রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi —“মন ভালোর ওষুধ হোক, প্রিয় মানুষের সুখ হোক রুদ্রির রূপকথার ছোঁয়াতে;”🦋

‘আপনাকে স্বামী হিসেবে মানবো না আমি কখনো!’ফুলে সজ্জিত খাটে এলোমেলো হয়ে বসে আছে হৈমন্তী। তার চুলগুলো অগোছালো হয়ে পিঠের উ...
19/09/2025

‘আপনাকে স্বামী হিসেবে মানবো না আমি কখনো!’

ফুলে সজ্জিত খাটে এলোমেলো হয়ে বসে আছে হৈমন্তী। তার চুলগুলো অগোছালো হয়ে পিঠের উপর খেলছে। ঘরে সুগন্ধি মোমের হলুদ রশ্মি পুরো ঘরকে আবছা আবছা আলোকিত করে তুলেছে। হৈমন্তীর মুখের উপর এসে পরেছে আশফিক আয়ান চৌধুরীর বলিষ্ঠ অবয়ব। আশফিক হাতের হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে আড়চোখে হৈমন্তীর দিকে তাকাচ্ছে,

‘তোমার আমার বিয়ে, আমিও মানতে পারবো না। মা আর দাদীর শেষ ইচ্ছে বলে আজ তোকে বিয়ে করেছি, নাহলে আমারও কোনো শখ নেই তোর মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করার!’

হৈমন্তী ফুঁসে উঠলো। তার চোখ জ্বলজ্বল করছে। তার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে সে কখনো পছন্দ করতে পারেনি। তার মা তাকে বলেছে, আশফিক আর এই চৌধুরীদের মতো জঘন্য লোক আর দুটো হয়না! সেও তাই বিশ্বাস করতে চায়।

’তবে তোমার আর আমার বিয়ে যেহেতু হয়েছে, এখন আর আমার কাছ থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই! তাই পালানোর কথা ভুলেও ভাববে না!’

‘আর যদি ভাবি তাহলে কি করবেন?’

হৈমন্তী খাট থেকে নেমে আসলো আশফিকের সামনাসামনি। মোমের আলোতে দুজনের মুখ হলুদ বর্ণ হয়ে একে অপরের কাছে ধরা দিচ্ছে,

‘তাহলে মিসেস হৈমন্তীকা আশফিক আয়ান চৌধুরী,তার স্বামীর আসল রূপ দেখবে!’

#স্পয়লার
#প্রিয়_প্রণয়াসক্তি

#রুদ্রিকা_বেদী

বিঃদ্রঃ - গল্প একদম ভিন্ন ধাঁচের। কাজিন রিলেটেট + আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়া,। দুটো জনরায় বেছে নিয়ে এই গল্পের জন্য। কিছু অপরাধ থাকবে,অপরাধী থাকবে আবার ভালোবাসার কিছু মানুষ থাকবে, ঘরের মধ্যে শত্রুও থাকবে। সব মিলিয়ে একটু অন্য রকম চিন্তা করে লিখছি গল্পটি। আশা করি রানিং টা শেষ করে এইটা পাবেন।

আশফিক + হৈমন্তী

 #অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে #রুদ্রিকা_বেদী #পর্ব_৩৪সকাল বেলা,আজ রূপকথার ভার্সিটিতে রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই ক্লাসে তার উপস্...
18/09/2025

#অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে
#রুদ্রিকা_বেদী
#পর্ব_৩৪

সকাল বেলা,
আজ রূপকথার ভার্সিটিতে রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই ক্লাসে তার উপস্থিতি অনেকটাই কমে গেছে। এর ফল যে তার সিজিপিএ তে পড়তে চলেছে সেটা সে ভালো করে বুঝছে, তারউপর সামনে মিড পরিক্ষা। অর্থনীতি ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী হয়ে সে কিভাবে এতো পড়াশোনায় গাফিলতি করছে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না। অর্থনীতিতে নাম্বার তোলা যে কতোটা কষ্টের সেটা শুধু এই ডিপার্টমেন্টের ছাত্র ছাত্রীরায় জানে।

আজ ব্রেকফাস্ট করার সময় শিশির জানালো, সে রূপকথাকে নিজে ড্রপ করে দিয়ে আসবে। রূপকথা প্রথমে কিঞ্চিৎ আপত্তি জানালেও, শারমিন আহসান আর শিশিরের জেদের সামনে তার আপত্তি আর টিকলো না। ব্রেকফাস্ট শেষ করে দুজনে একসাথে শারমিন আহসানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পরল ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। রূপকথার ভার্সিটি শিশিরের কম্পানির বিপরীতে, এইজন্যই রূপকথা তাকে আসতে বারণ করছিল।

“এতো কষ্ট করে উল্টা আসার কোনো দরকার ছিল?” রূপকথা মুখ ফুলিয়ে জিজ্ঞেস করল প্রশ্নটা।

“জ্বী দরকার ছিল! আমার বউয়ের জন্য এইটুকু না করতে পারলে কিসের স্বামী আমি।”

“হু! যত্তসব!”

রূপকথা ফিসফিস করে বলল। আজ সকাল থেকেই তার মুড কোনো কারণ ছাড়াই অফ হয়ে রয়েছে, যার জন্য কোনো কিছুতেই সে খুশি হয়ে উঠতে পারছে না ঠিক। শিশির রূপকথাকে খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে,মুড অফ হয়ে রয়েছে সেটাও সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।

“সকালের খাবার কি এখনো হজম হয়নি?”

শিশিরের এহেন ধরনের অবান্তর প্রশ্নে রূপকথা ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালো। শিশির একমনে সামনে তাকিয়ে আছে যেন সে সামনের থেকে চোখ সরালেই এক্সিডেন্ট হবে। রূপকথা ফুঁসতে ফুঁসতে বলল,

“খাবার হজম হলেও কি না হলেও কি?”

“অনেক কিছু সোনা! খাবার হজম না হলে মানুষ মুখ ঠিক তোমার মতো লাগে! এই জন্যই জিজ্ঞেস করছি।“

“আপনার কথার অর্থ বুঝলাম না, আমি কি মানুষ নই?”

রূপকথা কোমরে হাত রেখে শিশিরের দিকে বড়ো বড়ো চোখে তাকালো। শিশির একবার রূপকথার দিকে চেয়ে ফিক করে হেসে হাস্কি স্বরে বলে,

“বর্তমানে তুমি যে অবস্থানে রয়েছ তাতে বলতেই পারি তুমি মানুষ নও,!”

“তাহলে আমি কি?”

“রণচন্ডী, হাতে অস্ত্র দিলে এক্ষুনি মারতে দৌড়াবে!”

রূপকথা সাপের ন্যায় ফুঁসে উঠলো তবে কিছু বলল না। সে জানে তার স্বামীর সঙ্গে যুক্তি তর্ক দিয়ে কথা বলা সম্ভব নয়। তার স্বামী যুক্তি মেনে বিতর্ক করে না। রূপকথা সিটের সঙ্গে সেঁটে বসল। শিশির আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে সরল হেসে,গাড়িতে গান ছাড়ল,

ঢেকে রাখে। যেমন কুসুম,
পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম।
তেমি তোমার নিবিড় চলা
মরমের মূল পথ ধরে।
আমার … … …।
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক,
খোলশের আবরনে মুক্তার সুখ।
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া
ভিতরের নীল বন্দরে।
আমার … … …।

ভালো আছি ভালো থেকো,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।
দিও তোমার মালাখানি
বাউল এই মনটারে।
আমার … … …।

আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে
আমার … … …।

পুরো রাস্তা আর কেউ কোনো শব্দ উচ্চারণ করল না। রূপকথা নিরবে গান শুনতে মগ্ন হয়ে গেছিলো, আর শিশির মন দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছিল,মাঝে মাঝে রূপকথার মিষ্টি মায়াবী চেহারার দিকে তাকিয়ে নিজের মনের তৃষ্ণা মেটাচ্ছিল।

গান শেষ হতে হতে গাড়ি এসে থামলো ভার্সিটির সামনে। গাড়ি থামতেই রূপকথার ধ্যান ভঙ্গ হলো। সে চোখ খুলে শিশিরের দিকে তাকালো। শিশির তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রূপকথা সোজা হয়ে বসল।

“চলে এসেছি সোনা!”

শিশির রূপকথার মুখের সামনে এসে পড়া চুল গুলো সুন্দর করে কানের কাছে গুঁজে দিলো। রূপকথা তাড়াহুড়ো করে সিটবেল্ট খুলে শিশিরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যেই নামতে যাবে ঠিক তখনই শিশির তার হাত খপ করে ধরে নিজের দিকে টেনে নিলো। রূপকথা যেয়ে পড়ল শিশিরের বুকের উপর। শিশির রূপকথার কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের কপাল রূপকথার কপালের সাথে লাগিয়ে গাঢ় স্বরে বলে,

“কিছু ভুলে যাচ্ছ না তো সোনা?”

“না আমি কি ভুলছি না,ছাড়ুন! এইটা পাবলিক প্লেস! আমাদের বেডরুম নয়!”

“জানি সোনা বাট তোমার বর যে বেশ নির্লজ্জ! যেটা লাগবে সেটা লাগবেই! না দিলে আমি ছাড়ছি না।”

রূপকথা জোর লাগিয়ে শিশিরের কাছ থেকে সরে আসতে চাচ্ছে কিন্তু কোনো শক্তি তাকে শিশিরের কাছ থেকে আলাদা করতে দিচ্ছে না। রূপকথা বেশ অনেকক্ষণ যুদ্ধ চালিয়ে শেষ মেষ শিশিরের কাছে পরাস্ত হয়ে বলল,

“ঠিক আছে বাট ওনলি ওয়ান টাইম!”

“হু! ঠিক আছে চালিয়ে নি....!”

শিশির তার কথা শেষ করতে পারল না তার আগেই রূপকথা তার ওষ্ঠধর জোড়া শিশিরের ওষ্ঠধরে মিশিয়ে দিলো। শিশির রূপকথার কোমর আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। কাঁটা হাতটি উঠে এলো রূপকথার চুলের মধ্যে উঠে আসলো। বেশ কিছুক্ষণ একে অপরের মাঝে আবদ্ধ থাকার পর, একটা সময়ে এসে রূপকথার দম নিতে কষ্ট হয়ে আসলো। শিশির বিষয়টা বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে রূপকথাকে নিজের কাছ থেকে আলাদা করে দিলো।

রূপকথা নিজের সিটে বসে লম্বা লম্বা করে শ্বাস নিচ্ছে। শিশির রূপকথার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর জিজ্ঞেস করছে,

“আর ইউ ওকে সোনা?”

“হ্যাঁ! আ....আমি ঠি... ঠিক আছি!”

বলে আবারও জোরে জোরে শ্বাস নিলো। শিশিরের দিকে তাকাতেই রূপকথা শান্ত হয়ে গেলো। ঠোঁট কামড়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

“লিপস্টিক লেগে গেছে! মুছে নিয়েন!”

রূপকথা লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। শিশির এগিয়ে আসলো রূপকথার দিকে । মুখটা বাড়িয়ে বলে,

“তাহলে তুমি মুছে দাও।”

রূপকথা মুখ টিপে হাসলো, তারপর টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে শিশিরের ঠোঁটে লেগে থাকা লিপস্টিক আলতো হাতে মুছে দিতে দিতে লাগলো। এমন সময় হঠাৎ গাড়ির জানালায় ঠক ঠক আওয়াজ হয়েও উঠলো। দুজনে প্রায় চমকে উঠলো। শিশির ঘুরে জানালার দিকে তাকাতেই দেখলো সানজিদ মুখ নিচু করে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। শিশির জানালা নামাতেই সানজিদ এক গাল হেসে বলল,

“ঠিক ধরেছিলাম! গাড়ি দেখেই চিন্তে পেরেছিলাম যে স্যার আপনি!”

রূপকথা আর শিশির দুজনে তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নিচে নামলো। সানজিদের সামনে এসে দাঁড়াতে দুজনে দেখলো মুন পিছলে দাঁড়িয়ে আছে। রূপকথাকে দেখে একগাল হেসে এগিয়ে আসলো তার দিকে। মুন শিশিরের দিকে ফিরে সালাম জানিয়ে রূপকথাকে বলল,

“কেমন আছেন ভাবি?”

“ভালো আছি মুন। তুমি কেমন আছো?”

“আমিও খুব ভালো আছি।”

“এই তাহলে তোর ইম্পর্ট্যান্ট কাজ সানজিদ?”

শিশির সানজিদের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। সানজিদ লাজুক হেসে মাথার পিছনে হাত নিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে বলল,

“আপনিও তো স্যার এই ইম্পর্ট্যান্ট কাজটাই করতে এসেছেন!”

“তোরে ধরে মাঝে মধ্যে মন চায় পিটাতে!”

“স্যার আপনি যদি আমাকে পিটান তাহলে আপনার কাজগুলো কে করবে?”

সানজিদ ভ্রু জোড়া নাচিয়ে নাচিয়ে বলল। শিশির চোয়াল শক্ত করে ছোট ছোট চোখে সানজিদের দিকে তাকিয়ে বলল,

“তোর ছুটি ক্যান্সেল। এখান থেকে সোজা অফিসে আসবি।”

আজ ভোর বেলায় শিশিরের কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে সানজিদ আজকের দিনের জন্য ছুটি নিয়েছে। শিশির কারণ জানতে চাইলে বলেছে, ভীষণ ইম্পর্ট্যান্ট কাজ পরে গেছে। সেই কাজটি করতে হবে বলে আজকে ছুটি নিচ্ছে।

“স্যার, আপনি এটা করতে পারেন না! ছুটি ক্যান্সেল করলে মুনকে দেওয়া কথা ভেঙে যাবে স্যার। আপনিও তো একজনের স্বামী, এই কষ্টটা তো বুঝবেন!”

সানজিদ গলা করুণ হয়ে উঠলো। শিশির তাতে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামালো না। অন্য দিকে রূপকথা আর মুন মুখ টিপে আসছে......

চলবে..............

রুদ্রিকার গল্পের আলোচনা সমালোচনা করতে জয়েন হোন
রুদ্রির “রূপমহল” - রুদ্রিকার সমগ্র

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

18/09/2025

আজ #অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে
#পর্ব_৩৪ আজ আসবে। গত কালকের পর্বে রেসপন্স খুবই কম ছিল তুলনামূলক। জ্বরের কারণে কিছু দিন লেখা লিখি থেকে দূরে থাকার জন্য পেজের অবস্থা খুবই খারাপ, দয়া করে আজকের পর্বে সবাই রেসপন্স করবে 💙

 #অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে #রুদ্রিকা_বেদী #পর্ব_৩৩আজকে আবহাওয়া হঠাৎই খারাপ হয়ে উঠেছে। শান্ত পরিবেশ কেমন অশান্ত ভঙ্গিতে ...
17/09/2025

#অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে
#রুদ্রিকা_বেদী
#পর্ব_৩৩

আজকে আবহাওয়া হঠাৎই খারাপ হয়ে উঠেছে। শান্ত পরিবেশ কেমন অশান্ত ভঙ্গিতে তান্ডব লীলা চালাচ্ছে বাইরে। আচ্ছা প্রকৃতি কি মানুষের মন পড়তে পারে? সত্যি পারে? হয়তো, নাহলে তারা কাঁদে কেন? কারো কষ্টে আবার কারো বিদায় বেলাতে! রূপকথার দাদী বলেছিল,যে বা যারা প্রকৃতিকে আপন করে নিতে পারে, প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যায়, প্রকৃতিও তাকে নিজের করে নেই, ঠিক তার মায়ের মতো। এই জন্যই হয়তো তার বিদায়ের সময় পুরো প্রকৃতি কাঙাল হয়ে উঠেছিল, নিজের একজনকে হারিয়ে ফেলার শোকে! পৃথিবীতে রূপকথার মায়ের মতো এমন ব্যক্তি খুব কমই আসে....

রূপকথা শিশিরের দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। হাত কেটে রক্ত বেরোচ্ছে, তাতে শিশিরের বিন্দু মাত্র ভ্রু ক্ষেপ আছে বলে মনে হচ্ছে না। জানালায় বারংবার আওয়াজ হচ্ছে। রূপকথা শিশিরের হাতটা কাঁপা হস্তে ধরল। নিজের দিকে টেনে নিতে মুহুর্তের জন্য চোখ কুঁচকে আসলো তার। কী বিভৎস!

“এই দিকে আসুন!”

বলে শিশিরকে সোফার কাছে নিয়ে গেলো। রূপকথার হাত কাঁপছে। স্বামীর হাতের রক্ত যেন তার শরীরের শিহরণ বয়ে দিচ্ছে। সে জ্বলজ্বল চোখে শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে,

“এখানে বসুন! আমি আপনার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি!”

“লাগবে না রূপকথা! আমি ঠিক আছি!”

শিশির এগিয়ে আসলো একদম। রূপকথার চোখের জল মুছে দিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। নিজের ক্ষত সৃষ্ট স্থানে নজর দিয়ে শিশির মুচকি হেসে বলল,

“এর থেকেও ভয়ঙ্কর ক্ষত আমার জীবনে আছে সোনা! এর জন্য এতো চিন্তা করো না! আমি নিজে ব্যান্ডেজ করে নিবো!”

“কিন্তু, আপনার হাতে তো কাঁচ ঢুকে গেছে! আপনি একা পারবেন না!”

“আমি পারবো! টেনশন নিয়েও না।”

বলে রূপকথাকে একপ্রকার জোর করিয়ে সোফায় বসালো। হাতের রক্ত হাত বেয়ে মেঝেতে পরেছে। রূপকথার করুণ দৃষ্টিতে সেই দিকে চেয়ে রইল। শিশির গেলো ব্যান্ডেজ করার সরঞ্জাম আনতে।

_______

শিশির প্রথমে কোনো ভাবে নিজের হাত থেকে কাঁচের টুকরোটা বের করে আনলো। কাঁচের টুকরোটা বের করতেই অঝোরে রক্ত পড়া আবার শুরু হলো। রূপকথা শিশিরের পাশেই বসে ছিল। সেই দৃশ্য চোখের সামনে ফুটে উঠতেই রূপকথা অস্ফুট স্বরে চিৎকার করে উঠলো।

“আমি তোমাকে বারণ করেছিলাম দেখতে! আমি জানি তুমি এই দৃশ্য সহ্য করতে পারবে না!”

শিশির রূপকথার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে কঠিন কন্ঠে কথাগুলো বলল। রূপকথা ততক্ষনে দুই হাত চোখের সামনে চাপা দিয়েছে। শিশিরের কন্ঠে রূপকথা ধীরে ধীরে চোখ থেকে হাত সরিয়ে, বাচ্চাদের মতো করে তাকিয়ে থেকে বলল,

“কতো রক্ত বেরোচ্ছে, আপনি দেখুন! ভয় তো যে কারো লাগবে! আপনি তাড়াতাড়ি ব্যান্ডেজ করুন!”

“কার কি হয়েছে!!??”

রূপকথা কথা শেষ করতেই হঠাৎ দরজার কাচ থেকে শারমিন আহসানের কন্ঠ স্বর ভেসে আসলো। রূপকথা আর শিশির দুজনে একসঙ্গে দরজার দিকে তাকালো। ঘরের দরজা খোলায় ছিল, সেখানে কখন শারমিন আহসান এসে দাঁড়িয়েছে তারা খেয়াল করেনি। শারমিন আহসানের কপালে ভাঁজ। তিনি দ্রুত এগিয়ে আসলেন ছেলের কাছে।

“ওমা! কাটলো কি ভাবে?”

তিনি প্রায় চেঁচিয়ে উঠে ছেলের হাত ধরলেন।

“কি হলো বল! কিভাবে কাটলো?”

ছেলের পাশে বসতে বসতে তিনি চিন্তিত স্বরে আবারও একই প্রশ্ন করলেন। শিশির লম্বা একটা শ্ব নিতে বলল তার মাকে। শারমিন আহসানকে হয়তো পুরো কথা বলতে চাচ্ছিল না শিশির,এই জন্যই সে মায়ের চোখের দিকে না তাকিয়েই বলল,

“কিছু না মা! হঠাৎ করে কাঁচের গ্লাসটা ভেঙ্গে গেলো, সেটার থেকে এই ক্ষত!”

শারমিন আহসান ছেলেকে আদৌও বিশ্বাস করলেন কিনা সন্দেহ তবুও সে বেশি কথা বাড়ালো না। চুপ করে ছেলের হাত স্বযত্নে নিজের কোলের উপর রেখে তাতে ব্যান্ডেজ করতে শুরু করল।

রূপকথা পাশে বসে মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করলো তার শ্বাশুড়ি মা কিভাবে ব্যান্ডেজ করছে। সত্যি কথা বলতে সে নিজে জানে না ব্যান্ডেজ কিভাবে করতে হয়। তাই শিশির যখন তাকে ব্যান্ডেজ করতে বারণ করল তখন সে জোড় দিয়ে তা খন্ডন করতে পারলো না। এখন সে মনোযোগ দিয়ে যথাযথ ভাবে ব্যান্ডেজ কিভাবে করতে হয় সেটা শিখছে। যতটা মনে তাকে এই আরকি.....!

_________

শিশিরের হাতের ব্যান্ডেজ করা শেষ হলো সবেমাত্র। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। বৃষ্টির কারণে পরিবেশটা হঠাৎ করে ঠান্ডা হয়ে উঠেছে।

শারমিন আহসান ব্যান্ডেজ করা শেষ করেই একটা বলল দুজনকে,

“তোদের একটা কথা বলতে এসেছিলাম! তোদের খালামণি বেরিয়ে গেছে!”

“ভালো হয়েছে, নাহলে আমি নিজেই করে দিতাম!”

রূপকথা নিজের মধ্যে থেকে অবাক সূচক অনুভূতিও বের করার সময় পেলো না,তার আগেই বজ্র কন্ঠে তার স্বামী চোয়াল শক্ত করে কথাগুলো বলল। রূপকথা ভ্রু কুঁচকে শিশিরের দিকে তাকালো তবে কিছু বলার সাহস পেলো না। যার জন্য একটু আগে এতো কিছু হয়ে গেলো, তাদের সম্পর্কের শক্ত স্তম্ভটা একটু হলে যার জন্য নড়ে যাচ্ছিল, যার জন্য তার স্বামী প্রথমবারের মতো তাকে একপ্রকার গলা উঁচু করে কথা বলল,তার হয় কথা বলা এক প্রকার বোকামি। এই ধরনের বোকামি করার মতো এতটাও অবুঝ রূপকথা নয়। সে একটি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে পাশে দাঁড়িয়ে রইল।

“যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন আর রাগ করে থাকিস না বাবা! দুজন নিচে আয়, আমি ডিনার সার্ফ করতে বলেছি সোফিয়াকে!”

বলে ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে দিলেন শারমিন আহসান।

“হুম! আসছি!”

শারমিন আহসান উঠে দাঁড়ালেন। রূপকথার কাছে এসে তার মাথায় হাত রাখলো। কিছুক্ষণ কোনো কথা বলল না কেউ। একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শারমিন আহসান নম্র স্বরে বলল,

“আই এ্যাম সরি মা! আজকে যা হলো তা মনে নিস না!”

“আপনি এসব কি বলছেন মা! আমি মনে কেন নিতে যাবো! আমি বুঝেছি, আপনি কষ্ট পাবেন না!”

রূপকথা কথাগুলো বলেই শারমিন আহসানকে জড়িয়ে ধরল। শারমিন আহসান রূপকথার জন্য আরেকটি আশ্রয়ের জায়গায়। শারমিন আহসান তার জীবনে আসার পর থেকে কখনো মায়ের কষ্টটা আগের মতো অনুভব করতে হয়নি তার। আগলে রেখেছে নিজের মেয়ের মতো। শিশিরকে যতটা ভালোবাসে ঠিক ততটাই রূপকথাকে ভালোবাসা দিয়েছে। সেই মানুষটি ক্ষমা চাইল, এই কথা ভাবতেই রূপকথার হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠলো। যেখানে কি না তার কোনো দোষই নেই!

__________

শারমিন আহসান চলে গেছেন একটু আগে। ঘরে শীতল পরিবেশ। বাইরে বৃষ্টি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। রূপকথা আর শিশির দুজনেই চুপ করে আছে। রূপকথা কিছু জিগ্গেস করবে কিন্তু ইতস্তত কাজ করছে তার মধ্যে। শিশির সোফায় আগের মতোই বসে আছে। রূপকথা তার সামনে দাঁড়ানো।

“কিছু বলবে?”

হঠাৎ শিশির রূপকথার হাত চেপে ধরল। ধরে মাটির দিকে চেয়ে থেকে জিজ্ঞেস করল শিশির। রূপকথা প্রথমে চমকে উঠলেও পরবর্তীতে নিজেকে সামলিয়ে বলল,

“এখন হাতের ব্যাথা কেমন আছে আপনার?”

শিশির উঠে দাঁড়ালো। রূপকথার কোমর জড়িয়ে ধরল শক্ত করে‌। সে রূপকথার ঘারের কাছে মুখ নিয়ে তাতে আস্তে করে চুমু খেলো।

রূপকথা খপ করে শিশিরের শার্ট খামচে ধরল, শিশিরের কাছ থেকে এমন প্রতিক্রিয়া সে আশা করেনি। শিশির কাঁধে মাথা রেখে গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে শান্ত স্বরে বলল,

“এখন আগের থেকে ভালো সোনা! চিন্তা করতে হবে না!”

“আপনি কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছেন?”

“না! আমি কখনোই তোমার উপর রাগ করে ছিলাম না সোনা! এর আগে যেটা হলো সেটা আমি নিজের উপর রাগ করেই করেছি!”

“আর এমনটা করবেন না! বুঝেছেন আপনি! আর এমনটা করবেন! রাগ হলে দরকার পরলে আমাকে থাপ্পর মারবেন কিন্তু নিজের ক্ষতি করবেন না!”

শিশির সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ভ্রু জোড়া কুঁচকে এসেছে তার। রূপকথার দিকে তাকাতে দেখলো, সে কাঁদছে, নিঃশব্দের কান্না। শিশির মুচকি এসে রূপকথার চোখের জল মুছে দিয়ে হাস্কি স্বরে বলল,

“এই চোখের জল দেখলে রাগ এমনিতেও কমে যাবে, থাপ্পড় মারার আর প্রয়োজনই পরবে না আর আই এ্যাম আ গুড হাসবেন্ড! থাপ্পড় মারতে বলে আমাকে শয়তান বানিয়ে দিয়েও না সোনা!”

রূপকথা শিশিরের বলার কায়দা দেখে হেসে ফেলল। শিশির তাকে আবারও নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরল। তবে সে রূপকথার মতো হাসতে পারলো না। আজ কেমন যেন লাগছে তার? মনে হচ্ছে সামনে কিছু হতে চলেছে, এমন অনুভূতি ঠিক পাঁচ বছর আগে একবার হয়েছিল,আর তখন সে তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান একজন হারিয়ে ছিল, আবার কি তেমন কিছু হতে চলেছে?

চলবে........

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

 #সমুদ্রবিলাসীনি —০৪লেখনীতে:- রুদ্রিকা বেদীকিছুক্ষণ আগে ডাক্তার আঙ্কেল এসে সমুদ্র ভাইকে দেখে গেছে। ভালো করে দেখে শুনে, জ...
16/09/2025

#সমুদ্রবিলাসীনি —০৪
লেখনীতে:- রুদ্রিকা বেদী

কিছুক্ষণ আগে ডাক্তার আঙ্কেল এসে সমুদ্র ভাইকে দেখে গেছে। ভালো করে দেখে শুনে, জ্বর মেপে কিছু ঔষধ লেখে দিলেন এবং আমাকে বললেন,

—“চিন্তা করার কোনো দরকার নেই! সমুদ্র একদম ঠিক আছে তবে আবহাওয়া বারবার চেঞ্জ হওয়ার কারণে জ্বরটা এসেছে! ঠিক ভাবে ঔষুধ এবং যত্ন নিতে দুদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে উঠবে!”

সত্যি কথা, শুধু যশোরে না সারা বাংলাদেশে যে পরিমাণ আবহাওয়া চেঞ্জ হচ্ছে তাতে অসুস্থ হয়ে পরা স্বাভাবিক তারউপর সমুদ্র ভাইয়ের দারুণ ঠান্ডার সমস্যা আর মাইগ্রেন তো আছেই!

সমুদ্র ভাই এখন চুপ করে শুইয়ে আছে। চোখ বন্ধ কিন্তু ঘুমোচ্ছে না। আমি জানি ভাইয়ার মাথা ব্যাথা করছে। শরীরেও বেশ অস্বস্তি করছে তবে বাইরে তার কোনো কিছুই প্রকাশ করছে না। হঠাৎ করে খালা মণির বলা একটা কথা মনে পরে গেলো,

—“সমুদ্র অনেক চাপা স্বভাবের! ভিতরে ওর কি চলছে তা কাউকে বুঝতে দেয় না! ব্যাথা করলেও দাঁতে দাঁত চেপে পরে থাকে টু শব্দটি করে না!”

আজ একদম চোখের সামনে দেখছি। সমুদ্র ভাইয়ের গলার কাছের শিরা উপশিরা,ধমনি সব ফুলে উঠেছে। লাল লাল বুঝা যাচ্ছে। আমি ভাইয়ার মাথার কাছে এগিয়ে গেলাম। পাশে বসে আলতো করে মাথায় হাত রাখলাম। আমার হাত রাখতেই দেখলাম সমুদ্র ভাই ধীরে ধীরে চোখ খুলে আমার দিকে তাকালো। আমার দিকে চেয়ে হালকা মুচকি হেসে আবার চোখ বন্ধ করে নিলো। আমি ভাইয়ার চুলে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।

এক ঘন্টা পর মিনু চাচা আর সুরাইয়া চাচি সমুদ্র ভাইয়ের জন্য খাবার নিয়ে আসলেন। চিকেন স্যুপ আর ব্রেড উইট জ্যাম। ভাইয়ার সচরাচর সকালের খাবার এইগুলোই হয়। অসুস্থ না হয়েও রোগীদের খাবার খাই আর অসুস্থ হলেও রোগীদের খাবার খায়। মাঝে দু একবার আমাকেও খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিল সমুদ্র ভাই, স্যুপের এক চুমুক নিতেই ওয়াশ রুমে যেয়ে বমি করতে হয়েছিল তারপর অবশ্য আর আমাকে ভাইয়া জোর করেনি সে।

—“ছোট ভাইজান এখন কেমন আছো?”

সুরাইয়া চাচি খাবারের ট্রে নিয়ে এগিয়ে আসলেন ভাইয়ার কাছে। ট্রে টা টেবিলের উপর রেখে চাচি ভাইয়ার কপালে হাত রাখলেন। আমি চাচির দিকে চেয়ে বললাম,

—“কি বুঝছ?”
—“এখনো জ্বর আছে, তবে আগের থেকে একটু কমেছে মনে হয়! খাবার খেয়ে ওষুধ খেলে আরো কমে যাবে!”

আমি মাথা নাড়ালাম। সমুদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালেই বুকের মাঝে চাপা অস্বস্তি কাজ করছে। সমুদ্র ভাইকে ওমন ভাবে শুইয়ে থাকতে দেখে মোটেও ভালো লাগছে না আমার। সমুদ্র ভাই সবসময় শান্তশিষ্ট। তবে বেজায় রাগী। তাকে ভয় পায় না এমন কেউ হয়তো এখনো চৌধুরী বাড়িতে জন্মাইনি। স্বয়ং খালা খালুও ভাইয়াকে সমঝে চলে। সে ভাইয়ার কঠিন শীতল চাহনি আজ কেমন যেন লাগছে?

—“ভাইয়া!”

আমি আস্তে করে ডাক দিলাম। সমুদ্র ভাই হয়তো ঘুমোইনি। আমার ডাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম সে চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়েছে। ভাইয়ার চোখের দৃষ্টি সবসময়ের মতো নরম! সে ধীরে ধীরে পলক ফেলে আমার দিকে চেয়ে আছে আছে।

—“ভাইজান ওঠো! খেয়ে নাও! ওষুধ খেতে হবে তো!”

মিনু চাচা সুরাইয়া চাচির পাশে এসে দাঁড়ালেন। ভাইয়া আমার দিকে একই ভাবে চেয়ে থেকে নিজ থেকে উঠার চেষ্টা করল। আমি সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র ভাইয়ের হাত শক্ত করে চেপে ধরলাম। এই প্রথম হয়তো আমি ভাইয়ার এতো টা কাছে এসেছি নিজ থেকে। ভাইয়ার পিছনে একটা বালিশ দিলাম। ভাইয়া তাতে ভর দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসলো। ভাইয়ার চোখ মুখ ফ্যাকাশে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালের উপর এসে পরেছে। একদম ছোট বাচ্চাদের মতো লাগছে। আমি সমুদ্র ভাইয়ের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। কি একটা অন্যরকম অনুভূতি আমার ভিতরে কাজ করছে। আগে কখনো এমন অনুভূতির সম্মুখীন হয়নি বললেই চলে।

—“রুদ্রি!”
—“হুম! কিছু বলবেন?”
—“খাইয়ে দে আমাকে!”

আমার চোখের গুলো বড় বড় হয়ে গেলো। আমি অপ্রস্তুত হয়ে উঠলাম। ভাইয়া আমাকে কেন খাইয়ে দিতে বলছে? সুরাইয়া চাচি তো আছেই এখানে,তাহলে! আমি কিছু বুঝলাম না। আমি ভাইয়ার দিকে তাকাতে দেখলাম ভাইয়ার চোখ এই জ্বরের মাঝেও কেমন নেশালো লাগছে। যেন আমাকে নিজের মধ্যে নিয়ে নিতে চাচ্ছে ওই দুটো বাদামী চোখ।

—“এই নাও আপা! খাইয়ে দাও ভাইজানকে!”

আমি অবাক হয়ে তাকালাম মিনু চাচার হাতের দিকে। সে কখন খাবারের ট্রেটা আমার সামনে এনে ধরেছে আমি খেয়ালই করেনি। আমি আমতা আমতা করে কোনো উপায় না পেয়ে মিনু চাচার হাত থেকে ট্রেটা নিলাম।

—“আচ্ছা, আপা তুমি ভাইজানকে খাইয়ে ওষুধ গুলোও বুঝে খাইয়ে দিও। আমরা তাহলে এখন যাই, বাড়ি অনেক কাজ!”
—“আচ্ছা!”

বলে দুজনে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। আমি সমুদ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

—“ভাইয়া, আগে ব্রেড খাবেন নাকি স্যুপ?”
—“কোনটা আগে খেতে হয়?”

সমুদ্র ভাইয়ের পাল্টা প্রশ্নে আমি বিরক্ত হয়ে উঠলাম। জ্বরের মধ্যেও যে মানুষের এতো ঘার ত্যাড়ামি আসে কোথা থেকে আমি বুঝি না। আমি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে,ব্রেডটা ভাইয়ার মুখের দিকে এগিয়ে দিলাম। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়েই আমার হাতটা ধরে ব্রেডে স্বযত্নে একটা কামড় বসালো। সমুদ্র ভাইয়ের হঠাৎ ছোঁয়ায় আমার সারা শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো। আমি ঢোক গিলে হাত সরিয়ে আনলাম।

—“তুই খেয়েছিস!?”
—“না!”

সমুদ্র ভাইয়ের জ্বর এসেছে এটা জানার পর থেকেই আমার খাওয়ার ইচ্ছা মরে গেছে। ভয়ে তো আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসার উপক্রম হয়েছিল,এর মধ্যে খাবো কি করে?

—“আমাকে খাইয়ে, সোজা নিচে যাবি! নিচে যেয়ে নাস্তা করবি! ঠিক আছে?”

আমি ভাইয়ার আদেশ মতো মাথা নাড়ালাম। ভাইয়াকে ছেড়ে নড়তে ইচ্ছে করছে না,এর মাঝে আমাকে নিচে যেতে বলছে, কিভাবে যাবো সেটাই ভাবছিলাম হঠাৎ আমার মাথায় পুরানো একটা প্রশ্ন উঁকি মারল,

—“ভাইয়া!”

আমি সমুদ্র ভাইয়ের দিকে ব্রেডটা আবারও এগিয়ে দিলাম। ভাইয়া তাতে আগের মতো আবার কামড় বসিয়ে বলল,

—“কি হয়েছে?”
—“আপনার ফোনে আমার ছোট বেলার ছবি কি করছে? আর আপনার পাসওয়ার্ড আমার জন্ম তারিখ দিয়ে কেন?”

চলবে.........

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

15/09/2025

আমি রুদ্রিকা বেদী। আপনাদের বদ লেখিকা! প্রথমেই ক্ষমা প্রার্থী! অনেক দিন ধরে হাওয়া হয়ে থাকার কারণে। জ্বর হওয়ার পর থেকে লিখতে ইচ্ছে করতো না, তাই লেখা পোস্টও হতো না! অনেকে এর মধ্যে #সমুদ্রবিলাসীনি এর জন্য কমেন্ট করেছেন। আমি কোনোটারই রিপ্লাই দিয়ে উঠতে পারেনি, এই জন্যই এই পোস্ট। অনেকে হয়তো ভাবছেন আমি আর গল্প লিখবো না বাট এমন কিছুই না, কাল থেকে একদম নিয়মিত আগে যেমন গল্প পেতেন ঠিক তেমনই ভাবেই পাবেন।

কালকে আপনাদের #সমুদ্র_ভাই আসবে। সবাই অপেক্ষা করছ তো?

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

 #অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে #রুদ্রিকা_বেদী #পর্ব_৩২রূপকথা চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। সে কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। শারমিন আহস...
06/09/2025

#অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে
#রুদ্রিকা_বেদী
#পর্ব_৩২

রূপকথা চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। সে কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। শারমিন আহসান বৌমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। ছোট বোনের দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিষাদগ্রস্ত কন্ঠে বললেন,

“থামবি তুই! আসতে পারলি না, শুরু হয়ে গেছে তোর উল্টো পাল্টা আচরণ?”

“উফ্! আপু। আমি আবার কি উল্টা পাল্টা আচরণ করলাম শুনি....!”

“আমি বলছি, তুমি কি উল্টা পাল্টা আচরণ করেছ!”

হঠাৎই খালামণির কথার মাঝে একটা পুরুষালি কন্ঠস্বর ভেসে উঠলো। খালা মণি পিছনে ফিরে তাকালেন। শিশিরের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে। চোখ লাল। সে এগিয়ে আসছে। রূপকথার পাশে দাঁড়ালো। শারমিন আহসানের দিকে তাকিয়ে শিশির বলল,

“আই এ্যাম সরি মা! বাট আই ক্যান্ট কন্ট্রোল মাই শেল্ফ এ্যানিমোর!”

বলে চোখ নামিয়ে আনলো রূপকথার দিকে। রূপকথার চোখের কোণ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে। শিশির স্বযত্নে রূপকথার চোখ মুছিয়ে দিয়ে খালামনির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। খালামনির চেহারায় হঠাৎ একটা আতংকের ছায়া বুঝা গেলো। সে ঢোক গিলে চেয়ে রইল শিশিরের দিকে,

“তোমার উল্টাপাল্টা আচরণ সম্পর্কে জানতে চাও তাই না খালামণি? আমি বলছি, আমার বউয়ের চোখে জল আনা তোমার উল্টা পাল্টা আচরণের মধ্যে অন্যতম ‍! আর তুমি কে আমার বউ আমার যোগ্য কিনা তা যাচাই করার?”

শিশিরের কন্ঠ স্বর কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। খালামণি শিশির দিকে এগিয়ে এসে তিরিক্ষি মেজাজে বললেন,

“শিশির, নিজের খালামণির সঙ্গে কেউ এমন ভাবে কথা বলে!? আমি তোমার খালা, মায়ের পরই আমার স্থান, সম্মানের সাথে কথা বলো!”

“সম্মান? সিরিয়াসলি খালামণি? আমার বউয়ের চোখে যার জল আসছে,আমি তাকে কিভাবে সম্মান করবো শুনি! এন্ড ইউ নো, অন্যের ব্যপারে যে মানুষগুলো অনুমতি ছাড়া নিজের নাক ঢুকায় তাদের আমার বিন্দু মাত্র সহ্য হয় না, সম্মান তো দূরের কথা!”

শিশিরের কথা বলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো নিস্তব্ধ চেয়ে গেলো আহসান মঞ্জিলে। কেমন দম বন্ধ করা পরিবেশ। লামিয়া ইসলাম শিশিরের পানে জ্বল জ্বল চোখে চেয়ে আছে।

“দেখেছিস আপু! তোর ছেলে একটা মেয়ের জন্য নিজের খালার সঙ্গে কেমন আচরণ করছে!”

খালা মণি শিশিরের দিক থেকে চোখ না সরিয়েই বললেন। ।

“সঠিকই তো বলেছে আমার ছেলে! আই এ্যাম ফিলিং সো প্রাউড যে শিশির আমার ছেলে!”

শারমিন আহসানের এই বাক্য লামিয়া ইসলামকে পুরো নাড়িয়ে দিলো ভিতর থেকে। সে অবাক দৃষ্টিতে নিজের বড়ো বোনের দিকে তাকালো। শারমিন আহসান ততক্ষণে ছেলের কাছে এসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রূপকথা ঠোঁট কামড়ে সবকিছু দেখছিল আর মনে মনে ভাবছিল,

“মি টু! আপনি আমার স্বামী এর থেকে বড়ো গর্বের বিষয় আর কিছু হয় না আমার জন্য!”

“আপু একটা মেয়ের জন্য,তোরা আমার সাথে এমন আচরণ করবি? ওই মেয়ে তোদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আমার থেকে ?”

“অফ কর্স খালামণি! রূপকথা ইজ মোর ইম্পর্ট্যান্ট দ্যান ইউ! একচুয়ালি ইউ ডোন্ট ম্যাটার ফর মি! এন্ড আমার বউয়ের নাম রূপকথা,সো কলড হার উইট হার নেম! এন্ড রেসপেক্টফুলি!”

শিশির তার কন্ঠ দৃঢ় করে লামিয়া ইসলামের চোখে চোখ রেখে বলল কথাগুলো। লামিয়া ইসলামের চোখে বিস্ফারিত হয়ে ফেটে পড়ার মতো উপক্রম হলো। সে একবার রাগান্বিত চোখে রূপকথার দিকে তাকালো। রূপকথা অশ্রু নয়নে সেই দৃষ্টিতে চোখাচোখি হতেই কুঁচকে গেলো। শিশির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রূপকথা পাশে দাঁড়িয়ে ওর হাত শক্ত ধরে বজ্র কন্ঠে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লামিয়া ইসলামকে বলল,

“সম্মান পেতে হলে আগে সম্মান দিতে হয় খালামণি কিন্তু তুমি তার যোগ্য নও! মা...!”

শারমিন আহসান ছেলের দিকে ফিরে তাকালেন।

“খালামণি যতদিন এই বাড়িতে আছে ততদিন যেন তার যত্নে কোনো ত্রুটি না, তবে আমার বা আমার বউয়ের কাছ থেকে যেন সে কোনো রকমের সম্মানের না করে!”

বলে রূপকথার হাত ধরে উপরে চলে গেলো। দুই বোন তখন বাকরুদ্ধ অবস্থা দাঁড়িয়ে রয়েছে একে অপরের মুখোমুখি হয়ে। পরস্পরের চোখাচোখি হতেই লামিয়া ইসলাম নিজের বড়ো বোনের চোখ একরাশ ঘৃণা আর অতৃপ্তির চাহনি খুঁজে পেলো,যা তাকে কোনো রকম কথা বলতে বাধা দিলো।

________

ঘরে প্রবেশ করতেই শিশির রূপকথাকে খাটে ছুঁড়ে ফেলল। এই আকস্মিক আচরণে রূপকথা স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ শিশিরের দিকে তাকিয়ে রইল। শিশির এমন ব্যবহার তার সাথে আগে কখনো করেনি। তার সারা শরীর লালচে হয়ে পরেছে। চোখে আগুনের শৈল! শিশির চোয়াল শক্ত করে তার চুলের ফাঁকে আঙ্গুল গুলো প্রসারিত করে রূপকথার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

“রূপকথা , আমি তোমাকে কতোবার বলেছি নিজের জন্য কথা বলবে! অপমান সহ্য করবে না, তারপরও বেহায়ার মতো ওখানে দাঁড়িয়ে খালামনির কথা শুনছিলে! ইউ নো আমাকে রাগিয়ে তোলার জন্য দিস ইজ ইন্যাফ!”

রূপকথা মুহূর্তেই কেঁপে উঠলো। শিশিরকে সে সম্মান করে তবে কখনো যে ভয়ের মতো অনুষ্ঠিত তার মধ্যে বাসা বাঁধবে রূপকথা বুঝতে পারেনি । প্রত্যেকটা অঙ্গে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে তার। ভীতসন্ত্রস্ত চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া রূপকথা আর কোনো প্রতিক্রিয়ায় প্রকাশ করতে পারলো না শিশিরের প্রতি।

শিশির দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে রূপকথার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসলো। রূপকথা পাথরের মুর্তির মতো বসে আছে। শিশির তার দৃষ্টির দিকে চেয়ে রূপকথার হাত দুই হাতে তুলে নিলো।

“আই এ্যাম সরি! তোমার সাথে আমার এমন ব্যবহার করা উচিত ছিল না! আই এ্যাম সরি মাই লাভ!”

শিশির রূপকথার চোখের দিকে তাকায়। সাহিত্যিকরা বলে চোখের চাহনি যেকোনো ভাষা থেকে বেশি শক্তিশালী! ভাষায় অনেক ভাবে মিথ্যা বলা যায়,চাইলে নিজের অনুভূতিকে মিথ্যা করে দিতে পারে কিন্তু চোখ পারে না, চোখ পারে না লুকোচুরি খেলতে, তারা স্পষ্টবাদী! রূপকথার চোখেও আজ স্পষ্টভাবে নিজের জন্য ভয় কাজ করতে দেখলো শিশির।

“আই এ্যাম সরি! বাট তুমি জানো তোমাকে কেউ কিছু বললে আমি কতোটা পসেসিভ হয়ে উঠি সেটা আমার নিজের ঠিক খেয়াল থাকে!”

রূপকথা তখনো কোনো উত্তর দিলো না। সে চুপ করে বসে রইল শিশিরের দিকে চেয়ে‌। শিশির উঠে দাঁড়ালো, রূপকথা কাছ থেকে সরে এসে ঘরের টেবিলের সামনে দাঁড়ালো। টি টেবিলের উপর কাঁচে দুটো গ্লাস রাখা, সেখান থেকে একটা তুলে নিলো হাতে। রূপকথার দিকে ফিরে চোয়াল শক্ত করে কাঁচের গ্লাসে জোড় লাগালো। দেখতে দেখতে কাঁচের গ্লাসটি শিশিরের হাতের মাঝে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়লো।

রূপকথা কাঁচ ভাঙার আওয়াজে চমকে শিশিরের দিকে ফিরে তাকায়। হাত রক্তাক্ত দেখতেই রূপকথা হৃদযন্ত্রটা কেঁপে উঠলো। সে কোনো কিছু না ভেবে ছুটে গেলো শিশিরের কাছে। হাতের মধ্যে কাঁচ ঢুকে গেছে। রূপকথা আতংক অস্ফুট স্বরে চিৎকার করে উঠল,

“আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন!!?”

“না, রাগের বহিঃপ্রকাশ করলাম শুধু মাত্র!”

চলবে........

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

05/09/2025

অনেক দিন অসুস্থ থাকায় নিয়মিত গল্প দিতে পারেনি। ফেসবুকেও তেমন একটা আসা হয়নি তাই অনেক কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়া হয়নি। সত্যি বলতে এই কয়েক দিন গল্প লিখতে গিলে ভীষণ করে মাথা ব্যথা করছে, তাই লেখালেখির থেকে বিরতি নিয়েছিলাম কাউকে কিছু না বলে,তাই সবার কাছে অত্যন্ত ক্ষমা প্রার্থী! তবে আজ থেকে গল্প পাবেন আশা করতে পারছি।

আজ যথা সময়ে #অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে এর নতুন পর্ব আসবে!

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

 #সমুদ্রবিলাসীনি —০৩লেখনীতে:- রুদ্রিকা বেদী হঠাৎ করেই সমুদ্র ভাইয়ের ভীষণ জ্বর এসেছে। বাড়িতে কেউ নেই। সবাই পিকনিকে মজা ...
01/09/2025

#সমুদ্রবিলাসীনি —০৩
লেখনীতে:- রুদ্রিকা বেদী

হঠাৎ করেই সমুদ্র ভাইয়ের ভীষণ জ্বর এসেছে। বাড়িতে কেউ নেই। সবাই পিকনিকে মজা করছে। বাড়িতে আমি, সমুদ্র ভাই আর মিনু চাচা এবং তার বউ সুরাইয়া চাচি। দুজনে বাড়ির দেখাশোনা করার হেড।

আজ সকাল থেকে সমুদ্র ভাইয়ের ভীষণ রকমের জ্বর। বিষয়টি জানতে পারতাম না যদি নাস্তা করার জন্য ডাকতে না আসতাম। ঘরের দরজায় যখন নক করি কোনো সাড়াশব্দ পাই না। তখন দরজা ঠেলে নিজেই ঢুকে পরি। ভাগ্যিস ভাইয়া সব সময় দরজা লাগিয়ে রাখে না,তাহলে তো আরেক বিপদ হতো।

ঘরে প্রবেশ করতেই দেখি সমুদ্র ভাই বিছানার উপর শুইয়ে কাঁপছে। এতোটাই কাঁপছে যে দূর থেকেই বোঝা যাচ্ছে। আমি বিষয়টা হালকা আন্দাজ করতে পেরে এগিয়ে যায় মাথার কাছে। কপালে হাত রাখতে বুঝতে পারি, সমুদ্র ভাইয়ের গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। আমি উঠে বাইরে যেতে যাবো ওমনি সমুদ্র ভাই আমার হাতের কব্জি ধরে বসে। জ্বরের মধ্যে থাকলেও কি সেন্স একদম ঠিক ঠাক কাজ করছে। ভাইয়া ঠিক ধরতে পেরেছে হাতটা আমার।

—“কোথাও যাইস না রুদ্রি! এখানে....আমার....কাছে বসে থাক!”
—“কিন্তু ভাইয়া, ডাক্তার ডাকতে হবে তো?”
—“এখানে বসতে বলেছি!”

‘ভাঙ্গবে কিন্তু মচকাবে না’ এমন প্রকৃতির মানুষ সমুদ্র ভাই। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে কিন্তু তেজ কমবে না। সত্যি কথা বলতে আমারও আর উঠতে ইচ্ছে করল না কিন্তু তাই বলে কি হাতে হাত ধরে বসে থাকবো? নো নেভার! আমি আমার ফোন ডাইনিং টেবিলেই রেখে এসেছি, সুতরাং পাশের সাইড টেবিলের উপর থেকে সমুদ্র ভাইয়ের ফোনটা হাতে তুলে নিলাম। ফোনের স্ক্রিন অন করতেই দেখি পাসওয়ার্ড চায়। আমি ভাইয়ার দিকে তাকায়। তাকাতেই চোখ মুখ কুঁচকে গেল, শরীরে একধরণের তরঙ্গ খেলে গেলো। সমুদ্র ভাই আমার হাতটা তার বুকের কাছে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে।

—“ভাইয়া, হাতটা ছাড়ুন!”
কোনো প্রতিক্রিয়া আসলো আসলো না।

—“ভাইয়া, হাতটা ছাড়ুন!”

এবার প্রতিক্রিয়া আসলো তবে অন্যভাবে। সমুদ্র ভাই গায়ের ব্লাংকেটটা মুখের উপর উঠিয়ে নিলো! এর থেকে সে এই বুঝাতে চাইলো, যতই হাত ছাড়তে বলি না কেন সে ছাড়বে না! আমি হতবাক হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলাম ব্লাংকেটরত সমুদ্র ভাইয়ের দিকে। এক প্রকার হাল ছেড়ে দিয়ে আমি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ভাইয়ার মুখের উপর থেকে ব্লাংকেটটা সরিয়ে দিলাম। এমনই জ্বর তারউপর যদি ব্লাংকেটটা মুখের উপর দিয়ে রাখে তাহলে তো দম বন্ধ হয়ে আসবে! ইনি নাকি আবার সাইন্সের স্টুডেন্ট?

—“ঠিক আছে! হাত ছাড়তে হবে না! শুধু ফোনের পাসওয়ার্ডটা বলুন!”

ভাইয়া চুপ থাকে। কোনো উত্তর দেয় না। আমি বিরক্ত হয়ে আবার বললাম,

—“পাসওয়ার্ডটা দেন!”

—“২...৮....২..২...০..**!”

ভাইয়া থেকে থেকে পাসওয়ার্ডটা বললো। আমি সমুদ্র ভাইয়ের বলা ডিজিট গুলো বসিয়ে দিলাম আর সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেলো স্ক্রিনলক খুলে গেলো। লকস্ক্রিন থেকে হোম স্ক্রিনে প্রবেশ করতে আমি থমকে গেলাম। ওয়ালপেপারে আমার ছোট বেলার ছবি কি করছে? আমি ভাইয়ার দিকে তাকালাম। বিস্মিত দৃষ্টিতে দেখছি ভাইয়া জ্বরে কাঁপছে, আমি মাথার সব প্রশ্নগুলোকে সাইডে রেখে মিনু চাচার নাম্বার খুঁজলাম ফোনে। একটু খোঁজাখুঁজি করতে পেয়ে গেলাম নাম্বারটা,

—“হ্যালো মিনু চাচা!”
—“কও আপা! তুমি ছোট ভাইজানের নাম্বার দিয়ে ফোন কেন করেছো?”
—“ওসব পরে বলছি! তুমি আগে ডাক্তার আঙ্কেল কে কল করে বাড়িতে আসতে বলো! ভাইয়ার ভীষণ জ্বর!”
—“কী কও তুমি!? আমি এক্ষুনি ডাক্তার সাহেবকে ফোন দিচ্ছি!”
—“হ্যাঁ দাও!”

কল কেটে দিলাম। ফোনটা অফ করে পাশে রেখে দিলাম। সমুদ্র ভাইয়ের কপালে আবার হাত রাখলাম। উত্তাপ বেড়েই চলছে! আমি পুনরায় চেষ্টা করলাম আমার হাতটা ছাড়ানোর কিন্তু সম্ভব হলো না এবারও!

—“আচ্ছা ভাইয়ার ফোনের পাসওয়ার্ডটা একটু চেনা চেনা লাগছে! কোথায় যেন ডিজিটগুলো দেখেছি?”

মাথায় প্রশ্নটা আসতেই মনে মনে ভাবলাম কথাটা। ভাইয়ার দিকে আড়চোখে তাকাতেই মনে পরে গেলো, আসলে ডিজিটগুলো তো আমার জন্মদিন মাস আর সাল,

—“২৮ শেষ ফেব্রুয়ারি ২০**!”

লেখনীতে:- রুদ্রিকা বেদী

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

 #সমুদ্রবিলাসীনি —০২লেখনীতে:- রুদ্রিকা বেদীপৃথিবীতে পুরুষ মানুষ সুদর্শন হলেই যে খুব ভালো মানুষ হবে এমন নয়। এর সবচেয়ে ব...
30/08/2025

#সমুদ্রবিলাসীনি —০২
লেখনীতে:- রুদ্রিকা বেদী

পৃথিবীতে পুরুষ মানুষ সুদর্শন হলেই যে খুব ভালো মানুষ হবে এমন নয়। এর সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ আমি নিজের চোখে পেয়েছি। জন্মের পর থেকে চোখের সামনে মৌমাছির মতো ভনভন করতে থাকা বনমানব সমুদ্র ভাই। ভাইয়া অত্যন্ত সুদর্শন যুবক। তাকে বিবরণ করতে গেলে আমার জন্য একটু কঠিন হবে, হয়তো কলমের কালিই শেষ হয়ে যাবে কিন্তু বর্ণনা দেওয়া শেষ হবে না। তবে সুন্দর হলে হবে কি? দিন শেষে সে একটা বনমানুষ। বাড়ির অন্যরা কেন জানি তার কোনো দোষ দেখতেই পায় না, চোখের মণি হয়ে সব কিছুতে দাদাগিরি করবে! এই দাদাগিরি আমার সাথে যেন একটু বেশিই করে! যেমনটা এখন,

প্রত্যেক বছর শীতের সময় আমার, ফুপি আর খালামণির পরিবার সবাই একসঙ্গে মিলে পিকনিক করতে গ্রামের বাড়িতে যাই। এইবারও পিকনিক ঠিক হয়েছে কিন্তু আমি যেতে পারবো না এবং এর সবচেয়ে বড়ো কারণ সমুদ্র ভাইয়া। ভাই আমার ঠান্ডা লেগেছে, আমি বুঝে নিবো! না তার ব্রিটিশ নাকটা ঢুকাতেই হবে। শেষমেষ আমার ঠান্ডার অজুহাত দেখিয়ে যাওয়াটা আটকিয়ে দিলো। এখন পাঁচ দিন তার সঙ্গে আমার খালা মণিদের বাড়িতে কাটাতে হবে!

—“ভাইয়া আমি যাই! ঠান্ডা লাগবে না আমার!”
—“তুই যদি আর একবার পিকনিকে যাওয়ার কথা বলিস তাহলে তোর এই চিকন চিকন বক পাখির পা ভেঙ্গে রেখে দিবো, তারপর যেখানে খুশি সেখানে যেও!”

সমুদ্র ভাই বইয়ের দিকে তাকিয়েই কথা গুলো বলল। সামনে তার লাস্ট সেমিস্টারের পরীক্ষা তাই সেও পিকনিকে যাচ্ছে না। আমি মুখটা কাচুমাচু করে তাকিয়ে রইলাম ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া কি বুঝলো সে আমার দিকে তাকিয়ে বিড়াল চোখের মতো চোখগুলো ছোট ছোট করে বলল,

—“সামনে না তোর এডমিশন পরিক্ষা! তুই পড়াশোনা ছেড়ে পিকনিক পিকনিক করছিস ,লজ্জা লাগে না! যা পড়তে বস!”
—“ঠিক আছে! যাচ্ছি!”
—“দাঁড়া! বই নিয়ে আয় এখানে! আমি পড়াবো তোকে!”

সিট! ভাইয়া পড়বে আমাকে, তারমানে জানা জিনিসও ফর সিউর ভুল করবো। তারপর কান মুড়ানি খেতে হবে! সর্বনাশ! আজকেই আমি শেষ!

—“ভাইয়া....লাগবে না! আমি নিজ থেকে পড়ে নিবো!”
—“তোকে বই নিয়ে আসতে বলেছি!”
—“এক্ষনি যাচ্ছি!”

ভাইয়ার ভয়ে প্রায় দৌড়ে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরোতে গিয়েছিলাম। হয়ে গেলো অঘটন! সঙ্গে সঙ্গে পা মচকে পরে গেলাম। পায়ের যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে উঠলাম সঙ্গে সঙ্গে। দেখলাম ভাইয়াও আমার পড়ে যাওয়াতে প্রথমে হালকা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। পরবর্তীতে ছুটে এসে আমার কাছে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,

—“গাধী! তোকে দৌড়াতে কে বলেছিল?”

আমি কিছু বলার সুযোগই পেলাম না,তার আগেই সমুদ্র ভাই আমাকে কোলে তুলে নিলো। ব্যাথায় তখনো ছটপট করছি। হয়তো কোনো শিরাই টান লেগেছে। সমুদ্র ভাই আমাকে খাটের উপর আধশোয়া অবস্থায় বসালেন। পা নিচে রাখতেই যন্ত্রণায় চোখ মুখ কুঁচকে চাদর খামচে ধরলাম! এতোক্ষণে ঘরে একে একে সবাই এসে জড়ো হয়েছে আমার চিৎকারের শব্দে।

—“কি হয়েছে রুদ্রি!?”
—“খালামণি দেখনা আমার পা মচকে গেছে! আমি এখন হাঁটতে পারছি না! আমি কি সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাবো।”
—“হয়, শুধু পঙ্গু হবি কেন,তুই মহা পঙ্গু হবি! সারাজীবন এই খাটের উপর বসে কংকাল হতে হবে তোর!”

সমুদ্র ভাই পাশে দাঁড়িয়ে আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন।

—“সমুদ্র! একটু থাম। মেয়েটার পায়ে লেগেছে তো!”
—“আমি কি করবো! দৌড়াতে কে বলেছিল ওকে! অবশ্য পড়ার অভ্যাস ওর ছোট বেলার থেকে, এই জন্যই তো থুতনি চার বার কেটে নিয়েছে,সামনে আর কতোবার কাটবে তাই ভাবছি!” [কথাটি একদম সত্য, থুতনি আসলেই চারবার কেটেছে]

আমি আমার থুতনিতে হাত বুলিয়ে খালা মণির দিকে অশ্রু নয়নে তাকালাম।

_____________

পারিবারিক ডাক্তার ডাকা হলো । ডাক্তার আঙ্কেল এসে আমার পা ভালো করে দেখলেন। পায়ের যন্ত্রণা তখন আরো বেড়ে গেছে। তিনি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বললেন,

—“পায়ে হালকা চোট পেয়েছে! বেড রেস্ট নিলেই ভালো হয়ে যাবে! মলম লিখে দিচ্ছি! তিন বেলা মালিশ করে দিতে হবে!”

ডাক্তার আঙ্কেল মলম আর কিছু ঔষধ লিখে দিলেন। বাবা আর খালু গেলেন সেই ওষুধ পত্র আনতে। মা আর খালা আমার জন্য কিছু নাস্তা তৈরি করতে নিচে গেলেন। আমি আর আমার বড়ো বোন রিধি সমুদ্র ভাইয়ের ঘরে বসে আছি। ডাক্তার আসার পর থেকেই সমুদ্র ভাইকে কোথাও দেখছি না। সেটাও একটু স্বস্তির বিষয়। ভাইয়া থাকলে কখন কোথা থেকে বকা আর মাইর পরতো বোঝা যেতো না!

—“পরে গিলি কিভাবে?”
—“আর বলো না! ওই বনমানবের কারণে এই সব হয়েছে!”
—“কে মনমানব?”
আপি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল। আমি আশে পাশে ভালো করে দেখে নিলাম। না সমুদ্র ভাই নেই।

—“আর কে? আমার প্রিয় খালা মণির একমাত্র সন্তান ওরফে সমুদ্র ভাই!”
—“চুপ কর ! ভাইয়ার কানে কথা গেলে, খবর হয়ে যাবে!”
—“আরে সে তো নেই! তাই তো এতো সাহস নিয়ে বলছি কথাগুলো !”

—“কে নেই? আর কোন কথাগুলো বলার সাহস পেয়েছিস শুনি?”

আমি আর আপি চমকে উঠলাম। দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম সমুদ্র ভাই দাঁড়িয়ে আছে,হাতে একটা বাঁশ কাগজের প্যাকেট। আরেকটু খেয়াল করতে দেখলাম ভাইয়ার সঙ্গে তার বন্ধু তিহান ভাইয়া। দুজনে ঘরে প্রবেশ করল। আমি ঢোক গিলে মাথা নাড়িয়ে আমতা আমতা করে বললাম,

—“কিছু না ভাইয়া! আমি আর ...আপি গল্প করছিলাম!”
—“হ্যাঁ.... হ্যাঁ ভাইয়া!”

বলে আপি উঠে দাঁড়ালো। তিহান ভাইয়ার দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে,তাকে সালাম জানিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো, আমি তাড়াতাড়ি তাকে পিছন থেকে ডেকে উঠে বলি,

—“আপি! যেয়েও না, আমিও যাবো তোমার সাথে!”
—“কোথাও যাবি না তুই!”

সমুদ্র ভাই কঠিন কন্ঠে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন।

—“আমি ঠিক আছি ভাইয়া! আমি আমার ঘরে যেতে পারবো!”
—“আমি বলেছি তুই কোথাও যাবি না! আমি এক কথা বারবার বলতে পছন্দ করি না!”
ভাইয়া আমার দিকে ঝুঁকে আসলেন।

—“হ্যাঁ রুদ্রি! সমুদ্র ঠিক বলছে। তুমি এখানে বসে রেস্ট নাও! যত রেস্ট নিবে তত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে! আর রিধি...!”

তিহান ভাইয়া আমাকে বলে আপির দিকে তাকালেন। আপি সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে লাজুক দৃষ্টি মেঝেতে চেয়ে রইল। আমি আপির দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসলাম।

—“আগের দিনের মতো করে একটু কফি বানিয়ে দিবে? অনেক সুন্দর হয়েছিল!”
—“জ্বী ভাইয়া, আমি এক্ষুনি বানিয়ে আনছি!”

আপি লাজুক ভঙ্গিতে বলল। সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। আপি চলে যেতেই তিহান ভাইয়া সমুদ্র ভাইয়ের স্টাডি চেয়ারে যেয়ে বসলো।

—“রুদ্রির জন্য এতো যত্ন করে যেটা এনেছিস সেটা তো দে ওকে!”

ভাইয়া সমুদ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন। সমুদ্র ভাই আমার দিকে আড়চোখে তাকালেন। আমি চুপ করে বসে আছি। কি আবার আনলো এই বনমানবটা? ভাবতে ভাবতে ভাইয়া,

—“এই নে ধর!”

বলে সেই বাঁশ কাগজের প্যাকেট আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। আমি অবাক হয়ে সমুদ্র ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম,

—“কি আছে এতে!?”
—“চোখ থাকলে নিজেই খুলে দেখ!”

আবার অপমান! আমি পাত্তা দিলাম না। প্যাকেট খুললাম ধীরে ধীরে। প্যাকেটের ভিতরে দেখতেই চমকে উঠলাম, সঙ্গে সঙ্গে মুখে হাসিও ফুটলো। আমার পছন্দের সব চকলেট! সমুদ্র ভাই আমার দিকে ঝুঁকে এসে গাঢ় হাস্কি এবং নিচু স্বরে বলল,

—“আশা করি এতে ব্যাথাটা একটু হলেও কমবে!”

আমি সমুদ্র ভাইয়ের দিকে তাকালাম। আশ্চর্য হয়ে তাকালাম। আশ্চর্য হওয়ার কারণ, লোকটা আমার পিছনে যতই লাগুক না কেন, আমার পছন্দ সম্পর্কে সে সবচেয়ে বেশি অবগত! কিন্তু কিভাবে এবং কেন!

—“ধন্যবাদ ভাইয়া!”
—“হয়েছে! এখন বাচ্চাদের মতো পায়ের উপর পা তুলে চকলেট খা! আর খবরদার কাদবি না! চোখে জল দেখলে, মাইর খাবি...!”

লেখনীতে:- রুদ্রিকা বেদী

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

Address

Jessore

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share