29/04/2025
আহ্, কী ভয়ংকর অবস্থা,,,
একজন মানুষ এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারে!!
শুক্রবার রাতে যখন অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে পুলিশের কন্ট্রোল রুম, ঠিক তখনই ৯৯৯ নাম্বারে একটি কল আসে। সেই কলে জানা যায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে সড়কের পাশে পরে থাকা একটা সাদা প্লাস্টিকের বস্তা থেকে রক্ত বের হচ্ছে। দ্রুতই স্থানীয় পুলিশের কাছে খবরটি চলে যায়। পুলিশ সেখানে গিয়ে সাদা প্লাস্টিকের বস্তার মধ্যে অজ্ঞাতনামা এক নারীর লাশ উদ্ধার করে। সেই মরদেহ ছিল খন্ডিত ও ভয়াবহ। পরিচয় শনাক্ত করার কোন অঙ্গই মরদেহটির সঙ্গে ছিল না।
মাত্র একদিন পর।
রবিবার সপ্তাহের প্রথম দিনে ভয়াবহ চাপ। ৯৯৯ হেল্প সেন্টারে একের পর এক কল আসছে। কিছু কল আসছে অযথাই। বিকেলের দিকে একটা কল আসার পর পুরো অফিস রুম স্তম্ভিত। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে দ্রুত যায় পুলিশ। সেখানে পোস্তগোলা ব্রিজের নিচে বুড়িগঙ্গার তীরে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা কোন মানুষের খণ্ডিত তিনটি অংশ।
মাত্র একদিনের মাথায় এরকম দুইটি ঘটনায় পুলিশের অপরাধ বিভাগকে নড়েচড়ে বসাতে বাধ্য করে। যেই দুইটি পৃথক স্থানে খণ্ডিত মরদেহ পাওয়া গেছে, তার সবগুলো আলামত আবার পর্যালোচনা করে পুলিশ। প্রথমবার অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহ উদ্ধার করার সময় ঠিক পাশেই পাওয়া গিয়েছিল মুঠোফোনে রিচার্জ করার একটি কার্ড। ভিজে নষ্ট হওয়া এই কার্ডটি কেসটির সূত্র খুলে দেয়।
কার্ড দিয়ে কে রিচার্জ করল, আর কেনই বা রিচার্জ কার্ডটি লাশের পাশে পড়েছিল -এই প্রশ্ন ভাবায় পুলিশকে। তারা দ্রুত খুঁজে বের করে কে রিচার্জ করেছিল কার্ডটি দিয়ে। মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সাহায্যে একজন লোককে খুঁজে পায় পুলিশ। বুড়িগঙ্গার অদূরেই কদমতলী থানার অধীনে জুরাইন এলাকা থেকে মহিউদ্দিন হাওলাদার নামের একজনকে আটক করে পুলিশ।
মহিউদ্দিন হাওলাদারের কোন ধারণাই ছিল না, সামান্য রিচার্জ কার্ডের সূত্র ধরে তার অব্দি পৌঁছে যেতে পারে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাতেই সে স্বীকার করে যে, বীথি আক্তার নামক নারীকে হত্যা করেছে সে। তবে পুলিশেরও ধারণা ছিল না, তারা কাকে গ্রেফতার করেছে।
মহিউদ্দিন হাওলাদার আরও দু'টো খুন করেছে!
নারীর খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তিনটি খুনের তথ্য পেয়ে যায় পুলিশ। সেই ভয়াবহ ট্রিপল মার্ডার রহস্যের খোলাসা করে পুলিশ। মূলত মহিউদ্দিন হাওলাদারের কারখানার একজন কর্মী ছিলেন বীথি আক্তার। তার সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে ২০১৭ সালে গোপনে দু'জন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু পরিবার জানাজানি হলে সেসময়ই বিচ্ছেদ ঘটে। সময় পেরিয়ে যেতে যেতে বীথি আক্তারের বিয়ে হয় রুবেল নামের অন্য একজনের সঙ্গে। তাদের ঘরে জন্ম নেয় একটি শিশু।
প্রায় বেশ কয়েক বছর পর বীথির সন্ধান পেয়ে ফের প্রণয়ের সম্পর্ক তৈরি করে মহিউদ্দিন হাওলাদার। একসময় রুবেলের সংসার ফেলে চার বছরের শিশুকে নিয়ে মহিউদ্দিন হাওলাদারের কাছে গিয়ে ওঠে বীথি। কিছুদিনের মাঝেই বীথি আবিস্কার করে মহিউদ্দিনের আরও একজন স্ত্রী রয়েছে।
এ নিয়ে তাদের মধ্যে নিয়মিত ঝগড়া চলতে থাকে। এই ঝগড়ার পরিণতি ঘটে গত শুক্রবার দুপুরে। সেদিনও সকাল থেকেই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় ঝগড়া। একপর্যায়ে মহিউদ্দিন বীথি আক্তারের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে তাঁকে হত্যা করেন।
দ্বিতীয় দফায় চার বছরের শিশুটিকে হত্যা করে মহিউদ্দিন হাওলাদার।
একই ফ্ল্যাটে সাবলেট হিসেবে থাকতেন নুপুর নামের একজন নারী। ভয়ঙ্কর এই ডাবল মার্ডার দেখে ফেলেন তিনি। মহিউদ্দিন হাওলাদার প্রমাণ রাখতে চান না। এই চক্রের শেষ শিকার হন নুপুর, খুন হতে হয় তাকেও।
এই তিনটি খুন করার পর হাতমুখ ধুয়ে মহিউদ্দিন হাওলাদার চলে যান তার প্রথম স্ত্রীর বাসায়। সেখানে গিয়ে পরিকল্পনা সাজান তিনি। বাইরে এসে সাদা প্লাস্টিকের বস্তা একটি ধারালো ছুড়ি কিনে বেরিয়ে যান। জুরাইনে তার দ্বিতীয় বাসাটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। তালাবদ্ধ ঘরের ভেতর তখন পরে আছে তিনটি মানুষের লাশ।
সাদা প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে তালা খুলে ঘরে ঢুকে মহিউদ্দিন প্রতিটি লাশকে খণ্ড খণ্ড করেন। প্রথমবার সে শিশুর লাশ নিয়ে ইকুরিয়া বাজারে। সেখান থেকে অটোরিক্সা দিয়ে একটু ভেতরে ঢুকে ঝোপের মধ্যে ফেলেন শিশুর খণ্ডিত লাশ। পুলিশ সেখান থেকে শিশুটির ছয় খণ্ড লাশ উদ্ধার করেছে।
তারপর দুই দফায় বুড়িগঙ্গার দুই পারে বীথি ও নুপুরের লাশ ফেলে দিয়ে আসেন মহিউদ্দিন হাওলাদার। প্রাথমিকভাবে পুলিশ শনাক্ত করতে পেরেছে যে, তারা দুই দফায় দুই জায়গা থেকে মূলত বীথি আক্তারের লাশই উদ্ধার করেছে। কিন্তু নুপুরের মরদেহের কোন অংশ এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহ পর আজ সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এই ভয়াবহ হত্যাকারীকে সামনে এনেছে। পুলিশ বলছে, তারা একটি খণ্ডিত লাশের রহস্য বের করতে গিয়ে তিনটি হত্যার খোঁজ পেয়েছে। যার হত্যাকারী একজনই!
-Masum billah naiem