27/09/2024
বাসায় আতিকের ফুপা ফুপু বেড়াতে এসেছেন। সচারচর মেহমান আসলে বাড়ির পরিবেশ উৎসবমুখর থাকে, কিন্তু আতিকের ফুপা ফুপুর ক্ষেত্রে একটু ব্যাতিক্রম। তারা আসার পর বাড়ির কম বেশি সবাই অসুবিধায় আছে কিন্তু কেউ মুখে বলতেছে না।
যেমন আতিকের বাবা আগে সারাদিন ডিসকভারিতে বিয়ার গ্রিলসের বন বাদারে অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে বেড়ানো দেখতেন৷ এখন তিনি তার বোন জামাইয়ের অত্যাচারে রিমোর্ট হাতে নিতেই পারেন না, আতিকের ফুপা সারাদিন সনি আটে ক্রাইম পেট্রোল দ্যাখেন। শুধু দ্যাখেন না অপরাধী কিভাবে খুন করলে পুলিশ তাকে ধরতে পারতো না সেটা নিয়ে বিস্তার গবেষণা করেন। আতিকের বাবাকে ভদ্রতার খাতিরে এই মার্ডার বিষয়ক আলোচনায় অংশগ্রহন করতে হয় । খুন খারাবির উপর ফুপার এমন প্রবল আর্কষন দেখে আতিক তার ফুপুর জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ চিন্তিত।
ফুপু রাতের বেলা খেতে বসে অন্তরার রান্না খেয়ে বললেন, " মা রান্না এমনিতে ভালোই তবে রান্নায় তেলটা বড্ড বেশি দেও। তোমার রান্না খাইলে লো প্রেশারের রোগিও হাই প্রেশারের রোগী হয়ে যাবে, হা হা হা " । এটা আতিকের ফুপুর পুরানো ট্রিক , খোচা শেষে একটা করে বিকট হাসি দেন, যেন পরিবেশ হালকা থাকে।
অন্তরাকে খোচা খেতে দেখে তার শাশুড়ী মিচকি হাসি দিচ্ছিলেন কিন্তু ফুপু আবার বলা শুরু করলেন, " তবে তোমার রান্নার হাত ভাবির চেয়ে ভালো, ভাবি তো খাবারে লবন দিতেই ভুলে যেত, কতদিন লবন ছাড়া তরকারি খেয়েছি আমরা, হা হা হা " আবার একটা বিকট হাসি।
রাতের খাবারের পর ফুপা বারান্দায় আতিক ও তার বাবার সাথে গল্প করতে বসেছেন, আতিক গল্পে আগ্রহী না হলেও ফুপা খুবই উৎসাহী।
সিগারেট টানতে টানতে ফুপা বললেন, তোমার এই জব দিয়ে জীবনে কি হবে? কিছু মনে করিও না তোমার ভালোর জন্যই বলতেছি।
আতিক আমতা আমতা করে বললো, জব করে যা হয় তাই হবে ফুপা, মাসের শেষে বেতন হবে বছর শেষে দুই ঈদে দুইটা বোনাস হবে।
আরে গাড়ী বাড়ী জায়গা জমি করতে হবে না, সেটার জন্য কি করবা? কিছু মনে করো না তোমার ভালোর জন্যই বলতেছি।
ভাবতেছি জবের পাশাপাশি কিডন্যাপিংএর বিজনেস শুরু করবো, আপনার সন্ধানে কোনো বড়লোকের ছেলে মেয়ে থাকলে অবশ্যই জানাবেন।
আতিকের জবাবে, ফুপা বিস্ফোরিত চোখে তাকায়ে আছে তার দিকে। ফুপার চোখে চরম বিস্ময়, রসবোধের অভাবে তিনি বিষয়টা সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলেছেন এটা বুঝতে পেরে আতিকের বাবা বললেন - আতিক রসিকতা করেছে তুমি ভয় পেয়ো না।
এসব রসিকতা আমার সাথে করতে মানা করবেন, এসব মোটেও রসিকতার বিষয় না, আজ রসিকতা করেছে কাল সত্যি সত্যি করবে। তখন ওর উপরে ক্রাইম পেট্রোলের এপিসোড হবে।
সেন্স অফ হিউমারের ঘাটতি যাদের মধ্যে বিদ্যমান তাদের সাথে ইর্য়াকি ঠাট্টা করা নিরাপদ না। কিন্তু আতিক দ্বিতীয়বার এই ভুল করলো পরের দিন সকালে। সকালে নাস্তার পর ফুপা জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের বাথরুমে গতকাল দেখলাম আরশোলা আজ দেখি বিশাল বড় একটা টিকটিকি, বাথরুমের মধ্যে তো মিনি চিড়িয়াখানা বানায়ে রাখছো, এখানে আর কি কি জীব জন্তু দেখা বাকি আছে ?
নাহ আর সেরকম কিছু না তবে মাঝেমধ্যে কমোড দিয়ে সাপ উঠে আসে। বলো কি সাপ? ফুপা চোখ কপালে তুলে ফেলেছে মানে তিনি আতিকের রসিকতা এবারেও ধরতে পারেননি৷ আতিক এবারে রসিকতা ধরায়ে না দিয়ে সেটা চালায়ে গেলো।
সাপ বলতে বাচ্চা সাপ, কাল কেউটের বাচ্চা। সমস্যা নেই প্রাপ্ত বয়স্কের চেয়ে বিষ কম হয় এদের।
- কাল কেউটের বাচ্চা তোমাদের বাথরুমে ঘোরাফেরা করে? যদি কামড়ায়?
- কিচ্ছু হবে না,
- সত্যিই কিচ্ছু হবে না?
- জ্বী ফুপা, আধাঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে নিতে পারলে কিচ্ছু হবে না।
- হাসপাতাল কতদূর এখান থেকে?
- বেশি না মাত্র বিশ মিনিট, যদি সিএনজি ক্যাব এসব পাওয়া যায় তবে।
- আর না পাওয়া গেলে?
- না পাওয়া গেলে বাংলা সিনেমার তরিকায় বিন বাজায়ে সাপকে ডেকে বিষ তুলে নেওয়ার রিকোয়েস্ট করা যেতে পারে৷ কিন্তু সেখানেও তো সমস্যা।
- কি সমস্যা?
- ধরেন বিন বাজায়ে একজনকে ডাকলাম আর আসে পাশে থেকে সাপের পুরো ফ্যামিলি চলে আসলো, তখন বিষ তোলা দূরে থাক উল্টা দুই চারটা বেশি কামর খাওয়ার রিস্ক হয়ে যাবে ।
- এসব ক্যালকুলেশন বাদ দিয়ে এখুনি গিয়ে আমার আর তোমার ফুপুর জন্য আজকের দুপুরের ট্রেনের ফাস্টক্লাসের দুইটা টিকেট কেটে আনো। আমাদের আজকেই ফিরতে হবে।
ফুপা টিকেট হাতে পেতেই স্টেশনে ফুপুকে নিয়ে চলে গেলেন। ফুপার তাড়া দেখে মনে হলো পরবর্তী বাথরুমের চাপ আসার আগেই তিনি বাসায় পৌঁছাতে চান।
ধন্যবাদ
লেখক: কুন্তল হোসেন