09/09/2025
"ন্যারেটিভ, চেতনা ও কুসংস্কার"
মানুষের সভ্যতা টিকে আছে মূলত চেতনার উপর। এই চেতনা কখনো রাজনৈতিক, কখনো সামাজিক, কখনো ধর্মীয়, আবার কখনো সাংস্কৃতিক রূপে প্রকাশ পায়। কিন্তু প্রতিটি চেতনা টিকে থাকে এক ধরনের ন্যারেটিভের ভেতর। ন্যারেটিভ মানে হলো— একটি গল্প, একটি ধারণা, একটি মানসিক কাঠামো, যা মানুষের বিশ্বাসকে আকার দেয়। আর যখন ন্যারেটিভ অন্ধবিশ্বাসে পরিণত হয়, তখনই জন্ম নেয় কুসংস্কার।
"নেতাকেন্দ্রিক ন্যারেটিভ"
আমাদের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় ন্যারেটিভ হলো— *নেতাই সব*। অথচ মূল নীতি বা আদর্শের জায়গা থাকা উচিত সামনে। আমরা শুনি— *অমুক ভাই ভালো মানুষ*, *তমুক ভাই জনগণের বন্ধু*। কিন্তু কখনো কি শোনা যায়— *আমার নেতার নীতি ভুল করছে, সংশোধন দরকার*? না। এখানে সমালোচনার জায়গা নেই। ফলে জনগণের চেতনা ধীরে ধীরে ব্যক্তিপূজায় রূপ নেয়।
"চেতনার মিশ্রণ"
মানুষ আসলে বহুমাত্রিক সত্তা। তার ভেতরে একদিকে রাজনৈতিক চেতনা, অন্যদিকে সামাজিক দায়িত্ববোধ, কখনো আবার ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক অনুভূতিও থাকে। কিন্তু যখন সব চেতনা একপাক্ষিক ন্যারেটিভে বন্দী হয়ে পড়ে— তখন মানুষ নিজের স্বাধীন বিবেচনা হারিয়ে ফেলে। নেতার গুণকীর্তনই হয়ে ওঠে তাঁর সর্বোচ্চ কর্তব্য। এভাবে ন্যারেটিভের মোহে পড়ে চেতনার স্বাভাবিক মিশ্রণ কুসংস্কারে পরিণত হয়।
" কুসংস্কারের ফাঁদ"
কুসংস্কার মানে শুধু ভূত-প্রেতের ভয় নয়, রাজনীতিতেও কুসংস্কার আছে। যেমন— “আমার নেতা কখনো ভুল করতে পারে না।” এই বিশ্বাস সমাজকে পিছিয়ে দেয়। কারণ এটি মানুষকে যুক্তি থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। প্রশ্ন করার অধিকার, নীতি যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা— সবই হারিয়ে যায়। শেষমেশ জনগণ নিজের ভাগ্যও নেতার ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করে ফেলে।
"পরিবর্তনের উপায়"
এই অচলায়তন ভাঙতে হলে আমাদের প্রয়োজন নতুন ন্যারেটিভ— এমন ন্যারেটিভ যেখানে ব্যক্তি নয়, নীতি মুখ্য হবে। জনগণকে বোঝাতে হবে, রাজনীতি মানে কেবল নেতার প্রতি আনুগত্য নয়, বরং রাষ্ট্র ও সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার যৌথ চেতনা। চেতনার মিশ্রণকে ইতিবাচক পথে পরিচালিত করতে হবে, যেখানে থাকবে নীতি, ন্যায় ও সমালোচনার স্বাধীনতা।
ন্যারেটিভ, চেতনা ও কুসংস্কার— এ তিনটি আসলে একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ন্যারেটিভ মানুষকে দিশা দেয়, চেতনা তাকে কর্মশক্তি জোগায়, আর কুসংস্কার তাকে অন্ধ করে দেয়। তাই প্রয়োজন এমন এক নতুন ন্যারেটিভ, যা চেতনার মিশ্রণকে গঠনমূলক করবে এবং কুসংস্কারের শৃঙ্খল ভাঙবে। তখনই আমরা পাবো একটি নীতিনিষ্ঠ, সচেতন ও প্রগতিশীল সমাজ।