30/10/2024
কোদালে জীবন (পর্ব ১)
যার জীবনটা কোদালের,সে-ও একজন মানুষ। আর মানুষ ত মানুষ। যার কোনো তফাৎ নেই।তবে আছে!"মানুষ" আর "অমানুষ"।এই দুটো শব্দের মধ্যে পার্থক্যটা শুধুমাত্র " অ"। কিন্তু বাস্তবের পার্থক্যটা স্বর্গ থেকে জাহান্নাম।
আজ রবিবার। মেমাচিং অপেক্ষা করছে।কিন্তু গাড়ির যে আসার নামমাত্র নেই।তার আজকে ফাইনাল পরীক্ষা। হঠাৎ একটা ফোনকল এলো তার বাবার কাছ থেকে।
হাঁ, বাবা।বলো।
কিরে ভালো আছিস ত মা?
হ্যাঁ,ভালো। কিন্তু এই সময়ে ফোন কেন? আমাকে যে তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে পৌঁছতে হবে।দেরি করলে চলবে না।বাবা ফোনটা কেটে দিলো। জানিনা, কি বলতে চেয়েছিলো।
মেমাচিং এর বাবা খুব গরীব।নুন আনতে পান্তা ফুরায়। অথচ তার মেয়ে পাবলিক ভার্সিটিতে।কিন্তু অনেকের অঢেল টাকা আছে,তবে ভার্সিটিতে পড়ার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাই। বাস্তব রূপ নেয় না।এইসব টাকা-পয়সাওয়ালা ছেলে-মেয়েরা মেমাচিং-কে দেখলে কী যে ভাববে,সেটা একমাত্র তারাই জানে।মানুষের প্রকৃতিই হচ্ছে অস্বয়ংসম্পূর্ণ। কেউ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।যার বেশি টাকা আছে তার বড় দুঃখ, যার টাকা কম তার ছোট দুঃখ। দুঃখকে নিয়েই আমাদের সংসার।
সকাল নয়টা।পরিবেশটা গ্রামের।তবে ঘুমটা ভাঙে যান্ত্রিকের শব্দে।বুঝতে হবে, দিস ইজ মডার্ন এইজ।গাড়ির শব্দে ঘুম না ভাঙলে কী,পাখির শব্দে ঘুম ভাঙবে। সবকিছু আধুনিক হতে হবে তো।এলার্মের ডাকে ঘুম ভাঙে মং-এর।মং আর মেমাচিং সম্পর্কে আপন ভাই-বোন।তবে তার বোন থাকে শহরে। মং সবেমাত্র অনার্স প্রথম বছরে।মং রেডি হয়ে কলেজে গেলো।কিন্তু মাঝ রাস্তায় তার বাবার ফোন কলে তাকে বাড়ি ফিরতে হলো।বাসায় এসে বাপ-বেটার আলাপন শুরু হল।
বাবারে!আজ আমি মনে হয় কাজে যেতে পারবো না।আমার অগ্রিম টাকা নেওয়া আছে।তোকে আমার বদলে কাজটা করতে হবে।এমনিতে আমার হাঁপানি শ্বাসকষ্টও আছে।
কতদিন কাজ করতে হবে?বেশি নারে! মাত্র তিন দিন।কী!তিন দিন? কিন্তু বাবা,সামনে যে আমার ইন- কোর্সের পরীক্ষা।
আমাদের সামনে কিন্তু এইরকম হাজারো রকমের পরিস্থিতি আসবে।তবে সামলে যেতে হবে।যদি না-ই বা যেতে পারি মানুষ হলাম কেন তবে। মং কে কাজ করতে হলো। সে বই-পুস্তক বাসায় রেখে কোদাল নিয়ে বের হয়ে গেলো।
এ্যাই মং,এ্যাই।কোথায় যাও?
আসলাম তোমাদের বাড়িতে। কেন?
কেন আবার? কাজ করতে।তোমার বাবার কাছ থেকে আমার বাবা কাজের টাকা অগ্রিম নিয়েছে।কিন্তু তিনি অসুস্থ। কাজে আসতে পারবেন না।তাই আমিই কাজের মাধ্যমে শোধ করতে এসেছি।
বাহ!বাহ! তুমি ত সারাদিন কবিতায় লিখো, কাজ ত করো না।আজ দেখি, ভূতের মুখে রামের নাম করতে এসেছো।করতে পারবে তো? এই বলে,উস্যাং খিলখিল করে হেসে উঠলো।
অপমান করছো?না, না।অপমান করবো কেন।প্রশংসা করছি।আবারো সেই একই তরঙ্গের হাসি।
তবে হাসিটা আমাকে অপমান করার বদলে একটা নতুন আশা আমার উপর দিয়ে বয়ে দিলো। মন নেচে উঠল।আমি সেই হাসিটা অপলক দৃষ্টিতে দর্শন করতে লাগলাম। ভাবলাম,তাকে চিরদিন আমার কাছে পাবো কি-না। হঠাৎ হাসিটা থেমে গেলো। ও লজ্জা পেয়েছিলো।
ইশ!এমনভাবে কেউ তাকায়? লজ্জা করে না বুঝি।
কিন্তু ও জানে না,এই তাকানো মানে দৃষ্টি-তাকানো না - এই তাকানো মানে অবিরামভাবে নানা রং-বেরংং আর তুলি দিয়ে ওর মনে হাজারো ছবি আঁকা। যে ছবির কোনো বাস্তব-চিত্রণ নেই। নেই কোনো আকৃতি।
আচ্ছা, তোমার বাবা কোথায়? ওনি বাজারে গেছেন।কাজের দেখাশোনার দায়িত্ব আমাকে দিয়ে গেছেন।
অহ!ভালোই হলো।
কি ভালো হলো?
কাজটা আস্তে আস্তে করার।না,না।আজকে আমি মালিক। সো,নো ফাঁকিবাজি। যান শুরু করেন।মাটি কোপানো। এরপর অন্য কাজ। তবে কথাটা শুধুমাত্র মুখেই বলা। অন্তর দিয়ে নই। অন্তরে যে সেটার ভার অনেক। সহ্য করার মতন না। তাই নিরবে সে অশ্রুবর্ষণ করে গাছের ছায়াতলে।আর দুপুরের খাঁ-খাঁ তীব্র রোদে মাটি কুপায় এক গর্ব-প্রেমিক।