16/03/2024
©️ একরামুল হক আবির ,
সবাইকে পরার অনুরুধ রইল 😊
ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর এক সিনিয়র বড় ভাই আমায় ডেকে একদিন বললো, "এই পর্যন্ত কয়টা মেয়ে খেয়েছিস?"
আমি সাবলীলভাবে উত্তর দিলাম,
-দুনিয়াতে এতো খাবার থাকতে মেয়ে কেন খেতে যাবো? আমি ৩ বেলা ভাত খেয়েই সন্তুষ্ট।
আমার উত্তর শুনে বড় ভাই আমার ডানগাল লাল করে দিলো।কিন্তু এতে আমার যতটা না কষ্ট লেগেছিলো তারচেয়েও বেশি আফসোস হচ্ছিলো সিনিয়র ভাইদের সাথে বসে সিগা*রেট টানতে থাকা এক সিনিয়র আপুর জন্য।
সিগা*রেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আপুটা আমায় বললো,
- "লাল সালোয়ার-কামিজ পড়া মেয়েটার ফিগার কত হবে বল তো?"
খুব অবাক হলাম আপুটার প্রশ্ন শুনে। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে সম্মান দিচ্ছে না। এটাকেই হয়তো আধুনিকতা বলে। মেয়ে হয়ে ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে সিগা*রেট টানা। তারপর অপরিচিত এক ছেলেকে ডেকে নিয়ে এসে বিব্রতকর প্রশ্ন করা।
আমি হেসে বললাম,
-লাল সালোয়ার কামিজ পড়া আপুটার ফিগার কত হবে তা তো জানি না তবে আপনার যেহেতু এতো জানার আগ্রহ আপনাকে খুশি করার জন্য আমি আপনারটা বলি?
আমার বামগালও লাল হয়ে গেলো। দুইগাল লাল করে যখন বাসায় ফিরলাম তখন দেখি আমার ছোট বোন খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করছে। ছোট বোনকে পড়তে দেখে এই প্রথম মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো।
ছোট বোনের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
- হঠাৎ এতো পড়াশোনায় মন দিলি? কি হতে চাস জীবনে?
ছোটবোন হেসে উত্তর দিলো,
- "সাইন্স নিয়ে যেহেতু পড়ি নি সেহেতু ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। ভালো একটা পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স হয়ে গেলেই হলো"
আমি ছোটবোনকে আর কিছু বলতে পারি নি। মনে কেমন জানি একটা ভয় কাজ করছিলো। ভার্সিটিতে চান্স পেলে আমার বোনও কি ঐ সিনিয়র আপুটার মতো ছেলেদের সাথে বসে সি*গারেট টানবে?
ভার্সিটির কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম কক্সবাজার ট্যুরে যাবো। যাবার ঠিক আগ মুহুর্তে জানতে পারলাম আমাদের সাথে আমাদেরই ক্লাসমেট আরো দুইটা মেয়ে যাবে। আমি তাদের কাছে যখন জিজ্ঞেস করলাম,
-তোরা কি তোদের পরিবারের কাছ থেকে পারমিশন নিয়েছিস তোরা যে আমাদের সাথে যাচ্ছিস?
ওরা অবাক হয়ে বললো,
-" আজব! পারমিশন নিতে যাবো কেন? আমরা কি এখন বাচ্চা আছি নাকি যে পারমিশন নিবো? ভার্সিটিতে পড়ি এখন বাবা মায়ের থেকে অনুমতি নেওয়ার টাইম নাই"
খুব অবাক হয়ে বললাম,
-ভার্সিটিতে পড়িস বলে কি হয়েছে? তাই বলে বাবা মায়ের থেকে অনুমতি নিবি না? তোরা যে এতোগুলো ছেলের সাথে যাবি আল্লাহ না করুক তোদের সাথে যদি খারাপ কিছু হয়। ধর আমিই যদি তোদের সাথে খারাপ কিছু করি তখন?
ওরা দুইজন আমার কথা শুনে উত্তর দিলো,
-"আরে, তুই আমাদের বন্ধু। তুই কেন আমাদের সাথে খারাপ কিছু করবি? তোদের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে।"
আমি বললাম,
- বিশ্বাস তো আংকেল আন্টিরও তোদের প্রতি ছিলো। তাইতো এতোদূরে পড়াশোনা করার জন্য পাঠিয়েছে। তোরা তো তাদের সেই বিশ্বাসটা রাখছিস না। যেখানে সন্তান হয়ে নিজের বাবা মায়ের বিশ্বাসটা নিজেরা নষ্ট করছিস সেখানে আমি যে তোদের বিশ্বাস নষ্ট করবো না তার কি গ্যারান্টি আছে? আমি তোদের বন্ধু হই আপন ভাই না যে আমার থেকে নিরাপদ থাকবি....
মন খারাপ করে বাসায় ফিরে আসলাম। বাসায় এসে ছোটবোনকে জিজ্ঞেস করলাম,
- ধর তোর ঢাকায় কোথাও চান্স হলো না। তোর চান্স হলো রাজশাহী। তখন তুই কি করবি?
ছোটবোন উত্তর দিলো,
- " কি আর করবো, হোস্টেলে থাকবো নয়তো ফ্রেন্ডরা মিলে কোন ফ্ল্যাট নিয়ে থাকবো"
কথাটা শুনে মনে আবারও ভিষণ ভয় লাগছিলো। আমার বোনও যদি আমাদের না বলে ফ্রেন্ডদের নিয়ে ট্যুরে যায়। তখন যদি কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। আমরা তো এইসবের কিছুই জানবো না। কারণ বোনতো আমাদের আগে কিছু বলে নি.
একবার পরিবারের সবাই গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেলো। আমি যেতে পারি নি কারণ আমার পরীক্ষা ছিলো। পরীক্ষা শেষ করে বাসায় আসার ঠিক ঘন্টাখানিক পর আমাদের বাসায় রবিন আর ওর গার্লফ্রেন্ড লাবণী আসলো। লাবণী আমাদের ভার্সিটিতে পড়ে তবে অন্য ডিপার্টমেন্টে। আড়ালে রবিন আমায় ডেকে নিয়ে গিয়ে বললো,
- " ভাই প্লিজ না করিস না। আমি জানি তুই বাসায় একা। বেশিক্ষণ না শুধু একঘন্টা সময় লাগবে আমাদের"
আমি বললাম,
- লাবণী কি নিজের ইচ্ছেই এসেছে নাকি তুই জোর করে নিয়ে এসেছিস?
রবিন বললো,
-" আরে! জোর করবো কেন? আমি কি স্কুলে পড়া মাইয়ার সাথে প্রেম করি নাকি। আমরা দুইজনেই এডাল্ট। দুজনের ইচ্ছেতেই হচ্ছে।"
আমি দুইজনকেই বললাম,
-দেখ তোরা দুইজনেই তো এডাল্ট তাহলে এক কাজ কর তোরা বিয়ে করে ফেল। পরিবারকে বুঝিয়ে বললে উনারা ঠিক মেনে নিবে। বিয়ের পর যখন ইচ্ছে তখন আমার বাসায় আসিস আমি না বলবো না।
রবিন কিছু বলার আগেই লাবণী বললো,
- “মাথা খারাপ! এখন কেন বিয়ে করবো? সবে আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে। এখন বিয়ে করে নিজের ক্যারিয়ারের ১৩টা বাজাতে পারবো না। আর আমার বাবা মা যদি জানে আমি প্রেম করে বিয়ে করতে চাইছি তাহলে তারা সেটা কখনোই মেনে নিবে না।”
আমি তখন বললাম,
-তোমার বাবা মা যেহেতু প্রেমের বিয়ে মানবেই না তাহলে প্রেম করতে গেলে কেন?
লাবণী আমার কথার উত্তর না দিয়ে বিরক্ত হয়ে চলে গেলো…
ছোটবোন গ্রামের বাড়ি থেকে আসলে যখন ওকে প্রশ্ন করি,
-মনে কর তুই ভালো কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পেলি। ভার্সিটিতে ভর্তি হবার পর কোন একটা ছেলের সাথে তোর প্রেম হলে। সেই প্রেমের কথা আমরা কোন ভাবে জানতে পেরে যদি তোকে সেই ছেলের সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবি তখন কি তুই বিয়েতে রাজি হবি?
ছোটবোন প্রথম উত্তর দিতে চাচ্ছিলো না। হয়তো বড়ভাইয়ের কাছে উত্তর দিতে লজ্জা পাচ্ছিলো। আমার বন্ধু সুলভ আচরণ আর জোরাজুরিতে বললো,
- “আমি ঐ সময় আমার বিয়ের চিন্তাটা মাথায় আনবো না। আমি শুধু আমার ক্যারিয়ারের দিকে ফোকাস দিবো”
ছোটবোনের উত্তর শুনে চুপ হয়ে গেলাম। আচ্ছা আমি কি এখন বড়ভাই হয়ে দোয়া করবো আমার ছোট বোনের যেন কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স না হয়? কিন্তু এটা তো উচিত হবে না। আমি চাই আমার বোনের স্বপ্ন পূরণ হোক। ও ভালো কোন ভার্সিটিতে চান্স পাক।
কিন্তু ও ভালো ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পর ও যে সেই বড় আপুর মতো সি*গারেট খেতে খেতে ছেলেদের সাথে আড্ডা দিবে না তার কি গ্যারান্টি আছে? সে যে আমাদের না জানিয়ে ছেলে বন্ধুদের সাথে ট্যুরে যাবে না তার কি গ্যারান্টি আছে?
হুট করে বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে হোটেল বা কোনো বন্ধুর ফ্লাটে রাত কাটাবেনা তার ঠিক আছে?
এই ধরেন সে প্রেগনেন্ট হয়ে গেলো! এমন কি হচ্ছেনা?
অথচ আমি যদি বলি "সহশিক্ষা হারাম, হারাম, হারাম"। এটা শুনে ফেমি নিষ্টরা নেড়ীবাদীরা বলবে, আমি নারী শিক্ষা বিরোধী।
আবার তখন আমার মুসলিম ভাই-বোনরাও লাফিয়ে এসে বলবে আমি অনেক কঠোর বা খুব বেশি বাড়াবাড়ি করছি।
আমিই তখন বাস্তবতা বিবর্জিত অবুঝ। আর ওরা মর্ডারেট মুসলিম!
আর যারা একটু দ্বীন মানে তাঁরা বলবে পরিস্থিতির স্বীকার, বাস্তবতা বুঝতে হবে। আমার মস্তিষ্কে খেলেনা কোন ইসলামে আছে বাস্তবতার জন্য হারাম হালাল হয়ে যায়!
©️ একরামুল হক আবির