Limon Hossain

Limon Hossain আসসালামু আলাইকুম সবাই আমার পেজটাকে লাইক 👍 এবং ফলো দিয়ে পাশে থাকবেন প্লিজ 🙏🙏
(39)

09/09/2025

02/09/2025

02/09/2025

01/09/2025

01/09/2025

01/09/2025

শুভ রাত্রি বন্ধুরা
19/08/2025

শুভ রাত্রি বন্ধুরা

বিয়ে করবেন আমাকে?আনিকার মুখ থেকে কথা টা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো উদয়। আনিকা তাঁর বস। সে যে কোম্পানির কুকার। সাবলীল বা...
14/08/2025

বিয়ে করবেন আমাকে?
আনিকার মুখ থেকে কথা টা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো উদয়। আনিকা তাঁর বস। সে যে কোম্পানির কুকার। সাবলীল বাংলায় বলতে গেলে বাবুর্চি। আনিকা সে কোম্পানির মালিক। উদয় সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কারণ আনিকা মেয়ে টা ভীষণ গল্পপ্রিয়। হয়তো গল্পের প্রথম লাইন বলেছে।
— থেমে গেলেন কেনো? গল্পের বাঁকি অংশ বলবেন না?
আনিকা চেয়ার টা সোজা করে বসে— আমি সবসময় গল্প পড়তে ভালবাসি। ভীষণ বইপ্রিয় একটা মেয়ে। মাঝে মাঝে দারোয়ানকে ডেকেও তাঁর সাথে গল্প করি। কেউ ভালো পায় কেউ পাগলামু বলে। কিন্তু আমি আজকে কোনো গল্প করছি না। আমি মন থেকেই বলছি।
উদয় বিপদে পড়ে গেলো। আনিকা আবার তাঁর চরিত্রের পরীক্ষা নিচ্ছে না তো? না কী সে লোভী কী না তা ঘেঁটে দেখছে? কোনোরকম জবাব দিলো— আমি অল্প শিক্ষিত একটা ছেলে। গ্রাম থেকে এসেছি। বড় ছেলে বিধায় পুরো পরিবারটাকে আমাকেই দেখতে হয়। বাবা অসুস্থ। যে টাকা বেতন দেন। তা দিয়ে কোনোরকম বাবার ঔষধপত্র কিনে টেনেটুনে চলে যায়। কিন্তু আমি লোভী নই বস।
আনিকা কিছু মুহূর্ত চুপ থেকে বললো— আপনি কত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। আপনার এই ব্যাপার টা আমাকে খুব হিংসে ধরায়। তাছাড়া আপনি যা ভাবছেন আসলে আমি তা করছি না সত্যি। আমি আপনার ব্যাপারে সব জানি। আপনি লোভী নন। তা আমি অনেক আগেই বুঝেছি। লোভী নন সে কারণেই তো আপনাকে আমার আরো বেশি ভালো লাগে। কথাগুলো সরাসরি বলছি বলে ভাববেন না আবার মেয়ের লজ্জাশরম কম।
উদয় আনিকার চোখে এবার লুব্ধক দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে যায়৷ এবার সে নিশ্চিত। আনিকা সত্যি সত্যিই বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে, কিন্তু কেনো? সে তো দেখতেও খুব সুদর্শন নয় যে শুধু চেহারা দেখে সব ভুলে যাবে। উত্তর দিলো— বিদেশী গল্প পড়তে পড়তে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে বস৷
আনিকা হাসলো।
তবে শব্দ করে নয়৷ বললো— জানি আমি দেখতে সুন্দরী না। প্রতিটা সাধারণ মেয়ের মতো রান্না করতে পারি না। শাড়ি পড়তে পারি না। আরো অনেক কিছু। এসব আপনার অপছন্দ হতে পারে। কিন্তু আমার আপনাকে ভালো লেগেছে। বিয়ের প্রস্তাবও দিলাম। বাকীটা আপনার হাতে। আমি কাউকে জোর করতে পছন্দ করি না, জানেনই তো।
উদয় চলে আসলো পাকঘরে।
উদয়।
পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে লেখাপড়া বেশিদূর করতে পারেনি। ছোটবেলা থেকে হোটেলে কাজ করেছে। তাঁর রান্নার হাত ভালো। গ্রামে সুনাম আছে। সে সুবাদে এই কোম্পানির কুকার হিসেবে যোগ দিয়েছে। অন্য জায়গার থেকে এখানে খুব ভালো বেতন পায় সে।
মিথ্যে বলে না সচারচর। কিন্তু একটা বড় মিথ্যে সে অনেক আগে আনিকার কোম্পানির কাছে বলেছে। সে অবিবাহিত!
একটি মাত্র মিথ্যা!
বিবাহিত থাকার পরেও একটু ভালো মাইনের চাকুরী পাবে বিধায় বলেছিলো সে অবিবাহিত। এই কুকার পদে কোম্পানির লোকেরা বিবাহিত লোক নিবে না। বিবাহিতদের না কী পিছুটান বেশি। কাজ করে না মন দিয়ে। সারাদিন বৌয়ের সাথে ফুসুরফুসুর করে।
উদয় কাজে ফাঁকি দেয়নি।
সায়েরা৷
উদয়ের বৌয়ের নাম। গ্রামের সহজ সরল সাধারণ একটি মেয়ে। সাত বছর প্রেম করে তাঁকে বিয়ে করেছে উদয়। আবার বিয়ের সাত বছর পূর্ণ হয়েছে কদিন আগে। একটা ছেলে আছে। প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করাবে ভাবছে।
উদয়ের রাতে ঘুম হচ্ছে না।
সে কী অনেক বড় অপরাধই করে ফেললো না কী এখানে নিজেকে অবিবাহিত বলে? সে বুঝতে পারছে না। কিন্তু এই মিথ্যে টা খুব প্রয়োজন পড়ে গিয়েছিলো তাঁর পরিবারের জন্য! সায়েরাকে আজকের কথা না বলে শান্তি পাচ্ছে না উদয়। ফোন দেয়ার সাথে সাথে সায়েরা ধরে বললো— আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো?
উদয় সালামের জবাব দিয়ে— ভাল নেই। আজকে এক কাহিনী ঘটেছে।
তারপর পুরো ব্যাপার টা খুলে বললো উদয়। সব শুনে সায়েরা খুব শক্ত ভাবে বললো— চলে আসো তুমি। কাজের অভাব হবে না। কিন্তু আমি তোমার বুকে অন্য কেউ শুয়ে আছে তা কল্পনা করতে পারবো না।
— দেখছি কী করা যায়।
নিচক এক যন্ত্রণায় পড়ে গেলো উদয়। তাঁর বৌকে সে খুব ভালবাসে। সায়েরা হয়তো আরো বেশি ভালবাসে। তাঁদের একটা সন্তানও আছে। অসুস্থ বাবা বাড়িতে। সব কিছু মিলিয়ে চাকুরীটাও দরকার। আনিকা তাঁর বিবাহিত জীবনের কথা জেনে গেলে চাকরীচ্যুত করবে। আনিকা হাজার টা ভুল সহ্য করতে পারে। কিন্তু একটিও মিথ্যে নয়।
আবার এরকম ভালো বেতনের চাকুরী সে আর কোথাও পাবে না তাও নিশ্চিত। এসব ভাবতে ভাবতে যখন মাথা টা হাল্কা ধরলো তখন আনিকার ফোন! মাঝ রাত্তিরে আনিকার ফোন পেয়ে নড়েচড়ে বসলো। এর আগে কোনোদিন আনিকা রাত্তিরে ফোন দেয়নি।
উদয় ফোন তুললো— বস, আপনি এতো রাত্তিরে?
— হ্যাঁ। বিরক্ত করলাম না তো?
— তা না ঠিক।
— অনেকক্ষণ ফোন ব্যস্ত পেয়েছি। কার সাথে কথা বলছিলেন জানতে পারি?
— বাবা ফোন করেছিলো।
— আপনার গলার আওয়াজ বলে দিচ্ছে মিথ্যে বলছেন। দেখুন আমি আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাতে চাই না। কিন্তু আমার জানা দরকার। কেনো তা আপনি ভালো করে জানেন। তা আপনি বলবেন কী?
— মাফ করবেন বস। আমিও এক কথা দুইবার বলি না।
আনিকা ওপাশ থেকে মিষ্টি কণ্ঠে বললো— যদি আপনার প্রেমিকা না থাকে তো দরজা টা খুলুন। আর থাকলে দরকার নেই। আমি আপনার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি!
উদয় তড়িঘড়ি করে উঠে রুমের বাতিগুলো জ্বালালো। অফিসের রান্না করার রুমের এক কোণে থাকে সে। এভাবে এখানে আনিকা এসে পড়বে সে কল্পনা ও করতে পারেনি। দরজা খুলে দেখলো আনিকা শাড়ি পড়ে এসেছে! হাতে চুড়ি, চোখে কাজল, ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক! সব কিছু মিলিয়ে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। যে কেউ একবার তাকালে চোখ ফেরাতে চাইবে না।
তবে উদয় চোখ ফেরালো। কোনো অপরূপার দিকে চোখ গেলে তাঁর সায়েরার কথা মনে পড়ে যায়। আনিকা নীরবতা ভেঙে বললো— ভিতরে ঢুকতে বলবেন না?
— আপনার অফিস, আপনার কর্মচারী। আমি বলার কে?
আনিকা লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে রুমে ঢুকে বললো— আমি আজকে আপনার সাথে থাকবো।
উদয় চমকে উঠে— জ্বী? মানে?
— ভয় পাবেন না। আপনার সাথে নয় ঠিক, আপনার রুমে। আপনি আমার রুমে একটি রাত কাটাবেন আর আমি আপনার রুমে। আপনি আমার বিয়ের প্রস্তাব মানেন আর না মানেন এটা মানতেই হবে।
উদয়ের এ সি রুমে ঘুমানোর কোনো ইচ্ছে নেই। কিন্তু সায়েরা ছাড়া অন্য কোনো নারীর সাথে বিছানায় যাওয়ার কথা ভাবার আগেই মরণ চায় আল্লাহ্'র কাছে। উদয় রাজি হয়ে গেলো। আনিকা মুচকি হেসে বললো— আপনি তো আমার দিকে তাকাচ্ছেনই না।
— তা না। আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে।
— প্রথমবার কারো জন্য সেজেছি। শাড়ি পড়েছি, কাজল দিয়েছি।
উদয় না শোনার মতো করে রইলো। আনিকা আবার গলা বাড়ালো— আপনি বিরক্ত হচ্ছেন৷ যান বাইরে ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে।
উদয় আচ্ছা বলে গাড়িতে এসে উঠে বসলো। গাড়িচালক তাঁকে এমন সম্মান করছে মনে হচ্ছে সে ইতিমধ্যেই আনিকার স্বামী হয়ে গিয়েছে। সহ্য হচ্ছে না উদয়ের। নিজেকে সামলিয়ে নিলো। বেশিদূর নয় আনিকার বাড়ি। গাড়িচালকই আনিকার শুবারঘর দেখিয়ে দিলো।
উদয় আনিকার নীদ্রাকক্ষে ঢুকে নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না। পুরো রুমের জুড়ে উদয়ের ছবি টানানো। দেখে বুঝা যায় স্পষ্ট কেউ লুকিয়ে তুলেছে। বিছানায় বড় করে উদয় লেখা। কোলবালিশ সহ চায়ের কাপটাতেও! সায়েরা আজকের রাতের কথা জানতে পারলে কষ্টে মরেই যাবে। ভালো লাগছে না।
সায়েরাকে আবার ফোন দিলো। সায়েরাকে উদয় জাগিয়ে রাখে না। বেশি রাত পর্যন্ত সায়েরা চাইলেও কথা বলে না। তবে আজকে উদয়ের আবদার সারা রাত কথা বলতে হবে। সায়েরাও খুশি হলো। তেরো বছর পিছনে ফিরে গিয়েছে দুজন। ভোরবেলা পর্যন্ত কথা বলেছে।
সকালে আনিকা নিজের বাড়ি ফিরে এলো। উদয় ও অফিসে। দিন দিন আনিকা যেভাবে উদয়ের নেশায় মেতে উঠছে তা ভালো লক্ষ্মণ না। ভয় পাচ্ছে সামনাসামনি সায়েরার কথা বলে দিতে আনিকাকে। সায়েরাও বারবার ফোন করছে। এরকম স্বস্তি অস্বস্তিতে একটা সপ্তাহ কেটে গেলো।
কয়েকদিন ধরেই আনিকাকে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। সে চাইলেই ব্যক্তিগত ডাক্তার রাখতে পারে তবুও রাখে না। আজকে এক নিঠুর বাণী শুনে আসলো ডাক্তারের মুখে। একটা মেয়ের জন্য এর থেকে বেশি দুঃখ কষ্ট আর হয় না। যখন ডাক্তার বলে— আপনি কোনোদিন মা হতে পারবেন না!
বাড়িতে ফিরে রুম বন্ধ করে একটানা কয়েক ঘণ্টা কান্না করেছে। মা বাবাও বেঁচে নেই যে তাঁদের কুলে মাথা রেখে কাঁদবে। আঠারো বছর থাকাকালীন তাঁরা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। মা বাবার একমাত্র সন্তান ছিলো আনিকা। উদয়ের সব ছবি তুলে ফেলেছে দেয়াল থেকে। কোলবালিশ, চায়ের কাপ ও ফেলে দিয়েছে। আর যাবে না উদয়ের কাছে সে ভালবাসা চাইতে। সে ভেবে পাচ্ছে না তাঁর এতো টাকা পয়সা দিয়ে কী আসবে যাবে? যদি না কেউ আম্মু আম্মু বলে গলায় জড়িয়ে ধরে? ঠিক করে নিয়েছে উদয় ছুটি কাটিয়ে আসলেই সব কিছুর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিবে।
উদয় সকালে ছুটি নিয়েছে।
আনিকার কাছে ছুটি হলেও উদয় আর কোনোদিন ফিরে আসবে না। বাড়িতে গিয়ে ফোনে আনিকার কাছে মিথ্যে কথা বলার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিবে। সায়েরাকে আসার কথা জানায়নি। হঠাৎ উদয়কে দেখে সায়েরার মুখের অবস্থা কেমন জানি হয়ে যায়। উদয়ের এই দৃশ্য'টা খুব প্রিয় সেজন্যই জানায়নি।
বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় রাত্রি দ্বিপ্রহর হয়ে যায়। দরজার তালার একটা চাবি উদয়ের কাছে থাকে। সেজন্য সায়েরাকে ডাকেনি।
সকালে উঠে যখন দেখবে সায়েরা তাঁর বুকে। সায়েরা চমকে উঠবে। সায়েরা জেগে যাবে ভেবে আস্তে আস্তে দরজা ঢেলে ভিতরে ঢুকলো উদয়।
রুমে ঢুকার পর খাট নাড়াচাড়ার করার শব্দ শুনে উদয় বাতি জ্বালালো। দেখলো ছেলে টা ঘুমিয়ে আছে। আর সায়েরা কোনো পুরুষের সাথে প্রেমলীলায় মক্ত আছে! রুমের বাতি জ্বালানোর পরেও তাঁদের হুঁশ হলো না! উদয় এই দৃশ্য সহ্য করতে পারলো না।
বুকে যেন কেউ চাকু মেরে কলিজা বের করে নিয়েছে। সায়েরা বলে জোরে একটা চিৎকার দিলো। পাশের রুমের অসুস্থ বাবা সজাগ হয়ে গেলো। ছেলে টা সজাগ হয়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে সায়েরা আর তাঁর খাটের সঙ্গীও।
সঙ্গীটাকে পালানোর সুবর্ণ সুযোগ করে দেয় উদয়। তাঁর দিকে চোখ তুলেও তাকায়নি। এই সঙ্গী আর কেউ না, যে তাঁকে এতো ভালো বেতনের একটা চাকুরীর খোঁজ দিয়েছিলো। তাঁর টাকা পয়সার অভাব নেই। এম পি এর ছেলে। ছেলে টা বাবাকে দেখে খুশি হয়েছে বেজায়। এতো কিছু বুঝেনি।
ছেলে টা আবার ঘুমিয়ে গেলে সায়েরাকে কান্নাসিক্ত নরম গলায় উদয় একটি কথাই জিজ্ঞেস করে— কথা ছিলো আমরা সারাজীবন গাছ তলায় থাকবো তবুও আলাদা হবো না। আর না জানি কবেই তুমি আমার থেকে আলাদা হয়ে গেছো। বলো না কেনো? ছেলেটার কথা একবার ও ভাবলে না?
সায়েরা মুখের উপর বলে দেয়— আমার কথা কে ভাববে? বছরে একটা শাড়ি ছাড়া কী দিতে পারিস তুই?
উদয় নিরুত্তর।
এরকম এক টা দিন উদয়ের জীবনে আসবে স্বপ্নেও ভাবেনি। সে বুঝতে পারছে সায়েরা আর তাঁর সাত বছরের প্রেমিকা সায়েরা বা সাত বছরের স্ত্রী সায়েরা, দুটোর একটাও নেই। এক কাপড়ে চলে যায় বাইরে। সেখানে তাঁর প্রেমিক বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সকালে উঠে ছেলে ফারায মাকে খুঁজছে। মা যে নেই। ছেড়ে চলে গিয়েছে।
উদয় লুকায়নি৷ স্পষ্ট বলে দিয়েছে মা তোমাকে, আমাদের ছেড়ে ভালো থাকতে চলে গিয়েছে। তারপর থেকে ফারায নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকছে। বাবার অসুস্থতা একটু না অনেক বেশিই বেড়ে গিয়েছে। এতোটাই বেড়ে গিয়েছে যে সায়েরা চলে যাওয়ার তিন দিনের মাথায়'ই মারা যান!
এর ভিতরে উদয়ের ফোন বন্ধ ছিলো একটানা এক সপ্তাহ।
সে কারণে আনিকার ফোন ধরতে পারেনি সে।
আজকে ছেলেকে নিয়ে আবার আনিকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে উদয়। দরকার পড়লে আনিকার পায়ে পড়ে মাফ চাইবে। চাকুরী ছেড়ে দিবে। ছেলেটাকে নিয়ে গ্রামেই থাকবে।
আনিকার সামনে উদয় আর তাঁর ছেলে। আনিকা উদয়ের ছেলেটাকে খেয়াল করছে ভালো করে। ঠিক নাকের বাম পাশে একটা তিল ফারাযের, আর আনিকার ও সেখানেই সেরকম একটা তিল! ছেলেটাকে কাছে ডাকতে ইচ্ছে হলেও ডাকেনি। মনের অবস্থা মৃত্যু শয্যাশায়ী তাঁর।
আনিকা কষ্ট হলেও উদয়ের কাছে সবকিছু খুলে বলে ক্ষমা চেয়ে নিলো। আনিকার এরকম অবস্থাতে কীভাবে সে বলবে যে ছেলে টা দাঁড়িয়ে আছে পাশে সে তাঁরই সন্তান? উদয় বলেনি। ভেবেছিলো চলে যাবে। আনিকা শেষে বললো— পিচ্চি টা কে?
— ভাতিজা।
এ কথা শুনে ফারায কান্না করে দিয়ে বললো— আমি তোমার ভাতিজা আব্বু? তুমিও মায়ের মতো আমাকে ছেড়ে চলে যাবে তাহলে? আমাকে বিক্রি করে দিতে এসেছো এখানে না? আমি কী এতোই খাই পড়ি?
আনিকা সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক হয়েই বললো— আপনার ছেলে? আপনার মতোই হয়েছে। কথার কড়া জবাব দিয়ে দেয়।
আনিকার এরকম স্বাভাবিক আচরণে উদয় অবাক হয়। আনিকার যে আর কিছু আসে যায় না উদয় বিবাহিত না কী অবিবাহিত তা নিয়ে৷ বরং উদয়ের ছেলেটাকে দেখে ভালোই লেগেছে। নাকের বাম পাশের তিলটার জন্য ভুলতেও পারবে না কোনোদিন। উদয় চলে যায়নি, বা আনিকাও চাকরীচ্যুত করেনি মিথ্যে বলার জন্য।
অবশ্যই করতো, শুধু ছেলেটার জন্য। নাহয় আনিকা মিথ্যে সহ্য করার বেটি নয়। শত যাই হোক। অফিসের পাশেই ছোট্ট বাসা নিয়েছে উদয়। বাপ ছেলে ভালোই থাকে। একটা স্কুলে ভর্তি করিয়েছে ফারাযকে। আনিকা রোজ লুকিয়ে একবার দেখা করে আসে। উদয়কে জানয়ে দেয় না।
ফারাযকে মানা করে দেওয়াতে সে ও বলে না। বাঘের গল্প শুনাচ্ছিলো ফারাযকে উদয়। ঘুমাচ্ছে না সে। হটাৎ বলে উঠলো— আচ্ছা আব্বু, আম্মু ডাক টা কী খুব খারাপ? আম্মু ডাকলে কেউ কষ্ট পায়? তোমার অফিসের আন্টিকে আজকে আম্মু ডেকেছিলাম আর উনি সমানে কান্না করলো কেনো?
উদয় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো— কখন?
— কখন আবার, দুপুরে। রোজই তো আমার জন্য টিফিনে এটা ওটা আনে। তুমি নাকি পাঠাও। আবার তোমাকে বলতেও নিষেধ করে। কিন্তু আজকে উনি অনেক কান্না করেছে। আমার ভালো লাগছে না। ফোন দাও না স্যরি বলি।
উদয় আবার বিড়ম্বনায় পড়ে গেলো। ফোন দিতে বাধ্য হলো প্রায়। নাহলে ঘুমুচ্ছেই না। আনিকা ফোন ধরতেই ফারায বললো— স্যরি আন্টি। আমি আপনাকে কাঁদিয়েছি আজ।
আনিকার নীরব কান্নার শব্দ শুনতে পারছে উদয়। জবাব দিলো— রোজ কাঁদাবে এভাবে আম্মু বলে?
— আচ্ছা।
এভাবে ওরা কথা বলতেই আছে। পিচ্চি ছেলে টা কতো কথা বলতে পারে। উদয় ভাবছে কে জন্ম দিলো আর কে মা হলো!
এভাবেই একটু একটু ফারাযকে নিয়েই ফেলেছে আনিকা। ছেলে টা তাঁর কাছে আসতেই চায় না। এক চাঁদনী রাতে আনিকাকে ফোন দিয়ে বললো— পৃথিবীর চাঁদ আকাশে। আর আমার চাঁদ টা আপনার কাছে। তাঁকে ছাড়া আমার ঘুম হয় না।
— নিয়ে যান এসে। আমি কী আটকে রেখেছি?
— না, কিন্তু চাইলে আমাকে আটকে রাখতে পারেন।
— আমার এত সাহস নেই।
ফোন টা কেটে আনিকা ঠিকই খুশিতে আত্মহারা। নয় তারিখ তাঁদের বিয়ে হয়। হানিমুন করতে যায় গ্রামের বাড়ি। এখন উদয় অফিসের না হলেও ঘরের কুকার। শ্বশুরবাড়িতে সে থাকে না।
সেই ছোট্ট বাসাতেই থাকে। আনিকারও সেখানে থাকতে কোনো আপত্তি নেই। লোকেরা কতকিছু বলে। আনিকা সেদিকে কান দেয় না।
কিছু বছর পরের কথা।
সূর্যি মামা এখনো উঁকি দেয়নি।
আনিকা উদয়কে ডেকে বললো— আচ্ছা তোমার রক্তের গ্রুপ কী?
— ও পজেটিভ।
— তাহলে জলদি উঠো। একজনকে রক্ত দিতে হবে। সঠিক সময়ে না দিতে পারলে উনি ও মারা যাবেন। উনার পেটের সন্তান ও মারা যাবে।
— তোমার ও তো ও পজেটিভ। তুমি ফারাযকে নিয়ে যাও। একেবারে স্কুলে দিয়ে এসো। আমার ঘুম পাচ্ছে খুব।
— খালি ঘুম আর ঘুম। এই ঘুমই আমার এক নাম্বার সতিন। কবে এই সতিনটাকে ছাড়বে বলো?
— কালকে ছাড়বো। আজকে যাও।
— মনে থাকে যেন।
রোজই এক কথা বলে উদয়। আনিকারও উদয়কে এ নিয়ে বকতে ভালো লাগে।
ফারাযকে নিয়ে আনিকা রক্ত দিতে চলে গেলো। এর পর আরো দুই ঘণ্টা ঘুমানোর পর উঠলো উদয়। ভুলে ফারাযের স্কুল ব্যাগটাই রেখে গেছে তাড়াহুড়োয়। ফোন দিবে বলে ফোন তুলতেই আনিকার ফোন— ঘুম থেকে উঠা হয়েছে মহারাজের? তাহলে ফারাযের ব্যাগ টা স্কুলে দিয়ে আসা হোক। আমি অফিসে যাচ্ছি।
— আচ্ছা, তারপর কী রক্ত দিলে?
— হুম। কিন্তু একটা ব্যাপার কী জানো? মহিলা টা কীভাবে যেন ফারাযের দিকে তাকাচ্ছিলো!
— মহিলা? কী বলো? ফারাযের দিকে কীভাবে তাকাবে কেনো? আচ্ছা নাম কী উনার?
— সায়েরা আক্তার। উনার স্বামীটাও কী খচ্চর। একবার ও না কী দেখতে আসে না! সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে কী জানো? জীবনের প্রথম কাউকে রক্ত দিলাম আর সে তারপর এক ঘণ্টাও বাঁচলো না! বাচ্চা সহ মারা গেলো!
উদয় চুপ হয়ে গেলো কিছুক্ষণের জন্য। তারপর বললো— ডিজিল্যাব হাসপাতালেই তো? কত নাম্বার কেভিনে?
— ৭৭, কেনো? আচ্ছা আমার সময় নেই। পরে কথা হবে। তুমি ফারাযের ব্যাগ টা জলদি দিয়ে যাও।
— আচ্ছা লক্ষ্মীটা।
— ঢং, রাখছি।
উদয় তাড়াহুড়ো করে ফারাযকে ব্যাগ দিয়ে হাসপাতে যায়। ৭৭ নাম্বার কেভিনে গিয়ে দেখে। এই সায়েরা আক্তার আর কেউ নয়। তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকা, স্ত্রী এবং ছেলের আম্মু'ই!
সায়েরাকে দেখে নিজের অজান্তেই উদয়ের মুখ থেকে বেরিয়ে এলো— দুর্ভাগ্য তোমার সায়েরা। এতো ভালো একটা মেয়ের রক্ত নিয়েও বাঁচতে পারলে না। পরপারে আল্লাহ্ তোমাকে ভালো রাখোক

জীবনের আলোড়ন!ইদানীং মেয়েটার স্ট্যাটাসের নিচে হ্যাশট্যাগে ছেলেটার নামের দুই অক্ষর ঝুলে থাকে। আর মেয়েটা থাকে ছেলেটার ব্...
13/08/2025

জীবনের আলোড়ন!
ইদানীং মেয়েটার স্ট্যাটাসের নিচে হ্যাশট্যাগে ছেলেটার নামের দুই অক্ষর ঝুলে থাকে। আর মেয়েটা থাকে ছেলেটার ব্লক লিস্টে। প্রেমিকা হওয়ার দায়ে মেয়েটার এ শাস্তি হয়েছিল।

ছেলেটা গম্ভীর স্বরে বলেছিল—আমার হিসাবে, প্রেমিকা ব্লক লিস্টে। ভার্চুয়াল নয়, বাস্তব আমিটা তোমার।

বছর দেড়েক আগে, ছেলেটার হাত ধরেই মেয়েটার কবিতার জগতে প্রবেশ। এক ভোরে ফেসবুক মেসেঞ্জারে ছেলেটার নক। যদিও দুজনে আগেই ফেসবুক বন্ধু হয়েছিল।

‘আপনার প্রিয় সময় কখন?’ মেয়েটা উত্তর দিয়েছিল, ‘ভোর।

আপনার?

‘আমারও! প্রতি ভোরে আমার অ্যাকটিভ ফ্রেন্ড হিসেবে আপনাকে দেখি। তাই আরকি জিজ্ঞাসা...’

মেয়েটা একটা স্মাইলি পাঠায়। ছেলেটা আবার জিজ্ঞাসা করে, ‘কবিতা পড়েন?’

‘উম্ম্, বই পড়া হয়। কিন্তু কবিতা ঠিক বুঝি না। আপনার টাইমলাইন ঘুরে এলাম, ভালো লিখেন তো আপনি!’ এবার ছেলেটা একটা স্মাইলি পাঠায়।

পরপরই একটা কবিতা পাঠায় ‘ভালোবাসার বিস্ফোরণ’ নামে। কবিতার নিচে ছেলেটার নাম। তার নিচে সেদিন ভোরের একটা সময় আর লেখা—অমর একুশে হল, ঢাবি।

মেয়েটা কবিতা পড়তে গিয়ে বুঝতে পারে, ছেলেটা সায়েন্সকে কেন্দ্র করে প্রেমের কবিতাটা লিখেছে। বিগ ব্যাং থিওরি...।

মেয়েটা উত্তর দেয়, ‘আমি যে কমার্সের ছাত্রী। কী করে বুঝি বলুন তো?’

ততক্ষণে ছেলেটা অফলাইনে...।

এরপর প্রতি ভোরেই তাদের কথা হতো। মেয়েটা একসময় আবিষ্কার করে, অসম্ভব মেধাবী ছেলেটা নিজের জীবনকে পুরোটাই সাদাকালো করে রেখেছে। একটু একটু করে ছেলেটার জীবনের গল্প উপলব্ধি করে। মেয়েটার মন দ্রবীভূত হয়। আর ছেলেটা আস্তে আস্তে মেয়েটাকে রুদ্র চেনায়, জীবনানন্দ বোঝায়, বিনয় মজুমদার আর শক্তি চট্টোপাধ্যায় শোনায় এবং আরও আরও...।

আঁকিয়ে মেয়েটা ছেলেটাকে রং চেনাতে চেষ্টা করে। মেয়েটার ইচ্ছা করে তার প্যালেটের সমস্ত রং এই সাদাকালো ছেলেটার জীবনে ছড়িয়ে দিতে। ছেলেটা ভীষণ উদাসীন আর মেয়েটা অদম্য লড়াকু। আক্ষরিক অর্থেই দুজন দুই মেরুর বাসিন্দা।

একই শহরে ওদের চলাচল কিন্তু কাকতালীয়ভাবেও ওদের কখনো দেখা হয় না।

একদিন সবকিছু এক পাশে রেখে ছেলেটা মেয়েটাকে বলেছিল, ‘আমার সঙ্গে থাকা যায়?’

‘মানে’?

‘মানে, আমার একটা মেয়ে থাকবে। লাল ফ্রক পরা। চুলে দুবেণি করা। আর হাতে চিপস।’

ব্র্যাকেটে লিখেছিল, ‘আজ সন্ধ্যায় উত্তর চাই’। এবং ছেলেটা অফলাইনে গিয়েছিল।

সন্ধ্যায় ছেলেটাই নক করে বলেছিল, ‘কিছু ভেবেছ?’
‘আমি আর কিছু ভাবছি না।’

‘মানে’?

‘মানে, আমার একটা মেয়ে থাকবে। লাল ফ্রক পরা। চুলে দুবেণি করা। আর হাতে চিপস।’

ছেলেটা একটা স্মাইলি দিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল অফলাইনে। আর সত্যিই ভার্চুয়াল জগৎ থেকে মেয়েটাকে ব্লক করেছিল।

এরপর ওদের জীবনে রুদ্র, জীবনানন্দ, বিনয়, শক্তির সঙ্গে কার্ট কোবেইন, জিম মরিসনও জড়িয়ে গেল। মেয়েটাকে অদ্ভুত নেশায় চেপে ধরল। ছেলেটার কবিতাগুলো গুছিয়ে রাখার নেশা। ছেলেটার প্রিয়গুলো, প্রিয় করে তোলার নেশা। মেয়েটা ছেলেটার জন্য লেবু রঙের পাঞ্জাবিতে নকশা তোলে। প্রতিটি ফোঁড়ে ফোঁড়ে ভালোবাসা সাজায়। ছেলেটা মেয়েটার জন্য এক পাতা নীল টিপ কেনে। কিন্তু ওদের কখনো দেখা হয় না। হয় হয় করেও হয় না...

একসময় ছেলেটা জীবনানন্দের ‘বোধ’-এ আটকে যায়। বদলে যেতে থাকে। ছেলেটা কার্ট কোবেইনকে ভাবে। জিম মরিসনে ডুবে। কিন্তু মেয়েটার কথা ভাবে না!

ছেলেটা রাস্তায় রাস্তায় হাঁটে। গায়ে কালো টি-শার্ট। তার বুকে লেখা ‘নিরভানা’।

মেয়েটার ইজেল বোর্ডে ঝোলানো পেপারে আঁকা ছেলেটার অসম্পূর্ণ ছবি।

ওরা একই সঙ্গে গ্র্যাভিটির অতলে হারায় কিন্তু কখনো এক হয় না।

মেয়েটা তবু অপেক্ষা করে তিমির রাত পেরোনো কোনো এক ভোরের। মেয়েটা ডুবে থাকে জীবনানন্দের তিমিরহননের গানে—
কোনো হৃদে
কোথাও নদীর ঢেউয়ে
কোনো এক সমুদ্রের জলে
পরস্পরের সাথে দু’দণ্ড জলের মতো মিশে
সেই এক ভোরবেলা শতাব্দীর সূর্যের নিকটে
আমাদের জীবনের আলোড়ন

সাভার, ঢাকা

গল্প থেকে ভালোবাসায়!এই অদ্ভুত ব্যাপারটা কেন আমার সঙ্গেই ঘটল! ভোর থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। অচেনা উত্তেজনায় সঙ্গে অনিশ্চ...
12/08/2025

গল্প থেকে ভালোবাসায়!
এই অদ্ভুত ব্যাপারটা কেন আমার সঙ্গেই ঘটল! ভোর থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। অচেনা উত্তেজনায় সঙ্গে অনিশ্চয়তা জুড়ে দিল সকালটা। কোনোমতে জ্যাকেটটা গায়ে চাপিয়ে, মোবাইল ফোন আর মানিব্যাগ নিয়ে ভোরে বেরিয়ে পড়েছি। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মা পেছন থেকে ডেকেছিলেন কিছু মুখে দেওয়ার জন্য।

সেদিকে ফিরে তাকানোর অবস্থায় ছিলাম না। মায়ের ‘কোথায় যাচ্ছিস?’ এর জবাবে ‘আসছি মা’ বলে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসি। বাইরে ইজিবাইক বা রিকশার কোনোটিই না পেয়ে হাঁটতে শুরু করি।

পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে বারবার গ্যালারিতে সেভ করা ইমেজটা দেখতে থাকি। জুম করে যতবার দেখি অন্য রকম ভালো লাগা ছুঁয়ে যায়। তারপরও সরাসরি পত্রিকার পাতায় নিজের নামটা দেখতে উন্মুখ হয়ে আছি।

২.
কলেজে পড়ার সময় থেকেই টুকটাক গল্প লেখার চেষ্টা করতাম। কিন্তু বিজ্ঞানের জটিল-কঠিন পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য কিছু ভাবার সময় ছিল না। অধিকাংশ গল্প তাই পরিণতি পায়নি। মাঝখানের সময়টাতে লেখালেখির বিষয়টা মাথাতেই আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যখন একটু ফুরসত পেলাম, তখন অসমাপ্ত গল্পগুলো নিয়ে আবার বসলাম। তখনকার ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে কয়েকটা লিখেও ফেললাম। সেখান থেকেই একটা গল্প পত্রিকায় পাঠিয়েছিলাম।

পাঠানোর পর থেকে প্রতিদিন ভোরে মুঠোফোনে পত্রিকার প্রতিটি পৃষ্ঠা তন্নতন্ন করে নিজের নামটা খুঁজেছি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সেই গল্পটা আজ ছাপা হয়েছে। মুঠোফোনে ই-পেপার সংরক্ষণ করেছি, তবু কাগজের ওপর ছাপার অক্ষরে পড়ার জন্য তর সইছে না। টানা এক ঘণ্টার বেশি সময় স্টলে দাঁড়িয়ে আছি পত্রিকার জন্য।

অথচ আজ নাকি পত্রিকাটি এখানে পাওয়া যাবে না! শহর থেকে আনাতে হবে।

৩.
কেবল একটা পত্রিকা কেনার জন্য পঁচিশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শহরে এসেছি। অথচ ব্যাপারটা মোটেও অস্বাভাবিক বা বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে না। বাস থেকে নেমে হন্তদন্ত হয়ে পত্রিকা স্টলের দিকে যাই। আশপাশে মানুষের তেমন ভিড় নেই। পত্রিকার স্টলে একজন বৃদ্ধ বসে আছেন। নিতান্ত অনিচ্ছার সঙ্গে পত্রিকার পাতা ওল্টাচ্ছেন। আমার কেবলই মনে হচ্ছে, তিনি বোধ হয় আমার গল্পটাই খুঁজছেন! আমি স্টলে পৌঁছানোর ঠিক আগে একটা মেয়ে রিকশা থেকে নেমে কয়েকটি ম্যাগাজিন আর একটা পত্রিকা কিনে নিয়ে যায়।

আমার ছুটে যাওয়া দেখে পত্রিকা বিক্রেতা ফোকলা দাঁত বের করে বলে, ‘বুঝছি, আজ মনে হয় লটারির ড্র হইছে। আইছেন নাম্বার মিলাইতে। বাঁধব না। লটারি জিতা অত সুজা না। আজ তামাতি কাউরে জিততি দেখি নাই।’ লোকটার কথায় কোনো ভাবান্তর হলো না। আমি পত্রিকা চাইতেই উনি আরেক প্রস্থ হেসে দিলেন। ‘পত্রিকা তো আইজ আর পাইবেন না। একটা কপি ছিল, ওই আপায় নিছে।’ মেয়েটি ততক্ষণে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে। আমি প্রায় দৌড়ে তার পিছু নিলাম। কাছে গিয়ে ডাকতেই আমার দিকে তাকিয়ে থমকে দাঁড়াল। আমার বুকের ভেতরেও মোচড় দিয়ে উঠল। ফারিহা! অপ্রস্তুত কণ্ঠে জানতে চাইলাম—

‘তুমি এখানে?’
‘আমি পত্রিকা কিনতে এসেছিলাম। তুমি?’
‘আমিও। আজকের পত্রিকায়...।’
‘তোমার গল্প আছে।’
‘আমাকে থামিয়ে ও বলে।’
‘তুমি কীভাবে জানলে?’

‘আমরা যখন এক ব্যাচে পড়তাম, প্রায়ই তোমার খাতাপত্র ঘাঁটতাম। কেন করতাম জানি না। তবে ভালো লাগত। একদিন একটা খাতায় কিছু অসমাপ্ত লেখা পাই। কয়েক লাইন পড়েই ভালো লেগেছিল। তোমার অনুপস্থিতির এক ফাঁকে লেখাগুলোর ছবি তুলে রেখেছিলাম। তারপর থেকেই অপেক্ষা করেছিলাম আজকের দিনটার জন্য।’

‘তার মানে, তুমি আমার আগে থেকেও অপেক্ষায় আছ?’

‘হ্যাঁ, আমার বিশ্বাস ছিল। সঙ্গে...’
বাকি কথাটুকু বলার প্রয়োজন হয় না। তার আগেই আমি ওর চোখের ভাষা পড়ে নিয়েছি। সেখানে ভালোবাসার রঙিন বর্ণগুলো খেলা করছে। একটা গল্প কত কিছুই না দিল। স্বস্তি, বিশ্বাস, প্রেরণা আর সবচেয়ে মূল্যবান ফারিহার ভালোবা

---কি ব্যাপার! আজো আপনি এখানে?---জানেন তো। সময় বদলে গেলেও প্রিয় অভ্যাসগুলো আগের মতোই রয়ে যায়।---তার মানে আপনি প্রতিদিনই ...
11/08/2025

---কি ব্যাপার! আজো আপনি এখানে?
---জানেন তো। সময় বদলে গেলেও প্রিয় অভ্যাসগুলো আগের মতোই রয়ে যায়।
---তার মানে আপনি প্রতিদিনই এখানে আসেন। তাই তো?
---জ্বি!
---পার্কে তো আরো অনেক বেঞ্চ রয়েছে। কিন্তু আপনি শুধু এই বেঞ্চটাতে বসেন কেন ?
---বিকাল বেলাটা আমার কাছে খুবই প্রিয় একটা মুহূর্ত। এখানে এসে চোখ দুটো বন্ধ করে অনুভূতির কান দিয়ে কারো পায়ের শব্দ অনুভব করি। পার্কের এই জায়গাটা কিন্তু একটু নির্জন। তাই না?
---হুমম। সেই জন্য তো আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম এতো বেঞ্চ থাকতে এই নির্জন জায়গায় এসে কেন বসেন? মানুষের ভিড়ের মাঝে আপনার থাকতে ভালো লাগেনা?
---একা থাকতে খুব ভালোবাসি।অভ্যাসহয়ে গেছে। দেখুন না আপনি ছাড়া কিন্তু এখানে আমার সাথে অন্য কেউ কথা বলতে আসেনি। আমি কিন্তু তাতে একটু মন খারাপ বা কখনো নিঃসঙ্গ অনুভব করিনি।
---সত্যি বলতে আপনার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগছে। আপনার কথাগুলোর শুনতে খুবই ভালো লাগে। আচ্ছা আপনি মুখটাকে সবসময় গম্ভীর করে রাখেন কেন? আপনি যদি হেসে কথা বলতেন তাহলে আরো ভালো লাগতো আপনাকে।
---সব হাসিই কি লোক চক্ষুতে ধরা দিতে হবে? সব কষ্টেই কি চোখের জলে সেই কষ্টটার প্রমাণ মেলাতে হবে?
হৃদয়ের মাঝেও তো হাসির বাণ বয়ে যেতে পারে। নেমে আসতে পারে অশ্রুর ঝর্ণা।
সেটা দৃষ্টিগোচর হওয়া কি খুব জরুরি?
---বাহ্! আপনি তো কবিদের মতো করে কথা বলেন দেখছি। আপনি কি কবিতা লিখেন?
---একসময় শব্দের মায়াজালে মনের কথাগুলো দিয়ে প্রতিটি পাতায় অনুভূতিতে ছেয়ে দিতাম। কিন্তু এখন সব এলোমেলো লাগে।
---কেন? আমাকে কি বলা যেতে পারে?
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে
---এক কাপ কফি হয়ে যাক!
--হুমম। মন্দ হয়না। চলুন হাটতে হাটতে আপনার কথা শুনা যাক।
---আপনার অনেক ধৈর্য আছে বলতে হবে।
---কেন?
---এই যে, আমার সাথে বসে আমার বকবকানি শুনছেন।
---আরে নাহ্। আপনার কথাগুলো শুনতে আমার খুবই ভালো লাগছে। আজকের বিকালটা আমার কাছে অনেক অনেক ভালো লাগছে।
---জানেন আমাদের ভালো লাগার,ভালোবাসার জিনিসগুলোকে আমরা সবসময় আঁকড়ে ধরে রাখতে পারিনা।অদৃশ্য বুলেটের আঘাতে কোনো একসময় সব ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আর আস্তে আস্তে একাকীত্বের চারদেয়ালে আমরা বন্ধিভাবে জীবন কাটায়।
---আপনার কথাগুলো খুবই রহস্যময়।
---আমরা প্রতিটি মানুষই একটা জটিল ধাধায় বেড়ে উঠি। সেখানে আমাদের কথাগুলো তো খুবই সাধারণ কিছু শব্দের বন্ধনে আবদ্ধ। আমাদের চিন্তাধারাই সেগুলোকে রহস্যময় করে তুলে।
---হুম! সেটা অবশ্য ঠিক বলেছেন।
---চলুন কফি খাওয়া যাক।
---ও! হ্যা চলুন।
কিছুক্ষণ পর.....
---আমি কিন্তু আপনার কথার প্রেমে পড়ে গেছি।আপনি সত্যিই খুব সুন্দরভাবে কথা বলেন।
---আর কিছুক্ষণ আমার সাথে থাকুন,আমার প্রেমে পড়ে যাবেন। সত্যি বলতে কাউকে ভালো লাগা যখন শুরু হয়,তাকে ভালোবাসার হৃদয়ে একটা জায়গা আপনাআপনি সৃষ্টি হয়। শুধু অপেক্ষা থাকে কিছু অনুভূতির, প্রত্যাশা থাকে সঠিক সময়ের।
---হঠাৎ করে পাওয়া জিনিসগুলো খুব সহজেই মনের অজান্তেই হারিয়ে যায়। সেটা জানেন তো?
---পাওয়ার আগেই যদি সংশয় মনে থাকে তাহলে সেটা কাছে টেনে নিয়ে হারানোর ভয়ে কেন হৃদয় অস্থির হয়ে উঠবে?
কি প্রয়োজন ক্ষনিকের তরে কাউকে আপন করার?
---সারাজীবন পাশে থাকতে পারবেন তারই বা কি নিশ্চয়তা আছে? যতক্ষণ বেঁচে আছেন ততক্ষণ তো সেই মানুষটার পাশে থাকা যায়। নিজের মতো করে ভালোবাসা যায়। রাখা যায়না কি বিশ্বস্ততা দুটি হাত,যেখানে এসে সব দু:খ-কষ্ট বিলীন হয়ে যায়।
---খামখেয়ালি মনে ভালোবাসাই বা থাকে কি করে? প্রতিটি মুহূর্তে যেখানে নিঃশ্বাসের দ্বার বন্ধ হয়ে আসে।
---আচ্ছা যদি বলি আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি তাহলে কি আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন?
---সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আমাকে বাসায় ফিরতে হবে। আর আকাশটাও কালোমেঘে ঢেকে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে বৃষ্টি হতে পারে।চলুন যাওয়া যাক।
---আপনি কিন্তু কথাটাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন।আসলে আপনার মুখোমুখি উত্তর দেওয়ার সাহস নেই। তাই চলে যেতে চাইছেন।
---সময়টা এখন খুবই বেমানান।প্রশ্নগুলোকে ফ্রেমে বন্ধি করে রাখাই ভালো।হয়তো কোনো অসময়ে একটিবারের জন্য আবারো স্মৃতিতে ফিরে আসা যাবে।
---আপনি আসলে যতোটা রহস্যময় ঠিক ততোটাই ভিতুর ডিম।
---নিজের ভিতর লুকিয়ে থাকা সত্তাটাকে মাঝেমাঝে লুকিয়ে রাখা খুব বড় অন্যায় নয়।
এখন আর থাকা সম্ভব হচ্ছেনা। আমাকে যে এবার যেতেই হবে।বাই।
--উহু...বাই না বলুন আসি। বিদায়ের মুহূর্তগুলো খুব যন্ত্রণাদায়ক। আরঅপেক্ষা সেটা তো চিরন্তন। চাইলে এসে হাতের মুঠোতে ধরা দেয়।
আচ্ছা আবার কবে দেখা ?
---হয়তো কাল বা পরশু, হয়তো কোনো একদিন।
---অপেক্ষায় থাকবো কিন্ত। আসবেন তো?
---কথা দিতে পারছি না। তবে অভ্যাসগুলো তো সহজে বদলানো যায়না।
ভালো থাকবেন..
---আপনিও ভালো থাকবেন
আর নিজের খেয়াল রাখবেন।
---------
পথদুটো আলাদা হয়ে গেছে। বদলে গেছে গন্তব্য। হয়তো শেষটায় গিয়ে সন্ধি হবে।যেখান থেকে শেষটার শুরু।

আচ্ছা নিবেদিতা, কেমন হতো যদি আমি হতাম একটি প্রেমের উপন্যাস?রাত জেগে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ফোনের স্বল্প আলোতে আমাকে পড়তে। গভীর ...
10/08/2025

আচ্ছা নিবেদিতা, কেমন হতো যদি আমি হতাম একটি প্রেমের উপন্যাস?
রাত জেগে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ফোনের স্বল্প আলোতে আমাকে পড়তে। গভীর মনযোগ দিয়ে পড়তে। মাঝখানের এক-দুইটা লাইন বাদ দিয়ে অন্য লাইনে চলে যেতে। বেশকিছু লাইন পড়ার পরে বুঝতে পাড়তে দুটো লাইন বাদ পরেছে। বিরক্তির সাথে আবার ফিরে যেতে সেই দুই লাইনে।
সপ্তম পৃষ্ঠার সবচেয়ে আবেগী লাইনটা পড়ে তোমার চোখে নোনা জলের ছোট খাটো ঝর্ণার সৃষ্টি হতো। এক ফোটা নোনা জল তোমার গাল গড়িয়ে পরত লাইনটির একটি শব্দের উপর। তুমি জল মুছতে গিয়ে শব্দটাই মুছে দিতে! নীল হয়ে পরে থাকত মুছে যাওয়া শব্দটির স্থানটি। ঠিক সেভাবে যেভাবে তোমার চোখের জল নীল করেছে একটি কিশোরকে।
ছাব্বিশতম পৃষ্ঠায় রয়েছে উপন্যাসটির সবচেয়ে সুন্দর লাইনটি। এই লাইনটিতে আশ্রয় নেই কোন আবেগের। বাস্তব ধর্মী একটি লাইন। তোমার জীবনধারার বহিঃপ্রকাশ করে এই একটা লাইন। একটি কিশোরের দেওয়া হলদে রাঙ্গা নোটবুকটায় যত্ন করে লিখে রাখতে লাইনটি।
প্রত্যেকটি লাইন তুমি আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়তে। আমি অনুভব করতাম তোমার উষ্ণ স্পর্শ। ভালোই হতো যদি হতাম একটি উপন্যাস! আঙ্গুল দিয়ে মার্ক করে পড়তে পড়তে ছিষট্টিতম পৃষ্ঠায় এসে বাচ্চা মেয়েটার মতো খিল খিল করে হাসতে। এই পৃষ্ঠাটি সার্থক। তোমার অপরূপ হাসি দেখে আমি হতাম মুগ্ধ।
এভাবেই হাসি কান্না আর তোমার স্পর্শের মাঝে একটা সময় শেষ হয়ে যেত উপন্যাসটি। তুমি চোখে জল নিয়ে বলতে ইস! উপন্যাসটি যদি আরো একটু বড় হতো।
বইটি তুমি অবহেলায় এককোণে রেখে ঘুমিয়ে যেতে। ঠিক সাত দিন পরে বইটিকে গ্রাস করত শহরের যতো ধূলাবালি। নীল স্থানের শব্দটি তেমনই রয়ে যাবে। যেমন রেয়ে গেছে সেই কিশোর ছেলেটি! অনেক দিন পর তুমি বইটি হাতে নিবে। যত্ন করে ধূলাবালি সরিয়ে পড়া শুরু করবে। সপ্তম পৃষ্ঠার সাত নম্বর লাইনের মুছে যাওয়া নীল শব্দটিতে এসে থেমে যাবে। মনে করতে চাবে শব্দটি। কিন্তু মনে পরবে না! মনে করতে না পারার বিরক্তিতে বইটিকে আবার ছুড়ে ফেলে দিবে।
জী ধন্যবাদ

Address

Jamalpur Sadar Upazila

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Limon Hossain posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Limon Hossain:

Share