একটি দিন আমাদের সুযোগ দেয় তাঁকে ভালোবাসা জানানোর, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার, একটু বেশি যত্ন নেওয়ার।
মা মানেই ত্যাগ, মা মানেই ভালোবাসা
জন্ম থেকে শুরু করে বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপে মা তাঁর সন্তানের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। নিজের স্বপ্নকে সরিয়ে রেখে সন্তানের স্বপ্ন পূরণে নিজেকে বিলিয়ে দেন। রাতের ঘুম, নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন, এমনকি নিজের আবেগও মা অনায়াসেই ত্যাগ করেন। সন্তানের একটি হাসি যেন তাঁর জীবনের পরিপূর্ণতা।
মা যখন আমাদের দুধ খাওয়ান, তখন তিনি নিজে খেতে ভুলে যান। মা যখন রাত জেগে আমাদের মাথায় হাত রাখেন, তখন তিনি নিজের ক্লান্তি অনুভব করেন না। আমরা কেবল একটি শব্দ জানতাম—"মা", আর মা জানতেন হাজারো শব্দের ব্যাখ্যা, আমাদের না বলা কষ্টও তিনি বুঝে নিতেন।
মা দিবসের তাৎপর্য
মা দিবস শুধুমাত্র একটি তারিখ নয়—এটি একটি উপলক্ষ, একটি উপলব্ধি। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যাঁকে আমরা "মা" বলে ডাকি, তিনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, কতটা অনন্য। সমাজে মা-দের অবদান নিঃসন্দেহে অপরিসীম, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরা অবহেলিত, মূল্যায়িত নন। এই দিনটি একটি প্রতীক—মায়েদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কৃতজ্ঞতা স্মরণ করিয়ে দেয়।
আজকের মা ও প্রযুক্তির যুগে মা-হওয়া
আজকের যুগে মা হওয়া আগের চেয়ে কঠিন। কর্মজীবী মায়েরা সংসার আর অফিসের দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করছেন। অনেক মা একাই সন্তান লালনপালনের দায়িত্ব নিচ্ছেন। প্রযুক্তি ও তথ্যের এই যুগে সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালিত করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও, একজন মা তাঁর সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সন্তানের জন্য এক অবিনাশী আশ্রয়স্থল গড়ে তোলেন।
মাকে বলা হয়নি—অনেক কিছুই
আমরা প্রতিদিন মায়ের হাতে রান্না করা খাবার খাই, তাঁর কথার মধ্যে আমাদের নিরাপত্তা খুঁজি, কিন্তু তাঁকে কবে বলেছি—"তুমি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মানুষ"? আমরা কবে তাঁকে বলেছি—"তুমি ছাড়া আমি কিছুই না"? মা হয়তো মুখ ফুটে ভালোবাসা চান না, কিন্তু একটি শব্দ, একটি আলিঙ্গন, একটি চিঠি কিংবা একটি ফুল তাঁর হৃদয় ভরিয়ে দেয়।
এই মা দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক—আমরা মায়ের জন্য সময় বের করবো, তাঁকে ভালোবাসা জানাবো, তাঁকে সম্মান করবো, প্রতিটি দিন।
মা হীন জীবনের শূন্যতা
যাঁরা তাঁদের মা-কে হারিয়েছেন, তাঁদের হৃদয় জানে মায়ের অভাব কেমন। মায়ের মৃত্যুর পর পৃথিবীর সব আলো নিভে যায় বলে অনেকে মনে করেন। সেই শূন্যতা পূরণ হয় না কিছুতেই। মায়ের হাতের ছোঁয়া, কপালে চুমু, ঘুমপাড়ানি গান—সব হারিয়ে যায়। তাই যাঁদের মা বেঁচে আছেন, তাঁরা যেন তাঁকে সময় দেন, যত্ন নেন, এবং তাঁর পাশে থাকেন।
একটি সমাজে মা-এর অবস্থান
একটি সচেতন সমাজ গড়ে তুলতে হলে মায়েদের অধিকার নিশ্চিত করা আবশ্যক। মাতৃত্বের প্রতি সম্মান থাকা উচিত শুধু পরিবারেই নয়, রাষ্ট্র এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে। মাতৃত্বকালীন ছুটি, স্বাস্থ্যসেবা, মানসিক সহযোগিতা—এসবই একজন মায়ের প্রাপ্য। মা দিবস হোক একটি সামাজিক আন্দোলনের শুরু—যেখানে মায়েরা শুধুই সন্তান পালনের দায়িত্বে নয়, বরং জাতি গঠনের স্থপতি হিসেবে মর্যাদা পাবেন।
আমার মা: আমার পৃথিবী
আমার মা—তিনি আমার প্রথম শিক্ষক, প্রথম বন্ধু, প্রথম প্রেরণা। তাঁর হাসিতে আমি সাহস পাই, তাঁর চোখের অশ্রুতে আমি কষ্ট পাই। মা আমাকে শুধু দুনিয়ায় এনেছেন না, দুনিয়াটা চিনতেও শিখিয়েছেন। তাঁর কণ্ঠস্বর আমার কাছে সবচেয়ে নিরাপদ শব্দ। তাঁর ছায়া আমার জীবনের সবচেয়ে মধুর আশ্রয়।
শেষ কথা: প্রতিটি দিন হোক মা-র জন্য
মা দিবস আসবে যাবে। কিন্তু ভালোবাসা, যত্ন, শ্রদ্ধা—এসবের কোনো দিন নির্দিষ্ট নয়। মা জীবনের প্রতিটি ক্ষণে আমাদের ছায়া হয়ে থাকেন। তাই আমরা যেন প্রতিদিন তাঁকে সম্মান করি, ছোট ছোট ভালোবাসার কাজ করি, তাঁর পাশে থাকি।
এই মা দিবসে একটি ফুল দিন, একটি চিঠি লিখুন, অথবা কেবল বলুন—"মা, আমি তোমায় ভালোবাসি।"