09/07/2025
কৃষকের ১৫০ টি মালটা ও পেয়ারা গাছ কেটে দেওয়ার অভিযোগ
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সোনারদাইড় গ্রামে দিনে দুপুরে কৃষকের ১৫০টি ধরন্ত মাল্টা ও পেয়ারা গাছ কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সেনা সদস্য মো. আবু হানিফের বিরুদ্ধে । মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুরে উপজেলার সোনারদাইড় গ্রামের মাঠে বিপুল হোসেন নামে এক কৃষকের মাল্টা ও পেয়ারা গাছ কেটে দিয়েছেন তিনি। সাধারণ কৃষকেরা জানান, মাল্টা বাগান কাটার কারনে কৃষকের প্রায় ৪ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনায় বিপুল ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বিপুল হোসেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের সোনারদাইড় গ্রামের মো. সামছুল মন্ডলের ছেলে। সেনা সদস্য আবু হানিফ একই এলাকার মৃত আলী হোসেনের ছেলে।
জানা যায়, বিপুল হোসেন পেশায় একজন ইজিবাইক চালক। একটু ভাল চলার আসায় গ্রামের প্রতিবেশি মোশারেফ ও তার মা ফাতেমার কাছ থেকে ৫০ শতক জমি ৫ বছরের জন্য লিজ নেন । লিজ বাবদ প্রতি বছর ২৫ হাজার টাকা করে ৫ বছরে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। এছাড়াও ওই জমিতে গাছ থাকায় ৩৫ হাজার এবং তারের বেড়া বাবদ ২০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। সব মিলায়ে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় ৫ বছরের জন্য চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী অগ্রিম ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা মোশারেফ ও তার মা ফাতেমার হাতে দেওয়া হয়।
কিন্তু পাঁচ বছর পূর্ণ না হতেই তিন বছরের মাথায় মোশারেফের ভাই সেনা সদস্য আবু হানিফ ওই জমি দখল নিতে গেলে বিপুল চুক্তি অনুযায়ী জমি ছাড়ে দিবেন বলে জানান। পরে হানিফ থানাতে অভিযোগ করলে, থানা পুলিশ উভয় পক্ষকে ডেকে ওই জমির চুক্তি শেষ না হলেও মাল্টা ফল বিক্রয় করে জমি ছেড়ে দেওয়ার ব্যপারে সিন্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে হানিফ মাঠে গিয়ে মাল্টা গাছের ফল দেখে তিনিও সিদ্ধান্ত দেন মাল্টা বিক্রয় করা হলে জমি ফেরত নিবেন। কিন্তু তার স্ত্রী তা মেনে নিতে নারাজ, মঙ্গল বার দুইজন শ্রমিক, স্ত্রীর আত্মীয় স্বজনসহ তিনি নিজে থেকে ধরন্ত মাল্টা গাছগুলো কাটেন।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৫০ শতক জমির চারিদিকে তারের বেড়া। ভিতরে বড় বড় ধরন্ত মাল্টা গাছ সবগুলো গাছ গোড়া থেকে কাটে দেওয়া হয়েছে। এই মৌসুমে আওবাহাওয়া ভালো থাকায় পরম যন্তে করে মাল্টার চাষ করেছেন। প্রতিটি গাছে পর্যাপ্ত মাল্টা ধরে আছে। অথচ প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে ধারালো করাত এবং দা দিয়ে বড় বড় গাছগুলো কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। মাল্টাগুলো আগামী ১ মাসের মধ্যে বাজারে বিক্রয় করতে পারতেন কৃষক বিপুল হোসেন। কিন্তু পেশি শক্তি দেখিয়ে বাশেরদাইড় গ্রামের সেনা সদস্য হানিফ লোকজন নিয়ে দিনে দুপুরে বাগানের সব গাছ কেটে দিয়েছে।
বিপুলের ভাতিজা সম্রাট বলেন, দুপুরে মাঠে ঘাস কাটতে আসি। এরপর চাচার বাগান থেকে গাছ কাটার শব্দ শুনতে পাই। পরে বাগানের দিকে গিয়ে দেখি সেনাবাহিনীর চাকরী করে হানিফ, তার স্ত্রী, শালীসহ বেশ কয়েকজন লোক মিলে মাল্টা গাছ কাটছে। আমি গাছ কাটতে নিষেধ করতে গেলে আমাকে দা দেখায় মারার জন্য। আমি ভয় পেয়ে বাড়িতে গিলে চাচাকে বলি।
মাল্টা চাষী বিপুল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ৫ বছরের জন্য এই জমি লিজ নিয়েছি। চুক্তি অনুযায়ী এখন ৩ বছর চলমান, সামনে এখনো দুই বছর চুক্তির মেয়াদ রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে হানিফ ওই জমি ছেড়ে দিতে বার বার হুমকি দিয়ে আসছে। ১ মাস আগে ওই জমি জোর করে দখল করতে আসে। আমার নামে থানায় অভিযোগ দেয়। সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দেয়। সেনাবাহিনী এবং পুলিশ উভয় পক্ষকে ডাকে। আমি তাদের কাছে আমার চুক্তির কাগজ দেখায়। তখন সবাই সিন্ধান্ত নেই গাছে যেহেতু মাল্টা আছে, এজন্য মাল্টা গুলো বিক্রয় শেষে দুই বছর আগেই জমি ফেরত দিতে হবে। আমি তাদের সিন্ধান্তে রাজি ছিলাম। আমিও চেয়েছিলাম যেহেতু গাছে প্রচুর পরিমানে মাল্টা আছে। মাল্টাগুলো বিক্রয় করে জমিটা ছেড়ে দিবো, কিন্তু হঠাত কবে হানিফ তার স্ত্রীর সাথে করে দলবল নিয়ে আমার ধরন্ত মাল্টা গাছ কেটে দিয়েছে। বাগানে এক একটি গাছে ৫০ থেকে ৬০ কেজির বেশি মাল্টা ধরেছে। বর্তমান বাজার অনুযায়ী ৫০ শতক জমিতে ৫ লক্ষ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে, যা আমার পক্ষে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। আমি সেনা সদস্য হানিফের নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছি। হানিফ একজন আইনের লোক হয়ে কাউকে না জানিয়ে, আমার ধরন্ত মাল্টাগাছ কেটে দিয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
সেনা সদস্য হানিফ বলেন, এই জমি লিজের ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। এটা আমার জমি, আমার ভাই বিপুলের কাছে লিজ দিয়েছে। বিষয়টি জানার পর তাকে ডেকে বলি তুমি গরিব মানুষ তোমাকে ক্ষতি করতে চাচ্ছি না। তুমি তোমার মত করে জমি থেকে সরে যাও। তার পরও সরে নাই। একানে গাছগুলো কেটে দিয়েছি।
হলিধানী ইউনিয়নের সোনারদাইড় ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই জমিটা পাশের গ্রামের আলি হোসেনের। তিনি মারা যাবার পর উত্তরসুরী হিসেবে ছেলে হানিফ মালিক হয়। হানিফ সেনাবাহিনীতে চাকরী করে। সে চারকী করা অবস্থায় তার ভাই মোশারেফ, বোন জামাই এবং মা সবাই মিলে আমাদের গ্রামের বিপুলের কাছে ৫ বছরের জন্য লিজ দেয়। পিতা মারা যাবার পর হানিফ যখন মালিক হয়, তখন বিপুলকে বলে এই জমি লিজ দিয়েছে আমার মা আমি মানিনা, জমি ফেরত দিতে হবে। তখন বিপুল বলে একটা মাল্টা গাছ লাগালে দুই তিন এবছর ধরতেই লাগে। যদি আপনারা নাই দেন , আমাকে একটু সুযোগ দেন আমি যেন মাল্টাগুলো উঠাতে পারি।
তিনি বলেন, মাঝে একটা ঝামেলা হলে বিপুর ঝিনাইদহ সেনা ক্যাম্পে একটি অভিযোগ করে। সেখান থেকে উভয় পক্ষকে ডাকে। হানিফ তার মায়ের সিদ্ধান্ত না মানাই সেখান থেকে সিদ্ধান্ত দেন মাল্টা বিক্রয় করা পযর্ন্ত বিপুল এই জমি চাষ করতে পারবে। সেই অনুযায়ী আগামী এক মাসের মধ্যে গাছের মাল্টাগুলো বাজারে বিক্রয় উপযোগী হয়ে যেতো, জমিটাও ছেড়ে দিত। কিন্তু একজন সেনা সদস্য হয়ে কৃষকের ধরন্ত ফলের গাছ কেটে দিল। তার দ্বারাই এমন কাজ আমরা আশা করি না। বিপুল যেন ন্যায় বিচার পাই আমরা সেই প্রত্যাশা করি।
হলিধানী ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ. মফিজ উদ্দিন বলেন, মাল্ট ফল বছরে একবারই হয়। অনান্য গাছের মতো মাল্টা গাছের কোন ডালপালা ছাটাও যায়না। কৃষক বিপুলের সাথে যেটা ঘটেছে ইচ্ছা কৃত ভাবে ঘটিয়েছে। সেনা সদস্যের দারা এমন কাজ খুবই দুঃখজনক। এই ক্ষতি কৃষকের পক্ষে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।