25/04/2025
ঝিনাইদহ শহরের উপর দিয়ে রেলপথ ছিল।
এখানে রেলের সম্পদ যেহেতু আছে, ঝিনাইদহবাসির রেলপথ পুন:থাপনের দাবী থাকাটাই খুবই যোক্তিক....
ঝিনাইদহ শহরে রেল পথ কিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হলো?
ঝিনাইদহ শহরে অতীতে রেলপথ ছিল এবং সেই রেল পথ কিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হলো....
হয়ত এ ইতিহাস আপনারা অনেকেই জানেন না।
ভারত উপমহাদেশে প্রথম রেলপথ চালুর পর ১৮৮৪ সালে খুলনা ও যশোরের সাথে কলকাতার রেলপথ সংযুক্ত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯১৪ সালে যশোর হতে ঝিনাইদহ পর্যন্ত ৪৫ কি.মি দীর্ঘ ব্রডগেজ রেললাইন নির্মিত হয়।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ঝিনাইদের বর্তমান কেন্দ্রীয় কবরস্থানের উত্তর পাশে ঝিনাইদহ রেল স্টেশন ছিল। পূর্বে এখানে মেথরপট্টি ছিল। বর্তমানে তদস্থলে গড়ে উঠেছে নতুন পৌর মার্কেট।
সেই রেল স্টেশনের কোনো চিহৃ এখন আর নেই। তখন প্রতিদিন ৪ বার করে রেল আসা-যাওয়া করত ঝিনাইদহ থেকে যশোরে। Jessore, Jhenidah ইংরেজি শব্দের প্রথম অক্ষর 'J ' দিয়ে, সেজন্য এ রেলপথের নাম দেওয়া হয়েছিল জে.জে. রেল লাইন।
যশোর-ঝিনাইদহ (৪৫ কিমি.) রাস্তার মধ্যে প্রসন্ননগর, কালীগঞ্জ, বারোবাজার ও চুড়ামনকাঠিতে রেলস্টেশন ছিল।
মি. হ্যারল্ড জি ম্যাকলিউড সাহেবের তত্বাবধানে এ সময় চিনি শিল্প গড়ে উঠে কোঁটচাদপুরে। এতে কোঁটচাদপুর পর্যন্ত ৮ মাইল দীর্ঘ রেল লাইন সম্প্রসারিত করা হয়।
ঝিনাইদহ হতে যশোর পর্যন্ত রেলগাড়ির ভাড়া ছিল প্রতিমাইল ১ পয়সা করে।
ঝিনাইদহ-যশোর, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ-মাগুরা রোড দিয়ে বাস চলাচল শুরু হয় ১৯৩৫/৩৬ সালের দিকে। তুলসীরাম নামে একজন মাড়োয়ারি ও কালীগঞ্জের কয়েকজন মিলে একটি বাস সিন্ডিকেট কোম্পানি গঠন করেন এবং যশোর-ঝিনাইদহ বাস লাইন চালু করেন কাঁচা রাস্তা দিয়ে। এই বাস লাইন ছিল রেলপথের একদম পাশে।
রেলের সাথে প্রতিযোগীতা করে রেলের চেয়ে মাইল প্রতি বাস ভাড়া কম নিতে শুরু করে বাস মালিকরা।
অতিরিক্ত সুযোগ হিসাবে, বাসে চড়লে নাস্তা দেয়া হতো যাত্রীদের এবং কখনো কখনো দেয়া হত উপহার সামগ্রী। মানুষ যশোর যাওয়ার জন্য রেলগাড়িতে না উঠে বাসে উঠতে শুরু করে অধিক পরিমানে। ফলে রেল কোম্পানি পরিবহন প্রতিযোগীতায় পিছিয়ে পড়তে থাকে। এ সময়ে ঝিনাইদহের পাল কোম্পানি ও যশোরের কুরি কোম্পানি বেশ কতকগুলো বাস ক্রয় করে রাস্তায় নামিয়ে দেয় যাত্রী পরিবহনের জন্য। ফলে রেল উঠে যেতে বাধ্য হয়।
রেল লাইন উঠে যাওয়া আর একটি কারণ হচ্ছে, বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রেল কখনো বাসের আগে যেতে পারত না গন্তব্যস্থলে। রেলগাড়ি বাসের থেকে ধীর গতিতে চলতো। পথিমধ্যে হাত উঁচু করলে রেলও দাঁড়াত, বাসও দাঁড়াত যাত্রী উঠানোর জন্য। রেলের থেকে বাসের গতি বেশি থাকায় স্বল্প সময়ে যাত্রীরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারতো, তাছাড়া বাস ভাড়াও ছিল রেলের ভাড়া অপেক্ষা কম। এভাবে যশোর-ঝিনাইদহ রেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৩৬ সালে যশোর-ঝিনাইদহ সড়ক পাকা করার সময় রেললাইন উঠিয়ে ফেলা হয়। ২০২২ সাল হিসাবে আজ থেকে ১০৯ বছর আগে ঝিনাইদহ শহরের উপর দিয়ে রেলপথ ছিল। এখানে রেলের সম্পদ যেহেতু আছে, ঝিনাইদহবাসির রেলপথের দাবী থাকাটাই স্বাভাবিক। শুধু দাবীই নয়, এটা ঝিনাইদহবাসির অধিকার।
* পুনরায় ঝিনাইদহ শহরের উপর দিয়ে রেল লাইন চালু করা হোক এটা এখন সবার প্রানের দাবিতে পরিনত হয়েছ।