14/04/2025
এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আলোচনায় বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ কিংবা আর্সেনালের নাম যতটা উঠে আসছে, ততটা কি কেউ ইন্টার মিলানের কথা বলছে? উত্তর সোজা – না। অথচ যারা ইনজাঘির ইন্টারের খেলা ভালোভাবে দেখছে তারা জানে, এই ইন্টার মিলান আসলে “আন্ডাররেটেড মাস্টারপিস”!
তেইশে ফাইনাল খেলেছিল, এবারও দলটা বেশ দারুণ ছন্দে আছে। কিন্তু মিডিয়া যেন তাদের পাত্তাই দিচ্ছে না। অথচ স্কোয়াডের প্রতিটা খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ, ট্যাকটিক্স সবকিছুতেই তাদের এমন এক ধরণের ভারসাম্য আর গভীরতা আছে, যেটা যে কোনো বড় দলের জন্য ভয়ংকর হতে পারে।
🔷 সিমোনে ইনজাঘি – এক ক্লাসি মাস্টারমাইন্ড!
চলতি মৌসুমে ইন্টারের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে তাদের কোচ সিমোনে ইনজাঘি। এই মানুষটা tactically এতটাই ব্রিলিয়ান্ট যে, ম্যাচের ভেতর ভেতরেই পুরো গেমপ্ল্যান ঘুরিয়ে দিতে পারে। ওর ৩-৫-২ ফর্মেশন এর গেমপ্লেকে পিওর footballing আর্ট বলা চলে। ব্যাক-থ্রি নিয়ে ডিফেন্সে ওয়াল তৈরি করে ফেলেন, আর মিডে ৫ জনকে দিয়ে এমনভাবে প্রেস করে যে প্রতিপক্ষ বক্সেই যেতে পারে না সহজে।
বারেল্লা, চালহানোগলু, মিখিতারিয়ান – এদের মতো মিডফিল্ডাররা শুধু বল কন্ট্রোল করে না, বরং প্রতিপক্ষের পাসিং লাইন ব্লক করে দেয়, আর সুযোগ পেলেই ফরোয়ার্ডদের জন্য killer through pass দিয়ে দেয়।
🔹ডিফেন্সে আছে ‘দ্য ওয়াল’ – আলেসান্দ্রো বাস্তোনি
আলেসান্দ্রো বাস্তোনি, একদম আধুনিক যুগের আদর্শ সেন্টার-ব্যাক। ওর মধ্যে আছে ফিজিক্যাল প্রেজেন্স, আছে বল পায়ে আত্মবিশ্বাস, আর আছে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। প্রতিপক্ষের আক্রমণ আটকে দেওয়ার পাশাপাশি ওর পাসগুলো এতটাই নিখুঁত হয় যে ইন্টার অনেক সময় সেখান থেকেই আক্রমণ সাজায়।
বাস্তোনির পাশে রয়েছে স্টেফান ডেভ্রাই ও বেনজামিন পাভার – দুজনেই অভিজ্ঞ, Skillful, আর ট্রানজিশনে খুবই কার্যকর। ডেভ্রাই যেখানে বক্সে ট্যাকলিং আর ব্লকে ভয়ংকর, পাভার ঠিক তেমনই দারুণ পজিশনিং আর বল প্রগ্রেশনেও পারদর্শী। তিনজন মিলে গড়ে তুলেছে এমন এক ডিফেন্সিভ ইউনিট, যেটা শুধু গোল ঠেকাতেই নয়, আক্রমণ গড়তেও ভূমিকা রাখে।
🔹উইং-ব্যাক সিস্টেম – দিমার্কো ও ডুমফ্রিসের দৌরাত্ম্য
ইন্টারের আরেকটা বড় হাইলাইট হচ্ছে ওদের উইং-ব্যাক সিস্টেম। ফেডেরিকো দিমার্কো আর ডেনজেল ডুমফ্রিস – এই দুইজনকে যদি কেউ ঠিকমতো খেয়াল করে, তাহলে বুঝতে পারবে তারা কতটা ভয়ংকর। ওরা শুধু লাইন ধরে দৌড়ায় না, বরং ক্রস দেয়, কাটব্যাক দেয়, এমনকি সুযোগ পেলে নিজেরাও শট নেয়।
সাধারণত উইং-ব্যাকদের কাজ সীমিত হয়, কিন্তু ইনজাঘির সিস্টেমে এরা পুরো এক্স-ফ্যাক্টর।
🔹ফরোয়ার্ডে মার্টিনেজ-থুরাম জুটি
ইন্টার মিলান মানেই যেন এখন লাওতারো মার্টিনেজ। গত কয়েক মৌসুম ধরেই দুর্দান্ত ফর্মে আছে, ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দিয়ে নিজেকে দলের মেরুদণ্ডে পরিণত করেছে। এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ফরাসি স্ট্রাইকার মার্কাস থুরাম, আর এই নতুন জুটিটা যেন মাঠে চোখে লেগে থাকার মতো। মার্টিনেজ বল ধরে রেখে খেলাটা গড়ে তোলে, আর থুরাম দারুণ টাইমিংয়ে পেছনে দৌড় দেয় ফলে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা প্রায়ই তাল হারিয়ে ফেলে। দুজনের বোঝাপড়া, মুভমেন্ট, আর স্পেস খোঁজার দক্ষতা ইন্টারের আক্রমণকে করে তুলেছে আরও বেশি প্রাণবন্ত ও ভয়ংকর।
🔷 সান সিরোর ম্যাজিক – বায়ার্নের বিপক্ষে হতে পারে টার্নিং পয়েন্ট
যদি বায়ার্ন সেমিতে উঠতে চায় তাহলে তাদের ইন্টারকে ওদের ঘরের মাঠে হারাতে হবে। আর এই কাজটা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। ইন্টারের হোম রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বরাবরই শক্তিশালী। ইনজাঘির ছেলেরা যখন হোম ক্রাউডের সামনে খেলে, তখন ওদের গেম আরও লেভেল আপ করে।
বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগ সান সিরোতে হবে, আর এখানেই ইন্টার সুযোগ নিতে পারে। ইনজাঘির ট্যাকটিক্স, বারেল্লার রান, থুরাম-মার্টিনেজের জুটি, আর দিমার্কো-ডুমফ্রিসের উইংপ্লে – সব কিছু মিলিয়ে সেদিন ইন্টার যেকোনো বড় দলকে হারানোর মতো অবস্থায় থাকবে।
🔷“আন্ডাররেটেড” নয়, বরং “আকস্মিক বিস্ফোরণ” হতে পারে ইন্টার!
ইন্টার মিলান হয়তো এখন পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্রে নেই। কিন্তু মাঠে ওরা যা দেখাচ্ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে এই দলটা প্রস্তুত আছে সবাইকে চমকে দিতে। ইনজাঘির ট্যাকটিক্স, খেলোয়াড়দের ডেডিকেশন, আর হোম গ্রাউন্ডে আত্মবিশ্বাস সব কিছু মিলিয়ে এই ইন্টার মিলান ঠিক সেই “ডার্ক হর্স”, যারা শেষ হাসি হাসতেও পারে।
যারা এখনো ইনজাঘিদের অবমূল্যায়ন করছে, তারা হয়তো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষদিকে এসে একবার নিজেরাই ভাববে – “এই ইন্টারকে এতদিন কেন পাত্তা দিলাম না?”