11/07/2025
প্রসংগ: কুরআন ও হাদিসের আলোকে জুয়ার নিষেধাজ্ঞা।
মহান আল্লাহ তাআ'লা পবিত্র কুরআনে বলেন-
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۹۰﴾
অর্থ: হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি ইত্যাদি এবং লটারীর তীর, এ সব গর্হিত বিষয়, শাইতানী কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এ থেকে সম্পূর্ণ রূপে দূরে থাক, যেন তোমাদের কল্যাণ হয়।
সূরা নিসা, আয়াত ৯০।
اِنَّمَا یُرِیۡدُ الشَّیۡطٰنُ اَنۡ یُّوۡقِعَ بَیۡنَکُمُ الۡعَدَاوَۃَ وَ الۡبَغۡضَآءَ فِی الۡخَمۡرِ وَ الۡمَیۡسِرِ وَ یَصُدَّکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰہِ وَ عَنِ الصَّلٰوۃِ ۚ فَہَلۡ اَنۡتُمۡ مُّنۡتَہُوۡنَ ﴿۹۱﴾
অর্থ: শাইতানতো এটাই চায় যে, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শক্রতা ও হিংসা সৃষ্টি হোক এবং আল্লাহর স্মরণ হতে ও সালাত হতে তোমাদেরকে বিরত রাখে। সুতরাং এখনো কি তোমরা নিবৃত্ত হবেনা? সূরা নিসা, আয়াত ৯১
উল্লিখিত আয়াতদ্বয়ে ‘মাইসার’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ হলো জুয়া। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, এটি শয়তানের কাজ, আর সফল হতে চাইলে এর থেকে দূরে থাকতে হবে। জুয়া শুধু অর্থের ক্ষতি নয়, এটা সম্পর্ক নষ্ট করে, বিদ্বেষ সৃষ্টি করে, নামায ও আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে রাখে। এগুলো সবই মানুষের ধ্বংসের কারণ।
হাদীসের আলোকে জুয়া :
(ক) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মদ, জুয়া ও বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন।"(বায়হাকি, হাদিস: ৪৫০৩; মিশকাত, হাদিস: ৪৩০৪)
(খ) আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে যাবে না। ’
(দারেমি, হাদিস: ৩৬৫৩; মিশকাত, হাদিস: ৩৪৮৬)
(গ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-আল্লাহ তাআলা আমার উম্মতের জন্য মদ ও জুয়াকে হারাম করেছেন।
(মুসনাদে আহমদ ২/১৬৫, হাদীস : ৬৫৪৭)
উল্লিখিত হাদিস দ্বারাও আমরা বুঝতে পারছি জুয়া কতটা নগন্য গুনাহের কাজ।
বিভিন্ন রুপ চেহারায় জুয়ার চিত্র আমরা দেখতে পাই-
আজকের দিনে মোবাইলে অ্যাপস বা গেমের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে পুরস্কার জেতার চেষ্টা, অনলাইন ক্যাসিনো বা বেটিং (ক্রিকেট, ফুটবল, ইত্যাদি), ভিডিও গেম যেখানে বাস্তব অর্থ দিয়ে "গ্যাম্বলিং" হয়,রিয়েল মানি স্পিন, লটারি ইত্যাদি এসবই জুয়ার আধুনিক রূপ।
এগুলোর পেছনে একটাই উদ্দেশ্য থাকে,আর তা হল- “কিছু না দিয়ে বা অল্প দিয়ে বেশি কিছু পাওয়ার লোভ এবং অন্যদের অর্থ হাতিয়ে নিজের পকেটে তোলা।"
কুরআন ও হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী, যে কোনো ধরনের জুয়া হোক না কোনাে সেটি পুরাতন পদ্ধতিতে হোক বা আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে হোক, ইসলামে জুয়া স্পষ্ট হারাম (নিষিদ্ধ কর্ম)।
** ✔কেন জুয়া হারাম?
০১. বিনা পরিশ্রমে লাভের আশা,
০২.অন্যের টাকা লােভে আসক্ত হয়ে নিজের করে নেওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি করে,
০৩. লোভ, হিংসা ও হতাশা সৃষ্টি করে,
০৪. পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি,এবং
০৫. আখিরাত ধ্বংসের কারণ হয়
***✔ জুয়া থেকে বাঁচার জন্য জরুরীভাবে করণীয়:
মোবাইল থেকে সব জুয়া সম্পর্কিত অ্যাপস ও গেমস মুছে ফেলুন। জুয়া বলতে আরো যত কিছু উপকরণ ও বন্ধু আছে সবকিছু থেকে দূরে থাকুন। নিজে তাওবা করুন ও অন্যদেরকেও সচেতন করুন। আল্লাহর দেওয়া হালাল রিজিক ও পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জনকে মূল্য দিন। সময় কাটান ইবাদাতে, দ্বীনি জ্ঞানে ও বেশি বেশি ভাল কর্ম করার মাধ্যমে।
অতএব, সব ধরনের জুয়া-বাজি ইসলামে অবৈধ। জুয়া-বাজি থেকে প্রাপ্ত সবকিছু হারাম। হারাম ভোগ করে ইবাদত-বন্দেগি করলে, আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন না। তাই মুসলমান হিসেবে সব ধরনের জুয়া-বাজি থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো,শহরাঞ্চল তো আছেই প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন বিভিন্ন জায়গায় বসছে জুয়ার আসর। কৃষক, তরুণ, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছেন মরণনেশা জুয়ায়। এসব আসরে উড়ছে লাখ লাখ টাকা। মাদকের মতোই জুয়ার গ্রাস এখন দৃশ্যমান।
আমাদের আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা জুয়ার নেশায় যেসমস্ত ভাইয়েরা তাদের জীবন ধ্বংসের দিকে ধাবিত করছে তাদেরকে আমরা ইসলামের সুমহান দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করি,তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট আহবান আমরা করতে পারি,তাদের নিকট আপাতত কুরআন ও হাদিসের বাস্তবতা তুলে ধরি,যাতে করে আমাদের নূন্যতম দায়িত্ব হলেও পালন হয় ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের জুয়ায় আসক্ত মুসলিম ভাইদের জুয়ার কঠিন ক্ষতিকর প্রভাব বোঝার ও দ্বীনের সঠিক জ্ঞান যেন দান করেন,আমীন।