রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi ✒️সাহিত্য, ভালোবাসা, অভিমান, অভিনয়, সবকিছু থাকুক একটু আকটু রুদ্রির কলমে;

মন ভালোর ওষুধ হোক, প্রিয় মানুষের সুখ হোক রুদ্রির রূপকথার ছোঁয়াতে;📖📚

 #অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে #রুদ্রিকা_বেদী #পর্ব_১২,,,গাড়ি এসে থেমেছে আহসান মহলের সামনে। রূপকথা শিশিরের দিকে তাকিয়ে লজ্জ...
27/07/2025

#অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে
#রুদ্রিকা_বেদী
#পর্ব_১২
,
,
,
গাড়ি এসে থেমেছে আহসান মহলের সামনে। রূপকথা শিশিরের দিকে তাকিয়ে লজ্জা মাখা মুখটা নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। সে দৌড়ে বাড়ির ভিতর চলে গেল। শিশির সেই দিকে চেয়ে মুচকি হাসে। সেও সিটবেল্ট খুলে নেমে পড়ল গাড়ি থেকে। আজকের পরিবেশটা ভারি সুন্দর।‌ আকাশে ঝলমলে রোদ হওয়ার সত্তেও আজ যেন রোদ গায়ে লাগছে না। তার সঙ্গে ঠান্ডা বাতাস বয়ে চলেছে। এমন পরিবেশ দেখতে পাওয়া এখন বড়োই দুর্লভ!

শিশির বাড়িতে প্রবেশ করল। সে লিভিং রুমে যেতেই দেখলো রূপকথা দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখের উজ্জ্বল ভাবটা হারিয়ে গেছে। তার সামনে শারমিন আহসান খুশি খুশি মনে কি সব বলছেন। শিশির এগিয়ে গেলো। রূপকথার পাশে দাঁড়ালো। শিশিরকে দেখে শারমিন আহসান ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। সে উঠে দাঁড়ালেন। ছেলেকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বললেন,

--“তুইও চলে এসেছিস! সূর্য দেখছি সত্যিই এখন পশ্চিম দিক দিয়ে উঠা শুরু করবে!”

বলে হো হো করে হেসে উঠলেন। শিশির কোনো জবাব দিলো না। সে রূপকথার দিকে একবার চাইলো। তার দৃষ্টি মেঝেতে। মুখের চাহনি শিশিরের কাছে ভালো ঠেকলো না।

--“তার ভালোই করেছিস! তুই না আসলে তোকে কলই করতাম!”

শিশির মায়ের দিকে তাকায়। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,

--“কেন?”

--“বেয়ান ফোন করেছিলেন! তোদের আজ রাতে ওনাদের ওখানে ডিনারে ডেকেছেন!”

শিশিরের মুঠো শক্ত হয়ে উঠলো। সে এতোক্ষণে বুঝলো রূপকথার শূন্য চাহনির রহস্য। সে মায়ের দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

--“আমরা যাবো না!”

শিশিরের মুখে না শব্দটি শুনতে শারমিন আহসানের হাসি গায়ের হয়ে গেলো। সে ভ্রু কুঁচকে ছেলের দিকে তাকালো। তারপর বলল,

--“কিন্তু বাবু, আমি তো বলে দিয়েছি যে তোর আজ রাতে ওখানে যাবি!”

মায়ের কথায় শিশিরের চাহনিতে কোনো ভাবান্তর হলো না,সে যেমনটা আগে চেয়ে ছিল ঠিক তেমনি এখনো চেয়ে আছে। তার চোখের দৃষ্টি শান্ত,তবে কঠোরতাও দেখা যায়। শিশির মায়ের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রূপকথা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

--“মা আপনি চিন্তা করবেন না! আমরা আজ রাতে যাবো!”

শিশির বিস্ফারিত চোখে রূপকথার দিকে চাইল। রূপকথা শিশিরের দিকে তাকিয়ে তাকে শান্ত হতে বলল, তার পর সে শারমিন আহসানের দিকে চেয়ে বলল,

--“মা আমি উপরে যাচ্ছি! ফ্রেশ হতে।”

--“আচ্ছা মা যাও!”

রূপকথা পাথরের মতো উপরে চলে গেলো। শারমিন আহসান যেন কিছু আন্দাজ করতে পারছেন। তিনি এগিয়ে গেলেন ছেলের কাছে। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চিন্তিত স্বরে বললেন,

--“কিছু কি হয়েছে?”

--“অনেক কিছু হয়েছে মা,তবে তোমাকে পরে সব খুলে বলবো।”

বলে সেও উপরে চলে গেলো। শারমিন আহসান চেয়ে রইলেন ছেলের দিকে। একদিকে তার মাথায় বিভিন্ন চিন্তা অন্য দিকে ছেলের এমন পরিবর্তন দেখে তার আনন্দ লাগছে। চোখের কোণে হালকা ‌জল দেখা দিলো তার.......

___

--“তুমি রাজি কেন হলে যেতে!”

ঘরে ঢুকতেই শিশির গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞাসা করল, খাটে চুপচাপ বসে থাকা রূপকথার উদ্দেশ্যে। রূপকথা চোখ তুলে তাকায়। তার চোখের বিষন্নতা। তারপরও সে হাসে। উঠে দাঁড়ায়। এগিয়ে আসে শিশিরের কাছে। মাথা নিচু করে বলে,

--“মা যেহেতু হ্যাঁ বলে দিয়েছেন, সুতরাং আমাদের ওখানে যাওয়া উচিত! যদি না যায় তাহলে মায়ের কথার অপমান করা হবে!”

--“কারা করবে? মিস্টার চৌধুরী,তাতে আমার বিন্দুমাত্র যায় আসে না রূপকথা!”

--“কিন্তু আমার আসে! আমার শাশুড়ির অপমান বা আমার বরের কেউ অপমান করলে সেটা আমার অপমান হবে! আপনাদের সম্মান মানে আমার সম্মান! আমি চাই না, আমার জন্য সেটা নষ্ট হোক!”

রূপকথা প্রতিবাদ যেন শিশিরকে কিছুক্ষণের জন্য নিস্তব্ধ করে দিয়ে গেলো। সে অপলক চোখে চেয়ে রইল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রূপবতী নারীটির দিকে! সে শুধু দেখতেই সুন্দর নয় তার চিন্তাধারা, তারই মত উচ্চ এবং সুন্দর। এমন দৃঢ়তা আগে কখনো রূপকথার মুখ থেকে শুনেনি শিশির। সে আর কোনো কথা বলল না। এমন কথার উপর প্রতিবাদ করা মানায় না শিশিরের। সে মুচকি হেসে রূপকথার চুপসে আসা মুখটা নিজের দুই হাতের তালুতে। মুখ এগিয়ে এনে রূপকথার চোখে চোখ রাখে। এখন কোনো কথা নয়। সবই যেন চোখে চোখ আদান প্রদান হচ্ছে।

বেশ অনেকক্ষণ একে অপরের গাঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। তারপর শিশির রূপকথার কপালে গাঢ় চুম্বন আঁকল। রূপকথার চুল কানের কাছে গুঁজে দিয়ে বলল,

--“ঠিক আছে! তুমি রেডি হয়ে নিও!”

রূপকথা হাসার চেষ্টা করে। তবে তার মন হাসতে পারল না। মুখে যেতে বললেও,তার মন যেন বিন্দু মাত্র সায় দিচ্ছে না। কিন্তু এখন কিছু করার নেই। যেতে তো হবেই.........

___

আশরাফ চৌধুরী লিভিং রুম দিয়ে পায়চারি করছে। কপালে তার চিন্তার ভাঁজ। বারংবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। সবে মাত্র সন্ধ্যা, ঘড়িতে ছয়টা পঁয়তাল্লিশ বাজে। এখনো আরো এক ঘন্টা।

সোনিয়া চৌধুরী রান্না ঘরে তদারকি করছেন। আজ সবকিছু শিশিরের পছন্দের তৈরি হচ্ছে। রান্নায় কোনো ধরণের সমস্যা না হয় তাই সবই চোখের সামনে তৈরি করার অডার। সোনিয়া চৌধুরী কিচেন তদারকি করলেও তার চোখ সামনে আশরাফ চৌধুরীর দিকে। ওপেন কিচেন থেকে স্বামীকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

সোনিয়া চৌধুরী কিচেনে কাজ করা সকল চাকরদের সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসলেন কিচেন থেকে। স্বামীর দিকে এগিয়ে গেলেন। আশরাফ চৌধুরী তখনও হাঁটছেন। সোনিয়া চৌধুরী বরের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লেন। আশরাফ চৌধুরীকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিলেন, তারপর বললেন,

--“এখানে চুপ করে বসো। কখন থেকে দেখছি এখান থেকে সেখানে করছো! এতো চিন্তা করলে তো বিপি হায় হয়ে উঠবে!”

--“তুমি বুঝবে না সোনিয়া! শিশিরকে বোঝাতে না পারলে আমাদের বিজনেস ডুবে যাবে! ভেবেছিলাম রূপকথার বিয়ে শিশিরের সাথে হলে আমাদের বিজনেসে সুবিধা হবে , সব প্রজেক্ট কোনো চিন্তা ছাড়াই আমাদের হয়ে যাবে বাট এখন এই মেয়েটার জন্য সব শেষ! অপয়া কোথাকার! সব কিছু শেষ করে দেয়। জন্মের সময় যদি মরে যেতো?”।

আশরাফ চৌধুরী গর্জে উঠলেন। সোনিয়া চৌধুরী আশরাফ চৌধুরীকে শান্ত করতে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আর বললেন,

--“উফ্! থামো। বাচ্চা মেয়ে ভুল হয়ে গেছে। তাই নিয়ে এমন ভাবে বলতে হয়। যাইহোক শিশির তো আসছে। আমি রূপকথাকে সরিয়ে নিয়ে যাবো তখন তুমি শিশিরকে বুজিয়ে বলো!“

--“তাই করতে হবে!”

আশরাফ চৌধুরী মাথা নাড়ালেন। সোনিয়া চৌধুরী বরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আশরাফ চৌধুরীর চোখের অগোচরে সোনিয়া চৌধুরীর মুখে বিজয়ের হাসি ফুটে উঠল.....

___

শিশির লিভিং রুমে তৈরি হয়ে বসে আছে। হাতে তার ফোন। কোনো দরকারি ফাইল দেখছে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। সে মূলত রূপকথার জন্য অপেক্ষা করছে। রূপকথা তৈরি হয়ে আসলেই তারা বেড়িয়ে পড়বে। ।।

পাঁচ মিনিট পর, শিশিরের কানে পায়ের শব্দ ভেসে আসলো। রূপকথার পায়ের পায়েলের শব্দ। শিশির ফোন থুয়েই সিঁড়ির দিকে তাকালো। রূপকথা নামছে। মেরুন রঙের কাতান শাড়ি পরেছে। আঁচল ছেড়ে দেওয়া। রূপকথার লম্বা ওয়েভি চুলগুলো সুন্দর করে চিরনি করে ছেড়ে দেওয়া। কানে সোনোর দুল। গলায় হার। সব দেখে রূপকথার মুখের দিকে চোখ যেতেই যেন থমকে গেল শিশির। গাঢ় করে কাজল দুই চোখে, নাকে নথ, ঠোঁটে গাঢ় খয়েরী লিপস্টিক। ফর্সা বর্ণের এই মুখ যে দেখবে সে আর চোখ সরিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য রাখবে না।

শিশির এগিয়ে গেলো সিঁড়ির সামনে। রূপকথার দিকে তার হাত এগিয়ে দিলো। রূপকথা লজ্জা লাল হয়ে উঠে। সে হাত এগিয়ে শিশিরের হাতের উপর রাখে। রূপকথা ধীরে ধীরে নিচে নেমে শিশিরের কাছে এসে দাঁড়ায়। শিশির তার চোখ সরাতে পারছে না। রূপকথার গালে ছুঁয়ে দিয়ে বলে,

--“আজকের যাওয়াটা কি কোনোভাবে ক্যানসেল করা যাবে না? আজকের রাত আমি শুধু তোমাকে দেখতে চাচ্ছি!”

রূপকথা লাজুক ভঙ্গিতে হাসে। তারপর নরম স্বরে বলে,

--“অন্য কোনোদিন দেখে নিবেন, আজ থাক!”

--“এতো সুন্দর কেন তুমি?”

শিশিরের প্রশ্নে সে হাসে কোনো জবাব দেয় না। তার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।

--“আমার পছন্দের বউ! সুন্দর হবে না?”

হঠাৎ পিছন থেকে একটা আওয়াজ আসতেই রূপকথা দূরে সরে দাঁড়ায়। তার শাশুড়ি মায়ের গলা। শিশির পিছনে ফিরে তাকায়। রূপকথা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। শারমিন আহসান তাদের থেকে হালকা দূরে দাঁড়িয়ে মিট মিট করে হাসছেন। শিশির কি বলবে বুঝতে পারল না। রূপকথার দিকে তাকালো,সে তো লজ্জায় মাথায় তুলতে পারছে না। এমন অবস্থায় কিছু বলা মানে মেয়েটাকে আরো বেশি লজ্জিত করা, শিশির দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে এগিয়ে গেলো শারমিন আহসানের দিকে। মায়ের দুহাত ধরে বলল,

--“থ্যাংকিউ মা! এতো সুন্দর একটা বৌমা নিজের জন্য খুঁজে আনার জন্য!”

--“শুধু কি নিজের জন্য? তোমার জন্য বুঝি আনেনি!”

শারমিন আহসান মুখ ফুলিয়ে বললেন। তার কথার ধরন শুনে রূপকথাও হেসে ফেলল। শিশির মাকে জড়িয়ে ধরে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,

--“মা দেরি হয়ে যাচ্ছে, এখন বেড়োই!”

--“হ্যাঁ হ্যাঁ! তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পর। সাবধানে যাবি!”

বলে রূপকথার দিকে তাকালো। রূপকথা এগিয়ে এসেছে। শারমিন আহসান বৌমার মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

--“সাবধানে যা!”

রূপকথা শাশুড়ি মায়ের কথায় মাথা নাড়ালো। শিশির আর রূপকথা শারমিন আহসানকে সালাম জানিয়ে বেরিয়ে গেলো।

শিশির আর রূপকথা বাইরে আসতেই হঠাৎ রূপকথার পা হোঁচট খেলো। শিশির পাশে থাকায় রক্ষে হলো। সে রূপকথাকে নিজের বাহুতে আঁকড়ে ধরল। সাবধানে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলে,

--“ঠিক আছো তুমি?”

রূপকথা কোনো জবাব দিলো না। তার মন হঠাৎ কু ডেকে উঠলো। তার পা আর এগিয়ে যেতে চাইলো না। সে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কোনো বিপদের আশংকা সে যেঞ পারছে.....

চলবে..........

কিছু কথা,

অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন কেন এতো দেরি করে গল্প দিচ্ছি? ২১ তারিখেও আমি গল্প দিয়েছি, কিন্তু তারপর সারা বাংলাদেশে যে শোকের ছায়া ঘুনিয়ে এলো, তারপর আর লেখা তো দূরের কথা ফেসবুকেই আসতে ইচ্ছে করছিল না। নিজেকে একটা ট্রমার মধ্যে দিয়ে বের করে নিয়ে এসেছি, তাই আবার লেখা শুরু করেছি, আশা করি এখন থেকে প্রত্যেক দিন গল্প দিবো

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

27/07/2025

#অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে #রুদ্রিকা_বেদী #পর্ব_১১ #আংশিকা
আজকে কিছুক্ষণ পর #পর্ব_১২ আসবে

ডুবে ডুবে ভালোবাসি,
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।।

 #অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে #রুদ্রিকা_বেদী #পর্ব_১১,,,--“কেন? ওমন ভাবে খাচ্ছ কেন?”শিশিরের প্রশ্নে রূপকথা চুপ হয়ে গেলো। রূ...
26/07/2025

#অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে
#রুদ্রিকা_বেদী
#পর্ব_১১
,
,
,
--“কেন? ওমন ভাবে খাচ্ছ কেন?”

শিশিরের প্রশ্নে রূপকথা চুপ হয়ে গেলো। রূপকথা মুখ নিচু করে বসে রইল। শিশির রূপকথার দিকে চেয়ে আছে। রূপকথার মুখ ফ্যাকাসে। শিশির বুঝলো ব্যাপারটা গুরুতর! সে তার তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে রূপকথার থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করল। নিজে রূপকথার দিকে হালকা ঝুঁকে গিয়ে গাঢ় এবং ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে,

--“আমার কাছ থেকে কোনো কিছু লুকানোর কোনো দরকার নেই!”

রূপকথা শিশিরের চোখের দিকে চেয়ে রইল। রূপকথার পেটে হঠাৎই মোচড় দিয়ে উঠলো। সে ঢোক গিলে, তবে চোখ সরাতে পারে না শিশিরের চোখ থেকে। একটা আকর্ষণ কাজ করছে ওই চোখে। রূপকথা চোখের পলক না ফেলে নরম সুরে বলে,

--“খাওয়া দাওয়া করার মতো খাবারই পেতাম না! কখনো দিতো কখনো দিতো না! যেটুকু দিতো সেটাতেও পেট ভরানোর মতো ছিল না! কিন্তু আমার কাছে তো ওইটুকু খাওয়া ছাড়া উপায় থাকতো না,তাই অল্প খেতে খেতে এখন বেশি খেতে পারি না!”

রূপকথার কথা শেষ হতেই শিশিরের হাতের তালু বন্ধ হয়ে আসলো। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। রূপকথা সেই দিকে তাকিয়ে আটকে উঠে, শিশিরের চোখে মুখে রাগের লাল আভা স্পষ্ট। ঘারে শিরা উপশিরা গুলো স্পষ্ট। রূপকথা ছোট করে ঢোক গিলে সোজা হয়ে বসে। আগে পিছে কিছু না ভেবে,প্লেট থেকে ব্রেড এর এক অংশ তুলে মুখে দিলো। রূপকথা এই কারণেই শিশিরকে সব কথা বলতে ভয় পাচ্ছিল!

শিশির রূপকথার দিকে তাকিয়ে বলল,

--“জোর করে আর খেতে হবে না!”

রূপকথাও সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেলো। সে শিশিরের দিকে না তাকিয়ে মাথা নাড়ালো।
_

গাড়ি উঠা পর্যন্ত শিশির রূপকথার সঙ্গে কোনো কথা বললো না। রূপকথা মনে মনে নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করে বলতে লাগলো,

--“কি দরকার ছিল বলার! লোকটার ভালো মুড একদম খারাপ করে দিলাম!”

রূপকথা ভাবতে লাগলো কিভাবে শিশিরের মুড ভালো করে যায়। কিন্তু তার মাথায় কিছুই আসতেই চাচ্ছে না। শিশিরের দিকে তাকালো রূপকথা। শিশির স্থির দৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। রূপকথা বেলি ফুলের দিকে তাকিয়ে, ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলল,

--“আজকের আবহাওয়া কতো সুন্দর তাই না?”

--“হুম! সুন্দর!” শিশির উত্তর দিলো।

শিশিরের উত্তর দেওয়াতে রূপকথা একটু স্বস্তি পেলো। যাক কথা বলছে! রূপকথা উৎসাহিত হয়ে উঠলো। তার মুখে একগাল হাসি। সে শিশিরের উদ্দেশ্যে বলে,

--“রাগ করে আর থাকবেন না! যা হয়ে তা হয়ে গেছে! এখন তো আমি ভালো আছি,তাই না!”

শিশির রূপকথার দিকে তাকালো। রূপকথা মুখশ্রী দেখে শিশির চেয়ে তার গাম্ভীর্য পূর্ণ চাহনি বজায় রাখতে পারলো না। সে হাসলো তারপর হাসলো,তবে ভুললো না। শিশির বুঝতে পারছে পরিবেশটা ভারি হয়ে রয়েছে। সে পরিবেশটা হালকা করতে ঠোঁটে হালকা হাসি ফুটিয়ে রূপকথার চোখ চোখ রেখে শুধায়,

--“আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো?”

--“জ্বী করুন!” রূপকথা শিশিরের দিকে তাকিয়ে বলে।

--“ফোনের পাসওয়ার্ড আইসক্রিম কেন?”

শিশিরের প্রশ্নে রূপকথার মুখের হাসি হঠাৎ উধাও হয়ে গেল। মুখের চাহনিতে এসে ভর করে একরাশ লজ্জা। সে শিশিরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল। আমতা আমতা করে বলল,

--“আসলে আইস্ক্রিম পছন্দ করি না,তাই ওইটা দিয়েছি!”

শিশির অবাক হলো। সে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। শিশির গাড়ি এক সাইডে পার্ক করল। গাড়ি থামতেই রূপকথা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,

--“গাড়ি থামালেন কেন?”

শিশির তার সিটবেল্ট খুলে রূপকথার দিকে ঝুঁকে আসলো। রূপকথা ঢোক গিলে পাথরের মতো বসে রইল। শিশির মুচকি হেসে উত্তর দেয়,

--“মনে হচ্ছে এই কথপোকথনটা অনেক মজার হবে, গাড়ি চালাতে চালাতে ঠিক মতো ইনজয় করতে পারবো না! তাই গাড়ি থামালাম!”

রূপকথা কিছু বুঝে উঠতে পারলো না। সে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল শিশিরের দিকে। শিশির সেই দিকে তাকিয়ে হাসে , রূপকথার গালে আলতো করে স্পর্শ করে হাস্কি স্বরে বলে,

--“আমি ভাবতাম মেয়েরা আইস্ক্রিম তাদের জীবন থেকেও বেশি ভালোবাসে বাট তুমি দেখছি আইস্ক্রিমই পছন্দ করো না?”

--“আমি সব মেয়েদের মধ্যে পরি না! আমি হাতে গোনা কিছু মেয়েদের মধ্যে পরি,যারা আইস্ক্রিম পছন্দ করে না!”

শিশির ব্যঙ্গ করা রূপকথা ঠিক ধরতে পেরেছে,তাই সে মুখ ফুলিয়ে উত্তরটি দিলো। শিশির ঠোঁট কামড়ে ধরে, শিশির তার ডান হাত দিয়ে রূপকথার কোমর জড়িয়ে ধরে, রূপকথার শরীরে মুহুর্তেই শিহরণ খেলে গেল। সে চমকে তার স্বামীর দিকে তাকালো। দুজন একদম কাছে। দুজন গরম বাতাস ঠিক উপলব্ধি করতে পারছে দুজনে। রূপকথার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসলো। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে সে। শিশির ধীরে ধীরে রূপকথার কানের কাছে নিয়ে ধরল। গলার স্বর একদম খাদে নামিয়ে ফিস ফিস করে বলে,

--“আমি জানতাম, মানুষ পছন্দের জিনিসের নাম গুলো পাসওয়ার্ডে দেয়, তুমি দেখছি অপছন্দের জিনিসগুলোর নাম দেয়?”

--“আমার জীবনে পছন্দের জিনিস বলতে কিছুই নেই! অপছন্দের জিনিসের নাম আমি সহজে ভুলি না,তাই পাসওয়ার্ডে দিয়েছি!”

রূপকথা যেন যন্ত্রের মতো বলে গেলো তার কথাগুলো। শিশির মুখ তুলল। রূপকথার চোখে চোখ রাখলো। গাঢ় চাহনি শিশিরের। রূপকথা বুঝলো, তার উত্তর শিশিরের মোটেও পছন্দ হয়েনি। শিশির রূপকথাকে আরো জোরে চেপে ধরল নিজের সঙ্গে, শিশির গাঢ় কন্ঠে বলে,

--“তোমার জীবনের পছন্দের কিছু নেই?”

রূপকথা হাসে। তার আর ভয় করছে না। সে শিশিরের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। শিশিরের মুখ অনুভূতি শূন্য। লাল হয়ে গেছে। এবার রূপকথা শিশির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

--“আপনি আমার কথা ঠিক করে শুনেননি! আমি বলেছি, পছন্দের কোনো জিনিস নেই, আপনি কি জিনিসের মধ্যে পরেন? আপনি তো প্রত্যেকটা মেয়ের স্বপ্নের রাজকুমার!”

শিশিরের মুখে মুচকি হাঁসি। রূপকথা শিশিরের দিকে তাকায়। শিশির হাস্কি স্বরে বলে,

--“প্রত্যেকটা মেয়ের স্বপ্নের রাজকুমার হতে হবে না, তোমার স্বপ্নের রাজকুমার কিনা সেটা বলো?”

--“আমি কিছু বলবো না! যা বলার,আমি বলে দিয়েছি!”

বলে রূপকথা ফিক করে হেসে ফেলে। শিশির রূপকথার সিটবেল্ট খুলে দেয়। তারপর নিজের কাছে টেনে নেয়। রূপকথার চুলের ভাঁজে হাত ঢুকিয়ে হাস্কি স্বরে বলল,

--“তাহলে আমিও যা বুঝার বুঝে নিয়েছি।“

বলে রূপকথার ঠোঁটের কাছে অগ্রসর হতে লাগলো শিশির। রূপকথা শিশিরকে এতো কাছে আসতে দেখে চোখ বুঁজে নিলো। শিশির রূপকথার গালে আলতো করে আদর করে, ঠোঁটের সঙ্গে ঠোঁট মিশিয়ে দিলো।

তাদের প্রথম ভালোবাসা। এতোটা কাছে এই প্রথমই। অদ্ভুত ভাবে দুজন একে অপরের দিকে এক মহাকর্ষণ বলে আকৃষ্ট হচ্ছে। বয়সের তফাত দুজনের ভালোবাসায় বিন্দু মাত্র ভাঙন ধরাতে পারলো না।

রূপকথা এক পর্যায়ে যেয়ে শিশিরকে নিজের কাছ থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। কতোক্ষণ তার একে অপরের প্রেমের উষ্ণতায় ডুবে ছিল খেয়াল নেই। শিশির রূপকথার ধাক্কায় প্রায় হকচকিয়ে উঠলো। রূপকথার দিকে তাকায়। রূপকথা লজ্জা লাল হয়ে বসে আছে এবং তার ঠোঁটে লেগে রয়েছে একটা হাসি। শিশির অসহ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

--“এটা কি হলো?”

রূপকথা মিট মিট করে হাসতে হাসতে বলে,

--“বাসরটাও কি এখন এই গাড়িতে সেরে ফেলবেন?”

শিশির রূপকথার কথার অর্থ বুঝে ঠোঁট কামড়ায়। সে রূপকথার সিটের সঙ্গে হাত রেখে রূপকথার দিকে ঝুঁকে পরে বলে,

--“তুমি হ্যাঁ বললে আমার কোনো আপত্তি নেই!”

--“চুপ করবেন! ভরদুপুরে উল্টাপাল্টা কাজকর্ম! বাড়ি চলুন!”

রূপকথার ভীষণ লজ্জা লাগে। সে শিশিরের দিকে আর তাকাতে পারছে না। সে নিচে তাকিয়ে বলে। শিশির হাসতে হাসতে নিজের সিটে সোজা হয়ে বসে। সিটবেল্ট লাগিয়ে গাড়ি স্ট্যাট দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলো। তখনই রূপকথা বলে,

--“গাড়ি চালানোর আগে ঠোঁটটা মুছে নেন! লিপস্টিক লেগে গিয়েছে!”

বলে সে জানালার দিকে ফিরে তাকায়। শিশির রূপকথার দিকে মুচকি হেসে বলে,

--“যো হুকুম মেরে আকা!”

বলে টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে ঠোঁটটা মুছে নেয়। টিস্যু পেপারটা স্বযত্নে নিজের প্যান্টের পকেটে রেখে দিলো। সে গাড়িতে স্ট্যাট দেওয়ার আগে গান বাজালো,
♪♪......তুমি না ডাকলে আসব না
কাছে না এসে ভালোবাসব না
দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?
না কি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি
এটা কি ছেলেখেলা আমার এই স্বপ্ন নিয়ে?
চাইলে ভেঙে দেবে গড়ে দেবে ইচ্ছে হলে
আমি গোপনে ভালোবেসেছি, বাড়ি ফেরা পিছিয়েছি
তোমায় নিয়ে যাব বলে
একবার এসে দেখ, এসে বুকে মাথা রেখ
বুলে দেব চুলে রেখে হাত
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরোনো
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি.......♪♪..

চলবে.........

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

২১ শে জুলাইয়ের পর থেকেই মনটা খারাপ হয়ে রয়েছে। ফেসবুক বা ইউটিউব কোনোটাই ঢুকতে ইচ্ছে করে না। শিশুগুলো দুদিন আগ পর্যন্তও...
23/07/2025

২১ শে জুলাইয়ের পর থেকেই মনটা খারাপ হয়ে রয়েছে। ফেসবুক বা ইউটিউব কোনোটাই ঢুকতে ইচ্ছে করে না। শিশুগুলো দুদিন আগ পর্যন্তও তাদের মা বাবার সঙ্গে সুন্দর মূহুর্ত পার করছিল, কিন্তু আজ তারা আর নেই, ভাবতেও কান্না চলে আসছে! তারা আজ আকাশের পাখি, উড়ছে ডানা মেলে! এই পৃথিবীতে তাদের আর কোনো চাওয়া পাওয়া নেই! তারা ভালো থাকুক!

কালকের থেকে হয়তো #অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে দিতে পারি! সঠিক করে বলতে পারছি না। লিখতে কষ্ট হয়! আজ আর কিছু না 🖤

ভালো থেকো , প্রিয় নক্ষত্ররা 🩶🖤

 #অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে #রুদ্রিকা_বেদী #পর্ব_১০,,,রূপকথার মুখ চুপসে গেল। সে সিটের সঙ্গে সেটে গেলো। শিশির যেন হাঁপ ছেড়...
21/07/2025

#অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে
#রুদ্রিকা_বেদী
#পর্ব_১০
,
,
,
রূপকথার মুখ চুপসে গেল। সে সিটের সঙ্গে সেটে গেলো। শিশির যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। সে গাড়ি চালানোতে মন দিলো। পুরো গাড়িতে বেলি ফুলের কড়া সুবাসে মুখরিত হয়ে গেছে। রূপকথা থেকে থেকে লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর মন খুলে নিঃশ্বাস ছাড়ছে। শিশির গাড়ি চালালেও তার মন তার পাশে বসে থাকা রূপকথার উপর। আজ যেন মেয়েটার মন একটু বেশিই ভালো আছে। মুখে হাসি লেগে রয়েছে। শিশির গাড়ি মিররে রূপকথাকে আড় চোখে দেখছে। রূপকথা বসে সামনে দিকে চেয়ে আছে।
____

--“শিশির তোমাকে ভুল বলেছে! রূপকথা ওকে ওইসব কথা বানিয়ে বলেছে! তুমি আমাকে বিশ্বাস করো। আমি রূপকথাকে সবসময় নিজের মেয়ের মতো দেখেছি। তুমিও সেটা খুব ভালো করে জানি আশরাফ!”

সোনিয়া চৌধুরী আশরাফ চৌধুরীকে জড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললেন কথাগুলো। আশরাফ চৌধুরীর তাতে মন গলল কিনা,তা ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না তিনি। আশরাফ চৌধুরী চুপ করে আছেন। সোনিয়া চৌধুরী সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। গভীর ভাবে খেয়াল করলেন স্বামীকে। আশরাফ চৌধুরীর কোনো হেলদোল নেই। তার চোখের চাহনি হঠাৎ শীতল হয়ে গেলো। সে বউয়ের দিকে চোখ নামিয়ে হিম ধরানো কন্ঠে বলল,

--“তুমি ঠিক বলেছো! তুমি রূপকথার সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে পারো না, ওই শিশিরকে ভুল বুঝিয়েছে!”

কথাগুলো যতো এগোচ্ছে ততোই আশরাফ চৌধুরীর গলায় তিক্ততা বাড়ছে। রূপকথার প্রতি তার গলায় কোনো করুণা খুঁজে পাওয়া গেল না। সোনিয়া চৌধুরীর চোখ আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে গেলো। সে তার স্বামীকে জড়িয়ে ধরে উৎসাহিত কন্ঠে বলল,

--“আমি জানতাম তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে। তুমি বুঝবে,এই রকম জঘন্য কাজ আমি করতে পারি না!”

আশরাফ চৌধুরীর হাত উঠে এলো সোনিয়া চৌধুরীর পিঠে। তিনিও বউকে জড়িয়ে ধরলেন। সোনিয়া চৌধুরী মনে মনে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলেন। তিনি নিজের মাথায় দাবার গুটি সাজাতে শুরু করলেন।

--“কিন্তু শিশিরের ভুল ভাঙতে হবে! কিভাবে সম্ভব?”

আশরাফ চৌধুরীর দৃঢ় কন্ঠে চিন্তার চাপ। সোনিয়া চৌধুরী সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। বরের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বললেন,

--“তুমি ওই নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করো না। শিশিরকে আর রূপকথাকে ডিনারের জন্য দাওয়াত দাও! একান্তে ওকে সব বুঝিয়ে বলো!”

--“কিন্তু শিশির কি আসবে? রূপকথা যে মিথ্যা বলেছে,তাতে এতো সহজে শিশির দাওয়াতে আসবে?” চিন্তিত স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন আশরাফ চৌধুরীর।

--“তুমি আগে দাওয়াত তো করো। পরেরটা পরে দেখা যাবে!” বলে হাসলেন সোনিয়া চৌধুরী।

________

শিশির আর রূপকথার গাড়ি একটি রেস্তোরাঁর সামনে এসে থামলো। রূপকথা বাইরের দিকে চাইলো। রেস্তোরাঁর বাইরের টা ভীষণ সুন্দর করে সাজানো। দিনের বেলায় বলে লাইটিং নেই,তবে রাতে রেস্তোরাঁর বাইরের লাইটিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। রূপকথা শিশির একসঙ্গে গাড়ি থেকে নামলো। শিশির রূপকথার পাশে এসে দাঁড়াল। রূপকথার দিকে তাকিয়ে বলল,

--“ভিতরে চলো!”

বলে দুজনে একসঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। বাইরেরটা যেমন সুন্দর ভিতরেরটাও ঠিক ততটাই সুন্দর এবং পরিপাটি। চেয়ার টেবিল গুলো সব রাজকীয় ভাবে তৈরি করা হয়েছে। রেস্তোরাঁর ভিতরে একটা আভিজাত্য ব্যাপার আছে। রূপকথা আর শিশির ভিতরে আসতেই রেস্তোরাঁর একজন ছেলে এগিয়ে আসলো তাদের দিকে। ছেলেটি হাসি মুখে তাদের দুজনকে সংবর্ধনা জানিয়ে একটি টেবিলের কাছে নিয়ে গেলো। রূপকথা আর শিশির মুখমুখি হয়ে বসলো। ছেলে দাঁড়িয়ে রইল। সামনেই তাদের মেনু কার্ড রাখা। শিশির সেই মেনু কার্ডের দিকে তাকালো না। সে টেবিলের উপর হাত রেখে রূপকথার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

--“কি খাবে?”

--“আমি কিছু খাবো না। আপনি আপনার জন্য অর্ডার করুন!” রূপকথা তাড়াতাড়ি করে বলে।

শিশির ভ্রু কুঁচকে তাকালো। শিশির রূপকথার খাওয়া দেখেছে। প্রথমে মায়ের কথা বিশ্বাস না করলেও, নিজের চোখে ডিনার করার সময় যখন রূপকথা খেতে বসে, তখন অর্ধেকের বেশি সময় শিশির তার দিকেই চেয়ে থাকে। সৌন্দর্যের কারণও আছে, তবে মূল কারণ তার খাওয়ার পরিমাণ, এতোই কম পরিমাণে খাবার সে খায়, যা রূপকথার শরীরের জন্য একদমই ঠিক না। বাচ্চারাও ওর থেকে বেশি খায়। শিশির রূপকথার কথাকে পাত্তা না দিয়ে তাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রেস্তোরাঁর সেই ছেলেটাকে বলল,

--“দুটো চিজ ব্রেড! এবং দুটো অমলেট!”

ছেলেটা মাথা নাড়িয়ে রেস্তোরাঁর ভিতরে চলে গেলো। রূপকথা তাড়াতাড়ি করে বলে,

--“আমি খাবো না! পেট আমার ভরা!”

--“চুপ! একদম চুপ। তুমি খাবে এবং তোমার ঘারও খাবে!”

শিশিরের হুমকিতে রূপকথার গলা শুকিয়ে আসলো। সে করুন চোখে তাকালো শিশিরের দিকে। শিশির রূপকথার দিকে তাকালোই না। সে হাতের ফোনের স্ক্রিনের দিকে চেয়ে রইল। রূপকথা খেয়াল করে দেখে বুঝলো, শিশির ফোনে চ্যাটিং করছে। রূপকথা মনমরা বসে রইলো। হাতের ফুলের তোড়া তারই মতো ঝিমিয়ে গেছে।

ছেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই দুই থাল শিশিরদের অর্ডার নিয়ে আসলো। টেবিলে রেখে দাঁত কেলিয়ে জিজ্ঞেস করল,

--“আর কিছু?”

--“নো, থ্যাংকস!”

শিশির না করে দিতেই ছেলেটা হেসে ভিতরে চলে গেলো। শিশির এক থাল রূপকথার দিকে এগিয়ে দিলো। রূপকথা মাথা নাড়ানোর সাহস পেলো না, শিশির গম্ভীর মুখ দেখে। রূপকথা চুপ করে এক দানা করে করে মুখে দিচ্ছে। রূপকথা মন দিয়ে খেয়াল করছে।

শিশিরের খাওয়া হয়ে গেছে, কিন্তু রূপকথার থাল এখনো ভরা পরে রয়েছে। শিশির উঠে গেলো। রূপকথা শিশিরের দিকে তাকালো। শিশির ব্যাসিনে যেয়ে হাত ধুয়ে ফিরে এলো। রূপকথা তখন চুপ করে বসে আছে। শিশির রূপকথার দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলে,

--“পাঁচ মিনিটে খাওয়া শেষ করবে তুমি!”

--“আর খেতে পারছি না! এর থেকে বেশি খেলে দম বন্ধ হয়ে আসবে আমার!”

রূপকথার কথা শুনে শিশিরের চোখ মুখ কুঁচকে এলো। শিশির উঠে এসে রূপকথার পাশে বসে। ওর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

--“কেন? ওতো কম খেলে বাঁচবে কিভাবে?

--“বেশি খেলে বাঁচতে পারবো না! ছোট বেলার থেকেই ওমন করেই খাচ্ছি!”

চলবে.......

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

21/07/2025

আজ #অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে দেওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। গতকাল কিছু কারণে দিতে পারেনি, কিন্তু আজ বাড়ি ফিরে দেখি আমার ফোন অফ হয়ে রয়েছে। কোনো কাজ করছে না। এইটা আমার মায়ের ফোন দিয়ে পোষ্ট করছি। হয়তো আমার ফোনের সব ডাটা মুছে যাবে, অনেক গল্প লেখা আমার ফোনে, সব হারিয়ে যাবে। আজ শোরুমে নিয়ে যাবো। সেখানে যেয়ে ঠিক হয়ে যদি পর্ব না মুচে যায় তাহলে, রাতে পোষ্ট করার চেষ্টা করবো। আর যদি মুছে যায় তাহলে, কয়টা দিন আরো সময় লাগবে নিজেকে ধাতস্থ করার 🥲🥺 সবাই দোয়া করুন যাতে, গল্প গুলো হারিয়ে না যায়

#রুদ্রিকা_বেদী

 #অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে #রুদ্রিকা_বেদী #পর্ব_০৯মেয়েটি শিশিরের ডাকে তার দিকে ফিরে তাকায়। সঙ্গে সঙ্গে শিশিরের ঠোঁটের ক...
19/07/2025

#অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে
#রুদ্রিকা_বেদী
#পর্ব_০৯
মেয়েটি শিশিরের ডাকে তার দিকে ফিরে তাকায়। সঙ্গে সঙ্গে শিশিরের ঠোঁটের কোণে একটা ছোট হাসির রেখা স্পষ্ট লক্ষ্য করা গেলো। রূপকথা শিশিরকে দেখে অবাক হয়ে গেলো। সে চোখ পিটপিট করে তাকালো দুবার। শিশির বুকের কাছে হাত দুটো ভাঁজ করে নরম স্বরে বলল,

--“এখানে কি করছ?”

রূপকথা নিজেকে ধাতস্থ করে নিলো। সে শিশিরকে দেখে কিছুক্ষণের জন্য নিজের ভাবনার জগতে চলে গিয়েছিল। সে শিশিরকে মোটেও এখানে আশা করেনি। রূপকথা মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বলল,

--“আসলে, আজ ক্লাস ক্যানসেল হয়ে গেছে! তাই হাঁটতে হাঁটতে এখানে এসেছি!”

--“কিন্তু,,, ড্রাইভার কোথায়?” শিশির আশেপাশে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।

--“উনি তো এখনো আসেননি! ক্লাস তো দুইটার সময় শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ক্যানসেল হয়ে যাবে তা তো আর জানতাম না!”

রূপকথা চোখ নামিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো। শিশির ভ্রু কুঁচকে বলল,

--“তাহলে ফোন করে ডেকে নিতে! একা একা এখানে আসার কি দরকার ছিল? যদি কিছু হয়ে যেতো?”

শিশিরের গলার স্বর রূপকথার কাছে চিন্তিত ঠেকলো। তার জন্য এমন ভাবে কেউ আগে কখনো চিন্তা করেছে বলে মনে পরে না। রূপকথা শিশিরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে বলে,

--“আমার কাছে নাম্বার নেই!”

শিশিরের মন পড়ল, সত্যিই রূপকথার কাছে আহসান পরিবারের কারোর নাম্বার নেই। সবচেয়ে বড়ো কথা তার নিজের নাম্বারটাই রূপকথার কাছে নেই। একই ভাবে রূপকথার নাম্বারও শিশিরের কাছে নেই। শিশির রূপকথার কাচুমাচু হয়ে থাকা মুখটার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। রূপকথার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,

--“তোমার ফোনটা দাও!”

রূপকথা শিশিরের দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সে তার ব্যাগ থেকে ফোন বের করে শিশিরের হাতে তুলে দেয়। জিজ্ঞেস করে,

--“কি করবেন?”

শিশির কোনো উত্তর দেয় না। সে ফোন হাতে নিয়ে রূপকথার দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করে,

--“পাসওয়ার্ড?“

--“আ...আইসক্রিম!”

আমতা আমতা করে উত্তর দিলো রূপকথা। শিশির পাসওয়ার্ড শুনে রূপকথার দিকে, ভ্রু জোড়া উঁচু করে তাকায়। রূপকথার লজ্জা লাগে! সে মুখ ফিরিয়ে নেই। শিশির রূপকথাকে লজ্জা পেতে দেখে মুচকি হাসে।

কিছুক্ষণ ফোনে কিসব করে, রূপকথার দিকে এগিয়ে দিলো। রূপকথা ফিরে ফোন হাতে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। শিশির শার্টের হাতা কুনুই পর্যন্ত ভাঁজ করতে করতে বলে,

--“আমার নাম্বার থেকে শুরু মা, সানজিদ সবার নাম্বার আমি তোমার ফোনে সেফ করে দিয়েছি! কখনো কোনো প্রয়োজন সবার আগে আমাকে কল করবে! আমি যদি রিসিভ না করি সানজিদকে ফোন করবে! বুঝতে পেরেছ?”

শিশির শিক্ষকদের মতো করে রূপকথাকে বুঝিয়ে দিলো। রূপকথা উপর নিচে মাথা নাড়ায়। সে বুঝতে পেরেছে। শিশির লম্বা দুটো শ্বাস ছেড়ে দোকানের দিকে তাকায়। হাস্কি স্বরে জিজ্ঞেস করে,

--“ফুল পছন্দ করো?”

রূপকথা দোকানের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায়। শিশির এগিয়ে যায় দোকানের কাছে। পিছন পিছন রূপকথাও যায়। শিশির রূপকথার দিকে তাকিয়ে দোকানদারকে বলল,

--“বেলি ফুলের তোড়া দেন!”

রূপকথা অবাক হয়ে গেলো। সে শিশিরের দিকে তাকিয়ে থাকলো। দোকানদার শিশির কথা মতো বেলি ফুলের একটা তোড়া তৈরি করে দেয়। সেখানে অন্যান্য নানা রঙের ফুল দিয়েছে। শিশির দোকানদারের হাত থেকে তোড়াটা নিয়ে এগিয়ে দিলো রূপকথার দিকে। রূপকথা তোড়া নিয়ে শিশিরের মুখের পানে চেয়ে বলল,

--“আপনি কিভাবে জানলেন, আমার বেলি ফুল পছন্দ?”

শিশির দাম মিটিয়ে রূপকথার দিকে তাকায়। ঠোঁটে মুচকি হাসি এনে বলে,

--“মনে হলো! বেলি ফুল তোমার সাথে যায়!”

রূপকথা ঠোঁট কামড়ে নিলো। তার কান থেকে আবার ধোঁয়া বেরোতে লাগলো। সে শিশিরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক তাকালো।

শিশির আর রূপকথা এগিয়ে গেলো গাড়ির দিকে। সানজিদ প্রথম থেকে বাইরে দাঁড়িয়ে দুজনকে দেখছিলো। দুজন গাড়ির কাছে যেতেই সানজিদ রূপকথার উদ্দেশ্যে বলল,

--“কেমন আছেন ভাবি?”

--“জ্বী ভালো আছি! আপনি কেমন আছেন?”

রূপকথা ফুলের তোড়াটা সাবধানে ধরে সানজিদকে বলল। সানজিদ হাসি হাসি মুখে বলে,

--“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি!”

বলে শিশিরের দিকে তাকালো। শিশির নিজের হাত ঘড়ির দিকে চেয়ে আছে। সানজিদ জিজ্ঞেস করে,

--“স্যার এখন কোথায় যাবেন?”

--“জানি না! গাড়ির চাবি দে।”

চাবি চাইতেই সানজিদের মুখ কালো হয়ে গেলো। সে বুঝতে পারল না, শিশির কেন গাড়ির চাবি চাচ্ছে? সানজিদ আমতা আমতা করে বলতে গেলো,

--“কেন,,স্য,,,,!”

সানজিদ কথা শেষ করতে পারল না। শিশিরের আড়চোখে তাকাতেই সানজিদ ঢোক গিলে ড্রাইভারের কাছে গেলো। ড্রাইভার গাড়ির থেকে বের হয়ে দাঁড়ালো। গাড়ির চাবি সানজিদের কাছে দিলো। সানজিদ শিশিরের কাছে এসে,চাবি বাড়িয়ে দিলো। শিশির চাবি নিয়ে রূপকথার দিকে তাকিয়ে বলল,

--“গাড়িতে বসো!”

--“কিন্তু....!”

শিশির ড্রাইভিং সাইডে এগিয়ে যাচ্ছিল। তখনই সানজিদ পিছন থেকে বলে উঠে। শিশির পিছনে ফিরে ভ্রু উঁচু করে ইশারায় জিগ্গেস করে,

--“আমরা...?”

--“তোরা অটো করে অফিসে চলে যা!”

বলে শিশির যেয়ে গাড়িতে বসলো। রূপকথা করুণ চোখে একবার সানজিদের দিকে তাকালো, তারপর সেও গাড়িতে শিশিরের পাশের সিটে বসলো। রূপকথার বসতেই গাড়ি স্ট্যাট হলো।

সানজিদ আর ড্রাইভার একসাথে দাঁড়িয়ে রইল। সানজিদ নাক সিঁটকায়,মনে মনে বলে,

--“বালের চাকরি আর করতাম না! যেখানে সেখানে ভিখারির মতো ফেলে থুইয়ে চলে যায়! এর থেকে তো মাঠে চাষ করে খাই! মান ইজ্জত থাকবে তাতে!”

_____

আশরাফ চৌধুরী বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়িতে প্রবেশ করলেন। সোনিয়া চৌধুরী তখন লিভিং রুমেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। কারোর সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন হয়তো। আশরাফ চৌধুরীকে ঘেমেনেয়ে, ভাঙা মুখটা দেখে তিনি হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে গেলেন স্বামীর দিকে। তার দিকে তাকিয়ে সোনিয়া চৌধুরী উৎকণ্ঠায় ভেঙে পরে বললেন,

--“কি হয়েছে তোমার?”

বলে স্বামীর হাত ধরতে গেলেন তিনি। আশরাফ চৌধুরী এক ঝটকায় সোনিয়া চৌধুরী হাত ছাড়িয়ে নিলেন। সোনিয়া চৌধুরী অবাক হলেন। তিনি বরের দিকে আত্মহারা হয়ে তাকালেন। আশরাফ চৌধুরী সোনিয়া চৌধুরীর দিকে তার তর্জনী আঙ্গুল উঁচু করে বললেন,

--“তুমি রূপকথার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে তাই না! আমার অগোচরে আমার মেয়েকে তুমি মারতে!”

তার কন্ঠের থেকে রাগ যেন উপড়ে আসছে। সোনিয়া চৌধুরীর চোখ মুখ শুকিয়ে আসলো। তিনি যেন একটু আগে আকাশ থেকে পড়লেন। তিনি ঢোক গিলে বললেন,

--“তু...তুমি এসব কি..কি বলছ? আ...আমি কিছু বুঝ...বুঝতে পারছি না!”

--“নাটক করবে না সোনিয়া! তোমার জন্য আজ আমার সম্মান খুইয়ে এসেছি! আমার শেষ হয়ে গেছে শুধু মাত্র তোমার জন্য!!‍”

চেঁচিয়ে উঠলেন আশরাফ চৌধুরী। সোনিয়া চৌধুরী ভয়ে এককদম পিছনে সরে গেলেন। আশরাফ চৌধুরীর চোখ রক্তশূন্য। তিনি এগিয়ে গেলেন সোনিয়া চৌধুরী দিকে। সোনিয়া চৌধুরী কাঁদতে লাগলেন। তিনি আশরাফ চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরলেন। কান্নায় ভেঙে পড়ে বললেন,

--“তুমি আমাকে ভুল বুঝছ আশরাফ!কে...কে বলে...বলেছে এসব তোমাকে?”

--“শিশির!”

________

--“আমরা যাচ্ছি কোথায়? এটা তো বাড়ি যাওয়ার পথ নয়।”

রূপকথা জানালার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল। শিশির একবার রূপকথার দিকে তাকালো। মুখে তার তৃপ্ত হাসি। সে হাস্কি স্বরে বলে,

--“রেস্তোরাঁয়!”

রূপকথা সোজা হয়ে বসলো। তারপর চোখ পিটপিট করে শিশিরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

--“কেন?”

--“সকালে খেয়েছ?” প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করল শিশির।

--“হ্যাঁ খেয়েছি!”

--“আমি খাইনি! ভীষণ খিদে পেয়েছে,!”

রূপকথা মাথা নাড়ালো। সত্যিই শিশির তো আজ অনেক সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়েছিল অফিসের জন্য। ওতো সকালে কেউ বা নাস্তা করতে পারে। রূপকথা আবার জানালার দিকে তাকালো। একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার মাথায় হঠাৎ একটা প্রশ্ন অল্প করে উঁকি মারল। সে আবার শিশিরের দিকে চায়। শিশির এক মনে গাড়ি চালাচ্ছে। রূপকথা নরম স্বরে জিজ্ঞাসা করল,

--“আচ্ছা, আপনি কিভাবে বুঝলেন ফুলের দোকানে আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি?”

--“তোমার মতো চিংড়ি মাছের ফিগার অনেক কম মেয়েদেরই আছে! যে একবার ঠিক ঠাক করে তোমাকে খেয়াল করবে,সেই বলতে পারবে তুমি দাঁড়িয়ে আছো!”

রূপকথার হাসি হাসি মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেলো। সে একবার মাথা নিচু করে কোমরের দিকে তাকালো। ঠোঁট ফুলিয়ে মিন মিন করে বলল,

--“চিংড়ি মাছের ফিগার....!”

সঙ্গে সঙ্গে রূপকথা চমকে উঠলো। সে ঘাড় ঘুরিয়ে শিশিরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু জোড়া কুঁচকে জিজ্ঞেস আদুরের স্বরে জিজ্ঞেস করে,

--“তাহলে আপনি আমাকে ভালো করে খেয়াল করেন?”

শিশির ঢোক গেলে। সে রূপকথার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। রূপকথা তার দিকেই সন্দিহান চোখে চেয়ে আছে। শিশির মনে মনে ভাবে,

--“শুধু ভালো করে কি, তোমাকে সামনে বসিয়ে রাখলেও যেন তোমাকে দেখার ইচ্ছা ফুরোবে না।”

--“কি হলো বলেন?” রূপকথা আবার ডাকে। শিশির গাড়ির জোর কমিয়ে ওর দিকে তাকায়,তার শান্ত চেহারাটা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে উঠে। তারপর বলে,

--“তোমাকে ভালো করে খেয়াল করবো না তো কি পাড়ার চাচিদের খেয়াল করবো?”

চলবে.........

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

 #অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে #রুদ্রিকা_বেদী #পর্ব_০৮ ্রেম,,,রূপকথা ভার্সিটিতে এসেছে। ভার্সিটির গেটে প্রবেশ করতেই চিত্রা আর ...
17/07/2025

#অজান্তে_ভালোবেসেছি_তোকে
#রুদ্রিকা_বেদী
#পর্ব_০৮
্রেম
,
,
,
রূপকথা ভার্সিটিতে এসেছে। ভার্সিটির গেটে প্রবেশ করতেই চিত্রা আর রোহান তাকে খপ করে ধরে। রোহান রূপকথার বন্ধু মহলের একজন। এবং চিত্রার জীবন সঙ্গী বলা চলে। রোহান প্রায় তিন চার সপ্তাহ ধরে ভার্সিটিতে আসতো না। তার কারণ রোহানের গুটি বসন্ত হয়েছিল,যা এখন সেরে গেছে। রূপকথার বিয়ের সম্পর্কে রোহান অবগত নয়।

--“দাঁড়া!”

রূপকথাকে দাঁড়াতে বলল চিত্রা। রূপকথা তখনই দাঁড়িয়ে পড়ল। রোহান,চিত্রা দুজনের মুখই গম্ভীর হয়ে রয়েছে। রূপকথা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল। চিত্রা নিজের কোমরে হাত রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

--“তোর বিয়ের সম্পর্কে তুই এখনো কিছু বলিসনি আমাদের!”

--“আমি একটু অসুস্থ কি ছিলাম, আমাকে ছাড়াই বিয়ে করে নিয়েছিস! ধুর বন্ধু মহলের একটার বিয়ের বিরিয়ানি খাওয়া মিস হয়ে গেল!”

কথা বলতে বলতে রোহানের মুখ চুপসে গেল এবং হাত চলে গেল তার পেটের উপর। চিত্রা রোহানের কথা শুনে আর মুখ দেখে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারলো না। রূপকথা রোহানের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে ফিক করে হেসে ফেলল, চিত্রা তার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙানো দিলো। রূপকথার হাসি সঙ্গে সঙ্গে গায়েব হয়ে গেলো।

রূপকথা চিত্রা কে বেশ ভয় পায়। ভয় পাওয়ার কারণও আছে। ডিপার্টমেন্টের সবাই জানে চিত্রা ঠিক কতোটা শান্ত। চিত্রার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডও চিত্রার মতোই শান্তশিষ্ট। এই জন্য চিত্রা আরো প্লাস পয়েন্ট পেয়ে যায়। কোনো সিনিয়রও তাকে ঘাটাতে আসে না।

রূপকথা হাসার চেষ্টা করে চিত্রার হাত আলতো করে ধরে। চিত্রা রূপকথার দিকে তাকিয়ে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে। রূপকথা বাচ্চা বাচ্চা বলে,

--“সব বলছি আগে ক্লাসে চল!”

--“নো ক্লাস! আগের দিনও তুমি একই কথা বলেছিলে, আগে তোর বিয়ের কাহিনী তারপর ক্লাস!”

রূপকথার দিকে ঝুঁকে আসে চিত্রা। রূপকথা আরো কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পেলো না। সে মাথা নাড়িয়ে রাজি হয়ে গেলো। রোহান রূপকথার পাশে এসে দাঁড়াল তারপর বলল,

--“চল ক্যান্টিনে যেয়ে তোর বিয়ের গল্প শুনি! এমনিতেও আমার খিদে পেয়ে গেছে!”

চিত্রা রোহানের দিকে তাকালো। চিত্রার মুখ হতাশাগ্রস্থ। রূপকথা তাই দেখে মুখ টিপে হাসে।

_____

ক্যান্টিনে বসে রূপকথা চিত্রা আর রোহানকে সব কথা খুলে বলল। A to Z সব বলল। রূপকথার বিয়ে হওয়ার কাহিনী শুনে চিত্রা মাথা হাত দিয়ে বসল। দুঃখের স্বরে বলল,

--“তোর বিয়ে হয়ে গেছে,,, কয়েক দিন পর তো বাচ্চাও হয়ে যাবে, সেও বড়ো হয়ে যাবে,আর আমি যেখানে এখন বসে আছি সেখানেই বসে থাকবো। আমার মা বাপ কেন যে আমার বিয়ে দিয়ে দেই না,বুঝি না.....কতো করে বললাম এই পড়াশোনা আমার দ্বারা হবে না,কে শোনে কার কথা!”

বলে চিত্রা রোহানের দিকে তাকায়। রোহান চিত্রার কোনো কথা আদৌ শুনেছে কিনা সন্দেহ। সে তার সম্পূর্ণ মন দিয়ে খাবার খাওয়াতে ব্যস্ত। রূপকথা আর চিত্রা প্রায় একসঙ্গে রোহানের দিকে তাকালো। রোহান ফ্রাইড রাইসে একটা মাংস পেয়েছে সেটাই আনন্দ করে খাচ্ছে। চিত্রা রাগে ফুঁসতে শুরু করে। রূপকথা চিত্রার মুখ দেখে তাড়াতাড়ি রোহানকে কুনুই দিয়ে ধাক্কা মারে। রোহান খাওয়া থামিয়ে রূপকথার দিকে তাকায়। রূপকথা চোখের ইশারায় চিত্রার দিকে তাকাতে বলল। রোহান চিত্রার দিকে তাকতেই চমকে উঠে। চিত্রার মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে। রোহান ভয়ে বলল,

--“কি হয়েছে? তুমি আমার দিকে এতো রেগে কেন তাকায় আছো?

--“আমার মাথা হয়েছে!”

চিত্রা রাগে গজগজ করতে করতে উঠে চলে যায়। রোহান ভয়ে ঢোক গিলে। রূপকথার মুখও চুপসে আসে। অনেক প্যারা খেতে হবে রোহানের চিত্রার রাগ ভাঙাতে,

---------

মিটিং রুম,

শিশির আর আশরাফ চৌধুরী বসে আছেন। পুরো রুম নিস্তব্ধ। শিশিরের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে পি.এ সানজিদ,আর আশরাফ চৌধুরীর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে তার পার্সোনাল সেক্রেটারী রুমা সৈকত। আশরাফ চৌধুরী এই রুমে আসার পর থেকেই হাঁসফাঁস করছেন। আজ সকালেই তিনি জানতে পেরেছেন, আহসান ইন্ড্রাস্ট্রির সঙ্গে তাদের সকল প্রজেক্ট ক্যানসেল করে দেওয়া হয়েছে। এবং এর সঙ্গে বড়ো ধরণের একটা লোকসানও তাকে ভোগ করতে হচ্ছে।

আহসান ইন্ড্রাস্ট্রি বাংলাদেশের অন্যতম একটি বিজনেস কম্পানি। আহসান ইন্ড্রাস্ট্রির সঙ্গে মানুষ কাজ করতে চাই। সেই ইন্ড্রাস্ট্রি যদি কোনো কম্পানির সঙ্গে তাদের চুক্তি করা সকল প্রজেক্ট ক্যানসেল করে দেয় তাহলে সেটা ওই কম্পানির জন্য খুবই লোকসানজনক এবং নাম ছোট হওয়া,যা এখন আশরাফ চৌধুরীর কম্পানির ভোগ করতে হচ্ছে।

--“হঠাৎ এমন ডিসিশন নেওয়ার কারণ কি জানতে পারি?”

--“আমার কম্পানি, আমার ইচ্ছা! আমি কাউকে কোনো কৈফিয়ত দিতে রাজি নই!”

শিশির তার কফির মগে চুমুক দিয়ে আশরাফ চৌধুরীর প্রশ্নের উত্তর দিলো। আশরাফ চৌধুরী অবাক হয়ে গেলেন। তিনি চেঁচিয়ে উঠে বলতে গেলেন,

--“কিন্তু,,,,”

--“বসে কথা বলুন! আমি আপনার মেয়ে নই,যার সঙ্গে গলা উঁচু করে,যেমন ইচ্ছে কথা বলতে পারবেন!”

আশরাফ চৌধুরী উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। শিশিরের কথা শুনে তার ভ্রু কুঁচকে উঠে। তিনি বসে গলার স্বর নিচে নামিয়ে বলেন,

--“আমার মেয়ে মানে? আমি মেয়ের সাথে কেমন ব্যবহার করেছি?”

--“সরি আপনার মেয়ে তো আর এখন আপনার মেয়ে নেই,সে এখন রূপকথা আর্শিয়ান আহসান। আর্শিয়ান আহসানের বউ। আমার বউ... আমার বউয়ের গায়ে যেসকল কালচে দাগ পরেছে, আমার তো বর হিসেবে তার হিসেব নিতে হবে!”

আশরাফ চৌধুরী কিউ বুঝে উঠতে পারলেন না। তার মেয়ের গায়ে কিসের কালো দাগ। তিনি মাথা নাড়িয়ে বললেন,

--“তুমি কিসের কথা বলছো বাবা?”

--“আমার বউয়ের শরীরে আপনার কারণে যে দাগগুলো হয়েছে আমি সেগুলোর কথা বলছি!”

শিশির হাতের মগটা টেবিলে রাখলো। তারপর সানজিদের দিকে ফিরে আদেশের কন্ঠে বলল,

--“গাড়ি বের কর, আমি বেরোব!”

এই কথাটা আশরাফ চৌধুরীর কানে যেতেই তিনি বলে উঠলেন,

--“আমাদের মিটিং,,?”

--“আমার এখন কোনো মুড নেই আপনার সাথে আর কথা বলার।”

বলে শিশির উঠে চলে গেলো রুমের বাইরে। পিছন পিছন সানজিদ। আশরাফ চৌধুরী যেন কিছুই বিশ্বাস করতে পারছে না। তিনি কপালে হাত দিয়ে নুইয়ে পড়লেন।

________

--“আমরা কোথায় যাচ্ছি স্যার?”

--“তোর ভাবির কাছে যাচ্ছি!”

সানজিদ ড্রাইভিংয সিটের পাশের সিটে বসে আছে। শিশির পিছনে। সানজিদ তার বসের উত্তর শুনে বেশ অবাক হয় সঙ্গে মুখ টিপেও হাসে। শিশিরের মুড এখন ভালো আছে। সকাল থেকে মুখে লাল আভাটা এখন আর নেই। তার বসের মুড ভালো থাকায় সানজিদেরও মন ভালো হয়ে গেছে। তার জীবনের একমাত্র টেনশন হচ্ছে তার বসের মুড। কখন বিগড়ে যায় বলা মুশকিল....

--“গাড়ি থামাও!”

হঠাৎ পিছন থেকে শিশিরের আদেশ ছুটে আসলো ড্রাইভারের জন্য। সঙ্গে সঙ্গে গাড়িতে ব্রেক পড়ল। সানজিদ চিন্তিত স্বরে পিছনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

--“কি হয়েছে স্যার?”

সানজিদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই শিশির গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। এটা ফুল মার্কেট। এখান থেকে ঢাকার যাবতীয় ফুল যায়। শিশির এগিয়ে গেলো একটি দোকানের দিকে। দোকানের সামনে একটি মেয়ে দোকানের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। শিশির তার পিছনে দাঁড়িয়ে জিগ্যেস করল,

--“তুমি এখানে কি করছ?”

চলবে.......

রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi

Address

Jessore

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when রুদ্রিকা বেদী - Rudrika Bedi posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share