Lilian's Literature Cafe

Lilian's Literature Cafe Digital Creator ,Story teller & book reviews

29/11/2025

হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট থেকে বের হয়ে ডান দিকে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই সাপ্পোরো স্টেশন।

বেশ বড় স্টেশন। এই সাপ্পোরো স্টেশনকে কেন্দ্র করে আছে অনেকগুলো শপিং সেন্টার, দোকান আর রেস্টুরেন্ট। সাপ্পোরো শহরটা অনেকটা পর্যটক কেন্দ্রিক।

প্রতিদিন থাকে অনেক লোক সমাগম ও বিদেশি পর্যটকের ভিড়। এই শহরটা বেশ সুপরিকল্পিত ও সুন্দর। তুষারপাতের সময়গুলোতে সবাই আন্ডারপাস ব্যবহার করে।

সাপ্পোরো স্টেশনের নিচের আন্ডারপাসগুলোও খুব সুন্দর করে গোছানো। সেখানেও টয়লেট থেকে শুরু করে জামাকাপড়, খাবারের রেস্টুরেন্ট, লাইব্রেরি ও জাদুঘর সবকিছুই আছে। যেন মাটির নিচের নিরিবিলি কোনো বাসভূমি। শীতকাল শুরু হওয়ার সময় থেকে লোকজনের আন্ডারপাস ব্যবহার বেড়ে যায়। সাপ্পোরো স্টেশনের বেশির ভাগ ট্রেন লাইনগুলো মাটির নিচে। তাই অধিকাংশ সময় আন্ডারপাসগুলো ব্যস্ত থাকে।

দুই বছর আগে পদার্থবিদ ড. আলমগীর হোসেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি শেষ করেছেন। এক বছর হলো নতুন এক গবেষণার কাজে পাঁচ বছরের জন্য হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। পাঁচ বছরের এক কন্যা সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার। আবার তিনি বাবা হতে যাচ্ছেন। তার স্ত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এই খবরটা আলমগীরকে আরও বেশি সুখ এনে দিয়েছে।

পাঁচ বছরের কন্যা মালিহার খুব আলমণ্ড চকলেট পছন্দ। দুপুরে দুবার ফোন করে মেয়ে বলেছে চকলেট নিয়ে বাসায় ফেরার জন্য। তখন এপ্রিল মাস। তুষারপাত চলছে। সেদিন ল্যাবে অনেক কাজ থাকায় দেরি হয়ে গেছে। রাত প্রায় আটটা বাজে।

এখানে রাত নয়টায় প্রায় সব দোকান বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বাসায় ফিরলে মেয়ে মালিহা চকলেট না দেখলে ভীষণ মন খারাপ করবে। আলমগীর হোসেন হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট থেকে বের হয়ে সোজা দুটি ব্লক পার হয়ে মাটির নিচের রাস্তার দিকে গেলেন। সেখান দিয়ে সাপ্পোরো স্টেশনটি একটু সহজ পথ। কয়েক মিনিটের ব্যাপার।

মাটির নিচের এই পথগুলোর বেশির ভাগ বড় বড় শপিং সেন্টার, অফিস ও গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করা। তাই সব পথেই কিছু মানুষ দেখা যায়। কিন্তু সেদিন অনেকটা পথ হাঁটার পরও আলমগীর স্টেশনের পথ খুঁজে পাচ্ছে না। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর আলমগীর অনুভব করল এতক্ষণ তো সময় লাগার কথা নয়। প্রায়ই সে এই পথে স্টেশনের মার্কেটে আসে। নিজেকে কেমন যেন বোকা মনে হচ্ছে তার।

এমনিতে শীতের রাত। তারপর তুষারপাত হচ্ছে। বেশি রাত করা যাবে না। বাসায় ছোট মেয়ে ও অসুস্থ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। ফিরে যে যাবে সে পথও খুঁজে পাচ্ছে না।

আন্ডারপাসগুলোতে বিভিন্ন ভাষায় চিহ্ন দেওয়া থাকে কোন পথে বের হওয়া যাবে। কিন্তু এই ধরনের কিছুই সে পাচ্ছে না। একটা অদ্ভুত দ্বন্দ্ব তার নিজের ভেতর তৈরি হয়ে খুব ঠান্ডা কিছু একটা অনুভব হলো। হাড় হিম হয়ে যাওয়া একটা অনুভূতি মনের কোথাও আচমকা শুরু হলো।

আশপাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। খুব বেশি নীরবতা যেন পুরো আন্ডারপাস জুড়ে। তবে হঠাৎ হঠাৎ ট্রেন আসার শব্দ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু ট্রেন লাইন বা মানুষজন দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যে ত্রিশ মিনিট চলে গেছে। মার্কেট বন্ধ হয়ে যাবে। এমন ভুল হওয়ার কথা নয়। নিজের ওপর খুব বিরক্ত লাগছিল।

সেই সঙ্গে একটা অস্বীকৃত ভয়ও কাজ করছিল। একটা অদ্ভুত শিহরণ ও ভয়ংকর আতঙ্ক! মনে হচ্ছে নিজের পুরো শরীর বরফ জমাট হয়ে গেছে। নিজের কাছে নিজেকে অচেনা মনে হতে লাগল।

আরও কয়েক মিনিট এমন করে গেল। তারপর হঠাৎ চোখ পড়ল বাম দিকের একটি চলন্ত সিঁড়িতে কে যেন নিচে নামছে। আলমগীর আন্ডারপাস থেকে ফিরে যাওয়ার জন্য দৌড়ে গেল সিঁড়ির দিকে। একটি ১৩-১৪ বছরের মেয়ে। বাদামি রঙের চুল। পেছনে স্কুল ব্যাগ। কালো রঙের স্কুলের ইউনিফর্ম গায়ে। কালো রঙের জুতা। ছোট চুলগুলো এমন করে সামনে রাখা যে চেহারা ঠিকমতো বোঝা যাচ্ছে না। আলমগীরকে দৌড়ে সিঁড়ির দিকে যেতে দেখে মেয়েটি বলে উঠল, ওইদিকে কোনো রাস্তা নেই। তুমি এখান থেকে বাইরে যেতে পারবে না।

আলমগীর একটু ভড়কে গেল। বুকের কোথাও মোচড় দিয়ে উঠল। আলমগীর বলল, কেন যেতে পারব না? কি সমস্যা হয়েছে?
মেয়েটি তার স্কুল ব্যাগ পিঠে একটু ঠিক করে নিয়ে বলল, তুমি এখন টোকিওতে আছ। বর্তমান থেকে আরও কয়েক বছর পিছিয়ে। কোনো এক অতীত সময়ে।

আলমগীর ভ্রু কুচকালো, কি উল্টাপাল্টা বলছ! আমার মেয়ে আর স্ত্রী আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
অদ্ভুত মেয়েটি হো হো করে হেসে উঠল। মেয়েটির হাসি দেখে আলমগীর এবার একটু ভয় পেল। তা ছাড়া ছোট জাপানিজ মেয়েটি খুব সুন্দর বাংলা ভাষায় কথা বলছে। ব্যাপারটা বুঝতে তার আর বাকি রইল না। সে অনুভব করল অন্য কোনো ঘটনা তার চারপাশে ঘটে যাচ্ছে। তবুও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল।

আলমগীর মেয়েটিকে বলল, তুমি কি অদ্ভুত কিছু আমাকে বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করছ? তুমি জানো আমি পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম! এখনো আমি এই বিষয়ে গবেষণা করছি। পৃথিবীতে তোমাদের অস্তিত্ব অমূলক। ভ্রান্ত কল্পনা ছাড়া কিছু না।
মেয়েটি একটু এগিয়ে এল। কাঁধের স্কুল ব্যাগটা পাশে রেখে সিঁড়িতে বসল। আলমগীর পথ খুঁজতে লাগল। আরও কয়েক মিনিট এভাবেই গেল।
তারপর মেয়েটি একটি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল, তোমাদের বিজ্ঞানীদের নিয়ে এই একটা সমস্যা! সবকিছু নিজেদের দায়িত্বে নিতে চাও। পৃথিবীর সব রহস্য কি তোমরা আবিষ্কার করতে পেরেছ? তাহলে পৃথিবীতে মানুষের জীবন কেন প্রতি মুহূর্তে নানা দ্বন্দ্ব নিয়ে ঘোরে?
আলমগীর একটু বিরক্ত কণ্ঠে বলল, মানব জীবনের দ্বন্দ্ব স্বাভাবিক। বিজ্ঞান জীবনকে উপভোগ্য আর সহজ করে তোলে। সেখানে এমন কল্পনা শুধুই বিনোদন।
তার মানে তুমি বলতে চাও এখন যা কিছু সব কল্পনা আর বিনোদন?
আলমগীর একটু থেমে গেল। তারপর আমতা-আমতা করে বলল, হয়তো আমার মনের কোনো বিভ্রান্তি!

মেয়েটিকে দেখতে এখন অনেকটা কুঁজো বুড়ির মতো মনে হচ্ছে। ঠিক যেন এক শ বছর বয়সের কোনো বুড়ি স্কুল ড্রেস পড়ে আছে। ঠোঁটে আর মুখে নরম চকলেট লেগে আছে। তারপর বুড়ি ঘাড় বেঁকিয়ে বলল, পৃথিবীর নিজস্ব নিয়ম আছে যা সব আবিষ্কারের ওপর। তুমি যা করবে তাই তুমি পাবে। আজ অনেক বড় দুর্ঘটনা ঘটবে তোমার!
আলমগীর বলল, কি দুর্ঘটনা! আমাকে কেন উল্টাপাল্টা চিন্তা করতে বাধ্য করছ?

কয়েক বছর আগে তোমার এক বন্ধু তার নব বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে তোমার কাছে বেড়াতে এসেছিল।
আলমগীর বলল, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু। আমি তাদের অনেক আপ্যায়ন করেছিলাম।
বুড়ি হো হো করে হেসে উঠল। খুব শীতল কণ্ঠে আলমগীরের কানের সামনে এসে বলল, সেই আপ্যায়নের মাঝেই জমে রাখা তোমার মনের কুৎসিত হিংসুটে ইচ্ছাটাও পূরণ করেছিলে।

আলমগীর বলে, আমি ছিলাম সবচেয়ে ভালো ছাত্র। এটা সত্যি ওর জীবনের পরবর্তী সাফল্য আর সুন্দর জীবন সঙ্গী পাওয়াটা আমাকে ওর সামনে তুচ্ছ করে দিচ্ছিল। তখন আমার মনের কোথাও একটা ধ্বংস অনুভব করেছিলাম। আমি কোনোভাবেই ওর উচ্ছল জীবন আর সুখ মেনে নিতে পারছিলাম না।

বুড়ি বলল, তাই তুমি নিজের অনেক দিনের বন্ধুত্ব ভুলে হিংসাটাকে মূল্যবান করে তুললে। একটা সুন্দর সংসার ভেঙে দিলে! আর এখন নিজের সুখের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। একবার কি নিজের বিবেকের মুখোমুখি হয়েছিলে?
আলমগীর বলল, পরিণতি এত ভয়ংকর হবে আমি ভাবিনি। আমি শুধু ওর সুখটা সহ্য করতে পারছিলাম না। সেটাই শুধু ধ্বংস করতে চেয়েছিলাম।
বুড়ি বলল, তোমার বন্ধুর বিশ্বাসটা তোমার ওপর নির্ভর করত।

আলমগীর একটু উত্তেজিত হয়ে বলল, আমি ভালো ছাত্র ও বুদ্ধিমান। আমি আমার চিন্তা দিয়ে সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করি। আমি চাই না কেউ আমার ওপরে থাকুক।
বুড়ি বলল, সে কি খারাপ ছাত্র ছিল? আসলে তোমার ভেতরে এক ভয়ংকর হিংসুট আত্মার বসবাস।
আলমগীর বলল, সে খারাপ ছাত্র ছিল না। সে ছিল সাধারণ আর নীরব। পৃথিবীতে কম বেশি সবার মধ্যেই হিংসার উপস্থিতি আছে।

বুড়ি একটু অন্য রকম হাসি দিয়ে বলল, কিন্তু সেই হিংসা তোমার মতো ধ্বংসাত্মক নয়। যে ধ্বংস তুমি ডেকে এনেছিলে সেই ধ্বংসে এখন তুমিই পড়তে যাচ্ছ। ভালোবাসাহীন হৃদয় শুধু হিংসার আগুনে পোড়ে। যার পরিণাম শুধুই ধ্বংস।

হঠাৎ আলমগীর ছটফট করতে লাগল। তারপর বুড়িকে বলল, আমি ক্ষমা চেয়ে নেব।
বুড়ি বলল, ক্ষমা! তুমি যখন নিজের ইচ্ছা চরিতার্থ করতে মেয়েটির নামে কাল্পনিক ব্যাখ্যা দিয়ে বন্ধুর কান ভারী করলে। ঠিক সেই সময় থেকে একটি সংসারের সুন্দর মুহূর্তগুলো পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝিতে ধ্বংসস্তূপে চাপা পরতে লাগল।

আত্মসম্মান রক্ষার্থে সেই মেয়েটি আত্মহনন বেছে নিল। দুঃখজনক মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তোমার হিংসার আগুনে দুটি জীবন ফুরিয়ে গেল। একজন মানুষ হিসেবে তোমার কি মূল্য আছে?
বুড়ির কথাগুলোতে আলমগীর কেমন যেন একটা ধাক্কা খেল। আন্ডারপাসের এক সিঁড়িতে বসে পড়ল। মনে হচ্ছিল শরীরের সব শক্তি ফুরিয়ে গেছে। অনেকটা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। এভাবে কতটা সময় গেছে আলমগীর জানে না। হঠাৎ কানের কাছে লোকজন চলাচলের শব্দ শুনতে পেল। সামনেই আট নম্বর গেট ওপরে যাওয়ার।

বাইরে বের হওয়ার সময় যেন কেউ তার পাশ দিয়ে গেল। একটা অদ্ভুত সুন্দরী কোনো তরুণী। দেখতে ঠিক কার মতো যেন। মনে করতে পারছে না। তার দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসি দিল। অনেক পড়ে মনে হলো তার বন্ধুর সেই মৃত স্ত্রীর মতো। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আলমগীর মোবাইল ফোনে তাকিয়ে দেখে এক শর ওপরে কল এসেছিল।

বাসায় ফোন করে জানতে পারল তার স্ত্রীর অবস্থা খুব খারাপ। মেয়ের জন্য আর চকলেট নেওয়া হলো না। ঝড়ের বেগে তুষার উপেক্ষা করে বাসায় ফিরল। অবস্থা সংকটাপন্ন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে অনেকটা সময় পার হয়ে গেল। ডাক্তার কিছুই জানাল না। পাঁচ বছরের মেয়ে বাবার পাশে নির্বাক বসে রইল।

মধ্যরাত পেরিয়ে যখন পৃথিবী নতুন সূর্য দেখবে ঠিক তখন ডাক্তার ভেতর থেকে ভয়ংকর খবরটা নিয়ে এল। পরের দিনটা শুরু হলো অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হারানোর দুঃখ নিয়ে। যে দুঃখ প্রকৃতির নিয়মে কোনো একদিন সে নিজেই তৈরি করেছিল। আলমগীরের ভেতরের আত্মগ্লানি আর হাহাকারের শব্দ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে গেল ভোরের আলোয়।

পৃথিবীর কোনো আবিষ্কার পারবে না তার পুরোনো ভালোবাসা আর জীবন ফিরিয়ে দিতে। সময় কোনো এক অদ্ভুত রহস্যে মিটিয়ে নেয় তার সব দাবি ঠিক সময়মতো।

----- সাপ্পোরো স্টেশন
------ নুরুন নাহার লিলিয়ান

17/11/2025
 #শীতের_সকাল
12/11/2025

#শীতের_সকাল

Address

Kalabaga

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Lilian's Literature Cafe posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Lilian's Literature Cafe:

Share

লিলিয়ান লিটারেচার ক্যাফের ক্যানভাস

লিলিয়ান লিটারেচার ক্যাফে একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ সাহিত্য ক্যাফে। সাহিত্যিকদের শিল্পিত প্লাটফর্ম । এখানে বই প্রকাশ , পরিবেশনা , বাজারজাতকরন , সততার সাথে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মত নানা রকম কার্যক্রমে অঙ্গীকারবদ্ধ । এছাড়া ও লেখক পাঠকের মধ্যে সেতু বন্ধনে নানা রকম আয়োজন করে থাকে । সকল সাহিত্য প্রেমিদের এই পেজে সুস্বাগতম ।