রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi 𝙸𝚖𝚊𝚐𝚒𝚗𝚊𝚝𝚒𝚘𝚗 𝚂𝚑𝚒𝚗𝚎𝚜 𝙱𝚛𝚒𝚐𝚝𝚑𝚎𝚛 𝚃𝚑𝚊𝚗 𝚁𝚎𝚊𝚕𝚒𝚝𝚢

𝚁𝚎𝚊𝚍 — 𝙽𝚘𝚟𝚎𝚕𝚜

𝚃𝚑𝚒𝚗𝚔 — 𝙵𝚛𝚎𝚎𝚕𝚢

𝙰𝚗𝚍 𝚋𝚎 ‘‘𝙷𝚊𝚙𝚙𝚢’’🦋🦋🦋

16/10/2025

ভীষণ দুঃখিত সবার কাছে,
আজ গল্পের কোনো পর্ব আসবে। ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। আগের রাতে সম্পূর্ণ না ঘুমিয়ে আজ সকাল থেকে জার্নি করেছি। সারা রাস্তায় মাথা ঘুরে ঘুরে উঠেছে। শরীর দুর্বল হওয়ার কারণে,বাড়ি এসে কোনো রকম শাওয়ার নিয়ে খেয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলাম কিন্তু সেখানেও বিপত্তি, সারা শরীরে হঠাৎ করে এলার্জির সমস্যা শুরু হলো । যাদের এলার্জি আছে তারাই জানে এর কষ্ট। প্রায় তিন ঘন্টা ঘুমোনোর চেষ্টা করে সফল হয়েছি। একটু আগে আমি গল্প লিখতে বসেছিলাম কিন্তু মাথা ব্যাথা করছে অনেক। তাই আজ আর গল্প দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না ।

সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর আমার জন্য দোয়া করবেন।

 #অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে #২য়_পরীচ্ছেদ #রুদ্রিকা_বেদীপর্ব - ০২[🚫 পর্বটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষদের জন্য 🚫]শিশিরের হাত রূপক...
15/10/2025

#অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে
#২য়_পরীচ্ছেদ
#রুদ্রিকা_বেদী
পর্ব - ০২

[🚫 পর্বটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষদের জন্য 🚫]

শিশিরের হাত রূপকথার শরীরের নিচ থেকে ছুঁইয়ে উপরে এসে গলার কাছে থামলো। পিছনের থেকে রূপকথার দুই হাতের কব্জি ছেড়ে দিলো শিশির। রূপকথা নড়তে যাবে তার আগেই শিশির ওর গলা চেপে ধরে। রূপকথার চোখ বের হয়ে আসতে চাইলো। শিশির রূপকথার কপালের সাথে নিজের কপাল লাগিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে একে অপরের দিকে চেয়ে রইল। দুজনের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসলো। শিশির রূপকথার কোমর জড়িয়ে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। রূপকথা ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল,

“কি করতে চাচ্ছে আপনি?”

“এখন কিছুই করতে চাচ্ছি না সোনা কিন্তু রূশিকে দেখার আগে তোমাকে যখন প্রথম দেখলাম, তখন মনে হচ্ছিল গলাটা চেপে ধরে দেওয়ালের সাথে পিষে ফেলি!”

রূপকথা ভ্রু কুঁচকে তাকালো স্বামীর পানে। শিশিরের পাথরের ন্যায় কন্ঠস্বরটি বাক্যটা উচ্চারণ সময় একটু কাঁপল। রূপকথা শিশিরের চোখে চোখ রেখে,ওর কালো শার্টের কলারটি চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“তাহলে দেরী করছেন কেন পিষে ফেলুন!”

“যাকে চার বছর ধরে পাগলের মতো খুঁজে বেরিয়েছি আজ এতো সাধনার পর পেয়ে তাকে নিজের হাতে খুন করবো,এতোটাও সাইকো না আমি!”

রূপকথা অগ্রাহ্য করল শিশিরের কথা গুলো। তার তাচ্ছিল্যের হাসি সম্পূর্ণ সেই অর্থই ফুঁটিয়ে তুলেছে। শিশির রূপকথার গলা ছেড়ে দিল। এবার যেন রূপকথার বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পাচ্ছে। শিশির রূপকথার হাসি লক্ষ্য করে বলল,

“হাসছ কেন?”

“হাসছি আপনার কথা ভেবে! চার বছর পাগলের মতো খুঁজেছেন? এই খোঁজার কোনো দরকার ছিল যদি আমাকে একটু ভালোবাসতেন?”

শিশির বুঝতে পারল সব কিছু। রূপকথা এখনো বিশ্বাস করে শিশির রূপকথাকে কখনো ভালোবাসেনি। শিশির দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রূপকথাকে ছেড়ে দুই কদম পিছিয়ে দাঁড়ালো।

এতোক্ষণে রূপকথা সোজা হয়ে দাঁড়ালো। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শিশিরের দিকে চেয়ে আছে। চোখে হাজারো প্রশ্ন। এই সব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে শিশিরের।

“ভালো তোমাকে বাসেনি, সেটা কিভাবে বুঝলে? তুমি জানো তোমার যাওয়ার পর আমি কি পরিমাণে মানসিক ট্রমা দ্বারা বের হয়েছি! কি পরিমাণে ওষুধ খেতে হয়েছে, রাতে ঘুম আসতো না,জেগে থাকতাম! পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম তোমাকে ছাড়া! তুমি বলছো ,আমি তোমাকে ভালোবাসেনি?”

“জ্বী বলছি, কারণ মানুষ দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝে না! আমি থাকতে আপনি বুঝেননি! সেদিন যদি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতেন, ' রূপকথা আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি ' তাহলে আমাদের সংসারটা কতো সুন্দর হতো!”

“তুমি কি আমাকে বলার সময় দিয়েছ সোনা?”

“আর কতো সময় আপনি চাচ্ছিলেন শুনি? আমার চোখের দিকে তাকিয়ে একটা উত্তর দেন...!”

রূপকথা এগিয়ে গেলো শিশিরের একদম কাছে। মিশিয়ে নিলো নিজের। শিশিরের কলার পুনরায় চেপে ধরে বলল,

“যদি সেদিন আপনার জায়গায় আমি থাকতাম,আর আপনি দেখতেন আমি এখনো আমার প্রাক্তনের জন্য অনুভূতি কাজ করছে এবং আপনাকে ইগনোর করে তার সাথে কথা বলছি আর ভাবছি আমি হয়তো এখনো আমার প্রাক্তনকে ভালোবাসি, এবং আপনি সেই অনুভূতিটা আমার চোখে পড়তে পারলেন,তাহলে সেই মুহূর্তে আপনি কি করতেন?”

শিশির স্তব্ধ হয়ে রইল। সে পরিস্থিতিটা কল্পনা করতেই লাল হয়ে উঠলো। রাগে লাল। সেই দিকে চেয়ে রূপকথা মুচকি হেসে, পায়ের আঙ্গুলের ভরে উঁচু হয়ে শিশিরের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট আলতো করে ছুয়ে দিলো। শিশির রূপকথার কর্মকান্ডে বিস্মিত হয়ে উঠলো। রূপকথা স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,

“শান্ত হোন মিস্টার আহসান! আমি ওমন কোনো অনুভূতিই প্রসন করি না নিজের মধ্যে! আপনি করেছিলেন সেই মুহূর্তে! আপনার তো শুধু কল্পনা করেই রাগ উঠে গেলো আর ভাবুন আমার মতো অভাগী মেয়ের জন্য সেই দৃশ্যটা কেমন হবে বুঝতে পাচ্ছেন,আশা করি!”

“তাই বলে চার বছর দূরে থাকবে?”

“ওতে রূপকথার কোনো দোষ নেই শিশির!”

শিশির প্রশ্ন শেষ করতেই দরজার ঠেলে ভিতরে আসলেন উইল চেয়ারে বসে থাকা রেওয়াজ সাহেব। রূপকথা নিজের নানুর সাথে রূশিকে না দেখে ভ্রু কুঁচকে চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞাসা করল,

“নানু,রূশি কোথায়?”

“চিন্তা করিস না,রূশি বাইরে সানজিদ নামক একটা ছেলের সাথে খেলছে! শিশিরই পিএ বোধহয়!”

“জ্বী!” শিশির সাই দিলো। রেওয়াজ সাহেব মুখে হাসি ফুটিয়ে এগিয়ে আসলেন দুজনের কাছে। শিশির দিকে বলল,

“তোমার বউ আমার কারণে তোমার কাছ থেকে চার বছর দূরে ছিল শিশির,আর আমারই কারণে তোমরা চার বছর পর একে অপরের কাছে এসেছো!!”

“মানে...!?” শিশির বিস্মিত দৃষ্টিতে বলল।

“তুমি কি ইচ্ছে করে আহসান ইন্ড্রাস্ট্রিদের সাথে মিটিং ফিক্স করেছিলে?” রূপকথা আন্দাজ করে বলল। রূপকথার কথা শুনে রেওয়াজ সাহেব হো হো করে হাসতে হাসতে বলল,

“ক্লেভার মাই চাইল্ড, ক্লেভার! এই তো বুঝে গেছো!”

“চার বছর পর আপনার হঠাৎ কেন মনে হলো, ওর সাথে আমার এখন দেখা হওয়া উচিত?”

শিশির আড় চোখে গম্ভীর মুখে প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করল। রেওয়াজ সাহেব হাসি থামিয়ে সোজা হয়ে বসলেন, গম্ভীর মুখ করে তিনি বললেন,

“তোমার মেয়ে রূশি, তার সামনে জন্মদিন আসতে চলেছে, তার এবারের জন্মদিনের ইচ্ছে ছিলো নিজের পাপার কাছে যাওয়ার! আমার নাতনির একমাত্র মেয়ে,তার ইচ্ছে ফেলি কি করে!”

রেওয়াজ সাহেব কথা শেষ করতেই মিটিং রুমে পিনপতন নীরবতা তৈরি হলো। তিনজনের মধ্যে কেউ কোনো কথা বলছে না। তিনজনই পুরো পরিস্থিতিটা সঠিক ভাবে বুঝতে চাচ্ছে। কোথা থেকে কি হয়েছে? কেন হয়েছে ভাবতে হচ্ছে!

তিনজনের মধ্যে নিরবতা ভাঙলেন রেওয়াজ সাহেব। তিনি দরজার কাছে যেতে বললেন,

“টেক ইউর টাইম ! সময় নিয়ে একে অপরের মধ্যের সমস্যা দূর করো!”

বলে চলে গেলেন। রূপকথা আর শিশির একে অপরের দিকে চেয়ে রইল। চার বছরের তফাৎ! একে অপরকে যতো দেখছে ততই যেন কম লাগছে। দুজনের চোখের দৃষ্টির মাঝে তৃষ্ণা রয়েছে। তৃষ্ণাটা যত বেশি শারীরিক ভাবে ততটাই মানসিক ভাবে।

শিশির রূপকথার হাত ধরে টান দিলো নিজের কাছে। রূপকথার শরীরের সেই সুগন্ধ এখনো পরিবর্তন হয়নি। এই সেই সুগন্ধ যা ছাড়া শিশিরের ঘুম হতো, সেই সুগন্ধ ছাড়া আজ চারটা বছর কাটিয়েছে।

শিশির রূপকথার জড়িয়ে মুখটা রূপকথার কানের কাছে নিয়ে হিসহিসিয়ে বললো,

“আই লাভ ইউ সোনা! প্লীজ ফগিভ মি! আই ওয়ান্ট ইউ এন্ড রূশি ব্যাক ইন মাই লাইফ! প্লীজ চারটা বছর চলে গেছে ওকে ছাড়া আর নিও না কেড়ে!”

রূপকথা মুখে কিছু বলল না। সে শিশিরের কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিলো। শিশির রূপকথার ইশারা বুঝতে পারলো। রূপকথা শিশিরের গলা জড়িয়ে ধরে শান্ত স্বরে বলল,

“আই এ্যাম আলশো সরি! রূশির ব্যপারে কিছু না জানানোর জন্য!”

“ডোন্ট বি সরি! তুমি যে যন্ত্রনার মধ্যে গিয়ে গেছো সেটার পরে তুমি সরি বললে,আমি নিজেকেই নিজে ক্ষমা করতে পারবো না!”

বলে রূপকথার ওষ্ঠধরের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো। রূপকথা শিশিরের চুল খামচে ধরলো। শিশির রূপকথাকে উঁচু করে কাঁচের টেবিলের উপর বসিয়ে দিলো। তখনো তারা একে অপরের ভালোবাসায় ডুবে রয়েছে।

চুম্বন টি যেন সময়ের সাথে বেশি গভীরে হচ্ছে। দুজনের চোখ বন্ধ। ভালোবাসার উন্মাদনায় ভেসে চলছে সাথে দুজনের হাত চলছে একে অপরের শরীরে। শিশিরের হাত রূপকথার সারা শরীর ছুঁইয়ে যেয়ে থামলো রূপকথার টিশার্টের ভিতর। রূপকথা নিজের তলপেটে শিশিরের উষ্ণ হাতের ছোঁয়া পেতেই শিশিরকে থামিয়ে দিলো। ঠোঁট থেকে ঠোঁট ছাড়িয়ে বড়ো বড়ো চোখে তাকাল স্বামীর পানে,

“কি হলো?”

“পাগল হয়েছেন? এটা অফিস এবং মিটিং রুম। বাইরে রূশি দাঁড়িয়ে আছে! যখন তখন ভিতরে চলে আসতে পারে!”

“ও তাই তো , মেয়ের বাবা হয়ে গেছি,এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আমার!”

চলবে......

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

 #অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে #২য়_পরিচ্ছেদ #রুদ্রিকা_বেদীপর্ব - ০১[🚫পর্বটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষদের জন্য 🚫]“এই কে রে, আমার ন...
14/10/2025

#অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে
#২য়_পরিচ্ছেদ
#রুদ্রিকা_বেদী
পর্ব - ০১

[🚫পর্বটি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষদের জন্য 🚫]

“এই কে রে, আমার নানু ভাইয়ের পিছনে লেগেছে?”

রূপকথা তেজের সাথে তার কথা বলা শেষ করতে রুমের ভিতর থেকে একটা ভারী এবং ভাঙ্গা গলা ভেসে আসলো। পর মূহুর্তে ঘর থেকে উইট চেয়ারে একজন পঁয়ষট্টি থেকে সত্তর বছরের মাঝে বেরিয়ে আসলেন। মাথায় চুল নেই বললেই চলে,যা আছে তাও পাকা। বয়সের চাপে শরীরের চামড়া সব ভেঙ্গে গেছে। চোখে গোল ফ্রেমের পাওয়ারের চশমা! লোকটি সাদা রঙের পাঞ্জাবি আর পায়জামা পড়ে আছে। দুইবার স্ট্রোক করার কারণে পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন তিনি,

“এই যে আরেকজন আসলেন। তোমাদের দুজনের জন্য আমার মেয়েটা বাদর হচ্ছে!”

“বলো নানু!”

রূশি আধো আধো স্বরে চেঁচিয়ে সাদাফের কোল থেকে লাফ দিয়ে দৌড়ে উইল চেয়ারে বসে থাকা লোকটার কাছে গেলো। লোকটি হাত বাড়িয়ে রূশিকে কোলে তুলে নিলো। রূশি লোকটা গলা জড়িয়ে ধরল।

সাদাফ মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালো। রূপকথা, উইল চেয়ারে বসে থাকা লোকটা আর রূশির কাছ থেকে বিদায় জানিয়ে বলল,

“নানু, তুমি এসেছ এখন আমি রূশিকে রেখে যেতে পারি, নাহলে রূপকথার হাতে তুলে দিলে রূশিকে আর আস্তো পাওয়া যাবে না!”

সাদাফের কথায় উইল চেয়ারে বসে থাকা লোকটা খিলখিল করে হেসে উঠলো। রূশি মুখে হাত দিয়ে হাসলো,অন্য দিকে রূপকথা সাদাফের দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে উঠলো, সাদাফ সেই দিকে চেয়ে ভয় পাওয়ার মতো ভাব করে বলে,

“আচ্ছা আমি যাই! আমার গার্লফ্রেন্ড অপেক্ষা করছে, আজকে ডেটে যাবে বলেছে, দেরি করলে টিনা আমার দুই গালে দুটো থাপ্পর মারবে....!”

“তুমি টেনা আন্টিকে কুবে বিয়ে কলবা...?”

রূশি চোখ বড়ো বড়ো করে জিজ্ঞেস করল। তার শব্দ উচ্চারণ শুনলে রূপকথার গম্ভীর চেহারাটাও হাস্যোজ্জ্বল হয়ে আসে। রূপকথা নিজের হাসি সামলিয়ে বলে,

“ওটা টেনা আন্টি হবে না রূশি,ওটা টিনা হবে!”

রূশি চোখ মুখ চোখ মুখ কুঁচকে মায়ের দিকে তাকায়। রূপকথা চোখ পাকিয়ে উঠার আগে সাদাফ বলে,

“তুই যেদিন বিয়ে করবি, সেদিন তোর সাথে তোর টেনা আন্টির সাথে আমি বিয়ে করবো!”

সাদাফের কথায় রূশি লজ্জা পেয়ে উঠে। সে লজ্জায় বড়ো নানুর কাঁধে মাথা হেলিয়ে দিলো। তার আদুরে ভাব দেখে সবাই এক প্রস্থ হেসে নিলো। সাদাফ রূশিকে আদর করে উইল চেয়ারে বসে থাকার লোকটা সালাম জানিয়ে বেরিয়ে গেলো।

সাদাফ যেতেই রূপকথা কড়া কন্ঠে রূশিকে আদেশ দিলো,

“রূশি অনেক খেলাধুলা হয়ে যাও এখন পড়তে বসো!”

“ম্যাম্মা,আল এতটু খেলি!”

“না,আর না,পড়তে যাও!”

রূশি ঠোঁট ফুলিয়ে কাতর দৃষ্টিতে তার বড়ো নানুর দিকে তাকালো। বড়ো নানুও ঠোঁট উল্টিয়ে চোখ পিটপিট করতে করতে বলে,

“যাও নানু ভাই! এখন পড়ো রাতে ডিনারের পর অনেক খেলবো!”

রূশি কিছু বলল না। সে নারাজ হয়ে বড়ো নানুর কোল থেকে নেমে দাঁড়ালো। মুখটা নিচু করে মায়ের কাছে যেয়ে দাঁড়ালো। রূপকথা মেয়ে দিকে তাকিয়ে ভীষণ মায়া হলো। সে হাঁটু গেড়ে বসে মেয়ের দুই গালে দুটো চুমু খেয়ে,রূশির মুখ তুলে ধরে বলে,

“যাও মা! এখন পড়তে বসো তারপর আমিও তোমার সাথে খেলবো!”

রূশি উৎফুল্ল হয়ে গেলো। সে মায়ের দিকে হাসি মাখা মুখে তাকিয়ে বলে,

“ছত্যি..?”

“তোমার মা বলেছে মানে বলেছে! আমি খেলবো!”

“ইয়াপপপ....”

বলে রূশি রূপকথাকে জড়িয়ে ধরে। রূপকথা মেয়েকে পরম আদরে ভরিয়ে দিলো। রূশি এবার তার বড়ো নানু আর মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। রূপকথা উঠে দাঁড়ালো। রূশি রুমে যাওয়া মাত্র তার মুখের হাসির গায়েব হয়ে গেলো। সে কিচেনের দিকে যাবে তার আগে উইল চেয়ারে বসে থাকা লোকটা নরম স্বরে ডাকলো,

“রূপ!”

“হ্যাঁ নানু।”

রূপকথার নানু মিস্টার রেওয়াজ শাহাবুদ্দিন খান! তিনি বাংলাদেশ এবং ইংল্যান্ডের অন্যতম বড়ো বিজনেস ম্যান। রূপকথার রেওয়াজ সাহেব গম্ভীর মুখে চেয়ে বললেন,

“এইদিকে এসে বস!”

“হুম বলো!” রূপকথা হাঁটু ভাঁজ করে মেঝেতে বসলো।

রেওয়াজ সাহেব নাতনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন,

“কি হয়েছে তোর? মুড অফ কেন?”

“কাল আমার আর রূশির পাপার বিবাহ বার্ষিকী! চারটা বসন্তের মাঝে একটাও তার সাথে কাটাতে পারলাম না!”

“বোকা, এর জন্য মন খারাপ করে!”

“মন খারাপ করবো না তো কি করবো নানু! তোমরা তো সব আমাকে দাবার গুটি বানিয়ে রেখেছো! যখন যে আসে তখন সে নিজের সুবিধার মতো চালিয়ে যায়! তুমিও তো তার মধ্যে একজন নানু!”

রূপকথা অশ্রু নয়নে বলে উঠলো। বলতে যেয়ে গলা কাঁপছিল তার। নাতনীর এমন আচরণেও রেওয়াজ সাহেবের দৃঢ় ব্যক্তিতে কোনো পরিবর্তন আসলো না। সে মুচকি হেসে বলে,

“হুম মানছি তুই দাবার গুটি কিন্তু আমি তোকে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করেনি মা!”

“চুপ করো তুমি! স্ট্রোকের কথা শুনে আমি এখানে আসলাম! তোমাকে সুস্থ করলাম তারপর আমাকে আর যেতে দিলে না কেন?”

রেওয়াজ সাহেব নাতনীর কথা শুনে হাসলেন। চোখ থেকে চশমাটা খুলে ধরলেন। চশমা পরিষ্কার করতে করতে বললেন,

“তোর বর যেটা করেছে সেই হিসেবে একটু তো শাস্তি প্রয়োজন! আমি শুধু তাকে সেটাই দিচ্ছি!”

“চার বছর দূরে থাকা,এটা একটু শাস্তি নানু?”

“অবশ্যই! তুই নিজেকে যতটাই অভাগী মনে করিস না কেন, তুই তো শেহজাদী, তোর বাবার বংশ বলো আমার বংশ বলো তুই একমাত্র উত্তরাধিকারী এই সবের! সেই শেহজাদীর বর যদি নিজের প্রথম স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে ভাবে,আমি আমার আজকের জীবন সঙ্গীকে ভালোবাসি কিনা মনে সেই প্রশ্ন জাগে তখন তার কাছ থেকে একটু হলেও দূরত্ব তৈরি করা উচিৎ!”

“তাই বলে চারবছর?”

রূপকথার কন্ঠে অভিমান ফুটে উঠলো। রেওয়াজ সাহেব প্রশ্নটা শুনে মিটমিট করে হাসলেন। তিনি এই চার বছরে রূপকথাকে অনেক শক্ত করে তুলেছেন। নিজের পায়ে চলতে শিখিয়েছেন কিন্তু সব পরিবর্তন হলেও অনুভূতি তো পরিবর্তন হয়না। রেওয়াজ সাহেব জানেন রূপকথা তার স্বামীকে কতোটা ভালোবাসে। চোখেই তো প্রকাশ পায় তবে মাঝে মধ্যে রাগও দেখা যায় রূপকথার ওই চোখে! রাগটা এই কারণে,যে শিশির কেন তাকে ভালোবাসতে পারলো না! রেওয়াজ সাহেব হাতের চশমাটা চোখে দিতে বললেন,

“তুই যখন হলি, তার কিছুক্ষণের মাথায় তোর মা,মানে আমার মেয়ে মারা যায়। একমাত্র সন্তান আমার! কষ্ট যেমন হচ্ছিল খুশিও হচ্ছিল, একজন গেছে তো কি হয়েছে তার অংশ তো থেকে গেছে, তোকে যখন প্রথম দেখলাম,তখনই বুঝতে পেরেছিলাম তুই কোনো রূপকথার পরিদের থেকে কম নইস! রেখে দিলাম রূপকথা। তোর বাবাকে বললাম, আমার নাতনীকে নিয়ে যাই আমার সাথে,না তিনি দেবেন না! তার বউয়ের শেষ চিহ্ন,কিভাবে ছাড়ে? জোড় করতে পারলাম,তোর দাদী হাত জোড় করে তোকে ভিক্ষা চাইল আমার কাছে! রাজি হলাম তোকে বাংলাদেশে রেখে আসতে! কিন্তু তাই বলে যে তোর ব্যাপারে খবর রাখতাম না এমন নয়। তোর প্রত্যেকটা পদক্ষেপ আমি নিজের নজরে রাখতাম। তোর সৎ মায়ের আচরণ সম্পর্কেও আমি জানতাম,তাই তোকে নিতে গেছিলাম কিন্তু তখনো তোর বাবা বাধ সাধে, মেয়েকে সে দেবে না! ভাবলাম অন্য উপায় তোকে সরিয়ে আনবো কিন্তু তার মধ্যে তোর আর আহসান ইন্ড্রাস্ট্রির একমাত্র উত্তরাধিকারী এবং বর্তমানের মালিক আর্শিয়ান আহসান শিশিরের সাথে বিয়ে ঠিক হলো! আমি খুশিই হলাম! শিশিরের অতীত সম্পর্কে আমি সব জানতাম কিন্তু ওতোটা মাথা ঘামায়নি! পাঁচ বছর তো হয়ে গেছে , শিশির তার অতীত সম্পর্কে হয়তো সব ভুলে গেছে কিন্তু আমার ধারণা ভুল হলো.....!”

থামলেন রেওয়াজ সাহেব। রূপকথা চোখ জলে ভরে উঠেছে। রেওয়াজ সাহেব রূপকথার চোখের জল মুছে আবারও বলতে শুরু করলেন,

“সবই ভালো চলছিল, কিন্তু একদিন শিশির তোর সতীনকে দেখতে পেলো!”

রূপকথার মুখ ফুলে উঠলো। সে বুঝতে পাচ্ছে নানু ইচ্ছে করে পিছনে লাগছে সতীন শব্দটা উচ্চারণ করে,

“পুরাতন স্ত্রীকে দেখে তার মনে হলো ,সে এখনো তার আগের স্ত্রীকেই ভালোবাসে! তাহলে বর্তমানে যে রয়েছে তার অবস্থান কোথায়? তুই বুঝতে পারলি সবকিছু, অভিমান করলি, কান্না কাটি শুরু করলি! আর এই দিকে সব খবর পেয়ে যেন আমার শরীর খারাপ হতে লাগলো, এতোটাই অসুস্থ হয়ে পরলাম তোর চিন্তায় স্ট্রোক হয়ে গেলো, ডাক্তার বলল হয়তো আর বাঁচবো না, শেষ ইচ্ছা স্বরূপ তোকে নিয়ে আসার হুকুম দিলাম! আর এই আদেশ পালন করলো সাদাফ! তুই আসলি, তোকে দেখে যেন জান ফিরে পেলাম! মরার ঘর থেকে ফিরে আসলাম কিন্তু পা টা আর চলল না! সুস্থ হওয়ার জানতে পারলাম তুই প্রেগন্যান্ট! আমি তো আবারও মহা আনন্দিত! প্রেগন্যান্ট অবস্থায় তোকে ছাড়ি কিভাবে আর সত্যি বলতে মিস্টার আহসানের প্রতি আমার একটু রাগ আছে, আমার নাতনী কি এতোটাই ফেলনা যে যখন খুশি নিজের বউ বানিয়ে নিবে আবার যখন খুশি ছুঁড়ে ফেলবে? তাই তো আর ফিরে যেতে দিলাম না!.... রূপকথা!”

রূপকথা এতোক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিল। নানুর প্রত্যেকটা কথা সত্য! কথাগুলোর উপর বিচার করার মতো কোনো কারণ নেই। শিশির শেষ মুহূর্তেও তার চোখে চোখ রেখে , 'তাকে ভালোবাসে' এই কথা বলতে পারেনি! কেমন দ্বিধা মধ্যে ছিল সে, এমন মানুষের সাথে সারাজীবন কি সংসার করা যেতো? রূশির উপর কেমন প্রভাব পড়তো?

“রূপকথা?”

আবার ডাকলেন রেওয়াজ সাহেব। রূপকথা এবার সাড়া দিয়ে উঠলো। রেওয়াজ সাহেব মুচকি হেসে বললেন,

“এতো চিন্তা করতে হবে না, আল্লাহ আছেন! যা হচ্ছে সব তার ইশারায়! এবং যা হবে তাও তার ইশারায় তাই শুধু হতে দাও!”

“হুম!”

“আর হ্যাঁ,কাল কিন্তু বাংলাদেশ থেকে অনেক বড়ো বিজনেস ম্যান আসছেন, মিটিং ফিক্স করা হয়েছে! কালকের মিটিং তুই সামলাবি!”

রূপকথা চোখ বড়ো বড়ো করে চাই তার নানুর দিকে। সে ঝটপট উঠে দাঁড়িয়ে বলে,

“নানু তুমি জানো কাল রূশিকে নিয়ে আমি সারাদিন বাইরে থাকবো,এর মধ্যে তুমি, মিটিং কেন ফিক্স করেছো?”

“আরে আমি কি বারণ করছি রূশিকে নিয়ে ঘুরতে, তিন চার ঘন্টার মিটিং শেষ করে রূশিকে নিয়ে যেখানে খুশি ঘুরিস,যদি সাথে এই বুড়ো কে নিতে চাইস তাহলে আমিও একটু মজা করতে পারি!”

“এই বুড়ো বয়সে আর মজা করতে হবে না,আরাম করো!”

বলে খাঁকারি দিয়ে ভিতরে চলে গেলো রূপকথা। রেওয়াজ সাহেব তার যাওয়ার দিকে চেয়ে ঠোঁট টিপে রহস্য ময় হাসলেন,

“কালকে তোর জন্য অনেক বড়ো কিছু অপেক্ষা করছে রূপকথার! আগাম হ্যাপি এনির্ভাসারি!”

_____

লন্ডনের এক বিশাল বহুল হোটেলের কামরায় আর্শিয়ান আহসান শিশির বিশ্রাম করছেন। আজ সকালেই ইংল্যান্ডে এসেছে সে, খান ইন্ড্রাস্ট্রিদের সাথে পার্টনারশিপ বিষয়ে আলোচনা করতে। কাল সকালে মিটিং!

শিশির একটা কালো রঙের ট্রাওজার পরিহিত অবস্থায় কামরার সাদা বিছানার উপুড় হয়ে শুইয়ে আছে। মাসের এই সপ্তাহ আসলেই শিশিরের কেমন আনচান করে। মাথা ছিঁড়ে যেতে চায় যন্ত্রণায়! আর তখনই মনে পড়ে কোমল হাতের স্পর্শ! যেন বিষাদ আরো বাড়িয়ে দেয়। কাল তার আর রূপকথার বিবাহ বার্ষিকী! মেয়েটা আর খুঁজে পেলো না সে! জানতে পারলো না,কেমন আছে! নিশ্চয়ই আরেকটু বুঝতে শিখেছি!

এই কয়টা দিনগুলিতে শিশির বেশি কাজ করে। কোনো রকম রেস্ট ছাড়া পরিশ্রম করে যাতে পুরোনো স্মৃতি তাকে না জ্বালায় কিন্তু কতোটুকু সাফল্য আসে তা শিশিরও ঠিক জানে না.....!

____

সকাল নয়টা।

রূপকথা,রূশি আর রেওয়াজ সাহেব এসে পৌঁছেছেন অফিসে। রূপকথা সম্পূর্ণ কালো আউটফিট বেছে নিয়েছে আজকে। কালো ফর্মাল প্যান্ট, কালো স্কিন টিশার্ট তার উপর জড়িয়ে থাকা কালো ওভার কোর্ট। পায়ে কালো পেন্সিল হিল। চোখে গাঢ় করে কাজল আর বাদামী চুলগুলো টাইট বান করেছে,অন্যদিকে রূশি পড়েছে মায়ের মিনি ভার্সন আউটফিট এবং সাথে নিয়েছে একটা পিংক টেডিবিয়ার!

রূপকথা রূশিকে তার নানুর কাছে দিয়ে মিটিং রুমের দিকে ছুটলো। সাড়ে নয়টায় মিটিং। সে দেরি করার মতো মেয়ে নয়। তার কে মিটিং রুমে যেতে দেখে বাকি কলিগরা তার পিছন পিছন ছুটতে লাগলো। তারা রূপকথাকে রাগী হিসেবেই চেনে। কোনো কিছু এখানে সেখানে হলে রূপকথার অগ্নি মুর্তি দেখা যায় এবং অফিসের বেশিরভাগ ইম্পলয় রূপকথাকে সমঝে চলে ...........

রূপকথার ম্যানেজার দৌড়ে রূপকথার পাশে এসে তার সাথে মিলিয়ে হাঁটা ধরল,

“তারা এসেছেন?” [ইংরেজিতে কথোপকথন হচ্ছে] রূপকথা জিজ্ঞেস করলো।

“হ্যাঁ ম্যাম তারা এসে গেছেন!”

বলে হাতের ফাইল এগিয়ে দিলো। রূপকথা ফাইলটা হাতে নিল কিন্তু খুলে দেখলো না। সে জলদি হেঁটে মিটিং রুমের দিকে এগোলো। পিছন পিছন বাকিরা।
রূপকথা দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই মিটিং রুমে উপস্থিত সবার মধ্যে চাপা ফিসফিসানি বন্ধ হয়ে গেলো। রূপকথা সোজা যেয়ে নিজের সিটের কাছে দাঁড়াল।

তার উপস্থিতিতে সবাই উঠে দাঁড়িয়ে গুড মর্নিং জানালো তাকে। রূপকথা নিজের ডেস্কের উপর ফাইল রেখে মাথা তুলে গুড মর্নিং জানাতে যাবে তার আগেই রূপকথার চোখ থমকে গেলো বিশাল কাঁচের টেবিলের একদম রূপকথা বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটির উপর। লোকটাও যেন থমকে গেছে।

রূপকথা নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না,তার সামনে শিশির দাঁড়িয়ে আছে। রূপকথা ঢোক গেলল। শিশিরের ধারে সানজিদ দাঁড়িয়ে আছে। তার যেন চোখে বিশ্বাসই হচ্ছে না। সে গোল গোল চোখে একবার রূপকথার দিকে তাকায় তো একবার শিশিরের দিকে তাকায়!

শিশির হাতের মুঠো শক্ত টেবিলের উপর রাখলো। তার ভিতর যেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। রূপকথাকে দেখে আনন্দ হচ্ছে আবার আবাকও হচ্ছে,প্রশ্ন জাগছে আবার রাগও হচ্ছে!

____

“বলো নানু...তুমি কালকে আমাকে ....বুরছিলে যে আজ পাপা আছবে! থাহলে পাপা কোথায়?”

রূশি রেওয়াজ সাহেবের কোলে মাথা ঠেকিয়ে ঠোঁট উল্টে প্রশ্নটা করল। রেওয়াজ সাহেব কিছুক্ষণ রূশির দিকে চেয়ে রইল। চেহারা একদম বাবার উপর গেছে। এতো মায়া ভরা চেহারা! দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। রেওয়াজ সাহেব রূপকথার কপালে চুমু খেয়ে হেসে বললেন,

“তোমার পাপা তো চলে এসেছে। মিটিং রুমে তোমার মায়ের সাথে মিটিং করছে! মিটিং শেষ হলে তুমি যেও দেখা করতে!”

“সত্তি বলো নানু?”

“হুম!”

বলে রেওয়াজ সাহেব গাল বাড়িয়ে দিলো। রূশি চার বছর পর তার পাপাকে প্রথমবার দেখার আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলো। সে খিল খিল করে হাসতে হাসতে তার বড়ো নানুর গালে চুমু এঁকে দিলো এবং সাথে চলল হাততালি!

____

অবশেষে মিটিং শেষ হলো। সবাই আস্তে আস্তে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। শুধু বসে আছে তিনজন। রূপকথা শিশির আর সানজিদ। তিনজনের মুখ ফ্যাকাসে। সানজিদ হাসতে চাচ্ছে কিন্তু পরিস্থিতি দেখে আর হাসতে পাচ্ছে না। সে ইতিমধ্যে মুনকে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দিয়ে রূপকথার ব্যাপারে। অপর পাশ থেকে আনন্দে ফেটে পড়ছে মুন।

“সানজিদ, বাইরে যা! তোর ভাবির সাথে আমার কিছু কথা আছে আলাদা!”

শিশিরের আদেশে সানজিদ তাড়াতাড়ি উঠে বাইরে চলে গেলো। রূপকথা অপর দিকে চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে। মনে ভয় কাজ করলেও প্রকাশ করছে না মুখে । সানজিদ বেরিয়ে যেতেই শিশির নিজের জায়গায় ছেড়ে উঠে আসলো রূপকথার দিকে। ধীর গতিতে!

রূপকথা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। শিশিরের এমন কঠিন চাহনি রূপকথার শরীরে শিহরণ বইয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ তার মনে পড়লো রূশির কথা! তাকে দেখলে শিশির কি করবে?

শিশির দুহাত দূরে দাঁড়িয়ে গেলো একটা শব্দে। বাইরে থেকে বাচ্চা গলায় কেউ,ম্যাম্মা ম্যাম্মা বলতে বলতে ভিতরে প্রবেশ করছে।

রূশি তার পিংক টেডিবিয়ার হাতে নিয়ে দরজা টেলে ভিতরে ঢুকলো। তাকে দেখার সাথে সাথে শিশির বিস্মিত হয়ে রূপকথার দিকে তাকালো। রূপকথা অনুভূতি শূন্য দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে চেয়ে আছে!

রূশি দৌড়ে মাঝখানে এসে দাঁড়াতেই চমকে উঠলো। সে শিশিরের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

“পাপা...থুমি এছেছ?”

ছোট বাচ্চাটার মুখে পাপা ডাক শুনে যেন শিশির আকাশ থেকে পড়ল। রূশির দিকে বড়ো বড়ো চোখে তাকাতে লক্ষ্য করল, মেয়েটা অধিকাংশই তার মতো দেখতে! তাহলে কি মেয়েটা তারই সন্তান? শিশির রূপকথার দিকে চেয়ে বলল,

“ইজ সি...?”

“ইয়েস, ইউর চাইল্ড রূশি!”

শিশির প্রশ্ন শেষ করার আগেই উত্তর দিলো রূপকথা। শিশির হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল রূশির সামনে। রূশি তার বাবাকে চিনলেও তার বাবা এই প্রথম তার সন্তানের অস্তিত্ব টের পেলো। শিশির আর কিছু ভাবতে পাচ্ছে না। সে তার রূশি সোনাকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরল।

রূপকথা পিছনে সরে আসলো। এখানে তার কোনো হস্তক্ষেপ দরকার নেই। মেয়ে বাবা চার বছর পর প্রথম বারের জন্য একে অপরকে দেখলো। একে অপরের ভালোবাসায় মিশে যাক দুজন!

___

শিশির রূশি অনেক একে অপরের সাথে কথা বলল। শিশির খেয়াল করল রূশি তার সম্পর্কে সব কিছু জানে। রূশি তার দাদীর সম্পর্কেও সব জানে। বিষয়টি জেনে শিশির রূপকথার দিকে আড়চোখে তাকায়। রূপকথা ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।

“রূশি মা আমার, তুমি একটু বাইরে যাও, তোমার মায়ের সাথে আমার একটু কথা আছে!”

“ওত্তে পাপা..আমি বাইরে যাচ্ছি। বাই পাপা,,বাই ম্যাম্মা…।”

শিশিরের কোল থেকে নামতে নামতে বিদায় নিলো। রূপকথা মেয়ের কাছে যেয়ে মাথায় আদরে বলল,

“বড়ো নানুর কাছে যেয়ে খেলা করো। আমি আসছি।”

রূশি মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো। রূশি চলে যেতেই শিশির রূপকথার হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে নিলো। প্রবল বেগে রূপকথার দুই হাত পিছনে আবদ্ধ করে দেওয়ালের সাথে ঠেসে ধরল। দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকতেই রূপকথা নিঃশ্বাস বেড়িয়ে আসলো। শিশির তার ডান হাত রূপকথার গলার কাছে নিয়ে আলতো ভাবে চেপে ধরল। রূপকথা ঢোক গিলে শিশির চোখে চোখ রাখে।

শিশির তার মুখটা রূপকথার ঠোঁটের একদম নাগালে আনলো। রূপকথার শরীর অবশ হয়ে আসছে। চার বছর পর স্বামীর এমন তীক্ষ্ণ ছোঁয়ায়! শিশিরের গরম নিঃশ্বাস রূপকথার বুকের উপর আছড়ে পড়ছে। রূপকথা ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে।

শিশির রূপকথার গোলাপী চিকন ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো। সাথে চলতে শুরু করল তার হাত। স্বভাবত রূপকথার সারা অঙ্গে শিশির তার অস্তিত্ব ফেলছে। রূপকথার নড়ার মতো শক্তিটুকু নায়। সে শুধু শিশিরের ঠোঁটের অনুভূতি নিচ্ছে....

কিছুক্ষণ একই ভাবে ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে রেখে শিশির রূপকথার গলায় কাছে মুখ নামিয়ে আনলো। শিশির বুঝছে পাচ্ছে রূপকথা কাঁপছে কিন্তু তাতে মাথা না ঘামিয়ে রূপকথার গলায় কামড় বসিয়ে দেয়, ব্যাথায় রূপকথা শব্দ করে উঠে। তীব্র যন্ত্রণায় চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসতে চাইলো।

“হ্যাপি এনিভার্সারি সোনা!”

“হুম!”

চলবে....

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

14/10/2025

#অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে
#২য়_পরিচ্ছেদ [০১]
#রুদ্রিকা_বেদী
#স্পয়লার_এলার্ট

[🚫 প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষদের জন্য পর্বটি 🚫]

রূশি চলে যেতেই শিশির রূপকথার হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে নিলো। প্রবল বেগে রূপকথার দুই হাত পিছনে আবদ্ধ করে দেওয়ালের সাথে ঠেসে ধরল। দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকতেই রূপকথা নিঃশ্বাস বেড়িয়ে আসলো। শিশির তার ডান হাত রূপকথার গলার কাছে নিয়ে আলতো ভাবে চেপে ধরল। রূপকথা ঢোক গিলে শিশির চোখে চোখ রাখে।

শিশির তার মুখটা রূপকথার ঠোঁটের একদম নাগালে আনলো। রূপকথার শরীর অবশ হয়ে আসছে। চার বছর পর স্বামীর এমন তীক্ষ্ণ ছোঁয়ায়! শিশিরের গরম নিঃশ্বাস রূপকথার বুকের উপর আছড়ে পড়ছে। রূপকথা ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে।

শিশির রূপকথার গোলাপী চিকন ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো। সাথে চলতে শুরু করল তার হাত। স্বভাবত রূপকথার সারা অঙ্গে শিশির তার অস্তিত্ব ফেলছে। রূপকথার নড়ার মতো শক্তিটুকু নায়। সে শুধু শিশিরের ঠোঁটের অনুভূতি নিচ্ছে....

কিছুক্ষণ একই ভাবে ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে রেখে শিশির রূপকথার গলায় কাছে মুখ নামিয়ে আনলো। শিশির বুঝছে পাচ্ছে রূপকথা কাঁপছে কিন্তু তাতে মাথা না ঘামিয়ে রূপকথার গলায় কামড় বসিয়ে দেয়, ব্যাথায় রূপকথা শব্দ করে উঠে। তীব্র যন্ত্রণায় চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসতে চাইলো।

“হ্যাপি এনিভার্সারি সোনা!”

___

 #অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে #রুদ্রিকা_বেদী #পর্ব_৩৯ িচ্ছেদবাইরে বিকট শব্দে বজ্রপাত হতেই রূপকথা চমকে উঠলো। তার বুক থরথর কেঁ...
13/10/2025

#অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে
#রুদ্রিকা_বেদী
#পর্ব_৩৯
িচ্ছেদ

বাইরে বিকট শব্দে বজ্রপাত হতেই রূপকথা চমকে উঠলো। তার বুক থরথর কেঁপে কাঁপছে। পেটের উপর হাত রেখে আদুরে আর অনুশোচনার মতো কন্ঠ করে বলে,

“সরি বাচ্চা! আমি জানি তুই ভয় পেয়েছিস! কিন্তু ভয় পাইস না আমি আছি তোর সাথে! মা থাকতে কখনো কোনো ভয় নাই।”

এমন সময় দরজার ঠেলে বাইরের থেকে রুমে ঢুকলো চিত্রা। হাতে তার মিষ্টির বাক্স। বাক্সটি রূপকথার দিকে এসে মুখের উপর ধরল। রূপকথা বিস্মিত দৃষ্টিতে বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বলে,

“এটা কী?”

“মিষ্টি! এতো বড়ো একটা খুশির খবর দিলি, মিষ্টি মুখ করতে হবে না?”

“তোকে বলেছিলাম,এখনই কাউকে কিছু বলতে হবে না, তুই সেই বলে দিলি!”

“কে বলেছে?”

চিত্রা বাম দিকের ভ্রুটা নাচিয়ে নাচিয়ে দাঁত বের করে হাসলো। রূপকথা ভ্রু কুঁচকে বলল,

“মানে?”

“মানে, তুই আমাকে কিছু বলেছিস আর আমি সেটা শুনবো না সেটা কখনো হয়েছে!? এই মিষ্টি আমি লুকিয়ে এনেছি!”

বলে মিষ্টির বাক্স খুলে ধরল রূপকথার চোখের সামনে। মিষ্টির দিকে তাকাতেই রূপকথার হঠাৎ বমি এসে গেলো। সে জলদি ওয়াশ রুমে চলে গেলো।

চিত্রা বেচারী অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মিষ্টির দিকে একবার তাকালো আবার ওয়াশ রুমের দরজার দিকে চেয়ে রইল। মিষ্টি দেখে কালো বমি চলে আসতে পারে,সে জানতো না।

রূপকথা ফ্রেশ হয়ে চোখে মুখে জল ছিটিয়ে বেরিয়ে এসেছে। সে প্রচুর পরিমাণে ঘামছে। সেই দিকে লক্ষ্য করে চিত্রা চটজলদি টিস্যু পেপার দিয়ে হাওয়া করা চালু করল। ঘরে এসি চললেও ঠিক সুবিধা হচ্ছে না, রূপকথার জন্য। রূপকথা হাঁপাতে হাঁপাতে বিছানায় বসলো। চিত্রা চিন্তিত মুখে রূপকথার পাশে বসলো। মাথা হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,

“ডাক্তার ডাকবো,কথা!?”

“ডাক্তার ডাকতে হবে না, তুই মিষ্টির প্যাকেটটা সরা!”

রূপকথা রাগী স্বরে বলল। চিত্রা একটু অবাক হয়ে তাড়াতাড়ি রূপকথার কথা মতো হাতের মিষ্টির প্যাকেটটা সরিয়ে রাখল পাশে।

“সরিয়েছি! এখন বল, শরীর ঠিক লাগছে নাকি...!”

“চিন্তা করতে হবে না বেশি, মিষ্টি দেখে গা গুলিয়ে উঠেছিলো,তাই একটু বমি বমি লাগছিল!”

প্রেগন্যান্সির অবস্থা এমনটা হওয়া স্বাভাবিক,চিত্রা বিষয়টা জানে। তার খালাতো বোন যখন প্রেগন্যান্ট হয়েছিল, তখন পুরো বাড়ি মাথা তুলতো তার মুড সুইংয়ের চক্করে! কিছু কিছু খাবার দেখলে আপনা আপনি বমি চলে আসতে, আবার বিনা কারণে যে খাবার গুলো নিজের সারাজীবনে দেখলে মুখ কুচকিয়ে নিতো সেই খাবার গুলো খেতে ইচ্ছে করে। কোনো কারণ ছাড়া কান্না পায়, নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করে।

চিত্রা তাই বেশি টেনশন নিলো না। হাতের টিস্যু পেপার রূপকথার হাতে গুঁজে দিয়ে বলল,

“মুখটা মুছে নে, কথা!”

“হুম!”

“আচ্ছা দুলাভাইয়ের সাথে তোর কি কোনো সমস্যা হয়েছে?”

রূপকথা হবে মাত্র টিস্যু পেপারটা মুখের কাছে এনে ছিলো মুখ মোছার জন্য,চিত্রার শুকনো কন্ঠে করা প্রশ্নটা রূপকথাকে থমকে দিলো। রূপকথা অপ্রস্তুত হয়ে উঠলো। আড়চোখে চিত্রার দিকে চাইলো। আরোষ্ট কন্ঠে রূপকথা বলল,

“না, আসলে....!”

রূপকথা থেমে গেলো। বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠেছে। ঘরের বাইরে থেকে সাথে সাথে চিত্রা মায়ের গলা ভেসে এলো,

“চিত্রা, দরজাটা খোল তো, দেখতো কে এসেছে!”

মায়ের কথায় বেশ বিরক্ত হলো চিত্রা। সে ভ্রু কুঁচকে উঠে দাঁড়ালো। রূপকথার দিকে তাকিয়ে বলল,

“তুই বসে থাক, আমি যেয়ে দেখে আসছি!”

বলে চিত্রা বেরিয়ে গেলো । চিত্রা বেরিয়ে যেতেই রূপকথা হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। কথা গুলো গলার কাছে এসে আটকে গিয়েছিল তার। কিভাবে বলবে,তার প্রিয় বান্ধবীকে, তার জীবন কীভাবে উলটপালট হয়ে গেছে?

____

চিত্রা বিরক্ত মুখে এগিয়ে গেলো দরজার কাছে। বাড়ির সবাই নিজেদের ঘরে রয়েছে। চিত্রা মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলো,

“এই বৃষ্টি বাদলের মধ্যে আবার কার এই বাড়িতে আসতে হচ্ছে?”

বিড়বিড় করে সে দরজা খুলল। বিরক্ত মুখে সামনে তাকাতেই চিত্রার চোখগুলো বড়ো বড়ো হয়ে উঠলো। নিঃশ্বাস আটকে আসলো তার। দরজার মুখে যে দাঁড়িয়ে আছে তাকে চিত্রা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি। চিত্রা বিস্মিত কন্ঠে শুধুমাত্র একটা নাম উচ্চারণ করল,

“সাদাফ...!!!”

____

সাত দিন হতে চলেছে শিশির রূপকথার কোনো খোঁজ পায়নি। ফোন পর্যন্ত তুলছে না। মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করলেও শারমিন আহসান এড়িয়ে যাচ্ছে।

এই সাত দিন শিশির ঠিক মতো ঘুমোতে পারেনি। তার চোখ মুখ ফুলে উঠেছে। এরসাথে বেড়েছে তার ড্রিংক করার অভ্যাস। যে অভ্যাস রূপকথার আসার পর প্রায় ভুলতে বসেছিল,সে অভ্যাসকে আবারও আপন করে নিয়েছে রূপকথার অনুপস্থিতি ভোলার জন্য কিন্তু বেশি সুবিধা হচ্ছে না বললেই চলে। নেশা হলেও রূপকথার মুখ চোখের সামনের থেকে সরতে চাচ্ছে না। প্রত্যেকটা মুহূর্ত রূপকথার জন্য জ্বলছে শিশির,

অন্য দিকে শারমিন আহসানও অস্থির হয়ে উঠেছে। রূপকথার যে এতোদিনে ফিরে আসা উঠিত ছিল কিন্তু তার তো কোনো খবরই পাচ্ছে না। ফোনে কল করলে সংযোগের বাইরে দেখাচ্ছে। শারমিন আহসান শিশির কে না জানিয়ে আশরাফ চৌধুরীকে কল করেছিল, রূপকথা চৌধুরী বাড়িতে গেছে কিনা জানার জন্য। আশরাফ চৌধুরী চিন্তিত স্বরে বলেছেন, রূপকথা চৌধুরী বাড়িতে যায়নি! তারপর তিনি মেয়ের লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার খবর শুনে বেশ ঘাবড়ে গেছিলো কিন্তু শারমিন আহসান প্রায় মিথ্যা কথা বলে বিষয়টা সামলিয়েছে। রূপকথা তাকে বলে গেছিলো,সে চিত্রাদের বাসায় যাবে কিন্তু সে চিত্রার সমন্ধে কিছু জানে না বললেই চলে। বাসাটা কোথায় তাও ঠিক বলতে পারবে না !

শারমিন আহসান চিন্তিত চাহনিতে হল রুমের সোফায় বসে আছেন। তার যে সত্যি এখন অনেক ভয় করছে রূপকথার জন্য। কোথায় গেলো মেয়েটা?

এমন সময় শিশির উপর নিচে নামছে। তার চোখ মুখে কোনো অনুভূতি নেই। ফ্যাকাসে চাহনি। সে মায়ের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে নামছেন। ছেলের ওমন দৃষ্টি দেখে শারমিন আহসান একটু অপ্রস্তুত হলেন। তিনি সোজা হয়ে বসলেন। কোনো ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।

শিশির সোজা এসে শারমিন আহসানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো। মায়ের কোলে মাথা দিলো। শারমিন আহসান প্রথমে চমকে উঠলেও পরমুহূর্তে সন্তানের কষ্টে নিজেও কষ্টে পেলেন। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে স্নেহ মাখা কন্ঠে বললেন,

“তোর শরীর তো এখনো গরম। যা একটু বিশ্রাম নে!”

“মা আমার রূপকথা কোথায়?”

শারমিন আহসানের কথা যেন শিশিরের কানে গেলো না। সে মাতালেন মতো নিচু কন্ঠে মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করল প্রশ্নটা। শারমিন আহসানের কান্না পাচ্ছে। পাঁচ বছর আগেও এমন অবস্থা হয়নি শিশিরের আজ যতটা হচ্ছে। ঠোঁট কামড়ে ধরনের। কান্নায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে,

“মা, আমি রূপকথা ছাড়া বাঁচব না! তুমি বলো আমার রূপকথা কোথায়!?”

“আমি জানি না রে বাবা!”

“তুমি সব জানো, তুমি আমাকে বলছো না!”

শিশির গর্জে উঠলো। শারমিন আহসানের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে উঠলো‌। শিশির মায়ের চোখে চোখ রেখে বলে,।

“তুমি কি চাও মা, তোমার ছেলে মারা যাক? কেন করছো আমার সাথে এমন? রূপকথা কোথায়?”

“আমি সত্যি জানি না! ও শুধু আমাকে বলেছে ওঁর বান্ধবীর বাড়ি যাচ্ছে!”

শারমিন আহসান আর চুপ করে থাকতে পারলেন না। ছেলের আকুতি মিনতি কোনো মাই ফেলে দিতে পারে না।

“কোন বান্ধবী?” শিশির চোখ জ্বলে উঠলো।

“চিত্রা!”

___

রাত আটটা। শিশির বেরিয়ে পড়েছে চিত্রার বাড়ির উদ্দেশ্যে। চিত্রার বিষয় শিশির কিছু জানতো না তাই তার বেশ সময় লেগেছে চিত্রার বাসার ঠিকানা জোগাড় করতে। তবে সানজিদের সোর্সের কারণে বিষয়টা আসলে একটু সহজ হয়ে গিয়েছে। থ্যাংকস টু মুন। তার কাছে চিত্রার আইডি ছিলো সেখান থেকে এড্রেস নিয়েছে।

চিত্রার বাসা বেশি দূর নয়। আধা ঘন্টার পথ তবে শিশিরের ড্রাইভিং আর রাস্তায় জ্যাম না থাকায় প্রায় দশ আগেই পৌঁছে গেলো চিত্রার বাসার সামনে!

তিনতলা বিশাল দালানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শিশির। বাইরে দারোয়ান শিশিরের পরিচয় জেনে ভিতরে যেতে দিলো। এখানে শিশির তার বিজনেস ম্যান হিসেবে পরিচিত দিয়েছে যার জন্য বেশি ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়নি।

দরজা সামনে দাঁড়িয়ে একটু ইতস্তত করে কলিং বেল বাজালো। টেনশন হচ্ছে তবে উৎসাহ বেশি, অবশেষে রূপকথাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। পুরো ঢাকা শহরে এই সাত দিনে চষে নিয়েও রূপকথাকে পায়নি। শেষ মেষ রূপকথার ঠিকানা জানতে পারলো।

একমিনিটের মাথায় দরজা খুলে গেলো। চিত্রাই দরজা খুলেছে। শিশির চিন্তা না পারলেও চিত্রা ঠিকই চিনতে পেরেছে যার কারণে তার চাহনিতে পরিবর্তন এসে গেছে। বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেমে থেমে বলে,

“আপনি?”

“চিত্রা!?”

“জ্বি!”

“রূপকথা কোথায়?”

“কথা এখানে নেই!”

“মিথ্যা বলো না, আমি জানি ও এখানে!”

“ছিলো, তবে এখন নেই!”

“মানে...!?”

শিশির থমকে গেলো। চিত্রার এই কথা সে মোটেও আশা করেনি। চিত্রা ঢোক গিলে নিজেকে সামলিয়ে বলে,

“চারদিন হয়েছে কথা এখান থেকে চলে গেছে!”

“কোথায় গেছে রূপকথা!?”

“সেটা আমি বলতে পারবো না। রূপকথা যাওয়ার আগে আমাকে বারন করে গেছে আপনাকে কিছু বলতে!”

শিশিরের মাথা ঘুড়ে উঠলো।সে নিজেকে কোনো রকম সামলালো। অবিশ্বাস্যের চোখে চিত্রার দিকে তাকায়। চিত্রা স্তম্ভিত চাহনিতে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। তার আর কিছু বলার নেই। সে শিশিরের সাথে আর কিছু না বলে দরজা লাগিয়ে দিলো।

শিশির স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। তার বিশ্বাস হচ্ছে না কথাটা। কোথায় গেছে তার রূপকথা?

আকাশে মেঘ চমকে উঠলো। বর্ষা আসবে। বিষাদের বর্ষা! বিচ্ছেদের অশ্রু ধারা......!

____

চার বছর পর,

লন্ডন,

“রূশি... দাঁড়া বলছি!”

“আমি...দালাবু না ম্যাম্মা...!”

রূশি দৌড়াচ্ছে। রূপকথা তার পিছন পিছন। রূশি তার ছোট্ট ছোট্ট পায়ে দৌড়ে লিভিং রুমে ঢুকলো। দৌড়ে সোফায় কালো উলের সোয়েটার পড়ে বসে তাকা ব্যক্তিটির কাছে ছুটে গেলো,

“ড্যাড্যা.. বাঁচাও..ম্যাম্মা বুকচে!”

লোকটা ঝটপট রূশিকে কোলে তুলে নিলো। কপালে আদর করে রূপকথার দিকে তাকালো।

“উফ্! রূপকথা আমার বেবির পিছনে তুমি আবার লেগেছ?”

“সাদাফ থামো তুমি! মেয়েটা তুমি মাথায় চড়িয়ে রেখেছো! আমার একটাও কথা শোনে না...!”

১ম পরিচ্ছেদ সমাপ্ত.....

চলবে......

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

Address

Jessore

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share