আলোর দিশারী Alor dishary

আলোর দিশারী Alor dishary আল্লাহ তাআলা রব্বুল আলামীন।
ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।

জন্ম স্বরলিকা কেউ বানাতে চাইলে যোগাযোগ করুন।
02/06/2025

জন্ম স্বরলিকা কেউ বানাতে চাইলে যোগাযোগ করুন।

07/04/2025

এই সমস্ত শুকুরের বাচ্চারা/ মুনাফিক যত দিন থাকবে
ততদিন মুসলিমরা নির্যাতিত হবে।

20/03/2025

O Muslim youth, O Muslims of Bangladesh, O Muslims of the whole world, listen carefully to this Hindu priest and learn from him. Strengthen your faith and protect your Muslim identity.And to awaken your sleeping faith How much longer will you sleep? Now is the time to awaken your sleeping faith.

17/03/2025
15/02/2025

বাংলা কুরআনের অনুবাদকবৃন্দ

১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দ : শাহ মুহম্মদ সগীর। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক কবি ছিলেন শাহ মুহম্মদ সগীর। তিনিই বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম পবিত্র কোরআনের সুরা অনুবাদ করেন। সগীর যুগপৎ বাংলা পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দে কোরআন অনুবাদ করেছেন। পবিত্র কোরআন এমনিতে আরবি ভাষার কাব্য মাধ্যমে ছন্দোবন্ধে প্রকাশিত। আর উনিশ শতকে যখন বাংলা ভাষায় কোরআন অনুবাদ হতে শুরু করেছিল, তখন বেশির ভাগই কাব্য আকারে তা অনূদিত হয়েছে। (ড. মোহাম্মাদ হাননানের বিশেষ গবেষণাসূত্রে প্রাপ্ত তথ্য)
১৬২০ : আবদুল হাকিম (১৬২০-১৬৯০)। মধ্যযুগের বাঙালি কবিদের মধ্যে কট্টর ভাষাপ্রেমী ছিলেন আবদুল হাকিম। তার ‘নূরনামা’ কাব্যে বাংলা ভাষায় কোরআন অনুবাদের বিশেষ তাগিদ প্রকাশিত হয়েছে।
১৮০৮ : আমির উদ্দিন বসুনিয়া। রংপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন আমির উদ্দিন বসুনিয়া। বাংলা গদ্যভাষায় তিনিই সবার আগে পবিত্র কোরআন অনুবাদ করেন। (মুহম্মদ মুজিবুর রহমান : বাংলা ভাষায় কোরআন চর্চা, ঢাকা, ১৯৮৬) কিন্তু বাংলা ভাষায় কোরআন অনুবাদের ইতিহাসবিষয়ক অন্য এক গবেষক বলেছেন, বসুনিয়ার ‘অনুবাদটি ছিল বাংলা পুঁথি সাহিত্যের ভাষায় আমপারার কাব্যানুবাদ।’ (ড. মোহাম্মদ আবদুল অদুদ : বাংলা ভাষায় কোরআন চর্চা : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, আল কোরআন ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ একাডেমি, ঢাকা, ২০০৯, পৃষ্ঠা ৯৫) আমির উদ্দিন বসুনিয়ার অনুবাদটি ছিল খণ্ডিত। প্রথম যুগের অন্যান্যের মধ্যে তিনিও পবিত্র কোরআনের ৩০তম পারা আমপারা বাংলা পয়ার ছন্দে অনুবাদ করেন।
১৮৬৮ : আকবর আলী। কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন আকবর আলী। তিনি ‘তরজমা আমছেপারা’ নাম দিয়ে পবিত্র কোরআন অনুবাদ করেন এবং ১৮৬৮ সালে কলকাতা থেকেই তা প্রকাশ করেন।

পবিত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদের বিশিষ্ট গবেষক মোফাখখার হুসেইন খান সরাসরি মন্তব্য না করলেও আকবর আলীকেই বাংলা ভাষায় প্রথম কোরআন অনুবাদক সাব্যস্ত করেছেন।

১৮৭৩ : পাদ্রি তারাচরণ মিত্র। হিন্দু থেকে খ্রিস্টান হয়েছিলেন তারাচরণ মিত্র। পবিত্র কোরআনের প্রথম ১২ পারা তিনি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন এবং ১৮৭৩ সাল থেকে কলকাতার বঙ্গমিহির নামক একটি পত্রিকায় তা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে থাকেন। পরে ১৮৮২ সালে পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করেন।
১৮৮১ : গিরিশচন্দ্র সেন (১৮৩৫-১৯১০)। তৎকালীন পূর্ব বাংলার বৃহত্তর ঢাকার বর্তমান নরসিংদী জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন গিরিশচন্দ্র সেন। তিনি প্রথমে ছিলেন হিন্দু, পরে ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী হন। ১৮৮১ সালে তার অনূদিত পবিত্র কোরআনের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। ১৮৮৫ সালের মধ্যে কোরআন অনুবাদের সব খণ্ড প্রকাশিত হয়। তার অনুবাদে সংস্কৃতজাত বাংলা শব্দের প্রাবল্যের কারণে তৎকালীন মুসলিমসমাজে তা জনপ্রিয়তা লাভ করেনি।
১৮৮৭ : মাওলানা নঈম উদ্দিন (রহ.) (১৮৩২-১৯০৮)। সে সময় উচ্চশ্রেণির হিন্দু-মুসলিম এবং শিক্ষিত মুসলিম সমাজে ফারসি ও উর্দু ভাষা ভালোভাবেই প্রচলিত ছিল। এ প্রেক্ষাপটেই মাওলানা নঈম উদ্দিন সেই উষাকালে বঙ্গভাষায় পবিত্র কোরআন অনুবাদে এগিয়ে এসেছিলেন।
১৮৮৯ : আকবর উদ্দিন। তিনি উত্তর বাংলার দিনাজপুর থেকে ১৮৮৯ সালে পবিত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন। অনুবাদ গ্রন্থটি পাওয়া না গেলেও বাংলা ভাষায় মুসলিম লেখক গ্রন্থপঞ্জিতে (মো. আবদুর রাজ্জাক, রাজশাহী : ১৯৮৮ প্রণীত) এই অনুবাদের কথা উল্লিখিত হয়েছে। তিনি তার অনুবাদের নাম দিয়েছিলেন ‘কোরআন’।
১৮৯১ : ফিলিপ বিশ্বাস। বাঙালি (দেশীয়) খ্রিস্টানের হাতে এই প্রথম পবিত্র কোরআন অনূদিত হয়। কলকাতা থেকে ১৮৯১ সালে প্রকাশিত এই অনুবাদের আসল উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম ধর্মকে হেয় করা। আর এ জন্য তা বিনা মূল্যে বিতরণ করা হতো। পরে মুসলিমদের আপত্তির কারণে ব্রিটিশ সরকার অনুবাদটি বাজেয়াপ্ত করে।

১৮৯১ থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ বছর এভাবে পত্রপত্রিকায় তার অনূদিত পবিত্র কোরআন প্রকাশ অব্যাহত থাকে। ১৯০৭ সালে ২৯ সংখ্যক পারা সুরা তাবারাকাল্লাজি গ্রন্থাকারে কলকাতা থেকে প্রকাশ করেন। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ১০১।
১৯০৫ : মাওলানা আব্বাছ আলী (১৮৫৯-১৯৩২)। গবেষকদের মতে, মাওলানা আব্বাছ আলী হলেন বাংলা ভাষায় কোরআনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মুসলমান অনুবাদক। এর আগে মাওলানা মঈনুদ্দীন কোরআন অনুবাদের যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা পূর্ণাঙ্গভাবে সফল হয়েছিল তার সন্তানদের দ্বারা। কিন্তু মাওলানা আব্বাছ আলী নিজে পবিত্র কোরআনের প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ সমাপ্ত করতে সমর্থ হন।

মওলানা আকরম খাঁ (১৮৬৮-১৯৬৮)। বাঙালি মুসলিম আলেমদের মধ্যে মওলানা আকরম খাঁ পবিত্র কোরআন অনুবাদের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত ছিলেন। প্রথমত, গিরিশচন্দ্র সেনের অনুবাদকে অভিনন্দিত করে তিনি প্রথম এ বিষয়ে আলোচনায় আসেন। পরে মাওলানা আব্বাছ আলীর সঙ্গে যৌথভাবে ১৯০৫ সালে কোরআন অনুবাদে অংশগ্রহণ করেন। যৌথ অনুবাদটি ছিল তিন ভাষায় সমন্বিত। আরবি, বাংলা ও উর্দু ভাষায় এই কোরআন অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল।

১৯০৭ : আবদুল ছাত্তার সুফী। কলকাতা থেকে ১৯০৭ সালে পবিত্র কোরআনের আয়াত কাব্য আকারে অনুবাদ করে প্রকাশ করেন তিনি। বাংলা কবিতার ত্রিপদী ছন্দে কোরআন অনুবাদে ছিলেন তিনিই প্রথম।
১৯০৮ : রেভারেন্ড উইলিয়াম গোল্ডস্যাক (১৮৬১-১৯৫০)। সাউথ অস্ট্রেলিয়ান ব্যাপ্টিস্ট মিশনের পক্ষ থেকে রেভারেন্ড গোল্ডস্যাক ১৯০৮ সালে অপপ্রচারের উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআন অনুবাদ করে ফরিদপুর থেকে প্রকাশ করেন। মোট ১২ খণ্ডে তিনি পুরো কোরআন অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলেন। এ জন্য তার সময় লেগেছিল মোট ১২ বছর।
১৯০৮ : শ্রী কিরণ গোপাল সিংহ (১৮৮৫-১৯৪২)। ইতিহাসে দেখা যায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একমাত্র কিরণ গোপাল সিংহই পবিত্র কোরআন অনুবাদে এগিয়ে এসেছিলেন। ইসলাম ধর্মের প্রতি অনুরাগ থেকেই কিরণ গোপাল সিংহ পবিত্র কোরআন বাংলা ভাষায় অনুবাদে হাত দিয়েছিলেন।
১৯১১ : মুহাম্মদ মেহেরুল্লাহ সানী (১৮৫৬-১৯১৮)। সিরাজগঞ্জ জেলার সমাজকর্মী ও সাহিত্যিক মেহেরুল্লাহ সানী পবিত্র কোরআন বাংলায় অনুবাদ করেন এবং এর নাম দেন বাংলা কোরআন শরিফ। আলেমসমাজ কোরআন অনুবাদের এ রকম নাম গ্রহণ করেনি, কারণ ‘আরবি কোরআন’, ‘বাংলা কোরআন’—এ রকম কোরআনের নাম হতে পারে না। উলামা-হজরতরা বলেন, ‘পবিত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদ’—এমন করে নামকরণে এই কার্যক্রম সহিহ হতে পারে।
১৯১৩ : আলাউদ্দীন আহমদ (১৮৫১-১৯১৫) ও হাফেজ মাহমুদ শাহ। সুসাহিত্যিক আলাউদ্দীন আহমদ সিরাজগঞ্জে পবিত্র কোরআন অনুবাদে হাত দেন। পরে তিনি হাফেজ মাহমুদ শাহর সাহায্য গ্রহণ করেন এবং যুগ্ম নামে এই অনুবাদ ১৯১৩ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশ করেন। বাংলা ভাষায় মুসলিম লেখক গ্রন্থপঞ্জি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৬-৩৭ (মো. আবদুর রাজ্জাক প্রণীত)-এ তার নাম কোরআন অনুবাদক হিসেবে উল্লিখিত আছে। তার গ্রন্থের পৃষ্ঠাসংখ্যা ছিল ৬৬। বলা হয়েছে, তাফসির রুহুল বয়ান থেকে তিনি সুরা আল কদরের বঙ্গানুবাদ করেছিলেন। (ড. মোহাম্মদ আবদুল অদুদ : বাংলা ভাষায় কোরআন চর্চা : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১৬৭)
১৯১৪ : মাওলানা খোন্দকার আবুল ফজল আবদুল করিম (১৮৭৬-১৯৪৭)। টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণকারী খোন্দকার আবদুল করিম ১৯১৪ সালে ‘কোরআন’ নামে বাংলা ভাষায় পবিত্র কোরআন অনুবাদ করেন এবং টাঙ্গাইল থেকে মুদ্রণ করে প্রকাশ করেন। কোরআনের আমপারার অংশ তিনি কাব্যানুবাদও করেছিলেন। পরে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় কোরআন শরিফ প্রথম খণ্ড। পরে তার অন্য খণ্ডগুলো কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল।
১৯১৬ : মুন্সী করিম বখশ। কলকাতার অধিবাসী মুন্সী করিম বখশ ১৯১৬ সালে পবিত্র কোরআনের প্রথম ও শেষ পারার বাংলা অনুবাদ কলকাতা থেকে প্রকাশ করেন। বাংলা ভাষায় পবিত্র কোরআনের মূল আরবির বাংলা উচ্চারণের প্রথা তিনিই প্রথম চালু করেন। শুধু তা-ই নয়, তার অনুবাদে প্রথম আরবি, পরে আরবির বাংলা উচ্চারণ এবং তারপর বাংলা অনুবাদ পর পর প্রদত্ত হয়েছে। যদিও আরবির বাংলা উচ্চারণ প্রদানকে আলেমসমাজ যথার্থ মনে করেন না, তার পরও আরবিতে অনভিজ্ঞ মুসলমানদের জন্য তা কার্যকর মনে করা হয়েছিল। এই ধারা তখন থেকে বাংলা সমাজে এখনো প্রচলিত আছে।
১৯১৭ : মাওলানা মুহাম্মদ রুহুল আমিন (১৮৭৫-১৯৪৫)। পশ্চিম বাংলার চব্বিশ পরগনায় জন্মগ্রহণকারী মাওলানা রুহুল আমিন ১৯১৭ সালে পবিত্র কোরআন অনুবাদ করেন। কলকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে পাস করা আলেম হওয়ায় তার অনুবাদের প্রতি তৎকালীন মুসলিমসমাজের আগ্রহ দেখা যায়।
১৯২০ : মাওলানা এয়ার আহমদ এলটি (-১৯৪৪)। ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণকারী মাওলানা এয়ার আহমদ ‘আমপারা বাঙ্গালা তফছির’ নামে কোরআন অনুবাদ করে ১৯২০ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশ করেন।
১৯২২ : মোহাম্মদ আবদুল হাকিম (১৮৮৭-১৯৫৭) ও মোহাম্মদ আলী হাসান। গোপালগঞ্জ নিবাসী মোহাম্মদ আবদুল হাকিম এবং মানিকগঞ্জ নিবাসী মোহাম্মদ আলী হাসান ‘কোরআন শরিফ’ নাম দিয়ে পবিত্র কোরআনের অনুবাদ যৌথভাবে সম্পাদন করেন এবং কলকাতা থেকে প্রকাশ করেন। এর সঙ্গে তারা তাফসিরও বর্ণনা করেছেন। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক থেকে শুরু করে অনেক মুসলমান নেতাই তাঁদের অনুবাদের প্রশংসা করে সনদ দিয়েছিলেন।
১৯২৩ : মাওলানা শেখ ইদ্রিস আহমদ। বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ১৮৯২ সালে মাওলানা শেখ ইদ্রিস আহমদ জন্মগ্রহণ করেন। ‘কোরআনের মহাশিক্ষা’ নামে তার অনূদিত পবিত্র কোরআন ১৯২৩, ১৯২৭ ও ১৯৩৪ সালে মোট তিন খণ্ডে বিভক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়।
১৯২৪ : মাওলানা ফাজেল মকিমী। কলকাতার অধিবাসী মাওলানা ফাজেল মকিমী ১৯২৪ সালে পবিত্র কোরআনের দু-তিন পারা অনুবাদ করেছিলেন। কিন্তু গবেষকরা তার অনুবাদের কোনো নমুনা বা কপির সন্ধান পাননি। (ড. মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান : বাংলা ভাষায় কোরআন চর্চা, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ২৭৪)
১৯২৫ : ফয়জুদ্দীন আহমেদ (১৮৯৯-১৯৩৫)। বরিশালে জন্মগ্রহণকারী ফয়জুদ্দীন আহমেদ সুরা ফাতিহা ও এর তাফসির অনুবাদ করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ঢাকা থেকে ১৯২৫ সালে তা প্রকাশ করেন। সুরা ফাতিহার অনুবাদ ও তাফসিরের এই খণ্ডটি ছিল ১৫৭ পৃষ্ঠার।
১৯২৬ : ফজলুর রহীম চৌধুরী (১৮৯৬-১৯২৯)। বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণকারী এবং শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের জামাতা ফজলুর রহীম চৌধুরী প্রথমে ‘কোরআনের সুবর্ণ পঞ্জিকা’ নামে বিশেষ বিশেষ সুরা ও সুরাংশ অনুবাদ করে ১৯২৬ সালে প্রকাশ করেন। পরে ‘কোরআন শরিফ’ নামে পবিত্র কোরআন অনুবাদ করেন, যা তার মৃত্যুর পর ১৯৩০ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়।

মাওলানা খন্দকার গোলাম রসুল। ঝিনাইদহ জেলার আলেম ‘বাঙ্গালা পাঞ্জ সুরাহ’ নাম দিয়ে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সুরা অনুবাদ করেন। ১৯২৬ সালে তা নদিয়া থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলা ভাষায় মুসলিম লেখক গ্রন্থপঞ্জিতে (মো. আবদুর রাজ্জাক প্রণীত, রাজশাহী ১৯৮৮) তার নাম পবিত্র কোরআনের একজন অনুবাদক হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে।

১৯২৭ : মোহাম্মদ আবদুর রশিদ ছিদ্দিকী। কক্সবাজার জেলায় জন্মগ্রহণকারী মোহাম্মদ আবদুর রশিদ ছিদ্দিকী ‘মহা কোরআন কাব্য’ নাম দিয়ে ১৯২৭ সালে পবিত্র কোরআন অনুবাদ করে কলকাতা থেকে প্রকাশ করেন। গদ্য ও পদ্য—দুই রীতিতে তার কোরআন অনূদিত হয়েছিল, আর এটা ছিল বঙ্গ ভাষায় কোরআন অনুবাদের একটি ব্যতিক্রম রীতি।
১৯২৮ : মাওলানা ওসমান গনি। পশ্চিম বাংলার বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯১৪ সালে পাঞ্জ সুরা অনুবাদ করেন এবং এর নাম দেন ‘পঞ্চমণি’। কিন্তু এটি প্রকাশিত হয় ১৯২৮ সালে কলকাতা থেকে। পরে ‘পবিত্র কোরআন’ শিরোনামে কোরআন অনুবাদ করেন এবং ১৯৪৭ সালে তা প্রকাশিত হয়। তিনি এই অনুবাদে আরবি উচ্চারণের বাংলা অনুলিখন (প্রতিবর্ণায়ন) সংযোজন করেন।

মাওলানা আহমদ আলী (১৮৯৮-১৯৫৯)। যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং কলকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে দ্বিনি শিক্ষার প্রাথমিক ভিত গড়ে তোলেন। ১৯২৮ সালে সুরা ইয়াসিন অনুবাদ করে প্রকাশ করেন।

১৯২৯ : মাওলানা কফিলউদ্দিন আস সিদ্দিকী। টাঙ্গাইল জেলার অধিবাসী মাওলানা কফিলউদ্দিন ১৯২৯ সালে ‘তরজমা পাঞ্জে সুরা’ নাম দিয়ে পবিত্র কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সুরা অনুবাদ করেন। এটি প্রকাশিত হয় কলকাতা থেকে। তবে তার অনূদিত এই তরজমা পাওয়া যায়নি।

অধ্যাপক আলী আহমদ লিখিত বাংলা মুসলিম গ্রন্থপঞ্জিতে (বাংলা একাডেমি, ঢাকা ১৯৮৫) মাওলানা কফিলউদ্দিন আস সিদ্দিকী (রহ.)-কে একজন কোরআন অনুবাদক হিসেবে দেখানো হয়েছে। (পৃষ্ঠা ৩৪৬)

১৯৩০ : মোরশেদ আলী। ‘কোরআন দর্পণ’ নামে পবিত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন মোরশেদ আলী ১৯৩০ সালে। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ঢাকা থেকে। অধ্যাপক আলী আহমদ লিখিত বাংলা মুসলিম গ্রন্থপঞ্জিতে কোরআন অনুবাদক হিসেবে তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি তার অনূদিত গ্রন্থের নাম দিয়েছিলেন ‘কোরআন দর্পণ’। এর প্রথম খণ্ডে ১৭টি সুরার বঙ্গানুবাদ স্থান পেয়েছিল।

মীর ফজলে আলী (১৮৯৮-১৯৩৯)। বরগুনা জেলার সন্তান মীর ফজলে আলী ১৯৩০ সালে ‘কোরআন কণিকা’ শিরোনামে পবিত্র কোরআনের অংশবিশেষ অনুবাদ করে প্রকাশ করেন। এটি প্রকাশিত হয় কলকাতা থেকে। ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এই অনুবাদের ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন।

১৯৩১ : মুহাম্মদ আজহার উদ্দীন। রাজবাড়ী জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন মুহাম্মদ আজহার উদ্দীন। ‘কোরআনের আলো’ শিরোনামে পবিত্র কোরআনের দীর্ঘ সুরাগুলো অনুবাদ করে ১৯৩১ সালে তিনি কলকাতা থেকে প্রকাশ করেন।
১৯৩২ : আবদুল আযীয হিন্দি (১৮৬৭-১৯২৬)। কুমিল্লা জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন আবদুল আযীয হিন্দি। ‘কোরআন শরিফ’ শিরোনামকৃত তার অনূদিত পবিত্র কোরআন নোয়াখালী থেকে ১৯৩২ সালে প্রকাশিত হয়।
১৯৩৩ : কাজী নজরুল ইসলাম। পশ্চিম বাংলার বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণকারী বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি বলে পরিচিত কাজী নজরুল ইসলাম পবিত্র কোরআনের আমপারা অংশ কাব্যাকারে অনুবাদ করেন। তা ‘কাব্য আমপারা’ নামে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় ১৯৩৩ সালে। কবি নজরুলের অনুবাদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি কাব্যানুবাদ শেষে মার্জিনের নিচে আরবি সুরার বাংলা অর্থ পরিবেশন করেছেন।
১৯২০ সালে ‘আমপারা’ শীর্ষক অংশে পবিত্র কোরআনের অনুবাদের খণ্ডাংশ কলকাতা থেকে প্রকাশ করেন। গদ্য ও কাব্য—এ দুই-ই বিচ্ছিন্নভাবে অনুবাদে তিনি কাজে লাগান।
১৯৩৪ : সৈয়দ আবুল খায়ের তাজুল আউলিয়া জাহাঙ্গীর। টাঙ্গাইল থেকে ১৯৩৪ সালে ‘বাংলা কোরআন শরিফ’ নাম দিয়ে পবিত্র কোরআনের অনুবাদ প্রকাশ করেন। তবে তা ছিল শুধু প্রথম পারার অনুবাদ।
১৯৩৫ : সৈয়দ আবুল মনসুর। সিলেটের অধিবাসী ছিলেন সৈয়দ আবুল মনসুর। কলকাতা থেকে ১৯৩৫ সালে ‘কোরআন কুসুমাঞ্জলি’ নামে পবিত্র কোরআন অনুবাদ করে প্রকাশ করেন। পরে ‘কোরআন মঞ্জরি’, ‘কোরআন মঙ্গল’ ইত্যাদি নামে আরো কিছু সুরার অনুবাদ প্রকাশিত হয়। মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমিত্রাক্ষর ছন্দের অনুসরণ করে তিনি কোরআনের কাব্যানুবাদের অনুশীলন করেছিলেন।
১৯৩৬ : আইয়ুব আলী চৌধুরী (১৮৭৭-১৯৩৬)। বাংলা পয়ার ছন্দে সুরা ফাতিহার কাব্যানুবাদ করে আইয়ুব আলী চৌধুরী ১৯৩৬ সালে কলকাতা থেকে তা প্রকাশ করেন। এর নাম দেন তিনি ‘স্বর্গীয় কানন’। কাব্যানুবাদে সুরা ফাতিহা বিষয়ে তার মনগড়া অনেক শব্দও তিনি এতে প্রয়োগ করেন।

মাওলানা মুহাম্মদ গোলাম আকবর (১৮৯২-১৯৫৬)। যশোর থেকে ১৯৩৬ সালে ‘আমপারার তফসির’ নাম দিয়ে তার কোরআন অনুবাদের খণ্ড প্রকাশ করেন।

১৯৩৭ : বসন্তকুমার মুখোপাধ্যায়। হিন্দু ব্রাহ্মণদের মধ্যে বসন্তকুমার মুখোপাধ্যায়ই প্রথম কোরআন অনুবাদ করে প্রকাশ করেছিলেন। ‘পবিত্র কোরআন প্রবেশ’ নামে তার অনুবাদ ১৯৩৭ সালে নারায়ণগঞ্জ থেকে মুদ্রিত হয়ে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে বলে গ্রন্থটিতে উল্লিখিত হয়।
১৯৩৯ : মুহাম্মদ ইসমাইল। চাঁদপুরে জন্মগ্রহণকারী মুহাম্মদ ইসমাইল পবিত্র কোরআনের ৩০তম পারা অনুবাদ করে ১৯৩৯ সালে ত্রিপুরা থেকে প্রকাশ করেন। তিনি এর নাম দেন ‘আমপারার তরজমা’।
১৯৪০ : মুহাম্মদ শামসুল হুদা। গিরিশচন্দ্র সেনের পর নরসিংদীতে জন্মগ্রহণকারী মুহাম্মদ শামসুল হুদা নামের আরেক নরসিংদীবাসী কোরআন অনুবাদে এগিয়ে আসেন। ১৯৪০ সালে ‘নেয়ামুল কোরআন’ নামে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সুরার অনুবাদ, ফজিলতসহ তার অনুবাদ প্রকাশিত হয় ঢাকা থেকে।
১৯৪১ : খানবাহাদুর আহসানউল্লা (১৮৭৩-১৯৬৫)। সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণকারী খানবাহাদুর আহসানউল্লা পবিত্র কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি সুরা অনুবাদ করে ১৯৪০ সালে (মতান্তরে ১৯৪০-১৯৪৭-এর কোনো সময়ে) কলকাতা থেকে প্রকাশ করেন। এর নাম দেন তিনি ‘পাঁচ ছুরা’। এর আগে এ রকম অন্যান্য অনুবাদে আমরা নাম পেয়েছি ‘পোঞ্জু সুরা’, তিনিই প্রথম ‘পোঞ্জু’র বাংলা করেন ‘পাঁচ’।
১৯৪৪ : মীজানুর রহমান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিবাসী মীজানুর রহমান তার মায়ের নির্দেশে পবিত্র কোরআন অনুবাদ করে ‘নূরের ঝলক’ বা ‘কোরআনের আলো’ নাম দিয়ে ১৯৪৪ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশ করেন।
১৯৪৫ : মাওলানা যুলফিকার আলী। ফেনী জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। পবিত্র কোরআনের আমপারার অংশ অনুবাদ করে ১৯৪৫ সালে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশ করেন। তার অনুবাদের বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি আরবি অক্ষরে বাংলা অনুবাদ করেন। পবিত্র কোরআন অনুবাদে এই রীতিতে তিনিই প্রথম। তবে এই ধারার আর বেশি চর্চা হয়নি।
১৯৪৬ : ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৮৮৫-১৯৬৯)। পশ্চিম বাংলার চব্বিশ পরগনা জেলায় জন্মগ্রহণকারী বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ থেকেও বাংলাভাষী মানুষ পবিত্র কোরআনের অনুবাদ লাভ করেছে। ‘মহাবাণী’ শিরোনামে তার অনূদিত কোরআন প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৬ সালে বগুড়া থেকে। এতে সুরা ফাতিহা থেকে সুরা ফিল পর্যন্ত অনূদিত হয়েছিল। এ ছাড়া তিনি সুরা বাকারাও অনুবাদ করেছিলেন। তার অনুবাদে সংস্কৃতজাত শব্দের অগ্রাধিকার ছিল। ‘ইমাম’কে ‘আচার্য’ ও ‘ধর্মাচার্য’, ‘মুক্তাদি’কে ‘অনুবর্তী’, ‘আয়াত’কে ‘প্রবচন’, ‘নবী’কে ‘সংবাদবাহক’, ‘নবুয়ত’কে ‘প্রেরিতত্ব’ শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
১৯৪৭ : মাওলানা মুনীর উদ্দীন আহমদ। রংপুর নিবাসী মাওলানা মুনীর উদ্দীন আহমদ ‘হাফিজিল কাদেরী’ নামে তাফসিরসহ পবিত্র কোরআনের অনুবাদ করেন ১৯৪৭ সালে। এটি রংপুর থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল।
১৯৬২ : ‘তাফসিরে আশরাফী’, এমদাদিয়া লাইব্রেরি। উর্দু বয়ানুল কোরআনের অনুবাদ। মূল : আল্লামা আশরাফ আলী থানভি (রহ.)।
১৯৬৩ : ‘সহজ পাক তফসির’, খন্দকার মোহাম্মদ হুছাইন। পাকুল্লা, টাঙ্গাইল, তফসির মঞ্জিল।
১৯৬৬-৬৭ : ‘পবিত্র কুরআন’, কাজী আব্দুল ওদুদ। ফরিদপুর, পরে কলকাতা।
১৯৬৭ : ‘কোরআন শরিফ’, ঝিনুক প্রকাশনী, আলী হায়দার চৌধুরী।

‘কোরআনুল করিম’, ইসলামিক একাডেমি, ঢাকা (বর্তমানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অনুবাদক : শামসুল ওলামা বেলায়েত হোসেন ও অন্যান্য।

১৯৬৮ : ‘কোরআনের মুক্তাহার’, মাওলানা মোহাম্মদ ছায়ীদ ইব্রাহিমপুরী। ইব্রাহিমপুর, চাঁদপুর।
১৯৬৯ : ‘কোরআন শরিফ’, হাকিম আব্দুল মান্নান। সহজ-সরল কথা, ভাষায় প্রথম ও মূলানুগ অনুবাদ। তাজ কম্পানি, ঢাকা।
১৯৭০ : ‘তাফাসরুল কোরআন’। শব্দসহ তাফসির। মুহা. নূরুল ইসলাম, বগুড়া।
১৯৭০-৭২ : ‘আল-কোরআন : তরজমা ও তাফসির’। পাঁচ খণ্ড, অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মাদ তাহের, কলকাতা আলিয়া মাদরাসা।
১৯৭৪ : ‘তাফসিরে বয়ানুল কুরআন’-এর বঙ্গানুবাদ, মাওলানা নূরুর রহমান, ১৯০৯, এমদাদিয়া লাইব্রেরি।

মূল : আল্লামা আশরাফ আলী থানভি (রহ.)।

‘কোরআন শরিফ’, টীকাসহ গোটা কোরআন শরিফের বঙ্গানুবাদ, মোবারক করিম জওহর। কলি. হরফ, প্রকাশনী।

১৯৭৫ : ‘তাফহিমুল কোরআন’, মাহবুব প্রকাশনী। মূল লেখক : মাওলানা মওদুদি (রহ.), অনুবাদক : অধ্যাপক গোলাম আযম।
১৯৭৭ : ‘পবিত্র কোরআন শরিফ’, মূল আরবিসহ বিশুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ, অর্থ ও প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসংবলিত। এ কে এম ফজলুর রহমান মুন্সী, রাজামেহার, কুমিল্লা।
১৯৭৮-৭৯ : ‘তাফহিমুল কোরআন : কোরআন মজিদের বাংলা তাফসির’। ইসলামিক পাবলিকেশন্স, অন্য মুদ্রণ : আধুনিক প্রকাশনী।
১৯৮০ : ‘তাফসিরে মা‘রেফুল কোরআন’, মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন। মূল : মুফতি মুহম্মদ শফি।
১৯৯৪ : ‘পবিত্র কোরআনুল করিম : বাংলা অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসির’ (মা‘আরেফুল কোরআনের সংক্ষিপ্ত তাফসির), সৌদি দূতাবাস।
১৯৮২ : ‘তাফসিরে জালালাইন’ (অনুবাদ), মুহম্মদ খুরশীদ উদ্দীন।
১৯৮৭ : ‘বাংলা কুরআন শরিফ’, আব্দুদ দাইয়্যান চিশতী (মাওলানা শাহ সুফী), ছারছীনা, বরিশাল, কথাকলি।
১৯৮৮ : ড. মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান, অধ্যাপক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

‘তাফসিরে ইবনে কাছির’, অধ্যাপক আখতার ফারুক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

১৯৯২ : ‘কোরআন শরিফ’, ড. ওসমান গনি, কলকাতা মল্লিক ব্রাদার্স।
১৯৯৩ : ‘তাফসির-ই জালালাইন’, ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। মূল : জালালুদ্দীন সুয়ুতি (রহ.), ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
১৯৯৪ : ‘তাফসিরে নূরুল কোরআন’, মাওলানা মো. আমিনুল ইসলাম, আলবালাগ পাবলিকেশন্স।

‘তাফসিরে মাজেদি শরিফ’, মুহাম্মদ ওবায়দুর রহমান মল্লিক (অনুবাদক)। মূল : মাওলানা আব্দুল মজিদ দরিয়াবাদি, ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

১৯৯৫:কানযুল ঈমান ও খাযাইনুল ইরফান অনুবাদ: মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান

মূল তরজুমা: আ'লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (রহ)ও তাফসীর: মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ নঈম উদ্দিন মুরাদাবাদী (রহ), গুলশান-ই-হাবীব ইসলামী কমপ্লেক্সে, চট্টগ্রাম।

১৯৯১-৯৫ : ‘তাফসিরে তাবারি শরিফ’, মাওলানা মুহাম্মদ সাখাওয়াত উল্লাহ। মূল : আল্লামা আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারির তাবারি (রহ.), ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
১৯৯৫ : ‘তাফসির ফি যিলালিল কোরআন’, হাফিজ মুনির উদ্দীন আহমদ, আল কোরআন একাডেমি, লন্ডন। মূল : সাইয়েদ কুতুব শহীদ (রহ.)।
১৯৯৬ : ‘ছহীহ বঙ্গানুবাদ কোরআন শরিফ’, মাওলানা এম এ বশির উদ্দিন।
১৯৯৬-৯৭ : ‘তাফসিরে উসমানী’ (অনূদিত), ইসলামিক ফাউন্ডেশন। মূল : মাওলানা মাহমুদুল হাসান ও মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানী।
১৯৯৭ : ‘কুরআন শরিফ’, ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, খোশরোজ।
১৯৯৮ : ‘শাহনূর কোরআন শরিফ’, মাওলানা মাজহার উদ্দীন আহমদ, ছারছীনা।

মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

১৯৯৯ : ‘তাফসিরে কোরআন’, সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী।
২০০০ : ‘কোরআন শরিফ : সরল বঙ্গানুবাদ’, বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
২০০২ : ‘কোরআন শরিফ : সহজ সরল বাংলা অনুবাদ’, হাফেজ মুনির উদ্দিন আহমদ, আল কোরআন একাডেমি, লন্ডন।
২০০৬ : ‘পবিত্র আল কোরআনের পুঁথি অনুবাদ’, মাওলানা আব্দুল হামিদ কাসেমী, নিউ হামিদিয়া প্রকাশনী।
২০১০ : ‘কোরআন শরিফ’, আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলী, মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ যাকারিয়া, মীনা বুক হাউস।
২০১১ : ‘নূর নূরানি বাংলা উচ্চারণ’, বঙ্গানুবাদ ও শানে নজুলসহ কোরআন শরিফ, মাওলানা মোহাম্মদ ওসমান গনি, সোলাইমানি বুক হাউজ।
২০১২ : ‘বঙ্গানুবাদ কোরআন শরিফ’, মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুর রহিম (রহ), খায়রুন প্রকাশনী।
২০১৭ : ‘তাফসিরে তাওযিহুল কোরআন’, মূল : শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মদ তাকী উসমানী। অনুবাদ : মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম। মাকতাবাতুল আশরাফ।
২০১৮ : ‘সহজ কোরআন’, আসিফ সিবগাত ভূঞা, আদর্শ লাইব্রেরি।
২০২১: ”আল কুরআন সহজ ভাবানুবাদ” ”শায়খ হাসান মাহমুদ”।
২০২১: "আল কুরআনের কাব্যানুবাদ" – লেখক : মুহিব খান (প্রকাশনী : রাহনুমা প্রকাশনী)

কবিতায় কবিতায় মাত্র ৮০০ পৃষ্ঠায় সম্পূর্ণ ৩০ পারা কুরআনের বাংলা অনুবাদ। কবিতার অলংকারে কুরআনের অনুবাদ, যা ইতিহাসের এক নতুন মাত্রা, ভাষা ও সাহিত্যে জগতে যা এক বিস্ময়কর কীর্তি! অনুবাদের বর্ণনাধারা মোটেও জটিল, কঠিন বা দুরূহ নয় বরং পুরো অনুবাদ অত্যন্ত সহজ, সাবলীল ও সার্বজনীন। গৌরবময় ও ঐতিহাসিক এই গ্রন্থের রচয়িতা আলেম, লেখক ও কবি মুহিব খান।

২০২৩: "তরজমাতুল কুরআন"। সংক্ষিপ্ত তাফসীর সহ পূর্ণ অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। গ্রন্থটির প্রকাশক রাজশাহীতে অবস্থিত হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
২০২৩: "সহজ বাংলা কুরআন" ইঞ্জিনিয়ার লে. কর্নেল এম আলাউদ্দীন, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, বাংলাদেশ।

16/10/2024

«دخل الجنة رجل فى ذباب ودخل النار رجل فى ذباب قالوا وكيف ذلك يا رسول الله قال: مر رجلان على قوم لهم صنم لا يجوزه أحد حتى يقرب له شيئا فقالوا لاحدهما: قرب قال: ليس عندي شئ أقرب، قالوا له: قرب ولو ذباب فقرب ذباب فخلوا سبيله فدخل النار وقالوا للآخر: قرب، قال ما كنت أقرب شيئا دون
الله عز وجل فضربوا عنقه فدخل الجنة»

"এক ব্যক্তি একটি মাছির কারণে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। আর এক ব্যক্তি একটি মাছির কারণে জাহান্নামে গিয়েছে। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটি কিভাবে হলো? তিনি বললেনঃ দু'জন লোক এমন একটি গোত্রের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল, যাদের একটি মূর্তি ছিল। উক্ত মূর্তির জন্য কোন কিছু উৎসর্গ না করে কেউ সে স্থান অতিক্রম করতে পারতোনা। উক্ত কওমের লোকেরা দু'জনের একজনকে বললো, 'মূর্তির জন্য তুমি কিছু কুরবানী করো'। সে বললো, কুরবানী দেয়ার মত আমার কিছুই নেই। তারা বলল, অন্ততঃ একটি মাছি হলেও কুরবানী দিয়ে যাও'। অতঃপর সে একটা মাছি মূর্তির জন্য কুরবানী দিল। তারা লোকটির পথ ছেড়ে দিল। এর ফলে সে জাহান্নামে গেল। অপর ব্যক্তিকে তারা বললো, মূর্তিকে তুমিও কিছু কুরবানী করো। সে বললঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নৈকট্য লাভের জন্য আমি কারো জন্য কুরবানী দেইনা। এর ফলে তারা তার গর্দান উড়িয়ে দিল। এতে সে জান্নাতে প্রবেশ করল"।

কি জামানা আসলো যেই ব্যক্তি হাদিসের ইবাদাত পড়তে পারে না  ফিক্বাহ এর কিতাব পড়তে পারে না সে বড় বড় মাসয়ালা মাসায়েল বর্...
30/09/2024

কি জামানা আসলো যেই ব্যক্তি হাদিসের ইবাদাত পড়তে পারে না ফিক্বাহ এর কিতাব পড়তে পারে না সে বড় বড় মাসয়ালা মাসায়েল বর্ননা করেছে এবং ভুল ফোতুওয়া দিয়ে মোসল্লিদের গুমরা করতেছে।

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম!
শ্রদ্ধেয় হুজুর, আমাদের মসজিদের হুজুর এমন কিছু বিষয়ের মাসালা দিছে যে গুলো আমাদের মত সাধারণ মুসল্লীরা আমল করতে শুরু করছে, আবার অনেকে ভালভাবে নেইনি। যেমন,
১) ফজরের ফরজ নামাযের পর সুন্নত নামায পড়া যাবে বলছে।
২) জানাযার নামাযে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে।
৩) চার রাকাত নামাযে আর যে নামায ইমাম সাহেব হুজুর চুপিসারে পড়ে সেই সময় নাকি ইমামের পিছে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে।
দয়া করে বিষয় গুলোর সঠিক দিকটা জানাবেন!
হুজুরকে ধন্যবাদ, আমি আগের প্রশ্নের জবাব পেয়েছি🧡

উত্তরঃ

১.
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلاَمٍ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدَةُ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ خُبَيْبٍ، عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ صَلاَتَيْنِ بَعْدَ الْفَجْرِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، وَبَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ‏.‏

আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’সময়ে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। ফজরের পর সূর্য উঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য ডুবা পর্যন্ত।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৮৮

حَدَّثَنَا عُقْبَةُ بْنُ مُكْرَمٍ الْعَمِّيُّ الْبَصْرِيُّ، حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عَاصِمٍ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنِ النَّضْرِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ بَشِيرِ بْنِ نَهِيكٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ مَنْ لَمْ يُصَلِّ رَكْعَتَىِ الْفَجْرِ فَلْيُصَلِّهِمَا بَعْدَ مَا تَطْلُعُ الشَّمْسُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ ‏.‏ وَقَدْ رُوِيَ عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ فَعَلَهُ ‏.‏ وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ بَعْضِ أَهْلِ الْعِلْمِ وَبِهِ يَقُولُ سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ وَابْنُ الْمُبَارَكِ وَالشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ ‏.‏ قَالَ وَلاَ نَعْلَمُ أَحَدًا رَوَى هَذَا الْحَدِيثَ عَنْ هَمَّامٍ بِهَذَا الإِسْنَادِ نَحْوَ هَذَا إِلاَّ عَمْرَو بْنَ عَاصِمٍ الْكِلاَبِيَّ ‏.‏ وَالْمَعْرُوفُ مِنْ حَدِيثِ قَتَادَةَ عَنِ النَّضْرِ بْنِ أَنَسٍ عَنْ بَشِيرِ بْنِ نَهِيكٍ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ مَنْ أَدْرَكَ رَكْعَةً مِنْ صَلاَةِ الصُّبْحِ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ فَقَدْ أَدْرَكَ الصُّبْحَ ‏"‏ ‏.‏

আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ফজরের দুই রাক’আত সুন্নাত (ফরযের পুর্বে) আদায় করতে পারেনি সে সূর্য উঠার পর তা আদায় করবে।
জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৪২৩

২.
হযরত ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মত হচ্ছে, জানাযার নামাযে সূরা ফাতেহা পড়া সুন্নত নয়। বরং প্রথম তাকবীর বলে ছানা পড়বে, দ্বিতীয় তাকবীর বলে দুরূদ শরীফ পড়বে, তৃতীয় তাকবীর বলে দুআ পড়বে এবং চতুর্থ তাকবীর বলে সালাম ফিরাবে। হ্যাঁ, ছানা হিসেবে (অর্থাৎ ছানার পরিবর্তে) সূরা ফাতেহাও পড়া যেতে পারে, কেরাত হিসেবে নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের আমল দ্বারাই একথা প্রমাণিত। এমতের দলিলসমূহ নিম্নে প্রদত্ত হল:

মারফু হাদীস

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন,

سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعَاءَ

অর্থ: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা মায়্যিতের জানাযা পড়বে, তখন তার জন্য একনিষ্ঠভাবে দুআ কর। (আবূ দাউদ শরীফ, ২খ, ৪৫৬পৃ)

৩.
হযরত জাবির রা. বলেছেন,

.....عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : كل من كان له إمام فقراءته له قراءة. أخرجه ابن أبي شيبة (٣٨٢٣) قال حدثنا مالك بن إسماعيل عن حسن بن صالح عن أبي الزبير عنه. وإسناده صحيح. وأخرجه عبد بن حميد في مسنده قال : ثنا أبو نعيم ثنا الحسن بن صالح عن أبي الزبير عنه مرفوعا. قال البوصري : إسناده صحيح على شرط مسلم. وأخرجه أحمد بن منيع في مسنده قال: أنا إسحاق الأزرق نا سفيان وشريك عن موسى بن أبي عائشة عن عبد الله بن شداد عن جابر مرفوعا. قال البوصري: إسناده صحيح على شرط الشيخين. وأخرجه الإمام محمد في الموطا (صـ٩٨) عن أبي حنيفة نا أبو الحسن موسى بن أبي عائشة عن عبد الله بن شداد بن الهاد عن جابر مرفوعا. وإسناده صحيح. وأخرجه أحمد عن أسود بن عامر – وهو ثقة – عن الحسن بن صالح عن أبي الزبير عن جابر مرفوعا (رقم ১৪৬৪৩) وهو إسناد صحيح أيضا. وأخرجه ابن ماجه كذلك وفي إسناده جابر الجعفي (٨٥٠)

অর্থ: নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তির ইমাম আছে, তার ইমামের কেরাতই তার কেরাত বলে গণ্য হবে।

মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং ৩৮২৩। এ সনদটি সহীহ।

মুসনাদে আব্দ ইবনে হুমায়দে ভিন্ন সনদে এটি উদ্ধৃত হয়েছে। বূসিরী র. বলেছেন, এটি ইমাম মুসলিম এর শর্ত মোতাবেক সহীহ। আহমদ ইবনে মানী’ অন্য একটি সনদে তার মুসনাদ গ্রন্থে এটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম বূসিরী বলেছেন, এটি বুখারী ও মুসলিম উভয়ের শর্ত মোতাবেক সহীহ। (দ, শায়খ মুহাম্মদ আওওয়ামা কৃত মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বার টীকা)

মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ, পৃ ৯৮; মুসনাদে আহমদ, ৩খ, ৩৩৯পৃ; (এ সনদ দুটিও সহীহ)। ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং ৮৫০। এতে জাবের জু’ফী রয়েছে।

এ হাদীসে মুলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে, মুকতাদীর জন্য আলাদা করে সূরা ফাতেহা বা অন্য কোন সূরা পড়ার প্রয়োজন নেই। বরং ইমামের কেরাতই তার জন্য যথেষ্ট হবে। কেননা সূরা ফাতেহা হলো আল্লাহর দরবারে হেদায়াতের আবেদন। সকলের পক্ষ থেকে আবেদন একজনই পেশ করে। ইমামকেই সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রুকু, সেজদা, তাকবীর ও তাসবীহ হলো উক্ত দরবারের আদব। এজন্য এগুলো সকলকে পালন করতে হয়।

২. হযরত আবূ হুরায়রা রা. বলেছেন,

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ وَنَحْنُ سُجُودٌ فَاسْجُدُوا وَلاَ تَعُدُّوهَا شَيْئًا وَمَنْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلاَةَ . أخرجه أبو داود عن مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ فَارِسٍ أَنَّ سَعِيدَ بْنَ الْحَكَمِ حَدَّثَهُمْ أَخْبَرَنَا نَافِعُ بْنُ يَزِيدَ حَدَّثَنِى يَحْيَى بْنُ أَبِى سُلَيْمَانَ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَبِى الْعَتَّابِ وَابْنِ الْمَقْبُرِىِّ عنه(٨٩٣) وأخرجه نحوه عبد الرزاق عن شيخ من الأنصار . ٢/٢٨١

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমরা সেজদায় থাকাবস্থায় যদি তোমরা নামাযে শরীক হও তবে তোমরাও সেজদা করবে। সেটাকে কিছু (অর্থাৎ রাকাত) গণ্য করবে না। যে ব্যক্তি রুকু পেল সে নামায (অর্থাৎ ঐ রাকাত ) পেল। আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৮৯৩; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, ২/২৮১।

এ হাদীস থেকেও বোঝা গেল, মুকতাদীর ফাতেহা পড়ার প্রয়োজন নেই। কেননা এতে বলা হয়েছে, ইমামের সঙ্গে রুকু পেলেই তার রাকাত পূর্ণ হবে। যদি তার জন্য ফাতেহা পড়া জরুরিই হয় তবে রুকু পেলেই রাকাত পাওয়া হয় কিভাবে? তার তো ফাতেহা পড়া হল না। অর্থাৎ তার একটি ফরয রয়ে গেল। ফরয আদায় ছাড়া রাকাত পূর্ণ হয় কি?

৩. হযরত আবূ বাকরা রা. বলেছেন,

انه انتهى إلى النبي صلى الله عليه وسلم وهو راكع فركع قبل ان يصل إلى الصف فذكر ذلك للنبى صلى الله عليه وسلم فقال زادك الله حرصا ولا تعد. أخرجه البخاري (رقم ٧٨٣) وفي رواية البخاري في كتاب القراءة له، والطبراني: فقال: أيكم صاحب هذا النفس قال خشيت أن تفوتني الركعة معك.

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুতে থাকাবস্থায় তিনি এসে পৌঁছলেন এবং কাতারে যাওয়ার পূর্বেই রুকুতে চলে গেলেন। পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনি ব্যাপারটি জানালে তিনি বললেন, আল্লাহ তোমার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিন। তবে এমনটি আর করো না। বুখারী শরীফ, হাদীস নং৭৮৩।

ইমাম বুখারী কিতাবুল কিরাআতে ও তাবারানী (দ, ফাতহুল বারী) একথাও উল্লেখ করেছেন যে , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এমন কে করেছ? তিনি বললেন, আপনার সঙ্গে আমার এ রাকাতটি ছুটে যাওয়ার আশংকা করেছিলাম (তাই আমি এমনটি করেছি)।

এ হাদীসটি থেকে বোঝা গেল, রুকু পেলেই মুকতাদীর রাকাত পূর্ণ হয়, এবং সূরা ফাতেহা পড়া মুকতাদীর জন্য ফরজ নয়। অন্যথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বাকরা রা.কে পুনরায় নামায পড়তে বলতেন।

ইমাম বায়হাকী হযরত যায়দ ইবনে ছাবিত রা. থেকেও আবূ বাকরা রা.এর অনুরূপ ঘটনা উল্লেখপূর্বক বলেছেন,

وفي ذلك دليل على إدراك الركعة ولولا ذلك لما تكلفوه

অর্থাৎ এ থেকে প্রতীয়মান হয়, রুকু পেলেই রাকাত পাওয়া হয়। অন্যথায় তারা এমন তড়িঘড়ি করতেন না। সুনানে বায়হাকী, ২খ, ৯০পৃ।

মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকে হযরত যায়দ ইবনে ছাবিত রা. ও হযরত ইবনে উমর রা. উভয় থেকে এই ফতোয়া বর্ণিত হয়েছে -

الرجل إذا انتهى إلى القوم وهم ركوع أن يكبر تكبيرة وقد أدرك الركعة وإن وجدهم سجودا سجد معهم ، ولم يعتد بذلك .

অর্থাৎ নামাযে আগত ব্যক্তি যদি দেখে, জামাত্র রুকু অবস্থায় রয়েছে, তবে তাকবীর দিয়ে নামাযে শরীক হবে। এতে করে সে রাকাতটি পেয়ে যাবে। কিন্তু তাদেরকে সেজদা অবস্থায় পেলে সেজদা করবে বটে, তবে সেটাকে রাকাতরূপে গণ্য করবে না। (দ, ২খ, ২৭৮ পৃ)

আব্দুর রাযযাক স্বীয় মুসান্নাফে (২খ, ২৮১পৃ) ইবনুল মুনযির তার আওসাত গ্রন্থে (২০২৫) ও ইমাম তাবারানী আলমুজামুল কাবীরে (৯৩৫১) হযরত আলী রা. ও ইবনে মাসউদ রা.এর এই ফতোয়া উদ্ধৃত করেছেন,

من لم يدرك الركعة فلا يعتد بالسجدة

অর্থাৎ যে ব্যাক্তি রুকু পেল না সে যেন সেজদা করেই সেটাকে রাকাত গণ্য না করে। (কেননা রুকু করা ফরয। ইমামের সাথে এ ফরয সে পায়নি। আর ফরয ছাড়া রাকাত পূর্ণ হয় না।) হায়ছামী র. বলেছেন, رجاله موثقون এর বর্ণনাকারীগণকে বিশ্বস্ত বলা হয়েছে। দ, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, (২৪০২)

উক্ত দুটি গ্রন্থে ও তাহাবী শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে,

وعن زيد بن وهب قال دخلت أنا وابن مسعود المسجد والامام راكع فركعنا ثم مضينا حتى استوينا بالصف فلما فرغ الامام قمت أقضى فقال قد أدركته . أخرجه الهيثمي في مجمع الزوائد ورجاله ثقات (২৪০৪) وعبد الرزاق في المصنف (৩৩৮১) وشرح معاني الآثار (২৩২২) والطبراني في المعجم الكبير (৯৩৫৪)

অর্থাৎ যায়দ ইবনে ওয়াহব র. বলেন, আমি ও ইবনে মাসউদ রা. মসজিদে পবেশ করলাম। ইমাম তখন রুকুতে ছিলেন। আমরা রুকু করে হেঁটে হেঁটে কাতারে পৌঁছলাম। ইমাম নামায শেষ করলে আমি রাকাতটি পড়বার জন্য দাঁড়াতে যাচ্ছিলাম। তিনি বললেন, তুমি তো রাকাত পেয়ে গেছ। হায়ছামী বলেন, এর বর্ণনাকারীরা বিশ্বস্ত। মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক (৩৩৮১); মু’জামে কাবীর (৯৩৫৪); তাহাবী (২৩২২)

বুখারী শরীফের পূর্বোক্ত হাদীস ও সাহাবীগণের এসব ফতোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ আলেম এই মত পোষণ করতেন যে, যে ব্যক্তি রুকু পেল সে রাকাত পেয়ে গেল।

হাফেজ ইবনে রজব হাম্বলী র. তাঁর ফাতহুল বারী নামক বুখারী শরীফের ভাষ্যগ্রন্থে লিখেছেন,

من أدرك الركوع مع الإمام فقد أدرك الركعة، وإن فاته معه القيام وقراءة الفاتحة . وهذا قول جمهور العلماء ، وقد حكاه إسحاق بن راهويه وغيره إجماعا من العلماء . وذكر الإمام أحمد في رواية أبي طالب أنه لم يخالف في ذلك أحد من أهل الإسلام ، هذا مع كثرة اطلاعه وشدة ورعه في العلم وتحريه . وقد روي هذا عن عليٍ وابن مسعود وابن عمر وزيد بن ثابتٍ وأبي هريرة - في رواية عنه رواها عبد الرحمن بن إسحاق المديني ، عن المقبري ، عنه . وذكر مالك في الموطأ أنه بلغه عن أبي هريرة ، أنه قال : من أدرك الركعة فقد أدرك السجدة . وهو قول عامة علماء الأمصار .

অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে রুকু করতে পারল সে ঐ রাকাত পেয়ে গেল, যদিও ইমামের সঙ্গে তার কিয়াম (দাঁড়ানো ) ও ফাতেহা পাঠ ছুটে গেল। এটাই সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমের মত । ইমাম ইসহাক র. (ইমাম বুখারীর উস্তাদ) প্রমুখ এটাকে আলেমগণের ইজমা বা ঐকমত্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আবু তালিব এর বর্ণনানুসারে ইমাম আহমদ র. বলেছেন যে, এ ব্যাপারে কোন মুসলমানের দ্বিমত নেই। অথচ তাঁর অবগতি ছিল ব্যাপক, ইলমের ক্ষেত্রে তাঁর সতর্কতা ও পরহেজগারী ছিল চরম পর্যায়ের। এ মতই পোষণ করতেন হযরত আলী রা., ইবনে মাসউদ রা., ইবনে উমর রা., যায়দ ইবনে ছাবিত রা. ও এক বর্ণনানুসারে হযরত আবূ হুরায়রা রা. । আব্দুর রাহমান ইবনে ইসহাক আল মাদীনী র. সাঈদ আল মাকবূরী’র সুত্রে হযরত আবূ হুরায়রা রা. থেকে এটি বর্ণনা করেছেন। (দ. ৪খ. ২৩০ পৃ.)

রুকু পেলে রাকাত পাওয়া হয় উম্মতের এই সর্বসম্মত মত দ্বারাই ইমাম আহমদ প্রমাণ করেছেন যে, মুকতাদির উপর কেরাত পড়া ফরজ নয়। তাঁর পুত আব্দুল্লাহ তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, فإن صلى خلف الإمام ولم يقرأ بشيء অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি মুকতাদি হয় এবং কোরআনের কোন অংশই না পড়ে? তিনি উত্তরে বললেন,

يجزيه وذلك أنه لو أدرك الإمام وهو راكع فلم يعلم الناس اختلفوا أنه إذا ركع مع الإمام أن الركعة تجزئه وإن لم يقرا (رقم ২৭৮)

অর্থাৎ তার নামায হয়ে যাবে। কেননা যদি সে ইমামকে রুকু অবস্থায় পেয়ে তার সঙ্গে রুকু করে তবে কেরাত না পড়লেও যে তার নামায হয়ে যাবে তাতে কারো দ্বিমত আছে বলে জানা যায় না। (নং ২৭৮)

মাওলানা শামসুল হক আজীমাবাদী (তিনি লা-মাযহাবী আলেম ছিলেন) আবূ দাউদ শরীফের ভাষ্যগ্রন্থ আওনুল মাবূদ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, আল্লামা শাওকানী র. এই মত পোষণ করতেন যে, রুকু পেলে মুকতাদীর রাকাত পাওয়া হয় না। কিন্তু ‘ফাতহুর রাব্বানী ফী ফাতাওয়াশ শাওকানী’ গ্রন্থে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমের মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। (দ, আওনুল মাবূদ, ৩খ, ১১০পৃ)।

মোট কথা, বুখারী শরীফের হাদীস, সাহাবীগণের ফতোয়া ও সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমের উল্লিখিত মত থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ফাতেহা পাঠ করা মুকতাদীর জন্য অপরিহার্য নয়। অন্যথায় রুকু পেলে রাকাত পাওয়া হয়নি বলে ফতোয়া দেওয়া হতো।

৪. আতা ইবনে ইয়াসার র. বলেছেন,

أَنَّهُ سَأَلَ زَيْدَ بْنَ ثَابِتٍ عَنِ الْقِرَاءَةِ مَعَ الإِمَامِ فَقَالَ لاَ قِرَاءَةَ مَعَ الإِمَامِ فِى شَىْءٍ . أخرجه مسلم (٥٧٧) في باب سجود التلاوة. والنسائي في باب ترك السجود في النجم. (٩٦٠)

অর্থ: তিনি ইমামের সঙ্গে কুরআন পড়া সম্পর্কে যায়দ ইবনে ছাবিত রা.কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি জবাব দিলেন, কোন নামাযেই ইমামের সঙ্গে কোন কিছু পড়বে না। মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৫৭৭, নাসাঈ শরীফ (৯৬০), আবু আওয়ানা (১৯৫১), বায়হাকী (২৯১১)।

৫. নাফে র. থেকে বর্ণিত:

.... أن عبد الله بن عمر كان إذا سئل هل يقرأ أحد خلف الإمام قال إذا صلى أحدكم خلف الإمام فحسبه قراءة الإمام وإذا صلى وحده فليقرأ قال وكان عبد الله بن عمر لا يقرأ خلف الإمام. موطا مالك صـ ٢٩

অর্থ: হযরত ইবনে উমর রা.কে যখন জিজ্ঞেস করা হতো, ইমামের পেছনে কেউ কুরআন পড়বে কিনা? তিনি বলতেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের পেছনে নামায পড়ে তখন ইমামের পড়াই তার জন্য যথেষ্ট। আর যখন একাকী পড়ে, তখন যেন নিজেই কেরাত পড়ে। নাফে বলেন, ইবনে উমর রা. ইমামের পেছনে কুরআন পড়তেন না। (মুয়াত্তা মালেক, পৃ২৯, (৪৩), আব্দুর রাযযাক (২৮১৪), মুসনাদে ইবনুল জাদ (১১৫০), তাহাবী (১৩১২, ১৩১৭) দারাকুতনী (১৫০৩), বায়হাকী (২৯০১, ২৯০৩)।

৬.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর ফতোয়া:

عن أبي وائل : جاء رجل إلى عبد الله فقال: اقرأ خلف الإمام؟ فقال له عبد الله إن في الصلاة شغلا وسيكفيك ذلك الإمام

আবু ওয়াইল রহ. থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.কে জিজ্ঞেস করল, আমি কি ইমামের পেছনে কেরাত পড়বো? তিনি বললেন, নামাযে খুবই মগ্নতা আছে। কেরাত পড়ার জন্য ইমামই তোমার পক্ষে যথেষ্ট। মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা (৩৭৮০), মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক (২৮০৩), তাহাবী (১৩০৭), তাবারানী কৃত আল আওসাত (৪০৪৯), মুজামে কাবীর (৯৩১১)

৭. হযরত জাবির রা. বলেছেন,

من صلى ركعة لم يقرأ فيها بأم القرآن فلم يصل إلا أن يكون وراء الإمام. أخرجه الترمذي (٣١٣) وقال هذا حديث حسن صحيح ومالك في الموطا صـ ٢٨

অর্থ: যে ব্যক্তি নামাযের কোন রাকাতে সূরা ফাতেহা পড়ল না, সে যেন নামাযই পড়ল না। তবে যদি সে ইমামের পেছনে নামায পড়ে। (তাহলে তার ব্যাপার ভিন্ন।) তিরমিযী, হাদীস নং ৩১৩; তিনি এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। মুয়াত্তা মালেক, পৃ ২৮, নং ৩৮; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক (২৭৪৫) মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা (৩৬২১), আল কিরাআতু খালফাল ইমাম লিল বুখারী (১৭৪), নাসাঈ কুবরা (২৮৯৯), শারহু মুশকিলিল আছার (১৩০১), বায়হাকী (১২৪২), মারিফাতুস সুনান ওয়াল আছার (৩২০৩) আল কিরাআতু খালফাল ইমাম লিল বায়হাকী (৩৫৮)

এ হাদীসে জাবির রা. স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন, সূরা ফাতেহা পড়া ইমাম বা একাকী নামায আদায়কারীর জন্য আবশ্যক। মুক্তাদীর জন্য সেটা আবশ্যক নয়। এ কথা দ্বারা তিনি যেন উবাদা ইবনুস সামেত রা. কর্তৃক বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই হাদীসের ব্যাখ্যা করে দিলেন, যে হাদীসে তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাতেহা পড়ে না, তার নামাযই হয় না। হযরত জাবির রা. বুঝিয়ে দিলেন, এ বিধানটি মুক্তাদির জন্য নয়। ইমাম বা একা নামায আদায়কারীর জন্য। আবূ দাউদ শরীফে সুফিয়ান ইবনে উয়ায়না র. থেকেও অনুুরূপ কথা উদ্ধৃত হয়েছে। হযরত উবাদা ইবনুস সামিত রা. কর্তৃক বর্ণিত ঐ হাদীসটি বর্ণনা করার পর আবূ দাউদ র. বলেন, قال سفيان : لمن يصلي وحده অর্থাৎ সুফিয়ান র. বলেছেন, একা নামায আদায়কারীর ক্ষেত্রে এই হাদীস। (দ, হাদীস নং ৮২২) ইমাম তিরমিযী র. ইমাম আহমাদ থেকেও একই কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,

واما أحمد بن حنبل فقال معنى قول النبي صلى الله عليه وسلم لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب إذا كان وحده

অর্থাৎ আহমাদ র. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বলেছেন সূরা ফাতেহা ছাড়া নামায হয় না এটা তখন, যখন কেউ একা নামায পড়ে। ইমাম আহমাদ র. এক্ষেত্রে জাবির রা. এর উল্লিখিত হাদীসটিকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে বলেন,

فهذا رجل من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم تأول قول النبي صلى الله عليه وسلم لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب أن هذا إذا كان وحده.

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ‘যে সূরা ফাতেহা পড়েনি তার নামায হয়নি’ এর ব্যাখ্যা করেছেন যে, এটা তার ক্ষেত্রে যে একা নামায আদায় করে।

ইমাম তিরমিযীও হযরত উবাদা রা. এর হাদীসটিকে মুকতাদীর বিধান বলে মনে করতেন না। এই কারণে ‘কিরাআত খালফাল ইমাম’ বা মুকতাদীর জন্য কেরাত পড়া অনুচ্ছেদে হাদীসটি উল্লেখ না করে তিনি এর ঊনচল্লিশ অনুচ্ছেদ পূর্বে ما جاء أنه لا صلاة إلا بفاتحة الكتاب অনুচ্ছেদে নামাযে ফাতেহার কি গুরুত্ব সেটা বোঝাবার জন্য উল্লেখ করেছেন।

এখন বলুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী হযরত জাবির রা. ইমাম বুখারী র. এর উস্তাদের উস্তাদ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস সুফিয়ান ইবনে উয়ায়না, ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম আহমাদ, এবং ইমাম তিরমিযী বলছেন, এ হাদীসটি মুকতাদীর জন্য নয়। আর আমাদের লা-মাযহাবী ভাইয়েরা বলেন, এটা মুকতাদীর জন্যও। আমরা কার কথা মানবো?

তাছাড়া অধিকাংশ ইমাম ও আলেম তো এই একইমত পোষণ করতেন যে, ইমামের পেছনে মুকতাদীর কুরআন পড়া জরুরী নয়। ইমাম আহমাদ র. কত জোর দিয়ে বলেছেন,

ما سمعنا أحدا من أهل الإسلام يقول إن الإمام إذا جهر بالقراءة لا تجزئ صلاة من خلفه إذا لم يقرأ وقال هذا النبي صلى الله عليه وسلم وأصحابه والتابعون وهذا مالك في أهل الحجاز وهذا الثوري في اهل العراق وهذا الأوزاعي في أهل الشام وهذا الليث في أهل مصر ما قالوا لرجل صلى وقرأ إمامه ولم يقرأ هو صلاته باطلة . المغني لابن قدامة (١/٣٣٠)

অর্থাৎ ইমাম যখন উচ্চস্বরে কেরাত পড়ে, তখন তার পেছনে মুকতাদী যদি কেরাত না পড়ে তবে মুকতাদীর নামায হবে না- এমন কথা আহলে ইসলামের কাউকে আমরা বলতে শুনিনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর সাহাবীগণ, ও তাবেয়ীগণ, মদীনাবাসীদের মধ্যে ইমাম মালেক, ইরাকবাসীদের মধ্যে সুফিয়ান ছাওরী, শামবাসীদের মধ্যে ইমাম আওযায়ী, ও মিসরবাসীদের মধ্যে লায়ছ ইবনে সা’দ, এঁদের কেউই একথা বলেননি যে, ইমাম যখন কুরআন পড়বে, তখন পেছনে মুকতাদী যদি না পড়ে তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। (ইবনে কুদামা কৃত আল-মুগনী, ১খ, ৩৩০পৃ)

হায় আফসোস! ইমাম আহমদ র. যা জীবনেও শুনেননি, কোন আলেম যে বিষয়ে মত দেননি, সে বিষয়ের দিকে এখন মুসলমানদেরকে জোরেশোরে ডাকা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে, এছাড়া নামাযই হবে না। আল্লাহ আমাদেরকে সুমতি দান করুন। আমীন ।

Address

Jessore

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when আলোর দিশারী Alor dishary posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share