04/09/2023
১১২ বছর পেরিয়ে এখনো নট আউট
#পুরান_ঢাকার বিখ্যাত "আনন্দ' কনফেকশনারি
শুধু ইলিশের কাবাব আর ফ্রুট কেক নয়,
#আনন্দ_বেকারির সব পদই জনপ্রিয়। বয়স ১১২ বছর পার হয়েছে, তবু তার খাবারের স্বাদে এতটুকু চিড় ধরেনি। এখনো ভোজনবিলাসীরা ছুটে যান সাতরওজার আনন্দ বেকারিতে। আনন্দ কনফেকশনারিতে পাওয়া যায় নানা রকম খাবার। এর মধ্যে আছে চিকেন পিৎজা, প্যাটিস, ক্রিম রোল, টিকিয়া, টানাপরোটা, সমুচা, বিস্কুট। এছাড়াও রয়েছে আস্ত মুরগির কাবাব, মুরগির রোস্ট, আস্ত খাসির কাবাব, সুতিকাবাব, বাকরখানি, পনির, কেক ও লাচ্ছা সেমাই। শবে বরাত, রমজান মাস ও ঈদে থাকে বিশেষ আয়োজন। #ইলিশ_মাছের_কাবাব, আস্ত খাসির কাবাব, সুতি কাবাব, বাকরখানি ও টানা পরোটার জন্য আগেই ফরমায়েশ দিয়ে রাখতে হয়। ইলিশের কাবাবের ফরমায়েশ দিতে হয় তিন-চার দিন আগে
#ইতিহাস
শুরুটা ১৯১১ সালে,
আজ থেকে ১১২ বছর আগের কথা। জনাব চান মিঁয়া ছিলেন এই বেকারির প্রতিষ্ঠাতা
পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের খুব কাছেই নর্থব্রুক হল। স্থানীয়ভাবে লালকুঠি নামে পরিচিত এই হলে তখন মঞ্চনাটক হয়। সংস্কৃতি অঙ্গনের লোকজনের বেশ আনাগোনা এদিকে।
চান মিঁয়া সেই হল তথা লালকুঠির পাশে এক বেকারির দোকানে কাজ নেন। সেটি আরও আগের কথা। তখনও বঙ্গভঙ্গ রদ হয়নি। এরপর ১৯১১ তে বঙ্গভঙ্গ রদ হলো। ব্রিটিশ মালিক ব্যবসা গুটিয়ে বেকারি ছেড়ে চলে গেলেন।
চান মিঁয়ার ততদিনে হাতযশ বেড়েছে। ১৯১১ সাল তখন। বঙ্গভঙ্গ রদ হয়েছে। পূর্ব বাংলা থেকে অভিজাতদের অনেকে কলকাতামুখী হচ্ছেন। তাই রুটি-বিস্কিটের ক্রেতাও নেই আগের মতো। এ অবস্থায় চান মিঁয়া ঘরে তৈরি রুটি ও বিস্কিট ফেরি করে বিক্রি করতে শুরু করেন। ঢাকার নানান জায়গায় যেতেন তিনি। এর ভেতর বুড়িগঙ্গার পাশে কেরানীগঞ্জ যেমন ছিল, তেমনি ছিল তুরাগ নদীর তীরে টঙ্গী। এভাবে একেকদিন একেক হাটে গিয়ে ফেরি করে বিক্রি করতেন বেকারি পণ্য। এজন্য পুরো ঢাকা ও এর আশপাশটা চষে ফেলেছিলেন তিনি।
দীর্ঘ ৪ দশক এভাবে চলে যায়। ফেরি করে বিক্রি করতে করতে চান মিঁয়ার বেকারি পণ্যের বেশ চাহিদা তৈরি হয়। হাতে বেশকিছু টাকাও আসে।
সেই টাকা দিয়ে "পুরান ঢাকার" আবুল হাসনাত রোডে সংগীতশিল্পী লায়লা আঞ্জুমান বানুর বাবার বাগানবাড়ি কিনে নিয়ে তিনি তার এক কোণে প্রতিষ্ঠা করেন আনন্দ কনফেকশনারি। চান মিঁয়া নিজেও ছিলেন সঙ্গীতপ্রিয় মানুষ।
ক্রেতাদের ভালো লাগা তার কাছে প্রাধান্য পেত। ভালো গান যেমন মানুষকে আনন্দ দেয়, তেমনি আনন্দ দিতে পারে ভালো খাবারও। তাই কনফেকশনারির নাম রাখেন #আনন্দ।
১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু ঘটে চান মিঁয়ার। এরপর তার ছেলে তারা মিয়া দোকানের হাল ধরেন। এরপর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ২৫ মার্চের পর দোকান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। যুদ্ধ শেষে তারা মিয়া নতুন করে দোকান শুরু করেন আগের জায়গাতেই।
তাদের সুতি কাবাব, ইলিশ কাবাব, ফ্রুট কেক, টানা পরোটা, লাচ্ছা সেমাই, ডেনিস বিস্কুট, বাকরখানি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৮৭ সালে চকবাজারে ও ১৯৯০ সালে কুর্মিটোলায় শাহীন প্লাজায় নতুন শাখা হয় আনন্দ কনফেকশনারির। সবশেষ শাখাটি ২০১২ তে ওয়ারীতে চালু হয়েছে।
বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার দায়িত্বে আছেন তাদের তৃতীয় প্রজন্ম চান মিয়ার নাতি
মোঃ সিদ্দিকুর রহমান।