14/07/2025
আমি কিছুদিন আগে আমার বড় খালার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। খালার ধর্মীয় জীবন বরাবরই আমাকে ভাবিয়ে তোলে—তিনি খুব পরহেজগার, নামাজ-রোজা ঠিকমতো করেন, মুখে সবসময় কোরআনের আয়াত অথবা কোনো হাদিস ভাসে।
এক বিকেলে আমি যখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতে-পায়ে নেলপালিশ দিচ্ছিলাম, খালা হঠাৎ এসে পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,
"মিতালি মা, নেলপালিশ দিস না… এটা ওজুর বাধা। আর জানিস তো, আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেছেন—পতিতালয়ের নারীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল রঙিন নখ। (বানীতে: আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ)"
আমি একটু হেসেই বলেছিলাম,
"খালা, এখন তো সবাই দেয়! রিমুভার দিলে উঠে যায় তো, এত ভয় দেখাইয়ো না!"
খালাও চুপ করে গিয়েছিলেন, হয়তো কেবল আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন—এই মেয়ে যেন একদিন নিজে বুঝে।
তারপর কয়েক দিন পরে ঘটল এক এমন ঘটনা—যেটা চোখের সামনে দেখার পর আজও আমি রাতে ঘুমাতে গেলে সেই দৃশ্য মনে পড়ে গা শিউরে ওঠে!
খালার পাশের বাড়ির এক চেনা মহিলা—ভদ্র, পর্দানশীন, সদালাপী—হঠাৎ রাত ১টায় মারা গেলেন। স্বাভাবিক মৃত্যু। সবাই ভাবছিলো, সকালে জানাজা হবে—জোহরের দিকে মাটি দেয়া যাবে।
মরদেহটা রাখা হলো বরফের উপর। পুরো ঘরে কান্নার শব্দ, শোকের ভার যেন ঘর ভেঙে পড়বে এমন।
সকাল বেলা যখন তাকে গোসল করাতে ইমাম সাহেবের স্ত্রী ঘরে গেলেন, হঠাৎ দেখলেন—মৃত মহিলার হাত-পায়ে চকচকে গাঢ় রঙের নেলপালিশ!
তিনি কোনো কথা না বলে বাইরে এসে স্বামীকে ডাকলেন, খুব আস্তে কানে বললেন—
"আপনারা গোসল দিচ্ছেন… কিন্তু ওনার নখে নেলপালিশ!"
ইমাম সাহেব থমকে গেলেন। দ্রুত এসে লাশ দেখলেন। তারপর মহিলার ছেলেমেয়েদের ডেকে বললেন:
"আপনাদের আম্মাকে এখন দাফন করা যাবে না। প্রতিটি নখে নেলপালিশ। ওজু হয়নি, গোসলও হয়নি। যতক্ষণ পর্যন্ত নেলপালিশ না উঠবে, জানাজাও হবে না, দাফনও না। এটা শরীয়তের নিয়ম।"
সবার মুখ শুকিয়ে গেল।
হাত-পা কাঁপছে সবার, কান্না থেমে গিয়ে শুরু হলো উৎকণ্ঠা।
রিমুভার আনা হলো… কাজ হলো না!
কেরোসিন, ব্লেড, তুলা—কোনো কিছুতেই নেলপালিশ উঠছে না।
ততক্ষণে লাশ ফুলে গেছে।
সারা শরীর থেকে অদ্ভুত গন্ধ।
পোকা-মাকড় চারদিক দিয়ে ভিড় করছে।
নতুন বরফ এনে আবার রাখা হলো।
তবুও… নেলপালিশ কিছুতেই উঠছে না!
রাত হয়ে এলো।
এশার ওয়াক্ত পেরিয়ে গেছে।
একজন মা, স্ত্রী, মুসলিম নারী—মাটির অপেক্ষায় কষ্ট পাচ্ছেন।
সবাই ইমাম সাহেবকে অনুরোধ করলো,
"হুজুর, এমনি করে দাফন দেই না? আর রাখা যাচ্ছে না!"
ইমাম সাহেব ধীরে বলে উঠলেন,
"এই অবস্থায় দাফন করলে ওনার আজাব অনেক বেশি হবে। শরীরের যেই অংশে ওজু না হয়, সেই অংশ আগুনে পুড়ে যাবে—এটা কোনো কাহিনী না, হাদিসে আছে।"
শেষমেশ সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল—
তার প্রতিটা নখ কেটে ফেলা হবে!
একটা একটা করে কাটা হলো—একটা লাশের আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা নেই, কিন্তু আমাদের ভুলে তাকে এভাবে সহ্য করতে হলো।
ফজরের পরে তাকে দাফন করা হলো—একটা মৃতদেহ, যার ওজু সম্পূর্ণ হলো নখ হারিয়ে…!
প্রিয় বোনেরা,
এই ঘটনা আমি আমার চোখে দেখেছি।
আজও যেন সেই লাশটার ব্যথা আমার বুকের মধ্যে ঢুকে আছে।
নেলপালিশ কি এতটাই দরকার ছিল?
একটা গা শিউরে ওঠা মৃত্যু, আর একটা লাশ—যার জানাজা আটকে গেল শুধু আমাদের একটুখানি অবহেলায়।
আজও আমি আর কখনো নেলপালিশ দেই না।
আপনাদের বলি—অনেক সুন্দর মেহেদী দিয়ে হাত সাজান, ওজু হয়, পাপ হয় না।
আসুন, আজকেই প্রতিজ্ঞা করি—
"হে আল্লাহ, আমি আর নেলপালিশ ব্যবহার করবো না—তাওবা করি, তুমি ক্ষমা করো…!"
মৃত্যু তো বলে আসে না,
কারো বয়সের আগেই যেকোনো এক্সিডেন্টে মৃ*ত্যু হতে পারে.. তবে প্রস্তুতি তো আমাদের থাকা উচিত… নয় কি?
আল্লাহ আমাদের ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু দিন। আমাদের নখ, চোখ, মুখ—সবকিছু পাক হোক সেই শেষ যাত্রার সময়… 🤲🏻
(Umaiza's- নিত্যদিনের জীবন গল্প) বিদ্র: আপনার জীবনে ঘটে যাওয়া সত্য কোন ঘটনা আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।©️©️