
09/12/2023
মেয়েটার মা বাবা আলাদা হয়ে গেছে। মা বাংলাদেশে আর বাবা আমেরিকায়।
মেয়েটা অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো, সে আমেরিকায় গিয়ে তার বাবার সাথে থাকবে। কেননা, মায়ের সাথে থাকলে তার ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে। মা ভালো কোনো স্কুলে ভর্তি করাতে পারবেন না, ভালো কোনো খাবার খাওয়াতে পারবেন না, ইত্যাদি ইত্যাদি।
যেই কথা সেই কাজ। মেয়েটা আমেরিকায় তার বাবার কাছে চলে গেল। যাওয়ার সময় মাকে বলে গেল, ‘তোমার ভালোবাসার ক্ষমতা খুব কম মা, কম বলেই তুমি আমার বাবাকে বেঁধে রাখতে পারোনি, আমাকেও পারলে না’
মেয়ে চলে যাওয়ার পর শূন্য ঘর আর ফাঁকা উঠোনে বসে মায়ের বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে। চোখ ভিজে যায়। হঠাৎই একদিন মেয়েটার চিঠি এলো। পুরো চিঠি জুড়ে মাত্র চারটি শব্দ- ‘মা, তুমি কেমন আছো?’
মা অপলক দৃষ্টিতে সেই চিঠির দিকে তাকিয়ে রইলেন। চোখের জলে চিঠির পৃষ্টারা ভিজে গেল। চিঠির উত্তরে মা লিখলেন- ‘পলীন, তুমি কেমন আছো?’
পলীন চিঠির উত্তর দিলো না। অনেকদিন অতিবাহিত হয়ে গেল। একদিন উদাস মনে মা বাড়ির উঠোনে বসে আছেন৷ হঠাৎই পলীন তার বাবাকে নিয়ে হাজির। পলীন আর তার বাবার মুখে হাসি। পলীনের বাবা পলীনের মায়ের কাছে এসে এমনভাবে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কেমন আছো?’ যেন সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে।
মায়ের কাছে সবকিছুই স্বপ্নের মতো মনে হলো। তিনি পলীনকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি করে সম্ভব হলো এটা?’
পলীন বললো, আমেরিকায় যাওয়ার পর আমি তোমার জন্য খুব কেঁদেছি মা। লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছি। আমার সেই কান্নার জল আমি প্রতিদিন একটি বোতলে জমা করেছি। বোতলটা যেদিন ভরে গেল, আচমকাই বাবা দেখে ফেললেন। তারপর আমাকে ডেকে বললেন, ‘পলীন চল আমরা তোর মায়ের কাছে যাই’
পলীনের কথা শুনে মা কাঁদছেন। পলীন হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো, ‘মা তুমি কি বোতলটা দেখবে?’
পলীনের মা মাথা নাড়লেন।
পলীন বোতলটা বের করে মায়ের হাতে দিলো।
মা বোতল হাতে নিয়ে বললেন, ‘পুরোটাই কি তোর চোখের পানি?’
পলীন মাকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘অল্প কিছু চোখের পানি আর বাকীটা ট্যাবের’
কথাটা বলেই মা মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আকাশ বাতাস কম্পিত করে হাসতে লাগলো। যেন জগতের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য!
‘নক্ষত্রের রাত’ নাটকের সেই পলীনই হলো হুমায়ূন আহমেদের মেয়ে শিলা আহমেদ। কিশোর বয়সের বুদ্ধিমতি মেয়েটা টেলিভিশনের পর্দার বাবা মাকে মিলিয়ে দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু বাস্তব জীবনের বাবা মাকে মিলিয়ে দিতে পারেনি।
আর তাই বোধহয় আমরা হারিয়েছি একজন অভিমানী অভিনেত্রি.
!©