30/06/2025
বেড়াতে আসুন রৌমারী বিলে
…………………………
রৌমারি বিল জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়া ইউনিয়নে অবস্থিত । আদি নাম রুইমারী। আশ্বিন - কার্তিক মাসে এ বিলে প্রচুর রুই মাছ মারা পড়তো বলে, লোক মুখে নাম হয়েছে রুইমারী। আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় রুই মাছকে রৌমাছ বলা হয় সে থেকে দিনে দিনে রৌমারী বিল।
এই বিলের দুই পাশে দুটি গ্রাম কাপাসহাটিয়া ও শেখসাদি তার পশ্চিম অংশে টুপকার চর , ঘোষের পাড়া । দক্ষিনে যমুনা - ব্রক্ষ্মপুত্রের শাখা নদী ঝিনাই । ঝিনাই নদীর পাড়ে আড়ংহাটি গ্রাম । জামালপুর শহরের গেটপাড় থেকে হাজিপুর ও শহরের পাচরাস্তা মোড় থেকে ঝাউগড়া হয়ে সিএনজি অথবা অটোরিক্সা ,মটরসাইকেলে সহজেই আসা যায় ।
বর্ষায় বিলটির আয়তন অনেক গুন বেড়ে যায় । তার সৌন্দর্য্ চোখে না দেখলে বোঝা যাবেনা । বর্ষাকাল ব্যাতিত অন্য ঋতুতে বিলের সৌন্দর্য ভিন্ন রকম। দিগন্ত জুড়ে কখনো সবুজ কখনো হলুদ শষ্যের মাঠ । শীতকালে নানা রকম পরিযায়ী পাখিদের মিলন ঘটে ।
এই বিলে মাছ , পাখি অন্যান্য জলজ প্রানির অভয় আশ্রম । বিলে জীববৈচিত্র্যের অন্যতম হলো বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও পাখি । চখা-চখি , পান মুরগি ,শামুককেচা, সরালি , বক, মাছরাঙা , পাতিমাছরাঙা , বালিহাস , সারস , ডাহুক , পানকৌড়ি , সাদাচিল , ঈগল , সঙ্খচিল । অন্যান্য প্রানিদের মধ্য , বিভিন্ন প্রজাজির সাপ , কচ্ছপ , কাকড়া, গুইসাপ , উদবিড়াল , দুই প্রজাতির স্তন্যপায়ি , উভয়চর প্রানি ও নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদ দেখা যায় ।
বর্ষায় রৌমারি বিলের সৌন্দর্য্ বেড়ে যায় । বর্ষাকালে বিল ভ্রমনের জন্য ছোট নৌকা , ইন্জিল চালিত নৌকা, পালতোলা নৌকা ভাড়া পাবেন । বিলে সারা বছর মাছ পাওয়া যায় । জেলেরা নানা কায়দায় নৌকা ব্যবহার করে জাল ফেলে মাছ শিকার করে । রাতের বেলাও মাছ শিকারিরা হেজাক , টর্চ , কেরোসিনের বড় কুপি জালিয়ে মাছ শিকার করে থাকে।
জোস্না রাতেও বিলে ঘুরতে পারবেন । বিলে ঘুরতে এসে আপনি তাজা মাছ ও খাটি দুধ কিনতে পারবেন । প্রতি বছর বিলে স্থানীয়দের উদ্যেগে নৌকা বাইচ আয়োজন করা হয় । হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে সে সময় । ইচ্ছা করলে বিলের কাছাকাছি ঐতিহাসিক গান্ধী আশ্রম ও মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘর পরিদর্শন করতে পারবেন ।জাদুঘর প্রাঙ্গণে অতিথি নিবাসে রাত্রি যাপন করার সুযোগ আছে ।
এখানে নানাধরনের দেশি খাবার পাওয়া যায় ।এ অঞ্চলে ঐতিহ্যগত ভাবে লাঠি খেলা , হাডুডু ,সারিগান , পালাগান , ধুয়া , বাউল গানের প্রচলন আছে ।বর্ষাকাল ব্যতিত অন্যসময় বিলের কিছু অংশ বাদে কৃষি জমিতে পরিনিত হয় । দিনের শেষে নৈসগির্ক নিরবতার মধ্যে বিলের কর্মময় কৃষক ও জেলেরা যখন ঘরে ফিরে যায় সে সময় সুর্যাস্ত দেখতে পাবেন । পশ্চিম আকাশে রক্তিম সুর্যের আলোয় বিলের পানি রঙিন হয়ে উঠে । বিলের তীরে দাড়িয়ে সুর্যাস্তের এক মনমুগ্ধকর সৌন্দর্য দেখতে ভুলে যাবেন না । অস্তগামী সুর্যের লালটিপ কপালে পরে পৃথিবী যেন তখন নতুন বউ সাজে ........... পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে আসুন রৌমারি বিলে- নৈসর্গিক সৌন্দর্য আপনার মন ভরিয়ে
লিখেছেন হিল্লোল সরকার