05/10/2023
ঢাকা সিটি কলেজের ২২ ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষার সাফল্য:০৪
নাম: কাজী মারজিউল হক
কলেজ সেকশন : SDP (EV)
রোল : ২৭৮৩
Achievements:
University and position:
1. M Abdur Rahim Medical College, Dinajpur : ৩১৯৩
কাজী ভাইয়াকে কিছু বলতে অনুরোধ করা হলে তিনি বলেন,
আমি কখনো ভাবি নাই যে আমি আমার ইন্টার লাইফ ও মেডিকেল এডমিশন যাত্রা এভাবে লিখে শেয়ার করবো, শুরু করা যাক-
সিটি কলেজে চান্স পাওয়াটাও আমার জীবনের অন্যতম চমক ছিলো। আমাদের কলেজ লাইফটা শুরু হয় অনলাইনে। শুরু থেকেই নিয়মিত ক্লাস করার চেষ্টা করতাম। টিচারদের দিক-নির্দেশনা মেনে
চলার চেষ্টা করতাম। অনলাইন ক্লাসের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও সেরাটা আদায় করার চেষ্টা করতাম।
প্রায় ১১ মাস পর আমাদের অফলাইন ক্লাস শুরু হয়। আমার বাসা চট্টগ্রামে থাকায় আমাকে নতুন শহরে নতুন ভাবে নতুন মানুষদের সাথে মানিয়ে নিতে হয়। আমার কলেজের সব বন্ধু ও টিচারদের থেকে আমি অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। ইন্টারের শুরু থেকে ব্যাসিক ক্লিয়ার করে পড়ার চেষ্টা করতাম।
ইন্টার লাইফে আমি কোন ব্যাচে বা বাসার টিচারের কাছে পড়ি নাই। অনলাইনে বিভিন্ন প্লেটফর্মের ক্লাস করতাম। সিটি কলেজের টিচারদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। ওনাদের নিয়ে লেখা শুরু করলে শেষ করা যাবে না। বিশেষ করে একজনের কথা না বললে নয় আমাদের গাইড টিচারের গাউসিয়া ম্যাম। ওনি আমাদের আনেক আাদর করত। ওনার কাছ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পেয়েছি।
কলেজের পরিক্ষাগুলো ভালো করার চেষ্টা করতাম এবং ভালোই করতাম। এই ভাবে দেখতে দেখতে কলেজ লাইফ শেষ হয়ে যায়। এইচএসসি পরীক্ষা ভালো মতো দিয়ে শেষ করলাম। শুরু হয় আমার এডমিশন যাত্রা, ঠিক তখনই আমার আশপাশ থেকে শুনতে পায় যে ইংরেজি ভার্শন থেকে নাকি মেডিকেলে তেমন চান্স পায়না, কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে ইংরেজি ভার্শনদের জন্য তেমন কোন ভালো বই নেই মেডিকেলের জন্য। তখন কারো কথা মাথা না নিয়ে আমি আমার লক্ষ্য স্থির রাখি। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতাম যে আমি এই ধারণা ভুল প্রমাণ করব। আলহামদুলিল্লাহ পেরেছি।
এইচএসসি পরীক্ষার পর ১ সপ্তাহ ঘুরাঘুরি করার পর যে টেবিলে বসেছি একদম মেডিকেল এডমিশন দিয়ে উঠেছি। এই দুই মাস আমাকে শুধু পরিশ্রমই করতে হয়নি অনেক কিছুই বিসর্জন দিতে হয়েছে।
দিনে কয় ঘন্টা পড়তাম এরকম ধড়া-বাধা নিয়ম ছিলো না। যতটুকু না পড়লে নিজের উপর আত্মতৃপ্তি না পেতাম ততটুকুই পড়তাম আর আমি কখনো পড়া জমিয়ে রাখতাম না যত সময় লাগুক পড়া না শেষ করে উঠতাম না। কোচিং আমার পড়া তাকে সহজ করে দিত কিন্তু দিনশেষে পড়তে হতো আমার। বেশি বেশি পরিক্ষা আর রিভিশন দিতাম শেষ দিকে। পরিক্ষার সময় যেগুলো ভুল হতো সেগুলো চিহ্নত করে রাখতাম, যাতে পরের বার একই জিনিস আবার যাতে ভুল না হয়।
আমার মেডিকেলে এ চান্স পাওয়ার গল্পটাও ওত মধুর না জীবনে হোচঁট খেয়ে আজকে আমি এখানে। পিএসসি ও জেএসসি তে আমার কোন জিপিএ -৫ ছিলো না। আনেক কথা শুনতে হয়েছে সবার থেকে। কিন্তু হাল ছেড়ে দেয় নাই। এসএসসি ও এইচএসসি তে জিপিএ -৫ পেলেও গোল্ডেন ছিলো না। জীবনে হোচঁট না খেলে হয়তো আমি আজকে মেডিকেলে চান্স পাওয়া হতো না। তাই জুনিয়রদেরকে একটা কথা বলতে চায় " হোচঁট খাওয়া মানে হেরে যাওয়া নয়, জয়ের অনিহা থেকে পরাজয়ের শুরু "।
আমার মেডিকেলে চান্স পাওয়ার মূল কারিগর আমার রব যার করুণা ছাড়া হয়তো আমি আজকে এখানে আসতে পারতাম না। তারপর আমার পরিশ্রম ও মা-বাবার দোয়া। কোচিং এর ভাইয়াদের অবদানও অস্বীকার করা যাবে না।
মেডিকেল এডমিশন টেস্টের এক্মাম হল অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু কথা বলি। পরিক্ষার কেন্দ্রের সামনে এত মানুষ দেখে আমি ঘাবড়ে যায়নি কারণ আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম যে এত মানুষ হবে। আমাদের বারের প্রশ্ন তুলনামূলক ভাবে কঠিন ছিলো তারপর ঘাবড়ে যায়নি কারণ আমি ধরে নিয়েছি না টিকা তাই সাভাবিক তাই কোনো টেনশনও ছিলো না। পরিক্ষার সময় প্রথম ৫-১০ মিনিট হাত কাঁপতে ছিলো কিছুক্ষণপর তা আবার সাভাবিক হয়ে যায়। পরিক্ষা দেয়ার পর ধরে নিয়েছিলাম চান্স পাবো না। কিন্তু রেজাল্ট দেয়ার পর দেখি চান্স হয়ে যায়, আলহামদুলিল্লাহ।
জুনিয়রদের জন্য কিছু কথা -
আমার করা একটা ভুল যেতা না করলে হয়তো পজিশন আরো উপরে থাকতো হচ্ছে যে আমার ইন্টার লাইফে এডমিশন নিয়ে আরো সচেতন থাকা উচিত ছিলো। কারণ দুই মাসের পরিশ্রম করে পুরো সিলেবাস শেষ করা তারপর রিভিশন দেয়া খুব কঠিন।
আর এডমিশন লাইফ এক-এক জনের জন্য এক-এক রকম তাই তেমন কোন উপদেশ দিতে চায় না। শুধু বলতে চায় পড়া লেখার ধারাবাহিকতা ধরে রেখো। কারো কথা শুনে নিজের সিদ্ধান্ত যাতে প্রভাবিত না হয়। সৎ ভাবে লেগে থাকো আর হাল ছেড়ে দিও না শেষ অবধি লড়াই করার মানসিকতা থাকতে হবে।
আমি ওতো গুছিয়ে লিখতে পারিনা কোন প্রকার ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।পরিশেষে আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে আমি ভালো ডাক্তার হয়ে মানুষের পাশে দাড়াতে পারি।
Follow: Humans of Dhaka City College