28/06/2020
#পুকুরে কতিপয় মাছের সমস্যা ও তার প্রতিকারঃ
★খাবি খাওয়া বা অক্সিজেনের অভাবঃ
পুকুরে এটি একটি সাধারণ সমস্যা। সকালের দিকে বা দিনের অন্যান্য সময় মাছ যদি পানির উপর ভেসে খাবি খায় তবে বুঝতে হবে পুকুরে অক্সিজেনের অভাব হয়েছে।
মেঘলা দিনে অথবা কোন কোন সময় বৃষ্টির পরও অক্সিজেনের অভাব হতে পারে। পুকুরের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমান ৫ মিলিগ্রাম/লিটার এর নীচে নেমে গেলে মাছের এ সমস্যা হতে পারে।
★লক্ষনঃ
♥ মাছ পানির উপর ভেসে খাবি খায়।
♥ মাছ ক্লান্তভাবে পানির উপরিভাগে ঘোরাফেরা করে।
♥ শামুক ও ঝিনুক পুকুরের কিনারে এসে জমা হয়।
♥ অক্সিজেনের খুব বেশী অভাব হলে মাছ মরতে শুরু করে এবং মৃত মাছের মুখ খোলা থাকে ও ফুলকা কেটে যায়।
★প্রতিকারঃ
♥ পানিতে সাঁতার কাটা।
♥ বাঁশ দ্বারা পানির উপর পেটানো।
♥ হররা টেনে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ানো।
♥ পুকুরে পাম্প বসিয়ে পুকুরের পানি সঞ্চালন করে ঢেউয়ের সৃষ্ঠি করা।
♥ বাহির থেকে নতুন পানি সরবরাহ করা।
♥ সম্পুরক খাদ্য ও সার ব্যবহার কমিয়ে বা বন্ধ করে দেয়া।
♥ শতাংশ প্রতি ২৫০ গ্রাম চুন ও ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত লবন দেয়া।
★কার্বন-ডাই-অক্সাইড জনিত পানি দুষনঃ
পুকুরে কোন কারনে মুক্ত কার্বন-ডাই- অক্সাইডের পরিমান অত্যাধিক বেড়ে গেলে মাছের দেহে বিষক্রিয়া শুরু হয়।
পুকুরের পানিতে মুক্ত কার্বন-ডাই- অক্সাইডের প্রয়োজনীয় মাত্রা উর্ধ্বে ১২ মিলিগ্রাম/লিটার।
★লক্ষনঃ
♥ পানিতে অক্সিজেন কমে যায়।
♥ মাছের শ্বাসকষ্ট হয়।
★প্রতিকারঃ
♥ পানির উপর বাঁশ পিটিয়ে, হররা টেনে, সাঁতার কেটে, পুকুরে পাম্প বসিয়ে, এজিটেটর ব্যবহার করে পানিতে ঢেউয়ের সৃষ্ঠি করা।
♥ পুকুরে শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ।
♥ সার প্রয়োগ করে উদ্ভিদকণার পরিমান বাড়ানো।
♥ প্রয়োজনে নতুন পানি সরবরাহ করা।
♥ মাছ ছাড়ার পূর্বে পুকুর তৈরির সময় অতিরিক্ত কাদা সরিয়ে ফেলা।
★এ্যামোনিয়াজনিত সমস্যাঃ
পানিতে এ্যামোনিয়া বেড়ে গেলে পানির রং তামাটে বা কালচে রংয়ের হয়, মাছ মরতে শুরু করে।
পুকুরের পানিতে এ্যামোনিয়ার মাত্রা ০.০২৫ মিলিগ্রাম/লিটার এর উর্ধ্বে উঠলে এ সমস্যা হতে পারে।
★লক্ষনঃ
♥ মাছের ছুটাছুটি বেড়ে যায়।
♥ মাঝে মাঝে লাফিয়ে পানির উপর উঠে আসে।
★প্রতিকারঃ
♥ মাছের মজুদ ঘনত্ব কমাতে হবে।
♥ সার ও খাদ্য প্রয়োগ সাময়িক বন্ধ রাখতে হবে।
♥ পুকুরের পানি কমিয়ে নতুন করে পানি সরবরাহ করতে হবে।
★পানির উপর সবুজ স্তরঃ
পানির রং ঘন সবুজ হয়ে গেলে বা পানির শেঁওলা স্তর পড়লে পুকুরে মাছের খাবার এবং সার দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
★লক্ষণঃ
♥ এ অবস্থায় মাছ পানির উপরিভাগে খাবি খেতে পারে।
★প্রতিকারঃ
♥ শতাংশ প্রতি ১২-১৫ গ্রাম তুঁতে বা কপার সালফেট ছোট ছোট পোটলায় বেঁধে পানির উপর থেকে ১০-১৫ সেঃমিঃ নীচে বাঁশের খুটিতে বেঁধে রাখলে বাতাসে পানিতে ঢেউয়ের ফলে তুঁতে পানিতে মিশে শেঁওলা দমন করে।
♥ প্রয়োজন হলে পানি পরিবর্তন করতে হবে।
♥ শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
♥ সিলভার কার্পের মাধ্যমে জৈবিক নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
★পানির উপর লাল স্তরঃ
অতিরিক্ত লোহা অথবা লাল শেঁওলার জন্য পানির উপর লাল স্তর পড়তে পারে।
এজন্য পুকুরে খাদ্য ও অক্সিজেন ঘাটতি হয়।
প্রতিকারঃ
♥ ধানের খড়ের বিচালী বা কলা গাছের পাতা পেঁচিয়ে দড়ি তৈরী করে পানির উপর দিয়ে টেনে তা তুলে ফেলা যায়।
♥ ২-৩ বার শতাংশ প্রতি ১০০-১২৫ গ্রাম ইউরিয়া সার (১০-১২ দিন অন্তর) ছিটিয়ে দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
♥ ফিটকিরি (১০০ গ্রাম/শতাংশ) দিলেও ভাল কাজ করে।
★পানির ঘোলাত্বঃ
পুকুরে পানির ঘোলাত্ব অন্যতম প্রধান সমস্যা। পুকুরে অত্যাধিক ভাসমান পদার্থ বা ক্ষুদ্র মাটির কনা ঘোলাত্ব সৃষ্ঠি করে।
এছাড়া বৃষ্টি ধোয়া পানিতে পুকুর ঘোলা হয়ে যেতে পারে। এর ফলে সূর্যের আলো প্রবেশে বাধা পায় এবং পানিতে খাদ্য তৈরি হয় না, মাছের ফুলকা নষ্ট হয়।
★প্রতিকারঃ
♥ পুকুরে শতাংশ প্রতি ১-২ কেজি হারে পোড়া চুন অথবা ১.৫-২ কেজি হারে জিপসাম দিতে হবে।
♥ শতাংশ প্রতি ৩০ সেঃমিঃ গভীরতার জন্য ২৪০-২৪৫ গ্রাম ফিটকিরি অথবা শতাংশ প্রতি ১.২ কেজি হারে খড় পুকুরে দেয়া যেতে পারে।
♥ ক্ষুদ্র উদ্ভিদকণার কারণে ঘোলাত্ব সৃষ্টি হলে পানি পরিবর্তন করতে হবে, নতুবা মাছের খাদ্য কমিয়ে দিতে হবে।
♥ পুকুর তৈরির সময় তুলনামূলকভাবে জৈব সার বেশী করে ব্যবহার করলে ২-৩ বছরের মধ্যে ঘোলাত্ব স্থায়ীভাবে দূর হবে।
★পানিরে ক্ষারত্বঃ
পানিতে ক্যালসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়াম কম বা বেশী হ্ওয়ার ফল্ওে সমস্যার সৃষ্টি হয়। ফলে মাছ সহজেই অম্লতা এবং বিষাক্ততার দ্বারা আক্রান্ত হয়।
মাছ চাষের পুকুরে পানির ক্ষারত্বের উপযুক্ত মাত্রা ৪০-২০০ মিলিগ্রাম/লিটার।
★প্রতিকারঃ
♥ পুকুরে ০.৫ কেজি/শতাংশ হারে পোড়াচুন অথবা শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে জিপসাম প্রয়োগ করতেহবে।
♥ ক্ষারত্ব কমে গেলে পুকুরে ছাই ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
★পিএইচ জনিত সমস্যাঃ
পানিতে পিএইচ কম থাকলে মাছের শরীর থেকে প্রচুর শ্লেষ্মা বেরিয়ে যায় এবং ফুলকা আক্রান্ত হয়।
পিএইচ বেশী হলে পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন কমে যায় এবং মাছের খাদ্য চাহিদা কমে যায়।
এ ছাড়া মাছের শরীর খসখসে হয়ে যায়, মাছ ক্রমে দূর্বল হয়ে পড়ে এবং সহজেই রোগে আক্রান্ত হয়।
পুকুরের পানিতে পিএইচ গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৭-৯।
★প্রতিকারঃ
♥ পিএইচ কম হলে সাধারনতঃ শতাংশ প্রতি ১-২ কেজি হারে চুন ব্যবহার করতে হবে।
♥ ডলোমাইট অথবা জিপসাম প্রয়োগ করে পিএইচ মান বাড়ানো যায়।
♥ পিএইচ এর মাত্রা বেড়ে গেলে পুকুরে তেঁতুল বা সাজনা গাছের ডাল ৩-৪ দিন ভিজিয়ে তা তুলে ফেলতে হবে।
♥ সরাসরি তেঁতুল পানিতে গুলে প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।