
02/06/2025
পার্বত্য চট্টগ্রামকে আফ্রিকার সাথে তুলনা করা যায় :
আফ্রিকা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর মহাদেশ। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ গঠনের মধ্যে দিয়ে ড. কোয়ামে নক্রুমার অদম্য প্রচেষ্টায় আফ্রিকার ঘানা অঞ্চলটি ১৯৫৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।পরবর্তীতে ১৯৬০ সালে ঘানা একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে গৌরব অর্জন করে।যদিও ১৯৬৬ সালে সামরিক শাসন জারি করার পর সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভেঙ্গে যায়। এভাবে আফ্রিকার বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র ধাপে ধাপে স্বাধীনতা লাভ করে।
দ্বিতীয় মহাদেশ হিসেবে বিবেচিত আফ্রিকায় ৫৪ টি দেশ বিদ্যমান। কিন্তু দেশগুলোতে জাতীয় সংহতি নেই।এর কারণ জাতীয়তাবাদী মনোভাবের অভাব। এর পেছনে যে বিষয়টি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে তা হচ্ছে গোত্রতন্ত্র। যা আফ্রিকার রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে।
আফ্রিকা স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এখনো ঐক্যবদ্ধ,সংঘবদ্ধ ও জাতীয়তাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত হতে পারেনি। তাদের মধ্যে গোত্র বিভাজন এতটাই যে, কেনিয়ায় ১১৯ টি এবং নাইজেরিয়ায় ২৫০ টি ছোট-বড় গোত্রের বিদ্যমান। তাছাড়া মরুভূমির বেদুইন ও যাযাবর শ্রেণি তো আছেই।
এসব গোত্রতন্ত্রকে ব্যবহার করে ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি, জার্মানি ইত্যাদির দেশগুলো উপনিবেশ শাসনের সময় নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কলোনি স্থাপনের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে রাখতো।আফ্রিকার অনেক গোত্র অন্য গোত্রকে দমন করার জন্য বিদেশি শক্তিগুলোকে সাহায্যে করত, নিজ গোত্রীয় স্বার্থে তারা অন্য গোত্রের জনসাধারণের উপর অত্যাচার ও যুদ্ধ করত। যার ফলে গোত্রীয় সংঘাত ধীরে ধীরে প্রবল হয়।যার প্রভাব বর্তমান সময়েও আফ্রিকার মধ্যে বিরাজমান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম একটা সময় প্রায় স্বাধীন হতে চলেছিল। কিন্তু জুম্মরাই নিজেরায় নিজেদের জুম্ম জাতির মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম.এন লারমা) লারমাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতার আলো দেখতে পায়নি। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে জেএসএসের পার্বত্য শান্তি চুক্তি হলে পুনরায় নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের লিপ্ত হয়ে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বিরোধী স্বায়ত্তশাসন দাবি কারী ইউপিডিএফ নামক একটি সশস্ত্র রাজনৈতিক দল উত্থান ঘটে।বর্তমান দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, পার্বত্য শান্তি চুক্তি হচ্ছে সরকারের কাছে জিম্মি হওয়া মাত্র, যা অযুক্তিক নিষ্ফল এবং স্বায়ত্তশাসনের দাবি নামে মাত্র দাবি। কিন্তু দেখা যায়-এটি (স্বায়ত্তশাসন) শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত পার্বত্য শান্তি চুক্তি বিরোধীতা মাত্র যেখানে সরকারের কাছে এখনো একটি দাবিও দেখা যায়নি।
যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার খুব নিকটবর্তী হয়ে উঠেছিল, সেখানে পার্বত্য শান্তি চুক্তি আর ইউপিডিএফ গঠন ছিল সবচেয়ে বড় দূর্বলতার। তাছাড়া কয়েক বছর আগে মূল জেএসএস ও মূল ইউপিডিএফের দল থেকে সরে বেশ কয়েকটি সক্রিয় রাজনৈতিক দল (জেএসএস এম.এন (সংস্থার), ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক) উদ্ভব হয়।যেখানে তাদের কোনো লক্ষ্য উদ্দেশ্য নেই। তাছাড়া বান্দরবানে নাথান বমের নেতৃত্বে কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ,মগদের মগ পার্টি। শুরু হয় আফ্রিকানদের মত গোত্রতন্ত্রের দ্বন্দ্ব। দীর্ঘ দুই যুগের অধিক ভাতৃসংঘাতের মধ্যে দিয়ে বৃহত্তর গোষ্ঠীকে শাসন-শোষণের সুযোগ সৃষ্টি ছাড়া কিছুই হয়নি।যা আফ্রিকার গোত্রতন্ত্ররাই বিদেশিদের দিয়ে অন্য গোত্রদের দমন করার মত। দীর্ঘ রাজনীতিতে দলীয় স্বার্থকে দূরে রেখে, নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এবং কিছু সাধারণ দলীয় কর্মীদের বলির পাঠা বানিয়ে ভাতৃসংঘাতকে মজবুত করে তুলেছে। যার সমাধান কল্পনাতীত।
পার্বত্য চট্টগ্রামে এতগুলো দল উপদল ঠিক যেন আফ্রিকার গোত্রতন্ত্র। আফ্রিকা স্বাধীন কিন্তু জাতীয়তাবাদের চেতনা নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম পরাধীন তবুও জাতীয়তাবাদের চেতনা উদ্ভব কল্পনাতীত (সাধারণ জনগণ ব্যতীত)।
আফ্রিকানরা কিছু কিছু অঞ্চল বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে শুরু করেছে। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে কিছু কিছু রাজনৈতিক দল বৃহত্তর গোষ্ঠীর সাথে তাল মেলাতে ব্যস্ত যেখানে নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ জড়িত, দলীয় বা জাতির মুক্তির স্পষ্ট অনুপস্থিত।
মনে রাখা ভালো- দীর্ঘ শাসন-শোষণের জাতি স্বাধীনতা পথ খুঁজে, স্বাধীনতা স্বাদ গ্রহণ করে। যেখানে শান্তি চুক্তি বা স্বায়ত্তশাসনের কোনো মূল্য নেই। সুতরাং একতাবদ্ধ, জাতীয়তাবাদী মনোভাব জাগ্রত করে বৃহত্তর স্বার্থ, জাতির স্বার্থ চিন্তা করে শেষ পর্যায়ে হয় নিজে শেষ, না হয় বৃহত্তর গোষ্ঠীর উচ্ছেদ করার মধ্যে দিয়ে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করা সম্মানের মহত্ত্বের।
আপনাদের (রাজনৈতিক দলীয় নেতা-কর্মীদের) স্পষ্ট সমালোচনা করছি,যেখানে পক্ষপাতিত্ব এক বিন্দুর মনোভাব নেই। অতীত থেকে বর্তমানে সুদীর্ঘ রাজনৈতিক অবস্থা চোখ বন্ধ করে চিন্তা করার কথা বলছি। আমাদের ( জুম্মদের) মুক্তি লাগবে, জাতীয়তাবাদী হতে হবে।
এই পর্যন্ত ভাতৃসংঘাতের মধ্যে যতগুলো সূর্য সন্তান জীবন দিল গভীর হয়ে ভাবুন আর বিবেক দিয়ে চিন্তা করেই আপনাদের কখনো গাঁ শিহরণ হয় না??