
17/07/2025
যাত্রাবাড়ীর প্রতিরোধের শুরু যে ঘটনায়।

সারাদেশের মতো যাত্রাবাড়ীর মানুষও থমকে গিয়েছিল আবু সাঈদের মৃত্যুসংবাদে।
এখানে ১৬ তারিখ পর্যন্ত আন্দোলন ছিল ছাত্রদের, আজকের দিনে অর্থাৎ ১৭ জুলাই তা রূপ নেয় ছাত্র-জনতার প্রতিরোধে।
আগেই কাজলায় ছাত্ররা ঢাকার লাইফলাইন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছিল।
এদিন সকাল হতেই শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। তারপর হঠাৎ শুরু হয় পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলি,
গুলি গিয়ে লাগে এক বাবার গায়ে, ও তার কোলে থাকা দুই বছরের সন্তানের গায়ে।
তারা কোনো মিছিলে ছিল না, নিজের বাসার কলাপসিবল গেটের পিছনে দাঁড়ায় ছিল।
গলিতে এই অতর্কিত হামলাটা এলাকাবাসীকে ট্রিগার করলো।
তখনই বাসাবাড়ির দারোয়ান, স্থানীয় দোকানদার থেকে শুরু করে এলাকার ছেলেমেয়েরা, যার যা ছিল, তাই হাতে তুলে নেয়। সাথে তো আগে থেকেই ছিল ছাত্ররা। সমন্বয়কদের ঘোষণার আগেই এখানে কমপ্লিট শাটডাউন হয়ে যায়।
মহাসড়কের কোনায় কোনায় আগুন জ্বলে ওঠে।
কয়েকটা মিছিলে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী এসে যোগ দেয়, আবাল বৃদ্ধ বনিতা একাকার হয়ে যায় রাস্তায়।
এরপর বিকেলের পরে আসে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
জনতা হানিফ ফ্লাইওভারের টোলঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়!
সেই আগুন রাতের আধারে শুধু টোলঘর পোড়ায়নাই, খুনী হাসিনার গদি পর্যন্ত পৌঁছে গেসিলো এর উত্তাপ।
যাত্রাবাড়ী এই প্রতিরোধ চালায়ে যায় টানা পাঁচদিন।
১৭ তারিখ থেকে ২১ তারিখ, এক্টাও গাড়ি চলতে দেয়া হয়নাই দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক দিয়ে।
কোনো কোটার জন্য না, কোনো চাকরির জন্যও না,
এই এলাকার মানুষ রাস্তায় নেমেছিলই ভাই হত্যার বিচার চেয়ে।
হাসিনার পতন চেয়ে।
এই প্রতিরোধটা ছিল অর্গানিক।
এটা ছিল পিপলস রেজিস্টেন্স।
এখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। সমন্বয়ক ছিলনা।
ছিল স্কুল কলেজের ছেলেমেয়ে, মাদ্রাসার হাফেজ, পানি হাতে নেমে আসা গৃহিণী, গার্মেন্টসের শ্রমিক, রিকশাচালক, পথশিশু।
আর হ্যাঁ, বিএনপি জামাতের স্থানীয় কর্মীরাও ছিল, সকল জনতার প্রতিরোধ যাকে বলে আরকি।
এই এলাকার প্রতিটা স্কুলের এক/দুইজন করে শহিদ শিক্ষার্থী আছে। এখানে প্রতিরোধের গল্পের শেষ নাই। গল্পগুলা শহীদ তাঈমের সেই পুলিশ বাবার, যে তার অফিসারকে বলে,
“স্যার, একটা মানুষ মারতে কয়টা গুলি লাগে আপনাদের?”
এই প্রতিরোধ সেই রিকশাওয়ালারও
যে লাশ তুলতে গিয়ে দেখে, এতো তারই ছেলের মুখ। এরকম শত শহীদের রক্তে ভেজা যাত্রাবাড়ী।
হাসিনার পুলিশ পাঁচদিন গুলি চালিয়েও এই আগুন থামাতে পারে নাই।
তাদের লাগসে বিল্ডিং থেকে লুকিয়ে স্নাইপিং।
হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া লাগসে টিয়ারশেল। চালানো হইসে ব্রাশফায়ার।
এই ছিল যাত্রাবাড়ী। আমাদের স্ট্যালিনগ্রাদ।